আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব- ৪৫ লেখিকা- সালমা চৌধুরী

0
598

গল্প- আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে
পর্ব- ৪৫
লেখিকা- সালমা চৌধুরী

মেঘ মুখে হাসি রেখে খুব সহজভাবে কথাটা বললেও তানভির সেটাকে সহজ ভাবে নিতে পারে নি। তানভিরের দুচোখ সরু হয়ে আসে, ভ্রু জোড়ার মাঝে কয়েকস্তর ভাঁজ হয়ে গেছে। চোখের শিরা-উপশিরার বর্ণ পরিবর্তন হতে শুরু করেছে । তানভির অত্যন্ত গুরুতর কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“কে?”

মেঘ স্বাভাবিকভাবেই মজার ছলে উত্তর দেয়,
“তামিম৷ ”

সহসা তানভির ডানহাত মুষ্টিবদ্ধ করতে করতে গেইটের দিকে তাকায়, তানভিরের দৃষ্টি অবিরত তামিমকে খোঁজছে । কিন্তু তামিম কোথাও নেই। বন্যা আর মেঘ কথা বলে চলে আসলেও তামিম সেখানেই দাঁড়িয়ে পরেছিল। এইভাবে বন্যা রিজেক্ট করে দিবে এটা সে কোনোক্রমেই ভাবতে পারে নি। ভেবেছিল বন্যা হয়তো একটু সময় নিবে। কিন্তু না! মিনহাজ তামিমকে সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত।

তানভির গলা খাঁকারি দিয়ে ঢোক গিলল। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতেই মূলত এমনটা করা। রক্তচক্ষু ঢাকতে পকেটে রাখা সানগ্লাসটা চোখে দিয়েই বন্যার দিকে তাকালো। বন্যা মাথানিচু করে শান্ত মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে, বাহিরে শান্ত থাকলেও তার মনের ঝড় চলছে। এই ঝড় প্রবল রাগের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। ভার্সিটিতে উঠে জীবনে প্রথমবারের মতো দুটা ছেলে বন্ধু হয়েছে৷ কয়েকমাসের বন্ধুত্বেই তামিম এভাবে প্রপোজাল দিয়ে দিল। যতবার মনে পড়ছে ততবার রাগে বন্যার নাক ফুলে উঠছে।

তানভির গাড়ির দরজা খুলে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“গাড়িতে বস। আমি আসছি৷ ”

মেঘ গাড়িতে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় যাবে ভাইয়া?”

“কাজ আছে ”

তানভির ফোন চাপতে চাপতে ভার্সিটির মেইন গেইট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। ৫ মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসছে। চোখে এখনও সানগ্লাস পড়া। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ফোনটা গাড়ির সামনের দিকে ছুঁড়ে ফেলে, গাড়ি স্টার্ট দিল। সানগ্লাসের কারণে চোখ দেখা না গেলেও মুখবিবরে আঁটকে রাখা নিঃশ্বাসের কারণে গাল দুটো অনেক বেশি গুলুমুলু দেখা যাচ্ছে। মেঘ বন্যাকে এটা সেটা বলে হাসানোর চেষ্টা করছে। তামিমের বিষয়টা বন্যা সিরিয়াসলি নিলেও মেঘ এত সিরিয়াসলি নেয় নি বরং খুব মজা পেয়েছিল। কিন্তু বন্যাকে সে এভাবে মুড অফ করে থাকতে দিবে না। তাই রাজ্যের যত আজগুবি কাহিনী বানিয়ে বানিয়ে বন্যাকে বলছে। একপর্যায়ে বন্যার সব রাগ মেঘের আজগুবি গল্পের কাছে হার মেনে নিয়েছে। বন্যা হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরেছে। সেই সাথে মেঘও হাসছে। তানভির গাড়ির মিররের দিকে তাকিয়ে দুজনের স্বতঃস্ফূর্ত হাসি দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারও মুখ ফুলিয়ে শ্বাস টানলো। দুই বান্ধবীর হাসি থামার নাম ই নেই। আজ যে ড্রাইভারের বদলে তানভির গাড়ি চালাচ্ছে এদিকে মেঘের কোনো হুঁশ নেই। আচমকা বন্যার নজর মিররে পড়তেই আঁতকে উঠে মেঘের হাত চেপে ধরে। শেষ! তানভিরের গুরুগম্ভীর চেহারা দেখে দুই বান্ধবীর হাসি গায়েব। চোখে- চোখে ইশারায় কথা বলছে। তখনই তানভিরের ফোনে কল আসে। কল টা রিসিভ করে লাউডস্পিকারে রেখে দেয়। আবির স্বাভাবিক কন্ঠে প্রশ্ন করে,
“কোথায় আছিস?”

আবিরের কন্ঠ শুনে মেঘ নড়েচড়ে বসে। বিড়বিড় করে বন্যাকে বলে,
“এইযে হিট*লা*র কল দিয়ালছে।”

তানভিরের গুরুতর কন্ঠের জবাব,
“রাস্তায়। ”

আবির উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“আমার ব…”

ওমনি তানভির লাউডস্পিকার অফ করে এক হাতে ফোন কানে ধরেছে। দু-একটা কথার জবাব দিল কি না, তানভির গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করল,
“তোমাকে আমি কতগুলো টেক্সট করেছি, তুমি কি সেগুলো দেখো নি?”

আবিরের উত্তর শুনা গেল না। তানভির কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“সেগুলো দেখে দ্রুত রিপ্লাই করো। রাখছি।”

বন্যা আর মেঘ দুজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করল৷ কারো মুখে কোনো কথা নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকল। মেঘদের বসিয়ে তানভির সোজা ফ্রেশ হতে চলে গেছে। চোখে-মুখে পানি দিয়ে টিস্যু দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে ওদের বিপরীতে বসে। সেই ভার্সিটির সামনে সানগ্লাস পরেছিল সেটা সবেমাত্র খুলেছে৷ মেঘ খাবারের কথা বলতে গিয়ে তানভিরের দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে যায়। করুণ স্বরে আর্তনাদ করে উঠে,
“ভাইয়া তোমার চোখ এত লাল কেন?”

মেঘের আর্তনাদে বন্যাও সেদিকে তাকায়। চোখাচোখি হয় দুজনের। তানভিরের চোখের প্রতিটা শিরা-উপশিরা রক্তাভ হয়ে আছে। তা দেখে বন্যাও ভয় পেয়ে গেছে। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে বন্যা। তানভির ও অন্যদিকে তাকিয়েছে৷ কিন্তু মেঘ অনর্গল প্রশ্ন করেই যাচ্ছে,

“তোমার চোখে কি কিছু পড়েছে? তুমি কি অসুস্থ? কিছু হয়ছে? রাগ উঠছে? কোনো বিষয় নিয়ে আপসেট? ”

বোনের অবিরাম প্রশ্নের উত্তরে তানভির শুধু বলল,
“চোখে-মুখে পানি দিয়েছি, হয়তো তারজন্য। ”

মেঘ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করছে। ভ্রু যুগল কুঁচকে আছে। সে আবিরের রাগান্বিত চোখও দেখেছে। কিন্তু এতটা ভয়ানক নয়৷ মেঘ পুনরায় বলল,

” পানি দিলে চোখ এত লাল হয়? আমায় বেক্কল পাইছো? ভালো করে তাকাও তো দেখি!”

তানভির টেবিল থেকে সানগ্লাস নিয়ে পুনরায় চোখে দিয়ে ভারী কন্ঠে বলল,
“হয়েছে, এত ডাক্তারি করতে হবে না। ”

মেঘ ভেঙচি কেটে ঢং করে বলল,
“আমার ভাইয়ের ব্যাপারে আমি ডাক্তারি করবো না তো কে করবে শুনি? অবশ্য তুমি চাইলে অন্য ব্যবস্থাও করতে পারি। ”

তানভির কপাল গুটিয়ে প্রশ্ন করল,
“কি ব্যবস্থা?”

“আব্বুকে বলে একটা ডাক্তার ভাবি বাসায় নিয়ে আসব৷ তখন আর আমার ডাক্তারি করতে হবে না। চোখ লাল কেন, হাত কাটা কেন, মাথা ধরা কেন এ সবকিছুর চিকিৎসা ভাবিই করবে৷ ”

তানভির ফোন রিসিভ করে উঠতে উঠতে বলল,
” হ্যাঁ! ডাক্তার মেয়ের বাপেরা তো আমায় মেয়ে দেয়ার জন্য বসে আছে। পাকামি বাদ দিয়ে খাবার শেষ কর। ”

তানভির কথা বলতে বলতে উঠে গেছে। বন্যা মেঘের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উঠল। এতক্ষণ যাবৎ অনেক কষ্টে সে হাসি আঁটকে রেখেছিল। বন্যার হাসি দেখে মেঘ প্রশ্ন করল,
“হাসছিস কেন?”

“তোদের কথা শুনে আমি কল্পনায় তোর ভাই আর ভাবিকে নিয়ে ভাবছিলাম। তোর ভাইয়ের যেই রাগ আর তেজ, কোন মহীয়সীর কপাল যে পুড়বে আল্লাহ ভালো জানেন। ভাবি সকাল-সন্ধ্যা হাসপাতালে ভর্তি থাকবে। ”

মেঘ গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে বলল,
“তোরে বলছে ! আমার ভাই যতটা রাগী তার থেকে কয়েকগুণ বেশি কেয়ারিং। শুধু রাগী আর উগ্র মেজাজ হলে আমার মাইর খেয়ে সারাবছর হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হতো। অথচ আমার ভাই আজ পর্যন্ত আমায় একটা থা*প্পড় পর্যন্ত দেয় নি।”

বন্যা ঠাট্টার স্বরে বলল,
“আমি বিশ্বাস করি না। সত্যি করে বল কয়দিন মাইর খাইছিস?”

“সত্যি বলছি, একদিনও না। ”

এরমধ্যে তানভির চলে আসছে। ভারী কন্ঠে বলল,
” খেতে বসে এত কথা কি?”

মেঘ পাস্তার পেট তানভিরের দিকে এগিয়ে দিয়েছে৷ তানভির খাবে না ৷ মেঘদের খাওয়া শেষ করতে করতে কম করেও ৪-৫ বার ফোনে কথা বলার জন্য উঠে গিয়েছে। যতবার এসে বসেছে ততবার মেঘ এটা সেটা সেধেছে কিন্তু তানভির কিছুই নিচ্ছে না। অবশেষে মেঘ আর বন্যার জোরাজোরিতে তানভির একটা ড্রিংকস নিয়েছে। কালোরঙের গ্লাস ভেদ করে তানভির এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বন্যার লালিত মুখমণ্ডলে। মেয়েটা আহামরি সুন্দরী নয়, তবে তার চোখের দিকে তাকালে মনে হয় উপচে পড়ছে তীব্র মায়া। ছোট থেকেই মেয়েটাকে দেখছে তানভির। কিন্তু কখনও ঐভাবে চোখ-মুখ খেয়াল করে নি। তবে ইদানীং মেয়েটার প্রতি অন্যরকম টান কাজ করে। রাত বিরেতে হঠাৎ ই তাকে দেখার সাধ জাগে। দেখা হলেও ঠিকমতো তাকাতে পারে না। চোখাচোখি হলে মেয়েটা লজ্জায় নুইয়ে যায়। মেয়েটার অস্বস্তি দেখে তানভিরও আর তাকাতে পারে না। সামনে থাকলে তাকাতে পারে না ঠিকই কিন্তু চোখের আড়াল হলেই বুকের ভেতর ছটফটানি শুরু হয়ে যায়। যেই ছটফটানির বলে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়৷ আজ মেঘ সাথে থাকায় বন্যা মেঘের সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত। এই সুযোগে তানভির মুগ্ধ আঁখিতে বন্যাকে দেখেই যাচ্ছে। আচমকা তানভিরের দু’ঠোঁটের এক কোন কিঞ্চিৎ প্রশস্ত হয়। ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুক টাইমলাইনে একটা পোস্ট করে,

“তুমি আমার ক্ষয়িষ্ণু হৃদয়ের মায়াময় প্রশান্তি।”

ওদের খাওয়া শেষ অনেকক্ষণ হলো। মেঘ কয়েকবার তানভিরকে চলে যাওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু তানভির তার কথা কানেই তুলছে না। বন্যার বাসা থেকে কল আসছে, কথা শেষ করে বন্যা চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলল,
“আমি আসছি মেঘ। বাসায় যেতে হবে।”

মেঘ ঘাড় কাত করে সম্মতি দিলেও তানভির হুঙ্কার দিয়ে উঠে,
“এই মেয়ে, কোন সাহসে উঠে যাচ্ছো? বসো বলছি৷ ”

বন্যার সম্পূর্ণ দেহ একসাথে কম্পিত হয় সেই সাথে হৃৎস্পন্দন থেমে গেছে কয়েক সেকেন্ডের জন্য। ধপ করে চেয়ারে বসে পরেছে। নিঃশব্দে শ্বাস ছাড়ল। এমনভাবে সে কখনোই কারো ধমক খায় নি। ভয়ে কলিজা পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গেছে। বন্যার সাথে মেঘও কিছুটা ভয় পেয়েছে। দু’জোড়া চোখ অসহায়ের মতো তানভিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তানভির কপাল কুঁচকে বিরক্তির স্বরে বলল,

“আমি যখন নিয়ে আসছি, বাসা পর্যন্ত আমি ই দিয়ে আসব। ”

বন্যা কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলল,
“ইমারজেন্সি বাসায় যাওয়া প্রয়োজন। ”

“কেন? বাসায় যাওয়ার এত তাড়া কিসের? ”

“নানু অসুস্থ। দেখতে যেতে হবে। ”

“ওহ আচ্ছা । চলো তাহলে। ”

“আমি একা.. ”

তানভির গাড়ির চাবির রিং সহ হাতটাকে এমন ভাবে টেবিলের উপর রেখেছে, যে কাঁচ আর চাবির শব্দে আশপাশ স্তব্ধ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে বন্যার অর্ধেক বলা কথাটাও। যথারীতি ওদের নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল তানভির । কিছুদূর যাওয়ার পর থেকেই তীব্র যানজট । তানভির স্টিয়ারিং এ মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। তামিমের ঘটনা মাথা থেকে কোনোভাবেই সরাতে পারছে না। খানিক বাদে বাদে রক্ত টগবগ করে উঠছে। রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না আর সেই রাগের প্রভাব পরছে মেঘ আর বন্যার উপর। যানজট পেরিয়ে বন্যাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। তারপর মেঘকে নিয়ে বাসায় আসছে। বাসায় ঢুকে এক গ্লাস পানি খেয়ে, ফ্রিজ থেকে বরফের টুকরো বের করে মাথায় দিতে দিতে বেরিয়ে পরেছে। হালিমা খান, আকলিমা খান এতবার ডাকলেন, কত প্রশ্ন করলেন কিন্তু তানভির নিরুত্তরে বেড়িয়ে গেছে।

ঘন্টাখানেকের মধ্যেই তানভির আবিরের অফিসে আসছে। আশেপাশে না তাকিয়ে সরাসরি আবিরের কেবিনে হাজির হলো। চোখের সানগ্লাস টা খুলে টেবিলের উপর ছুঁড়ে ফেলে৷ আবির দীর্ঘ মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছিল। আবিরের অপর পাশে টেবিলের পাশে দু’হাত রেখে কিছুটা ঝুঁকে রাগান্বিত কন্ঠে হুঙ্কার দিয়ে উঠে,

“আটকালে কেন আমায়?”

আবির নিরুত্তর। তানভির পুনরায় বলা শুরু করে,

“দুদিন হয় নি ঢাকা এসে মানুষের পাখনা গজাই গেছে। পাখনা দুটা আজই পুড়াইয়া দিতাম। ঐ ছেলের বন্যাকে প্রপোজ করার সাহস হয় কি করে! তার বুকটা চিঁড়ে হৃদপিণ্ডটা মেপে দেখার অতীব ইচ্ছে আমার। আটকালে কেন আমায়? ”

আবির ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,
” বস৷ ”

“আমি এখানে বসতে আসি নি। তুমি মারবার জন্য নিষেধ কেন করেছো? ঐ ছেলের প্রতি এত দয়া কিসের তোমার? এখনও সময় আছে, একবার ওকে বলো!”

আবির একটু উচ্চস্বরে পিএস কে ডাকলো। পিএস আসতেই স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

“একটা কোল্ড কফি দিতে বলো। সাথে কিছু নাস্তা আনানোর ব্যবস্থা করো।”

“জ্বি ভাইয়া। ”

আবির পুনরায় ডাকল,
“শুনো”

“অন্য কাউকে না পাঠিয়ে বরং কষ্ট করে তুমি যাও। নাস্তার সাথে ভালো দেখে একটা ফুলের মালা নিয়ে আইসো। আর হ্যাঁ অবশ্যই সেটা যেন তাজা ফুলের মালা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আমার অফিসে আসছে। কাগজফুলের মালা দিলে তো মানসম্মান থাকবে না। ”

“জ্বি আচ্ছা ভাইয়া। ” বলে পিএস চলে গেছে। তানভির অগ্নিদৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। পিএস বের হতেই তানভির রাগান্বিত কন্ঠে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেছে। আবির সেসবে পাত্তা না দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে আর মিটি মিটি হাসছে।
তাদের দু’ভাইয়ের দু রকম সমস্যা। আবিরের রাগ যখন কন্ট্রোলের বাহিরে চলে যায় তখন তার হাত পা স্থির থাকে না, কোনো ছেলের উপর রাগ উঠলে সেই ছেলেকে হাসপাতালে পাঠিয়ে তবেই শান্ত হয় আর পরিবার বা প্রিয়তমার উপর রাগ করলে সেই রাগ নিজের উপর দিয়ে যায়৷ কখনও দেয়ালে অবিরাম ঘু*ষি দিয়ে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করে, কখনো বা শখের জিনিস গুলো ভেঙেচূড়ে একাকার করে ফেলে। অন্যদিকে তানভিরের স্বভাব উল্টো, মারপিটে তার তেমন আগ্রহ নেই। তবে আবির বিদেশে থাকাকালীন ভাইয়ার জন্য অনেকবার অনেককেই হালকা পাতলা মাইর দিতে হয়েছে। তবে খুব বেশি রাগ উঠলে তানভির প্রচুর চিল্লায়। যা মুখে আসে তাই বলতে থাকে, কাউকে পরোয়া করে না। তার কথায় লজিক থাকুক বা না থাকুক রাগ উঠছে মানে সে চিল্লাবেই৷ এই স্বভাব অনেকটা মেঘেরও আছে। বুঝক আর না বুঝক চিৎকার করে বাড়িঘর মাথায় উঠিয়ে ফেলবে। পুরো ১০ মিনিট তানভির গলা ফাটিয়ে চিৎকার চেচামেচি করেছে। অথচ আবির নিরব শ্রোতা। সে তার ভাইয়ের স্বভাব জানে। তানভিরের রাগ উঠেছে মূলত তামিমের উপর। এই রাগ আরও ২-৩ মাস আগে থেকেই। আবিরকে সে বেশকয়েকবার ওয়ার্ন করেছে। মারতেও চেয়েছে কিন্তু আবির প্রতিবার ই বাঁধা দিয়েছে। কথা বলে বা মেরেই হোক বিষয় টা সমাধান করে ফেললে আজ এই দিন দেখতে হতো না! অথচ আজও আবির নিরব, ছেলেকে কিছু বলতেও নিষেধ করেছে। এই রাগেই তানভির উল্টাপাল্টা চিল্লাচ্ছে।আবির তার কথায় মনোযোগ দিচ্ছে না দেখে তানভির হুট করে আবিরের ল্যাপটপ অফ করে দিয়েছে। আবির ভ্রু কুঁচকে বলে,

” কাজ টা শেষ করতে তো দিতি ”

তানভিরের রাগ তিনগুণ বেড়ে গেছে, হুঙ্কার দিয়ে বলল,
“কোনো কাজ করতে হবে না। তুমি আমার বিষয় সমাধান করে তারপর যা ইচ্ছে করবা।”

একপর্যায়ে তানভিরের মেজাজি কথাবার্তা শুনে সবাই আবিরের রুমের সামনে হাজির হয়ে গেছে। রাকিব নিজের রুমে থাকায় সে এই ঘটনার কিছুই শুনেনি। ২-১ জন বাধ্য হয়ে শেষমেশ রাকিবকে জানিয়েছে। রাকিব তৎক্ষনাৎ ছুটে আসে

তানভিরের কথার জবাবে আবির হেসে বলে,
“জ্বি জনাব। আপনি যা বলবেন তাই হবে। অনেকক্ষণ যাবৎ চিল্লাচিল্লি করছেন৷ অনুগ্রহ করে আপনি শান্ত হয়ে একটু বসুন। কফি টা খেয়ে, নাস্তা করে আবার শুরু করবেন। ঠিক আছে? ”

টেবিলের উপর থেকে একটা কাঠের বক্স দেয়ালে ছুঁড়ে মারে আর চিৎকার করে বললে,
“কিচ্ছু ঠিক নেই। আর তুমিও ঠিক নেই!”

ছুঁড়ে ফেলা বক্সটা দেয়ালে লেগে ফেরত আসে। এমন সময় রাকিব রুমে ঢুকে। তৎক্ষনাৎ না সরলে বক্সটা রাকিবের মাথায় লাগতো। রাকিব আঁতকে উঠে বলে,

“তোরা দুই ভাই কি আমায় মা*রার প্ল্যান করছিস নাকি? কি হয়ছে তানভির?”

তানভির ভারী কন্ঠে বলে,
” তোমার বন্ধু আমার ভাই হতে পারে না৷ এই আবিরকে আমি চিনি না। ”

“কেন কি হয়ছে?”

তানভির পুনরায় বলল,
“তোমার বন্ধুর দেশে ফেরার কারণ টা তোমার মনে আছে ভাইয়া? ”

“হ্যাঁ! জয়কে পিটাতে। ”

“এক ছেলেকে পেটানোর জন্য নিজের কাজ শেষ না করে, ইমার্জেন্সি টিকেট ম্যানেজ করে দেশে ফিরেছিল। আমরা কতবার বলেছিলাম জয়ের বিষয়টা আমরা দেখতে পারব।অথচ সে আমাদের কথা না মেনে দেশে ফিরেছে, ঐ ছেলেকে মেরে হাসপাতালে পাঠাইছে। টানা ৩ মাস ছেলে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। ঐ ছেলের অপরাধ ছেলে আমার বোনের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। কথা তো বলতে পারেই নি উল্টো হাত- পা ভাঙলো। অথচ তিনমাস হলো বনুরা দুটা ছেলের সঙ্গে চলাফেরা করে, কথা বলে এদিকে তার কোনো হুঁশ নেই। এ কোনোভাবেই আমার ভাই হতে পারে না। ”

রাকিব মৃদু হেসে বলল,
“এই বিষয় নিয়ে আমিও আবিরকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু ও র মাথায় কি ঘুরতেছে এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এইযে অফিসে আসে, নিজের মতো কাজ করে, কাজ শেষে চলে যায়৷ এমনিতে তো কোনো কথা বলেই না, কোনো কিছু দশবার জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেয় না।”

তানভির কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবিরের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,
” আমার খুব ভয় হচ্ছে, ভাইয়ার এমন আচরণ আমায় খুব ভাবাচ্ছে। ভাই হয়ে বোনের প্রতি অন্যায় করছি না তো? যাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করি, যার হাতে আমার একমাত্র আদরের বোনকে তুলে দিয়েছি সে আমার বোনকে আর আমাকে ঠকাবে না তো?”

আবিরের ভ্রু কুঁচকে আসে, দু ভ্রুরের মাঝে কয়েকস্থর ভাঁজ পরে, গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে,
“কি সব বাজে কথা বলছিস। অনেক হয়ছে এবার থাম৷ ”

তানভির পুনরায় উচ্চ স্বরে বলে,
“কেন থামবো? আমি কি এমন বাজে কথা বলছি, তুমি বেশকিছুদিন যাবৎ আমার বোনকে ইগ্নোর করতেছ, কি ভাবছো আমি দেখি না? আমাকেও কিছু শেয়ার করো না, নিজের মর্জি মতো চলো, ৩ দিনের জন্য বাড়ি থেকে গায়েব হয়ে গেছো। এত এত কল দিলাম, রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করো নি। একটা সময় পর্যন্ত যেই আবির ভাইয়া বলতো, আমার বোনের চোখে নিজের ধ্বংস দেখে, সেই এখন আমার বোনের হাস্যোজ্জল জীবন টাকে ধ্বংক করতে উঠে পড়ে লেগেছে। সত্যি করে বলো, আমার বোনের থেকেও তোমার জীবনে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের আবির্ভাব হয়েছে যে তুমি আমার বোনকে এত অবহেলা করছো৷ নাকি তোমার জীবনে নতুন কোনো রমনীর আগমন ঘটেছে? যে আমার বোনের থেকেও… ”

তানভির কথা সম্পূর্ণ করার আগেই আবির রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“আমার লোচনে দেখা ভয়ংকর সুন্দরী হলো আমার মেঘ। এই তল্লাটের লক্ষকোটি সুশ্রীদের ভিড়েও আবিরের দৃষ্টি এক কাদম্বিনীতেই আটকাবে।নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তার মোহাচ্ছন্নতা ব্যতীত আবিরকে ধ্বংস করার কোনো অস্ত্র, এখনও আবিষ্কৃত হয় নি৷
শেষ বারের মতো বলছি কান খুলে শোন, তোর বোনই আমার জীবনের একমাত্র রমনী, যার আগে বা পরে ভুলক্রমেও কোনো মেয়ে আমার জীবনে আসে নি আর আসবেও না। তোর বোন ছিল, আছে, আর সারাজীবন পাশে থেকে এই আবিরের উপর তার কর্তৃত্ব চালাবে। এক আবিরের প্রাণ এক মেঘেতে নিবদ্ধ।”

“যদি তাই হয় তবে আমার বোনের প্রতি এত অবহেলা কেন? আমার বোনকে কেউ অবহেলা করবে এটা আমি কখনো সহ্য করব না। সে যদি সাজ্জাদুল খান আবিরও হয় তাও I Don’t Care.”

আবির ভ্রু উঁচিয়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। তানভির যে তাকে ঠান্ডা হুমকি দিচ্ছে আবির খুব ভালোই বুঝতে পারছে। তাই এভাবে চেয়ে আছে!

“ভাই হিসেবে কি আমি চাইবো না যে, আমার বোন সবসময় হাসিখুশি থাকুক? এটা কি আমার অপরাধ? ”

আবির নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে কন্ঠস্বর দ্বিগুণ ভারি করে বলে,
” আমার তোর বোনকে অবহেলা করার জন্য তোমার বোনই দায়ী। ও কে আমি যতটা সম্ভব আগলে রাখি। ভার্সিটিতে উঠার পর থেকে সব রকম স্বাধীনতা দিচ্ছি। শুধুমাত্র তোর বোনকে খুশি রাখার জন্য। ড্রাইভার আংকেল প্রায় ই ১ ঘন্টা, ৩০ মিনিট, ২০ মিনিট তোর বোনের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে৷ তোর বোন বন্ধু- বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দেয়, খাওয়াদাওয়া করে। আংকেল ডাকতে গেলে ওর মন খারাপ হবে তাই আংকেল কে বলছি যতক্ষণ ই সময় লাগুক না কেন ওনি যেন অপেক্ষা করেন। আমার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করি যেন তোর বোন হাসিখুশি থাকে। তোর বোনের অবহেলা দেখে তোর কষ্ট হচ্ছে অথচ তোর বোন যখন আমাকে অবহেলা করে তখন? আমার খারাপ লাগে না? যেখানে তোর বোনের ঠোঁটে হাসি না থাকলেই আমার বুকে চিনচিন ব্যথা শুরু হয়ে যায়, যার হাসিতে আবির বাঁচে, তার হাসি না দেখে আবির বাঁচতে কেমন করে?”

“কি হয়ছে?”

” মাইশা আপুর বিয়ের সময় তুই না করা স্বত্তেও আমি জোর করেই ও কে নিয়ে আসছিলাম যাতে মালা তোর বোনের মাথায় আজেবাজে কথা ঢুকাতে না পারে। ভার্সিটির ক্লাস শেষে আমার জন্য ওয়েট করতে বলছিলাম। তোর বোনের হাতের মেহেদী নষ্ট করেছি, মন খারাপ করে ছিল৷ ভাবলাম মেহেদী মুছার বিষয়টা ও কে বুঝিয়ে বলবো। অথচ তোর বোনের অপেক্ষা করার ধৈর্য হয় নি। বন্ধুদের সাথে খেতে চলে গেছে। যাও ভেবেছিলাম ও কে বুঝাবো।৷ ওর আচরণে কথা বলতেই ইচ্ছে হয় নি। তারপর আরেকদিন ফেসবুকে ঢুকতেই তোর বোনের পোস্ট সামনে আসছে। যেখানে তামিম আর মিনহাজের উল্টাপাল্টা কমেন্ট দেখে আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে। স্বাধীনতা দিয়েছি বলে ঐ ছেলেগুলোকে ফ্রেন্ডলিস্টে এড করে ফেলবে? একবার ভাবার প্রয়োজন বোধ করে নি। ঐদিন বাসায় যাওয়ার পর তোর বোন কি যেন বলতে আসছিল, আমি একপ্রকার রাগেই কথা বলছিলাম, এতে তোর বোন রেগে গেছে। এরপর রাতে তোদের বাপ-ছেলের কথোপকথন শুনে আমার মেজাজ আরও খারাপ হয়ছিল। তোর বাপ যেভাবে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির সুখের কথা বলছিলেন, তা সহ্য করতে পারি নি তাই চলে আসছিলাম। ৫ দিন থাকলে কাজ মোটামুটি গুছাতে পারতাম। নতুন বছর শুরু হচ্ছে। ভেবেছিলাম ১২ টায় তোর বোনকে কল দিয়ে একটু কথা বলে নিব। কিন্তু ১০ টার দিকে দেখি তোর বোন অনেকগুলো কল দিছে। কল ব্যাক করতেই শুনি কান্না করতেছে। কিসের কাজ কিসের কি সব ফেলে বাসায় গেছি। তোর বোনের অভিমান ভাঙানোর সুযোগ টাও পেলাম না। হুট করে মালা কল দিয়েছে, দূর্ভাগ্যক্রমে তোর বোন সেই কল দেখে ফেলছে আর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে। সেই থেকে তোর বোন আমায় দেখলেই রাগে ফুঁসতে থাকে। এতে আমার কি দোষ বল! মালাকে কি আমি বলছিলাম আমায় কল দিয়ে আমার রোমান্টিক মুডের ১৪ টা বাজা। ”

“তাহলে কার দোষ? আর মালার কি লাজ লজ্জা বলতে কিছু নাই?”

“বিয়ের দিন তো তুই সামনেই ছিলি। যা যা ঘটেছে সবটায় তোর সচক্ষে দেখা। এখন মালার যদি লজ্জা না থাকে তো আমি কি করব? ”

“মালা কেন কল দিছিল?”

“জানি না৷ কথা হয় নি।”

” ফোনটা দাও”

“আমার ফোন?”

“হ্যাঁ!”

“কেনো?”

“তুমি যা বলছো তা সত্যি কি না দেখি!”

“মানে? তুইও কি তোর বোনের মতো আমায় অবিশ্বাস করিস?”

“বিশ্বাস অবিশ্বাস কিছু না৷ আমার বোন যতদিন তোমার উপর অধিকার দেখাতে পারবে না ততদিন আমাকেই সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদি একটু এদিক সেদিক পাই তাহলে বনুকে দিব না। ”

আবির ফোন বের করে তানভিরের সামনে টেবিলে রেখে রাগী স্বরে বলল,
“নে ফোন। যা পরীক্ষা করার কর। কিন্তু বার বার তোর বোনকে টেনে আমায় থ্রেট দিবি না। তোর বোন আমার মানে আমার ই। বেশি করলে ওরে কিডনাপ করে বিয়ে করে ফেলব। ”

তানভির হেসে ফোনটা হাতে নিল। হোমস্ক্রিনে মেঘের ছবি দেয়া। তানভির আবিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“ভাই প্লিজ, একটা ফাইল ছাড়া যা দেখার দেখ।”

তানভির ঠাট্টার স্বরে বলল,
“কেন কি আছে ঐ ফাইলে? দেখতে হচ্ছে তো!”

“তোর বোনের আর আমার ছবি আছে, যা দেখে আয়। ছবি দেখে লজ্জায় পড়লে আমি দায়ী না। ”

তানভির এক মিনিটেই ফোন আবিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“বনুর সাথে কথা বলো। ”

আবির ফোনের ক্রিনে তাকাতেই নাম ভেসে উঠেছে ,
“হৃদয়হরনী” কয়েক সেকেন্ড হয়ে গেছে কল রিসিভ হয়েছে। আবির কল কানে ধরতে ধরতে তানভিরের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকালো। এভাবে মেঘকে কল দেয়ায় খুব অস্বস্তিতে পরে গেছে সে। ফোন কানে ধরে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে আবির প্রশ্ন করল,
“কি করছিস?”

মেঘের রাগান্বিত কন্ঠের জবাব,
“ঘাস কাটি।”

“মানে?”

“শুয়ে আছি। ”

“খাইছিস?”
“ভাইয়া ট্রিট দিয়েছে। জানেন না?”

জানি৷
তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন?
এমনি।
“কল দিয়েছেন কেন?”

“দিতে পারি না?”
” অবশ্যই পারেন কিন্তু আমায় কল দিতে হবে না। রাখছি, ঘুমাবো। ”

মেঘ কল কেটে দিয়েছে৷ আবির তানভিরের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলল,
“দেখছিস, এজন্যই কথা বলি না। ও যে ছেলেদের সাথে মিশছে, ঘুরছে সেদিকে সমস্যা নেই৷ আমায় কেন মালা কল দিয়েছে এই জিদে এখনও এমন করতেছে৷ এই হলো মেয়ে জাতি। নিজের বেলা ১৬ আনার ১৬ আনা ই লাগবে। আর অন্যের বেলায় দুনিয়া ভেসে যাক। ”

তানভির আর রাকিব দুজনেই স্ব শব্দে হাসছে। দুভাইয়ের কথোপকথনে রাকিব এতক্ষণ নিরব দর্শক ছিল৷ দুই ভাই রাগারাগি করবে একটু পরেই মিলে যাবে এটা অনেক পুরোনো ঘটনা৷ অনেকক্ষণ আগেই কফি আর নাস্তা নিয়ে আসছে৷ মালাটাও রাকিবকে দিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ওদের কথা কাটাকাটি দেখে রাকিব ফুলের মালাটা পাশেই রেখে দিয়েছিল। তানভিরের মেজাজ এখন অনেকটায় শান্ত। সে আপন মনে কফি খাচ্ছে।

আবির মৃদু হেসে প্রশ্ন করল,
“তুই এখানে কেন আসছিলি বলতো! তামিমকে মারতে দেয় নি তারজন্য। অথচ ১ ঘন্টা যাবৎ তোর বোনকে নিয়ে ঝগড়া করছিস। এখন তুই ভাব তোর রাগ কেমন! লজিক থাকুক আর না থাকুক, রাগ উঠছে মানে চিল্লাতেই হবে৷ ”

তানভির ভারী কন্ঠে পুনরায় হুঙ্কার দিল,
“তুমি অনুমতি দিকে ঐ ছেলেকে এখনই মাটিতে কুপে রেখে আসবো।”

“তাতে কি লাভ হবে শুনি! আমি পুরো ঘটনায় জানি। তুই যা বলেছিস সেটাও বুঝেছি৷ কিন্তু সমস্যা টা হচ্ছে তোর ওনি। তোর ওনার ব্যাপারে যতটুকু তথ্য আমি পেরেছি, ওনি খুব বাস্তববাদী একজন মানুষ আর খুব স্ট্রিক৷ তোর বোন জেদি ঠিক আছে তবে আমি তাকে সামলানোর ক্ষমতা রাখি। কিন্তু তোর যা অবস্থা, রাগ উঠলে লজিক বেলজিক যেভাবে একাকার করে ফেলিস! থাক আর কিছু বললাম না। এখন মূল ঘটনায় আসি,

তোর ওনাকে তামিম প্রপোজ করছে। ওনি যদি স্ট্রং ম্যান্টালিটির মেয়ে না হতো তাহলে ওনি মুখের উপর রিজেক্ট করতে পারতো না। সময় নিতো, ভাবতো পরে ইনিয়ে বিনিয়ে না করতো। এখন এই ঝামেলা বিহীন ঘটনায় তুই গিয়ে হুট করে ঐ ছেলেকে পেটালি৷ এতে আর কিছু হোক বা না হোক বন্যার সামনে তোর ইমেজ টা নষ্ট হবে। তুই রাজনীতি করিস এটা অলরেডি একটা নেগেটিভ ইস্যু, এখন এভাবে মারপিট করলে অবশ্যই বন্যার কানে কথা যাবে৷ তোর প্রতি তার নেগেটিভ চিন্তাভাবনা আরও বেড়ে যাবে। এখন তো কথা বলে, পরে দেখবি তোকে দেখলে কথাও বলবে না। তখন প্রপোজ করতে গেলে জীবনেও এক্সেপ্ট করবে না। বরং সম্পর্ক আরও নষ্ট হবে। আমি চাই না তুই একই ধাক্কা দুবার খাস। প্রথমবার তোর ভুল ছিল না তবুও কষ্ট টা তুই বেশি পাইছিস। এতবছর পর নতুন করে কারো প্রতি ইমোশন আসছে। ইমোশন টা ধরে রাখিস, ভুল রাস্তায় পা বাড়ানোর আগে অন্ততপক্ষে ১০ বার ভাবিস । আর ঐ ছেলে যদি বাড়াবাড়ি করতে আসে তখন বিষয়টা আমি দেখবো। তবুও তুই কিছু করিস না প্লিজ। তুই যেমন তোর বোনের খুশি দেখতে চাস তেমনি আমিও তোদের দুজনের খুশি দেখতে চাই। ভুলে যাস না আমরা সবাই এক মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ। আমার কিছু হলে যেমন তুই কষ্ট পাবি, তোর কিছু হলে তেমন তোর বোন কষ্ট পাবে আর তোর বোনের কিছু হলে তো আমি শেষ হয়ে যাব৷ ”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here