ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:১৬ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
186

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১৬
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

দড়জার ওপাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটা কে দেখে থেমে যায় রোদসী। মুখ থেকে ছিটকে বের হলো,

“আপনি?”

আর কিছু বলার আগেই রোদসীর পা টালমাটাল লাগলো। দরজায় দাঁড়ানো ব্যাক্তিও রোদসী এমন অভিব্যক্তি দেখে অবাক হয়। কিন্তু রোদসী আর কিছুই বলতে পারে না। তার মাথা ঘোরাতে শুরু হয়। কিছু বলার আগেই ধপ করে নিচে পড়ে যায়।

দরজায় দাড়ানো ব্যাক্তি এবার অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে রোদসীকে দেখে। তারপর এসে রোদসীর পালস চেইক করে আশেপাশে কাউকে খোঁজ করে তবে কাউকে না পেয়ে বিরক্ত হয়ে শব্দ কে কল করে।

এই সময় সাঈফের কল পেয়ে বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে যায়। শব্দ উচ্ছ্বাসের সাথে কথা বলছি বলতে ভুল হবে এতো দিনের পুরণো বন্ধুকে পেয়ে আড্ডা বসিয়েছিলো তাই অসময়ে সাঈফের কল পেয়ে বিরক্ত বোধ করে। উচ্ছ্বাস শব্দের এমন অভিভক্ত দেখে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে?”

শব্দ জানায় তার কলিগ কল করেছে। উচ্ছ্বাস হেসে জবাব করে,

“কল টা রিসিভ কর দেখ কোনো সমস্যা হলো কিনা।

শব্দ প্রতিত্তোর না করে কল রিসিভ করে সালাম দেয়। তবে সাঈফ সালামের উত্তর না দিয়েই আগে জিজ্ঞেস করে,

“আপনি কোথায়?”

এমন প্রশ্নে বিরক্ত লাগলো শব্দের। ডিউটির টাইমে সে কোথায় থাকবে? বাসায়? হসপিটালেই তো থাকার কথা। একটা ডক্টর হয়ে আরেক জনকে এমন প্রশ্ন কোন মাথা থেকে করে তবুও নিজেকে সামলে বলে,

ডিউটি আছি ড.সাঈফ। হসপিটালে।

এবার সাঈফ গলা চওড়া করে বলে,

” তাবাসসুম যে অসুস্থ তাকে একা বাসায় রেখে গেলেন কিরে। সে জ্ঞান হারিয়েছে। তাকে আমি পাশের হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি আপনি তারাতারি আসুন।”

এবার শব্দকে বিচলিত দেখালো। এই খবর শুনে সে দাঁড়িয়ে গেলো। উচ্ছ্বাস চোখ দিয়ে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে?”

শব্দ ”আসছি” বলে কল কেটে উচ্ছ্বাসকে জানায়,

“আই হেভ টু গো। আমার বোন অসুস্থ হয়ে গেছে। তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

উচ্ছ্বাস তাকে তারাতারি যাওয়ার জন্য তাড়া দেয় আর শব্দও হুড়মুড় করে বেড়িয়ে পড়ে। কবিনের বাহিরে ঊষা দাড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ শব্দকে এমন তারাহুরো করে বেড়োতে দেখে অবাক হয়ে শব্দকে দেখে। তবে এদিকে শব্দের কোনো খেয়াল নেই। তার মনে একটাই প্রশ্ন হঠাৎ রোদসীর আবার হলো কি?

——–

“এখানে মিসেস তাবাসসুমের বাড়ির লোক কে আছেন?”

নার্সের কথায় শব্দ এবং সাঈফ দুজনেই এগিয়ে যায়। শব্দ জানায় সে রোদসীর ভাই হয়। নার্স শব্দ কে বলে রোদসীকে গাইনী বিভাগে নিয়ে যেতে এবং ফাইলে কিছু কাগজ আছে সেগুলো টেস্ট করাতে। সাঈফ কিছুই না বুঝে বারকয়েক শব্দ এবং নার্সের দিকে তাকায়। শব্দ নার্সকে সম্মতি জানিয়ে রোদসীর কেবিনে যেয়ে তাকে ধরে গাইনী বিভাগে নিয়ে যায়। এবং ডাক্তারদের খথা সব সব টেস্ট করায়। তাদের কিছু সময় ওয়েটিং রুমে ওয়েট করতে বলা হয়। এদিকে রোদসীর মনও বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। কিছু সময় পর নার্স এসে শব্দ আর রোদসীকে ডেকে নিয়ে যায়। সাঈফ জানায় সে বাহিরেই ওয়েট করছে। কি হয়েছে শব্দ এসে যেনো তাকে জানায় শব্দও সম্মতি জানিয়ে রোদসীকে নিয়ে ডাক্তারের কেবিনে যায়।

কবিনে যেয়ে বসে রোদসীর আর শব্দ উৎসুক মুখে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে। ডক্টর রিপোর্ট উল্টেপাল্টে দেখে রোদসীর মুখের দিকে তাকায়। তারপর শব্দ কে জিজ্ঞেস করে,

“কে হয় আপনার?”

“আমার বোন।”

“হুম। ভেরি ব্যাড নিজে ডক্টর হয়েও আপনার বোন দুর্বল তবে একটা গুড নিউজ আছে।”

তারপর রোদসীর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা নির্মল হাসি দিয়ে বলে,

“কনগ্রেচুলেশন মিসেস মাহাদী। আপনি মা হতে চলেছেন।”

রোদসী এবং শব্দ দুজনেই স্তব্ধ নয়নে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

ডক্টর এবার শব্দের দিকে তাকিয়ে বলে,

“তারাতারি সবাইকে মিষ্টি মুখ করান ডক্টর সাহেব মামা হতে চলেছেন।”

দুজনের মুখেই চমকের ছাপ। তারপর নিজেদের সামলে রোদসী কিছুটা মিনমিনিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“ডক্টর ক’মাস হয়েছে?”

শব্দের মুখের দিকে তাকায়। শব্দও ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে। ডক্টর এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে জানায়,

“আনুমানিক ১৩ সপ্তাহ হবে।”

রোদসী এবার নড়েচড়ে বসে। মানে হলো তিন অথবা সাড়ে’তিন মাস। রোদসীও পালিয়েছে তিন মাস সময়ই হলো। তারপর ডক্টর খাবার চার্ট এবং সব ধরনের নিয়মকানুন বুঝিয়ে দিলো এবং তা মানতে বলে। রোদসী এবং শব্দ কেবিন থেকে বের হলেই সাঈফ এসেই শব্দকে জিজ্ঞেস করে রোদসীর কি হয়েছে। শব্দ কোনো কথা না বলে হাতের রিপোর্ট এগিয়ে দেয় সাঈফের দিকে। সাঈফ পুরো রিপোর্ট এ চোক বুলিয়ে একবার রোদসী এবং শব্দের দিকে তাকায় পরে আবারো রিপোর্ট ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। পড়া শেষ করে অবিশ্বাস্য চোখে রোদসী এবং শব্দের পানে তাকায়। শরীর কেমন আসড় হয়ে এলো মনে হলো কন্ঠনালি কেউ চেপে ধরে রেখেছে এমন মনে হচ্ছে তবুও সাঈফ নিজেকে জোড় করে কোনো মতে মুখে থেকে কথা বরে করে জিজ্ঞেস করে শব্দ কে, “এটা কি সত্যি?”

শব্দ শুধু মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বোঝায়। তারপর রোদসীকে ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। আর সাঈফ ওখানেই স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রয় দুই ভাইবোনের দিকে। আসড় হয়ে যাওয়া পা নিয়ে আগায় রোদসীদের দিকে। তাদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে সাঈফ নিজের বাসায় চলে যায়। কিন্তু হসপিটাল থেকে বাড়ির এসে দিয়ে যাওয়ার এই সময় গুলোতে কোনো কথা সাঈফের মুখ থেকে বের হয় নি। কেমন যেনো রোবট ভঙ্গিতে সব করে গেছে। তার কাছে এখনো সবকিছুই অবিশ্বাস্যই ঠেকছে। তাবাসসুম কি বিবাহিত? নাকি? নাহ! কিসব ভাবছে সাঈফ। বাসায় আসার পর থেকে প্রায় তিন-চারদিন পর্যন্ত এমন স্তম্ভিত হয়ে থাকে সাঈফ। হসপিটাল থেকে সে কিছুদিন ছুটি নেয়। নিজেকে সামলানোর জন্য।

———-

“বৃষ্টি তুই বাসায় যেয়ে একটু রেস্ট নে। আর কত এমন এখানে বসে থাকবি। বাসায় যা। আমি চাচীমার কাছে আছি। আর ভাইয়াও আসছে তো৷”

বৃষ্টি ঊষার পানে চায়। তারপর বৃষ্টি উঠে দাড়ায়।বাসায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই আবিদ এসে হাজির হয়। তারপর ঊষার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“বৃষ্টি কোথায় যাচ্ছে?”

ঊষা জানায়,

“ওকে বাসায় পাঠাচ্ছি। আপনিও ওর সাথে যান। তাহলে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারবো।”

আবিদ মাথা নাড়িয়ে বৃষ্টির হাত ধরে চলে যায়। ঊষা একটা লম্বা শ্বাস টেনে একটা বেঞ্চে বসে। জীবনটা দিনদিন কেমন গোলমেলে ঠেকছে। এত এত সমস্যা কি থেকে কি হচ্ছে কিছুই মাথায় আসছে না ঊষার মাথায়। এর মধ্যে এক সিস্টার এসে জানায়,

“বিপাশা বেগমের বাড়ির লোক কে আছেন? তাকে এখনই ড. মুনীব শব্দ ডেকেছে।”

ঊষা উঠে শব্দের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়।

“ডা. আসবো?”

শব্দ তাকিয়ে দেখে ঊষা হালকা দরজা খুলে তাকিয়ে আছে। ঊষাকে দেখে কেনো জানি রোদসীর কথা মনে পড়লো তাই সে মুচকি হাসলো। আর তার গালের টোলটা কেমন দৃশ্যমান হলো। তারপর ঊষাকে ভিতরে আসার অনুমতি দিলো। সেদিকে ঊষার মন নেই। সে আটকে গেছে। তার কাছে মনে হচ্ছে সে কোনো অদ্ভুত সুন্দর জিনিস দেখে ফেলেছে। ঊষাকে ভিতরে আসতে না দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে ঊষাকে নাম ধরে ডাকে।

“এই যে মিস ঊষা কোথায় হারালেন?”

এবার ঊষা বাস্তবে ফিরে এলো তবে সামান্য লজ্জাও পেলে তার এমন কান্ডে। সে মাথা নিচু করে এসে শব্দের সমানে বসে। শব্দ এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে ঊষাকে পর্যপেক্ষণ করে মুখ খোলে,

“দেখুন মিস.ঊষা। যে অসুস্থ সে অসুস্থ। তার কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। কি হতে চলেছে তাও বলা যাচ্ছে না। এখন তার চিন্তায় আপনার ছোটো বোন এবং আপনি এভাবে হসপিটালে বসে থাকার কোনো মানে হয় না। আপনাদের বাসায় দুই ভাই আছে। তারা এসব দেখাশোনা করলেই হবে। আপনি বাড়ি থেকে বৃষ্টির দেখাশুনা করেন।”

একসাথে এতগুলো কথা বলে থামে তারপর ঊষাকে জিজ্ঞেস করে,

“লাঞ্চ করেছে কিনা?”

ঊষাও মাথা নাড়িয়ে জানায়,

“এখনো করা হয় নি। মাত্রই বৃষ্টিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছে।”

শব্দ কিছুক্ষণ কিছু ভেবে তারপর বলে আপনি আমার সাথে জয়েন করতে পারেন। আর হ্যাঁ আর একটা কথা বলা হয় নি। আমি আপনার ভাইয়ের বন্ধু। উমম উচ্ছ্বাসের বন্ধু। ঊষা অবাক হয়ে শব্দের দিকে তাকায়! তারপর বলে ও আচ্ছা। কিছুক্ষণ বাদের একজন লোক এসে তাদের খাবার দিয়ে যায়। তারপর তারা খেতে শুরু করে। খাওয়ার মাঝে মাঝেই আঁড়চোখে শব্দের দিকে তাকাচ্ছে ঊষা। না, যতটা রুড ভেবেছিলো ততটা রুড শব্দ না। তারপর হঠাৎ সেইদিন তাড়াহুড়োয় বের হয়ে যাওয়া কথা মনে পড়লেই। কিছুটা সাহস নিয়ে শব্দকে জিজ্ঞেস করে,

” সেদিন কি হয়েছিলো যে আপনি ওতো দ্রুত বেড়িয়ে গেলেন?”

শব্দ ঊষার মুখের দিকে তাকায় তারপর বলে খেয়ে বলছি। তারপর খেয়ে একটা চকলেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

“আমি মামা হচ্ছি। এই খবর তো আর খালি মুখে দেয়া যায় না তাই। এটাই নিন। বোনের জন্য কিনেছিলাম ভালোই হলো আপনাকেও দিলাম।”

ঊষা লোকটাকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। একটা লোক কতটা পরিপাটি এবং গুছিয়ে সব করতে পারে।

চলবে…..

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here