#অর্ধ_নক্ষত্র ।৩৩।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati
স্ত্রীর পরিচয়ে আজ প্রশান্তর ঘরে পদার্পন করছে জুনায়না।সারা ঘর চোখ বুলাচ্ছে সে,প্রশান্ত জুনায়নার চোখের দিকে চেয়ে বলে,”এমন করে কী দেখছিস জুনায়না?”
জুনায়না মলিন হাঁসলো বলল,”আমার সংসার।”
প্রশান্ত ঠোঁট প্রসারিত করে হাঁসলো,পাঁজা কোলে তুলে নিলো জুনায়নাকে।জুনায়না চমকে গেলো হো হো করে হেঁসে উঠলো সে।হাঁসি থামিয়ে কোনো রকমে বলল,”কীরে প্রশান্ত নামক শান্ত দুষ্টু আজ নিজে থেকে হুট করে কোলে নিলো যে?”
“আমার বউ আমি কোলে নিতেই পারি।জানিস আমার বউয়ের আবার কোলে উঠতে বেশি ভালো লাগে।”
জুনায়না মুচকি হাসলো।এইবার প্রশান্ত উচ্চ স্বরে হাঁসলো,বলল,”তুই মুচকি হাসলে আমার বড্ডো হাঁসি পায় জুনায়না।”
জুনায়না মুখ ফুলিয়ে বলে,”কেনো আমার কী লজ্জা পেতে নেই?”
প্রশান্ত মৃদু হাসলো এবার,মাথা ঝুঁকিয়ে জুনায়নার কপালের নিকটে এসে আবেশে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো।জুনায়না আঁখিপল্লব বুজে নিলো,মুচকি হাসলো সে।প্রশান্ত মাথা উঁচু করে দেখলো জুনায়নার লজ্জায় মাখা মুখখানা।
প্রশান্ত হাঁটা ধরলো বসার ঘর পেরিয়ে নিজের বেড রুমের দিকে।জুনায়না আঁখিপল্লব জোড়া খুলে চাইলো ততক্ষণে প্রশান্ত তার বড় বড় কদম ফেলে নিজের বেড রুমে চলে এসেছে।
ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে এসে কোল থেকে জুনায়নাকে নামিয়ে দেয় প্রশান্ত।জুনায়নার কাঁধে হাত রেখে ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে বসার জায়গাটিতে বসিয়ে দেয় জুনায়নাকে।জুনায়না নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে প্রশান্তর কান্ড।
“তোকে এমন নিশ্চুপ মানায় না জুনায়না রানি।”,জুনায়নার কানের কাছে ঝুঁকে এসে বাক্যটি আওড়ালো প্রশান্ত।জুনায়না বড্ডো লজ্জা পেলো,মাথা নিচু করে নিমগ্ন চাইলো।প্রশান্ত হাঁসলো বলল,”আমি আজ অন্য জুনায়নাকে দেখছি না?”
জুনায়না ফিসফিস করে বলে,”আমিও আজ অন্য এক প্রশান্তকে দেখছি।”,কথাটি পৌঁছে গেলো প্রশান্তর শ্রবণেন্দ্রিয়ে।প্রশান্ত ক্ষীণ হাঁসলো।
প্রশান্ত হাত বাড়িয়ে জুনায়নার ছোট চুল গুলোকে একটি কাকড়া দিয়ে আটকে নিলো।অতঃপর গলায় থাকা গয়না গুলো খুলে দিতে শুরু করলো।জুনায়না আয়নায় প্রতিচ্ছবিতে দেখলো প্রশান্তর কান্ড।
প্রশান্ত কানের দুল একটি খুলে যখন অপরটি খুলে হাত সরিয়ে আনবে তখনই জুনায়না প্রশান্তর হাত খপ করে ধরে ফেলে,স্থির দৃষ্টিতে আয়নায় প্রশান্তর প্রতিচ্ছবিতে চেয়ে মলিন স্বরে বলে,”এমন করেই আমাকে ভালবাসবি প্রশান্ত।সবসময় তোর ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখবি আমায়।”,বলে ধিরে দাড়িয়ে ফিরে তাকালো প্রশান্তর দিকে।
প্রশান্ত ঠোঁট প্রসারিত করে হাঁসলো,জুনায়নার কপালে অধর ছোঁয়ালো সে সরে এসে বলল,”আমার ভালবাসা জুড়ে শুধুই তুই।আমার জুনায়না।”
জুনায়না কথাটি শ্রবণ মাত্রই সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরলো প্রশান্তকে।প্রশান্তর বুকের বা দিকে মুখ গুজলো সে।প্রশান্ত দুই হাতে জড়িয়ে ধরলো জুনায়নাকে।বলল,”এইযে শুনছেন ইন্সপেক্টর জুনায়না?পরেও কিন্তু জড়িয়ে ধরতে পারবেন আমাকে।এখন ফ্রেশ হয়ে আসুন দেখি।”
জুনায়না ক্ষীণ কণ্ঠের রেশ টেনে বলল,”হম যাচ্ছি,আরেকটু জড়িয়ে ধরে থাকি প্রশান্ত বাবুকে তারপর।”
..
ঘর ছোট্ট একটি মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে আছে।প্রশান্ত ফ্রেশ হয়ে চলে এসেছে।এখন সে বিছানার এক কোণে হাতে একটি বক্স নিয়ে বসে আছে।জুনায়নাকে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে সে হাঁসলো।মোমবাতির ক্ষীণ আলোর ছটা গিয়ে পড়ছে জুনায়নার শুভ্র মুখখানায়।প্রশান্ত চেয়ে থেকে বলে,”দ্রুত আয় তোর জন্য গিফ্ট আছে জুনায়না রানি।”
জুনায়না খুশি হয়ে গেলো দ্রুত প্রশান্তর নিকটে গিয়ে দাঁড়ালো।প্রশান্ত বক্সটি এগিয়ে ধরলো জুনায়নার দিকে।জুনায়না হাতে নিলো বক্সটি,অতঃপর বসে পড়লো প্রশান্তর কোলে।বক্সটি খুলতেই সাদা পাথরে চিকচিক করতে থাকা দুইটি আংটি দেখলো।জুনায়না হেঁসে বলে,”এই দুইটা আংটি তোর আর আমার?”
“হম আমাদের।”
দুজন পরিয়ে দিলো দুজনকে আংটি দুটো।দুজন দুজনের চোখের দিকে চেয়ে আছে,চোখের মায়ার সমুদ্রে ডুবে গিয়েছে দুই নরনারী।প্রশান্ত মাঝ পথেই মুচকি হাঁসলো জুনায়না দুই হাতে জড়িয়ে ধরলো প্রশান্তর গলা,কণ্ঠের রেশ ক্ষীণ করে বলল,”তোর ভালোবাসায় জড়িয়েনে আমায়।”
প্রশান্ত তার অর্ধাঙ্গিনীর অনুমতি পেয়েছে,কোমড়ে হাত রেখে ঘনিষ্ঠে নিয়ে এলো তাকে।নিজের করে নিতে আরম্ভ করলো।জুনায়না ভালোবাসার স্পর্শগুলো অনুভব করলো আবেশে।আজ এত সুখের মাঝেও চোখের কোণ ঘেঁষে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু,নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার খুশিতে আজ নাহয় অশ্রু ঝড়ুক।খুশির অশ্রু।
..
সবেই ঘরের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে নিয়েছিল আরশমান আর চোখে পড়লো তার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকা তার বধূ নয় বরং ঘুমন্ত বধূ তার মেহরা।মেহরা বেনারশী পাল্টে সাদা মাটা সেলোয়ার কামিজ পরে ঘুমের সাগরে ডুব দিয়েছে।দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের কোণে হাঁসি রেখে আরশমান চেয়ে আছে ঘুমন্ত মেহরার পানে।
বিছানার উপরে থাকা গোলাপ ফুলের পাপড়ি গুলো বিছানা থেকে ঝেড়ে নিচে ফেলে দিয়েছে মেহরা। আরশমান ভিতরে ঢুকে দরজার নব ঘুড়িয়ে দরজা আটকে দিলো আলমারি থেকে টি শার্ট ও টাউজার নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো সে।
ধীর পায়ে হেঁটে এসে বসলো বিছানায়,কিছুটা পাশ ঘেঁষে বসলো মেহরার।আরশমান এর ভেজা চুল থেকে
টিপ টিপ করে পানি পড়লো মেহরার মুখে।মেহরা চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।তা দেখে আরশমান হাঁসলো।সে শুয়ে পড়লো মেহরার পাশে,মেহরার কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো।মেহরা সজাগ হয়ে গেলো বড় বড় চোখ করে চাইলো আরশমান এর মুখের দিকে।আরশমান ক্ষীণ হাঁসলো মেহরার কপালে অধর ছুঁয়ে দিলো বলল,”খুব ক্লান্ত আপনি?”
মেহরা উত্তর করলো না। আরশমান পুনরায় বলল,”ঘুমিয়ে পড়ুন।এখন বলবেন না ছাড়তে।আমি কিন্তু একদম ছাড়ছি না আপনাকে।”
মেহরা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো আরশমানকে।বলল,”আপনার বউ হতে না হতেই এত কাছে চলে এলেন আমার।”
আরশমান হাঁসলো,হাত বাড়িয়ে মেহরার হাত টেনে মেহরাকে নিজের নিকটে নিয়ে এলো বলল,”আপনার প্রতি এখন সব রকমের অধিকার আছে আমার মেহরা।নিজের বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো কী পাপ?”
“তবুও সরুন আপনি।”
“বিয়ের আগেই আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যায়নি না,আর আজ কিনা দূরে সরে যেতে বলছেন?ঘুমিয়ে পড়ুন চুপটি করে।”
মেহরা নড়াচড়া শুরু করলো আরশমান ধমকে উঠল,”বলেছি না চুপটি করে ঘুমাতে।”
মেহরা ফুঁসে ওঠে বলে,”এমন করে চেপে ধরে রাখলে একটা মানুষ ঘুমায় কী করে।”
“ঘুমায় আপনাকে ঘুমাতে হবে।আমার বউ হয়েছেন তো এখন এমনি করে ঘুমাতে হবে আপনাকে।”
মেহরার বোধ হচ্ছে এখন রাগে কেঁদে ফেলতে।মেহরার অত্যাধিক রাগ উঠে গেলে সে আচমকাই কেঁদে ওঠে।মেহরা নিজের রাগকে সামলালো ঠোঁট উল্টে চেয়ে রইলো আরশমান এর দিকে।
আরশমান হাঁসলো বলল,”এমন করে চাইবেন না মেহরা,নিজেকে সংযত করার ওতো ক্ষমতা কিন্তু আমার নেই।ছুঁয়ে দেবো আপনার ওই অধর জোড়া।তাই এত মিষ্টি না সেজে ঘুমিয়ে পড়ুন।”
মেহরা সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজে ফেললো। আরশমান হাঁসলো আরও আবেশে জড়িয়ে নিলো মেহরাকে।
🍁
সকাল হয়েছে।আজ বাড়ির নতুন বউ ঘুম থেকে উঠেই থানায় যাওয়ার জন্য ইউনিফর্ম পড়ে তৈরি হচ্ছে।আজ বাড়িতে রিসেপশান এর অনুষ্ঠান তবুও আজ মেহরা ছুটি নিতে পারবে না সে প্রয়োজন পড়লে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করবে।আরশমান ঘুম ঘুম চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছে মেহরাকে।
মেহরা পরিপূর্ণ তৈরি হয়ে আরশমান এর দিকে যখন চাইলো তখন চকিত হলো,বলল,”এই আপনি কখন ঘুম থেকে উঠেছেন ভাই?”
আরশমান হেঁসে বলে,”উফ আপনি যে কত সুন্দর মেহরা।”
“সকাল সকাল নেশা করলেন নাকি?”
আরশমান বিছানা ছাড়লো,মেহরার দিকে এক পা এক পা করে এগোতে এগোতে বলল,”আপনাকে দেখলেই এক অন্যরকম নেশা পায়।”
মেহরা বিড়বিড় করে,”আস্তাগফিরুল্লাহ!”,থেমে উচ্চ কণ্ঠে বলে,”আপনার মাথায় সমস্যা আছে মিস্টার আরশমান।দূরে থাকুন আমার থেকে।”
আরশমান মেহরার সম্মুখে এসে দাড়িয়ে বলে,”আমি তো আপনার থেকে দূরে একদম থাকতে পছন্দ করি না।আপনাকে তো খুব কাছে পেতে চাই।”
মেহরা দুই এক কদম পিছনে চলে যায় হাত ঘড়ির দিকে চেয়ে বলে,”আমি বরং যাই।”
আরশমান হাত বাড়িয়ে মেহরার হাত খপ করে ধরে হেঁচকা টানে মেহরাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।মেহরা ভড়কে যায়।আরশমান মলিন কণ্ঠে বলে,”আপনি এত পালাই পালাই কেন করেন বলুন তো?একটু ধীরে সুস্থে দাঁড়ান আমিও যাবো আপনার সঙ্গে।”
“মানে?”
“আমার বউকে আমি একা ছাড়ি কী করে?”
“উহু! উহু!”,মেয়েলী কণ্ঠে বিষম খাওয়ার শব্দ ভেসে আসলো দরজার সম্মুখ থেকে।আরশমান ফিরে চাইলো,রুমের দরজা খোলা কেনো?মেহরা খুলেছে।
দরজার সামনে আরুই দাঁড়িয়ে।সে অন্য দিকে চেয়ে বলে,”ভুল সময়ে এসে পড়েছি।”
আরশমান মেহরাকে ছেড়ে দিয়ে বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলে,”দিলে তো রোমান্টিক তেরোটা বাজিয়ে।”
#চলবে।
আমার গল্প দিতে দেরী হলে আপনার দয়া করে কিছু মনে করবেন না।আর এক সপ্তাহ পর থেকে আমার ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম এখন একটু পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।আপনারা হয়তো বুঝতেই পারেন পরীক্ষার আগের দিন গুলো কত ব্যস্ততায় কাটে।তার উপর কিছুদিন যাবৎ কোনো কারণ ছাড়াই আমার মন খারাপ থাকে,কেনো থাকে আমিও জানি না।নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।জীবনটা সমস্যাময় হয়ে গিয়েছে আমার।🙂