সুখের_ঠিকানা #শারমিন_হোসেন #পর্ব৩৮

0
298

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩৮

মধ্য দুপুর। সূর্যালোকের তাপে অস্থির পৃথিবীর প্রাণীকূল।এতক্ষণ ক্লাস রুমে ফ্যানের নিচে থাকার ফলে গরমের তীব্রতা এতোটা উপলব্ধি হয়নি। লাঞ্চ টাইমে বাইরে বের হতেই গায়ে জ্বলন ধরার মতো অসয্য গরম লাগছে সবারই।গরমে লিয়ার কপালে ঘাম জমেছে।কপাল থেকে ঘামের রেখা গাল বেঁয়ে পড়তে থাকে।লিয়া টিস্যু দিয়ে ঘামটুকু মুছে ফেলল।অরিন দুইহাত দুলিয়ে হেলেদুলে হাঁটছে।সাথে চোখেমুখে একরাশ খুশি তার।তেমনি উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল,

“আ্যই লিয়া।বলতো স্যার আমাদেরকে কিজন্য দেখা করতে বলেছে?স্যার কি বলতে পারে গেস কর তো।”

লিয়া হাঁটার গতি স্লো করল।অরিনের দিকে একপল চাইল। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,”আই ক্যা’ন্ট গেস এবাউট দিস।”

অরিন ঠোঁট উল্টালো।মুখটা শুকনো করল।কিছু বলবে এমন সময় পুরুষালী মোটা কণ্ঠস্বর আসল,

“ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট?”

লিয়া অরিন দু’জনে কপাল কুঁচকে চাইল। লিয়া ছোট করে বলল,”হ্যা।”

লোকটা ফের বলল,”আপনারা নিশ্চয় লিয়া আর অরিন। ফারহান স্যার আপনাদেরকে ওনার চেম্বারে ডেকেছেন।”

গবেষণাগারের একজন কর্মচারীকে দিয়ে লিয়াদেরকে বলতে পাঠায় ফারহান। তিনচারটা ছেলে মেয়ে একসাথে দাঁড়িয়ে ছিলো। সেখানে লিয়া-অরিনের খোঁজ করতেই।ওখান থেকে একটা মেয়ে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দেয়। অতঃপর লোকটা লিয়াদেরকে জিজ্ঞেস করে।কথাটা বলেই লোকটা হনহন করে চলে যায়।লিয়া আর অরিন ফারহানের রুমের দিকে যেতে থাকে।ফারহানের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে দু’জনে কার্টেসি মেইনটেইন করে। নম্রস্বরে অরিন বলল,”স্যার আসতে পারি?”

ফারহান ওর চেয়ারে গা এলিয়ে বসে ছিলো।একহাতে কপাল চেপে ধরে কিছু ভাবছিলো।এমন সময় মেয়েলি গলার স্বর শুনে মাথাটা কিঞ্চিৎ তুলে চাইল।খানিকটা দূরত্বে সামনাসামনি দরজা হওয়ায় স্পষ্ট অরিন লিয়াকে দেখতে পায়। ফারহান হালকা কেশে স্বাভাবিক ভাবে বলল,

“শিওর।আসো।”

লিয়া-অরিন দু’জনে এগিয়ে যায়। ফারহান সোজা হয়ে বসল। দুইহাত ভাঁজ করে টেবিলের উপর রাখল।অরিন লিয়া টেবিলের সামনে চেয়ার রাখা। চেয়ারের কাছাকাছি দাঁড়াল।অরিন গমগমে স্বরে বলল,

“স্যার আপনি তো লাঞ্চ আওয়ারে ক্যান্টিনে দেখা করার কথা বলেছিলেন।আমরা তো এখন ক্যান্টিনেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এখন এখানে ডেকে পাঠালেন।”

ফারহান একটু অপ্রস্তুত হলো। নড়েচড়ে বসল।গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

“আসলে আমার হঠাৎ করে একটা কাজ পরে গিয়েছে।আমাকে একটু পরেই বাইরে যেতে হবে।আর তোমাদেরকে বলে ফেলেছিলাম।তোমরা নিশ্চয় ওয়েট করবে।সেই কথা ভেবেই এখন তোমাদেরকে এখানে ডাকা।”

লিয়া ভ্রু যুগল কুঁচকে নিশ্চুপ রয়।অরিন স্মিত হাসল।ফের ঠোঁট আওড়ালো,”ব্যাপার না,স্যার।”

ফারহান কাঠের টেবিলের সামনে থাকা ড্রয়ারটা একহাতে খুলল।সেখান থেকে একসাথে এ্যড করা কয়েকটা পেপার বের করল। টেবিলের উপর রেখে একহাতে পাতাগুলো উল্টাতে উল্টাতে বলল,

“অরিন সেদিন বলছিলে তোমার নাকি**চ্যাপ্টারে প্রবলেম আছে।আমার কাছে এটার নোট ছিলো।তাই ভাবলাম তোমার কাজে লাগবে হয়ত।এটা রাখতে পারো।আশাকরি সামান্যতম হলেও কাজে দিবে।”

অরিনের চোখ ছানাবড়া হওয়ার ন্যায় হয়েছে।অরিন ভাবে, বাহবা স্যার আমার বলা কথাগুলো মনে রেখেছে। সেইজন্য আবার নোটও দিচ্ছে। এতোএতো ব্যস্ততা সব কিছুর মধ্যেও স্যার আমার কথাটা মনে রেখেছে।শুধুই কি এমনি এমনি?নাকি ডাল মে কুচ কালা হে?আমার মতো সামথিং সামথিং নয় তো?অরিন ভাবুক ভঙ্গিতে এসব ভাবতে থাকে।লিয়া বিস্মিত হয়ে ভাবছে,স্যারের তখন দেখা করার কথা বলার কারন কি তবে এটাই ছিলো?তবে কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। শুধু নোট দেওয়ার হলে তো স্যার তখনই সরাসরি বলতে পারতো। ব্রেক আওয়ারে নোট নিতে এসো।যাগগে যা হওয়ার হোক।ব্রেনে চাপ দিয়ে এসব ভাবার কোনো মানেই নেই।এসব মনেমনে ভেবে মাথা ঝাড়ল লিয়া।অরিনের দিকে সরু চাহনিতে চাইল।অরিনের চোখমুখ খুশিতে চকচক করছে।লিয়া ফের মনেমনে আওড়ায়,স্যারের সাথে কথা বলার অজুহাতে যেখানে সেখানে দেখা হলেই এই প্রবলেম,ঐ প্রবলেম।এই বিষয়টা বুঝতে পারছি না হেনোতোনো প্রবলেমের কথা বলতো এই অরিন।আর কিছু হোক বা নাহোক। না চাইতেই ফ্রিতে ভালোভালো নোট পেয়ে যাচ্ছে অরিন।এটা ভেবে লিয়া আড়ালে মুচকি হাসল।অরিন নিজেকে ধাতস্থ করল।ছোট করে শ্বাস টেনে নিয়ে উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,

“থেংকিউ স্যার। থেংকিউ ভেরি মাচ্।”

ফারহান বিনিময় অমায়িক হাসল।লিয়া তৎক্ষণাৎ মৃদুস্বরে বলল,”স্যার এবার আমরা আসি তাহলে।”

“ওকে।”

লিয়া সালাম দিয়ে প্রস্থান করতে থাকে।অরিন বি’র’ক্তি’ক’র শ্বাস ফেলে লিয়ার পিছুপিছু পা বাড়ায়।দুই মানবীর যাওয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফারহান। অতঃপর টেবিলের উপরে থাকা পেপার ওয়েটটা একহাতে ঘুরাতে থাকে। ফারহান তখন হুট করেই লাঞ্চে দেখা করার কথা বলে ফেলে। পরক্ষণে ঠান্ডা মস্তিষ্কে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়।এভাবে লিয়াকে প্রোপোজ করা মোটেই ঠিক হবে না।যদিও এখন আধুনিক যুগ।সবাই সরাসরি সামনাসামনিই মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে ফেলে।তবে টিচার হয়ে স্টুডেন্টকে এভাবে বলা ভালো দেখায় না।আর মেয়েটাকে দেখে আর পাঁচটা মেয়ের থেকে আলাদা মনেহয়। বর্তমান সময়ের সাথে আধুনিকতার নামে বেহায়ায়পনা, উগ্রভাবে চলাচল করে না।মেয়েটা চালচলনে, বেশভূষায় বেশ মার্জিত। কথাবার্তায়ও তার যথেষ্ট আদব কায়দা প্রকাশ পায়।মোটকথা হাইলি পার্সোনালিটি, স্ট্রং ক্যারেক্টার সম্পুর্ণ একটা মেয়ে ‌।তাকে এইভাবে প্রোপোজ করলে বিষয়টা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।তাই ফারহান ভেবেচিন্তে মত বদলায়।ভাবে কয়েকদিন পর বাড়ি যাবে। বাড়িতে বলে তারপর ফ্যামেলির মাধ্যমে প্রস্তাব রাখবে।আর তখন যেহেতু দেখা করার কথা বলে ফেলেছিলো।তাই বিষয়টা ম্যানেজ করতে,অরিনকে নোটের কথা বলে। যেহেতু অরিন এর আগে কথা বলার সময় পড়াশোনার বিভিন্ন প্রবলেম এর কথা বলেছে।

অরিন লিয়ার সাথে দরজা অব্দি আসার আগেই ফিসফিসিয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,”এই লিয়া। এখানে তো ফ্যানের বাতাসের নিচেই ছিলি।এই গরমে বাইরে থাকার চেয়ে শতগুণ বেটার ছিলো না কি?তোর তো সয্য হলো না অমনি আসি আসি।মুখে শুধু একটা শব্দ তোর।স্যারের সাথে একটু গল্প জুড়তে পারতাম। ধ্যাত!ভালো লাগে না।”

লিয়া নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আছে। অরিনের কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে। এইমেয়ে এখন ভা’ঙ্গা টেপ রেকর্ডারের মতো কিছুক্ষণ বাজতেই থাকবে। আর এই অসয্য রেকর্ডারের ঘ্যানঘ্যান অনিচ্ছা সত্ত্বেও লিয়াকে টলারেট করতে হবে।

জারিফ বাইরে যাচ্ছিল।এমন সময় করিডোরে একজন সিনিয়র টিচারের সাথে দেখা হয়।স্যারের সাথে পাশাপাশি হেঁটে যেতে যেতে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলতে থাকে। স্যারটা জারিফের টিচার ছিলো।তবে বর্তমানে কলিগ।তবুও জারিফ সম্মান দিয়ে স্যার বলেই সম্মোধন করে।এমন সময় দৃষ্টি কিছুটা দূরে ডান দিকে যেতেই লিয়াকে দেখতে পায়।লিয়া আর অরিন ফারহানের রুম থেকে বের হচ্ছে। লিয়া আগে অরিন পেছনে।অরিন দরজার দাড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আরেক নজর ফারহানের দিকে চায়।লিয়া কয়েক কদম এগিয়ে ছিলো।ফলে লিয়াকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।অরিন পেছনে থাকায় লিয়ার আড়ালে পরে। লিয়াকে ফারহানের রুম থেকে বের হতে দেখে জারিফের কপালে জ্যামিতিক রেখার ন্যায় কয়েকটা সরু ভাঁজের সৃষ্টি হয়।লিয়া ফারহানের রুম থেকে বের হচ্ছে।তবে ভাবে কোনো দরকার ছিলো হয়তো।বিয়ষটা নিয়ে জারিফ আর বেশি ঘাটে না।ফের স্যারের সাথে কথায় মনোযোগ দিয়ে যেতে থাকে।
.
পরেরদিন,,
আজকে লিয়াদের প্রাকটিক্যাল ক্লাস আছে। প্রথম দিন হওয়ায় ক্লাস টিচার স্টুডেন্টদেরকে সাথে করে নিয়ে যায়।ফারহান স্টুডেন্টসদেরকে সাথে করে এগ্রোনমির ফিল্ডে নিয়ে যায়। এগ্রোনমিতে প্লট করা আছে। কয়েকটি দলে ভাগ করে দেওয়া হয়।সব দলের টার্গেট থাকবে সর্বোচ্চ প্রোডাকশন।

অরিন ফারহানের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আবদার করে বলল,”স্যার আমাকে আর লিয়াকে কিন্তু একদলে রাখবেন।না হলে আমি কিন্তু খেলবো না।উপসস সরি! প্রাকটিক্যাল ক্লাসে কোনো কাজই করবো না, হুঁ।”

লিয়া একহাতে কপালে হালকা করে চা’প’ড় দিলো।অরিনের এহেন বাচ্চামো কথায় ফারহান হেসে ফেলল।কথা শুনে মনেহয় মেয়েটার মধ্যে এখনো ম্যাচিউরিটি আসেনি।আর নয়তো ইচ্ছে করে এমন ফান করে।এসব ভেবে মাথা ঝা’ড়’ল ফারহান। কিয়ৎকাল পরে বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে।আমি বলে দিবো। তোমাদের দু’জনকে একসাথে যাতে রাখে।”

“থেংকিউ স্যার।এইজন্য তো আপনাকে এতো ভালোবা

এতটুকু বলে অরিন জিহ্বায় কামুড় দিলো।লিয়া আড়ালে মুখ টিপে হাসতে থাকে।ফারহানের নজর,ধ্যান লিয়ার দিকে থাকায় ফট করে অতটা খেয়াল করেনি অরিনের কথা।তবে কয়েক সেকেন্ড পরে মস্তিষ্কের নিউরনে সাড়া জাগাতেই চোখ বড়বড় হয়ে যায়।অরিন একহাতে মাথা চুলকিয়ে জোর করে হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল,

“আপনি আমাদেরকে কত্ত হেল্প করেন। এইজন্য তো আপনাকে আমি আমার ফেবারিট টিচার ভাবি।এখন অব্দি পছন্দের টিচারের তালিকায় আপনিই শীর্ষে আছেন স্যার।”

ফারহান সৌজন্যমূলক হাসল। অতঃপর কিছুটা দূরে দাঁড়ানো ডেমোনেস্টেটরের দিকে এগিয়ে গেলো।যিনি কেবলই এখানে আসতে নিচ্ছিলেন। ফারহান স্বাভাবিকভাবে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলতে থাকে।

অরিন আকাশের দিকে চাইল।আবার লিয়ার দিকে চেয়ে ঠোঁট উল্টে বলল,
“ধ্যাত!কেনো যে টেকনিক্যাল ভার্সিটিতে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম।এতোএতো ক্লাসের প্যারা ভালো লাগে না।আবার শুরু হলো প্রাকটিক্যাল। উফ্ফ!এই লিয়া এই কাঠফাঁটা রোদ্দুরের মধ্যে আমি শেষ হয়ে যাবো।ও আম্মু!বাসায় থাকলে এতক্ষণ এসির মধ্যে পায়ের উপর পা তুলে বসে ফোন স্ক্রল করতো তোমার মেয়ে।সেখানে কিনা চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তোমাদের একমাত্র আদরের মেয়েকে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে।শুধু কি তাই!এখন তো কৃষকের মতো ক্ষেতের কাজ করতে হবে।সব কিছু জেনেশুনে তুমি এ কোথায় ভর্তি হতে আমাকে ইন্সপায়ার্ড করেছিলে।”

অরিন বিলাপের সুরে এক্টিং করে কথাগুলো বলে।লিয়া কপাল কুঁচকে বলল,”তোর এখানে না থেকে।তোর থাকা দরকার ছিলো ভেটেরিনারি সায়েন্সে। সেখানে থাকলে গ’রু’র একবার একটা লাথি খেলে তোর মাথার ছেঁ’ড়া তাঁর গুলো আরেকটু ছিঁ’ড়’তো।আর নয়তো ধাক্কায় জয়েন্ট লাগতো। তাহলে যদি একটু বুদ্ধি শুদ্ধি হতো।উফ্!এসব কিছু না হলেও আমি অন্তত বাচতাম।সারাদিন কানের পাশে এরকম ন’ষ্ট ঘ্যাড়ঘ্যাড়ে টেপ রেকর্ডারটা অন্তত বাজতো না।”

অরিন একগাল হেসে বলল,”আরে জানু।তুই ক্ষেপছিস কেনো?হুয়াই?আ’ম জোকিং ইয়ার।আমি তো মজা করে এসব বলছিলাম।এই দেখ বাঙালি কৃষক কাকে বলে?কত প্রকার?ও কি কি?সব আজ প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে প্র্যাকটিক্যালি দেখিয়ে দেবো, হুঁ।আমি একজন খাঁটি বাঙালি কৃষক,হু।”

এই বলে অরিন পায়ের দিকে জিন্স প্যান্টটা গুটাতে থাকে।লিয়া তড়িঘড়ি করে বলে উঠল,”এই কি করছিস কি?হ্যা।ছেলেরাসহ,ডেমোনেস্টেটর স্যার তারপর সাহায্যকারী চাচারা পর্যন্ত কাজ ফেলে তোর ফর্সা লোমহীন পা দেখতে থাকবে।কতদূর অব্দি গুটাচ্ছিস? খেয়াল আছে।”

অরিন ধপ করে গোটানো অংশটা ফের গোড়ালি পর্যন্ত রাখল। ঠোঁট গোল করে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে নিয়ে একদম কৃষক কৃষক ফিলিংস আনতে চেয়েছিলাম।বাট তোর কথায় আর ফিলিংস আনতে পারলাম না। গোড়ালি থেকে মাত্র তিন ইঞ্চি উপর অব্দি হতে না হতেই তুই তো হইহই করে উঠলি।”

লিয়াদের দলের একটি মেয়ে ওদের দু’জনকে ইশারা করে আসতে বলল।লিয়া পায়ের জুতাটা খুলতে থাকে।লিয়া একটু হামু দেয়।এক পায়ের সাথে অপর পা একটু উঁচু করে রেখে জুতার বেল্ট খুলতে থাকে।

ফারহানের নজর এমন সময় লিয়াদের দিকে যায়। লিয়া প্লাজুটা কিঞ্চিৎ তুলে পায়ের জুতা খুলছে।লিয়ার পায়ে থাকা পায়েলটা রোদের আলোতে ঝলমল করছে।লিয়ার ফর্সা পায়ে চমৎকার দেখাচ্ছে।পায়েলটার সাদা পাথরগুলো রোদের আলোতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।পায়েলটা বেশি ডিজাইন করা নয়।তবুও এই সাদা পাথরগুলো যেনো পায়েলটাকে নজরকাড়া করে তোলে সবার কাছে।পায়েলটার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়।আর যার পায়ে পায়েলটার স্থান নয়তো সেই মানবীর জন্যই আরো বেশি নজরকাড়ে সবার কাছে। ফারহান দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়।

লিয়া জুতা খুলে রাখতে থাকে।এমন সময় প্লাজুর থেকে এড়ানো একটা সুতা পায়েলের সাথে আঁটকে যায়।লিয়া ছাড়ানোর জন্য হেঁচকা টান দেয়।সুতা ছিঁড়ে আসে।সাথে পায়েলের অংশও কে’টে যায়।তবে সামান্য একটু অংশ বেঁধে থাকে। যেকোনো সময় খুলে পড়তে পারে এমন অবস্থায় আছে। লিয়া আর অতটা খেয়াল করেনি।গরমে লিয়ার কপাল বেঁয়ে ঘাম ঝরছে।সাথে গলাটাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। লিয়া জিহ্বা দিয়ে ঢোক গিলে গলাটা ভিজে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা চালালো।এক আঙ্গুলের সাহায্যে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল,

“আমার তো এখনই প্রচন্ড পানির তৃষ্ণা পেয়েছে। উফ্!গলা শুকিয়ে আসছে।”

অরিন একহাত উঁচু করে খানিকটা দূরে দেখিয়ে বলল,”ঐযে ঘাসের উপর আমার ব্যাগ দেখতে পাচ্ছিস ।আমার ব্যাগে দেখ ওয়াটার বোটল আছে। যা এক দৌড়ে খেয়ে আয় কেমন।”

লিয়া অবশেষে পানি খেতে আসল। বোতলটা উঁচু করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটায়।বোতলটা ব্যাগে রেখে আসতে থাকে।খালি পায়ে হাঁটতে একটু কষ্ট হচ্ছিলো।পরে থাকা ছোটছোট পাথর,ইটের কিংবা মাটির টুকরায় ব্যাথা লাগছিলো।এমন সময় একটা ইটের টুকরায় হোঁচটও খায়।ওদিকে অরিন তাড়া দিচ্ছে।তাই কোনোদিকে না তাকিয়ে লিয়া হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়।

কিছুক্ষণ পর, ফারহান শুধুশুধু আর দাঁড়িয়ে না থেকে চলে যাবে মনঃস্থির করে।ফারহান প্রস্থান করতে থাকে।কয়েক পা হাটার পর ঘাসের উপর কিছু চিকচিক করতে দেখে। কৌতুহলি নজরে ফের ভালো করে চাইল।এমন সময় পাথরের পায়েল দেখতে পায়। পাথরগুলো দেখে মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে মনে করে এইরকম পাথর যুক্ত পায়েল কোথায় দেখেছে। পরক্ষনেই মনেহয় লিয়ার পায়েই তো। সম্ভবত এটা লিয়ারই হবে। সযত্নে পায়েলটা মাটি থেকে তুলল। ফারহান মনেমনে আওড়ায়,এটা নিশ্চয় লিয়ারই হবে। অতঃপর ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে চাইল। অনেকটা দূরত্বে লিয়াকে দেখল।সবার মাঝে লিয়া আছে তাই ভাবল,একদম শিওর-ও না পায়েলটা লিয়ারই কিনা।কারন একই রকম পায়েল আরো কারো থাকতেই পারে।তাই এখন সবার মাঝে না বলাই বেটার হবে।পরে পাছে লিয়া অরিনের সাথে দেখা হলে পায়েলটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা যাবে লিয়ার কিনা।এই ভেবে ফারহান পায়েলটা পকেটে রাখল।আর কাজ থাকায় দ্রুত চলে যায়।

প্রাকটিক্যাল ক্লাস শেষে লিয়া অরিন একসাথে হেঁটে আসছে। অরিন ঢকঢক করে পানি খেয়ে বোতলটা ব্যাগে রাখতে যাবে।সেই সময় লিয়া ইশারা করে পানির বোতলটা চাইল।লিয়া একহাত বাড়িয়ে দিল। অরিন লিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

“বাহ্!লিয়া তোর আংটিটার ডিজাইন বেশ সুন্দর তো।আমি ভেবেছি সেইম ডিজাইনের আংটি অর্ডার করব।আর দেখি দেখি আংটিটার উপরে কিছু লেখা মনে হচ্ছে।”

লিয়া স্মিত হেসে হাতটা অরিনের সামনে মেলে ধরল।ভাব নিয়ে বলল,”এটা আমার বরের দেওয়া গিফট।আমার বরের পছন্দ করা । সুন্দর তো হতেই হবে।”

জারিফ’স ওয়াইফ লেখাটা মুখে আওড়ালো অরিন। অতঃপর চঞ্চল গলায় বলল,”তারমানে তোর বরের নাম জারিফ।রাইট?”

লিয়া দুদিকে ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয়।অরিন ঠোঁট বাঁকিয়ে ফের বলল,”কবে মিট করিয়ে দিবি তোর বরের সাথে?এত সুন্দর যার পছন্দ!না জানি সেই মানুষটা দেখতে কত্ত সুন্দর!”

লিয়া নিঃশব্দে হাসল।অধর প্রসারিত করে বলল,
“আগামী রবিবার। বিয়ের কার্ড অলরেডি ছাপাতে দেওয়া হয়েছে।এই শুক্রবার দেবে হয়তো।রবিবার ক্যাম্পাসে এসে বিয়ের কার্ড তোকে দেবো।সাথে আমার বরকেও তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।”

“ওকে জানু।আমি তো খুব এক্সাইটেড। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম কাংখিত রবিবারের।”

ক্লাস শেষ করে লিয়া ক্যাম্পাসের গেইটের সামনে দাঁড়ায়।অরিন লিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে রিকশা নিয়ে চলে যায়।লিয়াকে নিতে ড্রাইভার এখনো আসেনি।লিয়া ফোন হাতে কল দিতে যাবে এমন সময় ঠান্ডা গলার আদেশ স্বরুপ বার্তা এলো,

“ড্রাইভার আঙ্কেল আসবে না।চলো আমি তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি।আমার সাথে চলো।”

লিয়া ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে জারিফকে দেখতে পেলো।সাদার উপর কালোর চিকন বর্ডারের শার্ট,কালো প্যান্ট ইন করে পরা। কপালের উপর স্লিকি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে। খোঁচাখোঁচা দাঁড়ির মাঝে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।এই লুকে জারিফকে খুব আকর্ষণীয় লাগছে।লিয়া জারিফের মুখায়বে শান্ত চাহনিতে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। কিয়ৎক্ষন পরে লিয়া নিজেকে ধাতস্থ করে প্রশ্ন করে উঠলো,

“আঙ্কেল আসবে না।সে খবর আপনি কিভাবে জানলেন?”

জারিফ লিয়ার পাশে দাঁড়ালো। ত্যাড়া করে বলল,”যা বললাম তাই করো।আমি কিভাবে জানলাম সেটা তোমার না জানলেও চলবে।”

লিয়া মুখ বাকালো।দুইহাত বুকে গুঁজে স্ট্রেইট দাঁড়াল।কিছু বলবে তার আগেই জারিফ ধমকের সুরে বলল,”এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি?তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমাকে বাসায় ফিরতে হবে।আমার কাজ আছে। তাই দেরি না করে চলো।”

কথাটা বলে জারিফ হনহন করে গাড়ির কাছে হেঁটে যেতে থাকে।লিয়া অবাক হলো।বুকে গুঁজে হাত দুইটা ঝা’ড়ি দিয়ে ফেলল।একটু রা’গ হলো জারিফের বিহেভে। একবার মনে হলো রা’গ করে যাবে না জারিফের সাথে।আবার কিছু ভেবে হাঁটা ধরল।জারিফের পিছুপিছু হাঁটতে লাগল।লিয়াকে ভাবাচ্ছে জারিফকে কেমন জানি গম্ভীর লাগছে।উনি কি কোনো কারনে রে’গে টেগে আছেন নাকি?লিয়ার ভাবনার মাঝেই জারিফ গাড়ির ডোর খুলে লিয়াকে বসতে বলল। লিয়া গাল ফুলিয়ে উঠে বসল।জারিফ অপর পাশে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসল।লিয়া জারিফের দিকে তাকালো না।জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইল।জারিফ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে শান্ত কণ্ঠে বলল,

“এরপর থেকে তুমি আমার সাথেই আসবে।সকালে রেডি হয়ে নিচে থাকবে।আমি তোমাকে নিয়ে আসবো।আবার দিয়ে আসবো।”

লিয়া অবাক হলো।তবে সেটা বাইরে প্রকাশ করলো না। দৃষ্টি অন্যদিকে রেখেই বলল,”হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত।কারনটা জানতে পারি?”

জারিফ দক্ষতার সাথে গাড়ি চালাচ্ছে। দৃষ্টি গাড়ির সামনের কাঁচ ভেদ করে রাস্তায়।পাশে বসা লিয়াতে সম্পূর্ন মনোযোগ তার। তড়িৎ বলল,”হঠাৎ নয়। প্রথম থেকেই তোমাকে বলেছিলাম। বাট তুমিই না করেছিলে।আর সেই সময় আমার এক্সাম ছিলো।তারপর থিসিসের ডাটা কালেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।তাই জোর করে বলিনি।তবে এখন যেহেতু আপাতত বাড়তি পেশার নেই।তাই ভাবছি নিজের বউয়ের সব দায়িত্ব ধীরে ধীরে নিয়েই নেই।”

লিয়া কিছু না বলে চুপচাপ ঠাঁই বসে রইল।বাকি রাস্তা দু’জনে নিশ্চুপ রয়।বাসার সামনে গাড়ি এসে থামে।জারিফ বলল,”আমি আন্টিকে ফোন দিয়ে ড্রাইভারকে আসতে নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম লিয়া আমার সাথে আছে।আমি দিয়ে যাবো।এখন তোমার কাজ থাকবে তুমি বাসায় আমার কথা বলবে।আমি যখন এখন ফ্রি আছি।তাই আমিই একেবারে তোমাকে নিয়ে ভার্সিটিতে যাবো।একটু ঘোরা হবে তবে ব্যাপার না।”

লিয়া স্বাভাবিকভাবে”ঠিক আছে” বলে। অতঃপর জারিফকে ভেতরে আসতে বললে, জারিফ না করে। অন্যসময় আসবো বলে।লিয়াও আর জোর করে না।
.
সন্ধ্যার পর ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়ে টিভি দেখছিলো নীল।এমন সময় নাতাশা ড্রয়িং খাতা আর বক্স হাতে এসে দাঁড়াল।নীল শুয়ে থেকেই নাতাশাকে দেখে দুষ্টুমির স্বরে বলল,”কি খবর নাতাশা বেবি।আজকেও বোধহয় বাতাসা পাওনি।সেই দুঃখে মুখটা ভার করে রেখেছো বোধহয়।”

নাতাশা শব্দ করে বক্সটা টি টেবিলের উপর রাখল।নাক মুখ কুঁচকে টেনেটেনে বলল,”উফ্ফ!নীল মামু আবার বাতাসা।”

নীল এবার উঠে বসল।নাতাশার গালটা একহাতে টেনে দিয়ে বলল,”আচ্ছা আর বলবো না বাতাসার কথা।তো বলো তোমার মুখটা এরকম বাংলা পাঁচের মতো হয়ে আছে কেনো?কেউ তোমাকে ব’কে’ছে?আমাকে নামটা বলো আমি খুব করে তাকে ব’কে দেবো।”

নাতাশা একবার ডানদিকে তো আবার বামদিকে ঘাড় ঘুরালো।না বোধক উত্তর দিলো। তারমানে কেউ ব’কে’নি।”

নীল ফের প্রশ্ন করল,”তাহলে কি হয়েছে সোনা?মন খা’রাপ দেখাচ্ছে তোমার।”

নাতাশা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,”ড্রয়িং করতে পারছি না।খালামনির পরীক্ষা।খালামনি পড়ছে।তাই খালামনিকে ডিস্টার্ব করিনি।এদিকে কথা খালামনিকে বললাম সে বলল পারবে না।মামাও তো বাসায় নেই। নানুমনি রান্নারুমে কাজ করছে।এখন আমাকে ড্রয়িংটা শেখাবে কে?”

নীল সোজা হয়ে বসল।নাতাশার হাত ধরে নিয়ে নিজের পাশে বসালো।হাসিমুখে বলল,”আমি আছি তো।আমি ড্রয়িং শেখাচ্ছি।কি আঁকতে হবে একবার বলো। আমি দারুণ করে এঁকে দিচ্ছি।”

নাতাশা চোখ উপরের দিকে উল্টিয়ে বলল,”তুমি?”

নীল একটু অবাক হলো। এইটুকু বাচ্চা মেয়েটাও আমার উপর ভরসা করতে পারছে না।এ জীবন রেখে আর কি লাভ। উফ্!যেখানে চুল পরিমাণও দাম নেই।আমার তো কচু গাছের সাথে ফাঁ’স দিয়ে ম’র’লেও এই দুঃখ মিটবে না। এসব কথা মনেমনে আওড়ায় নীল। অতঃপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

“কি আঁকতে হবে আগে বলো। আঁকিয়ে দেখিয়ে দেই।নীল কেমন ড্রয়িং পারে।”

“উড়ন্ত পতাকা আঁকতে হবে।”

স্কেল, পেন্সিল নিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে আঁকতে থাকে নীল।রঙ শেষ করে নীল নিজেই চোখ করে দেখতে থাকে।এমন সময় কলিংবেল বাজায় জাহানারা বেগম গিয়ে দরজা খুলে দেন।জারিফ সন্ধ্যার আগে একটু কাজে বাইরে গিয়েছিলো।এখন ফিরল। ড্রয়িংরুমে নীল আর নাতাশাকে দেখে সোফায় এসে ধপ করে বসল। নাতাশা ড্রয়িং খাতাটা জারিফের সামনে মেলে ধরল। ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,

“মামা।এটা নীল মামু এঁকেছে।কেমন জানি ঠিক লাগছে না।”

জারিফ নীলের দিকে একবার চাইল।নীল মুখটা কাচুমাচু করল।জারিফ নাতাশাকে বলল,”আচ্ছা ঠিক আছে।এটা রাখো।আমি করে দিচ্ছি।”

জারিফ নতুন করে আঁকতে থাকে।নীল এঁকেছে উড়ন্ত পতাকার মাঝে ঢেউ দেয়নি। স্কেল ধরে সোজা করে এঁকেছে। জারিফ নাতাশাকে দেখিয়ে বলছে আর আঁকছে। স্কেল দিয়ে খুঁটি একে।খানিক দূরতে দুইটাকরে একটু বাঁকিয়ে টান দিয়ে বাঁশের গিরা নাম বলছে।নাতাশা উৎসুক হয়ে দেখছে।খুটিতে কালার করার সময় জারিফ হলুদ রঙ নেয়।নীল তড়িৎ বলে উঠলো,
“এই ব্রো বাঁশ সবুজ রঙের থাকে না।তুই হলুদ রঙ দিচ্ছিস কেনো?এই ক্ষেত্রে তুই আমার থেকে পিছিয়ে পড়লি।দেখ আমি কিন্তু বাঁশে সবুজ রঙ দিয়েছি। নিশ্চয় আমারটা ঠিক।”

জারিফ চোখ তুলে নীলের দিকে চেয়ে শান্ত গলায় বলল,”পাকা বাঁশের রঙ কি কালার হয়? সাধারনত পাকা বাঁশই থাকে। কাঁচা বাঁশ নয়।কারন পাকা বাঁশই সবাই ব্যবহার করে কাঁচা বাঁশের থেকে।”

“আমার ড্রয়িং বইয়ে তো ইয়োলো কালারই আছে নীল মামু।তুমিই তো উল্টাপাল্টা রঙ করেছো।”

নাতাশা দুইহাত কোমড়ে রেখে বলল।নীল ফের বলল,”আরে আমারটা বাঁশ না ভেবে ভাবো লোহার তৈরি খুঁটি।আর লোহার তৈরি খুঁটিতে যেকোন রঙ দিলেই হয়।মূল কথা তো পতাকাটা কিছুর সাথে আঁটকে রাখা। সেখানে একটা কিছু হলেই হলো।”

“হুম।সেখানে আমার মনেহয় বাঁশের জায়গায় ব্যাম্বুর মতো লম্বা দেখতে আমাদের নীলের সাথে আটকে রাখলে আরো ভালো হবে।”

কথাটা বলতে বলতে জারা এগিয়ে আসে।নীল চোখ পাকিয়ে জারার দিকে তাকাল।জারা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সোফায় ধপাস করে বসল। এরমধ্যে জাহানারা বেগম এসে জারিফকে বললেন,

“জারিফ।”

জারিফ ছোট করে বলল,”হ্যা মা বলো।”

জাহানারা বেগম সিঙ্গেল সোফায় বসলেন।বললেন,”কাল বা পরশু জুয়েলার্সে যাবো ভেবেছি। তাই বলছি লিয়াকে নিয়ে আসিস,কেমন?ওর পছন্দ অনুযায়ী সব কিছুর অর্ডার দিয়ে আসবো।হাতে তো আর বেশি সময় নেই। এরমধ্যে একএক করে সব কেনাকাটাও করে ফেলতে হবে।”

“আচ্ছা।”
.
পরেরদিন,
ডীন স্যার সকল টিচারদের নিয়ে***মিটিং এ বসেছিলেন। মিটিং শেষে ডীনের ভবন থেকে সবাই একএক করে বাইরে যাচ্ছেন।কারো কারো ক্লাস থাকায় ক্লাস নিতে চাচ্ছে।কেউ কেউ নিজের কক্ষের উদ্দেশ্যে। মিটিং শেষে কবিতা আর ফারহান পাশাপাশি হেঁটে আসছে।আর বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে।এমন সময় জারিফকে দেখতে পেয়ে কবিতা আগ বাড়িয়ে কথা বলল।জারিফ সৌজন্যতার খাতিরে দাঁড়িয়ে পড়ল।কবিতা ফারহান কে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দিল। ফারহানের সাথে কবিতার দেখা সাক্ষাৎ হলেই হাই,হ্যালো কুশলাদি বিনিময় হয়।ফারহানকে দেখে জারিফ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল।এই একটা ব্যক্তিকে কেনো জানি জারিফের কাছে এলার্জি লাগে।জমিজমা, টাকা-পয়সা বা কথাকাটাকাটি কোনো কিছু নিয়েই বিরোধ নেই।তারপরেও অজান্তেই ফারহানকে দেখলে বি’রক্ত লাগে জারিফের।কয়েকবার লিয়ার সাথে কথা বলতে দেখার পর থেকেই এই রকম অটোমেটিক বিরক্ত বোধ করে জারিফ ফারহানকে।লিয়ার সাথে অরিনও থাকে তারপরেও জারিফের কাছে বিষয়টা ভালো লাগে না। জারিফ জোর করে মুখে হাসির রেখা টেনে আনে। স্বাভাবিক কথাবার্তা বলতে থাকে।এমন সময় ফারহানের পকেটে থাকা ফোনটা ভাইব্রেট থাকায় কেঁপে উঠল। ফারহান পকেট থেকে ফোনটা বের করতে গিয়ে ফোনের সাথে পকেটে থাকা পায়েলটা বের হয়ে নিচে পরে যায়। তড়িঘড়ি করে ফারহান পায়েলটা তুলতে নেয়।জারিফের দৃষ্টি যায় নিচে পড়া পায়েলের দিকে।ফারহান দ্রুত তুলে ফের পকেটে রাখতে নেয়। কবিতা টিপ্পনি কে’টে বলল,

“কি ব্যাপার? মিস্টার ফারহান। মেয়েদের পায়েল আজকাল পকেটে নিয়ে ঘুরছেন।বিয়ষটা তো মোটেই সুবিধার ঠেকছে না। দ্রুতই বিয়ের ইনভাইট পাচ্ছি নাকি।নাকি ডুবে ডুবে জল খেয়েই যাবেন।কোনটা?”

“দোয়া করবেন।যাতে দ্রুত ইনভাইট করতে পারি। আচ্ছা আমি একটু আসছি।”

হাতের ফোনের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে ফারহান দ্রুত বিষয়টা এড়িয়ে গেল।কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে ফারহান চলে যেতে থাকে। প্রথমে মিটিং থাকায় আগে ডীন স্যারের এখানে আসে। এখনো লিয়া বা অরিন কারো সাথেই দেখা হয়নি ফারহানের।তাই পায়েলটা ফেরত দিতে পারেনি এখনো।জারিফের যেনো বিস্ময় কাটছেই না।জারিফের তীক্ষ্ণ নার্ভ বলছে পায়েলটা হুবহু লিয়ার পায়েলের অনুরুপ।এটা কি লিয়ার?লিয়ার হলে ফারহানের কাছে গেলো কিভাবে?এই প্রশ্নগুলো জারিফের মনে উঁকি দিতে থাকে।

.
জারিফ নিজের কক্ষে গিয়ে চেয়ারের হেডে ঘাড়টা রাখল। বারবার ভাবতে লাগল। অবশেষে জারিফ সিদ্ধান্ত নেয়।আগে লিয়ার কাছ থেকে পায়েলের খবর জানতে হবে।লিয়ার পায়ে পায়েল আছে কি নেই?কারন একই পায়েল আরো অনেকের থাকতেই পারে। জারিফের যেনো আর তর সইছে না। জারিফ একজন কর্মচারীকে দিয়ে লিয়াকে ডাকতে পাঠায়।লিয়ার ফোনে কল দেয়। কিন্তু রিসিভ হয়না।হয়তো ফোন ব্যাগে সাইলেন্ট করা আছে।কারন ভার্সিটিতে আসলে লিয়া সবসময় ফোন সাইলেন্ট রাখে এটা জারিফ জানে।

একটা ক্লাস শেষে লিয়া আর অরিন বসে এটাসেটা কথা বলছে।লিয়া আফসোস করে বলছে তার পায়েলটা গতকাল বাসায় যাওয়ার পর থেকে আর পায়ে দেখতে পায়নি।হয়তো বাইরেই হারিয়েছে। এমন সময় একজন এসে বলল,

“এনাবুল জান্নাত খাঁন লিয়া কে?”

লিয়া উঠে দাঁড়াল।বলল,”আমি।”

“আয়মান জারিফ স্যার আপনাকে ডেকেছেন।”

কথাটা হলে লোকটা চলে গেলো।কিছু স্টুডেন্ট বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প গুজব করছে।কেউ আবার রুমেই।লিয়ার পিছন থেকে ব্যাকা করে এক মেয়ে বলে উঠল,

“এদের হয়েছে টা কি?গতকাল ফারহান স্যার ডাকল।আজকে জারিফ স্যার।সব ইয়াং টিচাররা এ’কেই কেনো নিজ চেম্বারে ডাকছে।ব্যাপার স্যাপার কি?”

“কিছু মেয়েদের চরিত্রও এরকম।সবাইকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানো।সব ইয়াং স্যারেরা রুপ দেখে ফিদা হয়েছে হয়তো।”

কথাটা বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল মেয়ে দুইটা।রাগে লিয়ার চোখমুখ লাল হয়ে যায়।

চলবে,,,

(এমনিতেই আমি অনিয়মিত।আবার গল্পটা কেমন জানি খাপছাড়া হয়ে যাচ্ছে।তাই ভেবেছি টেনে পর্ব না বাড়িয়ে দ্রুত বিদায় নিবো।বাকি যে কয় পর্ব হবে। তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করবো।ইডিট করা হয়নি ভুল থাকতে পারে। মানিয়ে নিয়েন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here