প্রিয়_প্রাণ #সাইয়্যারা_খান #পর্বঃ৪৫

0
389

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৫

প্রাণ কিছুটা হামাগুড়ি দিয়ে ঘুমন্ত প্রিয়মের কাছে এলো। ছয়মাসের প্রিয়ম হাত পা ছড়িয়ে ঘুমে কাতুর। প্রাণ দেখলো ওকে। প্রিয়মের লালা গোলাপি গালটাতে ছোট্ট একটা মশা বসা। প্রাণ টুকুর টুকুর করে দেখলো ওটা৷ একটু পরই প্রিয়ম কেঁদে উঠলো উহু উহু করে। এরমানে মশাটা কামড় দিয়েছে। ছোট্ট প্রাণ বুঝলো না সেটা। সে শুধু বুঝলো তার প্রিয় কাঁদছে। উবুর হয়ে পরলো ও প্রিয়মের উপর। গালে লাল দাগটাতে মুখ লাগিয়ে আদর করে দিতে চাইলো। মুখে শব্দ করে ডাকতে লাগলো,

— বাব্বাহ।

বারান্দায় ছিলো আরহাম। ছেলের শব্দ পেতেই দ্রত ছুটে এলো রুমে। এসেই দেখলো একদিকে প্রিয়ম কাঁদছে অন্যদিকে কাঁদছে প্রাণ। সবার আগে ছেলেকেই কোলে তুললো আরহাম। ওকে নিয়ে বসলো প্রিয়মের কাছে। ছোট্ট পরিটার বুকে অলতো চাপর দিতেই সে ঘুমালো সে ঘুমালো কিন্তু থামলো না প্রাণ। বাবার কোলেই ঠেস দিয়ে দাঁড়াতে চাইলো ও। আরহাম ওকে থামাতে আদর করতে করতে বললো,

— কি বাবা? এই যে আমি। কেন কাঁদে বাবা’র প্রাণ?

প্রাণ নড়তে নড়তে হাত বাড়িয়ে ঘুমন্ত প্রিয়ম’কে দেখালো। আরহাম দেখলো তবে বুঝলো না। সে ছেলের ফুলা গালদুটোতে থাকা পানি মুছে দিতে দিতে উঠে দাঁড়াতে নিলেই প্রাণ তেড়াবেড়া শুরু করলো। ও যাবে না। আরহাম ছাড়লো। বুঝার চেষ্টা করলো। ওমনিই দেখলো প্রিয়মের গালটায় লাল দাগ দেখা যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে মশা কামড়েছে। ছোট্ট প্রাণ তার প্রিয়মের গালে পুণরায় ঠোঁট ছুঁয়ে আদর করতে গিয়ে লালা লাগিয়ে দিলো। আরহাম ফিক করে হাসির শব্দ শুনেই দরজায় তাকালো। তোঁষা দাঁড়িয়ে হাসছে। আরহাম না বুঝে জিজ্ঞেস করলো,

— হাসছিস কেন?

— হাসা বারণ নাকি?

— ইদানীং প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করিস।

তোঁষা ভেতরে ঢুকে আলমারি খুলে কাপড় বের করতে করতে বললো,

— প্রাণের কাপড় খুলো। গোসল করাবে না?

— হু।

বলেই আরহাম ছেলেকে টেনে নিলো নিজের কাছে। প্রিয়মের গালের লালাটুকু মুছে দিলো নিজ হাতে। প্রাণ তখনও সোজা দাঁড়িয়ে নেই। ছোট্ট ছোট্ট নড়বড়ে তার পা জোড়া এখনও দাঁড়াতে সক্ষম হয় নি। টলমলে ছেলেকে এই দফায় কোলে তুললো তোঁষা। প্রাণ এতে খুশি হলো বেশ তা তার মুখটা দেখেই বুঝা গেলো। কেমন কেমন চোখ করে তাকিয়ে হাসে। মায়ের মতো তার ফুলা ফুলা গালদুটো তখন বেশ দেখায়। মুখে অস্পষ্ট উচ্চারণে শুনা গেলো,

— আআমামমমা।

— হ্যাঁ বাবা, কি বলবে মা’কে?

— মাহ্।

তোঁষা ওর ন্যাংটু ছেলেকে নিয়ে যেতে নিলেই আরহাম বললো,

— হাসলি কেন তখন বললি না?

তোঁষা মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো,

— ইতিহাস পুণরাবৃত্তি হবে।

— মানে?

— তোমার ছেলে প্রিয়’কে হাতছাড়া করবে না দেখিও।

বলেই দুষ্ট হাসলো তোঁষা। আবারও বললো,

— বাপকা বেটা হবে।

এবার আরহাম ও হেসে ফেললো। এক বছরের ছেলে ওর কিন্তু তার প্রিয়মের প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা আছে। দেখা যায় সেটা। বুঝা যায়। এদের ভবিষ্যৎ কি হবে তা জানা নেই কিন্তু তথ্য প্রায় সময় বলে প্রিয়’র জন্য প্রাণ’কে জামাই হিসেবে পছন্দ তার।

হঠাৎ প্রিয়ম জেগে উঠাতে তোঁষা আরহামে’র হাতে ছেলেকে দিয়ে প্রিয়মকে কোলে তুলে নিলো। ওর কান্নার শব্দে এবার তথ্য ই এলো। তোঁষা তথ্য’কে দেখেই বললো,

— আমার মেয়ে তার মা’কে খুঁজছে।

তথ্য মেয়েকে কোলে তুলতে তুলতে বললো,

— শাশুড়ী থাকতে মা’কে কি দরকার ওর?

তোঁষা হেসে ফেললো শব্দ করে। তথ্য মেয়েকে নিয়ে রুমে চলে যেতেই শুনতে পেলো ঝাপঝাপির শব্দ। পানি পেলেই প্রাণ পা*গল হয়ে যায়। এর সাথে আবার যোগ দেয় আরহাম৷ তোঁষা গিয়ে দেখলো অলরেডি দুই বাপ বেটা ভিজে চপচপা। নেংটু প্রাণ বোলে বসে হাত পা ঝাপিয়ে তার মা’কে ডাকছে। আরহাম ও তোঁষা’কে দেখে বললো,

— তুঁষ এখানে আয়।

তোঁষা ভেতরে ঢুকলো। প্রাণ মা’কে দেখে উচ্ছাসিত হলো। ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দ তুললো পানিতে।

____________________

— এখন কেঁদে কি হবে আম্মু? কিসের জন্য কাঁদছো?

— আমার তোঁষা…..

— তোমার তোঁষা? তোঁষা শুধু আরহামে’র। আর কারো না৷ ওকে জানে মে’রে দিলেও তো পারতে। কি দরকার ছিলো বাঁচিয়ে রাখার? এখন কে ধুঁকে ধুঁকে ম’রছে? তুমি? আমি? কেউ না৷ শুধু ম’রছে পুতুল। আর ওর সাথে জড়িত দুটো প্রাণ।

— আমি ইচ্ছে করে….

— না করেছিলাম।

— ওর ভালোর জন্য ই….

— তোমাদের স্বার্থের জন্য।

— তুষার?

— কি বলবে? বলো দোষ নেই তোমার? পুতুলের এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী না? বলো আম্মু?

মুখে হাত চেপে কেঁদে উঠলেন তোঁষা’র মা। তোঁষা’কে যবে থেকে আরহাম থেকে সরাতে মা’র দেয়া শুরু করলো তখনই একদিন রাগে তোঁষা’র মাথায় হাতে থাকা স্টিলের জগ দিয়ে আঘাত করে বসেন। মাথা চেপে ফ্লোরে বসে পরে তোঁষা। এতক্ষণ ধরে করা হাউমাউ তার কান্না থেমে যায় নিমিষেই। ঝাপসা চোখে তাকায় মায়ের দিকে। তখনও রাগী চোখে তাকিয়ে সে। তোষার হা করা মুখটা থেকে লালা গড়িয়ে মুখ লেপ্টে গেলো। টাইটুম্বুর চোখে তখন হতভম্ব ভাব।
ওর মায়ের রাগী মুখটাতেও ভয় জন্মেছিলো যখন প্রায় পাঁচ মিনিট বসে থাকা তোঁষা হেলে পরে ফ্লোরে।
সেদিন বাসায় কেউ ছিলো না। টের পায় নি কেউ৷ তুহিন জানলে হয়তো আদরের স্ত্রী’কে ভয়ংকর শাস্তি দিতেন। তোঁষার মা ওকে ডাক্তার দেখান। মাথায় দুটো সিলি দিয়ে বাসায় ও আনা হয়। তোঁষার সাথে তখন এমনিতেও বাবা-চাচা কথা বলে না। রাতে গা কাঁপিয়ে যখন জ্বর এলো তখন চাচি এসে ছিলো ওর কাছে। তার কাছেই সত্যি টা বলেছিলো তোঁষা।
সেই থেকে মাথা ব্যাথা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় তোঁষার মাঝে। যার জন্য খেয়েছে ছাড়া ছাড়া ঔষধ। সবটার ইফেক্ট পরে সোজা ওর মস্তিষ্কে। তুষার একথা জেনেছে বছর খানিক আগে। তাই সে আরহামকে সোজা কখনো দোষ দেয় নি।
আরহাম এখনও জানে না তোঁষার অবস্থা। ধীরে ধীরে ঠিক হচ্ছে তোঁষা অথচ তুষারের ভয় হয়৷ ভীষণ ভয় হয়। হারানোর ভয়। একটা পা*গল করা প্রেমিককে নিয়ে ভয়। এক মাসুম প্রাণের জন্য ভয়।

তুষার ওর মা’কে ছেড়ে রুম ত্যাগ করতেই আরহামে’র মুখোমুখি হলো। বুকে যেন এক ধাক্কা খেলো সজোরে। আরহামের প্রতিক্রিয়া কি হবে তা জানা ছিলো না ওর। তবে এই তিক্ত সত্যি জেনেও আরহাম কিছু বললো না। শুধু তুষারকে জড়িয়ে ধরলো। তুষার টের পেলো আরহাম কাঁপছে। আরহাম ওভাবে থেকেই বললো,

— ওর আমাকে ভালোবাসাটাই ভুল ছিলো ভাই। ওকে এত কেন মা’রতো? তাদের কি মায়া জাগত না এই মায়াবী মুখটা দেখে?

#চলবে…..

রাত বারোটা দশ। আদ্রিয়ানের অফিসে রিশানকে বলে কাজি হাজির করিয়েছে আদ্রিয়ান। রোদ আর ইয়াজ ও এদিকেই এসেছে। দশলাখ টাকা মোহরানা বাবদ রোদকে বিয়ে করে আদ্রিয়ান। সাক্ষী রইলো বন্ধু রিশান আর ইয়াজ। কাজি’কে বিদাই দিতেই আদ্রিয়ান ক্ষেপেছে রোদের উপর। কোন সাহসে এই মেয়ে এমন হাত কাটলো? যদি কিছু হয়ে যেতো?

বর্তমানে রিশান ইয়াজকে ইশারা করতেই ইয়াজ আর রিশান ওখান থেকে বের হলো। আদ্রিয়ান রোদকে নিয়ে কেবিনের ভেতরে থাকা রুমটাতে ঢুকলো। বিছানায় বসিয়ে হাতটা ধরে তাতে চুমু খেয়ে বললো,

— যদি কিছু হতো?

— হলে হতো। আপনাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না রোদ।

— এত কেন ভালোবাসো আমায়?

— জানি না।

— রোদ?

— হু।

— আমরা বিবাহিত?

— হ্..হু।

হেসে ফেললো আদ্রিয়ান সাথে রোদ। রোদের গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— আমার চিনি বউ।

রোদ আদ্রিয়ানের গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

— আমার মিষ্টি জামাই।

আদ্রিয়ান হাসলো। রোদকে নিয়ে উঠতে গেলেই রোদ ওকে চেপে ধরলো। আদ্রিয়ান ভ্রুঁ কুঁচকালো। পরক্ষণেই বুঝলো রোদ কি চায়। আদ্রিয়ান ওকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,

— অসম্ভব।

— কেন?

— জানো না?

— না।

বলেই রোদ আদ্রিয়ানের ঠোঁটে চুমু খেলো। উত্তপ্ত আদ্রিয়ান বেকায়দায় পড়লো। তবুও রোদকে ছাড়িয়ে দরজা খুলতে গেলেই দেখলো লক করা। নিশ্চিত রিশান আর ইয়াজ এই কাজ করেছে। এখন এই আধ পাগল বউকে নিয়ে কোথায় যাবে আদ্রিয়ান? আদ্রিয়ানের ইজ্জত নিয়েই শান্ত হবে এই রোদ…..

ই-বুক চিনি এর অংশ বিশেষ। ই-বুকটি পড়ার লিংক কমেন্টে। মূল্য মাত্র ৫০ টাকা।

যারা পড়েছেন বা পড়বেন অবশ্যই বইটই অ্যাপে রিভিউ দিবেন। 💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here