#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব১২
#Raiha_Zubair_Ripti
শহর জুড়ে আজ আকস্মিক জড়ো হাওয়ার আবির্ভাব হয়েছে । গর্জে বৃষ্টি নামবে তারই ঈঙ্গিত দিচ্ছে এ জড়ো হাওয়া। রাস্তার ধুলোবালি সব বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ে চলছে। আকস্মিক এমন জড়ো হাওয়া ভোর থেকে দেখেই কপাল কুঁচকে আসলো রুয়াতের। আজ ভার্সিটি শেষ করে ও বাড়ি যাওয়ার কথা। এখন বাজে সকাল সাতটা। নয়টার দিকে বের হতে হবে অথচ বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে এখনও ঘুমাচ্ছে শাফায়াত। রুয়াত জানালার গ্লাস টা টেনে দিয়ে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বেডের কাছে এসে শাফায়াত কে ডাকতে লাগলো-
-“ শুনছেন? উঠুন। ভার্সিটিতে না যাবেন আজ? সময় তো হয়ে আসলো।
শাফায়াত নড়েচড়ে উঠলো। তারপর ফট করে চোখ মেলে তাকালো। রুয়াতের চোখে চোখ পড়তেই রুয়াত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।
-“ উঠুন ফ্রেশ হয়ে নিন।
শাফায়াত শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঘুমের রেশ এখনও কাটে নি। তারপর ওয়াশরুমে চলে গেলো।
রুয়াত নিচে নেমে খাবার টেবিলে খাবার সাজায়। এক প্লেটে রজনীর জন্য খাবার নিয়ে রজনীর রুমে আসে। খাবার টা টেবিলে রেখে সাদমানের রুমে যায়। দরজা আটকানো দেখে দরজায় কড়া নেড়ে বলে-
-“ ভাইয়া উঠেছেন? খাবার বাড়া হয়েছে খেয়ে নিন।
সাদমান সজাগ ই ছিলো। রুয়াতের গলা শুনে শোয়া থেকে উঠে দরজা খুলে দেয়৷ রুয়াত সাদমান কে নিচে আসতে বলে রজনীর রুমে চলে আসে। রজনী কে ওয়াশরুমে ধরে নিয়ে যায় রজনী। পা কে’টে যাওয়ায় একা হাঁটতে পারে না এখন। রজনী ফ্রেশ ট্রেশ হলে রুয়াত রজনী কে ধরে বিছানায় নিয়ে আসে। তারপর খাবার টা খাইয়ে দেয়।
নিজের রুমে এসে দেখে শাফায়াত একদম রেডি হয়ে নিয়েছে। রুয়াত কে দেখে শাফায়াত বলে উঠে –
-“ তাড়াতাড়ি রেডি হন। নাস্তা টা করেই রওনা দিব।
রুয়াত মাথা নেড়ে আলমারি থেকে গ্রিন কালারের কুর্তি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শাফায়াত বিছানায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলো রুয়াতের। কিছুক্ষণ পর রুয়াত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ভ্যানিটির সামনে দাঁড়িয়ে হাত মুখে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে। তারপর চুল গুলো হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে আঁটকে ওড়না টা গলায় জড়িয়ে শাফায়াত এর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ চলুন।
শাফায়াত রুয়াতের পা থেকে মাথা অব্দি পর্যবেক্ষণ করলো। শরীরে অলংকার বলতে কানে একজোড়া এয়ারিং নাকে ডায়মন্ডের নাক ফুল আর বা হাতের অনামিকা আঙুলে আংটি। অথচ হাতে চু’ড়ি নেই। মা কি তাকে চু’ড়ি দেয় নি নাকি?
মনে মনে কথাটা ভাবলো শাফায়াত। তারপর কিছু ভেবে হাঁটা শুরু করলো। রুয়াত ও পেছন পেছন আসলো। খাবার টেবিলে সাদমান খাচ্ছে, রুয়াত শাফায়াত চেয়ার টেনে বসে। রুয়াতের ফুপি খাবার বেড়ে দেয়। শাফায়াত রুয়াত খাবার টা খেয়ে নেয়।
সাদমান রজনীর রুমে এসেছে যাওয়ার আগে দেখা করে জানিয়ে দিতে যে সে চলে যাচ্ছে। রজনী বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলো। সাদমান কে দেখে বই টা বন্ধ করে।
-“ কিছু বলবেন?
সাদমান মুচকি হাসলো। তার কেনো যেনো যেতে ইচ্ছে করছে না এই বাড়ি ছেড়ে।
-“ চলে যাচ্ছি।
রজনী প্রতিত্তোরে বরাবরের মতো একটা চমৎকার হাসি উপহার দিয়ে বলল-
-“ সাবধানে যাবেন।
সাদমান কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর বলে উঠল-
-“ ঔষধ টা টাইম টু খাবেন মিস সিনিয়র। নিজের বাঁচার ইচ্ছে না থাকুক অন্য কারোর জন্য হলেও বাঁচিয়ে রাখুন নিজেকে।
রজনী দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। কেউ কি সাধে মৃ’ত্যু কে বরন করতে চায়?
-“ জীবন টা খুব ছোট্ট জানেন তো সাদমান। শৈবালের ওপর জমে থাকা শিশির বিন্দুর চেয়েও ছোট আমাদের এই জীবন। আমি আমার জীবন নিয়ে আশা ভরসা সব জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছি। কারন জানি সিজোফ্রেনিয়া একদিন না একদিন সম্পূর্ণ রূপে গ্রাস করে আমায় মুক্তির স্বাদ দিবে। কারন পুরোপুরি সুস্থ হবার যে কোনো চান্স নেই। তাই বলবো আমি নিজের জন্য নিজেই নিজেকে বাঁচাতে অক্ষম প্রতি মুহূর্তে সেখানে অন্যের জন্য বাঁচা মুর্খামো বই কিছু না।
সাদমানের মুখে কালো মেঘ ঘনিয়ে এলো। সবসময় এমন বাস্তবিক কথা কেনো বলতে হবে তার? অবাস্তব কথা কি বলা যায় না? বলতে পারে না তার বাঁচার ইচ্ছে অনেক। সে বাঁচতে চায় ভালো ভাবেই বাঁচতে চায়। যে ভেতর থেকেই নিজেকে শেষ করে দিতে চায় সে যতই মেডিসিন খাক না কেনো দিন শেষে ভেতরের মনোবাসনা টাই পূরণ হয়।
-“ জীবন টা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেনো মিস, তাতে কিন্তু মানুষ রা তাদের গুটিয়ে নেয় নি নিজেদের। তার এই ক্ষুদ্র তম জীবনটা কেই হাসি খুশি তে মাতিয়ে রাখছে। উপভোগ করছে বিভিন্ন উপায়ে। মানুষ মরণশীল, তাদের মৃত্যু অনিবার্য এটা মানতেই হবে। তাই বলে হাতে যতগুলো বসন্ত আছে সেসব বসন্ত রঙহীন ভাবে কাটিয়ে দিতে হবে? আপনি নিজেও বাঁচবেন। নিজের জন্য আর নয়তো অন্য কারোর জন্য। মিলিয়ে নিয়েন কথাটা।
-“ মেলানোর সময় পেলে নিশ্চয়ই মিলিয়ে যাব সাদমান।
-“ আচ্ছা পার্সোনাল একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-“ অনুমতি না দিলে কি আর কৌতূহল টা দমিয়ে রাখতে পারবেন ভেতরে?
-“ তা পারবো না। অন্য উপায়ে জেনে নিতাম।
-“ উপায় টা রুয়াত তাই তো?
-“ হ্যাঁ।
-“ আচ্ছা জিজ্ঞেস করুন।
-“ অতীত কে কি এখনও ভুলতে পারেন নি?
-“ অতীত ভোলা যায় কখনও?
-“ তা যায় না। কিন্তু উপেক্ষা তো করা যায়।
-“ উপেক্ষা করে কি লাভ?
-” নতুন ভাবে সব টা শুরু করতে হলে উপেক্ষা করাটাই কি শ্রেয় নয়?
-“ কে করবে সব টা নতুন ভাবে শুরু?
-“ কেনো আপনি।
-“ আমার তো এমন বাসনা নেই মনে।
-“ কেনো?
-“ কখনও দেখেছেন গুনে ধরা বাঁশ দিয়ে ঘরের খুঁটি দিতে? আমি হচ্ছি গুনে ধরা এক অচল বাঁশ।
-“ আর সেই কাঠ কেই যদি কোনে মিস্ত্রি নিজ হাতে ব্যাবহারের উপযোগী করে তুলে তখন?
-“ এমন মিস্ত্রির অনেক অভাব এই শহরে।
-“ যদি পেয়ে যান তখন কি করবেন?
-“ ভেবে দেখিনি।
-“ ভাবা শুরু করুন।
-“ দেরি হচ্ছে না?
-“ হলে হবে। আপনি আজ থেকেই ভাবা শুরু করুন। মিস্ত্রি টা বড্ড ভালো বুঝলেন? ভালো মানুষের কদর করতে হয়।
-“ নিজের ঢাক নিজে পেটাচ্ছে কেউ।
সাদমান হাসলো। রজনী বুঝতে পেরেছে বলে।
-“ সত্যি বললে যদি নিজের ঢাক নিজে পেটানো হয় তাহলে সেই খাতায় না হয় নাম টা দিয়েই ফেললাম।
-“ ভুল করছেন।
-“ ভুল,সঠিক বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। তাই আমি জানি আমি কি করছি।
-“ আসতে পারেন।
সাদমান বা হাত দিয়ে চুল গুলো পেছন ঠেলে দিলো। ঠোঁট চেপে কিয়ৎ ক্ষন চুপ থেকে বলে উঠল-
-“ যাচ্ছি, আবার খুব শীগ্রই দেখা হবে আমাদের।
আপাতত মন্দ অবস্থাতেই থাকুন কেউ একজন ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে নিবে।
প্রতিত্তোরে রজনী চুপ রইলো। সাদমান চলে গেলো। রজনী জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে জড়ো বাতাসের তীব্রতার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠে -“ আমি চাই আমাদের আর দেখা না হোক। নতুন করে কোনো কিছুর শুরু না হোক। দ্বিতীয় বারের মতো কোনো হৃদয়ে আঘাত না লাগুক। আমাকে কেউ জীবনে চাওয়া মানে ফল বিহীন গাছ কে চাওয়ার সমতূল্য।
——————
খাওয়া শেষে শাফায়াত রুয়াতের বাবা মায়ের সাথে দেখা করে রুয়াত কে নিয়ে চলে আসে। আর সাদমান অন্য গাড়িতে করে বাসায়। শাফায়াত গাড়ি চালাচ্ছে রুয়াত অন্য মনস্ক হয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। শাফায়াত খেয়াল করলো।
-“ হোয়াট’স হ্যাপেন্ড?
রুয়াত চোখ ঝাপ্টা দিলো।
-“ নাথিং।
-“ মন খারাপ আপনার বোন কে নিয়ে?
-“ বুঝেই তো গেছেন।
-“ আপনারা এক কাজ করতে পারেন।
-“ কি?
-“ উনার বিয়ে দিতে পারেন। তাহলে অন্তত কাউকে প্রোপার্লি পাশে পাবে।
রুয়াত তুচ্ছ করে হাসলো।
-“ পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ আছে যে ফল বিহীন গাছ ভালোবাসে?
-“ তা বাসে না। মানুষ গাছ ই লাগায় ফলের আশায়।
-“ তাহলে কেনো একটা মানুষ ফল বিহীন গাছের প্রতি আকৃষ্ট হবে?
-“ বুঝলাম না কথাটার মানে। আপনার বোনের ভালোর জন্য বললাম একটা কথা আর আপনি গাছ নিয়ে পড়লেন!
-“ গভীর ভাবে ভাবেন বুঝে যাবেন কেনো বললাম।
ভার্সিটির সামনে এসে গাড়িটা থামতেই রুয়াত নেমে গেলো। শাফায়াত গাড়িটা পার্ক করে নিজের ডিপার্টমেন্টে চলে গেলো।
রুয়াত চার দিন পর ভার্সিটি এসেছে। আর ক্লাসে এসেই শুনতে পেলো তাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে ট্যুরের ব্যাবস্থা করা হয়েছে৷ জায়গা ঠিক করা হয়েছে কুয়াকাটা। সেখানেই সমুদ্র সৈকত সহ বেশ কিছু জায়গায় যাবে। রুয়াতের ভীষণ ইচ্ছে সমুদ্র সৈকত দেখার। এখন তো বিবাহিত যেতে হলে উনার পারমিশন লাগবে। উনি কি দিবে পারমিশন?
কথাটা ভেবেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো। তাদের ডিপার্টমেন্টের ছেলে মেয়ে সহ বেশ কিছু টিচার্স ও যাবে। কথাটা শুনেই মন টা ভালো হয়ে গেলো। টিচার্স রা যাওয়া মানে শাফায়াত ও যাবে নিশ্চয়ই তাহলে তো রুয়াত ও যেতে পারবে।
নিচ থেকে বেল বাজার ঘন্টা বাজতেই স্যার এসে পড়লো ক্লাসে। রুয়াত পড়ায় মনোযোগ দিলো। আজ একাউন্ট ক্লাস নেই। সেজন্য শাফায়াত এর দেখা মেলে নি ক্লাসে। সবগুলো ক্লাস শেষ করে নিচে নামতেই রুয়াতের ফোনে মেসেজ আসে। শাফায়াত মেসেজ দিয়েছে।
তার ফিরতে লেট হবে সাদমান কে বলে দিয়েছে সে আসছে রুয়াত কে নিতে। রুয়াত অপেক্ষা করলো সাদমানের। সাদমান আসলো গাড়ি করে। গেটের সামনে রুয়াত কে দেখে ডেকে বলল-
-“ হেই রুয়াত গাড়িতে এসো।
রুয়াত গাড়িতে উঠে বসলো। পাশ থেকে রোহানের ফ্রেন্ড নেহাল রুয়াত কে অচেনা এক ছেলের গাড়িতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। আজ ভোরেই তারা চট্টগ্রাম থেকে ফিরেছে। চট্টগ্রাম সমাবেশে আকস্মিক বিরোধী দলের আক্রমণে হাল্কা চোট পেয়েছে রোহান। যার দরুন আসে নি ভার্সিটি।
রুয়াত গাড়িতে উঠে বসতেই সাদমান গাড়ি স্টার্ট দেয়। সাদমান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে-
-“ রুয়াত কিছু মনে না করলে কয়েক টা কথা জানতে চাইবো।
-“ হ্যাঁ বলুন কি জানতে চান?
-“ উমম কথাটা তোমার বোন কে নিয়ে।
রুয়াত অবাক হয়ে তাকালে। তার বোন কে নিয়ে কি বলবে?
-“ আমার বোন কে নিয়ে কি বলবেন?
সাদমান গাড়ি সাইডে দাঁড় করালো। তারপর শান্ত কন্ঠে বলল-
-“ বোনের কি বিয়ে-শাদি দিবে না তোমরা রুয়াত?
-“ কেনো ভাইয়া? হঠাৎ এ কথা বলছেন যে।
-“ এমনি। বলছি বিয়ে শাদি দিবে না?
-“ বিয়ে শাদি আল্লাহর হাতে ভাইয়া। যদি আপুর কপালে বিয়ে থাকে তো হবে।
-“ কপালে থাকে মানে?
-“ না কিছু না। যোগ্য পাত্র পেলে বিয়ে দিব।
-“ আমাকে তোমার যোগ্য মনে হয় না?
রুয়াত ত্বরিত গতিতে তাকালো সাদমানের দিকে।
-“ এসব বলার মানে কি ভাইয়া?
-“ মানে টা খুবই সিম্পল রুয়াত। আমার কথা বলার টোনে এতক্ষণে সব বুঝে যাবার কথা।
-“ জ্বি ভাইয়া বুঝতে পেরেছি। বাট আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না।
-“ কি?
-“ মনে কোনো কিছু শুরু হবার আগেই সেটা কে দাফন করে দিন মনেই ভাইয়া৷ কষ্ট ছাড়া কিছু পাবেন না।
-“ এ কথা কেনো বলছো রুয়াত?
-“ আমার আপা কে গভীর ভাবে আগে জানুন ভাইয়া। তারপর দেখবেন এসব বিয়ে-শাদি নিয়ে ভাবতেও ইচ্ছে করবে না।
-“ খামখেয়ালি কথা কেনো বলো তোমরা দু বোন? ক্লিয়ার করে বলো। আর আমি মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি আমি কি করবো না করবো।
-“ যেচে কষ্ট পেতে চাওয়া টা কি বোকামি না?
-“ একটু না হয় করলাম জীবন কে নিয়ে বোকামি।
-“ একদিন ঠান্ডা মস্তিষ্কে বসবেন আমার সাথে। কিছু কথা বলবো। তারপর দেখবেন আপনার করে রাখা চিন্তা ভাবনা গুলোর বেশ বদল ঘটবে।
সাদমান মনে খানিকটা আশার আলো দেখলো। তাই আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
———————-
সন্ধ্যার আগ দিয়ে বাসায় ফিরে শাফায়াত। রুয়াত তখন বসার ঘরে সানজিদার পাশে বসে টিভি দেখছিলো। শাফায়াত কে হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে সদর দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে রুয়াত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর গ্লাসে করে ঠান্ডা পানি এনে বাড়িয়ে দিলো। শাফায়াত গ্লাস টা নিয়ে থ্যাংক’স বলে পানি টা খেয়ে নিলো। তারপর ঘরে দিকে যাওয়ার সময় রুয়াত কে রুমে আসতে বলে গেলো। রুয়াত রুমে আসলো। শাফায়াত তখন পরনের শার্ট খুলে টি-শার্ট পড়ছে। রুয়াত বিছানায় বসলো।
শাফায়াত রুয়াত কে দেখে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা প্যাকেট টা হাতে নিয়ে রুয়াতের দিকে এগিয়ে আসলো। প্যাকেট টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-“ ধরুন এটা।
রুয়াত প্যাকেটের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শাফায়াত এর দিকে তাক করে বলে-
-“ কি এটা?
-“ আপনার দেনমোহরের টাকা। ইচ্ছে ছিলো প্রথম দিনেই দিয়ে দেওয়ার। কিন্তু ব্যাংক থেকে টাকাটা দিলো আজ৷
-“ ভার্সিটির শেষে আপনি ব্যাংকে গিয়েছিলেন?
-“ হ্যাঁ।
-“ আমি কি টাকাটা চাইছি?
-“ না চাইলেও এটা আপনার প্রাপ্য। তাই প্রাপ্য টা বুঝিয়ে দিলাম।
রুয়াত প্যাকেট টা হাতে নিলো। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলল-
-“ এই টাকা দিয়ে আমি কি করবো এখন?
-“ যা ইচ্ছে হয় তাই করবেন।
-“ আপনার কাছেই রেখে দিন। টাকার ভার আমি নিতে পারি না।
-“ তাহলে কাল ব্যাংকে গিয়ে আপনার নামে একটা একাউন্ট খুলে আসবো। টাকাটা তাহলে সেখানেই থাকবে।
-“ আচ্ছা। আর একটা কথা শুনু না।
-“ হু বলুন।
-“ ভার্সিটির ব্যাপার টা জানেন?
-“ কোন ব্যাপার?
-“ ভার্সিটি থেকে কুয়াকাটা যাবে সবাই। আপনিও তো যাবেন নিশ্চয়ই তাই না?
-“ কই না তো। আমি তো যাব না।
রুয়াতের মুখ টা চুপসে গেলো। শাফায়াত যাবে না সেখানে সে যাওয়ার কথা তুলা মানে কোনো ফায়দা নেই। হঠাৎ রুয়াতের চুপসে যাওয়া মুখ টা দেখে শাফায়াত বলল-
-“ আপনি যাবেন কুয়াকাটা?
-“ চেয়েছিলাম বাট এখন আর যাব না।
-“ হোয়াই?
-“ আপনি না গেলে আমাকে যেতে দিবেন?
-“ আপনি গেলে তো আমাকে যেতেই হবে।
-“ যাবেন তাহলে?
-“ এটা আপনার উপর ডিপেন্ড করছে।
-“ তাহলে যাই। কয়েক দিনেরই তো ব্যাপার ঘুরে টুরে চিল করে চলে আসবো।
আচ্ছা বলে শাফায়াত মানিব্যাগ থেকে সাত হাজার টাকা বের করে রুয়াতের হাতে দিয়ে বলে-
-“ ট্যুরের ফী টা দিয়ে যা বাঁচবে সেটা আপনার হাত খরচ হিসেবে রাখবেন।
রুয়াত টাকা টার দিকে চেয়ে রইলো। ট্যুর ফি তো তিন হাজার। বাকি চার হাজার হাত খরচ? সে থাকতে আলাদা আবার কিসের হাত খরচ?
-“ ওখানে যাওয়ার পর কি আমার খরচ টা এখান থেকেই বহন করতে হবে?
-“ না। তারজন্য আমি আছি।
-“ তাহলে হাত খরচ কেনো দিলেন?
-“ অসময়ে যদি কখনও কাজে লেগে যায় সেজন্য। আর সব সময় তো আমি আপনার সাথে নাও থাকতে পারি। তখন যদি কিছু কেনার ইচ্ছে হয় তখন চাইলেই কিনতে পারবেন।
রুয়াত টাকা ব্যাগে রেখে দিলো। কাল গিয়ে ফি টা দিয়ে দিবে।
#চলবে?
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/