আমার তুমি ২ #পর্বঃ৮ #তানিশা সুলতানা

0
311

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৮
#তানিশা সুলতানা

তনু হিমুকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসে। হিমু ছাদে মোড়া টেনে বসে কোলের ওপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিলো। পরনে কালো ফুল হাতা টিশার্ট আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। চুলগুলো এলোমেলো। আজকে একদম ছোলা ছোলা লাগছে না। ছোটছোট দাঁড়ি গজিয়েছে। দেখতে কিউট লাগছে।

তনু ফোনের স্কিনে নিজের চেহারাটা একবার দেখে নেয়। শাড়ি টেনে ঠিকঠাক করে নেয়। তারপর ফোনটা কানে নেয়।

“হ্যালো রুশান। জান কি করো?

” আরে ধুর আমি বিয়ে করবো? কি যে বলো না
ওই হেবলাকান্তকে বিয়ে করার চেয়ে হিরো আলমকে বিয়ে করা ভালো

হিমু কপালে ভাজ ফেলে তাকায় তনুর দিকে। তনুর এমন একটা ভাব যেনো সে খেয়ালই করে নি ছাঁদে আরও কেউ আছে। হিমুর থেকে গুনে গুনে তিন হাতের মতো দুরুত্বে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

“ড্রামা কুইন

হিমু ফোঁস করে শ্বাস টেনে ল্যাপটপ বন্ধ করে ফেলে।

“জান জানো তুমি ছাড়া আমার এক ঘন্টা ষাট মিনিট লাগে। চলো না পালিয়ে যাই।
তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। বোঝো না কেন কতো ভালোবাসি।

তনু কন্টিনিউস কথা বলেই যাচ্ছে। হিমু বাঁকা হাসে। ল্যাপটপ মোরার ওপর নামিয়ে উঠে দাঁড়ায়। পকেট থেকে ফোন বের করে কল দেয় তনুকে।

ঠাস করে ফোন বেজে ওঠে তনু। তনু চমকে যায়। একটুর জন্য ফোনটা নিচে পড়ে যায় নি। তনু জিভ কা*মড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে পেছন ঘুরে। হিমু বুকে এক হাত গুঁজে অন্য হাত দিয়ে ফোন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

তনু ফোনটা জোরে চাপ দিয়ে বন্ধ করে ফেলে।
এদিক ওদিক চোখ ফিরিয়ে শুকনো ঢোক গিলে।

” ওওওমা আপনি কখন আসসলেন?
ওওই আসলে একটু কথা বলছিলাম।

হাসার চেষ্টা করে বলে তনু

“ঢং করা শেষ হলে যেতে পারো এখন থেকে। কাজ করবো আমি।

ফোনটা আবার পকেটে পুরে বলে হিমু। আবারও অপমান।
কান গরম হয়ে ওঠে তনুর। দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় হিমু দিকে।

” আমার তোমাকে ভালোই লাগে না। তো ড্রামা কম কম করবা।

আঙুল তুলে বলে আবারও মোড়ার ওপর গিয়ে বসে। তনু রাগে গজগজ করতে করতে হিমুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

“ঢং করে তাহলে বিয়ে কেনো করতে চাইছেন?

কোমরে হাত দিয়ে বলে তনু। হিমু সোজাসুজি তাকায়। চোখটা চলে যায় তনুর পেটে। শাড়ির আঁচল সব টুকু কাঁধে তোলায় পেটের কিছু অংশ বেরিয়ে গেছে।

” এরকম হ*ট মেয়েকে কেউ হাত ছাড়া করে না কি?

হিমুর কথা শুনে তনু জাস্ট হা হয়ে যায়। হিমু ঠোঁটে আঙুল বুলাচ্ছে। হিমুর দৃষ্টি খেয়াল করে তাকায়। সাথে সাথে চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। ঠাস করক আঁচল নামিয়ে দেয়। থমথমে মুখটাতে লজ্জা ভর করে। ফাঁকা গলায় ঢোল গিলে চুলে হাত বুলায়।

হিমু চোখ ফিরিয়ে নেয়। ল্যাপটপ অন করে তাতে মনোযোগ দেয়। তনু দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। অন্য হাত দিয়ে হিমুর চুল গুলো মুঠো করে ধরে জোরে টান দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় ছাঁদ থেকে।

হিমু তনুর যাওয়ার দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। তারপর মুচকি হাসে।

“আপনাকে যদি সোজা করতে না পারি না তাহলে আমার নামও হিমু নয়।

নিজের চুলে হাত বুলিয়ে বাঁকা হেসে বলে হিমু।

🥀
এতোটা অশান্তিতে কখনোই পড়ে নি তুলতুল। এটাকে তো অশান্তিই বলে তাই না?
এই যে সায়ান একদম তুলতুলের কোলে মাথা রেখে পেটের সাথে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে শুয়ে আছে। অসহায় তুলতুল না পারছে উঠতে আর না পারছে একে সরাতে। অস্বস্তিতে ম*রে যাচ্ছে। যতবার লোকটার নিশ্বাস ফেলছে ততবারই পেটে মোচর দিয়ে উঠছে তুলতুলের।
পা দুটো ঝিমঝিম করছে। এক ঘন্টা তো হবেই এভাবে রয়েছে ও।
প্রথমে কি বললো? পা টিপে দিতে। তো তুলতুল পা টিপে দেওয়ার জন্য পায়ে হাত দিলো সাথে সাথে সায়ান সোজা এসে তুলতুলের কোলে মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে মুখ গুঁজলো।
বেচারা তুলতুল নিজের অস্বস্তি বোঝাতেই পারলো না। কয়েকবার মিনমিন করে বলতে গেছে আস্ত একটা ধমক দিয়ে বললো

” একটা কথা বললে একদম জাপ্টে ধরে ঘুমাবো”

ব্যাস তখন থেকেই তুলতুল চুপচাপ আছে।

বাবা মা তো মনে হয় খুঁজছে তুলতুলকে। দাভাই তনু সবাই খুঁজবে। না পেলে কি করবে? যদি জানতে পারে এই লোকটা ওকে আটকে রেখেছে তাহলে কি হবে? মানসম্মান তো উঁড়ে যাবে।

তুলতুল এবার হাঁপিয়ে গেছে। একেতে টেনশন, তারওপর ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। দ*ম ব*ন্ধ হয়ে আসার মতো। তার ওপর পা টাও ভীষণ ব্যাথা হয়ে গেছে।

বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস টানে তুলতুল। এভাবে আর চলছে না। একে ডাকতেই হবে। নাহলে পা দুটো অচলই হয়ে যাবে।

গুটিয়ে রাখা ডান হাতটা সায়ানের মাথায় রাখে তুলতুল।

“এএএই যে শুনছেন? উঠুন না। আমার পা দুটো ব্যাথা হয়ে গেছে। একটু পর ভে*ঙেই যাবে মনে হচ্ছে। আমার বুকটা ধক ধক করছে পেটের মধ্যেও কেমন কেমন করছে।
একটু পরপর পশম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঠান্ডা লাগছে না। কি একটা মা*রা*ক্তক ঘটনা ঘটছে আমার সাথে।
ওদিকে বাবা মা দাভাই আপি কাকিমা সবাই খুঁজছে আমাকে। যেতে হবে আমায়।
শুনতে পাচ্ছেন?
এতো মেয়েদের কোলে শুতে ইচ্ছে করে কেনো?এতো ইচ্ছে করলে বিয়ে করে নিন। আমাকে ছাড়েন।
আমি একটা অবুঝ শিশু

তুলতুল সায়ানের চুলগুলো জোরে টান দিয়ে বলে। সায়ান নরে চরে ওঠে। এতে তুলতুল শক্ত হয়ে যায়। সায়ান জোরে নিশ্বাস টেনে টানটান হয়ে শয়।
তুলতুল চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।

“বিয়েই তো করতে চাই। কিন্তু বউ যে এখনো অবুঝ শিশু। ভালোবাসাও বোঝে না আদরও বোঝে না।

তুলতুলের মুখের দিকে তাকে বলে সায়ান। তুলতুল জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে। সায়ান তাকিয়ে ছিলো তুলতুলও তাকায় ফলে দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। সাথে সাথে তুলতুল চোখ ফিরিয়ে নেয়।
সায়ান হাই তুলতে তুলতে উঠে বসে। আড়মোড়া ভেঙে এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে থাকে।

তুলতুল হাফ ছেড়ে পা দুটো টানটান করে। ভীষণ ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে পা দুটি অবশ হয়ে গেছে।

” হাতি কোথাকার। কি ওজনরে বাবা। মনে হয় এর মাথার ওজনই হবে চল্লিশ কেজি। ভাগ্যিস শুধু মাথাটা রেখেছিলো।
এই অসব্ভ্য খারাপ লোকটাকে বিয়ে কে করবে? এটা ভেবেই আমার ঘুম হারাম হয়ে যায়। এই হনুমান যাকে বিয়ে করবে তার কপালটা অকালেই ফেঁ*টে যাবে। আহারে বেচারি।

তুলতুল বিরবির করে বলে।

“কালকে ঢাকা চলে যাবো। ফিরতে দেরি হবে।

সায়ান বলে।
” আলহামদুলিল্লাহ

তুলতুল লাফিয়ে ওঠে বলে। সায়ান কটমট চোখে তাকায়। তুলতুল সায়ানের কটমট মুখটা দেখে ফাঁকা গলায় ঢোল গিলে আবারও বসে পড়ে। একটা ভালো খবর তুলতুলের পা ঠিক করে দিয়েছে। এখন একটু ব্যাথা করছে না। বরং নাচতে ইচ্ছে করছে।

“আমি কি তোর মাথায় চড়ে থাকি?

সায়ান তুলতুলের হাত ধরে বলে।

” এমা ছি ছি
আপনি আমার মাথায় কেনো থাকবেন? আপনার ওজনের দিকে খেয়াল আছে? ছোটমট একটা হাতি আপনি। আপনাকে মাথায় নিলে তো আমি ভো*গে চলে যাবো।
আপনি তো আমার ঘাড়ে চেপে আছেন।ঘাড় থেকে নামলে বাঁচি আমি। আস্ত একটা ঝামেলার ডিব্বা আপনি।

শেষের কথা বিরবির করে বলে তুলতুল।

“আমি ঢাকা গেছি মানে এটা না যে তোর খবর রাখবো না। আমি

তুলতুল সায়ানকে থামিয়ে দেয়

” আমি জানি তো। আপনি হলেন গোমড়ামুখো গন্ডার। আপনি কি মুক্তি দেবেন আমায়? এখানে থাকলে চিপকে থাকবেন। আর দুরে গেছে চিপকে রাখবেন। ট্রাস্ট মি আমার যদি একটু সাহস থাকতো না আপনাকে যে কি করতা

বাকি কথা বলার আগেই ঠাস একটা থা*প্প*ড় পড়ে তুলতুলের গালে। গালে হাত দিয়ে কান্না করে ফেলে তুলতুল।

“এটা নেইমারের পিক কভার দিয়ে জামাই লেখার জন্য।

” আপনার কি তাতে? আমি জামাই লিখবোই। আপনার কথা শুনবো না। গন্ডার একটা।
খালি জামাই না আরও অনেক কিছু লিখবো। প্রোফাইলেও নেইমারের পিক দেবো। সব খানে নেইমারকে ঝুলিয়ে রাখবো। কলিজার ভেতরেও নেইমারকে গেঁথে রাখবো।
আপনার কি তাতে?
দাভাইরে বলে দিবো। আব্বু কেও বলে দিবো। কথায় কথায় খালি মা*রা না?
বউ লাগি আমি তোর?
মা*রবি কেন আমায়?
তোর বউরে তুই মা*র গিয়ে। আমাকে কেনো থা*প্প*ড়াইবি?
আমি গুড গার্ল বলে এতোদিন কিছু বলি নি।কিন্তু এখন আর চুপ থাকবো না। মাইক নিয়ে বলবো সবাইকে।

ঠাসসসস করে আরও একটা থা*প্প*ড় পড়ে তুলতুলের ডান গালে। এতোখন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো আর বলছিলো। এখন আরও একটা থাপ্পড় খেয়ে শব্দ করে কেঁদে ওঠে।

“বেয়াদব
আমাকে তুই বলা হচ্ছে? চাপকে সোজা করে দেবো আমি তোকে।

তুলতুল কাঁদতে থাকে।

” শয়তান বেডা। হনুমানের নানা। গন্ডারের চাচাতো ভাই। হাতির ছোটমোটো বাচ্চা
জীবনেও বিয়ে হবে না তোর। যে হাত দিয়ে আমায় মে*রেছিস ওই হাত খ*সে পড়বে। তুই

বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই সায়ান তুলতুলকে

🥀
সুমু চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে আসে। তনুকে ধরেছে হিমুর দাদি আর নানি। সুমু সায়ানের আপন বোন৷ হিমুর কোনো ভাইবোন নেই৷ সুমু এইবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের পড়ছে।
হিমুর বউ দেখার জন্য হিমুর নানা নানু মামা মামি ফুপু ফুপা সবাই চলে এসেছে।
অনেক বড় পরিবার ওদের।

তনু শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে বসে আছে৷ নানু আর দাদি হাজারটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে। তনু একটু একটু করে উওর দিচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here