তিক্ত_প্রণয়ালাপ কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল পর্ব:12 (18+ অ্যালার্ট)

0
390

গল্পঃ #তিক্ত_প্রণয়ালাপ
কলমে: #পুলকিতা_পোড়েল
পর্ব:12 (18+ অ্যালার্ট)
[সম্পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্কমনষ্কদের জন্য উন্মুক্ত]

প্রান্তিকের অন্য ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে ওদের ওপরতলার কাকু কাকিমাকে দেখে অবাক হয়ে যায় অনামিকা, বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় প্রান্তিকের দিকে…প্রান্তিক অনামিকার অভিব্যক্তি বুঝতে পেরে নিজেই বলে,
— “বর,বউ আর পুরোহিত থাকলেই বিয়ে হয়না, সাক্ষী লাগে আর আমাদের সাক্ষী নলিনী কাকিমা আর প্রদীপ কাকু…”

নলিনী রায় অনামিকাকে দেখে ওর কাছে এগিয়ে এলেন,
— “আমি খুব খুশি হয়েছি তোমরা আবার বিয়ে করছো দেখে, চলো আমরা ভিতরে যাই…একটু পরে পানপাতা ঢেকে আসবে..”

অনামিকা অনুমতির জন্য প্রান্তিকের দিকে তাকায়,প্রান্তিক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়…অনামিকা চলে যায় ভিতরে…প্রান্তিক পুরোহিতকে ঢুলতে দেখে পুরোহিতের কাছে আসে…
— “ওহ পুরোহিত মশাই,এভাবে ঢুললে হবে, আমাদের বিয়ে দিতে হবে তো!!”

— “আপনি আমায় মহা ঝামেলায় ফেললেন স্যার, বহু বছর হলো এই দেশে আছি, সব ভুলে গেছি বাঙালি বিয়ের নিয়ম…এবার যদি কোনো ভুল হয়ে যায় আপনিই আমাকে কথা শোনাবেন…”

প্রান্তিক আর প্রদীপ বাবু হাসলেন উচ্চস্বরে…
— “আপনাকে কেউ কিচ্ছু বলবেনা মিস্টার চক্রবর্তী , আপনি শুধু ওই বইটা দেখে মন্ত্রটা ঠিকঠাক পড়বেন..”

— “অস্ট্রেলিয়ায় এসেও যে এভাবে পৌরহিত্য করতে এটা ভাবিনি..”

— “নিন নিন এবার শুরু করুন…,বিয়ের লগ্ন নাহলে পেরিয়ে যাবে…”

— “সম্প্রদান কে করবেন? প্রদীপ বাবু আপনি?”

প্রদীপ পুরোহিতের পাশে বসলো,
— “হ্যাঁ আমিই সম্প্রদান করবো, অনামিকার বাবার দায়িত্বটা নাহয় আমিই পালন করি এখন…”

— “তাহলে আসুন প্রান্তিক বাবু,বসে পড়ুন বিয়েতে…”

প্রান্তিক ধুতি সামলে বসলো প্রদীপ বাবু আর পুরোহিতের মাঝে…একে একে সব নিয়ম শেষ হলো…
— “এবার পাত্রীকে আনুন..”

প্রদীপ বাবু নলিনী দেবীর উদ্দেশ্যে বলেন অনামিকাকে আনার জন্য…অনামিকা পান পাতা ঢেকে প্রান্তিকের সামনে এসে দাঁড়ায়..
— “মা তুমি এবার তোমার বরের চারপাশে সাতবার ঘুরবে মুখটা পান পাতা দিয়ে ঢেকে…”

প্রান্তিক শব্দ করে হাসলো, অনামিকা পানপাতার ভিতর দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো…প্রান্তিক পুরোহিতের উদ্দেশ্যে বললো…
— “আমি তো আমার বউয়ের মুখ আগেই দেখে ফেলেছি, না ঘুরে শুধু শুভদৃষ্টিটা হলেই তো হয়…”

পুরোহিত হো হো করে হেসে উঠলো,
— “এটা নিয়ম, যা বলছি তাই করুন তো..”

একে একে প্রত্যেকটা নিয়ম পালন করলো অনামিকা আর প্রান্তিক,প্রতিমুহূর্তে প্রান্তিক অনামিকাকে লেগপূল করে গেছে…এবার আসে সেই শুভক্ষণ, যার জন্য প্রান্তিক আর অনামিকা অপেক্ষা করে আছে…

— “এবার সিঁদুর দান হবে,এই নিন সিঁদুরটা পড়িয়ে দিন…”

প্রান্তিক পুরোহিতের কাছ থেকে সিঁদুর লাগানো জায়গাটা নেয়, অনামিকা প্রান্তিকের কানের কাছে নিম্নস্বরে বলে…
— “সিঁদুরটা যদি নাকে না পড়ে তাহলে আমার একদিন কি আর আপনার একদিন..”

অনামিকার হুমকি শুনে প্রান্তিক একটা শুকনো ঢোঁক গিললো,তারপর ভালো করে বুঝে নিলো কিভাবে সিঁদুর পড়ালে সেটা অনামিকার নাকে পড়বে…
— “পুরোহিত মশাই একটু বেশি করে সিঁদুর দিন, নাকে সিঁদুর না পড়লে বউ আবার আমাকে আস্ত রাখবেনা…”

এক কৌটো সিঁদুরের পুরোটাই ঢেলে দিলো পুরোহিত প্রান্তিকের কাঠায়…তারপর প্রান্তিক ধীরে ধীরে সেই সিঁদুরটা তুলে দিলো অনামিকার সিঁথিতে…তৎক্ষণাৎ অনামিকা নাকে হাত দিয়ে দেখলো সিঁদুর পড়েছে কিনা…প্রান্তিক অনামিকাকে আস্তে করে বললো..
— “নাকে সিঁদুর না পড়লেও তোমার বর তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসবে…”

অনামিকা চোখ বুজলো…মুচকি হেসে আবার প্রান্তিকের দিকে তাকালো…নলিনী দেবী ক্যামেরাবন্দি করলেন সেই মুহূর্তটা…

বিয়ে শেষ হতে প্রান্তিক আর অনামিকা উঠে দাঁড়ালো…
— “থ্যাঙ্ক ইউ মিস্টার চক্রবর্তী, আমার এক কথায় রাজি হয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ…আমার লোকেরা আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে…”

প্রান্তিক কিছু টাকা এনে পুরোহিতের হাতে তুলে দিতে চাইলে পুরোহিত সেটা নেয়না…
— “এটা আমার পেশা নয়, তবে এই আধুনিক যুগেও কেউ যে নিজের দেশের সংস্কৃতিকে মনে রেখেছে তাও আবার বিদেশের মাটিতে সেটা দেখে ভালো লাগলো…আপনাদের বিবাহিত জীবন সুখের হোক…ভগবানের দয়ায় আমার অনেক আছে, এই টাকা নিতে পারবোনা… ”

পুরোহিত চলে গেলেন, ওনার পিছু পিছু প্রদীপ বাবু আর নলিনী দেবীও চলে গেলেন নিজের ফ্ল্যাটে…প্রান্তিক ফ্ল্যাটটা বন্ধ করে অনামিকাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে…
— “তাহলে ম্যাডাম আপনার ইচ্ছে কিন্তু আমি পূরণ করে দিলাম,এবার আমার ইচ্ছে তুমি পূরণ করো…”

অনামিকা প্রান্তিককে ছাড়িয়ে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়…
— “বলুন কি ইচ্ছে আপনার?”

প্রান্তিক অনামিকাকে আর কথা বলার সুযোগ দিলোনা, কোলে তুলে নিলো…তারপর এগিয়ে চললো একটা রুমের দিকে…রুমের মধ্যে ঢুকেই অনামিকা অবাক হলো…পুরো রুম ফুল আর ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো…অবাক দৃষ্টিতে তাকালো ও প্রান্তিকের দিকে…
— “এসব কখন করলেন?”

প্রান্তিক সোজা অনামিকাকে নিয়ে ব্যালকুনিতে গিয়ে ওকে কোল থেকে নামালো…
— “পাক্কা তিন ঘণ্টা ধরে এসব করেছি…”

— “তারমানে আপনি এইজন্য এত দেরি করে ফিরেছিলেন…”

প্রান্তিক হাসলো,কোনো উত্তর দিলোনা… অনামিকাও শব্দ করে হাসলো…
— “আপনি সত্যিই অন্যরকম”

প্রান্তিক হটাৎ করেই অনামিকার কোমল ঘাড়ে মুখ ডোবালো, অনামিকা আমূল পরিমাণে কেঁপে উঠল, শরীরের মধ্যে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো…প্রান্তিক অনামিকার ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে জড়ানো কন্ঠে বললো…
— “আই ওয়ান্ট সামথিং ফ্রম ইউ বউ”

অনামিকা প্রান্তিকের চুলগুলো খামচে ধরলো, কোনো কথা বলার অবস্থাতে নেই ও…একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে ওর…জীবনে প্রথমবার ওর মনে হচ্ছে ওর শরীর যেনো শুন্যে ভাসছে….অনামিকার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে প্রান্তিক অনামিকার ঘাড়ে কামড় বসালো…
— “আই নিড ইউ অনু, আই নিড ইউ ভেরি মাচ…, বাট আই ওয়ান্ট ইউর পারমিশন…”

অনামিকার ঘাড় থেকে মুখ সরিয়ে নেশা জড়ানো চোখে তাকালো প্রান্তিক অনামিকার দিকে…অনামিকা চোখ বন্ধ করে আছে দেখে বলে…
— “বউ!!”

অনামিকা চোখের পলক না খুলেই প্রান্তিককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, দুজনের মধ্যে বায়ু চলাচল নিষিদ্ধ হয়…নিজের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় প্রান্তিক,তাও সামান্য হেসে অনামিকাকে জিজ্ঞাসা করে…
— “ম্যাডাম কি পারমিশন গ্র্যান্ট করলেন??”

অনামিকা প্রান্তিকের শার্টটা খামচে ধরে, অনামিকার নখের আঁচড়ে আহত হয় প্রান্তিক…অনামিকাকে কোলে তুলে রুমের ভিতর নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসায় ওকে…পাশে বসে একে একে অনামিকার সব গয়নাগুলো খুলে টেবিলে রাখে…অনামিকার স্বাস খুব জোড়ে জোড়ে পড়ছে…প্রান্তিক বিছানা থেকে উঠে সমস্ত ক্যান্ডেলগুলো নিভিয়ে দেয়….তারপর আবার এসে অনামিকার পাশে বসে…অনামিকা প্রান্তিকের গালে হাত রাখে…
— “আমার জীবনে আসার জন্য ধন্যবাদ, আমাকে অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ…আমি আপনাকে মন থেকে মেনে নিয়েছি প্রান্তিক…আমার জীবন এখন আপনাকে ঘিরেই…”

প্রান্তিক হাসলো…
— “ছোটবেলায় বর বউ খেলতে খেলতে আমরা নিজেরাই বর বউ হয়ে গেলাম, কবে যে তুই থেকে তুমিতে চলে এলাম বুঝতেই পারলাম না…”

— “হুম আমিও যে কেনো প্রান্তিক দা তুমি থেকে প্রান্তিক আপনিতে চলে এলাম জানিনা…”

প্রান্তিক অনামিকার কপাল থেকে ঠোট অবধি আঙুলের ওঠানামা করালো…
— “আমাদের প্রথম রাতটাকে মেমোরেবল করে রাখার জন্য তোমাকে আমার চাই অনামিকা,সম্পূর্ণ নিজের করে…”

— “আমি প্রস্তুত নিজেকে আপনার কাছে সমর্পণ করতে…”

বড়ো বিদেশী ঘড়িটা আওয়াজ করে জানান দিলো রাত তিনটে বাজে…রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে এক নবদম্পতি নিজেদের নতুন জীবনের শুভারম্ভ করলো…নিজের প্রথম রাতটা স্মরণীয় করে রাখার জন্য ভেসে গেলো প্রেমের জোয়ারে…অথৈ সাগরে তলিয়ে গেলো দুজন…ভালোবাসার বৃষ্টিতে সিক্ত হলো…

.

.
জানালা দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করতেই ঘুম ভেঙে গেলো প্রান্তিকের…নিজের বক্ষজোরে আবিষ্কার করলো তার প্রেয়সীকে…মুচকি হেসে অনামিকার কপালে স্নেহচুম্বন এঁকে দিলো প্রান্তিক…গোটা মুখে সিঁদুর লেপ্টে আছে অনামিকার…প্রান্তিক চট করে অনামিকার ঘুমন্ত মুখের একটা ছবি তুলে নিলো…তারপর অনামিকাকে নড়তে দেখে চোখ বুজে আবার ঘুমের ভান করলো…

অনামিকা চোখ খুলতেই লক্ষ্য করলো প্রান্তিকের বুকে সিঁদুর লেপ্টে আছে…গতরাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো ও…এই অবস্থায় প্রান্তিকের সামনে কিছুতেই থাকতে পারবেনা ও…তাই কম্বলটা জড়িয়ে কাল রাতের বেনারসিটা নিয়েই ছুটলো ওয়াশরুমের দিকে…

চোখ খুলে হাসলো প্রান্তিক…তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে রুম থেকে বেরোলো…পনেরো মিনিট পর ফিরে এলো হাতে দু কাপ কফি নিয়ে…অনামিকা এখনও ওয়াশরুম থেকে বেরোয়নি…তাই দরজা ধাক্কালো ও…
— “এতক্ষন ধরে ওয়াশরুমে কি করছো ? বেরিয়ে এসো…”

অনামিকা কোনরকমে শাড়িটা জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরোলো…লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে ও…
— “এত ঠাণ্ডার মধ্যে তুমি সকালে স্নান করেছো কেনো??”

–“ ওই ফ্ল্যাট থেকে একটা জামা এনে দিননা আমাকে…”

প্রান্তিক আলমারি থেকে একটা জামা বের করে অনামিকার হাতে দিলো…
— “কাল এনে রেখেছিলাম”

অনামিকা জামাটা নিয়ে আবার ছুটলো ওয়াশরুমে, পাঁচ মিনিট পর ফিরে এসে প্রান্তিককে ব্যালকনিতে বসে থাকতে দেখে নিশ্চিন্ত হলো ও…প্রান্তিকের মুখোমুখি হতে যে বড্ড লজ্জা লাগছে তার…কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা…

— “এখানে এসো”

প্রান্তিকের ডাক শুনে অনামিকা গুটিগুটি পায়ে ব্যালকুনীতে গিয়ে প্রান্তিকের পাশের চেয়ারটায় বসলো…প্রান্তিক কফি টা এগিয়ে দিলো ওকে…
— “আজকের সকালটা খুব সুন্দর, মনে হয় বৃষ্টি হবে…”

— “শীতকালেও বৃষ্টি হয় এখানে?”

— “হ্যাঁ, ইন্ডিয়ায় এখন সামার চলছে, আর এখানে বারো ডিগ্রী, আমার শহর তোমার পছন্দ হয়েছে অনু?”

অনামিকার মুখ ভার হয়ে যায়,
— “সারাক্ষণ যদি একটা ঘরের মধ্যেই বন্দী থাকলাম,তাহলে আপনার শহর সম্পর্কে জানবো কিভাবে…”

— “আর কয়েকটা মাস ওয়েট করো,ইন্ডিয়া থেকে ফিরে এসে আমরা শুধু ঘুরে বেড়াবো…”

অনামিকা কিছু বলেনা,প্রান্তিক অনামিকাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য অনামিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে যায়…
— “কাল রাত কেমন কাটলো বউ?”

অনামিকার কানের পাশটা গরম হয়,মুখে লজ্জার লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে…
— “আপনি খুব অসভ্য…”

— “অ্যান্ড ইউ আর সো হ…”

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই অনামিকা প্রান্তিকের মুখে কফি কাপটা ঢুকিয়ে দেয়…তারপর ওখান থেকে উঠে রুমে চলে আসে…প্রান্তিক নিজের মুখ থেকে কাপটা সরিয়ে অনামিকার দিকে তাকিয়ে হাসে…
— “আমার লজ্জাবতী”

[যারা শুধু লাইক করে পালাও অথবা যারা শুধু গল্প পড়ে পালাও তাদের থেকে একটা করে কমেন্ট আশা করছি আমি,এতে আমি জানতে পারবো আমার গল্পের পাঠকসংখ্যার পরিমাণ, আর আমি লেখায় এনার্জি পাবো..]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here