শেষ_ভালোবাসা পর্ব : ৫ লেখা : মেঘপরী

0
262

#শেষ_ভালোবাসা
পর্ব : ৫
লেখা : মেঘপরী
.
আভা প্রচুর চেষ্টা করছে অত্রকে নিজের কাছ থেকে সরানোর। কিন্তু কিছুতেই সরাতে পারছে না। আভা দুই হাত দিয়ে অত্রকে ধাক্কা দিচ্ছে। অত্র আভার দুই হাত শক্ত করে ধরে আভার গলায়, মুখে অজস্র চুমো দিচ্ছে।একটু পর আভার হাত একটু ঢিল হলেই আভা বিছানার সাইডে রাখা ফুলদানি দেখতে পায়। ওটা হাতের কাছে পেয়েই অত্রের মাথায় স্বজোড়ে একটা বারি মারে। বারি খাওয়ার সাথে সাথে অত্র আভাকে ছেড়ে মাথায় হাত দিয়ে ব্যথায় কাতরাতে থাকে।
আভা ছাড়া পেয়েই এক দৌড়ে আদ্রিতার রুমের দরজায় গিয়ে জোরে জোরে নক করতে থাকে,

এতো রাতে দরজায় নক করার শব্দে আদ্রিতার ঘুম ভেঙ্গে যায়,তারপর ভয়ে ভয়ে সে উঠে বসে বলে
– কে বাইরে?
– আমি তোমার ভাবি তাড়াতাড়ি দরজা খোলো
আভার গলা শুনেই আদ্রিতা দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেয়, আর দরজা খোলার সাথে সাথে আভা আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়, ঘটনার আকস্মিকতায় আদ্রিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে
-কি হয়েছে ভাবি তুমি কান্না করছো কেনো?
– ( আভা কান্না করতে করতে বলে) তোমার ভাই মদ খেয়ে এসে আমার সাথে অসভ্যতামি করেছে আমি ওকে মেরেছি
-কি বলো ভাবি ভাইয়া মদ খাওয়া তো দূরের কথা নামও শুনতে পারে না, তুমি ওয়েট করো আমি দেখছি, তারপর
আদ্রিতা অত্রর রুমে যেয়ে দেখে তার ভাইয়ের মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। অত্র অজ্ঞান অবস্থায় বিছানায় পরে আছে।
এটা দেখার সাথে সাথে আদ্রিতা চিৎকার দিয়ে উঠে
– ভাইয়া………
আদ্রিতার চিৎকার শুনে আভা ভয়ে কেঁপে ওঠে , আর নিচে থেকে অত্রের বাবা মাও চলে আসে, তারপর অত্রের অবস্থা দেখে বলে

_একি অত্রর কি হলো মাথা দিয়ে এতো রক্ত পরছে কেনো?
-কি ভাবে হলো এসব?
আদ্রিতা তুই এক্ষুনি ডাক্তারকে ফোন কর
-আমি এক্ষুনি যাচ্ছি আম্মু
এটা বলে আদ্রিতা দৌড়ে
ফোন নিতে রুমে এসে দেখে আভা গুটিসুটি মেরে বসে কান্না করছে, এরা দেখে আদ্রিতা আভাকে বলে
– ভাবি ভাইয়ার অবস্থা খারাপ রক্ত পড়া বন্ধ হচ্ছে না, তুমি তারাতারি ভাইয়ার কাছে যাও, আমি ডক্টরকে ফোন করছি,
-কিন্তু আব্বু আম্মু যদি কিছু জিজ্ঞেস করে তখন আমি কি উত্তর দিবো?
– এখন এসব নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই আগে ডক্টরকে আসতে দাও তারপর দেখা যাবে,
– আচ্ছা ঠিক আছে এটা বলে আভা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়, কিন্তু তার পা যেনো একদম চলতেই চাচ্ছে না,কোনো মতো সে রুমের দরজার পাশে এসে দাড়ায়ে, কিন্তু রুমের ভেতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছে না, একটু পরে আদ্রিতা ডক্টরকে ফোন করে হাতে একটা ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে দেখে আভা এখনও বাইরে দাড়িয়ে আছে তাই সে আভার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যায়, ওদের দেখে অত্রের আব্বু বলে
– কি রে আদ্রিতা ডক্টরকে ফোন করেছিস? আর আভা কোথায় ছিলে এতক্ষণ?
এটা শুনে আভা কিছু বলার আগেই আদ্রিতা বলে উঠে
– হ্যা ডক্টরকে ফোন দিয়েছি, আর ভাবি আমার রুমে গিয়েছিলো ফাস্ট এইড বক্স আনতে..

আভাকে দেখতেই অত্রর বাবা বলল আভা তুমি তো রুমে ছিলে এসব কিভাবে হলো?
-আসলে বাবা (এখন এসব কথা কিভাবে বলব আল্লাহ তুমি আমার সহায় হও কথাটা মনে মনে বলল আভা)
তখনি আদ্রিতা এসে বলে
– বাবা ভাইয়া আজ অতিরিক্ত ড্রিংস করে বাসায় এসেছে যার ফলে টাল সামলাতে না পেরে পরে গিয়ে মাথা ফেটে গেছে,
– কি বলছিস এসব অত্র তো কখনো ড্রিংস ছুঁয়েও দেখে না, আজ হঠাৎ এসব করলো কেনো?
– সেটা তো জ্ঞান ফিরলেই জানা যাবে, এখন একটু চুপ করো আপাতত রক্ত বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে, এটা বলে আদ্রিতা আভার দিকে একবার তাকিয়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে অত্রের পাশে বসে তুলা দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করতে থাকে, তার কিছুক্ষণ পরে ডক্টর চলে আসে, তারপর সব ঘটনা শুনে,
কাটা জায়গা পরিষ্কার করে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয় আর কিছু ঔষধ দেয়,

অত্রের আব্বু বলে
– ডক্টর ভয়ের কোনো কারন নেই তো?
– না মি. আশরাফ আহমেদ ভয়ের কোনো কারন নেই আসলে রক্ত পড়েছে ঠিকই কিন্তু কাটা টা তেমন গভীর নয়,
– কিন্তু এখনও যে জ্ঞান ফিরছে না?
– আসলে অত্র একটু বেশিই ড্রিংস করে ফেলেছে, তাই ওর অজ্ঞান হওয়ার পিছনে মাথা ফেটে যাওয়ার থেকে নেশাটা বেশি কাজ করেছে, এখন ঘুমাতে দিন ঘুম ভাঙ্গলেই আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে
এখন অনেক রাত আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে ঔষধ গুলো ঠিক মতো খাওয়াবেন আর কোনো অসুবিধা হলে অবশ্যই আমাকে ফোন দেবেন, আমি এবার আসি,
– আচ্ছা চলুন আপনাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি,

তারপর আশরাফ আহমেদ আর ডক্টর রুম থেকে বেড় হয়ে যায়, তখন অত্রের আম্মু বলে,
– আভা আজ সারাদিন তোমার উপর অনেক ধকল গেছে তুমি এখন যাও আজ আদ্রিতার সাথে আদ্রিতার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরো আমি অত্রের সাথে আছি..
– কিন্তু মা,
– কোনো কিন্তু নয় আমি যেটা বলছি সেটা শোনো আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না।।
এটা শুনে আভা চুপচাপ আদ্রিতার সাথে আদ্রিতার রুমে চলে যায় তারপর আদ্রিতার রুমে ঢোকার পরই তার হাত ধরে বলে
– thanks আদ্রিতা তোমার জন্য এখন বড় বাঁচা বেঁচে গেছি কিন্তু কাল ওনার জ্ঞান ফেরার পরে কি হবে জানি না,
– এসব নিয়ে তোমাকে এতো টেনশন করতে হবে না কাল এ নিয়ে কথা বলা যাবে এখন চুপচাপ ঘুমাও..

সকালে
.
অত্রের ঘুম ভাঙতেই মাথা ঝিমঝিম এর সাথে সাথে মাথায় হাল্কা ব্যথাও অনুভব করছে তারপর মাথায় হাত দিতেই বুঝতে পারে তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা। পরক্ষণেই তার গতরাতের সব কথা মনে পরে যায়,
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here