কৃষ্ণচূড়া🍂 নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–০৭

0
118

কৃষ্ণচূড়া🍂
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–০৭

পেছন ঘুরে রাজীব কে দেখে দাত কিড়মিড়িয়ে এলো ছবির।
এইতো সেই গাড়ির লোকটা,,,,,

একই অবস্থা রাজীবেরও।ঝগড়ুটে মেয়েটা আরাবির বোন,,,,এটা বোধগম্য হতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাকে,,,

দুজনেই তাদের ঝটকার মাত্রা কাটিয়ে সমস্বরে বলে উঠলো
আপনি/তুমি…???

—- এই মেয়ে সেদিন আমার স্যারের গাড়িতে ইট মেরেছিলে তুমি,,,,, আজ বাগে পেয়েছি…

— কি করবেন শুনি??

— কি আর করবো,,,,, আরাবি ম্যাডামের বোন দেখে ছাড় দিলাম। নাহলে…

— নাহলে??

— কিছুনা।

কথাটা বলে আর দাড়ায়নি রাজীব,,,,এখানে তার স্যার কাব্য রেয়ান চূড়ান্ত পর্যায়ে সন্মানিত। আর তার পি এ হয়ে একটা মেয়ের সাথে তর্কে লেগে যাওয়া শোভনীয় হবেনা। আর তাই রাজীব পেছন ঘুরে
হাটার গতি স্পটের ভেতরের দিকে নিয়ে গেলো।

ছবিও আর ভাবলোনা এসব নিয়ে,,,,,আপাতত তার মন বড্ড খারাপ বোনের আচরনে। কিন্তু মায়ের কাছে যে বলা যাবেনা,,,,মা আরাবিকে ভুল বুঝবে। শুধু শুধু ওদের সম্পর্ক খারাপ হবে।

,,,,,
,,,,
,,,,
,,,
,,,,
,,,

টেবিলের ওপর হাতের টিফিন বাটি টা রাখলো
আরাবি।

ইরফান আপাতত নেই এখানে,,ব্যাপারটা খুব একটা খারাপ হয়নি।
শব্দ পেয়ে মাথা তুললো কাব্য,,,,
কাব্য কে তাকাতে দেখে জোরপূর্বক হাসলো আরাবি।

— কি আছে এতে??

— আব,,,খাবার…..

— ও আই সি।

দুজনের কথার মাঝেই এসে দাড়ালো ইরফান,,,,,

— আরাবি,এতক্ষন লাগলো যে?? ,আমি তোমার জন্য খাবার না খেয়ে অপেক্ষা করছিলাম।

একদিনেই ইরফান আরাবিকে তুমি বলে সন্মোধন করছে,,,,অবশ্য এতে আরাবিরও সায় ছিলো বটে।

ইরফানের কথায় ভালো লাগা ছেয়ে গেলো আরাবির চোখ মুখে,,,,,তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলো….

— আমার আপু খাবার নিয়ে এসেছিলো তো,,,
তাই আর কি,,

এতক্ষনে ইরফানের টিফিন ক্যারিয়ার এর দিকে দৃষ্টি পরলো।

— তাহলে তুমি এগুলো খাবে এখন?

— আরে নানা,,,আমিতো ডায়েটে আছি আপু জানতোনা,তাই এগুলো নিয়ে এসছিলো,,,,,

— তাহলে?
ফেলে দেবে??

— আসলে ভাবছি কি করা যায়।

— এক কাজ করতে পারো,,,,এখানে কোনও স্টাফ কে দিয়ে দিতে পারো,,

— আইডিয়াটা খারাপ নয়,,,,,এমনিতেই এখন এসব বাঙালি খাবার আইটেম খেতে ইচ্ছে করছেনা আমার,,

ইতিমধ্যেই কাব্যর কাছে এসে দাড়ালো রাজীব,,,ইরফান আর আরাবির দৃষ্টি এড়িয়ে রাজীব কিছু বলার জন্যে কাব্যর কান বরাবর ঝুকে এলে তার আগেই ফিসফিস করে কিছু একটা বলে দিলো কাব্য।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সোজা হয়ে দাড়ালো রাজীব।

— আরাবি ম্যাম,,,বলছিলাম যে এখন তো লাঞ্চ টাইম প্রায় শেষে,,,, কাকে না কাকে খুজবেন,,তার থেকে আমাকে দিন।

— আপনি?? খাবেন এগুলো?

— কেনো নয়,,,বাঙালী খাবার কত দিন খাইনা বলুন তো,,,দিন আমাকে।

— আচ্ছা বেশ,,,

হাফ ছেড়ে এতক্ষনে বাচলো আরাবি,,,,
আদিক্ষ্যেতা করতে খাবার নিয়ে আসতে হবে কেনো ব্যাপারটা মাথার ওপরে দিয়ে গেলো তার।

ইরফান আর আরাবিকে কেবিনে রেখেই বেরিয়ে পরলো কাব্য,,,আর তার পিছু নিলো রাজীব।

— কাব্য স্যার লাঞ্চ করেছেন??

— দেখলাম তো নাহ,,,,

—- উঠে গেলো কেনো?

— নো আইডিয়া,,এসব ভাবনা রেখে খাওয়া শুরু করি চলো।

,,,,
,,,,
,,
,,,
,,,
,,,
,,

রাজীব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে কাব্যর দিকে,,,,
খাবার গুলো এক প্রকার চেটেপুটে খাচ্ছে কাব্য,,,এতোটা তৃপ্তি নিয়ে খেতে আজ প্রথম দেখলো কাব্যকে।

প্রতিদিন স্যালাড,স্যুপ খেয়ে খেয়ে মুখে যেটুকু অরুচি ভর করেছিলো আজ সব হয়তো এক নিমিষেই কেটে যাবে।

— আপনার বাঙালি খাবার পছন্দ স্যার?

— ভীষণ,,,,, কি বলোতো,এগুলো দেখলেই মাকে খুব মিস করি,,মা মারা যাওয়ার পর আর খাওয়া হয়নি যে।

— আমাকে বললেই হতো স্যার,,,,আমার বউ বেশ ভালো রান্না জানে,,,,এরপর থেকে নিয়ে আসবো।

তবে স্যার কেউ যদি এখন দেখে ফেলে না আপনাকে এভাবে খেতে,,,পত্রিকায় বেশ বড় সড় হেডলাইন হবে কিন্তু।

— এই জন্যেই তো পাহাড়ায় রেখেছি তোমায়,,কি বলোতো রাজীব,,,,খাবারের সুগন্ধ টা আমাকে এতোটাই টানছিলো যে সব হায়া ভুলে খেতে বসলাম।
মিস আরাবির বোন বেশ ভালো রাধুনি মানতে হবে কিন্তু।

—- সাথে ঝগড়াতেও সেরা।

— মানে??

— কিছুনা স্যার কিছুনা।আপনি খান,,,

🍂

🍁

🍂

🍁

সিনেমা জগতে পদার্পণ এর দু মাস আরাবির,,,,,ভীষণ ব্যাস্ততায় প্রথম প্রথম মা বোনের সাথে যোগাযোগ থাকলেও কয়েক দিন যাবত কমে এসেছে অনেকটা।
সেই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর থেকে অত্র বাসায় আর পা মাড়ায়নি আরাবি।
,,,
,,,
,,,
,,,
,,,

আজ এক সপ্তাহ ধরে আরাবিকে ফোনে পাচ্ছেনা ছবি,,,,,
প্রথম প্রথম ব্যাস্ত আছে ভাবলেও ইদানিং তার মাথায় চিন্তারা এসে ভীড়ছে ক্রমাগত।
ব্যস্ত থাকলে অন্তত ফোন বন্ধ করে তো রাখবেনা।

এছাড়াও কাল সে উড়ন্ত খবর পেয়েছে আপাতত সিনেমার কাজ স্থগিত রেখেছেন কাব্য রেয়ান,,যদিও সেটা সত্যি কিনা ছবি জানেনা।

সব মিলিয়ে তার ছষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে খুব বাজে কিছু একটা ঘটেছে হয়তোবা।

শেষ মেষ আরাবির ফ্ল্যাটে যাওয়ার সিদ্ধান্তে নিজেকে উপনীত করলো ছবি,,,,

নূবায়রার ও একই মত,,ছবির সাথে যাওয়ার ইচ্ছে পোষন করলেও তার শরীরের কথা ভেবে রাজী হয়নি ছবি। মেয়ের চিন্তায় অনেকটাই কাতর তিনি।

,,,
,,,,
,,,,
,,
,,,
,,

অনবরত বেল বাজিয়ে যাচ্ছে ছবি,,কিন্তু দরজা খোলার নামই নিচ্ছেনা কেউ,,,ভেতরে আদৌ কেউ আছে কিনা ব্যাপারটা সন্দিহান ও বটে,,,,

আরেকবার বেল বাজানোর উদ্দ্যেশে হাত এগিয়ে নিতেই দরজা খোলার শব্দে থেমে গেলো ছবি।

অল্প বয়সী একজন মেয়ে,,,,, বেশ পরিপাটি মেইডের ড্রেস পরে আছেন তিনি।

— এভাবে বেল বাজাচ্ছেন কেনো? কাকে চাই আপনার?

— জ্বি,,আরাবি আছেন?

— আপনি কে?

— আমি ওর বোন,, ছবি রাহমান,,

— ও ম্যাডাম,ভেতরে আসুন না,,

— জ্বি না,,,আমাকে শুধু বলুন আরাবি আছে কিনা,দেখুন অনেক দিন ওর কোনও খোজ পাচ্ছিনা,,,,কোথায় ও..

— আরাবি ম্যাম তো নেই,,,, আজকে আট / নদিন যাবত এখানে আসছেন না উনি…

— কিহ??

— জ্বি…
কিন্তু আমিতো ভেবেছিলাম উনি ওনার ফ্যামিলির কাছে কিংবা কাব্য স্যারের কাছে রয়েছেন,,,যেহেতু আপনি এখানে আর দুদিন আগে কাব্য স্যার ও….

পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই উল্টো ঘুরে হাটা দিলো ছবি,,,,
আপাতত মাথায় চক্কর লেগেছে তার,,,,,আরাবি এখানেও আসেনি তাও আরো আট নদিন ধরে। তবে কোথায় গেলো ও?? কার কাছে গেলো?? কে দেবে ওর খোজ এখন??

আচ্ছা কোনও ভাবে হিরো কাব্য রেয়ানের কাছে যায়নিতো..মেইড টাও তো সেরকম ই কিছু একটা বলছিলো।

সিড়ির গোড়ায় দাড়িয়ে কথাগুলো ভেবে নিয়ে আবারো দরজার কাছে এগিয়ে এলো ছবি। মেয়েটি দরজা বন্ধ করতে গিয়ে ছবিকে দেখে নিজেকে থামিয়ে রাখলো।

— কিছু বলবেন ম্যাডাম??

— আমাকে কাব্য রেয়ানের এড্রেস টা দিন…..

চলবে,,,
( নাইস নেক্সট বাদ দিয়ে মন্তব্য করুন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here