#কাছে_কিবা_দূরে
#পর্ব-১৩
কথা ছিলো শুভ্র কাউকে তানির প্রেমের গল্প টা বলবে না। কিন্তু অভ্র, আনিকা বাড়ি ফিরতেই শুভ্র সব বলে দিলো। বলার ভঙ্গিটাও বেশ নাটুকে ছিলো। বিকেলে সবাই পিয়াজু, আর ছোলা মাখানো খাচ্ছিলো তখন তানি ছিলো রান্নাঘরে। সবার জন্য চা করছিলো। মাহফুজা তখন বাড়িতে নেই। দুঃসম্পর্কের আত্মীয় অসুস্থ, তাই তাকে দেখতে গিয়েছিল। সুযোগ পেয়ে ইরাও আজ এসেছে। শুভ্র সিরিয়াস গলায় বলল, লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান আজ তোমাদের একটা দুঃখের গল্প বলবো। কিন্তু দেখা গেল দুঃখের গল্প শুনতে কেউ ই তেমন আগ্রহী না। শুভ্র বলল, দুঃখের গল্পটা তানিকে নিয়ে।
সবাই নড়েচড়ে বসলো। অভ্র সিরিয়াস গলায় বলল, কী হইছে ভাইয়া?
শুভ্র আগের মতো ই সিরিয়াস গলায় বলল, আজ তানির একটা সিক্রেট জানতে পেরেছি।
ইরা বলল, সিক্রেট? তাহলে সেটা আমাদের কেন বলছ?
“বলছি কারন তোমরা পুরো ঘটনা শুনে তানিকে যদি হেল্প করতে পারো।”
সবাই ই খুব সিরিয়াস হয়ে গেল। শুভ্র অত্যন্ত সিরিয়াস গলায় হাত নেড়ে নেড়ে তানির প্রেমের গল্প বলতে লাগলো।
তানি চা নিয়ে ফিরলে অভ্র বলল, ভাবী ভাইয়া এসব কী বলছে?
তানি অবাক গলায় বলল, কী বলছে?
“তুমি নাকি এক ড্রেনওয়ালার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ?”
তানি কটমট চোখে শুভ্র’র দিকে তাকালো। শুভ্র দাঁত বের করে হেসে বলল, তোমার সুবিধার জন্যই ওদের বললাম আর কী।
“কিন্তু আপনি তো কথা দিয়েছিলেন যে কাউকে বলবেন না।”
শুভ্র আমতা আমতা করে বলল, আসলে এমন একটা ব্যাপার। না বলতে পেরে পেটের ভিতর গুরগুর করছিল।
সবাই কে অবাক করে দিয়ে তানি কেঁদে ফেলল৷ বলল, ছিঃ আপনি এতো খারাপ! আগে জানলে জীবনেও বলতাম না আপনাকে।
শুভ্র হকচকিয়ে গেল। অভ্র আর আনিকা মিটিমিটি হাসছে। ইরা চিন্তিত গলায় বলল, এবার কী হবে ভাইয়া?
শুভ্র করুন গলায় বলল, আমি কী একটু বেশী ই বলে ফেললাম?
অভ্র হাই তুলতে তুলতে বলল, এবার যাও তুমি সামলাতে।
শুভ্র বলল, কেন যে তোরা জোর করলি আমাকে।
একসাথে তিনজন ই লাফিয়ে উঠে বলল, এই ভাইয়া একদম মিথ্যা দোষ চাপাবে না। আমরা শুনতে চাই নি, তুমিই জোর করে শুনিয়েছ।
যেহেতু অপরপক্ষের দলভারী তাই শুভ্র আত্মপক্ষ সমর্থন করলো। বলল, এবার রাগ ভাঙাতে হবে? মেয়েদের রাগ ভাঙানোর চেয়ে বিল্ডিং বানানো বেশী সহজ।
অভ্র বলল, ঠিকাছে তুমি বিল্ডিং ভাঙো আমরা আজ আসি।
****
তানি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। ব্যাপার টায় ওর খুব কষ্ট লেগেছে। ও শুভ্র কে একটা কথা বলল আর শুভ্র সেটা নিয়ে সবার সাথে মজা করলো! তাছাড়া শুভ্র কথা দিয়েছিল যে কাউকে বলবে না। কিন্তু সবাই কে বলে দিয়েছে। আশ্চর্য ব্যাপার স্বামী, স্ত্রীর সিক্রেট কথাবার্তা অন্য কাউকে কিভাবে বলে! এতো বড় দামড়া একটা ছেলে অথচ এতো নির্বোধ।
শুভ্র ওই ব্যাপার টা সবাইকে বলে দেয়ায় তানির যতটা কষ্ট লেগেছে। তারচেয়ে বেশী কষ্ট লেগেছে তানিকে ভুলে যাওয়ায়। তানি এখনও ওকে মনে রেখেছে আর ও কী না ভুলে গেল! আর যাবেই না কেন! ওর লাইফে তো তখন অবন্তী ছিলো। অবন্তীর জন্য যে হ্যাংলামি করেছে তাতে করে অন্য মেয়েকে মনে রাখবে কী করে!
তানি সিদ্ধান্ত নিলো শুভ্র’র সাথে দুদিন কথা বলবে না। যত ই সরি বলুক তানি কথা বলবে না। এবার একদম উচিত শিক্ষা দেবে৷
*****
ইরা বলল, আচ্ছা ভাইয়া আর ভাবীর প্রেম টা কতদূর এগিয়েছে?
অভ্র বলল, কী জানি!
আনিকা বলল, বেশীদূর এগোয় নি আপু৷ ভাবী এখনো ভাইয়াকে আপনি করে বলে।
ইরা বলল, আসলেই তো! ব্যাপার টা খেয়াল করিনি।
অভ্র বিরক্তির সুরে বলল, যেমন দেবা তেমনি তার দেবী৷ দুটো ই আনরোমান্টিক। তোরা মাঝেমধ্যে ঘুরতে যাবি, সিনেমা দেখবি, তা না করে ঘরের মধ্যে চিপকে থেকে বস্তাপঁচা প্রেমের গল্প বলে। তাও যদি ঘরের মধ্যে থেকে কোনো কাজের কাজ করতি।
ইরা চিমটি কেটে বলল, কী সব বলছ আনু আছে তো আমাদের সাথে।
আনিকা ঠোঁট টিপে বলল, ইরা আপু সমস্যা নেই। আর দু’মাস পর আমার আঠারো হয়ে যাবে।
ইরা আনিকার মাথায় চাপড়ে দিয়ে বলল, চুপ। তুই কান বন্ধ করে থাক।
আনিকা চুপ করে থাকলো না। বলল, আচ্ছা ভাইয়া আর ভাবীকে হানিমুনে পাঠালে কেমন হয়?
অভ্র’র চোখ দুটো জ্বলে উঠলো। ইরা চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেল। আনিকা মিটিমিটি হাসছে যেন সে এভারেস্ট জয় করে ফেলছে।
******
তানি রুমের দরজা যে সেই বন্ধ করেছে আর খোলে নি। শুভ্র দরজায় ধাক্কা দিয়ে অনেকবার সরি বলেছে কিন্তু তানি দরজা খোলে নি। রাতের রান্নাও করে নি। ঘরের দরজা বন্ধ করায় শুভ্র ঘরেও যেতে পারে নি। কিছু সময় স্টাডিতে ছিলো। বই পড়ায়ও মন দিতে পারে নি। শেষমেস বের হয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল তানির জন্য কিছু একটা বানাবে। যেভাবেই হোক আজ বিল্ডিং মানে তানির রাগ ভাঙাবে।
আনিকা আজ অভ্র’র পকেট থেকে অনেকগুলো টাকা খসিয়েছে। বার্গার খেয়েছে, কিছু নেইলপলিশ কিনেছে। এতো ভালো বুদ্ধি দিয়েছে সে তুলনায় এসব কম ই। ও ভেবে নিয়েছে ভাইয়া আর ভাবীর প্রেম হয়ে গেলে তাদের কাছ থেকেও ট্রিট নিবে।
বাড়ি ফিরে দেখলো শুভ্র রান্নাঘরে রীতিমতো যুদ্ধ করছে। অভ্র বলল,
“কী করছ?”
শুভ্র বলল, তোরা দুই মীর জাফর আমার সাথে কথা বলবি না।
আনিকা বলল, তুমি নিজের দোষে ফেঁসেছ। আমাদের দোষ কই?
শুভ্র ছুড়ি উঁচিয়ে অভ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, এই ব্যটা মীর জাফর যদি না বলে দিতো তাহলে এতো কেস খেতে হতো না।
অভ্র বলল, আচ্ছা শোনো আমি একটা আইডিয়া দিতে পারি। দেখবে তাতে ভাবীর রাগ একদম গলে যাবে।
“কী?”
তানির খুব খিদে পেয়েছে এখন৷ কিন্তু রাগ করে আছে, এই অবস্থায় খেতে গেলে রাগ টা থাকবে না। শুভ্র দুই তিনবার ডেকে গেলেও এখন আর কোনো খবর নেই। তানির মেজাজ আরও খারাপ হলো। এই হলো রাগ ভাঙানোর নমুনা। খেতে পর্যন্ত ডাকছে না। নিজে নিশ্চয়ই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।
অভ্র তানিকে ডাকছে। বলল, ভাবী দরজা খোলো, আমরা না খেয়ে বসে আছি।
তানির এবার রাগের সাথে সাথে দুঃখ ও হলো। দেবর, ননদ, শাশুড়ী সবাই এতো ভালো! অথচ বর টা হলো কী না একটা গোয়ার টাইপ। তানি দরজা খুলল৷ আনিকা এসে জড়িয়ে ধরে বলল, ভাবী ভাইয়া আজ তোমার জন্য রান্না করেছে। চলো খেতে চলো৷
তানি এক নজর শুভ্র’কে দেখে বলল, না আমি খাব না।
অভ্র বলল, তুমি না খেলে আমাদের ও ফর্মালিটি দেখিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। কিন্তু আমরা তো না খেয়ে থাকতে পারি না ভাবী।
শুভ্র বলল, তানি তোমাকে এক লক্ষ বার সরি। আর কোনোদিন ওই ড্রেনওয়ালার নাম মুখে আনবো না। চলো এবার খেতে চলো। নাহলে তোমার শাশুড়ী আমার গর্দান টা নিয়ে নেবে।
তানি মুখ ফিরিয়ে রইলো। শুভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, অভ্র, আনু তোরা টেবিলে গিয়ে একটু চোখ বন্ধ করে বস তো।
দুজনেই টেবিলে গিয়ে চোখ বন্ধ করে বসলো। শুভ্র এসে তানিকে কোলে তুলে নিলো। তানি হকচকিয়ে গেল। বড়, বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো শুভ্র’র দিকে। শুভ্র হাসছে, হাসার সময় চোখ ও হাসছে। তানি মনে মনে বলল, কবে আপনাকে একটু ছুঁয়ে দিতে পারব!
চলবে….
সাবিকুন নাহার নিপা