#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩৭
অয়ন্তি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। চোখ ঘুরিয়ে নিজের আশেপাশের জায়গাটা দেখে নিল। নিজের অবস্থান যখন টের পেল তখন এক প্রকার লাফিয়ে উঠে বসলো। পুরো গাড়িতে সে একা। তার ঘুমাতে যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য গাড়ির সিটটা পর্যন্ত হেলিয়ে দেওয়া। নিজের গায়ের দিকে তাকালে দেখে ছেলেদের শীতের জ্যাকেট তার গায়ে। অয়ন্তি এসব দেখে মনে মনে ভাবে কিডন্যাপেররা কি এত্ত ভালো হয়? কিন্তু তারা কোথায়? তাকে এখানে একা রেখে কোথায় গেল? আর সে তো ওই পুরোনো বাড়িতে ছিল তাহলে এখানে আসলো কি করে? কিডন্যাপেররা কি তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। অয়ন্তি আতকে উঠে। এই সুযোগ তাকে পালাতে হবে এই কিডন্যাপারদের হাত থেকে। অয়ন্তি গাড়ির বাইরে তাকায়, দেখতে পায় একটা রেস্টুরেন্ট। নিশ্চয়ই কিডন্যাপাররা খেতে এসেছে এখানে। অয়ন্তি ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে গাড়ির দরজা ধাক্কা দিল কিন্তু খুললো না। অয়ন্তি যে ভয়টা পেয়েছিল সেটাই হলো গাড়ি লক করে দিয়ে গেছে। অয়ন্তি পুনরায় জোর কাটিয়ে ধাক্কা দিলো সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। অয়ন্তির অধর কোণে ফুটে উঠে বিশ্ব জয় করার হাসি। কিন্তু ভয় লাগছে খুব। পরক্ষণে অয়ন্তি নিজের মনকে শক্ত করল এই ভয়কেই জয় করতে হবে তাকে আজ। নিশ্চয়ই জাহিন তাকে না পেয়ে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক। জাহিনের কাছ তাকে পৌঁছাতে হবে যে করেই হোক। অয়ন্তি নিজেকে তটস্থ করে গাড়ি থেকে খালি পায়ে ধীরে ধীরে নামে সে। গাড়ি থেকে নামতেই দমকা এক শীতল হাওয়া এসে তার গায়ে বারি খায়। অয়ন্তির সারা শরীর মুহূর্তের মাঝে শীতল হয়ে যায়। খালি পায়ে আর উষ্ণ কাপড় ছাড়া বাইরে থাকলে সে ঠান্ডায় জমে যাবে সেটা সে নিশ্চিত। অয়ন্তি কোনো উপায় না পেয়ে পুনরায় জ্যাকেটটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয়। জ্যাকেট থেকে সুন্দর একটা মিষ্টি ঘ্রাণ এসে বারি গায় অয়ন্তির নাকে। এত সুন্দর ঘ্রাণ মিশে থাকে কিডন্যাপারদের পোশাকে বুঝি। অয়ন্তি তো ভেবেছিল সিগারেট আর ম’দের বিচ্ছিরি গন্ধ থাকবে। অয়ন্তি এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে দু চোখ যেদিকেই যায় সেদিকেই খালি পায়েই দৌঁড়াতে শুরু করল। খালি পায়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে অনেকটা রাস্তা অতিক্রম করে ফেলেছে সে। কিন্তু আর এগুতে পারছে না। পায়ের পাতা বরফের ন্যায় জমে গেছে, ভেঙ্গে আসছে শরীর। ইচ্ছে করছে এই রাস্তার মাঝেই শুয়ে পড়তে। অয়ন্তি রুদ্ধশ্বাস ফেলে চারপাশে নজর বুলাল। সম্পূর্ণ খালি রাস্তা মাঝে মাঝে হাতেগোনা কয়েকটা হলদর রঙের ট্রাক যাচ্ছে। শীতের কারণে দোকানপাট সব বন্ধ করে দোকানদাররা চলে গেছে। অয়ন্তির নজর পড়ে অদূরে একটা দোকান খুলা আছে, তার লাইট এসে পড়ছে রাস্তায়। তাকে সেখানেই সাহায্য চাইতে হবে। অয়ন্তি খালি পায়ে আবারো দৌঁড়াতে শুরু করল কিন্তু মন হচ্ছে যেন সে খুব ধীর গতিতে চলছে। অয়ন্তি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দোকানটার সামনে দাঁড়াল। সম্পূর্ণ দোকান খালি, কয়েকটা চেয়ার, টেবিল রাখা আছে, কেউ নেই কিন্তু যেহেতু দোকান খোলা তার মানে ভেতরে কেউ না কেউ থাকতে পারে। অয়ন্তি ঢোক গিলে ভাঙ্গা গলায় ডাক দিল।
“কেউ আছেন?”
কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর এক মধ্যবয়স্ক এক লোক বেরিয়ে আসলো। অয়ন্তির লোকটিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। লোকটি অয়ন্তির দিকে কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বলে, “কে তুমি মা?”
অয়ন্তি হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “আমাকে কয়েকজন গুন্ডা তাঁড়া করেছে। দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করবেন।”
লোকটি কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ কেন নয়? তুমি ভেতরে এসো মা।”
অয়ন্তি দোকানের ভেতরে ঢুকলো। লোকটি একটি চেয়ারে টেনে বলে, “তুমি এখানে বসো।”
অয়ন্তি চেয়ারে বসল। শরীরের একটুখানিও শক্তি পাচ্ছে না খুব খিদে পেয়েছে তার। অয়ন্তি ধীর গলায় বলল, “এক গ্লাস পানি দিবেন।”
লোকটি টেবিলের উপরে থাকা জগ থেকে এক গ্লাস পানি দিল। অয়ন্তি এক টানে পানি ভর্তি গ্লাসটা শেষ করে বলে, “ফোন আছে আপনার?”
লোকটি ভরাক্রান্ত গলায় বলল, “না মা আমার কাছে ফোন নেই তবে আমার ছেলের আছে। তুমি একটু বসো ও একটু বাইরে গেছে ও আসলে ওর ফোন দিয়ে তোমার পরিবারকে কল করতে পারবে।”
“আচ্ছা।”
লোকটি অয়ন্তিকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বলে, “একি তোমার পা তো খালি দাঁড়াও তোমাকে এক জোড়া জুতো দিচ্ছি।”
লোকটি এক জোড়া জুতা এনে দিল। অয়ন্তিও চুপচাপ পায়ে পড়ে নেয়। লোকটি বিনয়ের স্বরে বলল, “তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি ক্ষুধার্ত। কিছু খাবে দিবো।”
অয়ন্তি পিটপিট চোখে লোকটির পানে তাকায়। অয়ন্তির চাওনি দেখে লোকটি আমতা আমতা করে বলে, “না মানে আমাদের দোকানে তো সবাই খেতে আসে। তাই কম বেশি খাবার বাকি থাকে। তাই বলচ্ছিলাম।”
অয়ন্তি জোরে শ্বাস ফেলে বলে, “আচ্ছা।”
লোকটির চোখ মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে এলো, “ঠিক আছে তুমি বসো আমি আনছি।”
লোকটি চলে গেল। অয়ন্তি একা বসে রইল। চোখ দুটো খুব জ্বালা করছে তার। একটু পানির ঝাপ্টা দেওয়া দরকার। অয়ন্তি দোকানটার আশেপাশে নজর বুলাল। কিছুটা দূরে একটা বেসিন দেখতে পায়। অয়ন্তি উঠে বেসিনের দিকে অগ্রসর হয়।
দোকানের লোকটি রান্না ঘরে এসে নিজের পাঞ্জাবির পকেট থেকে ছোট্ট একটা বাটন ফোন বের করে কাউকে কল করল। ফোনের ওপাশের লোকটি কল ধরতেই খুশিখুশি গলায় বলে, “একটা পাখি পেয়েছি। পাখি নিজে থেকে এসেছে আমার দোকানে।”
ওপর পাশের লোকটি কিছু একটা বলাতে লোকটি বলে উঠল, “আরে গুন্ডারা তাড়া করেছে মেয়েটাকে তাই আমার এখানে আশ্রয় নিতে এসেছে। পাখিটাকে পানি খাইয়েছি এবার একটু দানা খাওয়াবো আর দানার সাথে একটু ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিব। তাহলে পাখিটা ঘুমিয়ে যাবে। আচ্ছা এখন রাখি পরে কথা হবে পাখিটা খাবারের জন্য অপেক্ষায় আছে।”
লোকটি এক প্লেট খাবার নিয়ে রান্না ঘর থেকে এসে দেখে মেয়েটি নেই। মেয়েটি কোথায় গেল? পালিয়ে গেল! তার কথা কি কোনো ভাবে মেয়েটি শুনে ফেলেছে। লোকটি খাবারের প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে বাইরে বের হয়। কোন দিকে গেছে মেয়েটি? লোকটি নিজেকে নিজেই চড়াইতে ইচ্ছে করছে। ফোনটা এখন কেন করতে গিয়েছে একটু পরেই করলে কি হতো? তাহলে তো পাখিটাকে এভাবে হারাতে হয় না। কিন্তু মেয়েটা যদি কাউকে কিছু বলে তাহলে কি হবে?
________
অয়ন্তি হাঁপাতে হাঁপাতে হাঁটু ভেঙ্গে রাস্তার কিনারে বসে পড়ে ডুকরে কেঁদে উঠে। কানের মাঝে এখনও লোকটির বলা কথাগুলা বেজে যাচ্ছে। দুনিয়াতে মেয়েদের কোথাও নিরাপত্তা নেই। চারিদিকে ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে একটা ভ’য়ং’ক’র সত্তা লুকিয়ে আছে। মুখে মেয়েটিকে মা ডেকেও সেই মেয়েটির সর্বানাশ করে দেয় এই ভ’য়ং’ক’র প্রকৃতির লোকগুলা। অয়ন্তি কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে। কোথায় আছে সে এটাও বুঝতে পারছে না? এখন যে কারো কাছে সাহায্য চাইবে এই সাহায্যটা চাইতেও ভয় লাগছে তার। যদি আবারো বিপদে পড়তে হয় তখন। কিছুক্ষণ আগে এক বিপদের হাত থেকে কোনো মতে বেঁচে ফিরেছে সে আর কোনো বিপদে পড়তে চায় না সে। অয়ন্তি ভাঙ্গা গলায় বলতে শুরু করল।
“কোথায় আছে নেতামশাই আপনি। এতটা সময় লাগাছেন কেন আমাকে খুঁজে পেতে। একটু জলদি আসুন না। আপনার অয়ন্তি যে আর পারছে না এই ধকল সামলাতে।”
______
যবুকটা হাতে করে খাবারের প্যাকেট নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে এসে গাড়ির দরজা খুলতেই হতবাক হয়ে যায়। হাত থেকে খাবারের প্যাকেটটা শব্দ করে নিচে পড়ে যায়। গাড়িতে অয়ন্তি নেই? অয়ন্তি কোথায় গেছে? যবুকটি পাগলের মতো সব জায়গা খুজতে শুরু করল। আশেপাশে যত দোকান ছিল সব দোকানে ঢুকে ফোনে থাকা অয়ন্তির ছবি দেখিয়ে বলে।
“মেয়েটিকে মেয়েটিকে দেখেছেন।”
যুবকটি যত গুলা মানুষকে পেয়েছে সবাইকে অয়ন্তির ছবি দেখিয়ে একই প্রশ্ন জিঙ্গেসা করলো। কিন্তু কেউ দেখে নি অয়ন্তিকে। যবুকটি আশাহত হয়ে ফিরে এলো নিজের গাড়ির কাছে, রেগে গিয়ে নিজের গাড়িতে আঘাত করে চিৎকার করে উঠে পাগলের মতো বলতে থাকে।
“একটু পেশেন্স ধরে রাখতে পারলে না অয়ন্তি তুমি। জেগে যখন গিয়েছিলে তখন পালিয়ে যাওয়ার কি দরকার ছিল। আমি তো তোমাকে তোমার নিজের ঠিকানায় পৌঁছে দিতাম। কিন্তু তুমি চলে গেলে। এখন এখন যদি তুমি কোনো বিপদে পড়ো তো।”
যবুকটি কথা বলে পুনরায় উন্মাদের মতো চুল টেনে বলল, “না না তোমাকে আমি কোনো বিপদে পড়তে দিব। তার আগেই তোমাকে খুজে বের করব।”
যবুকটি পুনরায় রেস্টুরেন্টে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখে অয়ন্তি কোন রাস্তা দিয়ে গেছে। যবুকটি গাড়িতে বসে বিপদজনক ভাবে গাড়ি ইউ টার্ন করে অয়ন্তি যে রাস্তা দিয়ে গেছে সেই রাস্তা দিয়ে স্প্রিডে গাড়ি চালাতে শুরু করল।
_________
জাহিন স্থির হয়ে গাড়িতে বসে রয়েছে। বা হাতের কনুই গাড়ির জানলায় ঠেকিয়ে রেখে কপালে হাতের পাঁচ আঙ্গুল রেখে শান্ত চোখে বাইরে তাকিয়ে আছে। চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। পাশেই ড্রাইভিং সিটে নুহাশ বসে রয়েছে। আড় চোখে জাহিনের দিকে এক বার তাকিয়ে সামনের দিকে তাকায়। জাহিনের মনে এই মুহূর্তে এখন কি চলছে কিচ্ছু বুঝা যাচ্ছে না। অয়ন্তিকে হাতের কাছে পেয়েও হারিয়ে ফেলল। এখন কোথায় খুঁজে বেড়াবে অয়ন্তিকে এই রাতের অন্ধকারে। বুকের ভেতরটা পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। বার বার দু হাত শক্ত করে মুষ্টি বদ্ধ করে নিচ্ছে। জাহিন মাথাটা সিটের উপর হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। পরক্ষণে কিছু একটা মনে করে জাহিন সটান মাথাটা সোজা করে বসে অধৈর্য গলায় বলল।
“গাড়ি থামা নুহাশ।”
নুহাশ বিস্মিত হয়ে বলে, “মানে।”
জাহিন নুহাশের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁতে চেপে বলে, “এক কথা কত বার তোকে বলতে হবে।”
নুহাশ শুকনো ঢোক গিলে গাড়ি থামল। জাহিন দ্রুত হাতে গাড়ির দরজা খুলে পেছনে ফেলে রেখে আসা রাস্তায় দৌঁড়াতে শুরু করল। জাহিনের পেছন পেছন নুহাশ আর রিহানও যায়। সে দেখেছে, সে স্পষ্ট দেখেছে রাস্তা পাশে কাউকে বসে থাকতে। জাহিন কিছু দূর এসে থেমে যায়। তার কিছু দূরে বসে রয়েছে অয়ন্তি বিধ্বস্ত অবস্থায়। শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠল জাহিনের এই দৃশ্য দেখে। সত্যি কি এটা অয়ন্তি নাকি তার চোখের ভুল। জাহিন ভয় পাচ্ছে ভীষণ রকমের ভয় পাছে এটা যদি তার মনের ভ্রম হয় তাহলে তার চোখের সামনে থেকে অয়ন্তি মিলিয়ে যাবে। মিলিয়ে গেলে অয়ন্তিকে এই মুহূর্তে আর চোখের সামনে দেখতে পাবে না। জাহিন ঢোক গিলে ধীর গলায় বলল।
“অয়ন্তি!”
অয়ন্তি ফুঁপানো থামিয়ে মাথা তুলে তাকায়। তার থেকে কিছুটা দূরে জাহিন দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার স্ট্রিট লাইটের হলদে আলোতে ভেসে উঠল বিধ্বস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জাহিনের চেহারা। অয়ন্তির নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কি সত্যি জাহিন নাকি তার কল্পনা। অয়ন্তি সাহসা বলে উঠে।
“নেতা মশাই।”
জাহিনের পেছনে এসে রিহান, নুহাশ আরো অনেকেই থামে। জাহিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। না তার মনের ভুল নয় এটা। এটা সত্যি, তার অয়ন্তি তার সামনে রয়েছে এই মুহূর্তে। জাহিন প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়ে পাগলের মতো ছুটে অয়ন্তির কাছে আসে। হাঁটু ভাঁজ করে অয়ন্তির সামনে বসল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নিজের পেশিবহুল শক্ত দুটো হাত দিয়ে অয়ন্তিকে, অজান্তে গড়িয়ে পড়ল দু চোখ দিয়ে অশ্রু কণা। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পাগলের মতো বউয়ের দু গালে, কপালে চু’মু খেতে শুরু করল অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া বন্ধ করে। অয়ন্তি হাঁপাচ্ছে খুব জোরে হাঁপাচ্ছে। রিহান, নুহাশ আর সকলে জাহিন আর অয়ন্তির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। জাহিন থামে নিজের দু হাত বউয়ের দু গালে রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল। জাহিনের চোখের নোনা জল অয়ন্তির গালে গিয়ে পড়ে। অয়ন্তি চোখ মেলে তাকায়। জাহিন কান্না করছে তার জন্য কান্না করছে। জাহিন ব্যাকুল হয়ে বলতে শুরু করল।
“খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। ভেবেছিলাম হারিয়ে ফেলেছি আপনাকে সারা জীবনের জন্য।”
অয়ন্তি নিশ্চুপ হয়ে দেখে যাচ্ছে জাহিন। জাহিনের এই চোখের জল তাকে কষ্ট দিচ্ছে না বরং একটা অদ্ভুত প্রশান্তি দিচ্ছে মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা কুঠুরিতে। অয়ন্তি জাহিনের চোখের কোণায় জমে থাকা নোনা জল ছুঁয়ে দিয়ে আবেগী গলায় বলে।
“পুরুষদের এভাবে কাঁদতে নেই নেতা মশাই।”
জাহিন এবার অয়ন্তি পিটের উপরে হাত রেখে নিজের কোলে এনে বসায়। অয়ন্তির ঠান্ডা শরীরটা জাহিনের শরীরের উত্তাপ পেয়ে নেতিয়ে পড়ে। অয়ন্তির এলোমেলো হয়ে থাকা চুল সরিয়ে দিয়ে জাহিন ভীত গলায় বলে, “মাঝে মাঝে পুরুষদের কাঁদতে হয়।”
অয়ন্তি হাসে বলল, “তাই বুঝি।”
জাহিন বাচ্চাদের মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে। অয়ন্তি নিস্তেজ হয়ে যাওয়া গলায় বলে, “কেন কাঁদতে হয় পুরুষদের?”
জাহিন থেমে থেমে বলে, “চোখের ময়লা যাতে পরিস্কার হয় তার জন্য।”
অয়ন্তি মুচকি হেসে দু পাশে মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমার জন্য কাঁদছিলেন না।”
“না।”
“সত্যি।”
জাহিন মাথা ঝাঁকায়। অয়ন্তির শরীর ভেঙ্গে আসছে। হাত পা আসাড় হয়ে আসছে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছে না। চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। ক্ষীণ গলায় কিছু একটা বলে অয়ন্তি সাথে সাথে জাহিনের বুকের মাঝে ঢলে পড়ে। জাহিনের রুহ কেঁপে উঠে। ভয়ার্ত গলায় অয়ন্তির গালে হাতে রেখে বলে।
“অয়ন্তি এই অয়ন্তি কি হলো?”
নুহাশ চেঁচিয়ে বলে, “ভাই ভাবিকে বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে জলদি।”
জাহিন অয়ন্তিকে পাঁজাকোলা তুলে নিয়ে বলতে থাকে, “কিচ্ছু হবে না আপনার অয়ন্তি কিচ্ছু হবে।”
জাহিন অয়ন্তি গাড়িতে নিয়ে উঠে বসে অয়ন্তির শীতল আর নিস্তেজ হয়ে যাওয়া শরীরটা নিজের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে বসে রইল। গাড়ি চলতে শুরু করল আবার। উদ্দেশ্য শেখ বাড়ির পথে।
_______
এক জোড়া চোখ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জাহিনের চলন্ত গাড়ির দিকে। জাহিনের গাড়িটা যখন কুয়াশার মাঝে মিলিয়ে গেল যুবকটি মাথা নিচু করে দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ছাড়ল। তার অয়ন্তি ঠিক মানুষের হাত পড়ে গেছে। তার আর চিন্তা রইল না। সে পাশে নেই তো কি হয়েছে তার পরিহিত জ্যাকেটটা তো তার ভালোবাসার মানুষটার গায়ে লেপ্টে রয়েছে এটাই অনেক। যবুকটি নিজের ডান হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রেখে শক্ত করে চেপে ধরল। এখনও মনে হচ্ছে যেন অয়ন্তির মাথাটা তার বুকের সাথে গেঁথে রয়েছে। যখন এখানটায় অয়ন্তির মাথাটা ছিল তখন কত্তটা প্রশান্তি লাগছিল মনের ভেতরে সেটা বলে প্রকাশ করতে পারবে না। যবুকটি সিটের মাঝে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে মৃদু গলায় বলে।
“আমায় কি তুমি ভুলে গেছো অয়ন্তি? একবারের জন্যও কি তোমার মনে পড়ে না এই অধম মানুষটির কথা।”
কথাটা বলে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বলে, “হয়ত পড়ে আবার নাও পড়তে পারে। খুব জলদি আমাদের দেখা হবে অয়ন্তি খুব জলদি। তখন তুমি কেমন প্রতিক্রিয়া করো আমায় দেখে সেটা দেখার জন্য আমি প্রহর গুনা শুরু করলাম এই মুহূর্ত থেকে।”
#চলবে