গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি #পর্ব১০ #Raiha_Zubair_Ripti

0
270

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব১০
#Raiha_Zubair_Ripti

হাসপাতালের বেডে মুখে অক্সিজেনের মাস্ক লাগানো রজনী অবচেতন হয়ে পড়ে আছে। ডক্টর রা সাধ্যমতো চেষ্টা করছে রজনীর জ্ঞান ফেরানোর। হাতের শিরা কেটে যাওয়ায় র’ক্ত এখনও বের হচ্ছে। রজনীর এমন ক্রিটিকাল অবস্থা দেখে ডক্টর শাফিনের কপালে দু ভাজ পড়লো। এমন কেয়ারলেস ফ্যামিলি আদৌও হয়? বারবার বলে দিয়েছিল মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখতে। আর মেডিসিন টা টাইম টু টাইম খাচ্ছে কি না সেটা দেখতে। কিন্তু নাহ্ পরিবারের সামান্য গাফিলতির কারনে মেয়েটার প্রাণ যেতে বসেছে। শাফিন তার সিনিয় ডক্টর উমর রওনাক এর দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ স্যার আই থিংক মেয়েটার রোগ টা আরো তীব্র ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে তাকে। তা না হলে নিজেকে কেউ এভাবে গভীর ভাবে আঘাত করে?

উমর তাকালো রজনীর ফ্যাকাসে মুখের দিকে। মেয়েটাকে কেমন মৃত লাগছে। অক্সিজেন মাস্ক এর সাহায্যে নিঃশ্বাস টানছে। প্রায় দেড় বছর হতে চললো সে এই মেয়েটাকে চিনেছে। কয়েক দিন পর পর ই রজনী কে এই হসপিটালে আসতে হয়। কখনও মায়ের সাথে বা ছোট বোনের সাথে৷ বেশির ভাগ সময় ছোট বোন রুয়াতের সাথে দেখতে পাওয়া যায় তাকে। মেয়েটার বয়সই বা কত? ছাব্বিস সাতাইশ? যার গোটা লাইফ টা এখনও পড়ে আছে। অথচ মেয়েটাকে ভুগতে হচ্ছে এক চরম মানসিক রোগে!

এই মেয়েটা সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। এই হসপিটালের সাইক্রিয়াট্রিস্ট ডক্টর মাহবুবের পেসেন্ট রজনী। দীর্ঘ দেড় বছরের ও বেশি সময় ধরে ডক্টর মাহবুব রজনী কে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ। এই রোগকে অনেক সময় মানসিক রোগের ক্যানসার হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদী। আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে সারা জীবন রোগীদের ওষুধ খেতে হয়। সিজোফ্রেনিয়া রোগীর একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে ওষুধ সেবন। রজনী ও এই দেড় বছর ধরে ডক্টর মাহবুবের থেকে কিউপেক্স ২০০ নাম ঔষধ সেবন করছে। এই ঔষধ একদিন খেতে মিস দিলেই রজনী কন্ট্রোলের বাহিরে চলে যায়। নিজেকে সামলাতে পারে না।

এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা বারবার নিজেকে ব্যর্থ ভাবতে থাকে। নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মায়। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার প্রয়াস জাগে মনে। ফলস্বরূপ আ’ত্মহ’ত্যা নামক জঘন্য কাজটাও করে বসে অনায়াসে।

ডক্টর উমর মুখের মাক্স টা খুলে আইসিইউ থেকে বের হলো। আইসিইউ এর বাহিরেই বিধ্বস্ত হয়ে অপেক্ষায় আছে চারজন মানুষ। উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়েছিল এতক্ষণ আইসিইউ এর দরজার দিকে। রুয়াতের অবস্থা সূচনীয়। কিছুটা দূরেই রুয়াতের বাবা রুয়াতের মাথা হাত রেখে মেয়েকে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ডক্টর উমর কে বের হতে দেখেই শাফায়াত এগিয়ে গেলো। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
-“ রজনী কেমন আছে ডক্টর?
অপরিচিত এক মুখ ডক্টর উমরের সামনে। শাফায়াত কে ঠিক চিনলো না।
-“ আপনি কে পেসেন্ট এর?
-“ তার ছোট বোনের হাসবেন্ড।
উমর তাকালো বিধ্বংস্ত রুয়াতের দিকে। রুয়াত এলোমেলো পায়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছে তার দিকেই।
সাদমানের রাগ লাগছে ডক্টরের উপর৷ রজনী কেমন আছে সেটা না বলে এই লোকটা এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে! রুয়াত উৎকন্ঠা হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-“ উমর ভাই আপা কেমন আছে?
উমর শান্ত চোখে তাকালো রুয়াতের দিকে।
-“ তোমাকে ডক্টর মাহবুব কি বলেছিল রুয়াত? বলে নি তোমার বোন যেনো একদিন ও ঔষধ খাওয়া মিস না দেয়? খেয়াল রাখো নি কেনো বোনের দিকে?

রুয়াতের ঢের মনে আছে ডক্টর মাহবুব এর বলা কথা গুলো। সে তো শ্বশুর বাড়ি ছিলো। ও বাড়ি যাওয়ার আগে মা কে পই পই করে বলে গেছে তার আপা ঔষধ যেনো খায় সেটা নিয়মিত দেখতে। তার মা কি এই সামান্য কাজটাও করতে পারলো না? নাকি ইচ্ছে করেই খোঁজ নেয় না বোনের? সেই বছর কয়েক আগের করা অন্যায় টা কি এখনও মনে পুষে রেখেছে তার মা? সেজন্য বোনের প্রতি এতো অনিহা তার মায়ের?

-“ ভাই আমি তো শ্বশুর বাড়ি ছিলাম। আম্মা কে বলে গিয়েছিলাম কিন্তু আম্মা যে খোঁজ নিবে না ঔষধ খাচ্ছে কি খাচ্ছে না সেটার আমি বুঝতে পারি নি। এখন আপা কেমন আছে বলেন না উমর ভাই।
উমর তপ্ত শ্বাস ফেললো। কথায় আছে না, মানুষ একটা অন্যায় করলে তার ভার বয়ে বেড়ায় মৃত্যুর আগ অব্দি। রজনীর ও হয়েছে সেই দশা। বেচারি একটা ভুলের মাশুল দিচ্ছে নিজের জীবন দিয়ে।
-“ ভালো নেই তোমার বোন। জ্ঞান ফিরছে না। হাতের শিরা টা বেশ ভালো ভাবেই কেটেছে।
রুয়াতের বুক ধক করে উঠলো। দুকদম পিছিয়ে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে যেতে নিলে শাফায়াত আগলে নেয়। রুয়াতের কানে এখনও বাজছে উমরের বলা কথাটা তার বোন ভালো নেই। জ্ঞান ফিরছে না মানে কি? তার আপার কি জ্ঞান ফিরবে না?
সাদমান কিছুই বুঝতে পারছে না। রজনী কিসের ঔষধ খায়? আর কিসের জন্য ই বা খায়?

রুয়াতের বাবা দূর থেকে উমরের কথা গুলো শুনলো। কাছে আসার সাহস পাচ্ছে না। উমর নিজেই এগিয়ে গেলো তার দিকে। কবির শিকদার এর মাথা নত। কথা বলার ভাষা তার নেই। উমর নিজেই বলল-
-“ মাথা নত করে রেখেছেন কেনো মিস্টার শিকদার? মেয়ের থেকে মেয়ের অন্যায় টা আপনার চোখে বড় হয়ে দাঁড়ালো? এখন মেয়েটা যে মরতে বসেছে খুশি আপনি?

কবির শিকদার ত্বরিত গতিতে মাথা তুলে তাকালো। কোনো বাবা চায় তার আগে তার সন্তানের মৃত্যু? কবির শিকদার এর নীরবতা দেখে বেজায় রাগ হলো উমরের। একটা মানুষের হৃদয় এতোটাও পাথরের ন্যায় হতে পারে এনাকে না দেখলে উমর জানতেই পারতো না। কবির শিকদার এর কাছে আগে তার সম্মান টাই বড়। তারপর বাদবাকি সব।
উমর চলে আসলো সেখান থেকে। রুয়াত হাঁটু গেড়ে বসে এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো। রুয়াতের কান্না মাখা মুখ টা দেখে শাফায়াত এর বুকের বা পাশে কেমন ব্যাথা অনুভব হলো। রুয়াতের বাহু ধরতেই রুয়াত জড়িয়ে ধরলো শাফায়াত কে। শাফায়াত এর বুকে মুখ গুঁজে কান্নারত গলায় বলল-
-“ স্যার আমার আপা ঠিক হয়ে যাবে তো? আল্লাহ ক্যান আমার আপার জীবনে এতো দুঃখ দিলো স্যার? আমার আপার সুন্দর জীবন টাকে নরক বানিয়ে দিলো নওফিল নামক অমানুষ টা। আমি ঘৃণা করি এই লোক টাকে ভীষণ । পৃথিবীর সবচাইতে জঘন্য এই লোক টা।

রুয়াত প্রচন্ড আকারের বোন পাগল। বোন কে মারাত্মক ভালোবাসে। বাবা মাকেও এতোটা ভালোবাসে না মনে হয়। বিয়ের আগে কবির শিকদার রুয়াতের ব্যাপারে সব বলে রেখেছিলেন৷ রুয়াত পৃথিবীতে কাউকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসলে সেই ব্যাক্তিটি রজনী। তার ও যথেষ্ট কারন আছে।

সাদমান রুয়াতের কথা গুলো শুনে মনে বারবার একটা নাম ই আওড়াচ্ছে। সেটা হলে নওফিল। কে এই নওফিল? কি সম্পর্ক নওফিলের সাথে রজনীর? রজনীর জীবন টা নষ্ট করার পেছন নওফিল কিভাবে জড়িত? কত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সাদমান শাফায়াতের কাঁধে হাত দিয়ে বলে-
-“ ব্রো…
শাফায়াত শেষ করতে দিলো না।
-“ রুয়াত কে আগে সামলে নেই পরে কথা বলছি তোর সাথে।

শাফায়াত বুঝে গিয়েছে ভাইয়ের ডাকের মানে। তার কানে একবার যেটা পৌঁছে যায় সেটা না শোনা অব্দি স্থির থাকতে পারে না।
শাফায়াত আলতো করে রুয়াতের মুখ খানায় নিজের হাত রাখে। মেয়েটাকে শান্ত করবে কি বলে? তবুও একটু বৃথা চেষ্টা করে বলল-
-“ কাঁদলে কি বোন ঠিক হয়ে যাবে? চোখের জল মুছুন। আপনার বাবার দিকে খেয়াল করেছেন মানুষ টা কেমন দূরে মাথা নত করে বসে আছে? তাকে কে সামলাবে?

রুয়াত তাকালো বাবার পানে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাবার কাছে ছুটে গেলো। বাবার হাঁটু জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ ও বাবা বাবা খুশি হয়েছো তুমি? আপা একটু খানি তোমার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করতো আর তুমি আপার মুখটা অব্দি দেখতে চাইতে না। কি এমন অন্যায় করেছিল? ভুল মানুষ কে না হয় ভালোবেসে ঘর ছেড়ে পালিয়েই গিয়েছিল। সেজন্য তুমি এমন নির্দয়তা দেখাবে? তুমি বাবা হয়ে সন্তানের কষ্ট টা বুঝতে পারো নি আমি যতটা পেরেছি বোন হয়ে৷ বাবা মা রা নাকি সন্তান রা হাজার অন্যায় করলেও মুখ ফিরিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না৷ অথচ তোমরা আমার আপুর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে। আমি দেখেছি আমার বোন কে রাতের আঁধারে গলা কা’টা মুরগির মতো ছটফট করতে। দেখেছি তার শ্বাসরুদ্ধকর কান্না। পাগলের ন্যায় আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে তোমাদের করা ব্যাবহারের জন্য। এখন খুশি?

কবির শিকদার নিস্তব্ধ। সেই সাথে সাদমান ও। শাফায়াত বুঝতে পারলো না সে কি ভুল করলো কবির শিকদার এর কথা রুয়াতের সামনে তুলে?
কবির শিকদার বসা থেকে উঠে চলে গেলো বাহিরে। তার পক্ষে আর সেখান টায় থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না। বড় আদরের মেয়ে ছিলো রজনী। প্রথম সন্তান সমস্ত অনুভূতি ভালোবাসা তাকেই তো ঘিরে ছিলে তাদের। কি দেয় নি সে এই মেয়েকে। কোনো কিছু মুখ থেকে বের হবার সাথে সাথে সেটা এনে হাজির করেছে। অথচ এক বছরের পরিচিত এক ছেলের ভালোবাসার মায়ায় পড়ে তাদের ভালোবাসা কে ভুলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল চার বছর আগে! লোকজনের কত অপমানজনক কথা শুনেছে তারা তার কোনো ধারণা আছে?

শাফায়াত রুয়াত কে টেনে বেঞ্চে বসালো। সাদমান আইসিইউ এর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। ঘন্টা খানেক পর ডক্টর শাফিন বের হতেই সাদমান অস্থির পায়ে এগিয়ে গেলো। অশান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
-“ মিস সিনিয়র এখন কেমন আছে?
শাফিন মুখ থেকে মাক্স টা খুলে বলে-
-“ জ্ঞান ফিরে নি। আশা রাখছি আট ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরবে।
-“ দেখা করা যাবে?
-“ কেবিনে শিফট করা হবে কিছুক্ষণ পর। তারপর দেখা করতে পারবেন।

রজনী কে কেবিনে শিফট করা হলো। হাতে ক্যানোলা,মুখে অক্সিজেন মাস্ক। কেবিনের সচ্ছ কাঁচের দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখছে সাদমান। পাশেই শাফায়াত দাঁড়ানো। কেবিনের ভেতরে আছে রুয়াত। রজনীর হাত চেপে বসে আছে। কবির শিকদার কে আর দেখা যায় নি আশেপাশে। সাদমান রজনীর দিকে দৃষ্টিপাত রেখেই বলল-
-“ নওফিল টা কে ব্রো? আর উনি কিসেরই বা ঔষধ খান? উনার কি হয়েছে?
শাফায়াত প্রলম্বিত তপ্ত শ্বাস ফেললো।
-“ নওফিল রজনীর এক্স হাসবেন্ড। চার বছর আগে রজনী নওফিলের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। কারন আঙ্কেল নওফিল কে পছন্দ করতো না। আঙ্কেল রজনীর বিয়ে রজনীর মামার ছেলের সাথে ঠিক করেছিল। রজনী অনেক বুঝিয়েছিল যাতে নওফিলের সাথে তার বিয়ে টা দেয়। কিন্তু আঙ্কেল রাজি হয় নি। অগ্যত রজনী বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। নওফিল ব্যাংকে জব করতো। বেশ ভালোই মাইনে পেতো। নওফিল, রজনী দু’জন দু’জন কে ভালোবাসতো। কিন্তু বিয়ের দু বছর হতে না হতেই নওফিলের ভালোবাসা কমে যায়। রজনী কে ডিভোর্স দেয়। কেনো ডিভোর্স হয় সেটা ঠিক জানি না,তবে গুরুতর কিছু একটা হয়েছিল তাদের মধ্যে। নওফিল দ্বিতীয় বিয়ে করে।

সাদমানের দৃষ্টি এখনও রজনীর দিকেই। এই মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল আবার ডিভোর্স ও হয়ে গেছে! ভালোবেসেই তো বিয়ে করেছিল দুজন দুজন কে তাহলে নওফিল ছেড়ে দিলো কেনো?
-“ ডিভোর্স টা কেনো হলো ব্রো?
-“ সেটা জানি না। তবে রজনী প্রচুর ভালোবাসতো নওফিল কে। নওফিলের দেওয়া ডিভোর্স টা সে মানতে পারে নি। প্রথম ভালোবাসা তো ভোলা অসম্ভব। ডিভোর্সের পর রজনী বাপের বাড়ি চলে আসে। আঙ্কেল আন্টি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে নি কেবল রুয়াত।

সে ছোট থেকেই বোনের আশ্রয়ে বড় হয়েছে। আঙ্কেল আন্টি দুজনেই জব করায় রুয়াতের দেখভাল রজনী নিজেই করেছে। আপদ বিপদে বাবা মায়ের চেয়েও বেশি কাছে পেয়েছে বোন কে। আঙ্কেল রা রজনী কে তাড়িয়েও দেন নি। তবে আঙ্কেল রজনীর সাথে একে বারেই কথা বলতো না। আন্টিও ও তেমন কথা বলতো না তবে রজনী অসুস্থ হবার পর থেকে মেয়ের সাথে কথা বলেন।
-“ অসুস্থ মানে? কি হয়েছে মিস সিনিয়র এর?
-“ রজনী সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত।
কথাটা ঝংকারের ন্যায় কানে বাজলো সাদমানের। সে বেশ ভালো করেই জানে এই রোগের ব্যাখ্যা। অবিশ্বাসের সাথে বলল-
-“ মিস সিনিয়র সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত? কিভাবে?
-“ এটার আসল কারন টা আমিও জানি না তবে একটু জেনেছিলাম, অতিরিক্ত ডিপ্রেশন,ব্যার্থতা আবেগগুলি অপ্রতিরোধ্য এবং নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়া। চরম মানসিক দুর্দশা এবং সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও উপায় খুঁজে না পাওয়ার জন্য প্রতি মুহূর্তে গুমরে গুমরে থাকতো রজনী। সেই থেকেই এই রোগ বাসা বেঁধেছে দেহে।

-“ এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হবার কোনো উপায় নেই?
-“ নাহ্। যতদিন বেঁচে রবে ততদিন ঔষধ খেয়েই বেঁচে থাকতে হবে। আর খাওয়া বাদ দিলেই এমন ভয়াবহ অবস্থা করে ফেলে নিজের।

সাদমানের নিজেকে কেমন শূন্য শূন্য লাগতে শুরু করলো। মেয়েটাকে বাকিটা জীবন বেঁচে থাকতে হবে এক পাতা ঔষধের উপর! কি ভয়াবহ রোগের বাসা বাঁধিয়েছে এই মেয়ে। ভুল মানুষ কে ভালোবাসার দায় এখন এভাবেই দিতে হবে! অন্য ভাবেও তো দেওয়া যেতো। আচ্ছা এই মেয়েটা কে যদি সাদমান নিজের সব টুকু দিয়ে ভালোবেসে আগলে রাখতে চায় মেয়েটা কি তাকে ফিরিয়ে দিবে? রজনীর রঙহীন জীবন টাকে রঙে ভরিয়ে দিতে চাইলে রজনী দিবে সম্মতি? সাদমান না হয় সবটা উজাড় করে ভালোবাসবে বিনিময়ে না হয় রজনী সারা জীবন তার পাশে থাকুক। মেয়েটার এমন অবস্থা দেখে সাদমানের বুকটা যে দুমড়ে মুচড়ে উঠছে। কাউকে বললে সে একথা বিশ্বাস করবে?

#চলবে?

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here