নিশীভাতি #৫৭তম_পর্ব

0
308

#নিশীভাতি
#৫৭তম_পর্ব

ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দেলোয়ারের সাথে ফরিদ কথা বলছে। ফাইজানের দৃষ্টি শান্ত হলো। কিছুসময় তাকিয়ে রইলো সে ফোনের স্ক্রিনের দিকে। কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল। মুখশ্রী শান্ত। ফোনটা রেখে দিলো পাশে৷ তার মস্তিষ্কে কি চলছে বোঝা যাচ্ছে না ঠিক। কেমন একটা দায়সারাভাব। যেন এটা খুব বড় কিছু নয়।

হুমায়রা চেয়ারটা টেনে ফাইজানের সামনে বসেছে। তার হাতে ভাতের প্লেট। ফাইজানের বা হাতে বেল্ট। হাত হাতে ক্যানোলা। সে নিজ হাতে খেতে পারে না। তাই তিন বেলা হুমায়রা তাকে খাইয়ে দেয়৷ মেয়েটি গত দুদিন ধরে কেবিনেই থাকে ফাইজানের সাথে। আসরের দিকে শরীফা আসলে সে একঘন্টার জন্য বাসায় যায়। গোসল সেরে আবার ফিরে আসে। সারারাত বাসে চেয়ার নিয়ে বসে থাকে। মুখখানা ক্লান্তিতে ভরে এসেছে। কিন্তু তাকে বিশ্রাম করতে দেখে না ফাইজান। মেয়েটির দিন যেনো কাটছে তার সেবা করতে করতে। দামী হাসপাতাল, ভিআইপি কেবিন; হুমায়রা এতো উতলা না হলেও খুব একটা যায় আসবে না। নার্স তার সময় মতো ঔষধ দিবে। জামা কাপড় বদলে দিবে। সব-ই হয়ে যাবে চোখের পলকে। কিন্তু এই সব কিছুই হুমায়রা নিজ হস্তে করে। গভীর রাতে যখন ব্যাথায় ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন পাশ ফিরতেই দেখবে মেয়েটি নামাযের পাটিতে বসে আছে নয়তো তার পাশে চেয়ার নিয়ে বসে আসে। দোয়া পড়ে তাকে ফু দিচ্ছে। সেই মূহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে ভাগ্যবান মানুষ মনে হয় ফাইজানের। কারণ তার প্রেয়সীর সকল ধ্যান জ্ঞানে কেবল তার বিচরণ। তার প্রেয়সী কথা বেশি বলে না। তার মনের অভিব্যক্তিগুলো মনের গহীনেই চাপা রাখে সে। কাছে এলেই লজ্জায় কুকড়ে যায় সে। তবে তার স্বচ্ছ অভিব্যক্তিগুলো এখন খুব করে টের পাচ্ছে ফাইজান। এই অনুভূতিটা মলমের মতো কাজ করছে তার। ভাত মেখে হুমায়রা ফাইজানের দিকে তাকাতেই লক্ষ করলো ফাইজান নিলীন চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে ভেসে আছে পরিতৃপ্ত হাসি। অবাক স্বরে শুধালো,
“কি দেখছেন?”
“তোমার চোখে আমার জন্য আকুলতা”

ফাইজানের কাব্যিক ভাষায় অভ্যস্ত হুমায়রা। ভাতের লোকমা এগিয়ে বললো,
“এখন খেয়ে নিন, সকালে ভালো করে খান নি লোকের যন্ত্রণায়”

খাবার দেখেই নাক শিটকালো ফাইজান। এন্টিবায়োটিক আর ঔষধের ডোজে খাবারে অরুচি চলে এসেছে যেনো। খাবার গলা থেকে নামতেই চায় না। কিন্তু হুমায়রার কাছে এসব বাহানা চলে না। সে নিজ হাতে তাকে জোর করে খাওয়াবে। তবুও প্রতিদিনের রুটিনে ফাইজান মুখ বাকিয়ে অনীহা প্রকাশ করে বললো,
“খাবো না। এর চেয়ে বরং তুমি আমার সামনে বসো। আমি তোমাকে দেখি। ভালো লাগছিলো তো”

হুমায়রা চোখ গরম করে বললো,
“আমাকে দেখলে বুঝি পেট ভরবে? শরীরে শক্তি আসবে? সুস্থ হয়ে যাবেন?”
“পেট ভরবে কি না জানি না কিন্তু মন তো ভরে। আর মনের সুস্থতা বড় সুস্থতা”

হুমায়রা আর তর্ক করার অস্ত্র পেল না। ফিচেল হেসে বললো,
“বেশ আপনি খেয়ে নিন, আমি আপনার সামনে দু ঘন্টা পুতুলের মতো বসে রইবো”

হুমায়রার চালাকি ধরতে সময় লাগলো না ফাইজানের। হাসিতে ফেটে পড়লো সে। চতুর স্বরে বললো,
“আমার সাথে থাকতে থাকতে চোরের সাথে বাটপারি শিখে গেছো দেখছি। নেতাকে দিচ্ছো লোভ?”
“নেতাসাহেব লোভে জড়ালো বুঝি?”
“অর্থের লোভে এই ফাইজান ইকবাল জড়ায় না; এ মোহ তো হৃদয়ের, না জড়িয়ে উপায় কি?”

হুমায়রা লোকমা এগিয়ে দিলে বিনা বাক্যে ফাইজান খেয়ে নিলো। রমনীর হাতে খেতেও যেনো শান্তি

*******

আমান দিন তের বাদ বেইল পেয়েছে। অনেক কষ্টে দেলোয়ার তাকে ছুটিয়েছে। কিন্তু আমানের মাঝে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ বা অপরাধবোধ নেই। সে হৃষ্টচিত্তে বাড়িতে এসেছে। সালমা মাত্রাতিরিক্ত যত্নের সাথে ছেলেকে বরণ করলো।যেনো ছেলে যুদ্ধ জয় করে এসেছে। এক্স কান্ড করছেন তিনি। দশ পদ রান্নায় খাবার টেবিল ভরে গেছে। এতে দেলোয়ার সাহেব বিরক্ত। তিনি জানেন কিসের বদলে আজ ছেলে বাড়ি ফিরেছে। বিরক্তভরে বললেন,
“এতো আদিক্ষেতার কি আছে তো বুঝি না!”
“ছেলে আমার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে”

দেলোয়ার সাহেব হুংকার করে বললেন,
“ছেলে তোমার যুদ্ধে জয় হয় নি!”

আমান নির্বিকার। সে মাথার মুড়ো খেতে ব্যস্ত। তার ভ্রুক্ষেপ নেই কোনো কিছুতে। দেলোয়ার সাহেবের চেঁচামেচি খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বরং। নির্লিপ্ত স্বরে বললো,
“চিৎকার করছেন কেনো বাবা? প্রেসার বেড়ে যাবে”

দেলোয়ার সাহেব অগ্নিশর্মা হলেন। গলার তেজ বাড়লো আরোও বেশি। গজগজ করতে করতে বললেন,
“তোমার ফাজলামি লাগছে সবকিছু? তুমি জানো কিসের বিনিময়ে তোমার মুক্তি এসেছে?”
“ফাইজানের প্রাণের বিনিময়ে”……

চলবে

[আসসালামু আলাইকুম, আলহামদুলিল্লাহ আব্বুকে বাসায় নিয়ে এসেছি। তাই আবার ফেলে রাখা লেখা টা শেষ করছি। অনেকদিন পর লিখছি লেখার মাধুর্য্য নষ্ট হয়ে গেছে অনেকটা। ইনশাআল্লাহ একদিন পর পর গল্প দিবো। দোয়া করবেন]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here