আশার_হাত_বাড়ায়|৩৪| #ইশরাত_জাহান 🦋

0
230

#আশার_হাত_বাড়ায়|৩৪|
#ইশরাত_জাহান
🦋
“আমার ছেলে তোমার জন্য দেশ ছেড়ে চলে গেছে।তুমি দায়ী ওর চলে যাওয়ার জন্য।”

কিছু বুঝতে পারলো না শ্রেয়া।তাকে যে কথাগুলো বলা হচ্ছে এটা সে শিওর কিন্তু সে তো কিছুই করেনি।প্রশ্ন করে,”আমি কি করেছি?”

“আমার ছেলেকে পটাতে চেয়েছিলে তাই না? পারোনি তো।তাই ওর বাবার সাথে রাগ করে চলে গেছে।থাকবে না এখানে।”

“আঙ্কেলের সাথে রাগ করেছে কেনো?”

“কারণ ও তোমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে গেছিলো তাই।তোমার মতো মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে আদৌ কি আমাদের সাথে যায়?একটু ভেবে দেখোতো?”

মুখটা শুকনো হয়ে আসলো শ্রেয়ার।মুখের উপর এমন অপমান সহ্য করতে পারছে না সে।অতসী ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখালো কালকের ভিডিও।যেখানে ফারাজ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে সে শ্রেয়াকে ভালোবাসে না।বিয়ে করতে পারবে না শ্রেয়াকে।শ্রেয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।এভাবে অপমান না করে ফারহান চৌধুরীর মাধ্যমে না করে দিলেই হতো।জিনিয়া এখন বিজয়ের হাসি হাসতে থাকে।ফারাজ তো রাজি ছিলো না এখন শ্রেয়া নিজেও না করে দিবে।জিনিয়া আর অতসী চলে যেতেই শ্রেয়া চলে আসে তার কেবিনে।কোনরকমে কাজ করতে থাকে।কাজ করলেও মন মস্তিষ্ক তার ঠিক নেই।এভাবে অপমানটা সহ্য হচ্ছে না।দুই ঘণ্টা পর না পেরে চলে গেলো এনির কেবিনে।এনি ভিডিও কনফারেন্সে আছে।শ্রেয়া নক করতেই হাত ইশারা করে শ্রেয়াকে বুঝিয়ে দিলো সামনে বসতে।শ্রেয়া বসে আছে।এনি কথা বলা শেষ করে শ্রেয়ার দিকে তাকালো।চোখমুখ লাল হয়ে আছে।বোঝা যাচ্ছে কান্না করেছে শ্রেয়া।কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা না করে এনি বলে,”কিছু বলবে?”

“আমি এই চাকরি করতে চাই না এনি।”

“হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত?”

“এমনি।আমার দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না।”

“তুমি চাকরি করতে চাওনা এটা তোমার ডিসিশন তবে এই অফিস থেকে তোমাকে এখন বের করে দেওয়া তো সম্ভব না।”

“কেনো?”

“তুমি যার অ্যাসিসট্যান্ট হয়ে এসেছো সে কিন্তু এখানে নেই।তোমার বসের পারমিশন প্লাস পেপার সহ সই লাগবে।তবেই তুমি এই চাকরি বাদ দিতে পারবে।”

“ওনাকে ইনফর্ম করে দিলেই তো হলো।”

“শেহনাজ এটা কোনো হারিপাতিল খেলা না।এটা একটা কোম্পানি যেটাতে রুলস ফলো করে চলতে হয়।এখানে জয়েন হবার আগে তোমাকে একটা পেপারে সই করতে হয়েছে।সেখানে স্পষ্ট আমরা উল্লেখ করেছিলাম এক বছরের আগে নিজ থেকে তুমি যেতে পারবে না।আমরা স্ট্রং অ্যাসিসট্যান্ট খুজতেছি বলেই কিন্তু পেপারে সব রুলস উল্লেখ ছিলো।হ্যান্ডসাম এখানে বেশি একটা থাকে না যেটা দেখার তার অ্যাসিসট্যান্ট মানে তুমি আর তার শেয়ারহোল্ডার মানে আমি দেখবো।সবকিছু জেনেশুনে এসেও তুমি যেতে চাইছো।এতে কোম্পানিতে বড় আকারে লস হয়ে যাবে।”

“আমার ভালো লাগছে না এনি।আমি এই স্মার্ট জেনারেশনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না।অনেক সময় নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলছি।নিজের উপর নিজেরই বিতৃষ্ণা লাগছে।”

“তুমি কিছুদিনের জন্য রেস্ট নেও।আজকে ছুটি নেও।তিনদিন পর এসো।কিন্তু সরি টু সে যে তোমাকে আমি এখন অফিস থেকে রিজাইন দিতে পারবে না।”

এনির কথা মতো শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।হাতে থাকা কলমটি টেবিলের উপর রেখে এনি কল করে অর্পাকে।অর্পা রিসিভ করতেই এনি বলে,”লজিক্যালি সাথে অফিসের রুলস অনুযায়ী আমি শেহনাজকে আটকাতে পেরেছি।তুমি আজ আর ওর সাথে কথা বলো না।ওকে একটু হার্ড হতে হবে।নিজেকে শক্ত রেখে পথ চলা শিখতে হবে।নাহলে যে প্রতি পদে এভাবেই ভুগতে থাকবে।”

“হুম,আমি নিজেও চাই ও নিজের একটা রাস্তা করে তারপর এই পরিবারে আসুক।যে অশান্তি আমি ভুগছি এটা ওকে ভুগতে দিতে চাই না।মা কোনোদিন আমাকে ভালবাসেনি আমি চাই না শ্রেয়া এটা ফিল করুক।”

সকালেই যখন শ্রেয়ার দেরি হতে থাকে তখন এনি চেক করে সিসিটিভি ফুটেজ।যেটা ফারাজ আর তার ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট থাকে।গাড়ি থেকে নেমে এনি দূরে দেখেছিলো শ্রেয়া রিক্সায় করে আসছে।যেখানে মিনিট পাঁচ দেরি হবে সেখানে কেনো আধা ঘন্টা দেরি হচ্ছে বুঝতে পারছিলো না।সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এনি দেখলো শ্রেয়ার সামনে জিনিয়া আর অতসী।সাউন্ড সিস্টেম শুধু ফারাজের কাছে থাকায় কিছু শুনতে পারছে না।কি বলছে ওরা জানতে দারোয়ানকে কল করে।দারোয়ান রিসিভ করতেই এনি বলে,”আপনি চুপ থাকুন।ওখানে কি কথা হচ্ছে আমি শুনতে চাই।”

দারোয়ান চুপ থাকে।ওদের সমস্ত কথা শুনে নেয় এনি।সবকিছুর ঊর্ধ্বে শ্রেয়া কোনো প্রতিবাদ করেনি দেখে শ্রেয়ার উপর রাগ করে।শ্রেয়া যেভাবে চলছে তাতে বাংলা সিনেমার ন্যাকা হিরোইন থেকে কম কিছুই না।জিনিয়া আর অতসীর মুখের উপরে মোক্ষম জবাব দিতে পারতো শ্রেয়া।তাই এনি প্ল্যান করেছে সে কিছুই জানে না এমন ভাবে থাকবে।কেউ আঘাত করলে তাতে মলম লাগালে আঘাত শুকিয়ে যায়।ব্যথার কারণটাও ভুলে যায় সবাই।কিন্তু মলম না লাগিয়ে ব্যাথাকে পুষে রাখলে সেই ব্যাথা দ্বারা জীবনে বহুদূর এগিয়ে যায়।শ্রেয়াকে এখন এই ব্যাথা পুষে রাখতে হবে।তাহলেই সে নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে।

বাসায় এসে শ্রেয়া কারো সাথে কোনো কথা না বলে দরজা আটকে দেয়। রিমলি সবকিছু শুনেছে অর্পার কাছে।রিমলি সব জেনেও চুপ আছে।সৃষ্টি বেগম ঘাবড়ে গিয়ে দরজা ধাক্কালে রিমলি নিষেধ করে।সবকিছু খুলে বললে তিনিও নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন।কিন্তু শ্রেয়া কোনো অঘটন ঘটিয়ে দেয় কি না ভাবছে।কিছুক্ষণ পরপর দরজার কাছে যেয়ে টোকা দিচ্ছে।কোনো সাড়াশব্দ না পেলেও কান্নার আওয়াজ ঠিকই পাচ্ছেন তিনি।মেয়ের দুঃখে নিজেও কান্না করে দেন।শ্রেয়া ঝর্না ছেড়ে তার নিচে বসে কান্না করতে থাকে।অনেকক্ষণ কান্না করার পর বাইরে এসে বাবার ছবি হাতে নেয়।বাবার কাছে আজ আক্ষেপের কথা বলে,”কেনো গেলে তুমি আমাকে ছেড়ে বাবা?তুমি থাকলে আজ আমরা ওই কুঁড়েঘরে সুখে থাকতাম।এসব বিলাসিতা দেখতে হতো না।সময়ের সাথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতাম।এত দ্রুত সফলতার মুখে আসতে হতো না।তুমি নেই বলেই আমার বিয়ে হয়ে গেলো।তুমি নেই বলেই আমাকে কোনো রাস্তা দেখতে হলো।তুমি নেই বলেই আজ আমি আমার বটবৃক্ষ হারালাম।তুমি নেই বলেই মা বোন দুজনে আজ নিস্তব্ধ।আমাদের সেই আগের জীবনটা এখন আর নেই বাবা।অল্প টাকায় অল্প কিছুতে আমরা যে সুখ পেতাম এই সুখ এখন পাই না বাবা।এই সমাজ পুরুষের পরিচয় ছাড়া বাঁচতে দেয় না।টাকা পয়সা ছাড়া মূল্য দিতে পারেনা।তুমি থাকলে আজ আমি এই জায়গায় থাকতাম না।”

শ্রেয়া কান্না করতে করতে এত কথা বলছে অথচ ছবিতে তার বাবার মুখে সুখের হাসি।শ্রেয়া আবারও বলে,”তুমি হাসছো বাবা?তোমার মেয়ে সুখে নেই।আমি কারো ভালোবাসা পাই না বাবা।স্বামী শাশুড়ী ননদ এদের জন্য এতকিছু করেও দুইটা বছর অবহেলা পেয়েছি।জীবনে প্রথম কোন পুরুষকে নিজের মনে জায়গা দিয়েছি।সেও আমাকে চায় না।কারণ আমার টাকা পয়সা অর্থবিত্ত নেই।ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই বাবা।আমার ভালোবাসা আমার প্রচেষ্টা সব ব্যার্থ।আমি নিজেও এক ব্যার্থ নারী বাবা।আমি সমাজের কাছে ব্যার্থ।ডিভোর্সী নারীরা ব্যার্থ।”

বলেই শ্রেয়া আরো জোরে জোরে কান্না করছে।ভিতরের সমস্ত কথা শুনতে পেলো সৃষ্টি বেগম।কান পেতে আছেন যে তিনি এখানে।না পেরে রিমলিকে বলে,”আমি ওকে সত্যিটা বলে দেই।ওর এই কষ্ট মা হয়ে সহ্য হচ্ছেনা আমার।আমি জানতাম নারী জীবন বড়ই কঠিন।ঠিক এই কষ্টটার জন্য আমি ওকে মাটি আঁকড়ে সংসার করতে বলেছিলাম।তবে রনি যে নষ্ট কাজ করেছে এরপর আমি ওকে সংসার করতে দিতে পারতাম না।আজ আমার মেয়েটা পুরো নিঃস্ব।আমি অপদার্থ মা হয়ে ওর আহাজারি শুনছি।আমার মরণ হলো না কেনো?”

মায়ের কান্না দেখে রিমলি জড়িয়ে ধরে সৃষ্টি বেগমকে।মায়ের চোখের পানি মুছে বলে,”আপুকে শক্ত মনের হতে হবে মা।এই পৃথবীর মানুষ বহুরূপী।তাদের আসল সত্যিটা জানতে হবে।এখন আপু যদি জানতে পারে যে তার ভালোবাসার মানুষ নিজেই একটু সময়ের জন্য বাইরে আছে।দেশে ফিরে তাকে বিয়ে করবে তাহলে আপু নিজে একটা আশায় থাকবে।জিনিয়া আন্টির মতো মহিলাদের সামনে রুখে দাঁড়াতে পারবে না। আপুকে বুঝতে হবে মুক্ষম জবাব কিভাবে দিতে হয়।আপুকে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ওটা আপুর কাজে লাগাতে হবে।কতশত নারী আছে এই সুযোগটাও পায় না।আমার আপু পেয়েছে মা।তাই ওকে সমাজের অবহেলা করা মানুষের মুখের উপর জবাব দিতে হবে।এক জালিম শাশুড়ির কাছ থেকে এসে আরেক জালিম শাশুড়ির কাছে গেলে তো সেই একই জীবন পাওয়া।একটু সহ্য করো দেখবে ঠিক হয়ে যাবে।”

বিকালে আছরের আজানে ঘুম ভাঙ্গলো শ্রেয়ার।মনে পড়লো সে তো যোহরের নামাজ পড়েনি।সাথে সাথে চলে গেলো ওযু করতে।দুঃখ কষ্ট আসবেই তাই বলে নামাজ আদায় করা বাদ দেওয়া যাবে না।নামাজ পড়লে মনের শান্তি মেলে।যত কষ্টের জীবন হোক নামাজ মনের মধ্যে পবিত্রতা বজায় রাখে।সাহস বাড়িয়ে দেয় নতুন পথ চলার।নামাজ পড়ে মোনাজাত করে শ্রেয়া ওই জায়নামাজে মাথা এলিয়ে দেয়।ভাবতে থাকে পুরোনো স্মৃতি।কিছুক্ষণ এভাবে থেকে কিছু একটা ভেবে বাইরে আসে।সৃষ্টি বেগম আর রিমলি টেবিলে শুয়ে আছে প্রায় ঘুমে।সামনে খাবার।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ দুপুরে খায়নি।শ্রেয়া এসে আগে রিমলিকে ডাক দেয়।শ্রেয়াকে দেখে উঠে বসে বলে,”আম্মু,আপু এসেছে।”

সৃষ্টি বেগম শ্রেয়াকে নিয়ে বসে পড়েন।খাবার বাড়তে থাকে।তিনজনে মিলে দুপুরের খাবার এই বিকালে খাচ্ছে।সৃষ্টি বেগম কোনো প্রশ্ন করছে না দেখে অবাক হলেও কিছু বলল না শ্রেয়া।রিমলিকে বলে,”পাশের মাঠের খোঁজ নিয়েছিলি?”

“হ্যাঁ,ওই টিনের ঘরের সাথে আগে আরো কিছু ঘর ছিলো।জমির মালিক ইতালি থাকে এখন।এই মাঠে ওনারা মুদি দোকান দিয়েছিলেন আর সাথে করে টিনের ঘরে থাকতেন।পাশের ঘরগুলো ভেঙেছিলেন বাড়ি করবে কিন্তু তার আগে তার ছেলে এসে নিয়ে যায়।এইজন্য শুধু মুদি দোকান আছে।ওই পুলিশ খোঁজ নিয়েছে আমরা চাইলে কিছু করতে পারব ওখানে।ওটা ওদের পরিচিত লোক।”

“কোন পুলিশ?”

“আরে এই যে বাড়িওয়ালার ছেলে।”

হালকা হাসলো শ্রেয়া।কেনো যে ওই পুলিশকে পছন্দ করে এটাই বোঝে না।নিজে থেকে মিশুক হলেও ক্ষতি তো করেনা।তাহলে সমস্যা কোথায়?উল্টো ওদের সাহায্য করছে।সৃষ্টি বেগম বলেন,”জুঁই আপা বলছিলো ওই জমি ভাড়া নিয়ে থাকতে পারবি।আমি ভাবছি তুই সময় করতে পারবি কি না?”

“আমি তিনদিনের ছুটি পেয়েছি মা।সবকিছু কমপ্লিট করতে না পারলেও কিছু কাজ এগিয়ে রাখতে পারব।আমি কাল জমির মালিকের সাথে কথা বলে নিবো।ভাড়া জমিতে নাহয় পেস্ট্রি হাউজ খুললাম তারপর আস্তে আস্তে দেখা যাবে।এমনিতেও মালিক তো আর এসে ঝামেলা করবে না।”

সবকিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে শ্রেয়া পরেরদিন কল দিলো জমির মালিককে।কথা বলে নিলো।দোকানের কাগজ পত্রের দায়িত্বে আছেন মিসেস জুঁই।একই এলাকায় বাসা থাকায় তাদের এক অপরের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিলো।মিসেস জুঁই কাগজ পত্রের বিষয়ে দেখছিলেন আর শ্রেয়া রিমলি মিলে দোকান পরিষ্কার করতে ব্যাস্ত।টানা দুইদিন দোকান পরিষ্কার করতে হয়েছে।চারপাশে কিছু স্টিকার দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে। আরও কিছু কাজ করে নিজেরা একটি ফেসবুক পেজ খুলেছে।প্রথমদিন কিছু কেক বানিয়ে পেজে ছবি ছেড়েছে।এদিক ওদিক থেকে মোটামুটি ভালই লাইক ফলো আসতে থাকে।প্রথম কেক কিনে মিসেস জুঁই রিভিউ দিলেন।সাথে অর্পা নিজেও ভালো রিভিউ দিয়েছে।ধীরে ধীরে আশপাশ এর লোকজন আসতে শুরু করে।নিরিবিলি পরিবেশে থাকায় তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি শ্রেয়ার। সাথে করে শিহাবের মতো পুলিশ ও মিসেস জুঁইয়ের মতো পাওয়ার আলা মহিলা।সবকিছু মিলিয়ে শ্রেয়া তার দোকানটা গুছিয়েছে।রিমলি ও সৃষ্টি বেগমের দায়িত্বে দোকান রেখে শ্রেয়া অফিস করতে যায়।বাসায় এসে মা ও বোনের সাথে মিলে আবারও দোকানের দেখাশোনা করে।

এভাবে চলে গেলো এক বছর।আজ ফারাজ আসবে বাংলাদেশে।মিস সূচির বিয়ের অনুষ্ঠান হিসেবে চৌধুরী ফ্যাশন হাউজের উপর চাপ পড়েছে।শ্রেয়ার ধারণা ঠিক এই কারণেই ফারাজ আসবে।নিজেকে এখন শক্ত রাখতে পারে শ্রেয়া।ফারাজকে সে ভুলতে পারেনি তবে আগের মতো নরম মনের নয়। মনকে স্থির রেখেছে মিস সূচির বিয়ে হয়ে গেলে সেও রিজাইন নিবে।মিমি এই একটা বছর শ্রেয়ার কাছাকাছি খুনশুটিতে কাটিয়ে দিয়েছে।বলাবাহুল্য শ্রেয়া ছাড়া মিমি এখন কিছুই বোঝেনা।মাঝখানে অর্পার উপর দিয়ে আরেক দুরবস্থা গেছে।মা হওয়ার অনুভূতি পেয়েও হারিয়ে ফেলে অর্পা।জিনিয়া অনেক কটুবাক্য শুনিয়েছিল তাকে।যেটা শুনে আরো বেশি ভেঙ্গে পরে।এই দুঃখগুলো মোচন করতে অর্পাকে সহায়তা করছে মিরাজ।বাইরে ঘুরতে নিয়ে গেছিলো দুই মাসের জন্য।মিরাজের একটাই কথা,”বাচ্চা দেওয়া না দেওয়ার মালিক আল্লাহ।অর্পা বা আমার মধ্যে খুত থাকলে আল্লাহ দিয়েছেন।আমি এতেই সন্তুষ্টি আদায় করে নিবো।তবে বউ আমি ছাড়বো না।”

এখন অফিসের সবাই মিলে প্ল্যান করছে মিস সূচির ব্রাইডাল ড্রেসাপ নিয়ে।সবার কথার মাঝে ইভা জোরে বলে ওঠে,”স্যার এসেছে।”

সবাই ঘুরে তাকালো।মিমি দৌড়ে গেলো ফারাজের কোলে।বাবা মেয়ে একটা বছর পর আবারও এক হয়েছে।ফারাজকে চুমু দিয়ে বলে,”আই মিস ইউ পাপা।”

“আই মিস ইউ ঠু।”

শ্রেয়া একবার ফারাজকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।তবে আজ ফারাজ তাকালো শ্রেয়ার দিকে।অভিমানী নারীটি আজ তাকে দেখছে না।এতকিছুর পরও সে তাকে ভালোবাসে।ভালোবাসার কথাটি এই কয়েকমাস আগেই জানতে পারে ফারাজ।ভেবে দেখলো একটি সুন্দর পরিবার করতে শ্রেয়াকে বিয়ে করা যায়।অহনার কথা ভেবে জীবন পার করে মিমির জীবনকেও পিছনে ঠেলে দিচ্ছে।মা ছাড়া মেয়েটা একটা মা পাবে শ্রেয়ার মতো নারী একটি দায়িত্বশীল স্বামী ও সংসার পাবে ।তাকে চেষ্টা করতে হবে নতুন জীবনে পা দিতে।সে তো অনৈতিক কিছু করতে যাচ্ছে না।এনির দিকে তাকাতেই এনি ইশারা করে দেখিয়ে দিল একটু অভিমান।

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here