#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব১৫
#Raiha_Zubair_Ripti
রাত নয়টা,,রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে জামাকাপড় ঢুকচ্ছে ল্যাগাজে রুয়াত। শাফায়াত এখনও বসার ঘরে। রুয়াত নিজের প্রয়োজনীয় জামা ও কসমেটিকস ভরে এক সাইড শাফায়াত এর জামা কাপড়ের জন্য ফাঁকা রাখে। শাফায়াত রুমে আসলে তার থেকে জেনে কাপড় ভরবে। তাই আপাতত ল্যাগেজ টা সাইডে রেখে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে হেয়ার ব্যান্ড নিয়ে চুল গুলো আঁটকে নিলো। তারপর বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অপ্রোয়জনীয় জামাকাপড় আলমারি তে ভরে রাখলো। বেলকনির দিকে চোখ যেতেই রুয়াতের চোখ আঁটকে যায় থালার মতো ইয়া বড় চাঁদে। পরিপূর্ণ চাঁদ। চাঁদের আলো রুম অব্দি চলে আসছে। আজ জ্যোৎস্না রাত চারিপাশে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে গোটা দেশ। রুয়াত বেলকনিতে আসলো।
-“ পৃথিবীর সব সুন্দরের ভেতর তুমি এক সুন্দর চাঁদ। তোমার সুন্দরতা ও তোমার কলঙ্ক কে ছেয়ে গেছে। তাই তো যখন কেউ তোমায় মুগ্ধ হয়ে দেখে সে তোমার কলঙ্ক কে ভুলে যায়।
পেছন থেকে দরজা বন্ধ করার শব্দে রুয়াত পেছন ফিরে। শাফায়াত এসেছে রুমে। তার দিকেই এগিয়ে আসছে। পাশে দাঁড়িয়েই বলে-
-“ এখানে দাঁড়িয়ে কেনো?
রুয়াত শ্বাস টেনে বলে-
-“ একটু চন্দ্রর সাথে বিলাস করছি। চন্দ্র বিলাস।
আসলে আমি মিঙ্গেল হয়েও সিঙ্গেল তো সেজন্য।
শাফায়াত বাঁকা চোখে তাকালো।
-“ আমাকে ডাক বা মেসেজ দিতে। বিলাসীর সঙ্গী হতাম।
-“ মাথায় আসে নি তো!
-“ সেই দোষ কি আমার?
-“ অবশ্যই আপনার। এই সেম কাজ টা তো আপনার করা উচিত৷ আপনি বেলকনিতে বসে অপেক্ষা করবেন আমার। আমি নিচে রান্না ঘরে কাজ করবো। আপনি অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য্য হয়ে যাবেন। তারপর ফোন দিবেন আর তা না হলে ডেকে নিয়ে এসে চন্দ্র বিলাস করাবেন। জানেন আমার একটা ড্রিম আছে।
-“ কি?
-“ এমন এক রাতে হয় পাহাড়ের চূড়ায় আর তা না হলে নীরব শান্ত নদীর পাড়ে প্রিয় মানুষের সাথে রাতের নিস্তব্ধতা কে অনুভব করবো। যেখানে শব্দ বলতে তার আর আমার নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাবে না।
শাফায়াত হাসলো রুয়াতের অগোচরে। তারপর রুয়াতের মাথায় গাট্টা মে’রে বলে-
-“ রাত অনেক হলো ঘুমাতে এসো। কাল সকাল সকাল বের হতে হবে তো।
রুয়াত রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
-“ ঘুমানোর আগে বলুন আপনার কোন জামাকাপড় গুলো ল্যাগেজে ভরতে হবে। আমি ভরে রাখবো।
-“ আলমারি টা খুলো। দেখো হোয়াইট শার্ট,ব্লু শার্ট আর ব্লাক শার্ট আছে ঐ দুটো নাও। আর টিশার্ট নাও তিনটে। আর প্যান্ট টাউজার।
রুয়াত কথামতো সেগুলো ভরে নিলো ল্যাগেজে। শাফায়াত ততক্ষণে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে। রুয়াতের কাজ শেষ হওয়া দেখে শাফায়াত বলে-
-“ লাইট টা বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে পড়ো পাশে।
রুয়াত লাইট নিভিয়ে দিয়ে শাফায়াত এর পাশে এসে শুয়ে পড়লো।
জানালা ভেদ করে চাঁদের আলো তাদের বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। শাফায়াত তাকালো রুয়াতের মুখের দিকে। চাঁদের আলো পড়ায় চকচক করছে মুখটা। রুয়াত শাফায়াত কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠে-
-“ কি দেখেন এভাবে তাকিয়ে?
শাফায়াত ঘোর লাগা কন্ঠে বলল-
-“ পৃথিবীতে থাকা আরেক চাঁদ কে।
রুয়াত মুখ বাঁকালো। অন্য দিকে ফিরে বলল-
-“ হ্যাঁ শুধু তাকিয়েই থাকেন। তাকিয়ে থাকলেই তো পুরো জীবন চলে যাবে। আর কিছু করা লাগবে না।
শাফায়াত ভ্রু কুঁচকালো। মেয়েটা কি বুঝাতে চাইছে তাকে? তাই ঠোঁট কামড়ে জবাব দিলো-
-“ কিছু করার কথা ছিলো?
রুয়াত মাথা ঘুরালো।
-“ কিছু করার কথা ছিলো না বুঝি?
-“ বুঝিয়ে বলো।
-“ টিচার কে আপনি না আমি?
-“ আমি। তাতে কি?
-“ তো ভালো জানার বুঝার কথা কার?
-“ তোমার?
-“ হ্যাঁ ভাই আমারই বুঝার কথা যে আপনি তো কাঠখোট্টা মানুষ এসব আপনার মাথায় ঢুকলেও মুখ ফুটে স্বীকার করবেন না। ঘুরে ফিরে আমার মুখ থেকেই ডিটেইলস সহ শুনতে চাইবেন।
রুয়াত রেগে বললো কথাগুলো। লোকটা কি বুঝে না নাকি?
শাফায়াত হাসলো রুয়াতের রাগী মুখশ্রী দেখে। কিছুটা সময় চুপ থেকে রুয়াতের বাহু টেনে কাছে আনলো। রুয়াত চমকে উঠলো। মাথা টা এসে শাফায়াত এর বুকে ঠেকেছে। রুয়াতের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসলো। বুক ধরফর করছে।
রুয়াত ছোটাছুটি করলো দূরে আসার জন্য। শাফায়াত শক্ত করে চেপে ধরলো।
-“ ছোটাছুটি কেনো করছো? একটু আগেই তো এটার ঈঙ্গিত দিচ্ছিলে।
-“ তাই বলে এভাবে চেপে ধরবেন?
-“ কই চেপে ধরলাম? আমি তো এখনও কিছু চেপে ধরি নি।
রুয়াত রাগান্বিত হয়ে তাকালো। শাফায়াত ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে তাকিয়ে আছে। রুয়াত ফের মাথা অন্য দিকে ঘুরাতে নিলে শাফায়াত রুয়াতের গলায় মুখ গুঁজে দেয়। রুয়াত এবার বরফের মতো জমে যায়। তার ভীষণ সুরসুরি লাগছে। শাফায়াত আলতো করে গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে-
– ❝ পুরুষ মানুষের ভালোবাসা প্রচন্ড ভয়ংকর হয় জানো তো রুয়াত। ভুলক্রমে যদি একবার তারা তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে ফেলে তাহলে — তার নারী প্রতি মুহূর্তে লজ্জায় পড়বে। ❞ এই দেখো হাল্কা একটু প্রকাশ করাতেই তুমি কেমন থেকে থেকে নুইয়ে পড়ছো। তাই ধীরে ধীরে প্রকাশ পাক আমার ভালোবাসা টা কেমন? তাহলে মানিয়ে নিতে পারবে খুব সহজে আমাকে। এবার ঘুমিয়ে পড়ো আকার ঈঙ্গিতে কিছু বুঝাতে হবে না।
শাফায়াত এর হাতের বাঁধন হাল্কা হতেই রুয়াত দূরে সরে আসে। বুকটা উঠানামা করছে এখনও তার। শাফায়াত এর দিকে তাকাতেই শাফায়াত কে এখনও নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ত্বরিত গতিতে মাথা ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
———————–
ভোরের এক নতুন স্নিগ্ধতা। রুয়াত রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুইটির সাথে আর শাফায়াত দাঁড়িয়ে আছে কিছু শিক্ষকদের সাথে ভার্সিটির মাঠে৷ গাড়ি চলে এসেছে। এক এক করে সবাই গাড়িতে উঠছে। সুইটি রুয়াত ও উঠে পড়লো। রোহান এসেছে দেরি করে। বাস ছাড়ার পাঁচ মিনিট আগে।
সাইফুল ইসলাম রোহান আর নেহাল কে লেট করে আসতে দেখে রাগান্বিত হয়ে বলে-
-“ আজকের দিনেও তোদের লেট করে আসতে হবে? মেয়েদের ও এতো সময় লাগে না সেজে আসতে যতটা তোদের লাগে।
রোহান চুলে হাত দিয়ে বলে-
-“ আমার এখনও বিয়ে হয় নি স্যার। একটু সময় নিয়ে পরিপাটি হয়ে না আসলে মেয়েরা পছন্দ করবে না। আর পছন্দ না করলে মেয়ের বাবারা মেয়ে দিতে চাইবে না।
-“ হ্যাঁ তোমার মতো রাজনীতি করা ছেলে কে মেয়ের বাবা মেয়ে দেওয়ার জন্য তো বসে আছে।
-“ রাজনীতি করি দেখে ইনসাল্ট করছেন?
-“ গায়ে লাগে না করলেও।
-“ আপনার সাথে কথা বলাই বেকার। ভালে জিনিস চোখেই পড়ে না আপনার। এই নেহাল চল তো।
রোহান হাঁটা ধরলো। পেছন পেছন নেহাল।
-“ রুয়াত কোন বাসে?
-“ সেকেন্ড বাসে। রবিন বললো।
রোহান সেকেন্ড বাসে উঠতেই চোখ যায় ফোর্থ সিটে বসে থাকা রুয়াতের দিকে। অফ হোয়াইট কালাারের গোল জামা পড়েছে। মুখে হাল্কা সাজ। চুল গুলো বিনুনি করা। কিন্তু পাশেই সুইটি কে বসে থাকতে দেখে মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে আসলো। পেছনে চারটা সিট খালি আছে। রোহান পেছনের সিটে যেতে যেতে নেহাল কে বলে-
-“ শা’লা তোর গার্লফ্রেন্ড কেনো আমার জায়গায় বসছে। পিছে নিয়ে আয় তোর গার্লফ্রেন্ড কে। আর আমাকে রুয়াতের পাশে বসার সুযোগ করে দে।
নেহাল গা ছেড়ে দিয়ে বসলো সিটে।
-“ ওয়েট মেসেজ দিচ্ছি।
নেহাল মেসেজ পাঠালো সুইটি কে-
-“ এই সুইটি পেছনে আসো। বিয়ে নিয়ে কথা আছে।
সুইটি মেসেজ টা দেখে তাকালো পেছনে। নেহাল ইশারায় মুখ দিয়ে শব্দহীন করে বলছে-
-“ প্লিজ আসো।
মেয়েদের মন মমের মতো নরম। ভালোবাসার মানুষের থেকে পজিটিভ কিছু পেলে মন গলে যায়। নেহাল কে অনেক ভালোবাসে সুইটি। বিয়ে নিয়ে কথা বলবে শুনে মনে আশার আলো জাগলো। রুয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ রুয়াত আমি পেছনে গিয়ে বসি তোমার সমস্যা না হলে?
রুয়াত আচ্ছা বলে মুখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকালো। সুইটি উঠে আসলো। রোহান রুয়াতের পাশে বসার জন্য উঠে এগিয়ে আসতে নিলে শাফায়াত রুয়াতের পাশে বসে ফেলে। রোহান দাঁড়িয়ে যায়। নাইমুর শাফায়াত এর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আমি পেছনে গিয়ে বসছি তাহলে।
নাইমুর রোহানের পাশে সিট খালি দেখে বসে পড়ে। রোহানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আরে রোহান দাঁড়িয়ে কেনো বসো।
রোহান কটমট করে নেহালের দিকে তাকালো। নেহাল ভ্যাবলা কান্ত মতো চেয়ে রইলে রোহানের দিকে। রোহান রেগে বসে পড়লো সিটে।
রুয়াত নিজের পাশে শাফায়াত কে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ আপনি আমার পাশে বসছেন কেনো।
-“ কেনো কি হয়েছে?
-“সবাই কিভাবে তাকাচ্ছে দেখুন।
শাফায়াত তাকালো আশেপাশে। সবাই তাদের দু’জনের দিকে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে। শাফায়াত তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল-
-“ সবাই তাকাচ্ছে তাদের আমাদের কি? তাদের চোখ আছে তাই তাকিয়ে আছে। আমাদের উচিত তাদের ইগনোর করা।
#চলবে?
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/