রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
৩১_প্রথমার্ধ
[ কপি করা নিষেদ্ধ ]
রিদের কথায় মায়া উত্তর করলো না। শুধু লজ্জা সিঁটিয়ে নত মস্তিষ্কের হয়ে দাঁড়াল। গায়ের ওড়নাটা হাতে পেঁচিয়ে লজ্জায় হাসফাস করলো। রিদ মায়ার লজ্জা দেখে যা বুঝার বুঝে নিয়ে নিজের দু’হাত দেয়ালে ঠেকিয়ে মধ্যেস্হে মায়াকে রেখে মায়ার মুখোমুখি ঝুঁকে পরে বলল….
‘ ম্যাডাম কি জেনে বুঝে আমার কাছে আসেন? নাকি পাগলামো করতে করতে চলে আসেন? বুঝিয়েন কিন্তু ম্যাডাম! আমি ছেড়ে দেওয়ার মানুষ না।
মায়া লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে নুইয়ে গেল। গলা শুকিয়ে এলো তৃষ্ণার্তে। তারপরও রিদকে বুঝতে দিতে চাইল না যে মায়া রিদের জন্যই এসেছিল এখানে। বরং রিদকে মিথ্যা বলতে চেয়ে রিনরিনিয়ে গলায় বলল মায়া…
‘ আমিতো শ্রেয়ার জন্য এসেছিলাম। ওহ নেই। আমি এখন যায়।
আগের নেয় রিদ একই সুরে বলল…
‘ যাবেন কেন ম্যাডাম? আরেকটু থাকেন। ভালোই তো লাগছে। শ্রেয়া নেই তো কি হয়েছে? আমিতো আছি। সুন্দরী বিয়াইন্নের সঙ্গ দিবো।
বলেই রিদ এমন ভাবে মায়ার গলা বেয়ে নিচে তাকাল, যেন মায়ার ওড়না বেঁধ করে রিদ সবকিছু দেখে নিচ্ছে। অথচ মায়ার গায়ে বড়ো ওড়নাটা কাঁধ জড়িয়ে দুপাশে টানা। মায়া রিদের দৃষ্টিতে অস্বস্তিতে পড়ে হাত কচলিয়ে মিনমিন গলায় বলল..
‘ আপনার দৃষ্টি বাজে।
রিদের তৎক্ষনাৎ উত্তর আসলো….
‘ আমার দৃষ্টি বাজে বলেই তো আপনাকে নষ্ট চোখে দেখি ম্যাডাম। নয়তো ভালো হলে তো দূরেই থাকতাম। কাছে আসতাম না।
মায়া মিনমিন করে বলল…
‘ আমি তো বিবাহিত।
‘ আমার বিবাহিত মেয়েই পছন্দ। সেজন্য তো আপনাকে পরকীয়ার প্রস্তাবটা দিলাম। ম্যাডাম কি রাজি?
মায়া মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি দিতে দিতে আগের নেয় মিনমিন করে বলল…
‘ না! আমার আপনার মতোন সিঙ্গেল ছেলেদের পছন্দ না।
‘ সিঙ্গেল কোথায় ম্যাডাম? আপনি আমার পরকীয়ার প্রস্তাবটা এক্সেপ্ট করলেই আমি মিঙ্গেল হয়ে যাব। তারপর দুজন মিলে সোজা রুমে। আমার বেডটাও খালি। সারারাত আপনাকে শিখাব-পড়াব কিভাবে পরকীয়া করতে হয়। এর মাঝে দুজনের শারিরীক এক্সারসাইজও হয়ে যাবে। পরকীয়া মানে বুঝেন তো ম্যাডাম? কি করতে হয় জানেন তো?
রিদের বেফাঁস ইঙ্গিত মূলক কথায় মূহুর্তে মায়ার নাক মুখ খিঁচে নিলো অতি লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে। মাথা নুইয়ে দু’হাতে মুঠোয় ওড়নার আঁচলটাও পিষল। কেমন একটা অস্থিরতায় মায়া আছড়ে পড়ছে। ভিতরটা ভয়ে ধুকপুক করছে। রিদের কথার ইঙ্গিত বুঝার মতোন বয়স মায়ার হয়েছে। সে এসব বুঝে। এতোদিন রিদের পরিচয় জানতো না বলেই মায়া রিদের মুখে মুখে উত্তর করতে পারছে। কিন্তু এখন মায়া রিদের পরিচয় সম্পর্কে অবগত হয়েই মুখ চালাতে পারছে না। বরং মায়া ইহজীবনে রিদের সাথে কখনো তর্ক করবে না বলে প্রতীক্ষাও করেছে। কারণ রিদ মায়াকে এমনই বেয়াদব বলে জানে। নিজের ফোনেও মায়ার নাম্বারটা সেইভাবেই সেইভ করা। মায়াকে কতোটা বেয়াদব বউ ভাবলে রিদ এই ভাবে মায়ার নাম্বাটা সেইভ করে তা জানা নাই মায়ার। মায়া এতোদিন না জেনে-বুঝেই রিদের সঙ্গে তর্ক করেছিল। কিন্তু এখন জামাইর পরিচয় পেয়ে মুখ চালিয়ে তর্ক করে আর বেয়াদব হবে না। বরং মায়া বাধ্য বউ হয়ে থাকবে ওর নেতা সাহেবের। মায়া আর মুখ চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলেও নিজের ভিতরকার অস্থির ছটফটে উত্তেজনা হয়ে যাচ্ছে বারবার। আর কিছুক্ষণ এইভাবে রিদের সামনে থাকতে নিশ্চিত মায়ার চতুর জামাই বুঝে যাবে মায়ার মতিগতি। মায়া রিদকে বুঝতে দিতে চাই না নিজের ভিতরকার অবস্থার কথা। বরং এই মূহুর্তে রিদ থেকে পালাতে চাইল৷
‘ আমি নিচে যাব।
রিদ মায়ার অস্থিরতা দেখেই বলল…
‘ ম্যাডাম কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন? অল্পতে ভয় পেলে চলবে বলুন? আমার এখনো কতো কিছু করা বাকি। আর আপনার কতো কিছু সহা বাকি। আমিতো আপনার জান খাওয়ার ধান্ধায় আছি, আর আপনি জান নিয়ে পালাতে চাচ্ছে।
কথা গুলো বলতে বলতে রিদ মায়ার সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াল। স্পর্শের দুজনের শরীর ছুঁয়ে যেতেই মায়া সর্বাঙ্গ নাড়িয়ে কেঁপে উঠল রিদের শরীরে স্পর্শে। মূহুর্তে মায়া রিদের ভয়ে দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে গেল কম্পিত দেহময়ে। রিদ অনুভব করতে পারলো মায়ার কম্পিত শরীরের আঁচ। নিস্তব্ধ ড্রয়িংরুমে যেন ঝঙ্কার তুললো দুজনের উষ্ণ নিশ্বাসে শব্দ। সেই উষ্ণতা আরও বাড়িয়ে দিল রিদ। হাত বাড়িয়ে দেয়ালের সুইচ চেপে আলোড়িত ড্রয়িংরুমটি মূহুর্তে ঘোর অন্ধকার করে তলিয়ে দিল। মায়া চমকে উঠল। অজানা ভয়ে ফের বুক ধড়ফড় করলো। রিদ মায়ার ভয় বাড়িয়ে দিয়ে মায়ার থুঁতি ধরে লজ্জায় নুইয়ে যাওয়া মুখটা ধরে উপরের তুলল। ভয়ার্ত মায়া আরও ভয়ার্ত হলো। শরীর শক্ত করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। রিদ আবছায়া আলোয় মায়ার সুন্দর মুখটা দেখল। মুখমুখি হওয়ার দারুণ রিদের উষ্ণ নিশ্বাসের বাতাস মায়ার মুখে অনুভব করতেই মায়ার তরতর করে কাঁপল। রিদের ঘোর লাগা চোখে মায়ার কম্পিত চোখ জোড়া দেখল। হাত বাড়িয়ে মায়ার মসৃণ গালে স্পর্শ করল। অপর হাতটা নেমে আসল মায়া কোমরে।৷ রিদ চোখ আওড়িয়ে মায়ার মায়াময় মুখ আবারও একবার দেখল। তার অবাধ্য মন আরও অবাধ্য হলো। রিদের মনে হচ্ছে তার অবাধ্য মন, অবাধ্য বউটাকে কাছে পাওয়ার খুশিতে আত্মহারা হয়ে তার বুক থেকে লাফিয়ে না বেড়িয়ে যায়। তাহলে তার সম্মান আর কিছুই থাকবে না। এই বেয়াদব বউটা চট করে বুঝে যাবে রিদের কথা তার অবাধ্য মনটাও শুনে না। আসলে তার মন কথা শুনে তাঁর বউয়ের। তখন রিদের দূর্বলতা বুঝে যাবে। যেটা রিদ চাচ্ছে না তার ব্যক্তিত্বের বাহিরে গিয়ে এই নারী তার দূর্বলতা বুঝুক। তাছাড়া রিদের মনের সাথে তাঁর চোখ দুটোও চরম বেহায়া। সারাক্ষণ অস্থির হয়ে কিভাবে বউকে খোঁজে বেড়ায়। এতো অবাধ্যের মাঝে রিদ যে কিভাবে বাধ্য থাকবে সেটাই বুঝে পায় না। মাঝে মাঝে তো রিদের নিজের জন্যই মায়া হয়। সে কিভাবে এতো অবাধ্যদের মাঝে পড়ে গেল। তাঁর মন কথা শুনে না, চোখ কথা শুনে না, হাত কথা শুনে বউকে ছুঁতে চাই, তার শরীরটাও কেমন বউ বউ। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, তার অবাধ্য বউটাই তার কথা শুনে না। রিদের ঘোর লাগা মন ঠিকরে উঠলো মায়ার তিরতির করা কম্পিত ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে। ঘোর লাগার মতোন আসক্ত হয়ে হাতের উল্টো পিঠ ছুঁয়াল মায়ার গালে। গালে পড়া মায়ার চুল গুলো হাতের উল্টো পিঠে সরিয়ে দিতে দিতে রিদ শব্দ করে চুমু খেল মায়ার গালে। জীবনের প্রথম চুমু রিদ থেকে পেতেই মায়ার কম্পিত শরীরের কম্পন আরও বাড়ল। শরীর শক্ত করে নিশ্বাস নিতে ভুলে গেল ভয়ে আর উত্তেজনায়। রিদ মায়ার অপর গালেও ঠিক আগের নেয় শব্দ করে চুমু খেল। মুখ উঠিয়ে মায়ার কম্পিত চোখের দিকে তাকিয়ে বলল…
‘ শরীর ছাড়ো।
রিদের কথা মায়ার অবধি পৌঁছাল কিনা বুঝা দায়। ভয়ে মায়া শরীর নরম করার বদলে আরও খিঁচে শক্ত করে পড়ে রইল রিদের বক্ষে। নিশ্বাস তখনো আঁটকে রেখেছে কাঁপতে কাঁপতে। রিদ মায়ার কপালে শব্দ করে ঠোঁট ছুঁয়ে নেমে আসল দু-চোখের পাতায়। তিরতির করা দু-চোখের পাতায়ও একভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে নাকে নামতেই রিদ সেখানে শক্ত করে কামড় বসিয়ে দিয়ে মোহিত গলায় বসল…
‘ নিশ্বাস ছাড়ো।
মায়া নিশ্বাস ছাড়ার বদলে বরং আরও আঁটকে রাখল। মায়ার বেগতিক কম্পন বলছে এই মূহুর্তে রিদকে কতোটা ভয় পাচ্ছে ওহ। তারপরও রিদ ছাড়ল না মায়াকে। বরং কামড়ে দেওয়া জায়গায় শব্দ করে ছোট চুমু খেয়ে নেমে আসল মায়ার লাল ওষ্ঠে। বিয়েতে দেওয়া মায়ার লাল টকটকে লিপস্টিক এখনো লেগে আছে ঠোঁটে। রিদ সেদিকে তাকিয়ে আরও আসক্ত হলো। শক্ত হাতে মায়ার গাল চেপে ঠোঁট উঁচাল। একত্রে মায়ার ঠোঁট জোড়া মুখে নেওয়ার চার কি পাঁচ সেকেন্ড মাথায় মায়া বেহুশ হয়ে ঢলে পড়তে নিলেই রিদ এলোমেলো ভাবে তৎক্ষনাৎ মায়ার দুবাহু চেপে আঁকড়ে ধরলো। মায়ার দীর্ঘ সময় ধরে নিশ্বাস আঁটকে রাখায় ফলে এখন জ্ঞান হারাল। রিদ মায়ার দুবাহু টেনে বুকে চেপে ধরতে ধরতে চট করে রিদের মেজাজ বিগড়ে গেল। অপরের হাতে নিজের ভেজা ঠোঁট জোড়া মুছতে মুছতে রাগে তিরতির করে দাঁতে দাঁত পিষল। জীবনের প্রথম চুমুটা সে করতে পারলো না বলেই তার মেজাজ গরম হচ্ছে। রিদ বলেছিল নিশ্বাস ছাড়তে। বেয়াদব মহিলা ছাড়েনি। তার কথা শুনেনি। সেজন্য জ্ঞান হারাল। বাল! নিশ্বাস আঁটকে কে চুমু খায়? বেহুশ তো হবে। তিরতির মেজাজে রিদ চট করে মায়াকে কোলে তুলে হাঁটল বাহিরের দিকে। সে আর এখানে এক মূহুর্তে জন্যও থাকবে না। অন্যের বাড়িতে সে থাকতে পারে না। তাঁর ঘুম আসে না। বউয়ের জন্য এই বাড়িতে এসেছিল, এখন বউ নিয়ে সে চলে যাবে। এই বেয়াদব নারীকে সে তার কাছে নিয়েই যে গতি করার করবে। কিন্তু তারপরও এখানে রেখে যাবে না।
রিদের বের হওয়ার পথে আয়ন রাদিফ নিচে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে ছিল। দুজনই রিদের অপেক্ষায় ছিল। রাদিফ রিদের বাসায় যাবে। আর আয়ন রিদের সঙ্গে বেড়িয়ে যাবে নিজের হসপিটালের উদ্দেশ্যে। আয়ন মূলত ফাহাদের বিয়েতে আসার আরও একটি কারণ ছিল জুই। কিন্তু এখানে আসার পর থেকে জুই কেমন আয়নকে এরিয়ে চলছে। অপরিচিত মতোন ব্যবহার করছে। যেটা মোটেও আয়নের ভালো লাগেনি। সবচেয়ে খারাপ যেটি লেগেছিল সেটি হলো, জুই আয়ন থেকে রাদিফকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছিল। রাদিফের কথায় জুই লজ্জাও পাচ্ছিল। অথচ যে লজ্জাটুকু জুই আয়নের কথায় পাওয়ার ছিল সেটা রাদিফের কথায় কেন পাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছি না আয়ন। এমনটা তো হওয়ার কথায় নয়। জুই নিজেই আয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এতোদিন। আয়নকে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রতিনিয়ত আয়নের খোঁজ নিয়েছে। আয়নের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে বলেই আয়ন জুইয়ের সাথে একটা সম্পর্কে জড়িয়েছে। আয়ন বা জুই দুজনের কেউ কাউকে বলেনি যে, তাঁরা একে অপরকে ভালোবাসে। বা বিয়ে করতে চায়। অনুভূতির আদান প্রদান হয়নি দুজনের কারওই। তারপরও দুজনই বুঝে তাঁরা একে অপরের মায়ায় জড়িয়ে পরেছে। আয়ন থেকে জুই বেশি আয়নের মায়ায় জড়িয়েছে সেটা রোজ জুইয়ের মুখেই শুনা যায়। একদিন আয়ন ব্যস্ততার জন্য ফোন করতে না পারলে জুই কাঁদে। মন খারাপ করে। রোজ নিয়ম করে জুই আয়নের ফোনের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে। মূলত জুইয়ের এতো আগ্রহ দেখে আয়ন বাধ্য হয় জুইয়ের মায়ায় জড়াতে। দুজনের রাতের ফোনালাপ ব্যাঘাত ঘটে বলে আয়ন জুইয়ের জন্য নাইট ডিউটি ছেড়ে দিয়ে দিনে শিফট হয়েছে। দুজন রাতভর ফোনালাপ করতে পারে সেজন্য সে নাইট ডিউটি আর করে না। তারপরও মাঝেমধ্যে রাতের একবার করে হলেও হসপিটালের যায়,তার কারণ নিজেদের হসপিটাল বলে সে দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে থাকে না। এই যেমন আজ আয়ন একবার যাবে নিজেদের হসপিটালের তদারকি করতে। কিন্তু ফাহাদের বাসায় আসার আগেও জুইয়ের সঙ্গে আয়নের ফোনে কথা হয়েছিল। জুই বলেছিল আয়নকে তাড়াতাড়ি আসতে, সে নাকি অপেক্ষা করছে আয়নের পথ চেয়ে। অথচ আয়নের এই বাসায় এসেছে বিগত তিন ঘন্টার উপর হলো। এই নিয়ে জুই একবারও আয়নের সঙ্গে আগবাড়িয়ে কথা বললো না। বরং আয়নকে এরিয়ে রাদিফকে গুরুত্ব দিল। রাদিফের সঙ্গেও জুই বেশ কথা বলনি। তবে যতটুকু কথা বলেছিল, জুইয়ের আচরণে মনে হয়েছিল আয়নের জন্য জুই রাদিফের সঙ্গে বেশি কথা বলেনি নয়তো আরও কথা বলতো। মূলত আয়ন বুঝতে পারছে না জুই এমন অপরিচিত মতোন আচরণ কেন করছে আয়নের সঙ্গে। তাঁকে ফোনে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে সরাসরি সাক্ষাৎতে কেন পিছু হাঁটে? আয়ন তখনকার ঘটনাকে এরিয়ে রাদিফের সঙ্গে ফাহাদদের নিচ তলায় ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছিল। টুকটাক কথাও হচ্ছিল রাদিফের সঙ্গে। এরিমধ্য আয়নের আগে রাদিফের চোখে পড়ল রিদকে বেরিয়ে যেতে বেহুশরত মায়াকে কোলে নিয়ে। চমকে উঠার মতোন সোফা ছেড়ে লাফিয়ে দাঁড়াল রাদিফ। রিদের কোলে মায়াকে দেখে মৃদু চেঁচিয়ে আঙ্গুল তাক করে সেদিকে দেখিয়ে তৎক্ষনাৎ আয়নকে বলল।
‘ রিদ ভাইয়ের কোলে ওটা ফাহাদ ভাইয়ের ছোট শালী না ব্রো?
আয়ন রিদকে চলে যেতে দেখে দুষ্ট হেঁসে সেও উঠে দাঁড়াল। রাদিফের কাঁধে চাপড় মারতে মারতে বলল…
‘ ইয়েস ব্রো।
আয়নের সম্মতিতে রাদিফের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতোন চমকে উঠলো। রিদ আর প্রেম? সর্বনাশ! এতো কিছু কখনো হলো? রাদিফের রিদ ভাই প্রেম করছে? আর সে জানে না সেটা আল্লাহ। এতো কিছু হয়ে যাচ্ছে রাদিফ এখনো টেরও পেল না? রাদিফ অবিশ্বাস্য গলায় আয়নকে শুধিয়ে বলল…
‘ রিদ ভাই প্রেম করছে?
‘ নাহ! সংসার করছে।
অবিশ্বাস্য গলায় ফের মৃদু চেঁচাল রাদিফ…
‘ কিহ? রিদ ভাই বিয়ে করেছে? কবে? কখন? তুমি কি আমাকে মিথ্যা বলছো আয়ন ভাই?
‘ তোকে মিথ্যা বলে আমার লাভ?
আয়নের কথা বিশ্বাস করতে রাদিফের কষ্ট হলো। তারপরও শিওর হওয়ার জন্য আগের নেয় অবিশ্বাস্য গলায় বলল..
‘ রিদ ভাই কি ফাহাদ ভাইয়ের ছোট শালীকে বিয়ে করেছে? আমাদের বিয়াইনকে?
‘ তোর বিয়াইন কিভাবে হয় বলদ? তোর তো ভাবি হবে। বড়ো ভাইয়ের বউকে বিয়াইন ডাকিস। ভাবি ডাক।
আয়নের কথায় অবিশ্বাসে রাদিফের মাথা ঘুরে যাবার মতোন। রিদকে আজ এতো বছর ধরে বিয়ে করাতে পারছে না। অথচ এখন শুনছে সেই রিদ ভাই নাকি বিয়ে করে, সংসারও করছে। তাদের মা যদি শুনে রিদ লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে নিশ্চয়ই এর জন্য রেগে যাবে। রাদিফের মাও তো রাগী মানুষ। তাদের বাবাও রাগি তবে সবসময় রাগটা প্রকাশ করে না। কেমন গম্ভীর মুখে শান্ত থাকেন তিনি। কিন্তু তাদের এডভোকেট মা তো রিদের বিয়ের কথাটা শুনলেই রেগে যাবে। তাছাড়া শশীর কি হবে? সে-তো রিদের বর্তমান ফিয়ন্সে। রাদিফ অস্থির চিত্তে পুনরায় বলল…
‘ শশীর কি হবে আয়ন ভাই? রিদ ভাই তো আর শশীকে বিয়ে করতে চাইবে না? আমি বিয়ে করে ফেলি শশীকে?
সিরিয়াস কথার মাঝে রাদিফের খেয়ালি কথায় বিরক্ত বোধ করলো আয়ন। রাদিফের মাথায় ঠুকা মারতে মারতে বলল…
‘ তোর না গার্লফ্রেন্ড আছে ধান্ধাবাজ?
রাদিফ মাথা ঘষে সিরিয়াস গলায় বলল….
‘ দরকার হলে দুটো বিয়ে করবো আয়ন ভাই। গার্লফ্রেন্ডকে রাখব, শশীকেও রাখব।
‘ শশী শুনলে তোকে ঝাড়ু পেঠা করবে বেয়াদব।
‘ তাহলে আমি আম্মুকে বলে দিব রিদ ভাই প্রেম করছে। তাহলেই আম্মু আমাকে বিয়ে করায় দিবে। এমনিতে রিদ ভাইয়ের জন্য আম্মু আমাকে বিয়ে করাচ্ছিল না। এখন তো রাস্তা পরিষ্কার। কিন্তু এর আগে রিদ ভাইকে ধরতে হবে। ভাইতো আমাকে রেখেই চলে যাচ্ছে। রাতে আমি ঘুমাব কোথায়?
কথা গুলো বলতে বলতে রাদিফ দৌড়ে লাগাল দরজার দিকে। পিছন থেকে আয়ন খানিকটা চেঁচিয়ে রাদিফের উদ্দেশ্য বলল…
‘ আজকের জন্য রিদকে ভুলে যাহ রাদিফ। তোর ভাই এখন বউ পেয়েছে। তোকে সঙ্গে নিবে না সে। আজ তোকে এখানেই ঘুমাতে হবে।
আয়ন হাসতে হাসতে রাদিফের দৌড়ে চলে যাওয়া দেখল। রাদিফ তাড়াহুড়ো দৌড়ে গিয়েও রিদের লাগাল পেল না। বরং দৌড়ে গিয়ে দেখল রিদের গাড়ি ততক্ষণে গেইট দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। পিছন থেকে রাদিফ যে এতো করে ডাকল তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে কিন্তু রিদ তো শুনলোই না। বরং গাড়ি স্পিডে টেনে রিদ চলে গেল। রাদিফ মন খারাপ করে পুনরায় হাঁটল ফাহাদদের বাড়ির পথে। আজকে সে আর রিদের বাসায় যেতে পারবে না কাল সকাল ছাড়া।
[ জানি পার্টটা ছোট হয়েছে। কিন্তু একই পার্ট এই নিয়ে দুবার লেখলাম। আগে একবার বড়ো করে লেখিছিলাম। সেটা আগের আইডিতে ছিল। ফোন চুরি হয়ে যাওয়াতে সেটা আপলোড করতে পারিনি। পুনরায় একই পার্ট লিখতে গিয়ে আমি সেইম ভাবে লেখতে পারিনি। কথার কিছু অমিল রইল গেল। আচ্ছা যায় হোক নেক্সট পার্ট তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আর আপনারা যারা গল্প পড়ছেন তাদের কাছে অনুরোধ রইল যাঁরা আমার গল্পের খোঁজে আছে তাদের কাছে নিচ দায়িত্বে আমার গল্পের পেইজটি শেয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে]
#চলিত….