#পূর্ন_তিথি
লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(০৫)
পাতা ঝরা হেমন্তের অন্তরস্থিত সময় এখন। মাসের দুই তারিখ পরলো সবে। এরই মধ্যে জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যাস্ত কৃষক। চারিদিকে সোনা ঝড়া রোদ্দুর।মেঘাচ্ছন্ন স্বচ্ছ আকাশ সারাদিন উল্লাস নিয়ে হাসছে।প্রকৃতি ছেঁয়েছে হেমন্তের এক বৈরাগ্য চিত্রতে।
কেটেছে বেশ ক’দিন।তিথির সাথে ঘটা সেই ঘটনার ধামাচাপা পরেছে। সঞ্জিব সুরাহা করবে বললেও আদৌ কোনো উদ্যোগ নেননি। সুচিত্রা স্কুলে চাকরী করার পাশাপাশি একটা ছোট্ট টেইলার্সের ভার সামলান। সংসারের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে নিজেও ভুলে গিয়েছেন এই ঘটনা। শুধু ভুলতে পারেনি তিথি একাই। দিনের বেলা রাস্তায় একা বের হলেও তার ভয় হয়।এই বুঝি আবার ওরা এলো।পেছনে পায়ের শব্দ পেলে অজান্তেই কেঁপে ওঠে। কান্না পায়। অনেক প্রশ্ন ওঠে মনে, কেন তার বাবা তাদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে দাঁড়ায়না?কেন বাবার বুকে মুখ লোকাতে পারেনা?এলাকার সনামধন্য ডিসির মেয়ে হয়েও কেন তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ চিন্তা করতেও বখাটেদের ভয় হয়না?
এত এত প্রশ্ন পরে থাকে উত্তর হীন হয়ে। তিথির নিঃশ্বাস গুলো সাক্ষী সেই মুহুর্তে তারা কতটা দাঁপিয়েছে,পেয়েছে মৃতূ সমান যন্ত্রনা। ঐ ঘটনার পর সেই শাওন ছেলেটাকে এলাকায় আর দেখেনি তিথি। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে, নাহলে ওকে দেখে হয়তো উল্টোপাল্টা কিছু করে ফেলতো সে।
___
ইদানিং আদিত্যের আনাগোনা বেড়েছে তিথির চারপাশে। কলেজ গেটে সব সময় একে দেখা যায়,দেখা যায় তিথির কলেজে যাতায়াতের সময় পাশে পাশে বাইক চালাতে।তিথি কোচিং থেকে ফেরার সময় পেছনে আসে আদিত্য।তিথির সাথে চোখাচোখি হলে তখন সে নিরুদ্বেগ।ভাবলেশহীন। যেন কাউকে অনুসরন করা দুনিয়াতে সব থেকে সুন্দর, সাধারন। কিংবা এটা তার অধিকার? মুচকি হেসে সে তিথিকে হাত ইশারা করে বিদায় জানায়। তিথি ভেবে পায়না,
একটা ছেলে এতো বেহায়া কি করে হয়??
দিন কে দিন বাড়তে থাকে।প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও ইদানিং ভয় হয়।এভাবে তার পিছু পিছু আসা যাওয়া করা ঠিক হচ্ছেনা। কোনো ভাবে বাবার কানে গেলে সর্বনাশ হবে। তারা দুভাইবোন তিল পরমান কিছু করলে তাল বানিয়ে সেটার দোষ মায়ের ঘাড়ে চাঁপানোই তার বাবার একমাত্র কাজ। এইতো সেবার,স্বপ্ন চতুর্থ শ্রেনীর প্রথম সাময়িকে গনিতে টেনেটুনে পাশ করে, এ নিয়ে তার বাবা আকার ইঙ্গিতে মাকেই দোষারোপ করেছিলো। তাই নিজেকে নিয়ে আর ঝামেলা পাঁকাতে মন স্বায় দিচ্ছেনা তিথির।বাবা মায়ের সম্পর্ক ঠিক না হোক,নতুন করে বিগড়ে যেন না যায়!
আদিত্যকে বারন করা উচিত। তিথি মনে মনে শক্ত করলো নিজেকে। আদিত্য ছেলে, এসব ব্যাপারে কেউ তার দোষ দেখবেনা। সমাজে যে ছেলেদের সাত খুন মাফ!
অনেক কিছু ভেবে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে বের হলো তিথি। বৃষ্টি নেই বাসায়। কোথাও একটা গিয়েছে।স্বপ্ন স্কুলে, মা টেইলার্সে। কলেজ আগে আগে শেষ হওয়ায় অনেক আগেই বাসায় ফিরেছে সে। ভালোই হলো! এই ফাঁকে আদিত্যের সাথে কথা বলা যাবে,কলেজ থেকে ফেরার সময় লোকটা তো পেছন পেছন এসেছে। এখনও কি আছে?
তিথি তাড়াহুড়ো করে দরজায় তালা দেয়। দ্রুত পায়ে হাটে। মোড়ের মাথায় টঙ দোকান আছে একটা। ফিরোজ কাকার ছেলের দোকান। কোচিং যাওয়ার সময় আদিত্য ওখানেই বসে থাকে। এখনও থাকবে নিশ্চয়ই।
তিথি দোকানটার সামনে এসে দাঁড়ালো। দোকানের ঝাঁপ লাগাচ্ছে রুস্তম(ফিরোজের ছেলে) তিথি এদিক ওদিক দেখলো। আদিত্য নেই। মন টা খারাপ হয়ে এলো। মুখ কালো করে হাটা ধরতেই আবার থেমে গেলো। ধড়ফড়িয়ে ঘুরে তাকালো ৷ সচেতন চোখে। ব্রিজের ওপর বাইক রাখা,তার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য। তিথি একবার রুস্তমের দিকে তাকালো। রুস্তম দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে চলে গেছে। তিথি নিশ্চিন্তে এগোলো ব্রিজের দিকে।
মধ্য দুপুর হওয়ায় আশপাশ নিরিবিলি। তিথির তাও ভয় লাগছে। কেউ দেখে আবার উল্টোপাল্টা না ভাবলে হয়। তিথি ব্রিজের ওপর উঠলো । রঞ্জন আরিফ এরাও আছে আদিত্যের সাথে। সবাই মিলে আদিত্যর ফোনে উৎসুক হয়ে কিছু একটা দেখছে। সবার প্রথমে রঞ্জনের চোখে পরলো তিথিকে। ভ্রু কুঁচকে ভালো করে দেখলো। এটা তিথিই! বুঝতে পেরে কনুই দিয়ে আদিত্য কে গুঁতো দিলো রঞ্জন। আদিত্য বিরক্ত হয়ে তাকালো ওর দিকে।
‘ কি হয়েছে?
রঞ্জন চোখ ইশারা করলো তিথির দিকে। আদিত্য মুখ কুঁচকে সেদিকে ফিরলো। তিথিকে দেখতেই চোখ বড় বড় হয়ে এলো। অবাক হলো।চট করে হেলান দেয়া থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ালো৷
তিথি ততক্ষনে গুটিগুটি পায়ে এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। আদিত্য বেশ অনেকটা বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ তুমি?
আদিত্যর মুখে “তুমি শব্দটা অদ্ভুত লাগলো তিথির।কদিন আগেও তো আপনি আপনি বলেছিলো, আজ হঠাৎ তুমি? তিথি ইতস্তত করছে।এসেছিলো সাহস নিয়ে।কিন্তু নার্ভাসনেস তার সব মনোবল গুলিয়ে দিতে যথেষ্ট। তিথি আদিত্যর দিকে কোনো রকমে তাকাচ্ছে আবার তড়িৎ গতিতে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আদিত্য তার দিকে এক ভাবে চেয়ে তো আছেই, সাথে রঞ্জন আর আরিফও হা করে তাকিয়ে আছে। অস্বস্তি কয়েক গুনে বেড়ে গেলো তিথির। ওড়নার প্রান্তে আঙুল পেঁচাতে লাগলো। আদিত্য হয়তো বুঝে ফেলল, মুচকি হেসে আরিফ আর রঞ্জন কে বলল,
তোরা একটু যা…
তিথির অবাক লাগলো।আদিত্য বুঝে নেয়ায়। কিন্ত কিছু না বলে চুপ করে থাকলো। আরিফ রঞ্জন দাঁত বার করে হাসে। চোখে চোখে আদিত্যকে নিশব্দে টিটকিরি মারলো দুজন। আদিত্য চোখ পাঁকাতেই দুটোতে কেটে পরলো সাথে সাথে। আদিত্য তিথির দিকে চেয়ে হেসে বলল,
‘ বলো এবার!
তিথি জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো। যথাসম্ভব চেষ্টা করলো গলা শক্ত করতে। কিন্তু হচ্ছেনা।কেমন তালগোল পাকাচ্ছে।কেন? ইদানিং আদিত্যকে দেখলেই কেমন অপ্রস্তুত লাগে৷ লজ্জ্বা লজ্জ্বা অনুভূতি হয়। তিথি কোনো রকম আওয়াজে বলল,
‘ আপনি আমাকে ফলো করেন কেন ?
আদিত্য অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
‘ ফলো করি নাকি?
তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ ঢং করছেন? আপনি জানেন না?
আদিত্য মাথা নেড়ে বলল,
‘ নাতো!
তিথি এবার একটু তেঁতে বলল,
‘ নাতো? নাতো মানে কি? আমি সব সময় দেখি আপনি আমার পেছন পেছন আসেন, কলেজের সামনে বসে থাকেন,কোচিংয়ে যাওয়ার সময় ও পাশে পাশে বাইক চালান, সব সময় আমার দিকে ক্যাবলাকান্তের মত তাকিয়ে থাকেন। আবার বলছেন আপনি জানেন না?
আদিত্য একটু ভেবে বলল,
‘ আমি তোমার পেছন পেছন আসি? কেন? তুমি সামনে থাকো বলেই তো! আর আমি যে তোমাকে সব সময় দেখি এটা তুমি কি করে বুঝলে? তার মানে তুমিও নিশ্চয়ই আমায় দেখো?
আদিত্য ভ্রু নাঁচালো। তিথি থতমত খেয়ে বলল,
” মোটেওনা।আমি কেন আপনাকে দেখতে যাব?
‘ সেটাতো তুমিই ভালো জানবে।
তিথির ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে।কি বলতে এলো আর কি বলছে? গলা থেকে উঁচু আওয়াজ বের করতেও কষ্ট হচ্ছে। অথচ স্কুলে এই জোরে কথা বলা নিয়ে কত বিখ্যাত ছিলো এক সময়। তিথি নিজের মধ্যে একটু দৃঢ়তা আনার চেষ্টা চালালো।বলল,
‘ দেখুন, অত শত জানিনা। আপনি এভাবে আমার পেছনে আসবেন না।লোকে খারাপ ভাববে।
আদিত্য নিরুদ্বেগ ভাবে বলল,
‘ লোকে কি ভাবলো তাতে আমাদের কি? ওদের কাজ উল্টোপাল্টা ভাবা, ভাবুক না। তাই বলে আমি কেন আমার ডেইলি রুটিন পাল্টাবো?
তিথি কাটকাট গলায় প্রশ্ন করলো,
‘ তার মানে আপনি আমার কথা শুনবেন না?
আদিত্য মুখের ওপর বলল,
” না।
তিথি কাঁদোকাঁদো মুখ করে চেয়ে থাকলো। এখন একে কথা কি করে শোনাবে? যতটা ভালো ভেবেছিলো ততটাও ভালো নয় এই ছেলে ।ততটা কি একফোঁটাও নয়।
আদিত্য পেছনে দুহাত বেঁধে তিথির মুখের সামনে একটু ঝুঁকে এলো।তিথি পিছিয়ে নিলো মাথাটাকে। আদিত্য ভ্রু উঁচিয়ে আস্তে করে বলল,
‘ আর কিছু বলবে?
তিথি ঢোক গিলে বলল,
‘ শশুনুন,ভভালোয় ভালোয় বলছি এভাবে আমার পিছু নেবেন না।
‘ কাজ হবেনা তিথি৷ অন্য কিছু বলো…
তিথি অবাক হয়ে বলল,
‘ আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ কেন? এটা আর এমন কি?
জানতে তো হতোই। আফট্রার অল ফলো করি তোমায়।
আদিত্য হাসলো।তিথি বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ কেন করছেন এমন?
আদিত্য দু হাত পকেটে গুঁজে দাড়ালো। বলল,
‘ কেন করছি? সত্যি বলবো না মিথ্যে?
তিথি মুখ কুঁচকে নিলো।আদিত্য লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ আমার তোমাকে ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে। সেদিন শপিং সেন্টারে প্রথম দেখেই এটা বুঝে ফেললাম ঠিকই,কিন্তু ভালোবাসি কিনা সেটা নিশ্চিত হতেই পিছু নিচ্ছি।
তিথি বিস্ময়ে স্তম্ভিত। গোল চোখে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। বুকের ভেতর কেমন হাতুড়ি পেটা শুরু হলো। খানিক সময় বিমুঢ় হয়ে থেকেই হঠাৎ দৌড়ে চলে গেলো। আদিত্য পেছন থেকে দুবার ডাকলো।তিথি থামলোনা। এক ছুটে বাড়ির রাস্তায় ঢুকে গেলো সে। আদিত্য হেসে মাথা চুলকালো। মেয়েটা লজ্জ্বা পেয়েছে হয়তো!
__________
বৃষ্টির মোবাইল সমানে ভাইব্রেট হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি চোখ বুজে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। ফোন বাজছে, শুনছে।ইচ্ছে করেই তুলছেনা।কার ফোন তার জানা। স্ক্রিনে গোটা অক্ষরে “আদিত্য নাম টা ভাসছে। আবার নিভে যাচ্ছে। এগারো বারের মত ফোনটা বাজতেই বৃষ্টি মুখ থেকে চ” বর্গীয় একটা শব্দ করলো। বিরক্ত হয়ে ফোন তুললো,
‘ কি হয়েছে এতবার কল করছো কেন?
বৃষ্টির ক্রুদ্ধ কন্ঠেও আদিত্য নম্র ভাবে বলল,
‘ ফোন করছি নিশ্চয়ই কথা আছে। এভাবে আমাকে এভোয়েড কেন করছো বৃষ্টি?
‘ এভোয়েড করছি? তাহলেতো বুঝেই ফেললে,এরপরেও আমার পেছনে পরে থাকা কি ঠিক হচ্ছে?
‘ প্লিজ বৃষ্টি!
বৃষ্টি ব্যাস্ততা দেখিয়ে বলল,
আমার অনেক কাজ আছে আদিত্য, যা বলবে বলো তাড়াতাড়ি..
আদিত্য বলল,
‘ ডিভোর্স টা না দিলে হয়না?
‘ না হয়না। আমি তোমার সাথে থাকতে চাইছিনা। প্লিজ আদিত্য,শান্তিতে থাকতে দাও।মেয়েদের মত ফ্যাঁচফ্যাঁচ করোনা। অসহ্য লাগে!
‘ বাহ! এখন আমাকে অসহ্য লাগে? একটা বছর সংসার করলে আর এখন কিনা অসহ্য লাগছে?
‘ হ্যা লাগছে। তখন ভালো লেগেছে সংসার করেছি,এখন লাগছেনা তাই করছিনা। লিভ মি এলোন প্লিজ। আর এরপরেও যদি বিরক্ত করো আমি কিন্তু বাবাকে জানাতে বাধ্য হবো।
আদিত্য তাচ্ছ্যিলের হাসি টেনে বলল,
‘ তাই নাকি? তা আমার সাথে প্রেম করার সময় বাবাকে বলোনি কেন? আমার টাকায় ফুটানি করার সময় কই ছিলো বাবা? যেই একটু অবস্থাটা খারাপ হয়েছে ওমনি পাল্টি খেয়ে বাবার কাছে চলে গেলে?আসলে তুমি একটা স্বার্থপর, লোভী মেয়ে।আর এইজন্যেই তোমার মা তোমাকে সহ্য করতে পারেনা।এবার তো বুঝলাম, তুমিও একটা মেয়ে আর অন্যরাও মেয়ে৷ নিজের ছোট বোনের থেকেও কিছু শিখতে পারো তো…
বাপের সম্পত্তির লোভে অন্তত তোমার মত মাকে ছেড়ে যায়নি।তুমি..
আদিত্য আর কিছু বলার আগেই বৃষ্টি দুম করে লাইনটা কেটে দিলো।ফোনটাকে ছুড়ে মারলো দূরে। রাগে গজগজ করছে শরীর। এই আদিত্য ছেলেটা তার হাড়মাস জ্বালিয়ে খেলো। বিয়ে করেছিলো ঠিক আছে, এখন ছাড়তে চাইছেনা কিছুতেই? একবার সংসার থেকে মন উঠে গেলে সেই মন আর বসানো যায়? আর কত সাহস! এত বড় কথা শোনালো?
‘ আমি লোভি? স্বার্থপর? হ্যা তাই… আমি তাই… লোভী স্বার্থপর হয়ে যদি ভালো থাকা যায়, বিলাসিতা করা যায়, তবে সেটা আমি একশবার হবো। কেন সব সময় তিথির সাথে তুলনা করতে হবে আমাকে?।মানছি ও ভালো, কিন্তু আমার মত সুন্দরী হলে দেখতাম কত দূর নিজের চরিত্র টিকিয়ে রাখতে পারে! মায়ের ভালো মেয়েই বা কত দিন অব্দি ভালো থাকতে পারে!
________
তিথি ঘরে ঢুকে দরজা চাঁপালো প্রথমে। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো।বুকটা এখনও ধড়াস ধড়াস করে লাফাচ্ছে। ছেলেটা কি বলল ওসব? ভালো লাগা, ভালোবাসা…
শব্দ গুলো ওর মুখে এত সুন্দর লাগছিলো কেন? তিথি অজান্তেই মুচকি হাসলো।
কোথায় গেছিলি?
হঠাৎ শব্দটায় চমকে উঠলো তিথি । বৃষ্টি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে৷ ওকে দেখতেই দরজার দিকে তাকালো তিথি ।যাওয়ার সময় সেতো তালা দিয়ে গেছিলো অথচ দরজাটা খোলা ছিলো,আর সে খেয়ালই করেনি।এতোটাই ডুবে ছিলো ওই ছেলেতে?
তিথি
আমতা-আমতা করে বলল,
‘ একটু দোকানে গিয়েছিলাম। পেন শেষ হয়ে গেছিলো।
‘এনেছিস পেন? কই? হাত তো খালি।
বৃষ্টির গোয়েন্দাগিরিতে তিথির অথৈ জলে সাতার কাটার মত অবস্থা। জ্বিভের আগায় উত্তর না পেয়ে ঠোঁট কামড়ালো কিছুক্ষন। হঠাৎ মেকি হাসি টেনে বলল,
‘ আনিনি।রুস্তম ভাই দোকান বন্ধ করে দিয়েছে।
বৃষ্টি তাও ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকলো। তিথির সব গুলিয়ে যাচ্ছে ওর এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টির কবলে পরে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বাঁচার চেষ্টা চালালো। বৃষ্টি একটু এগিয়ে এলো তিথির দিকে। তিথি বুঝতে পেরেও তাকাচ্ছেনা। বৃষ্টি সন্দেহি কন্ঠে বলল,
‘ সত্যি করে বলতো,সেদিনের সেই বাইকওয়ালাকে তুই চিনিসনা? সত্যিই না?
তিথি যেন হোচট খেলো। দিদি ঠিক ধরে ফেললো? এখন আর লুকিয়ে লাভ নেই।মিথ্যে বলতে গেলে উল্টে সব কেঁচে যাবে। একটা সত্যিকে আঁড়াল করতে হাজারটা মিথ্যে বলার থেকে দুটো বঁকা খাওয়া ঢের ভালো। চোরের মত মাথা নামিয়ে নিলো তিথি। বৃষ্টি মুহুর্তেই উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
‘ ঠিক বুঝেছিলাম,কোনো ঘাপলা আছে? তা কি নাম ছেলেটার?
তিথি মুখ কাচুমাচু করে বলল,
” আদিত্য!
বৃষ্টি অবাক হলো… আবার সেই নাম?
চলবে,