শ্রাবণধারা” পর্ব- ০৯ (নূর নাফিসা) .

0
111

“শ্রাবণধারা”
পর্ব- ০৯
(নূর নাফিসা)
.
.
দৃষ্টি নত রেখে ইফতেখারের পিছু পিছু ঘরে এসে দাঁড়ায় শ্রাবণ। ইফতেখার সকলের মুখে তাকিয়েই ভাবভঙ্গি দেখে। এতোটা সময় পর সে এই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। তা সকলের চোখেই বিস্ময়ের কারণ। খালিদ মামার উদ্দেশ্যে বলে,
“মামা, এইটাই সেই মেয়ে।”
আফজাল হোসেন তাকিয়ে দেখে শ্রাবণের দিকে। বলেন না কিছুই। পারভীনের আনচান মন জিজ্ঞেস করে,
“কে সে?”
ইফতেখার স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেয়,
“শ্রাবণ। আমরা বিয়ে করে ফেলছি, মা।”
“কিহ!”
পরী দরজার কাছে থেকে জ্বিভ অর্ধেক বের করে দিয়ে মাথায় হাত তুলেছে। এইটা কি শুনলো সে! ঘরে এতোক্ষণ কি চলছিলো আর এখন কিসের উদয়ন ঘটলো! কাহিনী মূল চরিত্র তো ছোটভাইজান না। খলনায়কের মতো ঝাপিয়ে পড়লো যেন তার বড় ভাইজান! ওদিকে পারভীনের বিলাপ শুরু!
“আল্লাহ! আর কি দেখা বাকি আমার? আর কি দেখা বাকি? সব একবারে দেখায় দেও। ছোট পোলা নিয়া কয়দিন যাবত তামাশা, আর বড় পোলা নিয়া নতুন জ্বালা! কি অপরাধ করছিলাম রে, বাপ? কি অপরাধ করছিলাম যে বাপ মা ভুইলা বিয়া কইরা সারছোস? কো আমারে, কো। প্রায়শ্চিত্ত কইরা যাই কিছু মরার আগে।”
কিছুই বলে না ইফতেখার। খালিদ তো স্তব্ধীভূতই হয়ে আছে! এমন দেখাই যে ইফতেখার দেখবে, তা তো কল্পনাও করেনি তখন বিপুকে নিয়ে আসার সময়। যাকে গুরু মনে করে নিয়ে গেলো, সে-ই ঘটনার কেন্দ্রীয় আসামী হয়ে গেলো! আফজাল হোসেন গম্ভীরমুখে বলেন,
“বাপের ইজ্জত নিয়া ভালোই টানাটানি লাগছোস দুই ভাই। সন্ধ্যায় খবর আসে ছোটজন পালাইছে। রাতে খবর হয় বড়জন সেই মাইয়া বউ কইরা নিয়া আসছে। সকালে এলাকা জুইড়া মুখেমুখে খবর হইবো চেয়ারম্যানের। বাহ! খুব ভালা।”
“আপনি রাজি হইবেন না, তাই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হইছে আব্বা।”
“তো এহন সামনে দাঁড়াইছোস কোন মুখে?”
ধমক দেন আফজাল হোসেন। নিশ্চুপ দৃষ্টি নত করে রাখে ইফতেখার। পারভীন উত্তেজিত হয়ে উঠে।
“বের হো ঘর থেকে। যা, বের হো। কোনো পোলা গোলা লাগবো না আমার। যার যার রাস্তা সে দেইখ্যা নে। যা।”
পারভীনের ধাক্কায় হালকা নড়ে উঠে ইফতেখার। বিপরীত কোনো প্রতিক্রিয়া রাখে না। উচ্চস্বরে শ্রাবণকে ধমক দেয় পারভীন,
“এই বেহায়া মাইয়া, দাঁড়ায় রইছো কোন সাহসে? বের হও!”
আসলেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না শ্রাবণ। একটু বসতে বললেও বড় উপকার হতো তার। এমন পরিস্থিতিতে বসার সুযোগও পাচ্ছে না। তার পাশে কোনো বসার জায়গা থাকলেও বোধহয় অনুমতি ছাড়াই বসে যেতো। ক্রমশই ক্রোধের মাত্রায় চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে আফজাল হোসেনের। শ্রাবণের দিকেই তাকিয়ে আছে ক্রোধপরায়ণ দৃষ্টি। লালাভ বর্ণের রূপবতী। মুখমণ্ডল এখনো লালচে হয়ে আছে শ্রাবণের। এই রূপেই বুঝি মজে গেছে তার ছেলে। তিনি শ্রাবণকেই জিজ্ঞেস করেন,
“বাড়ি কই তোমার? বাপের নাম কি?”
কোনোরকম জবাব দেয় না শ্রাবণ। তাকায় না পর্যন্ত কারো দিকে। প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে গলার স্বর ক্রুদ্ধ হয় আফজাল হোসেনের।
“কথা কও না ক্যা? সাত্তার তোমার কি হয়?”
নিরুত্তর শ্রাবণ ক্লান্তশ্রান্ত চোখদুটোও বন্ধ করে নিয়েছে এবার। দেহের অস্থিরতা লুটিয়ে দিয়েছে মেঝেতে। সবার আগে চিৎকার করে উঠে পরী! বাকিদের কেউ কেউ বিস্মিত। ইফতেখার সাথে সাথেই বসে পড়েছে। মাথার শব্দটা তার বুকে হেনেছে বড়সড় আঘাত! একটুও যদি আন্দাজ করতে পারতো শ্রাবণ হেলে দুলে যাচ্ছে, তবেই ধরে ফেলতে পারতো। হেলেদুলে যাওয়া দেখে বিপু বলে উঠেছিলো,
“ভাই!”
সে চোখ তুলে বিপুর মুখে তাকিয়ে এদিকে ফিরতে ফিরতে ততক্ষণে পড়েই গেছে শ্রাবণ। পাশে থেকেও ধরতে পারলো না ইফতেখার! এখন মাথা হাতের তালুতে রেখে ঝাকিয়ে ডাকছে তাকে। কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না শ্রাবণের। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। জ্ঞান হারিয়েছে বুঝি! পরী ছুটে এসেছে পানির জগ নিয়ে। হালকা পানি ছিটালেও চোখ খুলে না শ্রাবণ। ওদিকে পারভীনের বুক কেমন ধড়ফড় করতে থাকে। কি হলো হঠাৎ! এগিয়ে এসে সে-ও অবস্থা বুঝতে স্পর্শ করতেই চোখ বড় করে ফেলে।
“এর তো ইচ্ছেমতো জ্বর! শরীর পুড়ে যায়!”
বিপু এগিয়ে বলে,
“ডাক্তার ডাকবো?”
“ডাক জলদি। মরার আপদ, সব আসে আমার ঘরে!”
বিপু বেরিয়ে যায় দৌড়ে। ইফতেখার শ্রাবণকে তুলে নিয়ে যায় অর্পার বিছানায়। পরী পানির বালতি নিয়ে দৌড়ায়। অর্পা চিন্তত মুখেই দাঁড়িয়ে থাকে পাশে। নড়ে না কেন? মরে টরে গেলো নাকি! চুল খুলে দিয়ে মাথার নিচে পলিথিন দেয় পরী। আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে পানি ঢালতে থাকে অনবরত। পারভীন পায়ের তালু ঘঁষেছে কতক্ষণ। জ্ঞান ফিরছে না তাই অস্থির হয়ে উঠেছে। যদি এখন মরেই যায় তার ঘরে! কি করবে! ইফতেখার থার্মোমিটার খুঁজতে ব্যস্ত। ওদিকে মুহুর্তেই আফজাল হোসেনের ঘর ফাঁকা হয়ে গেছে। স্থির দাঁড়িয়ে আছে কেবল মামা ভাগ্নে। মামা সম্মান চিন্তায়, ভাগ্নে মামাকে বুঝতে। সকলের ছোটাছুটির কাজ থাকলেও এই দুজনের কিছু করার মতো নেই। খালিদ তো পুরোই বোকা হয়ে রইলো ঘটনায়! ইফতেখারকে নিয়ে সে এমন কিছু বিন্দু মাত্র কল্পনাও করেনি। মামার আস্থার কতটা ক্ষুন্ন হলো, তা ভেবেই নিরাশ হয়ে উঠছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলে,
“মামা, আমি বাড়ি যাই তবে।”
কিছুই বলেন না আফজাল হোসেন। চুপচাপ বেরিয়ে যায় খালিদ। বিপু কিছুক্ষণের মধ্যে মোটরসাইকেলে বসিয়ে ডিসপেনসারি হতে কম্পাউন্ডারকে নিয়ে এসেছে। জ্বর মেপে তিনি স্যালাইন দেয়ে গেছেন। আবার বিপুকে সাথে নিয়ে গেছেন কিছু ওষুধ দেওয়ার জন্য। প্রায় আধঘন্টা যাবত টানা পানি ঢেলে গেলো পরী। অর্পার কাঁথা বালিশ সব চেপে দিয়েছে তার উপর। অর্পা নিরব দর্শক হয়ে দেখছে। ভাবি তার দেখতে ভীষণ সুন্দরী। কিন্তু এই যে বাবা মায়ের বিরুদ্ধে ভাইটাকে নিয়ে পালিয়ে গেলো, এটাই ভারি অপছন্দের হলো। তারউপর তার বিছানার দখলদারি হওয়ায় আরও অপছন্দের হলো! একশো চার ডিগ্রি জ্বর ছুঁয়ে বসেছে শ্রাবণকে। অসুস্থতার প্রতি যেন পারভীনের মায়া হয়। পরী পানি ঢালতে থাকলে কিছুক্ষণ পাশে বসেছিলো সে। তাকিয়ে ছিলো শ্রাবণের মুখে। মেয়েতো ভারি সুন্দরী। ছেলের নজর কেড়ে নিয়েছে বুঝি এই রূপের ঝলকে? পালিয়ে এতো বড় অপরাধ করলো কেন? সুন্দরী মেয়ে ওই ভ্যানওয়ালা বাড়ির আত্মীয় হলো কেন? বড় ঘরে এদের জন্ম হতে পারে না? পরক্ষণে চোখ তুলে শক্ত দৃষ্টিতে তাকায় ইফতেখারের দিকে। হতচ্ছাড়া মেয়ে নিয়ে ভাগলো কেন!
ইফতেখার নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলো চিন্তিত বেশে। মাকে কটাক্ষ দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে সে প্রস্থান করেছে সঙ্গে সঙ্গে। নিজের ঘরে গিয়ে অযথাই একটু পায়চারি করলো। পরক্ষণে হাতমুখ ধুয়ে রান্না ঘরে এগিয়ে গেলো। পরী ব্যস্ত, তাই পরীকে ডাকে না। মা রেগে আছেন, তাই মাকেও ডাকে না। পেটে প্রচুর ক্ষুধা। হাড়ির ঢাকনা খুলে খুলে নিজেই প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে বসে যায়। বিপু ওষুধ নিয়ে ফিরে এসে তাকে রান্নাঘরে খেতে দেখলেই মাথা চুলকাতে চুলকাতে আবার চলে আসে। ভাই বিয়ে করে বড় ফ্রি মুডে আছে। তার মাথায় এতো টেনশন ভর করে আছে কেন? নিজে কবে এমন শান্তিযোগে ভাত খেতে বসবে?
গত কয়েকদিন ধরে ঘুমাতে এসে শ্রাবণের ব্যাপারে কথা বলতে থাকতো, দুদিন যাবত বিয়ের পরিকল্পনা করছিলো। আর আজ জ্বরে আক্রান্ত বউয়ের ভার মায়ের আর পরীর উপর ছেড়ে দিয়ে এসে মশারী টানিয়ে নিজের ঘরে ঘুমাতে ব্যস্ত ভাই তার! পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি অবস্থা! বিপু ঘরে এসে তার অবস্থা দেখে কোমড়ে হাত তুলে দাঁড়ায় একটা মুহুর্ত। কিন্তু কে দেখে তাকে? পরক্ষণে নিজের ঘুমের ব্যবস্থাও করতে থাকে। অর্পার চোখেও ভীড়েছে প্রচুর ঘুম। অথচ বিছানার মাঝখানে পড়ে আছে শ্রাবণ। অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমি ঘুমাবো কোথায়?”
পারভীন চোখ তুলে তাকায়। মেয়ের বিরক্তি বুঝতে পারে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে যায়,
“পরী, থাম এইবার। আর দিতে হইবো না পানি। রাতের বেলা এতো পানি দিলে ঠান্ডা আরও বাড়বো।”
“আম্মা, শরীর আগের চেয়ে অনেকটা ঠান্ডা হইছে না?”
“হু। পানি ফালায় দিয়া খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা কর।”
গামছা নিয়ে মাথা মুছে দিতে থাকে পারভীন নিজেই। বালতি নিয়ে বেরিয়ে যায় পরী। ঘরে ছিটিয়ে পড়া পানিটুকু মুছে দিয়ে পারভীনের সাহায্যে শ্রাবণকে একপাশে টেনে ঠিক করে শুয়িয়ে দেয়। অন্যপাশটা অর্পার জন্য ফাঁকা হয়েছে এবার। মেয়েকে ভাত খেতে ডেকে চলে যায় পারভীন। আফজাল আহমেদ গম্ভীরমুখেই খেতে বসেছে। অর্পার ঘরেই সবসময় মেঝেতে বিছানা পেতে ঘুমায় পরী। আজ রাত গভীর হয়ে এলেও পরী ঘুমাতে পারে না। ডাক্তারটা বলে গেছে স্যালাইন শেষ হয়ে গেলে ক্যানোলা খুলে ফেলতে। তাই একটু পরপরই মাথা তুলে দেখে শেষ হলো কি না? কিছুক্ষণ আগে পারভীন এসেও দেখে গেছে। এখন শেষ হতেই ঝটপট উঠে যায় পরী। সে তো পারবে না। কিন্তু ডাকবে কাকে? কাকা ঘরে থাকায় ওই ঘরে কড়া নাড়তেও দ্বিধা। অর্পাকেই ডাকে তাই ফিসফিস করে।
“আপা, এই আপা।”
“হু?”
ঘুম জড়ানো গলায় সাড়া দেয় অর্পা।
“আরে এই আপা, উঠেন। ভাবির স্যালাইন শেষ তো। ওইডা বন্ধ করেন।”
অর্পার আগে শ্রাবণেরই চোখ খুলে যায় পরীর ফিসফিসে। হাত বাড়িয়ে নিজেই বন্ধ করে ক্যানোলা খুলে নেয় হাত থেকে। কাঁথা সরিয়ে উঠে বসে শ্রাবণ। এলো চুল খোপা করে নেয়।
“ভাবি, আপনার জ্ঞান ফিরছে! এহন শরীরটা ভাল্লাগতাসে?”
পরীর জিজ্ঞাসার জবাবে স্মিত হেসে পলক ফেলে শ্রাবণ।
“নাম কি তোমার?”
“আমি? পরী।”
“বাহ! মাঝ রাতে পরীর দেখা!”
পরীরও কেমন অদ্ভুত ভালো লাগলো এতো রাতে কারো সাথে পরিচিত হতে পেরে। বিছানা ছেড়ে নামে শ্রাবণ।
“আরে, আরে। যান কই?”
“বাথরুমটা দেখাও।”
পরী এগিয়ে ধরতে যায় তাকে। শ্রাবণ বাঁধা দিয়ে বলে,
“আমি হাঁটতে পারবো। তোমার কষ্ট করতে হবে না।”
ভোর হতে না হতেই পাড়া জুড়ে কানাঘুঁষা উঠেছে, চেয়ারম্যানের বড় ছেলে বিয়ে করেছে। কিন্তু বড়লোকের বাড়িতে চাইলেই হুড়হুড় করে ছুটে আসতে পারে না জনসাধারণ। বউ দেখার ইচ্ছেটা ওই দূর হতেই পুষে রাখে মনে। নিকট আত্মীয় এসেছে দুয়েকজন। এসেছে খালিদের বউ, এসেছে খালিদের বড় ভাইয়ের বউ। আর আশপাশের দুয়েকজন। পালিয়ে বেড়ানোটা কানাঘুঁষার হলেও ইফতেখার সুন্দরী বউ এনেছে৷ এই ব্যাওয়ারটা ভারি প্রশংসাযোগে প্রকাশ করছে তারা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে নিজেকে আয়নায় দেখে শ্রাবণ। মুখ কেমন লালচে হয়ে আছে। চোখের ধার কিছুটা কালচে লাগছে। জ্বরের প্রকোপ কেমন অসুস্থ একটা ভাব এনে দিয়েছে চেহারায়। নিজেরই ভালো লাগছে না। অথচ সকাল সকাল পরী মেয়েটা মন্তব্য করে,
“ভাবি, আপনে কি যে সুন্দরী! আম্মায় তো ফ্যালফ্যালাইয়া খালি আপনারেই দেখতাছিল রাতে।”
অথচ এই ফ্যালফ্যাল করে দেখার মতো রূপ সে খুজে পাচ্ছে না লালাভ চেহারায়। নিজেই নিজেকে পরীক্ষা করে নেয় থার্মোমিটারে। একশো চার ডিগ্রির জ্বর একশো দুয়ে নেমে এসেছে। এসময় ইফতেখার এসেছে এই ঘরে। ঘুম থেকেই উঠে এসেছে মাত্র। কাছে এসে থার্মোমিটারের চোখ রাখে। কপাল ছুঁয়েও দেখে।
“ভালো লাগছে এখন?”
“আপনাকে তো ভালোই লাগছে। এতোটা সময় ঘুমিয়ে এখন এসেছেন খবর নিতে।”
“আপনি বেহুশ হয়ে গেছেন, সেই চিন্তায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”
নিঃশ্বাস কাঁপিয়ে শব্দহীন হেসে উঠে শ্রাবণ।
“মানুষ চিন্তায় পড়লে ঘুম হারায়। আর আপনি ঘুমিয়ে পড়েন?”
“পরীকে তো পাশেই রেখেছিলাম আপনার খেয়াল রাখতে।”
“হ্যাঁ আর বলতে হবে না। কে কি করেছে, আমি জানি সবই।”
“আপনি তো বে…”
ইফতখারকে থামিয়ে ফিসফিস করে শ্রাবণ।
“আমি জ্ঞান হারাইনি। তবে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকু ঠিক হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারউপর আপনাকে এমন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতেই পড়ে গেছি।”
ইফতেখারের চোখে ও মুখে যেন বিস্ময়ের হাসি ফুটতে চায় তার কথায়।
“আপনি মাথায় ব্যাথা পাননি?”
“পেয়েছি। কিন্তু মাথার ব্যাথার চেয়েও বেশি কষ্টকর ছিলো দাঁড়িয়ে থাকা। যাইহোক, আপনি কিন্তু আমায় সালামি দেননি। নতুন বউদের ঘরে এলেই সালামি পাওয়ার কথা। বাকিদের তো বাদ, আপনার থেকে কিন্তু নূন্যতম আশাটা করেছিলাম।”
ইফতেখার চোখ ডানে বামে নাড়ায় ভাবুক ভঙ্গিতে। আসলেই বোধহয় সালামি দেওয়া জরুরি ছিলো। তাই পকেটেও হাত রেখে দেখে টাকা আছে কি না। তিন-চারশোর মতো খুচরা ছিলো। শ্রাবণের মুঠোয় চেপে দিয়ে দেয় পুরোটা।
“নাশতা করে ওষুধ খান। জ্বর বাড়তে দিয়েন না।”
মুখে চাপা হাসি ধরে রাখে শ্রাবণ। শেষ কথা শুনতে পেয়ে দরজার পাশ থেকে মুখ চেপে ধরে হেসে উঠে পরী।
“আয় হায়! ভাইজান দেখি ভাবিরে আপনে আপনে কইরা ডাকে!”
সেই প্রেক্ষিতে কিছু বলে না ইফতেখার। বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
“নাশতা করতে দে, পরী। তোর ভাবির দিকে খেয়াল রাখিস।”
“হো, হইছে। আর কইতে হইবো না। এই ঘরে কেউ অসুস্থ হইলে এই পরীর চেয়ে ভালা খেয়াল কেউ রাখে না। পরী দায়িত্বে থাকতে আপনের বউও কেউ নিতো না। দুইদিক থেকেই নিশ্চিন্তে থাকেন।”
শ্রাবণ ব্যাগে টাকা রাখতে রাখতে স্মিত হাসে তার কথায়। পরক্ষণে বলে,
“তুমি তো ভারি দুষ্ট!”
“হো। দুষ্টামিডাও আমি বেশি করি। তাই সবার থেকে গালমন্দডাও বেশি বেশি করে খাই।”
তার কাঁধে হাত রেখে বাইরে যেতে যেতে শ্রাবণ বলে,
“আমার তো দুষ্টুই বেশি পছন্দের।”
“তবে আপনে গম্ভীর ভাইজানরে পছন্দ কইরা সারলেন ক্যামনে?”
“কারণ, তোমার গম্ভীর ভাইজানের ভালোবাসাটা একটু অন্যরকম সুন্দর।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here