অর্ধ_নক্ষত্র ।১৪। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
170

#অর্ধ_নক্ষত্র ।১৪।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

প্রশান্তর বোধ হলো সে কী করছে,ছেড়ে দিলো তৎক্ষণাৎ জুনায়নাকে,বলল,”আই এম এক্সট্রিমলি সরি।আমি বুঝতে পারিনি।”

জুনায়না নিঃশব্দে হাঁসলো,সেই হাসি দৃষ্টিগোচর হলো না প্রশান্তর চোখে।প্রশান্ত ধীর হস্তে জুনায়নার বাহু ধরে বলে,”এইখানে আঘাত পেলি কী করে?”

“এই বৃষ্টির মধ্যে রিকশা না পেয়ে হেঁটেই আসছিলাম,দমকা হাওয়ার যে পরিমাণ হঠাৎ গাছের ডাল ভেঙে এসে আমার হাতের উপর পড়ে যায়।ভাগ্যিস বেশি কিছু হয়নি শুধু এইটুকু কেটেছে।”

“আর কোথাও লাগেনি তো?”

জুনায়না ছোট করে ‘নাহ’বলল।প্রশান্ত জুনায়নার হাত ধরে গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো,রাস্তার এপাশে এসে গাড়িতে উঠে বসতে বলল।জুনায়না গাড়িতে উঠে বসলে,প্রশান্ত গাড়িতে উঠে বসে আঞ্জুমান কে ফোন করে জানিয়ে দেয় সে জুনায়নাকে পেয়েছে,বাড়ি আসছে তারা।কান থেকে ফোন নামিয়ে পিছনের সিটের দিকে হাত বাড়িয়ে পড়ে থাকা কালো রঙ্গা ব্লেজারটি নিয়ে জুনায়নার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”গায়ে জড়িয়ে নে এইটা।”

জুনায়না প্রশান্তর হাত থেকে ব্লেজারটি নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নেয় অতঃপর বলে,,”ইশ প্রশান্ত এই ব্লেজারে তো তোর পারফিউমের সেই মাতাল করে দেয়া ঘ্রাণ।”

প্রশান্ত গাড়ি স্টার্ট দিলো বলল,”তোর বয়ফ্রেন্ডরা যদি জানতে পারে তুই আমার ব্লেজারের পারফিউমের ঘ্রাণে মাতাল হচ্ছিস তাহলে তো তোর সঙ্গে ব্রেকাপ করে ফেলবে।”

জুনায়না আড় চোখে চাইলো,এই ছেলে তো কিছুক্ষন আগে তারই বলা কথা তাকেই ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে।প্রশান্ত পুনরায় বলল,”তোর যত বয়ফ্রেন্ড থাকুক না কেনো বাড়ি ফেরার সময় আমি তোকে নিয়ে যাবো।”

জুনায়না তো খুশি হয়ে গেলো,এখন থেকে প্রশান্ত প্রতিদিন তাকে নিতে আসবে আর সে মন ভোরে প্রশান্তকে জ্বালাতন করতে পারবে।

🍁
সকাল হয়েছে,গতকালের বৃষ্টির সমাপ্তি ঘটেছে ভোরের দিকে এসে।জানালার পর্দা ভেদ করে মিষ্টি রোদ এসে পড়ছে মেহরার মুখের ওপর।চোখে রোদ পড়তেই চোখ দুটো কুঁচকে ফেলে সে,চোখ খুলে তাকায়।পুনরায় মাথায় হাত রেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে মেহরা। মাথা ঝিম ধরে রয়েছে।মাথা ধরে উঠে বসলে লক্ষ্য করে তার ওয়াশরুমের দরজা খুলে কেউ বেরিয়ে আসছে।

মেহরার চোখ রসগোল্লার আকার ধারণ করে, গলা ফাটিয়ে এক চিৎকার দিয়ে ওঠে।আরশমান ওয়াশরুমের অর্ধেক দরজা খুলেই আচমকা মেহরার চিৎকার শুনে ভড়কে যায়,সে বুকে হাত রেখে গোলগোল চোখে তাকিয়ে আছে মেহরার দিকে।

মেহরা মুখ অন্য দিকে ফিরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,”এই আপনি এইখানে কী করেন তাও এই অবস্থায়?আজব লোক।আবার দাড়িয়ে আছেন।বের হন আমার ঘর থেকে।”

আরশমান নিজের দিকে চাইলো,সে সবে গোসল করে টাউজার পরে বেরিয়ে এসেছে,ঠিকই তো আছে। তাহলে এই অবস্থার মানে কী?আরশমান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মেহরার সম্মুখে এসে দাড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,”আজব কী হয়েছে তোমার? আর এই অবস্থা মানে কী?”

মেহরা আরশমান এর দিকে চাইলো না।মুখ ফিরিয়ে রেখে বলল,”ভাই তুই আগে টিশার্ট পরে আয় তারপর আমার সঙ্গে কথা বলিস।প্লীজ।”

আরশমান সবে বুঝতে পারলো মিটমিট করে হাসলো।পাশের টেবিলের উপর রাখা শার্ট নিয়ে পরে নিলো,এক এক করে শার্ট এর বোতাম লাগিয়ে নিয়ে বলল,”ইশ বউ তুমি তো দেখি খুব লজ্জাবতী।”

মেহরা চাইলো না আরশমান এর দিকে প্রতিউত্তর অব্দি করলো না।আরশমান মেহরার পাশে বসলো,মেহরা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে হাত রেখে তাপমাত্রা দেখে নিলো।বলল,”আপনাকে যে কত নামে আমি সম্বোধন করবো আমি নিজেই বুঝে উঠতে পারি না।কাল রাতে জ্বরের ঘোরে যা করেছেন তাতে আপনাকে আবার লজ্জাবতী নামটা দেয়া যায় না।”

মেহরা অবাক হলো।বিস্মিত কন্ঠে বলল,”কেন কী করেছি আমি।”

“কী করিসনি বল,আমদের কথা তো বাদই দিলাম ছেলেটাকে পুরো রাত জুড়ে কত্ত জলিয়েছিস তুই জানিস?”,দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে কথাটি বলল মায়া।

মেহরা চকিত নয়নে চাইলো দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ার পানে।মায়া খাবারের ট্রে নিয়ে এগিয়ে এলো বিছানার ওপর খাবারের ট্রে রেখে বলল,”তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার খেয়ে নিবি।”

মেহরা ক্ষীণ কন্ঠে বলল,”কী করেছি মা আমি?”

মায়া হাসলো প্রতিউত্তর করলো না আরশমানের দিকে চেয়ে বলল,”বাবা তুমি আসো খেয়ে নাও।”

“নাহ্ মা আমি এখন খাবো না।আপনি গিয়ে নাস্তা করে নিন।বিশ্রাম নিন।আপনাকেও তো কম জ্বালায়নি।”

মায়া হাসলো,ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।মেহরা স্তম্ভিত সে কী করেছে?তার তো তেমন কিছুই মনে পড়ছে না।আরশমান মেহরা কে তাড়া দিয়ে বলল,”এইযে উঠুন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন মেহরা।”

মেহরা তো ভাবনায় মগ্ন,আরশমানের কোনো কথাই তার কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না।আরশমান মেহরার কাধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে,”এই কী ভাবছেন এত, কী বললাম আপনাকে শুনেছেন?”

মেহরা চাইলো আরশমানের পানে সে মুখ ফুটে জিজ্ঞেস অব্দি করতে পারছে না,সে কী করেছে?মেহরা বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো।কিয়ৎক্ষণ পর বেরিয়ে আসলো।বেরিয়েই আরশমান এর দিকে দৃষ্টি আটকে গেলো তার,সে বসে বসে খাবার মাখাচ্ছে।সে কী মেহরা কে খাইয়ে দিবে?

মেহরা এগিয়ে গেলো চুপটি করে আরশমান এর পাশে বসে পড়লো।আমতা আমতা করে বলল,”আচ্ছা আমি কী করেছি কাল রাতে?আমার বৃষ্টিতে ভেজার পর মুহূর্ত থেকে কিচ্ছুটি মনে নেই।”

আরশমান ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো বলল,”আগে টুপটি করে খেয়ে নিন তারপর বলব সমস্ত কথা।”

মেহরা ভ্রু কুচকালো বলল,”এখন বললে সমস্যা কোথায়?এখনই বলবেন।”

“একদম নাহ্।আমি বলেছি খাওয়ার পর মানে খাওয়ার পর।আর আপনি জানেন মেহরা আমি যা বলি তাই করতে পছন্দ করি।”

মেহরার রাগ উঠে গেলো।আরশমান থেকে খাবারের প্লেট টেনে নিয়ে বলল,”দিন খাচ্ছি আমি।”

আরশমান খাবারের প্লেট নিজের হাতে নিয়ে বলল,”আপনি বসুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।আর এখন এতে দ্বিরুক্তি করলে ,আমি বলব না আপনি কি কি করেছেন।”

মেহরা রাগান্বিত মুখাবয়ব বানিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,”ঠিক আছে।”,আরশমান হাসলো মেহরা কে খাইয়ে দিলো।মেহরা চুপটি করে খেয়ে নিলো।

মেহরার খাওয়া শেষে আরশমান প্লেট রেখে হাত ধুয়ে এলো। মেহরার পাশে বসে বলল,”বলুন কী দিয়ে শুরু করতে পারি।আমারই বলতে শরম করছে কী করে বলি বলুন তো?”

মেহরা বিস্মিত কন্ঠে বলল,”আপনি আবার শরমও পান?”

“আপনি যা করেছেন তাতে শরম পাওয়ারই কথা।”

মেহরা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”আমাকে একদম রাগিয়ে দিবেন না বললাম,এমন জিলাপির মত কথা না পেঁচিয়ে সোজা ভাবে বলেন।”

আরশমান মেহরার বাহু টেনে নিজের বুকের মাঝে তাকে আবদ্ধ করে বলে,”সারা রাত নিজের মায়ের সামনে এমন করে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন।”

মেহরা কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল,”মিথ্যে বলছেন আপনি?”

আরশমান মিটমিট করে হাসলো বলল,”একদম না।”

মেহরা নিজেও জানে সে জ্বরের ঘোরে উল্টো পাল্টা কাজ করে থাকে।এইটাও করতে পারে সে।সাধারণ ব্যাপার।মেহরা পারছে না লজ্জায়,কষ্টে কেঁদে ফেলতে।আরশমান পুনরায় বলল,”আরও আছে শুনুন,তারপর মা যতবার আপনার মাথায় জল পট্টি দিচ্ছিল আপনি ততবার বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠে বলছিলেন আরশমান যাবেন না।”

মেহরা আরশমানকে ধাক্কা দিয়ে তার কাছ থেকে সরে আসে,বলে,”একদম না।এই আপনি মিথ্যে বলছেন।আপনার প্রতি আমার কোনো ফিলিংস থাকলে তো তবে এইসব বলব আমি।মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছেন কেনো আমাকে?”

আরশমান হাসলো প্রতিউত্তর করলো না।গত কাল জ্বরের ঘরে আরশমানকে যেতে দেয় না মেহরা।জড়িয়ে ধরে রাখে।কিছুক্ষন পর পর বাচ্চাদের মত আদূরে কন্ঠে বলে উঠে,যাবেন না।আরশমান এই আদূরে কথা শোনার পরও কী করে চলে যেতে পারে।পুরো রাত জুড়ে মায়া,আরশমান,জাহরা মেহরার পাগলামো সহ্য করেছে।

আরশমান মেহরার হাত টেনে নিজের কাছে এনে বলল,”শাশুরির সামনে আমার ইজ্জত লুটে এখন বলছেন আমি মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছি?”

মেহরা শুকনো ঢোক গিললো সরে আসতে চাইলো।আরশমান ছাড়লো না।মেহরা চুলের ভাঁজে হাত রেখে বলল,”মেহরা এমন করে লজ্জা পাবেন না।আমি তো পাগল হয়ে যাই আপনার লজ্জা মাখা মুখটি দেখলে।যাইহোক তৈরি থাকুন এই এক সপ্তাহর মধ্যে আমাদের বিয়ে।”

#চলবে।

আমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের নিচের দিকটি কে’টে গিয়েছে।আর কা’টা স্থান কিছুক্ষণ পরপর ব্যাথা করছে।তাই আজ এত কম লিখা।আমি দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here