হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৩৯

0
468

#হৃদয়ে_লিখেছি_তোমারি_নাম
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩৯

[প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উম্মুক্ত]

বন্ধ ঘর। ঘরের আসবাবপত্র বলতে তিনটা বড় আলমারি তা ফাইল দিয়ে ভর্তি আর বিভিন্ন ধরণের রাজনৈতিক ব্যানার, পোস্টার রয়েছে আর শো খানেক প্লাসিকের চেয়ার রাখা। তার মাঝে কাঠের শক্ত চেয়ারের সাথে হাত পা বাঁধা অবস্থা বসে আছে মানিক। মুখে মাস্কিং টেপ মারা। মানিকের থেকে কিছুটা দূরে রাসেল আর মাসুম দাঁড়িয়ে আছে। রাসেল চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছে মানিকের দিকে। মাসুম রাসেলের চিন্তিত মুখ দেখে বলে।

“কিরে রাসেল ভাইপার কি ভাবচ্ছিস?”

“ভাবছি ভাই এর সাথে কি করবে?”

“কি আর করবে কিচ্ছুই করবে না।”

“না রে মাসুম ভাই এর উপরে ভীষণ ক্ষেপে আছে দেখলি না গতকাল রাতে কি করল ওর সাথে? এসব মনে পড়লেই আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে।”

মাসুম রাসেলের হাত দেখতে দেখতে বলে, “দেখি দেখি তোর গায়ে কয়টা কাটা দিয়েছে?”

রাসেল নিজের হাতটা সরিয়ে বলে, “উফফ মাসুম ওইটা তো কথার কথা।”

“কথার কথা বলিস কেন শালা?”

এর মাঝে জাহিন এসে হাজির হয়। তার হাতে একটা সাদা রঙের চতুর্ভুজ আকৃতির একটা বক্স। মাসুম জাহিনের কাছে এসে প্রশ্ন করে, “ভাই এর ভেতরে কি আছে?”

জাহিন ডান হাত বক্সটা বা হাতে নিয়ে বলে, “কিছু না তোরা বের হো ঘর থেকে।”

রাসেল আর মাসুম এক পলক জাহিনের দিকে তো আরেক পলক মানিকের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ‌ বের হয়ে যায়। সকলে ঘর থেকে বের হতেই জাহিন ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। কাইফ গাড়ি পার্ক করে এসে ঘরের ভেতরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে নিলে সবাইকে ঘরের বাইরে দেখে বলে।

“কি হলো?”

মাসুম হাই তুলতে তুলতে বলে, “কি আর হবে ভাই‌ আমাদের আউট করে‌ দিয়েছে।”

কাইফ চোখ ছোট ছোট করে বলে, “স্বীকার করেছে কে কাজটা করতে বলেছে ওকে?”

“স্বীকারোক্তি শোনার আগেই তো বের করে দিয়েছে ঘর থেকে।”

রাসেল বলল, “আচ্ছা কাইফ, ভাইয়ের হাতে যে একটা বক্স এটা কিসের বক্স?”

“জানি না।”

“ওও আচ্ছা।”

________

জাহিন দুইটা প্লাসিকের চেয়ারে এনে মানিকের সামনে রাখে। একটা চেয়ারের উপরে হাতে রাখা বক্সটা রেখে অন্য চেয়ারটাতে নিজে বসে। মানিক ভয়ে ভয়ে জাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে। কি করবে তার সাথে এখন জাহিন আর এই বক্সটাতে বা কি আছে? জাহিন শব্দ করে শ্বাস ফেলে বক্সটার উপরে হাত রেখে বলে।

“এই বক্সটাতে কি থাকতে পারে অনুমান কর তো?”

কথাটা বলে জাহিন ভ্রুদ্বয়ের কুঁচকে মানিকের দিকে তাকিয়ে বলে, “ও হো! তুই কি করে বলবি তুই তো আর জানিস না এর ভেতরে কি আছে? আর কথাও তো বলতে পারবি কারণ মুখে টেপ লাগানো। ঠিক আছে আমিই তোকে দেখিয়ে দিচ্ছে বক্সটার ভেতরে কি আছে?”

জাহিন বক্সটা খুলতেই মানিকের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। বক্সটার ভেতরে নানা রকমের ধারালো অ স্ত্র আর তার পাশে চিকিৎসা করার সরঞ্জাম। মানিকের চোখে ফুটে উঠে আতঙ্কের চাপ। ভীতু চোখে মানিক জাহিনের দিকে তাকাল। জাহিন এই অ স্ত্র গুলা দিয়ে কি করবে তার সাথে? জাহিনের মুখে বাঁকা হাসি। মানিক এত বছর জাহিনের সম্পর্কে যা যা শুনেছে তা যেন এই মুর্হূতের মাঝে মিথ্যা মনে হচ্ছে জাহিনের চেহারা দেখে। এ যেন অন্য এক জাহিন। মানিক ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল। জাহিন বক্সটার থেকে দুইটা গ্লাভস বের করে হাতে পড়তে পড়তে বলে।

“নিশ্চয়ই ভাবছিস এই‌ ধারালো অ স্ত্র গুলা দিয়ে কি করব? সিম্পল বিষয় তোকে কুচি কুচি করব যদি আমার প্রশ্নের উত্তর যদি না দিস।”

মানিকের চোখ লাল হয়ে গেছে। কি বলছে এসব? কিছু বলতেও পারছে না। জাহিন কি সত্যি তার হাত পা কেটে নিবে নাকি যদি সঠিক উত্তর না দেয়। জাহিন হাতে গ্লাভস পড়ে অ স্ত্র গুলা নাড়াচাড়া করতে লাগল। এক বার কেঁচি তো আরেক বার ছুরিতে হাত দিয়ে সেটা পরখ করছে। জাহিন একটা ধারালো কেঁচি হাতে তুলে নিয়ে মানিকের দিকে তাকালো। মানিক গুঙ্গাছে, বাঁচার জন্য আকুতি করছে কিন্তু জাহিন এসবের পাত্তা না দিয়ে মানিকের কনিষ্ঠ আঙুলটা আকস্মিক ধরে কেচ করে কেঁচি দিয়ে কেটে নেয়। মানিক চাইলেও চিৎকার করতে পারছে না। ব্যথায়, যন্ত্রণায় গলা কা টা মুরগির মতো ছটফট করছে। চোখ দিয়ে অনবরত গড়িয়ে পড়ছে পানি। জাহিন মাবিজের কাটা আঙ্গুলটা সেভলন দিয়ে ধুয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে বলে।

“নিশ্চয়ই ভাবছিস কেন তোর আঙুলটা কেটেছি? আচ্ছা মানুষের শরীরের মাঝে সবচেয়ে কোনো অঙ্গটা প্রিয় জানিস? আমার মতে দুটো হাত মানুষের খুব প্রিয় অঙ্গ। এই হাতটা দুটো না থাকলে মানুষ কাজ করতে পারত না, খেতে পর্যন্ত পারত না। অবশ্যই মানুষের প্রত্যেকটা অঙ্গই খুব ইম্পর্টেন্ট। কিন্তু হাত, পা ছাড়া বড্ড অচল। ঠিক তেমনি তোরা আমার প্রিয় জিনিসটার উপরে হাত দিয়েছিস তার জন্য তোর একটা আঙ্গুল কে টে নিলাম আমি। এই‌ একটা আঙ্গুল কে’টেছি এটা তো কিছুই না। মন চাইছে তোর শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ কে টে নদীতে ভাসিয়ে দিতে।”

জাহিনের কথা শুনে মানিক নিজেকে গুটিয়ে নেয়। আঙ্গুল ব্যান্ডেজ করে জাহিন মানিকের দিকে তাকায়। মানিকের সারা শরীর কাঁপছে ভয়ে এটা ভেবে জাহিন এবার কি করবে? মানিকের কাছে জাহিনকে একজন সাইকো মনে হচ্ছে। নিজেই তার আঙ্গুল কে টে দিয়েছে আবার নিজেই ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে জাহিন পুনরায় কেঁচিটা মানিকের আনামিকা আঙ্গুলে ধরে বলে।

“এবার আর হুট করে আঙ্গুল কেটে দিব না। প্রশ্ন করব সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে তোর আঙ্গুল অজ্ঞত থাকবে কিন্তু ভুল উত্তর দিলে এক সেকেন্ডও ব্যয় করব না ঠাস করে তোর আঙ্গুল কেটে দিব। কি বলেছি বুঝতে পেরেছিস?”

মানিক জোরে জোরে মাথা ঝাঁকায়। যার অর্থ সে জাহিনের সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবে। জাহিন গম্ভীর গলায় বলে, “ঠিক আছে তাহলে বল তোদের কে হায়ার করেছিল আমার বউকে কিডন্যাপ করার জন্য?”

জাহিন মানিকের মুখের টেপ সরাতেই মানিক হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “খলিল তালুকদার, ওই মেয়র খলিল তালুকদার বলেছে?”

“এসবের প্রমাণ আছে তোর কাছে।”

“হুম আছে আমার ফোনে সমস্ত কল রেকর্ড আছে।”

জাহিন সোজা হয়ে বসে হুমকি দেওয়ার স্বরে বলে, “ঠিক আছে যদি কোনো প্রমাণ না পাই তোকে পরে দেখে নিব।”

উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিলে পুনরায় জাহিন নিজের কোমর বাঁকিয়ে মানিকের মুখোমুখি হয়ে ঠান্ডা গলায় বলে, “যদি কোনো ভুল করিস তাহলে এর পরের বার হাতের আঙ্গুল নয় তোর গলা কা’টব আমি।”

জাহিন ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু এক জোড়া চোখ জানলার ফাঁক দিয়ে এখন তাকিয়ে আছে। মুখে তার রহস্যময় হাসি। জানলা থেকে সরে এসে বাঁকা হেসে বলে, “ইস বেচারা খলিল তালুকদার এবার মনে হয় তার বাঁচার চান্স খুবই কম। আমাকে ধরা এতো সহজ নয় মিস্টার জাহিন। নিজের দো’ষ কি করে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে হয় সকলের সামনে এই ভালাভুলা সেজে থাকা ছেলেটা খুব ভালো করেই জানে।”

__________

খলিল তালুকদার মিটিং এ ব্যস্ত আছেন। হঠাৎ করেই ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হয়। মিটিং এ ব্যস্ত থাকার কারণে মেসেজ আসার শব্দ আর নিজের কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি। মিটিং শেষ হওয়ার পর নিজের ফোন চেক করে দেখেন ভয়েস মেসেজ এসেছে সেটাও জাহিনের নাম্বার থেকে। খলিল তালুকদার ভ্রু কুঁচকে মেসেজটা ওপেন করে ফোনের স্পিকারটা কানের কাছে এনে যা শুনে তাতে খলিল তালুকদারের চোখের মনিদ্বয় স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বড় হয়ে যায়। উত্তেজনার বশে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছেন, শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেছে। কি শুনল এই মাত্রা এটা? খলিল তালুকদার তাড়াতাড়ি করে জাহিনের নাম্বার ডায়েল করে কিন্তু জাহিন কল ধরে না। খলিল তালুকদার পরপর সাত আট বার কল করেন কিন্তু জাহিন সেই প্রথম বারের মতো কল ইগনোর করে। খলিল তালুকদারের বুঝতে বাকি নেই জাহিন যে ইচ্ছে করে তার কল ধরছে না। জাহিন কল না ধরাতে খলিল তালুকদার অন্য আরেকটা নাম্বারে কল করেন। দু তিন বার রিং হতেই ওপর পাশের লোকটি কল ধরতেই খলিল তালুকদার ব্যস্ত গলায় বলেন।

“তুমি কোথায় আছো? জাহিন আমাকে একটা ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে যেখানে আমি ওর বউয়ের কিডন্যাপের ব্যাপারে কথা বলছি। তুমি তো বলেছিলে জাহিন আমাদের হাতের নাগালে পাবে না। তাহলে ওর কাছে এমন ভয়েস মেসেজ আসলো কি করে? তুমি কি ওই মানিককে মা’রতে পারো নি?”

ফোনের ওপর পাশের লোকটি চাপা গলায় বলে, “আমি সত্যি দুঃখিত। কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করেছি মানিককে মা’রতে কিন্তু পারি না। আর মানিকের ফোনটা আমার আগেই ওদের হাতে পড়ে গেছে। তাই আমি সব তথ্য মুছে ফেলার আগেই ওরা হাতের কাছে পেয়ে গেছে সব তথ্য। আর আপনাকে যে জানাব সেটারও সঠিক সময় পায় নি।”

খলিল তালুকদার পাগলের ন্যায় বলেন, “তাহলে এখন আমি কি করব? জাহিন যদি এই ভয়েস কলটা নিয়ে থানায় যায় তাহলে বুঝতে পেরেছো কি হবে?”

“জাহিন এখনও থানায় যায় নি এই ভয়েস কল নিয়ে। হয়তো সে আপনারই অপেক্ষা করছে আপনি একটা কাজ করুন জাহিনের সাথে দেখা করে সবটা মিটিয়ে নিন।”

“মানে।”

“মানে জাহিনের সাথে দেখা করে তার হাতে পায়ে ধরে নিজের সম্মানটা বাঁচিয়ে নিন।”

“এটা আমি করতে পারব না।”

“তাহলে জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন।”

“নাহ আমি জেলে যাব না।”

“তাহলে যেটা বলছি সেটা করুন।”

বলেই কল কেটে দেয়। খলিল তালুকদার ধপ করে চেয়ারে বসে পড়েন। এবার কি করবেন কিচ্ছু বুঝতে পারছেন না। জাহিনের হাতে পায়ে ধরেই সবটা মিটিয়ে নিতে হবে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি না হলে এই নির্বাচন থেকে তাকে সরে তো যেতেই হবে আর সাথে জেলের ভাতও খেতে হবে। যেটা ওনি কখনই মানতে পারবেন না।

_______

জাহিন ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। তার ফোনে একের পর এক কল আসছে আর সে সেটা আনন্দের সহিত দেখে যাচ্ছে। নুহাশ তা দেখে মজার ছলে বলে।

“ভাই এবার তো খলিল তালুকদারের কলটা ধরা দরকার। এতো বার কল করছেন লোকটি। কল না ধরলে মনে কষ্ট পাবেন তো।”

জাহিন ফোনটা উল্টো করে রেখে দিয়ে শব্দে করে হেসে বলে, “তোর কি মনে হয় খলিল তালুকদার শুধু আমাকে কল দিচ্ছে একদমেই না হয়তো আমার পার্টি অফিসে আসার জন্য রওনা দিয়ে ফেলেছে।”

জাহিনের কথা বলতে দেরি হল মাসুমের এসে বলতে দেরি হলো না যে খলিল তালুকদার এসেছে। জাহিন মাসুমের কথা শুনে বলে, “আসতে দে।”

খলিল তালুকদার জাহিনের কেবিনে ঢুকে হুংকার ছেড়ে বলেন, “তুমি আমাকে কি পাঠিয়েছো এসব জাহিন? তুমি কি ভেবেছো আমি বুঝতে পারব না এগুলা‌ তোমার সাজানো পরিকল্পনা আমাকে ফাঁসানোর জন্য। এমন ভয়েস অহরহ্ বানানো যায়।”

জাহিন বসা অবস্থায় দু হাত বুকের মাঝে বেঁধে গম্ভীর গলায় বলে, “এমন ভয়েস অহরহ্ বানানো যায় যেহেতু তাহলে আপনি তো ভয় পাচ্ছেন কেন? যে ভয়ের ছুটে এক্কেবারে আমার পার্টি অফিসে চলে এসেছেন।”

“ভয়! আমি কোনো ভয় টয় পাচ্ছি না। আমি এটাই ভাবছি তুমি কতটা নিচ মনের যে এমন একটা নিচু মানের পরিকল্পনা করেছো আমাকে নির্বাচন থেকে সরানোর জন্য।”

“ঠিক আছে তাহলে প্রমাণ করুন যে এই ভয়েসটা আপনার না। অন্য কেউ আপনার গলার স্বর নকল করে বানিয়েছে। যদি প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে আমি এটা থানায় দিব আর আপনাকে জেলের ভাতও খাওয়াব।”

খলিল তালুকদার ঢোক গিললেন। এটা যে সত্যি নিজের গলার স্বর এটা খলিল তালুকদার খুব ভালো করেই জানেন। তাই গলার স্বর পরির্বতন করে বলেন, “দেখো জাহিন আমি কোনো প্রকার সমস্যা চাই না আমি চাই একটা সুষ্টু স্বাভাবিক নির্বাচন হোক।”

জাহিন চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “সেটা আমিও চাই কিন্তু আপনি বার বার সেটা হতে দিচ্ছেন না। নানা রকমের অপকর্ম করে যাচ্ছেন এমন কি আমার স্ত্রীকে এই অপকর্মের থেকে বাদ দেন নি তাকেও এনে সংযুক্ত করেছেন।”

“দেখো জাহিন যা হওয়ার হয়ে গেছে। কেউ আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি করার জন্য এমনটা করছে।”

জাহিন নিঃশব্দে হেসে বলে, “আমি এতটাও বোকা নই যে এটা বুঝতে পারবে না কে এর পেছনে আছে। আমি এই ভয়েসটা থানায় দিব না যতক্ষণ না আপনি কোনো অপকর্ম করুন। তাই আপনাকে ওয়ার্নিং করছি ভালো হয়ে যান। আর একটা সুষ্টু স্বাভাবিক নির্বাচন হোক আগামীতে।”

খলিল তালুকদার কিচ্ছু না বলেই চলে যান। বেশি কথা বললে যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে ফেলে আর জাহিনের মেজাজ বিগড়ে গিয়ে যদি থানায় দিয়ে দেয় ভয়েসটা তাহলে সব শেষ। আর একবার যেহেতু জাহিন বলেছে সে থানায় ভয়েসটা দিবে না তার মানে দিবে না। আর এবার অন্য ভাবে সবটা সামলাতে হবে।

খলিল তালুকদার যেতেই নুহাশ চিন্তিত গলায় বলল, “ভাই খলিল তালুকদারকে এভাবে ছেড়ে দেওয়াটা কি ঠিক হল।”

“ওনাকে যদি পুলিশ এরেস্ট করেও তাহলে কয়েক দিন পরেই ওনি জামিনে বের হয়ে যাবেন আর এরপরে আবার আমার পরিবাের কোনো ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লাগবে। কিন্তু যতক্ষণ আমার হাতে এই অ স্ত্রটা আছে ততক্ষণ এই খলিল তালুকদার কিছু করতে গেলও দু বার ভাববে। তাই ওনাকে পুলিশে না দেওয়াটাই আমি ঠিক মনে করলাম।”

________

ধরিত্রী জুড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে। গোধুলী বেলা পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কিন্তু সন্ধ্যা হওয়ার পর থেকে আকাশ জুড়ে মেঘের দেখা মিলেছে। থেমে থেমে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। শীতকাল এমন বৃষ্টির আসার আভাস দেখে সবাই খানিকটা অবাক হয়েছে।

জাহিন সমস্ত কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেজে যায় রাত এগারোটা। বাড়িতে কল করে আগেই থেকে বলে দিয়েছে তার জন্য যেন কেউ না খেয়ে অপেক্ষা করে সে খেয়ে ফিরবে বিশেষ করে জাহিনের এই বার্তা অয়ন্তির জন্য ছিল। অয়ন্তি যেন তার জন্য অপেক্ষা না করে। সদর দরজা কাজের লোক খুলে দেয়। জাহিন রুমে এসে দেখে অয়ন্তি পড়ছে। জাহিনের আসার শব্দ শুনে অয়ন্তি এক পলক জাহিনের দিকে তাকিয়ে পুনরায় পড়ায় মনোযোগ দেয়। জাহিনও কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

বাইরে থেকে বৃষ্টি পড়ার টুপটাপ শব্দ ভেসে আসছে। সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ চমকাতে চমকাতে রাত এগারোটার দিকে বৃষ্টি নামল। অয়ন্তি সন্ধ্যা থেকে এই বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিল অবশেষে অয়ন্তির অপেক্ষার অবসান হল। অয়ন্তি পড়ার টেবিলে ছেড়ে উঠে বেলকনিতে আসল। বৃষ্টি তার ভীষণ প্রিয়। বৃষ্টি পড়ার এই টুপটাপ শব্দটা যেন নিজেকে বড্ড আকৃষ্ট করে। খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে কিন্তু এমনিতে ঠান্ডা তার উপরে যদি বৃষ্টিতে ভিজে নিশ্চিত শরীর খারাপ হবে। কিন্তু নিজের অবাধ্য মনকে অয়ন্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দিল। বৃষ্টির ঠান্ডা পানির ছুঁয়া পেতেই শরীর শিরশির করে উঠল তার। মুদৃ বাতাসের বেগে বৃষ্টির ছিটা এসে অয়ন্তির সারা গায়ে বারি খাচ্ছে। ঠান্ডা লাগছে কিন্তু তারপরও মেয়েটা ঠাই দাঁড়িয়ে রইল। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির শব্দ শুনছে আর ভেজা মাটির ঘ্রাণ প্রাণ খুলে নিচ্ছে।

জাহিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে অয়ন্তি রুমে নেই। গেলো কোথায় মেয়েটা এই রাতে? জাহিনের নজর পড়ল জানলার দিকে খোলা জানলা দিয়ে বৃষ্টি এসে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে রুম। জাহিন টাওয়ালটা রেখে থাই গ্লাস টেনে দেয়। বেলকনির দরজাটা লাগানোর জন্য বেলকনির দরজার কাছে আসতেই থমকে যায় জাহিন। চোখ জোড়া আটকে যায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীর দিকে। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল অয়ন্তির দিকে সে। এই মেয়ে কি পাগল হয়ে গেছে নাকি এই শীতের মাঝে বৃষ্টিতে ভিজছে শরীর খারাপ করবে তো। জাহিন রেগেমেগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। এক অজানা শক্তি তার কথা বলার শক্তি কেঁড়ে নিয়েছে যেন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অয়ন্তির দিকে। মনের মাঝে উথালপাতাল হতে শুরু করল। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীকে কাছে পাওয়ার বসনা জেগে উঠছে মনের আছে তরতর করে। জাহিন নজর সরিয়ে জিহ্বা দ্বারা নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে পুনরায় তাকায় অয়ন্তির দিকে। অয়ন্তির খেয়াল নেই জাহিন যে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে সে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি উপভোগ করতে ব্যস্ত। জাহিনকে টানছে এই অয়ন্তি নামের মেয়েটি তাকে টানছে প্রতিনিয়ত যেভাবে টানে ঠিক সেভাবে। জাহিন ধীর পায়ে হেঁটে অয়ন্তির পেছনে এসে ছুইছুই হয়ে দাঁড়ায়। নিজের গায়ের সাথে কিছু লাগাতে অয়ন্তি তড়াক করে চোখ মেলে তাকিয়ে পেছন ফিরে জাহিনকে দেখে সরে যেতে নিলে জাহিন দু হাত গ্রিলের উপরে রেখে অয়ন্তিকে নিজের বাহুডোরে আটকে নেয়। অয়ন্তি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। জাহিন ভরাট কন্ঠে বলে।

“বৃষ্টি বুঝি পছন্দ আপনার?”

অয়ন্তি মাথা নাড়িয়ে উপর নিচ করল। জাহিন চুপ করে রইল। কারো মুখে কোনো রাও নেই। এই ঠান্ডার মাঝেই দুজনে দাঁড়িয়ে রইল। হুট করে বৃষ্টির মাত্রা কমে এসেছে। আকস্মিক বড়সর একটা ব্রজপাত হল। অয়ন্তি ভয়ে জাহিনের দিকে ফিরে জাপ্টে জড়িয়ে ধরল জাহিনের কোমর। এভাবে জড়িয়ে ধরাতে জাহিন দু পা আনমনে পিছিয়ে যায়। জাহিন থমকে গিয়ে অয়ন্তির দিকে তাকায়। তার এক হাত অয়ন্তির পিঠের উপরে। অয়ন্তি ধীরে ধীরে মুখ তুলে জাহিনের দিকে তাকায়। দুজনের দৃষ্টি মিলিত হলো। অয়ন্তি সরতে নিলে জাহিন বাঁধা দেয়। দুজনের মাঝে এক ইঞ্চিও ফাঁক নেই। জাহিন তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে অয়ন্তির গালে লেপ্টে থাকা চুল গুলা সরিয়ে দেয়। অয়ন্তি আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। অয়ন্তি জাহিনের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস কপালে অনুভব করছে পরপর অনুভব করল জাহিনের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া। অয়ন্তি খামছে ধরল জাহিনের টি-শার্ট। অয়ন্তির বৃষ্টিতে ভিজে থাকা রসালো ঠোঁটের দিকে জাহিনের নজর পড়ল। জাহিন মোহগ্রস্ত হয়ে শব্দ করে অয়ন্তির ঠোঁটের নিচে চু’মু খেয়ে অয়ন্তির কপালে কপাল ঠেকিয়ে থেমে থেমে বলে।

“অয়ন্তি আমি… আমি না সত্যি আজ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আমি আপনাকে চাই যতটা চাইলে আপনার গভীরে যেতে পারব ঠিক ততটা চাই।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here