#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৪৭
#তানিশা সুলতানা
“আপনি ড্রিংক করেছেন?
কল রিসিভ করে শক্ত গলায় বলে তুলতুল।
” হ্যাঁ করেছি। তো?
সায়ান তেড়া ভাবে জবাব দেয়।
“কল কেনো করেছেন? আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই আমার।
তুলতুল বলে
” তুলতুল তুই এতো বলদ কেনে? একটা মানুষের বুদ্ধি এতো কম কি করে থাকতে পারে? কমনসেন্সটুকুও নেই তোর। কখনো বুঝিস না আমায়।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“ভালো কথা বুঝি না তো অন্য কাউকে খুঁজে নিন।
তুলতুল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে।
” তোকে এখনো ছুঁয়ে দেখলাম না। নতুন খুঁজবো কিভাবে? আগে তোকে ছুঁই। একটু টেষ্ট করি। তারপর নাহয় ভাববো ছাড়াছাড়ির কথা।
তুলতুল দাঁতে দাঁত চাপে। মানুষ কতোটা খারাপ হলে এমন কথা বলতে পারে?
“আমাকে নেক্সট টাইম কল করবেন না। স্পষ্ট ভাবে বলে দিলাম আমি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তুলতুল।
“ভাল লাগলো না তো আমার কথা? আমারও লাগে না।
” ভালো লাগাতে বলে কে? নতুন অপশন খুঁজুন।
“এতো সহজ? এতোটা সহজ না রে। তোর সাথে আমার কখনো মিলবে না এটা জেনেই এগিয়েছি। ভেবেছি মানিয়ে নিবো। আর মানিয়েও নিয়েছি। তবে সবটা একা একা। তুই কখনো মানিয়ে নিস নি। একটুও পরিবর্তন আনিস নি। কখনো ভাবিস নি আমার কি ভালো লাগবে।
অভিযোগও করি নি কখনো। করতাম না। যদি না তুই অভিযোগ ছুঁড়ে দিতিস। ধুম ধাম করে ছেড়ে যাওয়ার কথা মুখে আনতে বুক কাঁপে না তোর? খারাপ লাগে না?
একটা ছেলে যে শুধুমাত্র তোকে পাওয়ার জন্য তার পরিবারের এগেনসে চলে গেছে। নিজের বোনকে যে বোনকে সে প্রচন্ড ভালোবাসে। সেই বোনকে ব্যবহার করেছে।
বুঝতে পারিস না তুই? সব সময় শুধু ভূল গুলোই খুঁজে বেড়াস কই কখনো তো ভালো দিকটা দেখিস না।
চিল্লিয়ে বলে সায়ান। তুলতুল থমকে যায়। মিথ্যে তো বলছে না সায়ান। সত্যিই তো বলছে।
” কি হলো চুপ করে গেলি কেনো? কথা বল। অব্ভাস হয়ে গেছে তোর তাই না? কথায় কথায় বাড়ি থেকে চলে যাওয়া ডিভোর্সের হুমকি দেওয়া। কি তোর আমাকে ছাড়া চললে আমার চলবে না? চলবে তুলতুল। কিন্তু আমি চলতে চাই না। কারণ সায়ান মাহমুদ এক নারীতে আসক্ত। তোর না আমাকে নিয়ে অহংকার করা উচিৎ ছিলো। বুক ফুলিয়ে গর্ব করা উচিৎ ছিলো সায়ান মাহমুদ তোর মতো একটা চুনোপুঁটিকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
জোরে জোরে শ্বাস টানে সায়ান। তুলতুল ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকায়। ভীষণ কান্না পাচ্ছে বেচারার।
“আমি তোর জন্য আমার ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে পারি না। রাজনীতি করা আমার স্বপ্ন সেটাও ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধুমাত্র তুলতুলের সাথে সুখে সংসার করবো বলে। আজকে বাড়ি থেকে চলে এসেছি তারা তুলতুলকে ভূলে যেতে বলেছে বলে।
আমি ভূল করেছি। আমার লাইফের সব থেকে বড় ভূল তুই তুলতুল। আমি ভূলেই গেছিলাম যার বুদ্ধি হয় না বয়স বছরে তার নব্বই বছরেও বুদ্ধি হবে না।
(দীর্ঘ শ্বাস ফেলে)
তোকে ছাড়তে পারবো না আমি। তোকে ছাড়ার কথা শুনলেই আমার শরীরের র*ক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক আছে। তুই তোর মতো থাক। যা খুশি কর। আই ডোন্ট কেয়ার। তবে কখনো যদি মনে হয় সায়ানকে তোর প্রয়োজন চলে আসিস। সায়ান অলওয়েল দেয়ার ফর ইউ।
সায়ান কল কেটে দেয়। তুলতুল ফোন বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। ভূল করে ফেললো কি?
ওইভাবে বসেই রাত পার করে তুলতুল। তারপর সায়ানের ফোনে কল দিয়েছিলো কিন্তু ফোন বন্ধ। ভীষণ চিন্তা হচ্ছে সাথে গিল্টি ফিল। মানুষটার একটা অভিযোগও মিথ্যে না।
🥀
তন্ময় সারা রাত রুমে আসে নি। সে গেস্ট রুমে ঘুমিয়েছিলো। সুমু ফ্লোরে বসে কেঁদে ভোর করে ফেলেছে। অনেক ভেবেছে। ভাইয়ের দোষ সে অনেক দিয়েছে। অনেকটা দিন ভাইয়ের থেকে দুরত্বও বজায় রেখেছে। কিন্তু এখন কেনো যে ভাইকে দোষ দিতে পারে না।
তুলতুলের কিন্তু একটুও ভূল নেই? সুমু বুঝে গেছে ভাইয়ের ভূলটাই ছিলো তুলতুলকে ভালোবাসা।
ভোর বেলা তন্ময় রুমে ঢুকে। আজকে অফিসে মিটিং আছে। দ্রুত যেতে হবে। সুমুকে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে মুখ ফিরিয়ে পাশ কেটে চলে যায় তন্ময়।
সুমু তন্ময়কে দেখে উঠে দাঁড়ায়।
“একটা মানুষ ভূল করেছে। সে তার ভূলের জন্য শতকোটি বার ক্ষমা চেয়েছে। এবার কি সেই মানুষটার ম*রে যাওয়া উচিৎ? বাবার বাড়ির কথা তো বলতে পারবো না। কারণ আমি পছন্দ করে বিয়ে করেছি। আমার বর আমাকে ইগনোর করছে এটার জন্য রেগে চলে গেলে আমাকে কেউ দুহাতে আগলে নেবে না।
সুমু শক্ত গলায় বলে। তন্ময় কাবার্ড থেকে শার্ট বের করে তাকায় সুমুর দিকে। কিন্তু কিছু বলে না। ওয়াশরুমে যেতে নেয়
” আমার সলিউশন চাই। এভাবে থাকতে পারবো না। প্রতিদিন অবহেলিত হওয়ার থেকে একবারে হওয়া অনেক ভালো। আপনার ডিসিশন জানতে চাই আমি।
তন্ময় পেছন ঘুরে তাকায়।
“কিসের সলিউশন?
” জানেন না? আপনার বোনকে আমি আমার ভাইয়ের সাথে পাঠিয়েছি। এবার আপনার বোন চলে এসেছে। তো আমি নিজে হাতে ওদের ডিভোর্স করাতে চাই।
তন্ময়ের চোখে চোখ রেখে বলে সুমু। তন্ময় ভ্রু কুচকে তাকায়।
“তোমার ভাই মানবে?
” আমি মানাবো। মুখের ওপর একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনার বোনকে নিজের সাথে জড়িয়ে মস্ত বড় ভূল করেছে আমার ভাই। তুলতুল ডিজার্ভও করে না আমার ভাইকে।
চোয়াল শক্ত করে বলে সুমু।
“সুমু
তন্ময় হাত তুলে জোরে ধমক দিয়ে বলে। সুমু ভয় পেয়ে যায়। তন্ময় হাত নামিয়ে নেয়।
” এবার আমার কি করা উচিৎ? কান্না কাটি করে ভাংচুর করে লোক জানিয়ে বাবার বাড়ি চলে যাওয়া উচিৎ। কারণ আমার বর আমাকে মারতে চেয়েছে। সে ভীষণ ভূল করেছে। তার সাথে কথা বলে তাকে সরি বলার সুযোগ দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলা একদম ঠিক হবে না। তাহলে তো সবাই শান্তিতে থাকতে পারবে।
সুমু রেগে কাঁদতে কাঁদতে বলে। তুলতুল রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো তন্ময় আর সুমুর সব কথা শুনতে পায় ও। ভীষণ খারাপ লাগছে। বুক ফেঁটে যাচ্ছে।
সুমু কান্না করতে করতে বসে পড়ে। তন্ময় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“আমার ভাই সারা রাত বাড়িতে ফেরে নি। ঠিক করে হাঁটতে পারে না। ঔষধ না খেলে বুকে ব্যাথা করে। কোথায় আছে কেউ জানে না। আপনার কতো অবহেলা সয্য করে পড়ে আছি এখানে। কারণ আপনি আমার স্বামী। আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার। তুলতুল নিজের দায়িত্ব কখনোই বুঝে নি। যোগ্য না ও আমার ভাইয়ের।
তন্ময় আর দাঁড়ায় না। ওয়াশরুমে ঢুকে ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। সুমু কাঁদতে থাকে দুই হাতে মুখ চেপে যাতে কান্নার শব্দ কেউ শুনতে না পায়। তুলতুল নিজের রুমে চলে যায়। দরজা বন্ধ করে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে কাঁদতে থাকে।
বেলা কয়টা বাজে জানা নেই সায়ানের। ঢাকায় চলে এসেছে। রাতে কখন ঘুমিয়ে ছিলো জানা নেই। জানালার কাঁচ ভেদ করে সূর্যের আলো একদম সরাসরি চোখে পড়ছে। পিটপিট করে চোখ খুলে সায়ান।
রাতে ফোনটা ভেঙে ফেলেছে। তাই ঘড়ি দেখার উপায় নেই। এই রুমে ঘড়ি নেই।
আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে সায়ান। আর তখনই আওয়াজ আসে দরজা ধাক্কানোর। চমকে ওঠে সায়ান। এখন আবার কে আসলো?
হাসিবের কাছে তো এক্সর্টা চাবি আছে। তাহলে কে?
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দরজা পেরিয়ে সিঁড়ি ডিঙিয়ে নামতেই শুনতে পায় মেয়েলি কান্নার আওয়াজ। কেঁদে কেঁদে ডাকছে আর দরজা ধাক্কাচ্ছ।
চলবে