পূর্ণ_তিথি নুসরাত সুলতানা সেজুথি (০৩)

0
164

#পূর্ণ_তিথি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
(০৩)

উদাস দৃষ্টি নিয়ে রাতের অন্ধকার দেখছে তিথি। অশ্বত্থ গাছের আশপাশ টা জোনাক পোঁকায় ভরা। পাল্লা দিয়ে উড়ছে। নিশুতিরাতে আলোর মেলা চলছে সেথায়। তিথির চোখের কোটর, ভরা নদী এখন। বাবার মুখটা বারবার ভাসছে চোখে।ছোট বেলায় আনন্দে হৈহৈ করে কাটানো সময় টার কথা মনে পড়ছে খুব। বাবার বুকে না ঘুমোলে ঘুম না আসা মেয়ে সে। বাবা চুলে বিলি কেটে দিতো, খাইয়ে দিতো। আদুরে স্বরে ডাকতো…সোনু!বাবার দেয়া ডাকনাম আজও আছে,নেই সেই পরিবার, নেই বাবা। এ নিয়ে যতবার পথে ঘাটে তার বাবার সাথে দেখা হয় ,ততবারই এরকম হয়। তার বাবার মুখে মায়ের নিন্দে,দুই ভাই বোনের প্রতি রাগ সব মিলিয়ে এক অসহ্য যন্ত্রনা আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরে তাকে। আজ এটা প্রথম বার নয়। বাবা নামক চরিত্রটা তার কাছে রহস্যের,অদ্ভূত। এত গুলো বছর লোকটা একা কাটালো,দ্বিতীয় বার বিয়ে অব্দি করলোনা।তিথির দাদু কত জোর করেও পেরে ওঠেননি। অথচ তাও মাকে ক্ষমা করছে না সে। কি চায় তার বাবা? না দিচ্ছে ডিভোর্স না করছে বিয়ে! কেন? বাবার মনে আদৌ কি মায়ের প্রতি ভালোবাসা বেঁচে আছে,এখনও?

তিথি চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ শূন্য,হাতে গোনা দু একটা তারাও নেই।হুতুম পেঁচার ডাক ভারি করছে রাতের পরিবেশ।সাথে তার মা আর ভাইয়ের ঘুমন্ত নিঃশ্বাস,সব মিলিয়ে গা হিম করা রাতেও তিথির একা জেগে থাকতে ভয় লাগছেনা। ভালো লাগছে উল্টে।রাতের অন্ধকার একাকীত্বের সব থেকে ভালো সঙ্গী।এই সময় কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেললেও কেউ বুঝতে পারেনা। কেউনা। তিথি মায়ের দিকে তাকালো, তার মায়ের ফর্সা চকচকে মুখটা অন্ধকারেও স্পষ্ট৷ কি সুন্দর তার মা! দুধে আলতা গায়ের রং, মাথা ভর্তি কালো চুল। মা যখন সিঁথিতে সিঁদুর পরেন,তিথি এক ভাবে তাকিয়ে দেখে। মাঝে মধ্যে মনে হতো,বাবার মত শ্যামবর্নের পুরুষের জন্যে তার সুন্দরী মা নয়। কিন্তু ছোটবেলায় বাবা মায়ের ভালোবাসা দেখে নিজেই নিজের ভাবনা নিয়ে হাসতো তিথি। মায়ের এই সৌন্দর্য, আজ তার সংসার ভাঙার প্রথম কারন।এই চাকচিক্যের রুপই তার কাল হলো। তিথি ভাবলো,

কেনো তার ভাগ্য এমন?কেন এত বছর কেটে যাওয়ার পরেও তার বাবা তার মায়ের প্রতি একিভাবে ক্রুদ্ধ?মায়ের কথা তুলতেই তার যত রাগ,ক্ষোভ ঠিকড়ে পরে চোখে মুখে।অথচ, প্রত্যেক কথায় তার মাকেই টানা চাই। একেই বুঝি বলে দাম্পত্য জীবন? স্বামী স্ত্রী বুঝি এমনই হয়?

তিথি অনেক সিনেমায় দেখেছে বাবা মা আলাদা হলে সন্তানেরা তাদের সব রকম ঝামেলা মিটিয়ে দিয়ে তাদের এক করে দিতো। বাস্তব জীবন টা কেন সিনেমার মত সহজ হয়না..?? সন্তান হিসেবে বাবা মাকে আলাদা আলাদা দেখতে কারোরই তো আনন্দ হয়না। এক বুক কষ্ট অনুভব হয়। পাহাড় সমতূল্য কষ্ট আর একটা পরিবার পাওয়ার তীব্র আকাঙখা অনুভুত হয়।

চোখ থেকে এক ফোটা শীতল অশ্রুকনা গড়িয়ে গাল অব্দি এলো তিথির।নাক টেনে মুছে নিলো সেটুকু। লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও গিয়ে শুয়ে পরলো ভাইয়ের পাশে। ভাইকে বুকের মধ্যে নিয়ে আস্তে আস্তে পিঠে হাত বোলাতে শুরু করলো। একটা সময় ঘুমের রানী দখল করলো তার সরু চিকন চোখ দুটোকে।

____________________________

দুহাতে হাতে একটা রাবারের বল ঘোরাতে ঘোরাতে ধপ করে তিথির পাশে এসে বসলো স্বপ্ন। একটু নড়ে উঠলো তিথি।তবে ভাবান্তর দেখালোনা। তিথির নির্বাকতায় ভ্রু ক্রুটি করলো স্বপ্ন…

— কিরে কাল থেকে মুখটাকে বাংলার পাঁচের মত করে রেখেছিস.. আবার কি হলো…??

তিথি গম্ভীরমুখে বলল,
—- কিছুনা,,,যা এখান থেকে,ভালো লাগছেনা আমার।

স্বপ্ন কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,
— সোনু,,,তুইতো জানিস তোকে দেখতে এমনিতেও পেত্নীর মতো। তারওপরে আবার মুখটা যদি এমন করে রাখিস, তোর এই বিভৎস রুপে আমার ভয় লাগবেনা বল…?

তিথি বিরক্ত হয়ে বলল,

—- উফ,,ভাই এখন ভালো লাগছেনা বলেছি তো, বকবক পরে করিস…

স্বপ্ন হাল ছাড়লোনা,
—- নাহ,,,,আগে বল কি হয়েছে..?

স্বপ্নের জোরাজুরির কাছে টিকতে পারলোনা তিথি।ঘুরে বসলো ওর দিকে। নিচুস্বরে বলল,

— বাবার সাথে দেখা হয়েছিল…

স্বপ্ন মাথা নেড়ে বলল,
—আমিও বুঝেছি এরকম কিছুই হবে…
আজকেও কথা শুনিয়েছে?

উত্তরে তিথি ওপর নিঁচে মাথা দোলায়।স্বপ্ন হেসে বলল,

—- তুই এসব নিয়ে এখনও মন খারাপ করিস.? এত দিনে তো অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কথা…

তিথি মলিন মুখে বলল,
— আচ্ছা আমাদের ভাগ্য টা এমন কেনোরে? সবাই তার বাবা মা কে নিয়ে একসাথে থাকে,,,আমরা কি দোষ করেছি বলতো….!

স্বপ্ন উদ্বেগ নিয়ে বলল,
— আমরা কেন দোষ করতে যাবো?দোষ যা করেছে সেতো নানুভাই করেছে।বাবার সাথে মায়ের বিয়ে দিয়ে।বলি দুনিয়াতে কি আর ছেলে পায়নি?

স্বপ্নের বলার ঢং দেখে তিথি হেসে ফেললো,গাল টেনে বলল,

‘ কে বলবে তোর দশ বছর?এত পাঁকা পাঁকা কথা বলিস!

স্বপ্নও হাসলো।তিথির গালে পরা টোলে আঙুল ছুঁইয়ে বলল,

—- তোর মন খারাপ থাকলে আমি এটা কে ভীষণ মিস করি।তাই তুই সব সময় হাসবি…

তিথি ভ্রু কোঁচকালো,স্বপ্ন উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
—- আমি তো ছোট বেলা থেকেই পেঁকে আছি।এভাবে তাকাস কেন?
এবার আর কথা না বাড়িয়ে যা,স্নান সেড়ে আয়।মা আসার সময় হয়ে এসছে…

— আচ্ছা।

_______________

আজ কলেজে তিথির প্রথম দিন। কলেজ টা বাসার কাছেই। কিন্তু মেইন রাস্তাটা বাড়ি থেকে দূরে। হাটতে হয় অনেকটা। তারপর গাড়িঘোড়ার দেখা মেলে।
তিথি একটা রিক্সা ডেকে উঠে পরলো। রিক্সা চলতেই দুপাশের ঝুটি দুটো দুদিকে উড়তে থাকে। সাথে গায়ের ওড়নাটাও। আরেকটু হলে রিক্সার চাকা ছুঁইছুই। তিথির খেয়াল নেই সেদিকে। তার বুক ঢিপঢিপ করছে।কলেজের সবাই কেমন হবে,র‍্যাগিং হবে কিনা, কারো সাথে মিশতে পারবে কিনা এসব ভাবতে ব্যাস্ত সে। চলন্ত রিক্সায় হঠাৎ কেউ একজন তার ওড়নাটা টেনে ধরলো।ভড়কে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো তিথি। মুহুর্তেই আবার ভড়কালো। শপিং মলের সেই ছেলেটা, তার রিক্সার পাশে ধীর গতিতে বাইক চালাচ্ছে।এক হাতে বাইকের স্টিয়ারিং। অন্য হাতে তিথির ওড়নার প্রান্ত। তিথি ঢোক গিললো। কাঁপা স্বরে বলল,

‘ ককি ব্যাপার? ওড়না টানছেন কেন? রাস্তাঘাটেও অসভ্যতা?

ছেলেটা মুচকি হেসে ওড়না ছেড়ে দেয়। তবে চোখ ইশারা করে বলল,

‘রিক্সার চাকায় ওড়না বাঁধবে,ঠিক করে বসুন।

এটুকু বলেই বাইকের গতি বাড়িয়ে সামনে চলে যায় ছেলেটি।তিথি গলা উঁচিয়ে দেখতে থাকলো যতক্ষন দেখা যায়। পরমুহূর্তে নিজের ওড়নার দু পাশ গুছিয়ে কোলের ওপর রাখলো। ভেতরে ভেতরে অনুশোচনা হলো।না বুঝে ছেলেটাকে কি না কি বলে ফেলল!


তিথি কলেজ গেটের সামনে নামলো। মেয়েদের কলেজ এটা। ভাড়া দিতে গিয়ে বাঁধলো এক বিপত্তি।রিক্সা চালকের কাছে ভাংতি নেই। ভাড়া যেখানে বিশ টাকা, তিথি দিয়েছে একশ টাকা। তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ ভাংতি রাখবেন না? এখন আমি কোথায় পাবো,আমার কাছে এটাই আছে।

সামনে অনেক গুলো মুদির দোকান। চায়ের দোকান,আবার তার পাশেই ছোট খাটো খাবারের রেস্টুরেন্ট। রিক্সা চালক একটা দোকান দেখিয়ে বললেন,

‘ খাঁড়াও, ওই ব্যাডার কাছে জিগাই।

তিথি ঘাড় কাত করে স্বায় দিলো। রিক্সা চালক যেতে ধরবে এর আগে পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,

‘ মামা,ভাংতি আমার কাছে আছে।

তিথি সেদিকে তাকায়। সেই ছেলেটি। তিথি চমকালো আবার।এই ছেলে এখানে কি করে এলো? কোনও ভাবে কি ফলো করছে তাকে? ঠোঁট কামড়ে ভাবুক ভঙিতে ছেলেটির দিকে ফিরলো। কথাটা রিক্সা চালক কে বললেও ছেলেটি তাকিয়ে আছে তার দিকে। সাথে আরো দুজন। তারা তিথিকে দেখে মিটিমিটি হাসছে।
রিক্সা চালক মাথা নেড়ে বলল,

‘ তাইলে দেন।

‘ তিথি তাড়াহুড়ো করে বলল,

‘ না না আপনার দিতে হবেনা। আমি ম্যানেজ করে নেবো।

ছেলেটি বলল,

‘ আমার থেকেই ম্যানেজ করুন সমস্যা কি? বিপদেই তো একে অন্যের পাশে থাকা দরকার।

।রিক্সা চালক তাড়া দিয়ে বলল,

‘ আফা তাড়াতাড়ি করেন,

তিথি আর উপায় পেলোনা। ছেলেটি পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করে দিলো। তিথির দিকে চোখ রেখেই বলল,

‘ বাকিটা তোমার টিপ্স মামা।

রিক্সা চালক মুচকি হেসে টাকা নেয়।এরপর রিক্সা ঘুরিয়ে চলে যায়। তিথি কথা না বাড়িয়ে হাতের একশ টাকা ছেলেটির দিকে এগিয়ে দিলো।

‘ নিন।

ছেলেটি মাথা নেড়ে বলল,

‘ উহু,আমিতো এটা নেবোনা।

তিথি ভ্রু কোঁচকালো,

‘ কেন? নেবেন না কেন?

ছেলেটি মুচকি হেসে বলল,

‘ ইচ্ছে তাই।

তিথি অবাক হয়। ছেলেটা ঠোঁট উঁচু করে শীষ টেনে পাশের ছেলে দুটোকে বলল,

‘ চল।

তিথি বোকা চাউনিতে চেয়ে থাকলো। পেছন থেকে ডাকতে চেয়েও দমে গেলো। রাস্তায় এভাবে ছেলেদের সাথে কথা বলা মোটেও ভালো হবেনা। তার বাবার সন্মান জড়িয়ে আছে এতে। ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে ঢুকলো গেট দিয়ে। টাকা না হয় অন্য সময় ফেরত দেবে!
ক্লাসের ঘন্টা এখনও পরেনি।সবাই বাইরে ঘোরাঘুরি করছে। তিথি গিয়ে একটা বেঞ্চের ওপর বসলো। গালে হাত দিয়ে ভাবলো,

— এই ছেলেটা এখানে কি করে এলো..? আগেতো কখনও দেখিনি। আমার থেকে টাকা কেন নিলোনা? নাহ আমি ওর টাকা ফেরত দেবো।অচেনা অপরিচিত ছেলের কোনো কিছু তিথি নেবেনা।

__________________________

চার ঘন্টা পেরিয়েছে। ক্লাস শেষ। এই কলেজে ঋতু আর মুন এডমিশন নিয়েছে। স্কুলে একই সাথে পরেছে তিনজন। তাই খুব একটা নার্ভাস লাগেনি তিথির। ওদের সাথেই সময় কাটিয়েছে আজ। ছুটির পর গেট দিয়ে বের হলো তিথি।সাথে মুন আর ঋতু। বের হতেই দেখলো সামনের চায়ের দোকানের টঙের ওপর বসে আছে সেই ছেলেটা। হাতে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা রঙ চা,অন্য হাতের আঙুলের ভাঁজে জ্বলন্ত সিগারেট । কতক্ষন চুমুক দিচ্ছে চায়ে,আবার ঠোঁট ছোয়াচ্ছে সিগারেটে। কি অঅদ্ভুত মনোযোগ। তিথি ভাবলো এই ফাঁকে টাকা টা দিয়ে আসবে। মুন আর ঋতুকে বলল,

‘ তোরা যা তাহলে।

‘ আচ্ছা।

ওরা গেলেই তিথি আস্তে আস্তে এগোয়। হঠাৎ দূর থেকে একটা ছেলে ডেকে উঠলো,

— এই আদিত্য..!

ডাক শুনে ছেলেটা সেদিকে তাকায়। তিথি বিড়বিড় করে বলল

— জনাবের নাম তাহলে আদিত্য?

তিথিকে তখনও দেখেনি আদিত্য। তিথি এগোনোর আগেই ও উঠে চলে যায় সেদিকে। তিথি মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

‘ যাহ,এবারো দিতে পারলাম না।
___________________

প্রত্যেক দিন বিকেলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়া তিথির অভ্যেস। আজকেও তার বাইরে নয়। কলেজ থেকে এসে কোনো রকম খাবার মুখে পুড়েই বিছানার সাথে সন্ধি করেছে সে। কিন্তু হঠাৎ পায়ের তালুতে সুড়সুড়ি অনুভব হয়।ঘুমের মধ্যেই নড়ে ওঠে তিথি। মুখ কুঁচকে চোখ খোলে,স্বপ্ন মিটিমিটি হেসে তাকিয়ে আছে।তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ কি? বিরক্ত করছিস কেন?

স্বপ্ন ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বসলো তিথির মাথার কাছে,বলল,

‘ সোনু? কটা বাজে জানিস?

তিথি ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,

‘ কটা?

‘ ছয়টা বাজতে মাত্র তিন মিনিট বাকি!

তিথি উত্তর দিলোনা।ঘুমে ঢলছে চোখ।স্বপ্ন আবার বলল,

‘ সন্ধ্যে হবে ৬:৩০ এ।
তার মানে আর আধ ঘন্টা বাকি।

তিথি এবারো চুপ।স্বপ্ন বলল,

‘ মা আসবে ৮ টা বাজে, হারাধন কাকার দোকান বন্ধ করবে ৭:৩০ এ।দোকান কিন্তু অনেক দূর।

স্বপ্ন দেখলো তিথির কোনো হেলদোলই নেই। মুখ থেকে চ’ বর্গীয় আওয়াজ করলো সে। তিথিকে এবার ঝাঁকিয়ে বলল,

‘ এই সোনু? শুনতে পাসনা?

তিথি বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ কি হয়েছে? ঘুমোতে দে আমায়।

স্বপ্ন উদ্বেগ নিয়ে বলল,

— মা কি বলেছিলো মনে নেই? ,বিকেল বেলা হারাধন কাকার দোকান থেকে আংটিটা নিয়ে আসতে।আর এখন বাজে ছটা? কখন যাবি কখন আসবি?

ঘুম পালালো তিথির। লাফিয়ে উঠে বসলো। মাথায় হাত দিয়ে বলল,
— এইরে আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম,,,,সর সর,,,এক্ষুনি তৈরি হয়ে আসি।

_____________

বর্তমান:
আদিত্যদের গাড়ি মাত্রই বিয়ে বাড়ির সামনে এসে থামলো। সঙ্গে সঙ্গে হৈহৈ রোল পরলো । চাপা গুঞ্জন কানে এলো,

‘ বর এসছে বর এসছে।

আদিত্যর বাবা সমিরন সবার আগে নামলেন গাড়ি থেকে। একে একে প্রত্যেকে নেমে দাঁড়ালো। শুধু আদিত্য বাকি। নিয়ম অনুসারে কনের মা এসে বরন করে নামাবে তাকে। বর দেখার জন্যে উৎসুক সকলে। গাড়ির আশেপাশে ভিড় পরেছে। হট্টগোলে ভর্তি। আদিত্যর মনে হলো এরা সং দেখতে এসছে। স্বেজেগুজে বসে থাকা একটা সং। আদিত্যর পালাতে ইচ্ছে হয়। ঘিঞ্জিময় মনে হয় জায়াগাটাকে। মুক্ত শ্বাস নেবার ফুরসত নেই একটুও। গলা চেপে ধরেছে কেউ মনে হচ্ছে। হঠাৎ রঞ্জন জানলায় উঁকি দিলো। ডাকলো,

‘ আদি..

আদিত্য তাকালো ওর দিকে।রঞ্জন একবার চারপাশ টা দেখে নিয়ে নিচু স্বরে বলল,

‘ তিথি ফোন করেছিলো…

____

অতীত:

ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে থেকে রাতে পরলো। তিথি যতটা সম্ভব দ্রুত হাটছে। হারাধনের স্বর্নের ব্যবসা।গত দু মাস আগে তার মা আংটি বন্দক রেখেছিলো সেখানে। আজ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে গিয়েছিলো তিথি। কিন্তু দোকানে এত ভীড়। হারাধন তাকে অনেকক্ষন বসিয়ে রেখেছে।একা একটা মেয়ে অন্ধকারে কিভাবে বাড়ি ফিরবে সেই চিন্তা একবারও করলোনা।

আশেপাশে ঝিঁঝিপোঁকা ডাকছে। মেইন রাস্তা থেকে বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটা অনেকটা সরু গলির মত। এক পাশে গাছ,অন্যপাশে ফসলি ধানের ক্ষেত। মাঝখানে চিকন পীচের রাস্তা। দু একটা বাড়ি ঘর থাকলেও আরো ভেতরের দিকে। বেশ অনেকটা হাটার পর দেখা যায় সেসব।

‘ ইশ আমি যদি একটু আগে বের হতাম,ফিরতে এত দেরি হতোনা। কি অন্ধকার! বাসায় নিশ্চয়ই ভাই একা আছে? মাকি চলে এসছে? নাকি আজকে ফিরতে সময় লাগবে? আমাকে তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে….

আজকে রাস্তাটা একটু বেশিই শূনশান। অন্যান্য দিন গুটিকয়েক লোক থাকলেও আজ যেন তাও নেই।
অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে নিস্তব্ধ রাস্তা ধরে হাটছে তিথি। ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে রাস্তা দেখছে। খুব সময় লাগবেনা তার বাসায় পৌঁছাতে।

হাটার এক পর্যায়ে নিজের পেছনে কারো পায়ের শব্দ। তিথি একটু সাহস পেলো,ভাবলো..
রাস্তায় তাহলে সে একা নেই,,লোকজন আছে।

কিন্তু পায়ের শব্দটা একজনের নয়,মনে হচ্ছে বেশ কজন একসাথে হাটছে।তিথির ভ্রু কুঁচকে এলো।কান দুটো সজাগ হলো। এতগুলো লোক এক সাথে হাটছে অথচ বিন্দুমাত্র টু শব্দ করছেনা? এবার ঘাবড়ালো তিথি।
হুট করে তাদের ফিসফিস আওয়াজ এলো কানে। পায়ের শব্দ গুলোও ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে,লোক গুলো হয়তো তার পিছু নিয়েছে। তিথি ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালো।

এক দুজন নয়,নূন্যতম সাত আট জন যুবকের উপস্থিতি দেখে শরীর হিম হয়ে এলো। এমন জনশূন্য রাস্তায় তার সাথে যা কিছু ঘটতে পারে
। তিথির পা গুলো আর হাটতে স্বায় দিলোনা। দৌড় লাগালো ভয়ে।তার এতক্ষনের ভয় কে সত্যি করতে পেছনের ছেলে গুলোও ছুট লাগালো তার পেছন পেছন।

ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া গলা, ঘামে ভেজা শরীর সব মিলিয়ে তিথি বেশিক্ষন পারলোনা ছুটতে। এর আগেই সব গুলো ছেলে মিলে ঘিরে ধরলো তাকে।
অন্ধকারে কারোর চেহারা স্পষ্ট নয়। তিথির বুঝতে অসুবিধে হলোনা এদের উদ্দেশ্য কতটা অসৎ হতে পারে!

হুট করে একটা ছেলে হাত বাড়ালো তার গলায় পেঁচিয়ে রাখা ওড়নার দিকে। মুহুর্তেই শরীর অবশ হয়ে এলো তিথির। মৃত্যু সমতূল্য কষ্ট অনুভব হতে শুরু করলো।
আজ কি তবে তার সন্মান নিয়ে বেঁচে থাকার শেষ দিন..???

চলবে….

রেসপন্স এতো কম কেনো??? ভালো লাগছেনা গল্প?? 🙄

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here