অর্ধ_নক্ষত্র ।২২। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
132

#অর্ধ_নক্ষত্র ।২২।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
“আমাদের ডিল করার সময় তো আপনি বলেননি রমণীদের সঙ্গে ঢ’লা’ঢ’লি করা নিষেধ।এখন এই নিষেধাজ্ঞা আমি মানছি না।”

জুনায়না তর্জনী তুলে রাগী কণ্ঠে বলে,”না মানলে এক লাথি মে’রে অন্য গ্রহে পাঠিয়ে দিবো।তখন এলিয়েন দের সঙ্গে করিস ঢ’লা’ঢ’লি।”

আসাদ ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,”এলিয়েনরা
কী বেশি সুন্দর হয়?তাহলে কিন্তু আমার যেতে সমস্যা নেই।নিউ নিউ রমণী।”

জুনায়না চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”কু’ত্তা”

আসাদ বিস্মিত কন্ঠে বলে,”কোথায় কু’ত্তা?গাড়ির মধ্যে আবার কু’ত্তা কোন জায়গা থেকে আসলো?”

“এইযে আমার সম্মুখে বসে আছে।তুই তো নিজেই একটা কু’ত্তা।”

আসাদ ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলে,”গাড়ি একবার চক্ষু হাসপাতাল এর দিকে ঘুরিও তো,এই মাইয়া আমার মত জলজ্যান্ত মানুষকে কু’ত্তা বলছে।নিশ্চিত চোখে সমস্যা।”

ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা ইন্সপেক্টর হাঁসলো বলল,”জুনায়না এত কেস সলভ করার পরও কানা হলো না সে কিনা প্রশান্ত’র খপ্পরে পড়ে কানা হয়ে গেলো?আসাদ তুই ঠিকই বলছিস।হাসপাতাল এর দিকে গাড়ি ঘোরাতে হবে।”

জুনায়না দুই হাতে মুখ ঢেকে দীর্ঘশ্বাস ছেরে বলে,”আমি পা’গ’ল হয়ে যাবো!”

“তুই সুস্থ মানুষ কবে ছিলি?”

জুনায়না আড় চোখে চাইলো আসাদ এর দিকে।

.
মাহিদ এর সঙ্গে সময় কাটাতে ব্যাস্ত তার দুই মেয়ে জাহরা,মেহরা।জাহরা আজকের জন্য ছুটি নিয়েছে, যায়নি হাসপাতাল।মেহরা বাবার জন্য একেক ধরনের খাবার তৈরি করছে মায়ের সঙ্গে।জাহরা বাবার পাশে বসে বাবার সঙ্গে গল্প করছে।হঠাৎ শব্দ করে ফোন বেজে ওঠে,পাশ থেকে ফোন নিয়ে বাবার দিকে চেয়ে বলে,”বাবা আমি কথা বলে আসছি।”,বলে নিজের ঘরে গিয়ে রিসিভ করলো বলল,”হ্যালো কে বলছেন?”

ঐপাশ থেকে পুরুষালি কণ্ঠে ভেসে এলো,”তোমার প্রেমিক পুরুষ।”

জাহরা অবাক হলো,কই তার তো এই জন্মে একটাও কপালে ছেলে জুটলো না তো প্রেমিক পুরুষ কোন জায়গা থেকে টপকে পড়লো।হালকা কেশে প্রতিউত্তরে জাহরা বলল,”কোন প্রেমিক পুরুষ?কী যা তা বলছেন?আমি আপনাকে চিনি না আর আমার কোনো প্রেমিক পুরুষ নেই।”

“আজব তুমি আমাকে চিনলে না?অবশ্য আমিও তোমার নাম টা ভুলে গিয়েছি কী যেনো তোমার নাম?”

“হু,আপনি না বললেন আপনি আমার প্রেমিক পুরুষ।তো নাম’টাই ভুলে গেলেন আমার।”

“তো তুমি কী মেনে নিয়েছ আমি তোমার প্রেমিক পুরুষ।বাহ!তাহলে চলো দুজন মিলে এইবার বিয়ে টাও করে ফেলি।তোমার প্রেমিক পুরুষ থেকে জামাইয়ে কনভার্ট হয়ে যাবো।”

“অ’স’ভ্য,ফা’জি’ল।জায়গা পান না ফাজলামি করার।”

“আমি তো তোমারই ফা’জি’ল।আর আমার এক মাত্র শশুর আব্বার সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে আমি ফা’জ’লা’মি না করলে কে করবে?”

“তুই জানিস আমার বোন একজন ইন্সপেক্টর।তোর অবস্থা কী করতে পারে তোর ভাবনার’ও বাইরে।”

“সুন্দরী শালীকার হাতে মাইর খেতে সমস্যা নেই।আচ্ছা শুনো।”

“কী হয়েছে।”

“তোমার নাম কী পঁচা মরিচ?”

জাহরা বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,”নাহ আমার নাম জাহরা।”

“উফ কলিজা টাচিং নাম তোমার।আমার জাহরা আমার জীবন।”

“জাস্ট শাট আপ।”

“আই লাভ ইউ টু!”

“আমি কখন লাভ ইউ বললাম।”

“এইযে বললে এখনই।লাভ ইউ টু।”

জাহরা চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”শাল তুই কে আমাকে বল আমি তোকে পেলে কিমা বানিয়ে রোদে শুকাতে দিবো।অসভ্য তোর আই লাভ ইউ আমি দেখাচ্ছি।”

ঐপাশ থেকে হাঁসির ঝংকার ভেসে এলো,হাঁসির ইতি টেনে বলল,”জাহরা,প্রেঙ্ক আমি, আমি ফাইজ।আর তোমাকে লাভ ইউ বলার মত ইন্টারেস্ট আমার নেই।”

জাহরা বিস্মিত কণ্ঠে বলল,”প্রেঙ্ক মানে?তোর লাভ ইউ এমনিতেও আমি একসেপ্ট করবো না”

“ধূসর,আমি,ডক্টর মিলে খেলছিলাম,তো তারা আমাকে বলল যেকোনো একজনকে প্রেঙ্ক কল দিতে তাই আমি তোমাকেই দিলাম।কী ঝাঁজ তোমার পঁচা মরিচ।”

“তোকে সামনে পেলে সত্যি কিমা বানাবো ফাজিল।”

“আমি তো তোমারই ফাইজ এত বার বলা লাগবে না আমার শরম পায়।”

জাহরার মুখ হা হয়ে গেলো।ঐপাশ থেকে পুনরায় ভেসে এলো,”আমার লাভ ইউ একসেপ্ট না করলেও আমার মা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার পর তো তোমাকেই বিয়ের প্রস্তাব একসেপ্ট করতে হবে মাই লাইফ আমার জীবন!”,বলেই হো হো করে হাঁসলো ফাইজ।

“ভাই তুই নেশা করেছিস নাকি?”

“আমি তো তুমি নামক নেশায় আসক্ত জাহরা।”,বলে পুনরায় হাঁসলো ফাইজ।

জাহরা রেগে ফোন কেটে দিলো।বিড়বিড় করলো,”সামনে পেলে ঝাটার বাড়ি দিয়ে তোর নেশা ছাড়াতাম অ স ভ্য।”

বসার ঘর থেকে মাহিদ উচ্চ স্বরে ডাকলো,”জাহরা! কার সঙ্গে কথা বলছিস এমন করে?”

জাহরা মুখ ফসকে বলে ফেললো,”জামাই এর সঙ্গে।”

মাহিদের কান অব্দি পৌঁছালো না জাহরার বলা কথাটি।জাহরা মুখে হাত চেপে কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলে,”আস্তাগফিরুল্লাহ!এই ফা’জি’ল এর সাথে কথা বলে দেখি আমারও মাথার তাঁর ছিঁড়েছে।”

জাহরা ফোন বিছানায় রেখে গেলো বসার ঘরে।বাবার পাশে বসে পুনরায় গল্প করতে শুরু করলো।

রাতে মাহিদ ও মায়ার খান বাড়ি যাওয়ার কথা রয়েছে।মেহরা ও আরশমানের বিয়ের তারিখ নিয়ে কথা বলবে দুই পরিবার।

.
আরশমান আজ একবারও ফোন করতে পারল না মেহরাকে।আজ সে বড্ডো ব্যাস্ত।মনে মনে ভাবলো,মেহরা কী একবার পারলো না তাকে ফোন করতে।ঐদিকে তো মেহরা তার বাবা মায়ের সঙ্গে সময় কাটিয়ে দিন পার করে দিচ্ছে।রাত হয়ে আসছে আজ আরশমানের বাড়ি ফিরতে একটা নয়তো দুইটা বাজবেই ,সে ভেবে নিয়েছে বাড়ি যাওয়ার আগে একবার হলেও মেহরাকে নিজ চোখে দেখে যাবে।

খান বাড়িতে বসার ঘরে বসে আছে আরশমানের মা বাবা ও ফাইজ এর মা।ফাইজ এর মা জাহরা কে নিয়ে কথা বলেছে আরশমানের মা বাবার সঙ্গে।মায়া,মাহিদ এখনও এসে পৌঁছায়নি খান বাড়িতে।

অপেক্ষার প্রহর গোনা বন্ধ করলো দরজার পানে চেয়ে বসার ঘরে বসে থাকা সকলে হেঁসে বলে উঠলো,”আসুন বেয়াই, বেয়ান।”

মায়া,মাহিদ অমায়িক হাঁসলো অগ্রসর হলো।আরশমানের মা বাবা ও ফাইজ এর মায়ের সম্মুখে এসে বলল,”আমরা দুঃখিত আসার সময় জাম-জটে পড়ে দেরী হয়ে গেলো।”

আরশমানের বাবা হেঁসে বলল,”সমস্যা নেই।বসুন বেয়াই।”

সকলে বসলো হাঁসি ঠাট্টার মাঝে শুরু হলো আলোচনা।তাদের আলোচনার মাঝে হলো হালকা নাস্তা।আলোচনা শেষে মেহরা, আরশমান এর বিয়ে ঠিক করা হলো সামনের সপ্তাহের শুক্রবার।আজ সপ্তাহের সোমবার।হাতে যেই কয়েকদিন সময় আছে তাতেই দুই পরিবারের সকল কিছু হয়ে যাবে। ফাইজ এর মা গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “মাহিদ ভাই আমার কিছু কথা ছিলো।”

মাহিদ সৌজন্যমূলক হেঁসে বলল,”জি বলুন।”

“আসলে আপনার মেয়ে জাহরা কে আমার ছেলে ফাইজ জন্য পছন্দ হয়েছে।আমি চাইছিলাম ওদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে।”

মাহিদ অবাক হলো বলল,”ওহ ফাইজ!আরশমান বাবার সেই বন্ধু।”

মায়া হেঁসে বলল,”আপা আমাদের মেহরা আরশমান এর বিয়েটা হোক তারপর নাহয় এই বিষয়ে কথা বলব আপনার সঙ্গে।”

ফাইজ এর মা হাঁসলো হাত বাড়িয়ে মায়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,”ধন্যবাদ।”

.
সময় স্রোতের ন্যায় চলে যাচ্ছে।রাত বাড়ছে আকাশের চাঁদ মেঘের আড়ালে যাচ্ছে।ঘড়ি সময় জানান দিচ্ছে দুটো বেজে এক মিনিট।আরশমান দাড়িয়ে আছে মেহরার বাড়ির নিচে।এই অব্দি গুণে গুণে বিশ বার ফোন করলো মেহরাকে আরশমান।

পুনরায় ফোন করতে মেহরা ঘুমে আচ্ছন্ন নেত্রপল্লব খুলে চাইলো।হাত বাড়িয়ে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,”কে?”

আরশমান সস্তির নিশ্বাস ফেললো মৃদু কন্ঠে বলল,”আমি মেহরা আরশমান।”

মেহরা চোখ বুজে ঘুম জড়ানো কন্ঠে’ই বলল,”কী চাই আপনার।”

“আমার তোমাকে চাই।আমি দেখতে চাই তোমাকে একবার।প্লিজ বারান্দায় আসো।”

মেহরা বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলল,”সমস্যা কী?আমাকে দেখার কী হলো আপনার?”

“তুমি আসবে না?নাকি আমি আসবো তোমার ঘরে?”

মেহরা ঘুম চোখে আশেপাশে চেয়ে বিছানা ছাড়লো,বারান্দার দিকে অগ্রসর হলো।বারান্দার দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,”দেখা হয়েছে?”

আরশমান নিচে দাড়িয়ে দেখলো মেহরা কে।চোখ বন্ধ করে কানে ফোন চেপে ধরে দুলছে সে। আরশমান হাঁসলো আইসিসিও কণ্ঠে বলল,”প্রাণ ভালোবাসি তোমায়,ভালোবাসি আপনাকে বড্ডো ভালোবাসি।”

মেহরার পাশের বারান্দায় বসে ছিল মাহিদ। আরশমানের বলা কথনটি শুনে কাউচ থেকে তড়িৎ গতিতে উঠে দাড়ালো।উঠেই খুঁজতে লাগলো কথনের মালিককে।পাশে তাকাতেই চোখে পড়ল মেহরাকে।মেহরার বারান্দার নিচে দৃষ্টি দিতে অন্ধকারে আবছা,অস্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলো আরশমানকে।তার চোখে চশমা নেই বুঝতে পারলো না এ কী আসলেই আরশমান।মাহিদ উচ্চ কণ্ঠে ধমকে বলে উঠলো,”কোন হারামজাদা রে আমার মেয়েকে ভালোবাসি বলছে।”

আরশমান জিহ্বায় কামড় দিলো হেঁসে বলল,”শশুর আব্বা আপনার মেয়ের জামাই বলছিলাম।”

“আমার মেয়ের জামাইর খেয়ে দেয়ে তো কাজ নেই তোর মত এই অবেলায় বাড়ির নিচে এসে মেয়েকে ভালোবাসি বলবে।দূর হ এইখান থেকে নাহয় আমি নিচে নেমে এলে তোর খবর আছে।”

“শশুর আব্বা দেখি তার মেয়ের মতোই ডেঞ্জারাস!”

মেহরা ঘুম ঘুম চোখে বলে,”ওলদা বেস্ট ঝগড়া চালিয়ে যাও আমি যাই।”

#চলবে।

ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।মন্তব্য করবেন আপনাদের নিকট এই অব্দি কেমন লাগলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here