পূর্ন__তিথি লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি (২২)

0
179

#পূর্ন__তিথি
লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(২২)

প্রভাতের রক্তিম সূর্যটা রাত্রিশেষের শিশিরার্দ্র অন্ধকারকে তখনও বিদায় জানায়নি।আবছা আলোয় আঁধারী জড়ানো জোনাকপোঁকা এদিক। ওদিক উড়ছে। শীতের হিম ঝরছে বাতাসে। হাঁড় কাঁপা ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছে তিথি।গায়ে মোটা শাল প্যাঁচালেও শীত কমার নাম নেই।সেখানে এই লোক কিভাবে এমন শক্ত হয়ে রয়েছে তিথির মাথায় ঢুকছেনা। তিথির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তন্ময়।গায়ে একটা পাতলা শার্ট। এর কি শীত টীত লাগেনা নাকি? তিথি মুখ কুঁচকে ভাবছে। এই মুহুর্তে তিথিদের বাড়ির সরু রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে দুজন।পাশেই দাঁড়ানো তন্ময়ের সাদা ঝকঝকে গাড়িটা। তন্ময় এবার চোখ তুলে তাকালো। আলোহীন ভোরের হিমেল হাওয়ায় উড়ছে তিথির কোঁকড়া চুল। সাথে শুস্ক, রুক্ষ ঠোঁটের ভাঁজে এক অদ্ভূত আকর্ষন। এ আকর্ষন কিসের? এমনটা কি সবাইকে দেখেই হয়।হয়না! হবে কি করে? মন যাকে ভালোবাসে তার মত শ্রী,শ্রেষ্ঠ দ্বিতীয় টি নেই।তন্ময় খেয়াল করলো তিথি এখনও মুখ কুঁচকে চেয়ে আছে। ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? বকবকি করো গালাগাল দাও।

তিথি কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

‘ আমার স্টকে কিছুই আসছেনা।সব ফাঁকা। আচ্ছা তন্ময় তুমি কি পাগল?

তন্ময় ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ কেন?

তিথি নিজেও ভ্রু কোঁচকালো

‘ কেন মানে? এরকম সময় কেউ আসে?

তন্ময় উদ্বেগ নিয়ে বলল,

‘ আমিতো রাতেই রওনা দিয়েছিলাম।রাস্তায় পুলিশ আটকালো। কত শত জেরা করলো।ওসব সামলাতেই দেরি হয়ে গিয়েছে।নাহলে আরো আগে আসতাম তিথি।

তিথি কপাল চাঁপড়ে বলল,

‘ হায় রে!তন্ময়,আমি কি বলতে চেয়েছি তুমি আদৌ বুঝেছো? আমি বলতে চাচ্ছি এরকম পাগলামির মানে কি? এভাবে কেন এসেছো তুমি?

তন্ময় শান্ত কন্ঠে শুধালো,

‘ কেন? তোমার ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম বুঝি?

তিথি কোপিত কন্ঠে বলল,

‘ না। কারন আমি সারারাত ঘুমাইনি।তাই ঘুমে ডিস্টার্ব হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।

তন্ময় একটু অদ্ভূত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ তোমারও ঘুম হয়নি? কেন?

তন্ময়ের চোখেমুখে কোনো কিছুর প্রত্যাশা স্পষ্ট। সেসব এড়িয়ে তিথি স্মিত হেসে বলল ,

‘ পড়ছিলাম।

তন্ময়ের মুখটা মিইয়ে এলো।তিথি বলল,

” তা এখানে আসার কারন?

তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ,

‘ আমার ঘুম আসছিলোনা।

তিথি নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,

‘ নিশ্চয়ই কফি খেয়েছো প্রচুর? ঘুম না এলে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিতে।

তন্ময় ঠান্ডা স্বরে বলল,

‘ ঘুমের ওষুধের খোঁজেই তো এসেছি।দশ দিনের অভ্যেস যে মনে বড্ড বেশি চঁড়াও হয়েছে তিথি।

তিথির মুখের ভঙিমা পাল্টে এলো।তন্ময়ের ইঙ্গিত বুঝতে অসুবিধে হয়নি তার। প্রসঙ্গ পাল্টাতে হেসে বলল,

‘ তুষারের কি খবর?

তন্ময় বুঝলো তিথি কথা এঁড়াচ্ছে।ছোট্ট শ্বাস টেনে বলল,

‘ সবাই ঠিকঠাক। আমি ছাড়া।

তিথি শুকনো ঢোক গিলে বলল,

‘ ভেতরে চলো।

তন্ময় অবাক হয়ে বলল,

‘ মাথা খারাপ? আন্টি দেখলে কি ভাববে?

‘ সেটাতো আসার আগে মনে করা উচিত ছিলো তন্ময় সাহা।চলো,ইশ! চোখমুখের কি অবস্থা। এসো…

‘এসো ‘কথাটায় বড্ড অধিকার অনুভব করলো তন্ময়।তিথি ততক্ষনে সামনে হাটা ধরেছে। তন্ময় পাতলা হেসে পিছু নিলো ওর। রাত একটা অব্দি এ পাশ ওপাশ করেও ঘুম আসেনি।আসবে কি করে? আজ তো তিথি নেই। তিথিকে ভীষণ মনে পড়াটা এতটাই প্রখর আর অবাধ্য হলো যে ওই মুহুর্তে দ্বিতীয় কিছু না ভেবে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো সে। তারপর অত রাতে গাড়ি চালাতে দেখে রাস্তায় বাঁধলো পুলিশি ঝামেলা।সব মিটিয়ে যখন তিথিদের বাড়ির দরজার সামনে এলো তখন প্রায় চারটা পার হয়েছে ভোর। তিথিকে ফোন করার অসংখ্য দোটানা ঠেলে ফেলে শেষে এক ঘন্টা পর কল করলো তন্ময়।তিথি শুনে বিস্মিত হলেও সব বিস্ময় চাঁপা দিয়ে ঘর থেকে চুপিচুপি বেরিয়ে এসেছে।আর তারপর, এইতো তন্ময় অনুসরন করছে তাকে।
___

সুচিত্রা তখনও গভীর তন্দ্রায়।মেয়ের পাশে বসে থেকে বেশ রাত করে ঘুমোতে যাওয়ায় এখনও তলিয়ে আছেন ঘুম পাথারে। তিথি ঘরে ঢুকলো তন্ময়কে নিয়ে। বসার ঘরে ওকে বসতে বলে এগোলো মায়ের ঘরের দিকে। সুচিত্রা লেপ পেঁচিয়ে মরার মত ঘুমোচ্ছেন।তিথি মায়ের পায়ের গোঁড়ালি ধরে মৃদূ ঝাঁকি দিয়ে ডাকলো,

‘ ওমা… মা…!

আরামের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় সুচিত্রা বিরক্ত হলেন খুব।কপাল কুঁচকে তাকালেন।ঘুমে জুবুথুবু চোখের সামনে মেয়ের মুখটা দেখে পরমুহূর্তে কপাল টানটান করে বললেন,

‘ কিছু হয়েছে রে?

তিথি চাপা স্বরে বলল,

‘ তন্ময় এসছে।

সুচিত্রার পাঁচ সেকেন্ডের মত সময় লাগলো কথাটা বুঝতে। সাথে সাথে উঠে বসে বললেন,

‘ কই ও?

‘ সামনের ঘরে।

সুচিত্রা গোল চোখ করে বললেন,

‘ এত ভোরবেলা?সব ঠিক আছেতো?

তিথি নিশ্চিন্ত কন্ঠে বলল,

‘ সব ঠিক আছে। আমি ডাকতে এসেছিলাম, ওকে কি খেতে দেব সেটা জানতে।আমাদের মত রুটি আর আলু ভাজি? নাকি অন্য কিছু।

সুচিত্রা আকচুল হাত খোপা করতে করতে ব্যাস্ত কন্ঠে বললেন,

‘ তোর কিছু করতে হবেনা।তুই গিয়ে ওর সাথে গল্প কর।আমি কিছু বানাচ্ছি। বাসায় পাউরুটি আছে টোস্ট করে দেব সাথে সেদ্ধ ডিম।চলবেনা?

তিথি ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

‘ দৌড়োবে।

সুচিত্রা প্রথমে ওয়াশরুমে গেলেন।সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ঢুকলেন রান্নাঘরে।তিথি ততক্ষনে মায়ের বিছানার চারকোনা থেকে মশারি খুলে, এলোমেলো বিছানা গুছিয়ে দিয়েছে।

ঘড়িতে তখন পাঁচটা চল্লিশ।পাখির পালক ঝরার মতন অন্ধকারকে বিলীন করে পূর্ব দিগন্তের উদয় হওয়া সূয্যি মামা এক অজানা জাদু মন্ত্রে সমগ্র পৃথিবী ভরিয়ে দিয়েছে নির্মল আলোতে। তিথিদের বাড়ির আঙিনায় হালকা বেগুনির মিশ্রনে সাদা থোঁকা থোঁকা ফুটেছে আকন্দ ফুল।শিশিরের দানাগুলো লেপ্টে আছে তার ওপর। তন্ময় গভীর মনোযোগে গুনছে শিশির কনা। পাশ থেকে হঠাৎ তিথি বলল,

‘ কি করছো?

তন্ময় ঘোর কেটে তাকালো।একটু হেসে বলল,

শিশির গুনছি।

তিথি ঘুরে এসে তন্ময়ের পাশের চেয়ারে বসলো।ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান কন্ঠে বলল,

‘ তা আবার হয় নাকি?

তন্ময় আরো একটু হাসলো।বলল,

‘ হয়না। কিন্তু কি করার! কাজ না থাকলে অকাজ করাই শ্রেয়!

“” কেন বাবা,অকাজ কেন করবে, আন্টি খাবার এনেছি খাবার খাওয়া খুব ভালো কাজ।

হঠাৎ কথায় চমকালো তন্ময়।সুচিত্রা হাতের ট্রেতে খাবার স্বাজিয়ে এনেছেন। ট্রেটা টেবিলের ওপর রাখলেন। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তন্ময়ের দিকে ফিরতেই তন্ময় যত্র চোখ দুটো নামিয়ে নিলো। একেতো এভাবে চলে আসা,দ্বিতীয়ত, এত ভোরের ঘুম নষ্ট করা সবার, আবার তাদের হাতেই আপ্যায়িত হওয়া! এটাকি রাজকপাল না পোড়াঁকপাল। কি ভাবছেন আন্টি? ভীষণ অপ্রস্তুত লাগছে তন্ময়ের।সুচিত্রা চোখ সরু করে বললেন,

‘ নতুন জামাইয়ের মত লজ্জ্বা পাচ্ছো কেন তন্ময় ?

তন্ময় সংকুচিত কন্ঠে বলল,

‘ না মানে আন্টি, এভাবে চলে এলাম,কিছু মনে করেননি তো?

সুচিত্রা হেসে ফেললেন।বললেন,

” মনে তো অনেক কিছুই করব,যদি আন্টির কষ্ট করে বানানো খাবারটা পুরো শেষ করতে না পারো।নাও শুরু করো।

তন্ময় মৃদূ হাসলো।সুচিত্রা কোমল কন্ঠে বললেন,

‘ তোমার মা, ভাই ভালো আছেন সবাই।

‘জ্বী।

তন্ময় তিথির দিকে চেয়ে বলল,

‘ আমার একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার।ওয়াশরুমে যাই?
তিথি কপাল কুঁচকে বলল,

‘ তো যাও।আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে? নাকি ওয়াশরুম কোন দিকে সেটা জানোনা।

” না তা জানি। যাচ্ছি।

তন্ময় উঠে চলে যেতেই সুচিত্রা ঠোঁট চেপে হেসে বললেন,

” প্রেমে পড়লে মাথার তাড় ঠিক থাকেনা শুনেছি। তন্ময়ের পাগল হতে বেশি দেরি নেই সোনু।

তিথির হাসি উবে গেলো। এই যে এতটা দূর তন্ময়ের আসার মানে একটু হলেও বুঝেছে সে। কিন্তু তন্ময় কি মিথ্য আশায় বাঁচছেনা? তার পক্ষে নতুন করে কাউকে ভালোবাসা আদৌ সম্ভব?

সুচিত্রা বললেন,

‘ তোরা কথা বল,দশটা বাজলে আমাকে ডেকে দিস।আর ওকে কিন্তু দুপুরে না খাইয়ে ছাড়িস না।ওহ হ্যা এক কাপ চা দিস ওকে।

তিথি আনমনে বলল,

‘ হু।

সুচিত্রা চলে যাওয়ার একটু বাদেই তন্ময় এসে বসলো আবার। টিস্যু দিয়ে হাত মুছে খাওয়া শুরু করলো। তিথি এখনও অন্যমনস্ক। তন্ময় খাবারের ফাঁকে ওকে দেখছে। হঠাৎ তিথি উদ্বেগ নিয়ে বলল,

‘ তন্ময়, তুমি খেতে থাকো,আমি একটু আসছি।

‘ কোথায় যাচ্ছো?

তিথি তাকাতেই তন্ময় থতমত খেয়ে বলল,

‘ না মানে আমি একা একা বোর হবোনা?

তিথি সরস কন্ঠে বলল,
‘ আরে না, রুমে যাচ্ছি।তখন তোমার কল পেয়ে তাড়াহুড়ো করে ছুটেছি বই টই সব ওমন এলোমেলো পরে আছে।আর তুমি জানো, খোলা বই ভূতে পড়ে রেখে যায়।

কথাটা শুনে তন্ময় নাকমুখ কুঁচকে চেয়ে থাকলো।পরমুহুর্তে হেসে বলল,

‘ ভালোতো,ওদের বলবে মন দিয়ে পড়তে যাতে তোমাকে কষ্ট করে পড়তে না হয়।

তন্ময় ইয়ার্কি মারছে।বুঝতে পেরে তিথি মুখ বেঁকিয়ে উঠে রুমের দিকে এগোলো।

তন্ময়ের খাবার তখন মাঝপথে। খুব কষ্টে দাঁত দিয়ে চিবোচ্ছে সে। পেটের জমানো কথাটা প্রচন্ড লাফাচ্ছে বের হওয়ার জন্যে। সুচিত্রা তিথিকে চা দিতে বলে গেলেও একটু বাদে নিজেই এসে দিয়ে গিয়েছিলেন।চায়ের কাপে শেষ চুমুক টা দিয়ে তিথির ঘরের দিকে উঁকি দিলো তন্ময়।তিথিকে দেখা না গেলেও ওড়নার প্রান্তটা চোখে পরছে।তন্ময় লম্বা শ্বাস টেনে উঠে এগোলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গলা ঝেঁড়ে খুকখুক করে কাশি দিলো। তিথি তখন বই গোছাচ্ছে।শব্দ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে বলল,

‘ বাইরে দাঁড়িয়ে কেন।এসো ভেতরে।

তন্ময় ভেতরে ঢুকলো।তিথি বসতে বললেও বসলোনা।উশখুশ করছে কিছু বলার উদ্দেশ্যে। তন্ময়ের নিশ্চুপতায় তিথি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

‘ কিছু বলবে তন্ময়?

তন্ময় দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে বলল,

‘ তিথি আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?

তিথি সহজ কন্ঠে শুধালো,

‘ কোথায়?

‘ ইয়ে ওই… মানে..

‘ এত মানে মানে করা আমার পছন্দ নয়।যা বলবে স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড।

তিথির স্পষ্ট কথায় তন্ময়ের কথা গুলিয়ে যাচ্ছে আরো।দু এক বার গলা পরিষ্কার করে চটপট বলল,

‘ আজকে সারাদিন আমাকে দেবে?

তিথি অবাক হয়ে তাকাতেই তন্ময় চোখ ঘুরিয়ে নিলো অন্যকোথাও।তিথি কি প্রতিক্রিয়া দেবে ভেবে পাচ্ছেনা সে। এদিকে কি উত্তর হওয়া উচিত সেটাও তিথির বোধের বাইরে।কিছু সময় দুজনেই চুপ থাকলো।নিরবতা ভেঙে তিথি ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ তা তুমি কি সব সময় সকালে ঘুরতেই পছন্দ করো?
তন্ময় যত্র বলল,

‘ তুমি চাইলে বিকেলেও ঘুরব আজ।

তিথি ভ্রু নাঁচিয়ে বলল ,

‘ এসব কি মনে জায়গা পাওয়ার ধাপ?

তন্ময় মৃদু হেসে বলল,

‘ যদি ভাবো হ্যা…তাহলে সত্যি।যদি ভাবো না তাহলে মিথ্যে।তবে কথা দিতে পারি আমি প্রত্যাশা রাখবনা তুমি আমার হবে। পুরোটা ভাগ্যে আর স্রষ্টার ওপর ছেড়ে দিয়েছি।উনি যা চাইবেন তাই মেনে নেব।বিচ্ছেদ কিংবা মিলন। দুটোই।

তিথি ক্ষনিকের জন্যে চুপ থেকে বলল,

‘ তোমার আসলে যুক্তিবিদ হওয়া উচিত ছিলো তন্ময়।কথা ভালো জানো যখন।

তন্ময় এর প্রেক্ষিতে প্রতিশব্দ করলনা । উল্টে করুন কন্ঠে প্রশ্ন করলো,

‘ যাবে তিথি?

তিথি ব্যাস্ততা দেখিয়ে টেবিলের বই তুলে রাখতে রাখতে বলল,

” আমার এখন অনেক কাজ,ঘর গোছানো,আবার তৈরি হওয়া।তুমি বাইরে যাও। আমি আসছি।

প্রথম কথাগুলোয় তন্ময়ের মুখ কালো হলেও শেষের কথায় তাৎক্ষণিক হাসি ফুটলো ঠোঁটে । উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল

‘ আমি অপেক্ষা করছি তুমি এসো।

___

তিথি আবার মায়ের ঘরে ঢুকেছে।সুচিত্রা তখন ঘুমোচ্ছেন দেখে মুখ থেকে ‘চ ‘বর্গীয় শব্দ করে ফিরে আসতে নিলো।হঠাৎ পিছু ডাকলো সুচিত্রা,

‘ কিছু বলবি?

তিথি ফিরে তাকিয়ে বলল,

‘ ঘুমোওনি?

‘ নাহ।ঘুম ভাঙলে কি আর আসে? তুই বল।

তিথি এসে মায়ের বিছানা ঘেষে দাঁড়ালো।মিনমিনে সুরে বলল,

‘ মা তন্ময় ওর সাথে বাইরে যেতে বলছে।

‘ তুই কি বলেছিস?

‘ যাবো।

” তবে যা।

‘ যাবো কিন্তু, কি পরে যাবো?

সুচিত্রা একটু ভেবে বললেন,

‘ কেন রে? এবার পূজোয় যে জামা টা কিনে দিলাম সেটা পর।

তিথি চোখ বড় বড় করে বলল,

‘ ওইটা?অত ভারি জামা? আমিকি বিয়ে বাড়ি যাচ্ছি?

সুচিত্রা বিরক্ত হলেন।বললেন,

‘ তোর যেটা ইচ্ছে সেটা পর যা।কিছু খুঁজে না পেলে বস্তা পরে যাস। যত্তসব!

কথাটা বলেই লেপ মুঁড়ি দিলেন সুচিত্রা।তিথি ঠোঁট উল্টে ভাবল,

‘ ধুর!আজ যদি দিদি থাকতো।ঠিক সাজেস্ট করতো আমায়।

বৃষ্টির কথা মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল তিথি। ভাগ্য তার শত অনুরোধকে পায়ে পিষে জীবন টা এলোমেলো করে দিলো।অথচ দিদি! সে নিজেই নিজের জীবনের জল ঘোলা করতে উঠে পরে লেগেছিলো । আদিত্য দাদার শত কান্না,আকুতি অবজ্ঞা করে ডিভোর্স টা দিয়েই দিলো মেয়েটা। একদিন এই লোভ তার কাল না হলে হয়!

________

সন্ধ্যের দিকে তন্ময় তিথিকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েছে। তন্ময়কে বিদায় দিয়ে তিথি ঘুরে ঢুকতে গেলেই দেখলো ঘরের দরজাটা হা করে খোলা। তিথির অবাক লাগলো।যাওয়ার সময় মা কি ভুল করে তালা দেয়নি? নাকি মা যায়ইনি কাজে? কিন্তু আজ তো মায়ের যাওয়ার কথা ছিলো। অনেক ভেবে ঘরে ভেতর পা রাখলো তিথি।সন্ধ্যে বেলায় ঘরের দরজা খোলা অথচ ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার।মা থাকলে নিশ্চয়ই আলো জ্বালাতো! চোর টোর ঢুকলো নাতো? বা ডাকাত? কথাটা ভাবতেই তিথির গলা শুকিয়ে এলো। পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকতেই হুট করে মাঝের ঘরের লাইট টা জ্বলে উঠলো। হঠাৎ কঁড়া আলো চোখে পরায় হাত উঁচু করে মুখ আঁড়াল করলো তিথি। একটু সয়ে নিতেই হাত সরিয়ে সামনে তাকালো। সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুক কে দেখে পৌছে গেলো বিস্ময়ের শেষ সীমায়। পরমুহূর্তে কঁড়া কন্ঠে শুধালো,

‘ আপনি এখানে কি করছেন?

আদিত্য চেয়ারে বসে ছিলো।এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে। তিথির মুখের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার। তিথির আপাদমস্তক পরোখ করতে ব্যাস্ত সে। এই মেয়ের মুখ দেখে কে বলবে? এই মেয়ে তার জন্যে শোকে ছিল? কি সুন্দর ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে তন্ময়ের সাথে ঘুরে বেরিয়েছে। তিথি একটু এগিয়ে এসে বলল,

‘ আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি।আপনি ঘরে ঢুকলেন কি করে?

আদিত্যর নিরুদ্বেগ উত্তর,

‘ তোমাদের রান্নাঘরের জানলাটা তো ভাঙা।সেখান দিয়ে।

তিথি অবাক হয়ে বললো,

‘ মানে? তার মানে দরজার তালা আপনি ভেঙেছেন?

আদিত্য ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

‘ আমি কেন তালা ভাঙব? ওই তালার তৃতীয় চাবি তোমাদের ওয়াড্রবের ড্রয়ারে রাখা থাকেনা? সেখান থেকে নিয়ে খুলেছি।তোমার যাতে ঢুকতে অসুবিধে না হয়।

‘ কেন এসছেন এখানে?

আদিত্য পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ কেমন ঘুরলে আজ? ছেলেদের টাকা ভেঙে খেতে ভীষণ মজা লাগে তিথি? আমি মেয়ে হলে আমিও চেষ্টা করতাম।

তিথি শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো,

আপনি তো তার থেকেও দামি কিছু পাচ্ছেন।মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়েদের শরীর পাওয়া যায়, বাচ্চা বানানো যায় সেখানে আর কি চাই?

আদিত্য দ্রুত পায়ে উঠে এসেই তিথির বাহু চেপে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেলল ওকে।তিথি হকচকালো।আদিত্য
দাঁত চেপে বলল,

‘আমি তোমার শরীরের লোভে তোমার পেছনে পরে থাকিনি।ভালোবাসি বলে থেকেছি।

তিথি নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আদিত্য আরো শক্ত করে ঠেসে ধরলো।তিথি শান্ত কন্ঠে বলল

‘ তার নমুনা বুঝি এই? বিয়ে করে বউ নিয়ে ফুর্তি শেষে তারপর পুরোনো প্রেমিকার কাছে অাসাকে ভালোবাসা বলে?

আদিত্য কিছু বলতে নিয়েও থেমে গেলো।তিথি উদগ্রীব কন্ঠে বলল,

‘ তা কেমন হলো ফুলসজ্জা? নতুন শরীরের ঘ্রান বুঝি ভীষণ মিষ্টি?

আদিত্য বেশ খানিকক্ষন পর জবাব দেয়,

‘ আমি পুতুল কে ছুইনি এখনও।

তিথি তাচ্ছিল্যের হাসি টানলেও প্রত্যুত্তর করলোনা।শীতল চোখে চেয়ে থাকলো আদিত্যর দিকে।এই চোখে মিথ্যে স্পষ্ট ভাসছে।স্পষ্ট।

তিথি আস্তে করে বলল,

‘ ছাড়ুন আমায়।

আদিত্য নম্র কন্ঠে বলল,

‘ আপনি আজ্ঞে কেন করছো তিথি?

তিথি সোজাসাপটা উত্তর দিলো,

‘ কারন আপনি অপরিচিত এখন।অন্যের স্বামী হয়ে একটা মেয়েকে এভাবে চেপে ধরেছেন লজ্জ্বা করছেনা?

আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলে আবার তাকালো।ঠান্ডা স্বরে প্রশ্ন করলো,

‘ তন্ময়ের সাথে তোমার এত মাখামাখি কিসের তিথি? বিয়ে করবে ওকে?

তিথি ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলল

‘ করলেই বা? আপনার কি এসে যায় ? আর সব মাখামাখিতে বিয়ের প্রয়োজন হয়না।এসব তো আপনিই আমায় শিখিয়েছেন। আমিও না হয় আপনাকে অনুসরন করলাম,দিনের পর দিন শারীরিক সম্পর্ক করব তন্ময়ের সাথে তারপর অন্য কাউকে বিয়ে করব।ক্ষতি কি?

আদিত্য জলন্ত চোখে চেয়ে রইলো।গায়ে আগুন ধরে গিয়েছে তিথির এক কথায়।তন্ময়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কের কথা এতটাই বিদঘুটে বোধ হলো,অনুভব হলো সব থেকে বিকৃত শব্দ এটা। সহ্য সীমা অতিক্রম করে তিথির গলা চেঁপে ধরলো আদিত্য। শক্ত হাতের কঠোর স্পর্শে শ্বাস আটকে এলো তিথির। আদিত্য রুষ্ট কন্ঠে বলল,

‘ তন্ময় তন্ময় তন্ময়? এই নাম নেয়া কন্ঠকেই ছিনিয়ে নেবো আমি।

তিথির চোখ উল্টে গিয়েছে।আদিত্য বুঝতে পেরেই ধড়ফড় করে গলা ছেড়ে দিলো। কিন্তু ততক্ষনে বেশ দেরি।তিথি কাশতে কাশতে লুটিয়ে পরলো মাটিতে।

চলবে,
যারা বলছেন আদিত্যর কথা আর না লিখতে,তাদের বলব আদিত্য তিথির সাথে ওতপ্রোতোভাবেই জড়িত।ওকে নিয়ে লিখতেই হবে😑

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here