তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল #পর্ব_২৬ #সারিকা_হোসাইন®

0
204

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_২৬
#সারিকা_হোসাইন®

★★★★
মেঘলা আকাশ সাথে শিরশিরে বাতাস,সব মিলিয়ে যেনো ঘুরতে যাবার উপযুক্ত সময় এটা।
মানুষ সামাজিক জীব,সমাজে বেঁচে থাকার অদম্য লড়াই করতে গিয়ে মানুষ পরিণত হয়েছে যন্ত্র চালিত রোবটে।
টাকার পিছে,একটু সুখে থাকার আশায়,ভালো খাবারের জন্য মানুষ তার সকল চাওয়া পাওয়া ইচ্ছে, অনিচ্ছা সব কিছু যেনো মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছে।সকল দায়িত্ব পূরণ করতে গিয়ে নিজের জন্য সময় বের করাই যেনো দুষ্কর।

যান্ত্রিক এই জীবন কে ছুটি দিয়ে মুহিত আর স্বর্গ একটু ভালো ভাবে নিজেদের জন্য সময় কাটাতে এসেছে ফ্যান্টাসি কিংডম এ।
আজ তারা তাদের সকল ক্লান্তি ভুলে,ডিউটি ভুলে,কারো অর্ডার এর তোয়াক্কা না করে বাঁধাহীন একটি দিন উপভোগ করবে।

বড় হবার সাথে সাথে মানুষ শৈশবের সবকিছু ভুলে যায়,বা শৈশবের জিনিস গুলো করতে গেলে অনেকে নাক ছিটকিয়ে বলবে ―বুড়ো বয়সে ঢং!
কিন্তু যেই আনন্দঘন শৈশব একবার হারিয়ে গিয়েছে তা কি আর ফিরে পাওয়া যাবে কোনো দিন?

স্বর্গের আজ বাচ্চা হতে ইচ্ছে হয়েছে।আজকের দিন সে তার ছোটবেলায় যেভাবে হেসে খেলে কাটিয়েছে সেভাবে কাটাবে।সাথী হিসেবে মুহিত রয়েছে।

প্রথমে তারা দুটো টিকিট নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
টিকিটের সাথে যেই রাইড গুলো আছে তারা প্রথমে ওগুলো ট্রাই করবে।
প্রথমে মুহিত ডিসাইড করলো তারা রোলার কোস্টার এ উঠবে।
স্বর্গকে যতোটা উচ্ছসিত দেখা গিয়েছিলো প্রথমে, রোলার কোস্টার এর নাম শুনেই মুখ চুপসে গেলো তার।
কিন্তু মুহিত খুব এক্সাইটেড।স্বর্গকে বগল দাবা করে মুহিত ছুটলো রোলার কোস্টার এর দিকে।
একদম সামনের সিটে বসে পড়লো মুহিত।
স্বর্গ নিজেকে মুহিতের সামনে দুর্বল প্রমান করতে নারাজ।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু হাত পা কাঁপছে।
কিছুক্ষন পর ব্যারিকেড হ্যান্ডেল গায়ের সাথে সেটে গেলো।
স্বর্গ বুঝতে পারলো এখন এটা চালু হবে।
সাথে সাথেই মুহিত কে খামচে ধরলো।
হোহো করে হেসে কুটিকুটি হলো মুহিত।
স্বর্গকে জিজ্ঞেস করলো
“”ভয় লাগছে মনা?””
স্বর্গ কিছু উত্তর করার আগেই ছুটে চললো রোলার কোস্টার,ধীরে ধীরে স্পিড বাড়তে থাকলো।
স্বর্গ প্রথমে যেই ভয়টা পেয়েছিলো নিমিষেই সেটা আনন্দে পরিণত হলো।
খুশিতে চিল্লাতে চিল্লাতে চোখ দিয়ে পানি বের করে ফেললো সে।

এর পর বড় যেই নৌকা স্যান্টা মারিয়া আছে ঐটাতে উঠলো।
এবারো মুহিত একদম লাস্টের মাথায় গিয়ে বসবে।
তার মতে যতো উপরে উঠে দোল খাওয়া যাবে ততো মজা।
স্বর্গ এবার কিছুতেই উপরে উঠবে না।
মুহিত টেনে হিচড়ে জোর করে স্বর্গকে নিয়ে বসিয়ে দিলো একদম লাস্ট মাথায়।
শুরু হলো দোল।
স্বর্গ ভয়ে চোখ বন্ধ করে হ্যান্ডেল চেপে ধরে খিচে বসে রইলো।
তার মনে হচ্ছে সে হাওয়ায় ভাসছে।তার পায়ের নীচে সব ফাঁকা।পেটের ভেতর থেকে সব বেরিয়ে যাচ্ছে।
পুরো সময় সে চোখ বন্ধ করেই কাটালো।
এর পর বাম্পার কার খেলায় স্বর্গ মুহিত কে চোখ ইশারায় বুঝিয়ে দিলো
―দেখে নেবো তোকে।
মুহিত ফিচেল হাসলো।
শুরু হলো দুজনের টক্কর,স্বর্গ মুহিত কে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে এসে মেরে দিচ্ছে ।বিজয়ীর হাসি স্বর্গের চোখে মুখে।
মুহিত ইচ্ছে করেই স্বর্গকে জিতিয়ে দিয়ে মনে মনে হাসলো আর বললো
―বাচ্চাটা আমার।

একে একে সব গুলো রাইড শেষ করে বেরিয়ে আসে তারা।
হাসতে হাসতে গাল ব্যাথা হয়ে গেছে স্বর্গের।
মুহিত আদুরে স্বরে জিজ্ঞেস করে
―ম্যাডাম আপনার নেক্সট প্ল্যান কি ?
এক বাক্যে স্বর্গ পেটে হাত দিয়ে বলে উঠলো
―খাবো।
খুব খিদে পেয়েছে।
দুজনেই জিপে উঠে বসলো,মুহিত গাড়ি হাকালো ভালো রেস্টুরেন্টের দিকে ।
আধঘণ্টা বাদে তারা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেলো।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে ওয়েটার ডেকে ইচ্ছে মতো অর্ডার দিলো স্বর্গ।
ওর্ডার দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেস হতে।
মিনিট পাঁচেক পরে ফিরে এসে খাবার এখনো দেয়নি কেনো ?
সেটা নিয়ে মুহিত কে খুঁচিয়ে যাচ্ছে।

মুহিত ভাবছে অন্য কথা!
―এই ছোট পেটে এতো খাবারের জায়গা হবে কি করে?
তবুও মুখে কিছুই বললো না,পরে দেখা যাবে রেগে মেগে খাবারই খাবে না।
অযথা ঝামেলার দরকার কি বাবা?
শুধু মাথা ঝাকিয়ে আসবে, আসবে, বলে অপেক্ষা করতে বললো।

কিছুক্ষন পর তিন জন ছেলে ধীরে ধীরে খাবার গুলো নিয়ে টেবিলে পরিবেশন শুরু করলো।
খাবার রেখে চলে যেতেই স্বর্গ দুই হাতে দুটো স্পুন নিয়ে উচ্ছসিত হয়ে মুহিতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
―লেটস ডিগ ইট!

একের পর এক খাবার মুহূর্তেই সাবাড় করে দিচ্ছে স্বর্গ।
মুহিতের মনে হচ্ছে খাবার গুলো বোধ হয় বেশি স্বাদ।
নিজেও টেস্ট করে দেখলো।
উহু আহামরি কিছুই না।
মুহিত যেনো আজ অন্য আরেক স্বর্গ কে দেখছে।
যেই মেয়ে এতো ডায়েট মেইনটেইন করতে করতে শুকিয়ে শুঁটকি মাছ হয়ে আছে,সেই মেয়ের ডায়েট ফায়েট আজ কোথায় তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালালো?

মুহিত ভেবেছিলো অর্ধেকের বেশি খাবার নষ্ট হবে,কিন্তু মুহিতকে ভুল প্রমাণ করে স্বর্গ সব খেয়ে ফেলেছে।
মুহিত একটা ড্রিংকস এর বোতলে স্ট্র ঢুকিয়ে স্বর্গের পানে এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
―আরো কিছু খাবে সোনা?
স্বর্গ মাথা নেড়ে অর্ডার দেয়ার ভঙ্গিতে বললো
―নো, এখন শপিংয়ে যাবো।

রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে মুহিত আবার গাড়ি হাকালো।গন্তব্য স্বর্গের পরিচিত শপিংমল।
কেনাকাটা শেষ করতে করতে রাত আটটা বেজে গেলো।এদিকে নাফিজ মাহমুদ সমানে ফোন দিয়ে যাচ্ছে তারা কোথায়?
সৌম্যের বাবা মা এসেছে।
স্বর্গকে নিয়ে দ্রুত জিপে বসলো মুহিত।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে স্পিড বাড়িয়ে দিলো।
রাত সাড়ে নয়টার মধ্যে পৌঁছে গেলো নাফিজ মাহমুদ এর বাংলো তে।

শপিং ব্যাগ গুলো দুই হাতে জাপ্টে ধরে বহু কষ্টে হেলেদুলে উপরে উঠে গেলো স্বর্গ।
মুহিত সৌম্যের বাবা মায়ের সাথে কুশল বিনিময় করে ফ্রেস হতে গেলো।

সৌম্যের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল মধুপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে।সেখান থেকে আসতে তাদের একটু দেরি হয়ে গেছে।ঠিক সময়ে গাড়ি ধরতে না পারায় দুপুরে পৌঁছনোর কথা থাকলেও সন্ধে গড়িয়ে গেছে।
সৌম্যের বড় একটা বোন আছে,তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
সৌম্যের বাবা মা দুজনেই খুবই সাধাসিধে আর মিশুক প্রকৃতির।
পিউকে তারা খুবই পছন্দ করেছে।
সৌম্য আর পিউ চাইলে তারা আজকেই আংটি পড়িয়ে আকদ করে রাখবে।।

সৌম্যের বাবা মায়ের আরো কয়েকদিন পরে আসার কথা ছিলো।পিউ এর কথা চিন্তা করে সৌম্য আজই তাদের ফোন করে নিয়ে এসেছে।
মুহিত সৌম্যকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো কি করতে চায় সে?
সৌম্য সাবলীল ভাবে উত্তর দিলো
―স্যার আমি আজকেই আকদ করাতে চাই,আগামী সপ্তাহে ওকে তুলে নেবো।পিউ ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছে।ওর এখন আমাকে বিশেষ প্রয়োজন।মুখে না বললেও আমি বুঝতে পারি।
বলেই মাথা নিচু করলো সৌম্য।

মুহিত সৌম্যের কাঁধ চাপড়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসলো।
পকেট থেকে ফোন বের করে মেজর আদ্রিয়ান এর নম্বর ডায়াল করলো।
―কাজী নিয়ে আসুন মেজর আদ্রিয়ান।
সকলের মুখে হাসি ফুটলো,পিউ নার্ভাস হয়ে গেলো।

পিউকে গোসল করিয়ে বিছানায় বসালো স্বর্গ।
এরপর মুহিতের শপিং করে দেয়া ব্যাগ হাতড়ে একটা মেরুন রঙের সোনালী পাড়ের জামদানি শাড়ি বের করলো।
সাথে কিছু নতুন সিম্পল গহনা।
পিউকে দেখিয়ে বললো এগুলো তোর জন্য এনেছি।
পছন্দ হয়েছে?

পিউ নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিলো।স্বর্গ পিউকে জড়িয়ে ধরে বললো
―কিচ্ছু হয়নি,মনে কর আমি তোর বোন।মাম্মা,বাপী তোর ও মাম্মা বাপী।
এখান থেকেই তোর বিয়ে হবে,বিয়ের পর তোর নাইয়র ও এখানেই করবি।
কি করবি তো?
শাসিয়ে জিজ্ঞেস করলো স্বর্গ।
পিউ চোখের জল মুছে মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকালো
সে অবশ্যই আসবে!

খুবই সিম্পল ভাবে, ঘরোয়া পরিবেশে আংটি বদল আর আকদ হয়ে গেলো।
আগামী সপ্তাহে সেনা কুঞ্জে বড় অনুষ্ঠান করে সৌম্য পিউকে ঘরে তুলবে।
বিয়ে নিয়ে পিউ এর অনেক ফ্যান্টাসি ছিলো।
সৌম্য সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।
বাবা মা পাশে নেই তো কি হয়েছে?সৌম্য তো মরে যায়নি।এখনো অক্ষত অবস্থায় পিউ এর সামনে শ্বাস নিচ্ছে।

যদিও বিয়ের পর কিছু ঝামেলা আছে,সৌম্য এখনো ব্যাচেলর অফিসার্স কোয়ার্টার এ থাকে,বিয়ের পর কোয়ার্টার এর জন্য আবেদন করলে সেটাও সাবমিট হতে একটু সময় লাগবে।
তবুও সৌম্য সব ভেবে রেখেছে।
বাইরে বাসা নেবে সৌম্য দরকার পড়লে।তবুও পিউকে একা ছাড়বে না।
রাত বারোটা নাগাদ সকল কাজ শেষ করে সৌম্য আর মুহিত চলে যায় তাদের কোয়ার্টার এ,সৌম্যের বাবা মা থেকে যায়।
তারা ভোরে গ্রামে ফিরে যাবে।
তিন কুলে তেমন নিকট আত্মীয় না থাকায় কাউকে বিয়েতে নিমন্ত্রণ করার ও ভেজাল নেই।
অনুষ্ঠানের আগের দিন তারা চলে আসবে বড় মেয়েকে নিয়ে।

――――
রাত একটা বেজে দশ মিনিট।কোনোভাবেই মুহিতের ঘুম আসছে না।কাল দুপুরে আহিয়ান এর সাথে ভিজিটিং আছে।
দুইয়ে দুইয়ে চার কিছুতেই যেনো মিলছে না।
আশরাফ চৌধুরী গেলো টা কোথায়?

সহসাই লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো মুহিত।
সেনা নিবাস থেকে আশরাফ চৌধুরীর বাসা বিশ মিনিটের রাস্তা।
দুস্টু বুদ্ধি খেলে গেলো মুহিতের মাথায়।

কালো একটা শার্ট পরে মাথায় নরমাল ক্যাপ পরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে চোরের মতো পা টিপে অন্ধকার হাতড়ে বেরিয়ে এলো গেটের কাছে।
আসতেই নাইট গার্ড কে গেটের কাছে আসতে দেখে একটা ঝাউ গাছের পিছনে লুকিয়ে গেলো।
লোকটি সরতেই দ্রুত গতিতে গেট বেয়ে লাফিয়ে রাস্তায় চলে এলো।
নাইট গার্ড শব্দ পেয়ে দৌড়ে গেটের কাছে এসে কিছুই দেখতে পেলো না।

প্রথমে ধীরে পরে জোরে হেটে একসময় দৌড়াতে শুরু করলো মুহিত।
দৌড়াতে দৌড়াতে চৌধুরী ম্যানশন এর সামনে এসে হাঁটুতে হাত দিয়ে হাপাতে লাগলো।
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রেস্ট নিয়ে ছোট টর্চ বের করে আবার গেট টপকে ভেতরে ঢুকলো মুহিত।
কোমরে রাখা রিভলবার হাতে পজিশন করে ধরে ধীরে ধীরে আগাতে থাকলো।
মানুষজন ধাক্কাধাক্কি করে,ঢিল ছুড়ে বাড়ির অবস্থা ঝকরমকর করে ফেলেছে।
মেইন গেটের লক পর্যন্ত নষ্ট করে ফেলেছে।
মুহিত বিনা শব্দে প্রত্যেকটি তলায় ঘুরে ঘুরে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করলো।সন্দেহ জনক কিছুই পেলো না।তবুও হাল ছাড়ার পাত্র সে নয়।

সুযোগ বুঝে প্রত্যেক টি তলায় একটি করে স্পাই মিনি ভয়েস রেকর্ডার সেট করে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।
মুহিত শতভাগ নিশ্চিত আশরাফ চৌধুরী বাড়িতেই কোথাও লুকিয়ে রয়েছে।

হাটতে হাটতে ফেরার পথে নাফিজ মাহমুদ এর বাংলো দেখে সুপ্ত ইচ্ছে জেগে উঠলো মুহিতের মনে।
রাত তিনটে বাজে তবুও তার পা এই রাস্তা থেকে সরছে না।
ফোন বের করে স্বর্গের নম্বরে কল করতেই রিসিভ করলো স্বর্গ।
ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো
হ্যালো মুহু!
মুহিত যেনো এই রোমাঞ্চকর কন্ঠ শুনে আরো পাগল হয়ে গেলো।
নিজেকে সামলে বলে উঠলো
―পাঁচিল টপকে যদি তোমাদের দরজার সামনে যাই আমাকে তোমার সাথে ঘুমুতে দেবে?
মুহিতের কথায় নিমিষেই স্বর্গের ঘুম ছুটে গেলো।

“”ছেলে বলে কি!”

দ্রুত বেলকনির দরজা খুলে আশেপাশে তাকিয়ে বললো
―কোথায় তুমি?তোমাকে তো দেখছি না।
মুহিত ফিসফিস করে বলে উঠলো
―আলোতে দাঁড়িয়ে দাঁত ক্যালাবো যাতে চোর মনে করে গার্ড ধরে ফেলে?
স্বর্গ আঙ্গুল কামড়ে ভাবতে লাগলো কি করবে।
পিউ আজ গেস্ট রুমে ঘুমিয়েছে। সৌম্যের বাবা মা ও নীচে ঘুমুচ্ছে।

মুহিত কে মেইন গেট দিয়ে আসার সময় হঠাৎ কেউ যদি দেখে ফেলে?

মুহিত আবার বলে উঠলো
“”কি ব্যাপার কথা বলছো না কেনো?
― ফিরে যাবো?
তড়িঘড়ি করে স্বর্গ বলে উঠলো
এমা, না না,যেও না।
– শুনো,আমার রুমের পিছনের বেলকনি দিয়ে উঠতে পারবে?
পাইপ বেয়ে কিন্তু উঠতে হবে!
মুহিত সিচুয়েশন বুঝলো,তবুও মনের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হবে কার সাধ্য?

ফোন কেটে সুযোগ বুঝে পাঁচিল টপকে স্বর্গের পিছনের বেলকনির দিকে অগ্রসর হলো।দুটো বেলকনি ই খোলা,গ্রিল হীন।আকাশের চাঁদ হাতে পেলো মুহিত।
লম্বা মানুষ চাইলেই অসাধ্য সাধন করতে পারে।
একটু পাইপ বেয়ে উঠতেই প্রথম বেলকনিতে উঠতে পারলো।
এর পর কোমড় সমান ইটের গাঁথুনি তে পাড়া দিয়ে স্বর্গের বেলকনিতে উঠে পড়লো।এদিকে হাত ছিলে গেলো সামান্য।সেসব গায়ে মাখলো না মুহিত।

বেলকনির দরজা আটকে স্বর্গ মুহিতকে বিছানায় বসতে দিলো।এর পর পানির বোতল এগিয়ে দিলো।
ঢকঢক করে পুরো বোতলের পানি সাবাড় করলো মুহিত।
হঠাৎ ই ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান চোখে জিজ্ঞেস করলো স্বর্গ
―এমন ভুত সেজে কোথায় গিয়েছিলে?
কেনো আমাকে দেখে খুশি হওনি?পাল্টা প্রশ্ন করলো মুহিত।
আচ্ছা তাহলে চলে যাই বলেই উঠে দাঁড়ালো।
কুনুই বরাবর টেনে ধরলো স্বর্গ
―কখন বললাম খুশি হইনি?
ঘুম পাচ্ছে শুয়ে পড়লাম বলেই মুহিত বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে গেলো।
স্বর্গ বেয়াক্কেল এর মতো দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করল
―এহ?তুমি ঘুমুতে এসেছো এখানে?
―গায়ের শার্ট খুলতে খুলতে মুহিত রসিয়ে রসিয়ে বললো
―অনেক কিছুই করতে এসেছি।শুয়ে পড়ো বেশি কথা না বলে।

লাইট অফ করে নীল রঙা ডিম লাইট জ্বালিয়ে দুরুদুরু বুক নিয়ে মুহিতের পাশে শুয়ে পড়লো স্বর্গ।
হঠাৎ ই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মুহিত স্বর্গ কে।

এর পর ফিসফিস করে স্বর্গের কানের কাছে মুখ এনে বললো
―আগামী মাসেই বিয়ে করে তুলে নিয়ে যাবো তোমাকে,এভাবে আর থাকা যাচ্ছে না।
মুহিতের গরম নিঃশ্বাসে শিহরণ বয়ে গেলো স্বর্গের সারা শরীরে।
শক্ত করে মুহিত কে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
স্বর্গের চোখে মুখে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলো মুহিত।
মুহিতের চুল খামচে ধরলো স্বর্গ।
নিজেকে আর কন্ট্রোলে রাখা গেলো না।
নিমিষেই উন্মাদনায় দুজন দুজনের মাঝে হারিয়ে গেলো।

★★★★
আজ নয় তারিখ,কাঙ্ক্ষিত সেই সময় একটু পরেই ঘনিয়ে আসবে।
সৌম্যকে না নিয়ে সিভিল ড্রেসে নিজের কালো রঙের কে টি এম বাইক স্টার্ট দিলো মুহিত।মাথায় কালো হ্যালমেট লাগিয়ে ছুটে চললো হাজতে।
নির্দিষ্ট সময়ের এক ঘন্টা আগে এসে দাঁড়িয়ে আছে মুহিত।আজ তার অনেক কাজ।
সকল কাজের দ্রুত সমাধা না করলে সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকবে।
একদিকে মা বোন,অন্যদিকে বউ।
সবাই চুম্বকের মতো টানছে কিন্তু কারো কাছেই যাওয়া যাচ্ছে না।
আশরাফ চৌধুরী কে নির্মূল করে তবেই ধুমধাম করে স্বর্গ কে ঘরে তুলবে মুহিত।
শত্রু বাঁচিয়ে রেখে আনন্দ উল্লাস করতে মন সায় দিচ্ছেনা এবার।
এদিকে অপেক্ষা করতেও কষ্ট হচ্ছে।
অপেক্ষার সময় সবচেয়ে দীর্ঘ।

হঠাৎই এলার্ম বেজে উঠলো ফোনে।ধ্যান ছুটে গেলো মুহিতের।
দুটো বেজে চল্লিশ মিনিট।আর মাত্র পাঁচ মিনিট পরেই শুরু হবে দর কষাকষি।
কতদিন চালাতে হবে আর এই তামাশা?
ভিজিটিং রুমে বসে পায়ের উপর পা তুললো মুহিত।
চোখ বন্ধ করে গুনলো
―ওয়ান,টু,থ্রি!
আহিয়ান এসেছে।
আহিয়ান কে দেখেই মুখের হাসি প্রশস্ত হলো মুহিতের।

মুহিতকে দেখেই আবোল তাবোল বলতে শুরু করলো আহিয়ান।
মুহিত চোখ দিয়ে ইশারা করতেই কারারক্ষী বাইরে চলে গেলো।

সোজা হয়ে বসলো মুহিত।
এক ভ্রু বাঁকা করে ফিচেল হেসে আহিয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
―নিজের ফর্মে এসো আহিয়ান।
―ইউ আর আন এবল টু ডজ মুহিত ওয়াসিফস আইজ!

#চলবে।

[ঝড় বৃষ্টি নেট নেই,এজন্য দেরি হয়ে গেলো।সকলেই সাবধানে থাকবেন ভালো থাকবেন।ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here