#হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব১৬
ছাঁদের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে, পুরো কাজিনমহল মিলে একত্রে গোল হয়ে বসে গল্প করছি। সময়টা এখন সন্ধ্যা সাতটা ছুঁই ছুঁই। ধরনীর বুকে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসার পর পরই আমরা সবাই মিলো ছাঁদে চলে এলাম আড্ডা দেওয়ার জন্যে। ছাঁদে আসতেই এক শীতল হাওয়া এসে যেন শরীরে দোলা দিয়ে যায়। আকাশে আজ তারা নক্ষত্রের ছিটেফোঁটাও যেন নজরে আসছে না! ঘন কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশটা। হয়তো একটুপর বৃষ্টি হতে পারে আবার নাও হতে পারে! যা গরম পড়েছে তাতে করে একটু বৃষ্টি হলে কিন্তু খুব একটা মন্দ হতো না! তবে সারাদিন কাঠপোড়া গরম পড়লেও সন্ধ্যের পর থেকে ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আমরাও আর তাই দেরি না করে চলে এলাম। এমন ফুরফুরে আমেজে গল্পের আসর জমে একেবারে ক্ষীর হয়ে যাবে!
আমরা সবাই এখানে উপস্থিত থাকলেও আদ্রিশ ভাইয়ার কোনো দেখা নেই। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে বারবার আমার অবাধ্য দুই নয়ন শুধু আদ্রিশ ভাইয়াকেই খুঁজে চলেছে। কিন্তু তার দেখা আমার আর নজরে এলো না। রাগ করে তাই আহিরের পাশে গিয়ে বসে পড়লাম আমি। আমায় দেখে আহির সূক্ষ্ম হাসল। আমিও বিনিময়ে শুধু হাসলাম। এটা নতুন নয়। আমি, রিশতা, আহির আমরা সমবয়সী হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই এভাবেই মিশি। আমার কাজিনদের মধ্যে আহির এবং রিশতার সাথে আমার বন্ডিংটা অনেক বেশি জোরালো বলা চলে।
রিশতা, অরিন আপু আর সাবা আপু আড্ডা ভালোই জমিয়ে ফেলেছে। আমিও তাদের সাথে আড্ডায় যোগ দিলাম। আড্ডার এক ফাঁকে খেয়াল করলাম অরনী ফোন হাতে নিয়ে উঠে চলে গেছে। আমার কৌতুহলী মনে সন্দেহের উদ্রেক জন্মায়। আমিও তাই ওর পিছু নিলাম।
ছাঁদের এককোণে চলে এলো অরনী। আমিও আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলাম, যাতে আমায় দেখা না যায়। এদিক ওদিক চোরা চোখে দেখে নিয়ে এবার ফোন কানে দিয়ে সতর্কমিশ্রিত স্বরে অরনী বলল
-‘ হ্যালো আরাভ! এখন একটু ব্যস্ত আছি আমি। পরে ফোন দেই তোমাকে।
লাউড স্পিকারে না থাকায়, অপর প্রান্ত হতে কি বলল, তা আর শুনতে পেলাম না আমি। অরনী আবারও আশেপাশে তাকিয়ে কন্ঠ কিছুটা খাদে নামিয়ে নিয়ে বলল
-‘ জান, আমিও তোমায় ভীষণ ভালোবাসি তবে তোমার সাথে আমার পক্ষে এখন দেখা করা পসিবল না। মামারা কিংবা ভাইরা কোনমতে দেখে ফেললে আমাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে।
-‘….
-‘ আরাভ, তুমি কেন বুঝতে চাইছো না? আচ্ছা শোনো, আমি তোমার সাথে এখন আর কোনো কথা বলতে চাইছি না! রাখি তাহলে। সাবধানে থেকো।
এটুকু বলেই ফোনটা কেটে দিল অরনী। আমি হতভম্ব বনে গেলাম। কথাগুলো শুনে আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে, ‘আরাভ’ নামের ঐ ছেলেটা অরনীর বয়ফ্রেন্ড। আজকাল অরনীর মতো মেয়েরাও প্রেম করে তাহলে? কিন্তু ও সুযোগ পেল কিভাবে? আমি বা রিশতা কেউ তো জানিনা এই ব্যাপারে। ওকে দেখলে সত্যিই বোঝার জো নেই, ও এমন। আমার ধারণামতে, যারা প্রেম করে তারা খারাপ হয়। যদিও এটা হয়তো পুরোপুরি সত্য নয়, তবে বেশিরভাগই ভালো না।
হঠাৎ পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রাখল কেউ। আমি চমকে পেছনে ফিরে রিশতাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এই মেয়েটা হুটহাট পেছন থেকে এসে আমায় ভয় পাইয়ে দেয়। বিচ্ছু একটা!
রিশতা আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল
-‘ কি করছিস এখানে দাঁড়িয়ে? আড্ডার মাঝখান থেকে ওভাবে চলে এলি যে?
আমি নির্বিকার দাঁড়িয়ে রইলাম। এই মুহুর্তে কি রিশতাকে বলাটা ঠিক হবে, অরনী সম্মন্ধে? আমায় চুপ থাকতে দেখে রিশতা আমার হাত ঝাকিয়ে বলল
-‘ কি হলো উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
রিশতার কথায় সংবিৎ ফিরে এলো আমার। অরনীকে এদিকে আসতে দেখে রিশতা কিছুটা চেঁচিয়ে বলে উঠল
-‘ কিরে তুই এখানে কি করছিস অরু?
অরনী আমাকে আর রিশতাকে এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে। আমতা আমতা করে বলে উঠল
-‘ তোরা দুটো এখানে কি করছিস?
-‘ সেটা তো আমারও প্রশ্ন তুই কি করছিস এখানে?
আমার কথায় অরনী অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কানের পিঠে চুল গুঁজে মিথ্যে হাসির অভিনয় করে বলল
-‘ ঐ আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম আরকি!
আমি কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে সন্দিহান চিত্তে বললাম
-‘ শুধুই কি বন্ধু নাকি অন্যকিছু?
অরনী আমার হাত ধরে ফেলে। এদিক ওদিক সতর্কতামিশ্রিত চাহনিতে তাকিয়ে আকুতি ভরা কন্ঠে বলল
-‘ মেহরুন, বোন আমার। কাউকে কিচ্ছুটি বলিস না এ ব্যাপারে। বিশেষ করে মামারা যেন কেউ জানতে না পারে। জানলে হয়তো আমায় মেরেই ফেলবে রে।
আমি আশস্ত করলাম অরনীকে। এতে যেন অরনী কিছুটা স্বস্তি ফিরে পায়। ওর চোখমুখ চিকচিক করে ওঠে। আমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে উৎফুল্লতার সহিত বলে উঠল
-‘ জানিস, আরাভ ছেলেটা না ভীষণ অমায়িক একটা ছেলে। ওর সাথে আমার প্রায় দুই মাসের প্রেম। ওকে আমি সত্যিই অনেক বেশি ভালোবাসি রে। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।
অরনীর এমন লুতুপুতু টাইপ কথাবার্তা শুনে আমি বিরক্তই হলাম কিছুটা। এমনিতেই আমি এসবের ধারেকাছেও যাইনা, আর আমার না এসব পছন্দ। তাই বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি ভাই বিয়ের পর প্রেমের পক্ষপাতী কিন্তু বিয়ের আগে এসব ছাইপাঁশে না। অরনীর কথা শুনে রিশতা মাথায় হাত দিয়ে হতাশ কন্ঠে বলল
-‘ ভাই, সবার-ই প্রেম ভালোবাসা হয়ে যাচ্ছে। ইভেন, অরনীর মতো ঢেপশীটাও প্রেমে মজেছে। আর এদিকে আমার আর প্রেম টেম হবে না বোধহয় এ জন্মে! হায় ম্যা মার যাওয়া!
কথাটা বলেই রিশতা মরা কান্না জুড়ে দিল। ওর এমন প্যানপ্যানানি শুনে আমি বিরক্ত হলাম কিছুটা। ওকে তাই ধমক দিয়ে আমি বলে উঠলাম
-‘ থাম তুই! এমন একটা ভাব ধরেছে যে মনে হচ্ছে আমিও প্রেম করে একেবারে দুনিয়া উল্টে ফেলছি। তোর দলে আমিও রয়েছি। তাই বলে এমন মরা কান্না কাঁদিনি কখনো।
রিশতা এবার কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল
-‘ তুই তো মোটেও কথা বলবি না। তুই কি প্রেম করবি, তোর তো আগের থেকেই বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তোর তো তাও আদ্রিশ ভাইয়া আছে আর আমার তো কেউ নেই। যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু আন্ধার আর আন্ধার। কোনো পোলা আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। শালার পোড়া কপালে একটা কাজিনও জুটল না! মাঝে মধ্যে তো কচু গাছে ঝুলে পড়তে মন চায় আমার।
রিশতাকে এমন হা হুতাশ করতে দেখে আমি, অরনী দুজনেই হেসে ফেললাম। পরক্ষণেই আমার হাসি মিলিয়ে গেল। আমি কিছুটা রাগ নিয়ে বললাম
-‘ একদিন না বলেছি, আমার সাথে ঐ নিরামিষ ঢেড়ষটাকে জড়িয়ে কোনো কথা বলবি না। তারপরও কেন?
রিশতা নাকের পানি মুছে থমথমে গলায় বলল
-‘ নাটক কম কর, তোমরা লাইলি মজনু যে একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারো না, তা আমি জানি। ইভেন প্রায় সবাই জানে, তোমরা একে অপরকে ভীষন রকমের ভালোবাসো। কিন্তু ভাব দেখিয়ে কেউ কাউকে কিছু বলছো না। মানে সিরিয়াসলি তোদের ভাব দেখে আর বাঁচি না বাপু!
কথায় কথা বাড়ে, তাই আমি আর কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম। ওরাও আমার পেছন পেছন চলে এলো।
আমি আসতেই সবার মাঝ থেকে আহির শব্দ করে বলে উঠল
-‘ আরে সুইট লেডি যে! কোথায় ছিলে এতোক্ষণ? তোমায় ছাড়া আড্ডায় মন বসে না যে আমার।
আহিরের কথায় সবাই সম্মতি জানায়। ইতোমধ্যে সেখানে আদ্রিশ ভাইয়া এসেও উপস্থিত হয়েছে। আহিরের দিকে সে ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে রয়েছে।
আমি আলতো হেসে আহিরের পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর ওর দিকে ফিরে মিষ্টি করে বললাম
-‘ এই তো আমি এসে গিয়েছি। নাও স্ট্রাট।
আদ্রিশ ভাইয়ার দিকে নজর পড়তেই আমি এক গাল হাসলাম। ওনার অবস্থা দেখে আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। আমায় ইশারা করে আহিরের থেকে দূরে সরে বসতে বলল। কিন্তু আমি বুঝেও না বোঝার ভান ধরলাম। আর আহির-ও না সেই। একদম আমার মনের মতো। ওকে আমি কোণ আইসক্রিম ট্রিট দিব!
আদ্রিশ ভাইয়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে আমি আহিরের মাথার চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে আদুরে কন্ঠে বললাম
-‘ ইশ এতো সুন্দর চুলগুলোকে কেউ এমন এলোমেলো করে রাখে নাকি? ঠিক মতো চুল আছড়াতে পারিস না?
আমার কথায় চমৎকার করে হাসল ছেলেটা। আমার চুল টেনে দিয়ে বলল
-‘ আপনি থাকতে কি আর আমার চুল আছড়ানোর কোনো প্রয়োজন আছে ম্যাম?
আহিরের কথায় আমি আলতো হেসে লজ্জা পাওয়ার ভান করলাম।
আদ্রিশ ভাইয়ার দিকে নজর পড়তেই দেখলাম বেচারা শুটকি মাছ একেবারে ফুলে ফেঁপে বোয়াল মাছ হয়ে গেছে। আমার দিকে সে এখন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। যেন তার চোখ থেকে আগ্নেয়গিরির ফুলকি ঝরছে! কুমড়ো পটাশটা ছাঁদের দরজায় শব্দ করে বাড়ি মেরে গটগট করে নিজের কক্ষে চলে যায়। এ ব্যাটা ভাঙবে তবুও মচকাবে না। থাকো তুমি তোমার ইগো নিয়ে। আমার তো লাল টুকটুকে আহির আছে। অতঃপর আদ্রিশ ভাইয়া চলে যেতেই আমি আর আহির অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম।🧛🏻♀️
#চলবে~
জানি এলোমেলো হয়েছে। সরিহ😑
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/