প্রিয়_রুদ্র_ভাই #পর্ব-৩৪ (ইরাবতীর আগমন) #তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

0
353

#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#পর্ব-৩৪ (ইরাবতীর আগমন)
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

রমজান শেষে ঈদ আবারও কড়া নাড়ছে দরজায়। সেই দু’বছর আগে ঈদ পালন করেছে একসাথে তারা। আবারও এখন থেকে একসাথে পালন করতে পারবে বলে তটিণী-র খুশির অন্ত নেই৷ ঈদের শপিংয়ের সাথে সাথে বিয়ের শপিং ও কমপ্লিট৷ ঈদ পরপরই তাদের আনুষ্ঠানিক বিয়ে। আজ চাঁদ রাত। ছাঁদে গোল হয়ে বসেছে সবাই। রুদ্র তটিণী-র হাতে মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে সযত্নে। বিয়ে ও ঈদ একসাথে কাটাবে কাছের সব আত্মীয় ইতিমধ্যেই বাড়িতে উপস্থিত। ছাঁদে পা ফেলার জায়গা ও অবশিষ্ট নেই। মেহেদী আর্টিস্টরা মেহেদী পড়াতে ব্যস্ত। তটিনী সবার প্রথমে রুদ্রের হাত থেকে মেহেদি পড়ে নিচ্ছে। রুদ্র সুন্দর করে নিজের নাম আর্ট করে দিয়েছে। তটিনী চাঁদের মতো হাসলো। রুদ্র মুচকি হেসে বলল, ‘আমার চাঁদকে আকাশের চাঁদের মতো সুন্দর লাগছে।’

তটিনী লজ্জা পেলো। আলগোছে রুদ্রের কাঁধে মাথা রাখলো। রুদ্র কপালে ঠোঁট ভুলিয়ে নিলো সবার আড়ালে। তটিণী-র মেহেদী পড়া হাত নিজের হাতের উপর রাখলো। কিছু মনে পড়তেই পকেট হাতড়ে বের করলো কিছু। তটিনী তাকিয়ে দেখলো বেলীফুলের মালা। কিছুটা শুকনো। রুদ্র হেসে বলল, ‘বিকালে কিনেছিলাম, পকেটই রয়ে গেছে এতোক্ষণ।’

তটিণী-র এলোমেলো চুলের এলোমেলো কোপা তে রুদ্র সযত্নে মালা পড়িয়ে দিলো। তটিণী-র মাথা পুনরায় নিজের কাঁধে ফেলে হাতের উপর হাত রেখে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো অপলক। ছাঁদে সবাই মেহেদী পড়তে ব্যস্ত। তাদের দিকে বিশেষ কেউ খেয়াল করছে না। আর করলেও কিছু হবে না। সবই তাদের কাজিন মহল। বড় কেউ নেই।

তটিণী-র মায়ের দূরসম্পর্কের এক বোন রয়েছে। তিনিও উপস্থিত আছেন এই বাড়িতে। সেই মহিলার এক ছেলে ও এক মেয়ে। বয়সে তটিণী-র থেকে তিন বছরের বড়। মেয়েটির নাম ইরাবতী আফনান। তটিনীদের কানে ইদানিং খবর আসে মেয়েটি কোনো এক হিন্দুধর্মের ছেলের সাথে সম্পর্কে রয়েছে। সেই ছেলেটি ইরাবতীর ভাই ইয়াশ আফনানের ভার্সিটির বন্ধু ছিলো। বর্তমানে ভালো পর্যায়ের চাকরি করছে। এই যে এখনো ইরাবতীকে ছাঁদের এক কোণে মুঠোফোন কানে ধরে ফিসফিস করতে দেখা যাচ্ছে। ওপর পাশের ব্যক্তিটি তার ভাইয়ের বন্ধু মাহেন্দ্র চক্রবর্তী ছাড়া কেউ নয়। তটিনী একশো ভাগ নিশ্চিত এ বিষয়ে।

রুদ্র তটিনীকে ভাবনা থেকে বের করলো। বলল, ‘কি এতো ভাবছো?’

তটিনী ঠোঁট উল্টে বলল, ‘ভালোবাসায় কি ধর্ম প্রাধান্য পায় রুদ্র?’

রুদ্র জিহ্বা দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো,

‘একদমই না। ধরো তুমি রাস্তায় একটা পথশিশুকে ভালোবেসে খাবার দিলে। সেটা দিতে কখনোই ধর্ম দেখতে হবে না।’

‘আমি এই ভালোবাসার কথা বলিনি গো।’

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘তাহলে?’

‘আম্মুর দূর সম্পর্কের বোন আছে না? তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ইয়াশ ও ইরাবতী। ইরাবতী আপু ইয়াশ ভাইয়ের ভার্সিটি জীবনের বন্ধু মাহেন্দ্র চক্রবর্তীকে ভালোবাসে। তাদের মধ্যে সম্পর্ক ও রয়েছে। আপনি জানেন না?’

রুদ্র লম্বা শ্বাস ছাড়লো,

‘কানে তো অবশ্যই এসেছে। তবে সবাই তা মনে মনেই রেখেছে। যাদের মেয়ে তাদেরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমাদের না।’ তবে এই বিষয়ে ধর্ম অবশ্যই প্রাধান্য পাবে ঐশি। সেটা যদি হয় আমাদের ইসলাম তো সবার আগে তাকেই রাখতে হবে। তবে হ্যাঁ আমাদের ধর্মের অনেক মানুষই ভিন্ন ধর্মের মানুষকে বিয়ে করে থাকেন। সেটা যার যার নিজস্ব ব্যাপার। সে কিভাবে সেটা হ্যান্ডেল করে বিয়ে করবে সেটাও তার ব্যাপার। তবে এসবে কিন্তু অনেক সাফার করতে হয়। পরিবার এক সময় মেনে নিলেও সমাজ ছাড় দেয় না।’

‘তবে কি ইরাবতী ও মাহেন্দ্রের ভবিষ্যতে বিচ্ছেদ রয়েছে?’

রুদ্র হাসলো,

‘সেটা তো আমি তুমি আগে থেকে বলতে পারবো না। ভাগ্য কখন কাকে কোন দিকে নিয়ে যাবে কেউ জানে না। তবে সব সম্পর্কে যেমন বিচ্ছেদ হয় তেমনি পূর্ণতা ও পায়। যেমন তোমার আমার নামহীন মৌন সম্পর্ক পূর্ণতা পেলো। বুঝেছো?’

তটিনী মাথা নাড়ালো। তখনই তাদের দিকে ইরাবতীকে এগিয়ে আসতে দেখা গেলো। সে এসে রুদ্রের পাশে বসেছে। তটিনী ও রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ম্যাচ ফর ইচ আদার ব্রো। তোমাদের দুজনকে দারুণ মানিয়েছে।’

রুদ্র হাসলো, ‘থ্যাংক ইউ ডেয়ার।’

তটিনী ইরাবতীর দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। ইরাবতী তটিণী-র হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি তালুতে নাম লিখে বসে আছো। এসো আমি তোমাকে মেহেদী পড়িয়ে দেই?’

রুদ্র উঠে দাঁড়ালো, ‘তোমরা মেহেদী দাও, আমি নিচ থেকে ঘুরে আসছি।’

রুদ্র চলে যেতেই ইরাবতী তটিণী-র হাতে মেহেদি পড়িয়ে দিতে লাগলো। তটিনী তখনো ইরাবতীর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। ইরাবতী সেটা খেয়াল করে বলল, ‘কি দেখছো এভাবে?’

‘তুমি কিভাবে সমাজ পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য ধর্মের কাউকে ভালোবাসলে আপু?’

তটিনী মুখ ফসকে বলে ফেললো। ইরাবতীর হাত থেমে গেলো। তটিনী থমথমে গলায় বলল, ‘স্যরি আপু, আমি এটা বলতে চাইনি।’

ইরাবতী চমৎকার করে হাসলো। নিজের মুঠোফোন গেঁটে বের করলো সুদর্শন এক দেবতার মতো পুরুষের ছবি। তটিণী-র দিকে স্কিন ধরে বলল, ‘দেখো তো। কেমন?’

তটিনীর বিস্ময়ে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। এতো সুন্দর কোনো পুরুষ হয়? এই ছেলেটিকে কি মায়াবতা বলা উচিত? নাকি রুপবতা?’ এবার তটিনী বুঝতে পারলো। কেন ইরাবতী সবার বিরুদ্ধে গিয়ে এই এক ছেলেই ভালোবেসে চলেছে। এমন ছেলেকে কোন মেয়েই রিজেক্ট করবে? যদি ছেলেটা নিজ থেকেই প্রপোজ করে? তটিনী শুনেছে মাহেন্দ্র নিজ থেকে ইরাবতীকে প্রপোজ করেছিল। সব মেয়ের রাতের ঘুম হারাম করে দেওয়া পুরুষের মধ্যে ইরাবতী নিজেকে আটকে গেছিল। সেজন্য হয়তো প্রপোজাল রিজেক্ট করতে পারেনি। সুযোগ হাত ছাড়া না করে কাজে লাগিয়ে ফেললো।

ইরাবতী স্কিন অফ করে বলল, ‘কেমন দেখলে? আমার সাথে মানাবে তো?’

তটিনী ইরাবতীর মুখশ্রীতে চোখ ভুলিয়ে বলল, ‘কেন যেনো মনে হচ্ছে এই মায়াবতা ছেলেটিকে শুধুমাত্র তোমার সাথেই মানাবে ইরাবতী আপু।’

‘তুমি নিশ্চয়ই ধর্ম নিয়ে ভাবছো?’

তটিনীর হ্যাঁ সূচক উত্তরে ইরাবতী চমৎকার করে হাসলো,

‘আমি কখনোই আমার ধর্ম ত্যাগ করবো না। সেও করবে না। কিন্তু আমরা কেউ কাউকে ছাড়তে পারবো না তটিনী। নিজ নিজ ধর্ম নিজ নিজ ভাবে পালন করবো। কিন্তু ভালোবাসাটা হবে দুজনার। আমাদের মতো পৃথিবীতে আরও অনেকে আছে। বিশেষ করে ভিনদেশে। সেখানে ধর্ম বর্ণ দেখে বিয়ে ভালোবাসা হয়না। তাদের যাদের ভালো লাগে তার সাথেই লিভ ইন এ চলে যায়। আমরা সেরকম কিছুতে যাবো না কখনোই। বিয়ে করবো অবশ্যই। তবে কখন কোথায় জানি না। আমাদের বিয়ে সমাজ মানবে না জানি। কিন্তু পরিবার মানবে কি না বুঝতে পারছি না। ইতিমধ্যে ভাইয়ের সাথে মাহেন্দ্রের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা নিজেদের ছাড়তে পারবো না। সেজন্য টিকে আছি।’

ইরাবতী ফের মেহেদী দিতে শুরু করলো। তটিণী প্রশ্ন করল, ‘ধরো তোমাদের বিচ্ছেদ হলো, তখন কি করবে?’

ইরাবতী চমৎকার করে হাসলো, ‘তার আমার বিচ্ছেদ হবে না তটিনী। আমি জানি সে আমার জন্যই জন্ম নিয়েছে!

তটিনী আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে এক পাগল প্রেমিকাকে দেখলো। কিরকম আত্মবিশ্বাস মেয়েটার। সমাজ পরিাবর সবার বিরুদ্ধে গিয়ে একটা ছেলেকে ভালোবেসে চলেছে।

‘তোমাদের রিলেশনের কতো বছর?’

‘আমাদের কোনো নামের সম্পর্ক নেই তটিনী। আমরা প্রেম করছি না।’

তটিনী অবাক হলো, ‘তবো?’

ইরাবতী তার সেই চমৎকার হাসি হাসলো,

‘আমরা এক অনুভুতিতে তলিয়ে গেছি তটিনী। যেখানে সবসময়ই অ-প্রেমের খেলা চলে। তাকে আমি কখনো ভালোবাসি বলিনি, সে কখনো আমাকে ভালোবাসি বলেনি। শুধু বলেছিল হাত ধরবে?’ এইটাই তার সেই বিখ্যাত প্রপোজ। তারপর কখনো ভালোবাসাবাসির কথা হয়নি। আমাদের সম্পর্কটা ভীষণ অন্যরকম তটিনী। তার সাথে আমার মাসেও দেখা হয় না অনেক সময়। আমরা কখনোই সময় ঠিক করে দেখা করিনি।

‘তবে?’

‘আমাদের দেখা হয়ে যায়। যেমনটা হয়ে গেছে অ-প্রেম।’

‘তোমরা কোনো রিলেশনে নেই?’

‘সবাই ভাবে আমরা রিলেশনে। কিন্তু আসলে আমরা কোনো রিলেশনে নেই। আমাদের মনের কথা একে অপরেকে বলা হয়নি। আমরা নিজ থেকে বুঝে নিয়ে এক নামহীন সম্পর্কে জড়িয়েছি। সেখানে কেউ কাউকে কোনো দায়বদ্ধতা দেখায় না। তবুও যেনো কতো দায় থেকে যায়।’

তটিণী আশ্চর্যরকম এক অ-প্রেমের কথা শুনে কথা বলার ভাষা খুঁজে পেলো না। এভাবেও ভালোবাসা যায়?’

#প্রিয়_রুদ্র_ভাই
#পর্ব-৩৫ (বিয়ে)
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

চারিদিকে জমজমাট আয়োজন। রুদ্র ও তটিণী-র বিয়ে আজ। ঈদের একদিন পরই বিয়ের আয়োজন হলো। গতকাল বিশাল আয়োজন করে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তটিনী ও রুদ্রের সামনাসামনি কাজি এসে বসেছেন। বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন তিনি। প্রাপ্তি, প্রণয়কে পরিণয় এ রুপান্তর করতে রুদ্র ও তটিনী আবারও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করে নিলো। রুদ্র পড়েছে সাদার মধ্যে সোনালি কারুকার্যের শুভ্র পাঞ্জাবি। তটিনী লাল খয়েরী ভারী শাড়ি ও মাথায় লাল চকচকে কাজ করা দোপাট্টা। সাথে ভারী মেকআপ এ মন্দ লাগছে না।

রুদ্র ও তটিনীর বিয়ের পর এলো মুখ দেখা পর্ব। সবাই চারিদিক থেকে গোল হয়ে দাড়িয়েছে। রুদ্র তটিনীর দোপাট্টা তুলে দিলো সিথি সমান। হাত ভর্তি মেহেদী তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। সাথে ঠোঁটর কোনের সর্বনাশী হাসি রুদ্রের সর্বনাশ করতেই যথেষ্ট। রুদ্র সবার আড়ালে কানে ফিস ফিস করে বলল, ‘সর্বনাশিনীর সর্বনাশী রুপে রুদ্র ইরফানের সর্বনাশ সর্বদার মতো প্রযোজ্য! কৃতজ্ঞতা তোমায় রুদ্রের সর্বনাশিনী হওয়ার জন্যে!

আংটিবদল হলো। রুদ্র নিজের ইনকামের উপার্জন দিয়ে ছোট একটি ডায়মন্ডের আংটি কিনেছে। সেটাই তটিণী-কে পড়িয়ে দিয়েছে সে। তারপর এলো খাওয়া দাওয়ার পাট। সবাই খেতে বসলো। রুদ্র তটিনীকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো। ফটোশুট তো সবসময়ই করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রুদ্র নিজেদের ছবিসহ মেরিড স্ট্যাটাস দিয়ে দিয়েছে। রুদ্রের কমেন্ট বক্সে কমেন্টর ঝড়। সে ডাটা অফ করে রেখে দিয়ে তটিণী-র হাত ধরে বসে রইলো।

রুপান্তর ও মিনহাজকে দেখা গেলো। তারা ম্যাচিং ড্রেস পড়েছে। তটিণী-র কানে কানে বলল, ‘দোস্ত দোয়া করে দিস যাতে এবার আমার বিয়েটা হয়। শুনেছি বিবাহিত মহিলাদের দোয়া লেগে যায়।’

তটিনী ঠোঁট চেপে হাসলো। মিনহাজ ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘তুই ওর কানে কানে কি বলছিস? জোরে বল আমিও শুনবো।’

রুপান্তর কোমড়ে হাত রেখে বলল, ‘আমাদের পার্সোনাল কথা জোরে বলতে যাবো কেন?’

মিনহাজ রুদ্রের পাশে বসলো। রুপান্তর বসলো তটিণী-র পাশে। ক্যামেরায় তাদের যুগলবন্দী হলো।

গাড়ি কমিউনিটি সেন্টার থেকে রুদ্রদের বাড়ির দিকে ছুটছে। আজ থেকে তটিনী পারমানেন্ট ভাবে রুদ্রের ঘরের রাণী হয়ে গেলো। রুদ্রের ঘরের সবকিছুতেই এখন তটিণী-র অধিকার। আজ থেকে আর কাউকে লুকিয়ে কাছাকাছি আসতে হবে না। আজ থেকে সবাই জানলো তটিনী ইফফাত ঐশির বসবাস একমাত্র রুদ্র ইরফানের বুকে। আজ থেকে সবাই অবগত হলো রুদ্র ইরফানের একমাত্র ও শুধুমাত্র একজনই আর সে তার প্রিয়তমা ঐশি!

*
ফুলে সজ্জিত বিছানায় দোপাট্টার আড়ালে মুখ লুকিয়ে বসে আছে তটিনী। রুদ্র রুপান্তর ও মিনহাজসহ দরজা আটকে রাখা বাকিদের সামলে ভেতরে ঢুকলো রাত বারোটার পর। তটিণী-র তখন ঘুম চলে এসেছে চোখে। রুদ্র ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো। দোপাট্টা তুলে মুখ তুলে চোখ ভরে দেখলো। তটিণী-র ঘুম জড়ানো চোখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।

‘ঘুম পেয়েছে?’

‘হু।’

‘ঘুমিয়ে পড়তে।’

‘উঁহু আজকের রাতটা তো বার-বার ফিরে আসবে না। ঘুমিয়ে নষ্ট করতে চাই না।’

রুদ্র হাসলো পুনরায়। তটিণী-র কপালে গাঢ় করে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। তটিনী বুকে ঢলে পড়লো। রুদ্র শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। চুলের ভাজে ঠোঁট চেপে ধরে বসে রইলো দীর্ঘক্ষণ।’

‘আমি দেখেছি, পেয়ে গেলে পুরনো হয়ে যায় বলে আগের মতো ভালোবাসে না। কিন্তু আপনি সেই ধারণা পাল্টে দিয়ে আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করলেন।’

‘তুমি আমার কাছে কখনোই পুরোনো হবে না ঐশি। তুমি আমার কাছে সবসময়ই একই থাকবে। রুদ্র ইরফানের বউ হয়ে সারাজীবনই আমার বুকের মধ্যে বিচরণ করবে। তোমার জায়গা আমার বুকে সবসময়ই থেকে যাবে ঐশি।সেটা কখনোই পরিবর্তন হবে না। ভালোবাসা দেহ দেখে না ঐশি। সেজন্য তুমি কখনোই পুরনো হবে না। যখন তোমার আমার শরীরের প্রয়োজন হবে না তখন আমি তোমাকে মনের টানে কাছে টানবো।’ ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখা যায় হাতে হাত রেখেও। বুঝতে পেরেছো?’

‘হু।’

‘আর যাদের কাছে পুরোনো হয়ে যায় তারা আসলে ভালোবাসেনি। প্রেম আর ভালোবাসা আলাদা জিনিস ঐশি। প্রেমে শরীর আবশ্যক। ভালোবাসায় প্রিয় মানুষের বিশ্রি মুখটাও সর্বোচ্চ সৌন্দর্যের অধিকার বহন করে। তুমি আমি যখন বৃদ্ধ হবো, তখন আমাদের একজন মানুষের প্রয়োজন হবে। কথা বলার মানুষ। আমি তোমার সেই মানুষ হবো, আর তুমিও আমার সে-ই মানুষই হবে। এটাই ভালোবাসা।’

তটিনী মুগ্ধ হয়ে কথাগুলো শুনলো। রুদ্রের কপালে গাঢ় করে ঠোঁট ছুয়ে হাসলো। রুদ্র ভ্রু নাচিয়ে বলল, ‘কি?’

তটিনী ফটাফট রুদ্রের বক্ষস্থলে ওষ্ঠদ্বয় ডোবালো। রুদ্র শিহরিত হলো। তটিনী চুলের সিঁথিতে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে বলল, ‘কাপড় চেঞ্জ করে নাও, আমরা বের হবো তো।’

তটিনী ও রুদ্র কাপড় চেঞ্জ করলো। তটিনী সাদা জামদানী শাড়ি পড়েছে। রুদ্র সাদা শার্ট। সবার অগোচরে দুজন বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে। রুদ্র তার সেই বাইকটায় তটিনীকে নিয়ে চেপে বসলো। যেটাতে বসে জীবনের কতশতবার তটিনীকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে সে।

রুদ্র তার সেই মন খারাপের সময় চলে আসা জায়গায় এসে বাইক থামালো। সরোবরে গোলাপি রঙের শাপলা ফুলে আজও ভরপুর। সিঁড়িতে এসে বসলো দুজন। তটিনী পা পানিতে ডুবিয়ে বসলো। রুদ্র ফিসফিস করলো, ‘এই জায়গায় আমরা শেষ কবে এসেছি মনে আছে?’

‘হ্যাঁ, আপনি বিদেশে যাওয়ার পূর্বের দিন।’

‘এটা না বলে বলতে পারতে, তোমার আমার প্রণয়ালিঙ্গনের দিন।’

তটিনী রুদ্রের বাহুতে চাপড় মারলো। রুদ্র শরীর দুলিয়ে হাসলো৷ তটিনীর চুলের ভাজে গুঁজে দিলো সদ্য সরোবর থেকে নেওয়া শাপলা। তটিণী-র সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেলো রুদ্রের চোখে। তটিনীর কমোড় চেপে নিজের উরুতে বসালো। চুলের ভাঁজে নাক ডুবিয়ে বসে রইলো দীর্ঘক্ষণ। চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছে সরোবরের পানিতে। রুদ্র বসার আগে মোবাইল সেট করতে ভুলেনি। ভিডিও থেকে স্কিনশর্টের মাধ্যমে সুন্দর সুন্দর ছবি নিয়ে নিলো। তটিনী মুখে হাত দিয়ে বলল, ‘এতো সুন্দর!

সে রুদ্রের আইডিতে ঢুকে নিজে পোস্টসহ স্টোরি দিলো। ক্যাশন দিলো, ‘একটি নির্জন সরোবরের পাড়ে শাপলা ফুলের সুবাসের মায়ায় শুভ্রের মায়ায় জড়ানো দুজন প্রকৃতি প্রেমি।’

রুদ্র হাসলো। ‘সুইজারল্যান্ডে যাবে নাকি মধুচন্দ্রিমায়?’

তটিনী গলা জড়িয়ে ধরলো, ‘যাওয়া যায়।’

রুদ্র নাকে নাক ঘষলো। ‘তার আগে বাংলাদেশের মধুচন্দ্রিমা সেরে নেই?’

রুদ্রের কোলে করে তটিনী শহরের নির্জন রাস্তার মধ্যে ঘুরে বেড়ালো। ফজরের আগে দুজন এসে পৌঁছালো বাড়িতে। রুদ্র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করলো, ‘এবার আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে বউ।’

*

আজ রুপান্তর ও মিনহাজের ঝগড়া হয়েছে। রুপান্তর প্রস্তাব রেখেছিল তারা পরিবারকে জানিয়ে বিয়ে করে নিবে। কিন্তু মিনহাজের এক কথা, ‘আগে স্বাবলম্বী হই। তারপর বিয়ে।’

কিন্তু রুপান্তর মানতে নারাজ। তটিণী-র বিয়ে দেখে তার মাথাতে বউ সাজার ভূত চেপেছে। সুতরাং সে হুমকি দিয়েছে, ‘হয় তুই বিয়ে কর, নয়তো আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে হলেও বউ সাজবো।’

রুপান্তরের এহেন হুমকিতে মিনহাজের মাথায় হাত। এ কোন সমস্যার মধ্যে ফেললো রুপান্তর তাকে! চিন্তায় তার মাথা ঘুরছে। রুপান্তরকে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না, ফোনও তুলছে না। তাকে ফেলে বউ সাজার উদ্দেশ্যে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলে নি তো?’

রুপান্তর ফোন তুললো ফজরের পর। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘বাসর টাসর সেড়ে তোর ফোন তুললাম, কি বল তো তোর দুলাভাই বেশিই রোমান্টিক সেজন্য সহজে ছাড়লো না।’

মিনহাজের কান দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো। চোখেমুখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। চিৎকার করলো, ‘তোকে আমি খু ন করে ফেলবো রুপ!

মিনহাজের মোবাইল ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে আছে মেঝেতে। রাগে মোবাইলের এই হাল করেছে সে। রুপান্তরকে সামনে পেলে না জানি কি করবে। এদিকে বেচারি রুপান্তর শায়েস্তা করতে ভুলভাল বলেছে। মিনহাজ সেটা সিরিয়াসলি নিয়ে যে এভাবে রিয়েক্ট করবে সেটা সে ভাবেনি। তার এখন নিজেরই মাথা ঘুরছে, না জানি সকাল হলে তার কপালে কি ঘটে যায়!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here