ময়ূরাক্ষী #তাফসিয়া_মেঘলা ঊনিশ

0
341

#ময়ূরাক্ষী
#তাফসিয়া_মেঘলা

ঊনিশ

শাহওয়াজ ধপ করে বিছাকানায় শুয়ে পরলো৷ কুঁচকে গেলো পুরো টান টান বিছানা টা৷ ইশ কত্ত দিন পর নিজের ঘরে এলো৷ মধুলতার রাগ কিলো এই ছেলে বিছানায় ঠিক ভাবে বসতেই পারে না৷ মায়ের রাগ দেখতে বেশ লাগে শাহওয়াজ এর৷
শাহওয়াজ হাতের উপর ভর দিয়ে শুয়ে বললো,
“আটাশ বছর চলছে মা৷ ঠিক সময় বিয়ে দিলে আমার ছেলে মেয়েরো বিয়ে দিতাম এত দিনে আর তুমি এসব বলছো?”
মধুলতা নাকমুখ কুঁচকালো ছেলের কথা শুনে৷ ছি ছি এসব কি কেউ মা কে বলে?
হায় আল্লাহ এ ঠোঁট কা’টা ছেলে তার পেট থেকে হয়েছে? নির্লজ্জ ছেলে একটা৷ নির্ঘাত হসপিটালে গরমিল হয়েছে৷ ফুসে উঠলো মধুলতা ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে চিরনিটা নিয়ে তেড়ে আসবে হুট করে শাহওয়াজ এর ফোন বেজে উঠলো৷ মধুলতা থামলো, সবে মাত্র এলো ছেলেটা এখন আবার কার ফোন৷
মায়ের থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি করে ফোন টা উঠালো শাহওয়াজ৷ এত্ত বড় হয়েছে মা তাকে এখনো মারে তাও হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে৷
কিন্তু ওপাশ থেকে যা শুনলো মোটেও প্রস্তুত ছিলো না৷ ঘাম ছুটলো কেমন শরীর থেকে৷ তড়িৎ গতিতে বললো,
“আমি বের হচ্ছি এক্ষুনি!তুই একটু সামলে নে ভাই৷ ”
বলেই ফোন রাখলো উঠে কোনো মত ওয়ালেট টা পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে বললো,
“আম্মু আমায় গ্রামে যেতে হবে একটু৷ চৌধুরী বাড়িতে৷”
মধুলতা বুঝলো না কিছু৷ এই সবে এলো তার জানামতে আজ অনুষ্ঠান যেহেতু অনুষ্ঠানে থাকতে পারেনি ওখানে এখন আর কাজ ও নেই৷ নিশ্চয়ই বিয়েও এখন না? মধুলতা গম্ভীর গলায় শুধালো,
“বলছো কি? আবার ওবাড়িতে কেন যাবে?”
শাহওয়াজ গাড়ির চাবি পকেটে ঢুকিয়ে বললো,
“রুপা আত্ম’হ’ত্যা করেছে মা৷”

।।

হসপিটালের করিডোরে বসে আছে সবাই৷ দাম্ভিক আকবর চৌধুরীর মুখশ্রীতে চিন্তার ছাপ৷
মেয়েটা এ কি করে বসলো? বিয়ে ভে’ঙেছে তাই আ’ত্মহ’ত্যা করলো শেষে? এত বোকা কি করে হলো? সে তো তার মেয়ে কে বেশ বুঝদার, বুদ্ধিমত ভেবেছিলো৷ মধুলতার মত ভেবেছিলো কিন্তু মেয়েটা তো উলটো৷
মধুলতা নিজের স্বামী কে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্যের হয়ে যেতে দেখেছে কিন্তু তবুও খেই হারায়নি৷
এক বুক কষ্ট আকবর চৌধুরীর মনে৷ মেয়েটা যে তার অনেক আদরের কিন্তু ওইযে পুরুষদের যে কাঁদতে মানা৷ কষ্ট প্রকাশ করতে মানা৷
আজ রেজওয়ান ছেলেটা বাড়িতে না থাকলে কেলেংকারী হয়ে যেতো৷ তখন কোনো ছেলেই বাড়িতে ছিলো না৷

হসপিটালে নিয়ে আসা হয়েছে আরো দুই ঘন্টা আগে৷ রেজওয়ান এর সাদা টি শার্ট টা র’ক্তাক্ত হয়ে আছে৷ সেই ভয়ংকর দৃশ্য এখনো চোখে ভাসছে৷
মেয়েটা চোখের সামনে থেকে ধপ করে নিচে পরে গেলো৷ কয়েক মিনিটের জন্য পৃথিবীটা থমকে গিয়েছিলো৷ কখনো নিজের চোখে মানুষের এমন করুন দৃশ্য দেখেনি রেজওয়ান৷

সে সময় ও মেয়েটার মুখ জুরে মলিনা আর সহস্র মায়া ছিলো৷ বাগানের দিক দিয়ে পরেছে ভাগ্য ভালো আরেকটু নড়বড়ে হলেই বাগানের সাইডের পাথর বিছানো সেখানে পরলে হয়তো মন্দ কিছু হয়ে যেতো৷ মাটিতে পরেছিলো, মাটিটা পানি পরায় নরম ছিলো৷ গলগল করে ভেসে গেছিলো গায়গাটা৷ র’ক্তাক্ত দেহটা যেন চোখে ভাসছে রেজওয়ান এর৷ যেন মাত্রই ঘটলো, বক্ষ এখনো কম্পিত৷
দৌড়ে যখন নিচে গেলো মেয়েটা র’ক্তাক্ত অবস্থায় কেমন কাতরাচ্ছিলো আর বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি করছিলো৷ বার বার বলছিলো,
“আমায় বাঁচান আমি বাঁচতে চাই৷”
তা ভেবেই চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো৷ মেয়েটার মুখ বার বার চোখে ভেসে উঠছে৷
এত কেন মায়া হচ্ছে? এত কেন কষ্ট হচ্ছে? এ কি শুধুই মানবিকতা? নাকি অন্য কিছু?
মেয়েটা যেন আস্ত মায়াবতী! মেয়েটি যতটা নরম দেখায় মনবল ততই শক্ত৷ এমন শক্তপোক্ত মেয়ে দেখেনি কখোনো রেজওয়ান৷
এ অবস্থাতেও মনের জোর ছিলো ব্যাপক মাথা শরীর থেকে অনবরত র’ক্তপাত হচ্ছিলো তবুও যতক্ষণ পেরেছে চোখ খোলা রেখেছে৷ জোরে জোরে শ্বাস নিয়েছে৷ এ অবস্থাতেও তার ভাইজানের প্রতি ভালোবাসা অগাধ ছিলো বার বার বলছিলো,
“ভাইজান কে বলবেন না রেজওয়ান ভাই৷”
জ্ঞান হারানোর আগেও বলছিলো,
“আমার ময়ূর কে আমি দেখলাম না একবার ও৷ তাদের কি আমি আর দেখবো না?”
তার পরই জ্ঞান হারায় মেয়েটি৷ সে যেন তীব্র চেষ্টা চালাচ্ছিলো হসপিটালে আসা অব্দি চোখ খোলাই রাখতে কিন্তু পারেনি৷ ব্যার্থ হয়েছে৷ শাহওয়াজ এর সাথে বেশি সময় থাকায় রেজওয়ান অনেক রোগীকে দেখেছে অল্পতেই ভে’ঙে পরতে৷ ভেবেই তপ্ত শ্বাস টানে রেজওয়ান৷ বক্ষে কেমন সূক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব হচ্ছে এ ব্যাথা কিসের সে জানে না৷

আর বাড়ির মানুষ দের দেখে অবাক না হয়ে পারে না রেজওয়ান৷ পরার সাথে সাথে সে না বলার আগেই মানুষ ধরে নেয় আত্মহ’ত্যা করেছে মেয়েটা৷
যদিও এ ব্যাপারটা তার কাছে ধোয়াসার৷ সে ও জানে না! বোধগম্য হচ্ছে না কিছু৷ মেয়েটাকে স্বাভাবিক লেগেছে মনে হয় না এটা আত্ম’হ’ত্যা৷ যে মেয়ের চোখে মুখে বাঁচতে চাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা সে কি আত্ম’হ’ত্যা করে?
আর যে আত্ম’হ’ত্যা করে সে কি বাঁচতে চায়?

আহারে জীবন! এ জীবনের জন্য কত্ত মায়া তাই না? নিজেকে কেই বা পরিপূর্ণ ভালোবাসতে পারে? আদৌও কি মানুষের নিজেকে নিয়ে ভাবা হয়? মৃ’ত্যু যখন চোখের সামনে নিজের চোখে দেখতে হয় তখন বোঝে একটা জীবনের কত মায়া৷
সৃষ্টিকর্তা কত শখ করে নিজের হাতে তার পছন্দ অনুযায়ী বানিয়েছে আমাদের৷

শাহওয়াজ অনেক্ষণ হলো বাড়ি থেকে বেরিয়েছে৷ প্রায় দুই ঘন্টা৷ তখন কোনো দিশা না পেয়ে শাহওয়াজ কে ফোন করেছিলো রেজওয়ান৷
দের ঘন্টা হলো অপরেশন থিয়েটারে ঢুকিয়েছে রুপা কে৷ এখনো খবর নেই কোনো৷

রেজওয়ান এর কিছুটা দুরই বসে আছে রাবেয়া৷ নির্লিপ্ত, নির্নিমেষে তাকিয়ে বসে আছে সে৷ এ মেয়ে যে তার প্রাণ মেয়েটা করলো কি করে? বিয়েতো ভাঙেনি৷ তার মেয়েতো এতটাও অবুঝ নয়৷ ছোট্ট একটা কারণে এমন কেউ করে? আচ্ছা মেয়েটা কি ভালোবাসতো আকাশকে?
তার মেয়ের মন ভা’ঙলো বুঝি? সৃষ্টি কর্তা বুঝি মা বাবার শাস্তি মেয়ে কে দিচ্ছে? তার জন্য ও তো একটা মেয়ের মন ভে’ঙেছিলো৷ ভে’ঙেছিলো সাজানো সংসার৷ তাহলে সেই পাপেরি মাসুল দিচ্ছে এখন?

এর মাঝেই শোনা গেলো পাশ থেকে রাহেলার কন্ঠ নাক টেনে কাঁদছে আর বলছে,
“নজর লেগেছে বুবু বাড়িতে নজর লেগেছে৷ সব শেষ হইয়া গেলো৷ মাইয়াটার কি হইবো এখন? চৌধুরী বাড়ির মাইয়া কি না আত্ম’হ’ত্যা করলো? শেষে এই দিন আইলো?”
রেজওয়ান এর বির’ক্ত লাগছে এসব৷ ক্ষানিকটা উচ্চ কন্ঠেই বললো,
“এটা হসপিটাল আন্টি চিৎকার করবেন না এখানে৷ আর ও আত্ম’হ’ত্যা করেনি আমার মনে হয় পা পিছলে গিয়েছিলো ওনার৷ না জেনে মন্তব্য করা ঠিক না৷”

রাহেলা তেঁতে উঠলো কান্নার মাঝেই৷ তার কান্নাযে নাটক সবাই ঢেড় বুঝতে পারছে৷ রাহেলা বললো,
“চুপ থাকো পোলা৷ তুমি কি বুঝো? এত রাইতে ও ওইখানে যাইবো কেন? ও বইলা গেছিলো ঘুমাইবো৷ আর তোমারে কইতে হইবো আমি চুপ করমু নাকি চিৎকার করমু?”

এইটুকু বলেই একটু থামলো৷ অতঃপর ফের বললো,
“আর তুমি এইখানে কি করো? তোমার জন্য লোকে মনেহয় মন্দ কথা বলতাছে আমাদের৷ বাইরে পোলা হইয়া চৌধুরী বাড়ির মাইয়ারে কোলে তুইলা নিছো লোকে কি বলবো? এখন তো ছি ছি করবো সবাই৷ শাহওয়াজ এর বঅন্ধউ দেইখা ভাবছো যা খুশি তাই করবা?”
রেজওয়ান বিস্মিত না হয়ে পারলো না৷ মানুষ এত নিচু মানসিকতা নিয়ে কি করে থাকে? একটা মানুষ মৃত্যুর পথচারী ছিলো র’ক্তা’ক্ত হয়ে কাতরাচ্ছিলো সে এসব বলছে? ওনারা আসলেই মানুষ?
রেজওয়ান কিছু বলবে তার আগেই ধমক দিয়ে উঠলো আকবর চৌধুরী৷ রাগী স্বরে বললো,
“এটা হসপিটাল আড্ডাখানা না৷ তুমি আমার ভাইয়ের বউ না হয়ে অন্য কেউ হলে এখানে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতাম৷ আমার মেয়ে ওখানে মৃ’ত্যু সজ্জায় আর তুমি মানুষ কি বলবে তা বলছো? আকবর চৌধুরীর মেয়েকে কে কি বলবে দেখে নিবো৷ তোমাকে আমি এখানে আর দেখতে চাই না৷”
বলেই থামলো অতঃপর রেজওয়ান এর দিকে তাকিয়ে তার কাধে হাত রেখে বললো,
“তোমার কাছে আমি ঋণি বাবা৷ মেয়েটা যে আমার অনেক আদরের৷ ”

চলবে,

[রিচেক হয়নি৷ আমি অনেক ব্যাস্ত সময় পার করছি অনেক! এক দিক থেকে সামনে ইদ আবার রোজা চলছে তার সাথে যুক্ত হয়েছে পরিক্ষা৷ লিখার সময় দুরের কথা দম ফেলারো যেন সময় নেই৷ ছোট কেন হয় আশাকরি বুঝবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here