ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:০৮ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
184

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:০৮
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

মাগরিবের পর আবিদের মা- বাবা আসেন। এবং তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা একদম বিয়ে প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে। রাশেদ সাহেব অখুশি থাকলেও উনাদের আপ্যায়ন কোনো ত্রুটি রখলেন না। আবিদের মা মিসেস আলিয়া বেগম বৃষ্টির জন্য একটা লাল বেনারশী নিয়ে এসেছে। এটা দেখে উচ্ছ্বাসের পরিবারের সবাই অবাক হয়।

—–

এশার নামাজের পর বৃষ্টি আর আবিদের বিয়ে পড়ানো হলো। তাদের আগেই বলা হয়েছে বৃষ্টির পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বৃষ্টি এই বাসায়ই থাকবে। এতে আবিদের মা- বাবা ও দ্বিমত পোষন করেন নি। তারা জানিয়েছে আপনাদের যা ভালো মনে হয়। তাই করবেন।

বিয়ে পড়ানো শেষ হলে বড়রা ওদের স্পেস দিয়ে পুল সাইডে চলে যায়। ওনারা চলে যাওয়ার পর’ই ঊষা আর রুহি এটা ওটা বলে ঠাট্টা করা শুরু করলো। রোদসী বসে বসে বৃষ্টিকে দেখছিলো। আসলেই মেয়েটা অনেক মিষ্টি কিন্তু মাঝে মাঝে উল্টোপাল্টা কাজ করে ফেলে। ওই তো কিছুদিন আগে সিঁড়ি দিয়ে নামতে যেয়ে পড়ে গেছে। সে কি কান্না। সেদিন রাতেই ব্যাথার দারুণ গা কাঁপিয়ে জ্বর আসলো। এসব ভাবতে ভাবতেই নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেলো, রোদসী পাশে তাকিয়ে দেখলো উচ্ছ্বাস পকেটে হাত ঢুকিয়ে টানটান হয়ে তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। রোদসী চোখে ফিরিয়ে আবার বৃষ্টি আর আবিদের পানে তাকায়। তারপর নিচু কন্ঠে উচ্ছ্বাসকে বলে,

“ওদের কি সুন্দর মানিয়েছে তাই না?”

উচ্ছ্বাস শুধু “হু” বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। উচ্ছ্বাসের পিছন পিছন রোদসীও উচ্ছ্বাসের পিছনে চলে যায়।

——-

উদয় বারবার রুহিকে দেখছিলো আর মনে মনে ভাবছিলো একটা মানুষ এতো কিভাবে হাসতে পারে? মানে কিভাবে? মুখ ব্যাথা করে না।

হঠাৎ-ই রুহির চোখ পড়ে উদয়ের উপর তা দেখে উদয় থতমত খেয়ে এদিক ওদিক তাকায়। এটা দেখে রুহি উচ্চ-স্বরে হেসে দেয়। ঊষা আর বৃষ্টি ওর হাসির কারণ জানতে চাইলে সে উদয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“চোর চুরি করতে যেয়ে মালিকের কাছে ধরা পড়েছে।”

ঊষা বা বৃষ্টি কেউ-ই তার মানে বুঝলো না। কিন্তু রুহির কথা শুনে উদয়ের কাশি উঠে গেলো। সাথে সাথে সে দাঁড়িয়ে বলে,

“তোরা আড্ডা দে আমার শরীর ভালো লাগছে না।”

এই বলে সে জায়গা ত্যাগ করে। এটা শুনে রুহি আরো হাসে। কিন্তু ঊষা বা বৃষ্টি কিছুই বুঝতে পারে না। আর বেচারা আবিদ বসে বসে নতুন শাশুড়ী বাড়ির সদস্যদের কান্ড কারখানা দেখছে। যা তার মাথায় এখনো ডুকছে না যে আসলে হচ্ছেটা কি।

——-

রোদসী রুমে এসে দেখলো উচ্ছ্বাস বারান্দায় বসে আছে। রোদসীও যেয়ে তার পাশে বসে পড়লো। রোদসী উচ্ছ্বাসের পানে তাকালো কিছুক্ষণ তারপর জিজ্ঞেস করে,

“আপনার কি কোনো কারণে মন খারাপ?”

উচ্ছ্বাস রোদসীর দিকে তাকায়। উচ্ছ্বাস খেয়াল করেছে রোদসী তার সাথে ফ্রী হতে চাচ্ছে। মাঝে মাঝে নিজে নিজেই কথা বলে। এগুলো ভেবে উচ্ছ্বাস মাথা নাড়িয়ে না বলে রোদসীকে কাছে টেনে নেয়। রোদসীও উচ্ছ্বাসের বুকে চুপচাপ পড়ে থেকে উচ্ছ্বাসের হৃদয়ের কম্পন অনুভব করে যা প্রতিবারই রোদসীর মনে ঝড় তোলে৷ আচ্ছা রোদসীও কি উচ্ছ্বাসের প্রেম পড়লো? ভালোবাসলো এই পাগলাটে প্রেমিককে!? এসব ভাবতে ভাবতেই রোদসী ঘুমিয়ে পড়লো। উচ্ছ্বাস যখন টের পেলো রোদসী ঘুমিয়ে পড়েছে তখন সে রোদসীকে কোলে তুলে রুমে এনে বিছানায় সুইয়ে দেয়।

——

সকাল সকাল বাঁধলো আরেক বিপত্তি রাতে বৃষ্টি হয়ায় দারুণ চারিপাশের পরিবেশ। সেই সকালে ঘুম ভেঙে উঠে রুহি বারান্দায় যায় আর ওখানেই পা পিছলে পড়ে যায়। কোনো মতে রোদসীকে কল করার উদ্দেশ্য ফোন হাতে নিতেই দেখে উদয় তার রুম ক্রশ করে নমাছে। হয়তো জগিং করবে। সে কফি বানিয়ে নিয়ে আসছিলো। তাই রুমের দরজা বন্ধ করাতে ভুলে গিয়েছিলো। সে গলায় একটু আয়ওাজ তুলো উদয়কে ডাক দেয়,

“উদয়! আমাকে একটু ধরুন।”

উদয় তাকায় রুহির দিকে। ওকে ওভাবে মেঝেতে বসে থাকতে বিরক্ত লাগলো। মেয়েটার কি জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। এই সকাল বেলায় এমন মেঝেতে বসে আছে। এটা ভেবে আগাতে নিয়েই আবার দাড়িয়ে রুহিকে পর্যবেক্ষণ করে। ঠিক মতো দেখেই উদয় তারাতারি এসে রুহিকে ধরে এবং কপট রাগ করে জিজ্ঞেস করে,

“নিচে পড়লে কি করে। বেশি ব্যাথা পেয়েছো? রোদসীকে ডাকবো।”

রুহি মাথা নেড়ে কোনো মতে বলে, রোদসীকে জানানের দরকার নেই। তারপর কান্না আটকিয়ে সে বলে তাকে একটু হসপিটালে নিয়ে যেতে। উদয় একবার রুহি জিজ্ঞেস করে,

“হাটতে পারবে?”

রুহি মাথা নাড়িয়ে অস্বীকৃতি জানায়। উদয় আর কোনো কিছুর না চিন্তা করেই রুহি কে কোলে তুলে নেয়। এবং হসপিটালের দিকে রওনা হয়।

—-

সেই সকালে আর কারো খাওয়া হলো না। রোদসীর বাড়ির সবাই হসপিটালে। উদয় আর রোদসী কেবিন থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে আছে। ডাক্তার কিছুক্ষণ আগেই জানিয়ে দিয়েছে রুহির পায়ে ফ্র্যাকচার এসেছে। ২ মাস বেড রেস্ট থাকতে হবে। একথা শুনে সবাই বুঝলো ভালোভাবেই ভেঙ্গেছে। উদয়ের প্রচন্ড খারাপ লাগলো কারণ চঞ্চল মেয়েটা এভাবে সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকবে। সবাই রুহির সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো। ডাক্তার বলেছে ব্যাথার জন্য ইনজেকশন দেয়া হয়েছে তাই সে ঘুমাচ্ছে। কপউ যেন তাকে ডিসটার্ব না করে।

কিছুক্ষণ বাদেই উচ্ছ্বাস এসে রোদসীর পাশে এসে দাঁড়ায়। রোদসী মুখ তুলে তাকায়। উচ্ছ্বাস বলে, সকাল থেকে কিছু খাও এসো খেয়ে নিবে। রোদসী নাকচ করে দেয়। সে খাবে না। আদরের ছোট বোনের এই অবস্থা এখন কি আর গলা দিয়ে খাবার নামে? উচ্ছ্বাসও ব্যাপার টা বুঝলো তাই আর জোড় করলো না।

রোদসী অদূরে দাড়াঁনো কেবিনের সামনে উদয়কে দেখলো। আসলেই যদি উদয় রুহিকে না দেখতো আরো কষ্ট পেত মেয়েটা। বাবা মা কে বড় মুখ করে বলে এসেছিলো রুহির খেয়াল রাখবে সেই খেয়াল রাখতে পারলো না। পা ভেঙে বসে আছে। এসব ভেবেই রোদসীর মন খারাপ হলো।

——-

সবাই দেখা করার পর উদয় রুহির কেবিনে এসে পাশে চেয়ার টেনে বসলো। মৃদু আওয়াজে রুহি পাশে তাকিয়ে দেখলো উদয় বসে আছে। রুহি চোখ ফিরিয়ে সিলিংএর দিকে তাকিয়ে হাসলো।

উদয় কিছুকষণ বসে থেকে ইতস্তত কন্ঠে শুধালো,

“আই’ম সরি।”

“সরি কেনো?”

“এমনি।”

“এমনি? কারণ ছাড়াই?”

“হ্যাঁ। তোমাকে এভাবে মানায় না। চন্ঞ্চল মেয়েরা চুপ থাকা টা একদমই মানান সই না।”

“কেনো মায়া লাগছে?”

“হয়তো! লাগছে একটু!”

এটা বলেই উদয় মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো। রুহি তা খেয়াল করে বল,

“মায়া ভালো না। অনেক হারামি জিনিস। সাবধানে থাকবেন।”

রুহির কথা শুনে উদয় হাসলো। মেয়েটা শুধু ঝগড়ুটে না অনেক কথাও জানে। রুহি এবার উদয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তার হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলো। উদয় বললো,

“তুমি কি জানো তুমি অনেক কথা জানো। তবে তোমাকে দেখলে বোঝা যায় না।”

এটা শুনে রুহি খিলখিল করে হেসে দিলো। আর উদয় একটু স্বস্থি পেলো।

—–

সকাল সকাল এমন একটা দূর্ঘটনায় সবার মনই কেমন অস্থির হয়ে আছে। রাতের দিকে রোদসী কে নিয়ে উচ্ছ্বাস বাড়ি ফিরলো। হসপিটালে উদয় রয়ে গেছে। রোদসীদের বাড়িতে ব্যবসার কাজে চাচা, আর রেদোয়ান শহরের বাহিরে। আর রোদসীর বাবাও অস্থির হয়ে আছে তাই উচ্ছ্বাস উনাকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য রোদসীও বাসায় আসতে চায়নি। উচ্ছ্বাসই জোর করে নিয়ে এসেছে। হসপিটালে এতো মানুষ থাকাটা ভালো দেখায় না আবার পরিবেশও নষ্ট হয়। তাই রোদসীকে সে বলেছে আগামীকাল তারা আবার আসবে। এবার বাড়ি যাবো।

রাতে ডিনার করে যে যার ররুমে চলে যায়। বাড়িটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। কালকে এই বাসায় একটা বিয়ে বিয়ে আমেজ ছিলো। আর সকালেই একটা দূর্ঘটনা। আসলেই জীবন কখন কোন দিকে মোড় নেয় কেউই জানে না। এসব ভেবেই রোদসী দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকায়। নিকশ কালো আধার হয়ে আছে। রাতও আজ গভীর। এমন রাতে কেউ ঘুমিয়ে কাটায়, কেউ জেগে কাটায়, কেউ বা অন্যজগতের সুখে। এসব ভাবতে ভাবতেই রোদসীর পাশে কারো অস্তিত্বের টের পেলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো উচ্ছ্বাস কাফি বানিয়ে এনেছে তা টেবিলে রেখে রোদসীর দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে জিজ্ঞেস করলো,

“তোমার কি মন খারাপ? সেই কখন থেকেই এই বারান্দায় বসে আছো। খুঁজতে এসে দেখলাম আকাশ দেখছো। তাই ভাবলাম আজকে না হয় আকাশ দেখেই রাতটা কাটিয়ে দেই। তাই কফি আনলাম।”

এই বলেই তার পাশে থাকা কফির মগটা রোদসীর দিকে বাড়িয়ে দিলো। রোদসী মগটা নিয়ে তার পাশেই রাখলো। তারপর আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। উচ্ছ্বাস গভীর মনোযোগ দিয়ে রোদসীকে দেখছিলো। রোদসীর থুতনিতে একটা ছোটো তিল আছে। প্রথমবার যখন রোদসীকে দেখেছিলো। উচ্ছ্বাস ওই তিলেই আটকে গেলো তারপর কত পাগলামি করে রোদসীকে নিজের করে পেলো। এসব ভেবেই আবার নিঃশব্দে হাসলো। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা মুখে দিতেই চোখ যায় রোদসীর উপর। রোদসী এগুলো পছন্দ করে না তাই সে মুখ থেকে নামিয়ে প্যাকেটে চালান করে তারপর সেটা টেবিলে রেখে কফির মগ নিয়ে নেয় এবং আবারও রোদসীকে দেখায় মনযোগী হয়।

রোদসী হঠাৎ উচ্ছ্বাসের দিকে তাকায়। উচ্ছ্বাস রোদসীর দিকেই তাকিয়ে ছিলো তা দেখে রোদসী হাসে তারপর বলে,

“জীবনটা মাঝে মাঝে এতো কঠিন লাগে কেনো?”

“তুমি যদি কঠিক করে নেও কঠিনই হবে।”

“আমি সব সহজ করতে চাই।”

“তাহলে চলো।”

রোদসী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কোথায়?”

“সহজ করতে।”

এই বলেই উচ্ছ্বাস রোদসীকে কোলে তুলে রুমির দিকে রওনা হয়। রোদসী চেঁচিয়ে উঠলো তবে কোনো লাভ হলো না।

চলবে…….

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়। আচ্ছা গল্পের কি কোনো আগা-মাথা বা দিক দিশায় যেতে পেরেছি? এটা আমার প্রথম লিখা। যদি কোনো দিক- দিশায় না যেতে পারি তাহলে খুব শীগ্রই সমাপ্ত করে দিবো। ছোট্ট একটা রিভিউ দিবেন। আমার খুশি লাগবে। অগ্রীম ধন্যবাদ 🤍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here