ভালোবাসা_তারপর #পর্ব:২৫ #তামান্না_শাহরিন_শশী

0
436

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:২৫
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

উচ্ছ্বাস হসপিটালের থেকে বের হয়ে কোনো মতে শব্দের হসপিটালে আসে তারপর হসপিটালে থেকে যত তথ্য পায় তা শেয়ার করে শব্দকে । শব্দ সব শান্ত ঙঙ্গিতে বসে শোনে। উচ্ছ্বাস শব্দকে বলে,

“আমি বুঝতে পারছি না ও এভাবে বিট্রে কিভাবে করলো করতে পারে আর বাচ্চা টা?” এটা বলেই শব্দের পানে তাকায় উচ্ছ্বাস।

“বাচ্চাটাকে কেনো টানছিস তুই? এখানে বাচ্চারটর তো কোনো দোষ আমি দেখছি না।” শীতন শোনাল শব্দের এই প্রশ্নটা। উচ্ছ্বাস তাকিয়ে কিছুটা উচ্চস্বরে বলে,

“তাহলে কি করবো ভাই। নিজের বউকে অন্য কারো সাথে দেখলে কার মাথা ঠিক থাকে? তুই পারতি? আমি যদি ওদের ধরতে পারতাম প্রথমে লোকটাকে তো খু*ন করতামই আর রোদসীর যে কি করতাম আমি নিজেও জানি না।”
এগুলো বলেই উচ্ছ্বাস রাগে ফস ফস করে শ্বাস ছাড়লো। এখন উচ্ছ্বসকে ঠিক একটা হিংস্র বাঘের মতো লাগছে। চোখ গুলো রক্ত লাল হয়ে আছে। শব্দ উচ্ছ্বাসের কথা শোনে সব। এবং শব্দ উচ্ছ্বাসকে শান্ত হতে বলে। তারপর জিজ্ঞেস করে,

“বাচ্চাটার বয়স কত হবে?”

“এরাউন্ড থ্রী মানস মেবি।”

“তোর বউ পালিয়েছে কবে হিসেব কর। এমনও তো হতে পারে বেবিটা তোর?”

উচ্ছ্বাস চমকে শব্দের দিকে তাকায়। এই কথাটা তার মাথায় আসে নি। তারপর উচ্ছ্বাস হিসাব কষতে বসে। রোদসী পালিয়েছে প্রায় ১ বছরের বেশি। আর বেবি হতে দশমাস লাগে সাথে তিন মাস তাহলে মোট তোরো মাস। তাহলে রোদসী পালানোর আগেই বা ওই সময়ই বেবি কনসিভ করেছে। আর গর্ভবস্থায় বিয়ে বা ডিভোর্স কিছুই হয় না। আর রোদসী যানে উচ্ছ্বাস ম*রে গেলো রোদসীকে ডিভোর্স দিবে না। তাই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে ঘুমন্ত বাঘ কে জাগানোর সাহসও রোদসী করবে না। সব হিসাবে মেলানোর পর উচ্ছ্বাস বিষ্ফরিত নয়নে শব্দের পানে তাকায়। শব্দ মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। উচ্ছ্বাস কোনো কথা না বলে দাঁড়িয়ে যায়। সেই প্রথমের মতো খ্যাপাটে দেখালো উচ্ছ্বাসকে। উচ্ছ্বাস ভয়ংকর শীতল কন্ঠে শব্দকে বলে,

“বেবীটা আমার। আর রোদসী আমার ফাডারহুডের বেস্ট মোমেন্ট গুলো থেকে বঞ্চিত করেছে। আমি ওকে পেলে কি করবো আমি জানি না। বাট আই সয়্যার আই উইল কি*ল হার। আই উইল নেভার ফরগিভ হার, ফর হার দিজ মিস্টেকস। আর পালানো? এটার জন্য কোন শাস্তি অপেক্ষা করছে আমি সেটাও বলতে পারছি না। সি মেইড মি এ সাইকো।”

শব্দ বুঝলো উচ্ছ্বাস নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না। তবুও শব্দ বোঝানোর ভঙ্গিতে বললো,

“মাথা ঠান্ডা কর। যেহেতু তুই এই শহরে ওকে দেখেছিস। তাহলে এই শহরেরই কোথাও প আছে। ওর ব্যাপারে খোঁজ নে। দেখ কোথায় আছে। আর শুধু যে ওর মিস্টেক আছে তা বলবে না। তোরও আছে। নাহলে ও এমন করতো না। তাই যা করবি আমি প্রফের করবো ভেবে চিন্তে করবি। এগুলো পড়ে চিন্তা করা যাবে। এখন মাথা ঠান্ডা কর, রাত অনেক হয়েছে বাসায় যা। আমিও বাসায় যাবো আমার বোন অপেক্ষা করছে।”

উচ্ছ্বাস আর কোনো কথা না বলে শব্দের কেবিন থেকে বেড়িয়ে বাড়ির দিকে রওনা করে। আর শব্দও বাসার দিকে চলে আসে।

—–

রাতে ডিনার করতে বসলে শব্দ রোদসীকে জিজ্ঞেস করে ডক্টর কি বলেছে। রোদসী জানায় আগের থেকে উর্জা মোটামুটি ভালো পর্যায়ে আছে। শব্দ খাবার খেতে খেতে উচ্ছ্বাসের কথা চিন্তা করছিলো। রোদসী খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবে তখনই শব্দের ওপর চোখ পড়ে, তারপর রোদসী শব্দকে প্রশ্ন করে,

“ভাইয়া, কিছু হয়েছে? তোমাকে কেমন চিন্তিত দেখাচ্ছে।”

শব্দ মাত্রই খাবার মুখে দিয়েছিলো। রোদসীর কথা শুনে শব্দ রোদসীর মুখের দিকে তাকায়। তারপর মুখের খাবারটা শেষ করে বলে,

“হু। আমার এক বন্ধুর কথা চিন্তা করছি।”

“তোমার বন্ধুর চিন্তা?”

“হু। ছেলেটা ভালো স্কুল, কলেজ আমরা একসাথেই ছিলাম। কারো সাথে ওতো মিশতো না। নিজের মতোই থাকতো। তারপর কলেজ কমপ্লিট করার পর আমাদের আর যোগাযোগ ছিলো না। ওই যে ওর বোন আর ভাইয়ের বিয়েতেই তো সেদিন গেলাম। ওর সাথে যোগাযোগ না থাকার কারণ ছিলো আমি মেডিকেল চলে যাই আর ও ভার্সিটিতে চলে যায়। তাই আমাদের মধ্যে আর ওতো কথা বার্তা হয়নি আর। হঠাৎ একদিন ওর পরিবারের একজন অসুস্থ হয় তো ওরা তাকে হসপিটালে নিয়ে আসে তখনই আবারো দেখা হলো।”

“তাহলে এখানে চিন্তা করার কি আছে?”

“চিন্তা এখানে না। ছেলেটার মারাত্মক এংগার ইস্যু আছে। ঘাড়ত্যাড়া ও বলতে পারিস। যা ওর তা ওর লাগবেই সেটা যেভাবেই হোক না কেনো, তার করে নিতেই হবে। কলেজে একবার ওর মারামারি দেখিছিলাম। ও একটা ঘুমন্ত বাঘ, চুপচাপ থাকে তবে রেগে গেলে মানুষ খু*ন করতেও ওর সময় লাগবে না।”

এসব কথা শুনে সর্বপ্রথম রোদসীর উচ্ছ্বাসের কথা মনে হলো তাই আরো আগ্রহীদৃষ্টিতে মনোযোগী শ্রোতার মতো শব্দের কথা শুনতে লাগলো। শব্দ আরো বলতে লাগলো,

“এটুকু পর্যন্ত হলেও ঠিক ছিল। কিন্তু ছেলেটা বিয়ে করার সাত আট মাস পর ওর বউ পালায়। কারণ ওর এই এংগার ইস্যু আর বুঝিই তো অতিরিক্ত কেনো কিছুই ভালো না। ঠিক তোর স্বামীর মতো সে যাই হোক। ও ওর বউয়ের অনেক খোঁজে করে কিন্তু পায় নি। তার মধ্যে ওর যে সমস্যাটা ছিলো তার জন্য সাইক্রোয়াটিস্ট দেখানো শুরু করে। আজকে ওর কাউন্সিলং এর লাস্ট ডে ছিলো আর জানিস কি হয়েছে? আজকেই ও ওর বউকে দেখে ওই হসপিটালে। সাথে নাকি একটা লোক ছিলো যার কোলে বাবু ছিলো নাকি। এখনও তো রেগে শেষ। আমি বুঝি না ওরা এই প্রবলেম গুলো সল্ভ না করে এতো জটিল করে কেনো? ছেলেটার অবস্থা ভেবেই আমার খারাপ লাগছে।”

“কোন হসপিটাল ছিলো ভাই?”

“এ. এফ হসপিটাল। উর্জা যেখানে হলো।”

রোদসী চমকায়। তারপর নিজেকে সামলে একটা কাঁচের গ্লাসে পানি খেতে জিজ্ঞেস করে,

“আচ্ছা তোমার বন্ধুর নাম কি?”

“উচ্ছ্বাস।”

রোদসীর হাত থেমে গেলো। হাতের কাঁচের গ্লাসটা শোভা পেলো মেঝেতে ভাঙ্গা অবস্থায় টুকরো টুকরো কাচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো আশেপাশে। সাথে পানি গুলো গড়িয়ে পড়লো কত দ্রুত। মানুষটার নাম শুনে রোদসী আর পানি টুকু গিলতে পারলো না। পানি টুকু রোদসীর নাকে মুখে উঠে যায়। কাঁশতে কাঁশতে কোনো মতে হাত দিয়ে চেয়ার ধরে। শব্দ অবাক চোখে রোদসীকে দেখে। রোদসী কোনো মতে চেয়ারটা ধরে দাঁড়িয়ে শব্দের পানে তাকায়। তার হাত পা কাঁপছে। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে মা রা যাবে। ঠিক সেই প্রথম দিনের রোদসীকে দেখলো মনে হচ্ছে শব্দের কাছে। শব্দ রোদসীর লাল হয়ে যাওয়া লালচে মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে এসে রোদসীকে ধরে চেয়ারে বসায়। রোদসী ভয়াতুর দৃষ্টিতে শব্দের দিকে তাকায়। কিন্তু এর কারণ শব্দ খুঁজে পেলো না। হঠাৎ এমন উত্তেজিত হবার কারণ কি? বা কি শুনেই মেয়েটা এতে ভয় পেলো?

#চলবে।

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়। দয়া করে মন্তব্য করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here