#আমার তুমি ২
#পর্বঃ২৪
#তানিশা সুলতানা
পাপনের এরকম ইতস্তত চোখ মুখ দেখে সমস্যা বুঝতে পারে হিমু। সে তনুকে আড়ালে ডাকে। তনু তখন এমপি বাড়ি থেকে আসা ফোন মিষ্টি গুলো কেটে তাদের দিচ্ছিলো সুমুর সাথে। হিমুর ইশারায় ডাকা দেখে আসে।
“কিছু বলবেন?
তনু হিমু পেছন পেছন নিজের রুমে গিয়ে বলে।
হিমু খাটে গিয়ে বসে। তনুও পেছন পেছন গিয়ে বসে।
হিমু পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে তনুর দিকে দেয়। তনু কপাল কুঁচকে তাকায় হিমুর মুখের দিকে।
” এটা গিয়ে তোমার চাচাকে দিবা। আর বলবা এটা তোমার জমানো টাকা।
তনু অবুঝের মতো তাকিয়ে থাকে।
“আমি মিথ্যে কেনো বলবো? আর আপনার থেকে টাকাই বা কেনো নিবো?
আশ্চর্য হয়ে বলে তনু। হিমু ফোঁস করে শ্বাস টানে। তনুর হাতটা টেনে নিতে টাকাটা হাতের তালুতে গুঁজে দেয়।
” এটা তোমার চাচার খুব দরকার। মাসের শেষের দিক এখন। ওনার হাতে টাকা নেই। বাড়িতে এতোগুলো মেহমান এসেছে। তো উনি হিমশিম খেয়ে গেছেন। এই টাকাটা তোমাকে আমি ধার দিলাম। তুমি এটা তোমার চাচাকে দিবা। উনি বাজার করবে। তারপর পরে তুমি এটা আমায় শোধ করে দিও। সিম্পল।
তনু মন দিয়ে শোনে হিমুর কথা গুলো।
“সবই তো বুঝলাম। এখন কথা হচ্ছে এটা তো আপনিও ধার দিতে পারতেন?
টাকা গুলো গুনে দেখতে দেখতে বলে তনু।
” হুমম পারতাম। তাতে উনি অপমানিত হতেন। নিজেকে ছোট মনে করতেন। আমার থেকে টাকা কিছুতেই নিবেন না। উল্টে লজ্জা পাবে।
আর তুমি দিলে খুশি হবে। মুখটা উঁচু থাকবে ওনার।
মুচকি হেসে বলে হিমু। তনুও বুঝতে পারে।
“ধন্যবাদ। আমি বেশি সময় নিবো না। মাসের শুরুতেই বাবা ও আমাকে হাতখরচের টাকা দেবে। তখন পরিশোধ করে দেবো আমি।
হিমু মুচকি হেসে মাথা নারায়। তনু টাকা গুলো গোনা শেষ করে। মোটমাট পাঁচ হাজার টাকা আছে।
তনু উঠে গিয়ে নিজের ব্যাগ খুলে। সেখানেও দুই হাজার টাকা আছে। সেটা ড্রেস কেনার জন্য জমিয়ে রেখেছিলো। তারপর তুলতুলের ব্যাগ খুলে। সেখানে এক হাজার টাকা আছে। এটা তুলতুলের জমানো।
সব গুলো টাকা এক জায়গা করে মুঠো করে নেয় তনু। হিমু মুগ্ধ হয়ে দেখে। এই মেয়েটাকে ছাড়া চলবেই না।
“তনু আমরা কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেবো।
হিমু বলে ওঠে। তনু লজ্জা পায়। মাথা নিচু করে মুচকি হেসে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
হিমুও মাথা চুলকে মুচকি হাসে।
পাপন চিন্তিত হয়ে বসে আছেন নিজের রুমে। বের হওয়ার মুখ নেই। ধার কখনো কারো থেকে করে নি। এই অসময় কে ধার দেবে? চিন্তায় মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।
“চাচ্চু
তনু রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
” হ্যাঁ মা বলো
মাথা নিচু করেই বলে পাপন।
“আমি আর তুলতুল কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। তুমি নাও এগুলো। বাজার করে নিয়ে এসো।
পাপনের সামনে দাঁড়িয়ে হাতের টাকা গুলো ওনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে তনু। পাপন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
“আমি তো টাকা চায় নি?
” আমি তোমার মুখ দেখেই বুঝে গেছিলাম। জলদি যাও৷ এমপির বাড়ির সদস্য। খালি দোষ ধরবে। তাড়াতাড়ি ভালো ভালো মাছ মাংস আনো। গাণ্ডেপিণ্ডে গিলিয়ে দেই ওনাদের। যাতে মুখ খোলার সময় না পায়।
তনুর কথায় হেসে ওঠে পাপন।
“এভাবে বলতে নেয় আম্মাজান।
মাথা হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।
” আচ্ছা বলবো না। এখন টাকা টা নাও।
“আমি ম্যানেচ করে নিবো।
” এমন করো কেন বচ্চু? আমরা টাকা পেলাম কোথায়? তুমিই তো দাও। সেখান থেকেই জমিয়েছি। এক দিক থেকে তো এগুলো তোমারই টাকা। নাও না। পরে নাহয় শোধ করে দিতো।
তনুর জোরাজুরিতে টাকা নেয় পাপন। তনুর কপালে চুমু দিয়ে তন্ময়কে নিয়ে বেরিয়ে যায় বাজারের দিকে।
এমপি বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য সায়ানকে ধিরে ধরেছে। তন্ময়ের রুমটা ভর্তি হয়ে গেছে মানুষে।
বিছানায় এতো জনের জায়গা হবে না বিধায় হাসিব আর হিমু চেয়ার এনে দেয়। খুকি বেগম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাড়ি দেখছে। ওনার নাতনি কি না এখন থেকে এই বাড়িতেই থাকবে? ভাবতেই কেমন লাগছে ওনার।
কয়েকবার মুখও বাঁকিয়েছে।
“তোমার সমস্যা কি সায়ান?
সালমান সায়ানের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে।
” সমস্যা অনেক। বলতে শুরু করলে শেষ করতে পারবো না। তাই আপাতত আমার কোনো সমস্যার কথা বলছি না। তবে একটা সিদ্ধান্ত জানাবো যেটা শোনার পরে আপনাদের সমস্যা দেখা দেবে।
আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে কোলে বালিশ জড়িয়ে বলে সায়ান। থমথমে খেয়ে যায় সালমান। আনোয়ার কড়া দৃষ্টিতে তাকায় সায়ানের দিকে।
সুমু শাশুড়ী আর চাচি শাশুড়ীর সাথে কাজে ব্যস্ত।
সুলাইমান মিটমিট করে হাসছে। হিমু আর হাসিব রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কারণ এখন সায়ান বেফাঁস কথা বলতে পারে। যেগুলো শুনে বাপ চাচাদের সামনে লজ্জায় পড়বে ওরা।
“শুনি কি সিদ্ধান্ত?
আব্দুল্লাহ চেয়ার পেতে বসেছে সায়ানের মুখোমুখি। গম্ভীর গলায় বলেন উনি।
” এক মাসের মধ্যে বিয়ে করছি। শীত চলে আসছে। একা থাকা দায়। তাই এতোখন ভাবলাম বিয়েটাই আগে সেরে ফেলি।
হাই তুলে বলে সায়ান। চমকে ওঠে সবাই। সাথে সায়ানের ঠোঁটকাটা কথায় অস্বস্তিতেও পড়ে। সোনা আস্তে করে উঠে এই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
সালমা স্বামীর দিকে তাকায়।
“ভালো কথা। মেয়ে আমাদের দেখা আছে। তুমি বললেই আয়োজন করবো।
আনোয়ার বলে ওঠে।
” তাহলে মেয়েকে শাড়ি পড়িয়ে কাজি অফিসে পাঠিয়ে দিও। আমি সাইন করিয়ে নেবো।
বলেই উঠে সবার মাঝ থেকে বড়বড় পা ফেলে চলে যায় সায়ান। ওর কথা কেউ বুঝতে পারে না।
“তোর ছেলে মেয়ে দুইটাই এতো বজ্জাত কি করে হইলো রে বাপ? আরও বাচ্চা আছে বাড়িতে না কি? তারা তো এমন না।
খুকি বিরক্ত হয়ে বলে। সালমান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
তুলতুল নিজের রুম থেকে একদম বের হচ্ছে না। পায়ের ব্যাথা একটু একটু আছে। রুম থেকে বের হওয়ার জন্য মনটা আকুপাকু করছে। আহহা কতোখন যাবত চুপ করে আছে। পেটের ভেতর কথাগুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।
কয়েকবার রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা ওবদি গিয়েছে। তারপর উঁকি ঝুঁকি মেরে এমপি বাড়ির মহিলাদের দেখে আর যায় নি।
আর যাই হোক ওনাদের সামনে যাওয়া যাবে না। জল্লাদ একেক জন।
এদের ঘরে কে মেয়ে দেবে?
“আমার বাড়ি আমার ঘর। আর আমিই অসহায়ের মতো রুমে বসে আছি তাও মুখ লুকিয়ে? তাছাড়া উপায় আছে? ওই বাড়ি মহিলারা তো আমাকে চোখ দিয়ে গি*লে খায়। যেনো আগে কখনো মেয়ে দেখে নাই। আমি একাই দুনিয়াতে মেয়ে। ভাল্লাগে। কতোখন থাকা যায় রুমের ভেতর? সুমু কখন বললো খাবার দিয়ে যাবে। এখনো দিলো না? খিধেয় মনে হচ্ছে পেটের নাড়ি ভুড়ি সব বেরিয়ে যাবে। ঝালমুড়ি খেয়ে কতোখন থাকা যায়? একদিনেই রোগা হয়ে যাবো আমি।
কখন যাবে ওনারা? আল্লাহ হনুমানটাকেও যেনো নিয়ে যায়। আর যেনো খুব করে বকে দেয়। কড়া গলায় বলে দেয় ” আর কখনোই তুলতুলের পেছনে আঠার মতো লাগবি না।”
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বকবক করে যাচ্ছে তুলতুল। সায়ান অনেকখন ধরে দরজা বন্ধ করে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে তুলতুলকে দেখছে। সেদিকে খেয়ালই নেই তুলতুলের। সে নিজের মতো বকবক করায় ব্যস্ত।
🥀
পাপন বাবার থেকে বড় রুই মাছ কয়েক কেজি গরুর মাংস আরও শাক সবজি নিয়ে হাজির হয়েছে। সেগুলোই রান্নার তোরজোর করছে আছিয়া আর নাজমা। সুমুও ওনাদের হাতে হাতে সাহায্য করছে।
আছিয়া অনেকবার সুমুকে বলেছে “পরিবারের সাথে সময় কাটাতে”
কিন্তু সুমু যেতে নারাজ। সে কাজ করবে। এখন তন্ময়ও সাহায্য করছে।
“আমার আদরের কলিজাকে দিয়ে এখানে এতো কাজ করানো হয়?
খুকি বেগম রান্না ঘরে প্রবেশ করতে করতে বলে। আছিয়া আর নাজমা চমকে ওঠে। সুমু মুচকি হাসে। নিজে বসে থাকা মোড়াটা দাদির দিকে এগিয়ে দিয়ে আবারও তরকারি কাটায় মনোযোগ দেয়।
” দাদি এটা আমার শশুড় বাড়ি। আর শাশুড়ী হাতে হাতে কাজ করে দেওয়াটাই তো বউদের কাজ তাই না? আমাকে তো কোনো কাজই করতে দেয় না। আজকে জোর করে একটুখানি হাত লাগিয়েছি। তোমরা এতোগুলো মানুষ এসেছো তাও না জানিয়ে। তাই তো কাজ বেরে গেলো। সময় মতো খেতে দিতে না পারলেও তো আবার মুখ বাঁকাবে।
মুচকি হেসে বলে সুমু। খুশি হয় নাজমা আর আছিয়া। তন্ময় সুমুর দিকে এক পলক তাকিয়ে একটু হাসে।
খুকি বেগম আর কিছু বলার সাহস পায় না।
🥀
“পকপক বন্ধ কর।
হঠাৎ করে এরকম ধমক খাওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তুলতুল। আয়নার দিকে চোখ রেখেই দেখতে পায় রুমে হনুমানের আবির্ভাব হয়েছে। বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে। ” এর থেকে কি এ জীবনে নিস্তার নেই?”
“আমার জন্য কফি নিয়ে আয়।
খাটে আরাম করে শুয়ে বলে সায়ান। মেজাজ চটে যায় তুলতুলের। মামা বাড়ির আবদার।” আমার জন্য কফি নিয়ে আয়”
ইচ্ছে করছে কফি মাথায় ঢালতে।
হঠাৎ সায়ানকে জব্দ করার একটা উপায় মাথায় এসে যায় তুলতুলের। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে শয়তানির হাসি
“বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এইবার তোমার আমি বোধিবো প্ররাণ”
এইবার সায়ানকে বুঝিয়ে দেবে কতো ধানে কতো চাল।
তুলতুল চুল গুলো হাত খোঁপা করে সায়ানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে রুম থেকে বের হতে নেয়।
“কফিতে কিছু মেশালে পুরোটাই তোকে খাওয়াবো। সাথে বুড়ি গঙ্গা চু*বানি দেবো ফ্রীতে।
সায়ানের কথায় তুলতুলের ঠোঁট আরও একটু প্রশস্ত হয়।
সায়ানের সামনে দাঁড়ায়।
” সো সুইট।
তুলতুল কাঁচা কাচ করে না। কফিতে কিছু মেশালে সেটা আমাকে গিলতে হবে সেটা আমি জানি।
সায়ানের গাল টেনে দিয়ে হেলে দুলে বেরিয়ে যায় তুলতুল। সায়ান ভ্রু কুচকে চিন্তা করতে থাকে এই পাগল মনে মনে কি ফন্দি আটলো?
চলবে