কৃষ্ণচূড়া🍂 #নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–১১

0
117

#কৃষ্ণচূড়া🍂
#নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–১১

ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে কাব্য। হুট করে লোড শেডিং। তার ওপরে জেনারেটরের লাইন টাও যে কেনো চালু হচ্ছেনা এ নিয়ে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার।

বার দুয়েক গলা খাকিয়ে রাজিব কে ডেকে উঠলো কাব্য।
দিন দিন যে রাজীবের কি হচ্ছে কে জানে । আগে তো ডাকার সাথে সাথে হাওয়ায় উড়ে আসতো। আর এখন ডাকতে ডাকতে গলা শুকিয়ে এলেও দেখা পাওয়া যায়না জনাবের।

নাহ এতো গরমে আর এভাবে বসে থাকা যাবেনা,,,কারো কোনও সাড়া নেই কেন এবার দেখতে হচ্ছে।
রকিং চেয়ার ছেড়ে উঠে এলো কাব্য,,,পা বাড়াতেই হাল্কা আলোর উৎস নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে থেমে গেলো সে।

আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আলোটা নিজে থেকে হেটে হেটে আসছে তার দিকে। এখানে নিশ্চিত রাজীব থাকলে ভূত ভূত করে চিৎকার করে বেহুস হয়ে পরতো।
কিন্তু কি ওটা??
দেখার জন্যে আরেকটু এগিয়ে গেলো কাব্য।
আলোটা কাছাকাছি আসতেই আলোয় জ্বলজ্বল ছবির মুখ টা স্পষ্ট হয়ে এলো কাব্যর কাছে। হাতে মোম নিয়ে কাব্যর বরাবর এসে দাড়ালো ছবি।

চারিদিকে সব অন্ধকার,,, শুধুমাত্র মোমের হলুদ বর্নের আলোতে আলোকিত কাব্য আর ছবির মুখদ্বয়।

একভাবে ছবির দিকে তাকিয়ে আছে কাব্য। জানলা থেকে আসা মৃদুমন্দ বাতাসে হালকা ভাবে উড়ছে ছবির সামনের চুলগুলো। সাথে মোমের নিভুনিভু ভাবটা মুখশ্রীতে যেন অঢেল মায়া বর্ষন করে দিয়ে যাচ্ছে।
কাব্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তি মিশ্রিত কাপাগলায় বলে উঠলো ছবি…

— আ…আলো আসতে দেরি হবে,,,রাজীব ভাই জানালো।
হুশ ফিরতেই নিজেকে স্বাভাবিক করে ছবির থেকে চোখ সরিয়ে নিলো কাব্য।

—কেনো? লোড শেডিং বুঝলাম। জেনারেটর এর কি হয়েছে??

— সার্ভিস প্রব্লেম দিচ্ছে। এর বেশি জানিনা আমি। আর ওসব যান্ত্রিক ব্যাপার স্যাপার বললেও বুঝবোনা।

কথাটা বলে মোমবাতি টাকে আগলে নিয়ে মোমদানি তে সামলে রেখে দিলো ছবি।

— আপনাকে আলো নিয়ে আসতে কে বলেছে?

— কেউনা। আপনি রাজীব ভাই কে ডাকছিলেন। সেটা শুনেই এসেছি।

— ওহ,,,ধন্যবাদ,,,তবে এটার দরকার পরতো না,,,অন্ধকার পছন্দ আমার।

— জানি।

— কিভাবে??

— ওটা দেখে…..

হাত উচু করে কিছু একটা দেখালো ছবি।ছবির আঙুল ইশারা করে সেদিকে তাকালো কাব্য। মোমের আলোতে ওয়াইন ভর্তি কাচের বোতল দুটো চকচক করছে।

— এর সাথে অন্ধকারের কি সম্পর্ক???

— নেশাসক্ত জীবন অন্ধকারের সমান। জানেন না?

ছবির এহেন কথায় পিছু ঘুরে গেলো কাব্য।

— ড্রিংক করি বলে অন্ধকার পছন্দ আমার এমন নয়। বরং অন্ধকার আমায় টানে বলেই ড্রিংক করি আমি।

জবাবে কিছু বললোনা ছবি। হুট করে লাইটস চালু হতেই অনেকটা কেপে উঠলো সে।

মিনিট খানেকের মধ্যেই কক্ষের অভ্যন্তরে এসির ঠান্ডা বাতাস ভেসে আসতে শুরু করলো।
ছবি ঝুকে গিয়ে ফু দিয়ে মোমের আলো নিভিয়ে দিলো। এগিয়ে গিয়ে খুলে রাখা জানলার কাচ টাও টেনে দিলো তারপর । কাব্যকে একবার আড়চোখে দেখে নিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো নিশব্দে।

ছবির অনুপস্থিতি টের পেয়ে দরজার দিকে ফিরলো কাব্য। তার মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো,,

“”””বেশ যত্নশীল মেয়েটা।

🍁

🍁

🍁

🍁

🍁

পার্টি হাউসে এক বিশাল বড় পার্টির আয়োজন করেছে ইরফান।
স্টার দের মিলনায়তন হবে এখানে। ছোট বড় সবধরনের অভিনেতাদের ভীড়ে জমজমাট হবে আজকের এই ফাংশন । ক্যামেরার পেছনে থাকা রাঘব বোয়ালরাও শরীক হবেন তাতে।তবে অনুষ্ঠানের মূলভিত্তি ইরফান এবং কাব্য রেয়ানের প্রযোজিত আপ-কামিং সিনেমাটি।

🍂

🍂

ছবিকে একটি মেরুন রংয়ের গাউন পরিয়ে সাজানো হয়েছে। যদিও ডিজাইনার কে এমন সজ্জার বিশ্লেষণ কাব্যরই দেয়া।

ছবি কাব্যর বাড়িতে থাকে ব্যাপারটা কারোরই জানা নেই। কাব্য সব রকম পদক্ষেপ নিয়েছে ব্যাপারটিকে গোপন রাখতে। আর তারই এক ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে দুজন আলাদা আলাদা গাড়িতে করে হাজির হয়েছে পার্টি হাউসে।

কাব্যর গাড়ি দেখেই হাসি মুখে এগিয়ে এলো ইরফান। কাব্য নেমে আসতেই করমর্দনের পাশাপাশি আলিঙ্গন ও করে নিলো তাকে। খানিক বাদেই কাব্যর গাড়ির পাশেই ছবির গাড়ি এসে থামলো।ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই গাউনের নিচের দিক টা সামান্য উচুতে ধরে নিয়ে,,, সামলে নেমে এলো ছবি।

মুহুর্তেই ইরফানের চোখ গুলো আটকে গেলো ছবির ওপর,,
ছবির রুপে ঘায়েল হয়ে,,, গতকাল রেস্টুরেন্টে ইরফানের উদ্দেশ্যে ছবির সেসব অপমান মুলক কথা গুলো বেমালুম লাপাত্তা হয়ে গেলো তার মস্তিষ্ক থেকে।

ছবিকে দেখা মাত্র ইরফান কে নিজের সাথে নিয়েই ওর দিকে এগিয়ে গেলো কাব্য।

— আসতে কোনও অসুবিধে হয়েছে??

— জ্বি,,না….

দুজনের কথার মাঝেই ইরফান বেশ উদগ্রিব হয়ে বলে উঠলো….

—- ইউ আর লুকিং সো গর্জিয়াস…..আমি আপনার মত এত মোহনীয় নারী খুব কম দেখেছি।

এহেন কথায় অস্বস্তি হলেও সৌজন্যে রক্ষার্থে অনেকটা জোরপূর্বক হাসি হাসলো ছবি।

— ধন্যবাদ।

— চলুন ভেতরে যাওয়া যাক।

,,,
,,,
,,

ছবি সামনে সামনে হেটে চলছে। সাথে কাব্যর নিয়োগ করা সহকারী মেয়েটি। বাইরে ছবির সুবিধে অসুবিধে দেখার জন্যেই মেয়েটিকে রাখা হয়েছে।

পেছনে একিসাথে পা মিলিয়ে কাব্যকে নিয়ে হাটছে ইরফান।

— একটা কথা বলবো কাব্য.?

— বল।

— এই মেয়েটাকে কোথায় পেয়েছিস তুই??

— অডিশন দিতে এসেছিলো,যেভাবে বাকিরা আসে। কেনো?

— সি ইজ সো বিউটিফুল ইয়ার। মেকআপ করে যতটা সুন্দর, মেকআপের প্রলেপ ছাড়াও ততটাই সুন্দর। মিডিয়াতে ন্যাচারাল বিউটি তো পাওয়াই মুশকিল। বাট সি ইজ সো প্রিটি।
আই নিড হার!

— হোয়াট…..??

— আব,,,,নাথিং… তুই পার্টি এঞ্জয় কর।

ওপাশ থেকে কাব্যর কোনও অভিব্যক্তি না পেয়ে ইরফান নিজেই বলে উঠলো…..

— ওহ হ্যা তোকে তো বলতেই ভুলে গিয়েছি,,, আজ পার্টি তে কে এসেছে জানিস??

— না বললে কিভাবে জানবো??

— চিল ম্যান,,,আজ পার্টিতে জেঠু এসেছে….

— তাই। তো কোথায় আংকেল??

🍂

🍂

🍂

বসে বসে বোর হচ্ছে ছবি। হাত পা ঝিম ধরে এসেছে তার। তার ওপরে আবার এরকম একটা জাবড়ানো পোশাক। সব মিলিয়ে নিজের মাথায় নিজেরই বাড়ি মারতে ইচ্ছে করছে।

অথচ আশেপাশে সবাই,, কেউ নেচে যাচ্ছে কেউ কথা বলছে আবার কেউ কিসব ছাইপাঁশ গিলছে। এইসব লোকদের কথায় কথায় এত পার্টি কেন দিতে হয় কে জানে। বিরক্তিকর।

ছবির ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে সামনে এসে দাড়ালো কাব্য।

— মিস ছবি??

— জ্বি….

— আপনাকে একজনের সাথে আলাপ করিয়ে দেবো। আসুন।

কাব্যর পিছু পিছু হাটা ধরলো ছবি। এমন প্রসস্থ একটা গাউন পরায় পায়ে বেধে বেধে যাচ্ছে তার। এতো লোকের মাঝে কোনও রকম উল্টে পরে গেলে ইজ্জ্বতের ফালুদা হয়ে যাবে একেবারে। আর তাই নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সাবধানে পা ফেলে হাটছে ছবি।

এক পর্যায়ে কাব্য দাড়িয়ে যাওয়াতে সেও দাড়িয়ে পরলো।

— মিস ছবি,ইনি প্রযোজক মিস্টার শাখাওয়াত রাহমান। আমাদের ফিল্ম ডিরেক্টর ইরফান রাহমানের বড় চাচা।

কাব্যর আওয়াজে নিচের দিক থেকে চোখ উঠিয়ে হাসি মুখে লোকটির দিকে তাকালো ছবি। মুহুর্তেই যেন জমে গেলো ছবির সমস্ত শরীর।

ওপাশ থেকে পৌঢ় লোকটি পাতলা ফিনফিনে ঠোঁট দুটো বাকিয়ে নিজের হাত এগিয়ে দিলো ছবির দিকে,,

— হ্যালো বিউটিফুল লেডি।

লোকটির দিকে নিষ্পলক ভাবে ভেজা চোখের শক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে ছবি।
ছবির দিক থেকে কোনও সাড়া না পেয়ে ভ্রু ক্রুটি করলো কাব্য এবং পৌঢ়টি দুজনেই।

— মিস ছবি??

কাব্য ডেকে উঠতেই লোকটির দিকে একবার রাগীচোখে তাকিয়ে হনহন করে হেটে গেলো ছবি।
ছবির এমন কাজের মানে বোধগম্য হলোনা কাব্যর।

— ডোন্ট মাইন্ড আঙ্কেল।আই থিংক ওনার কোনও প্রব্লেম হয়েছে। আমি দেখছি।

— ইয়াহ শিওর।

🍁

🍁

ছবির পিছু নিয়ে পার্কিং সাইড অব্ধি চলে এসেছে কাব্য,,,,
সবাই পার্টির মূল স্পটে থাকায় এদিকটা বেশ কোলাহল শূন্য।

ওদিকে গটগটিয়ে হেটে চলছে ছবি। ছবিকে দেখতে পেয়ে কয়েকবার পেছন থেকে ডেকে উঠলো কাব্য। কিন্তু সেসবে তোয়াক্কা না করে হেটেই যাচ্ছে ছবি।

এবার কিঞ্চিৎ জোরালো পায়ে হেটে গিয়ে ছবির এক হাত টেনে ধরলো কাব্য।

— মিস ছবি ডাকছিতো শুনতে পাচ্ছেন না নাকি??

ছবি পিছু ফিরতেই অনেকটা ভড়কে গেলো কাব্য। ফোলা ফোলা,, লাল বর্নের চোখের নিচে কাজল গুলো লেপ্টে আছে ছবির। কেঁদেছে সেটা স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে।

— এনিথিং রং মিস ছবি?? কাঁদছেন কেনো আপনি?

— ছাড়ুন আমাকে। আমি বাড়ি যাবো.. হাত ছাড়ুন।

— যাবেন,,,নিশ্চয়ই যাবেন,,আমিও যাবো,তার আগে বলুন কি হয়েছে?

— কিছুনা।

— কিছু নাহলে
শাখাওয়াত আঙ্কেল কে দেখে ওমন রিয়্যাক্ট কেনো করলেন আপনি?? কি ভাবলেন উনি ?

— যা ভাবার ভাবুক,,আই ডোন্ট কেয়ার অফ দ্যা ডেভিল ম্যান।

— মিস ছবি কাকে কি বলছেন??

— আমি জানি আমি কাকে কি বলছি….কিন্তু আপনি জানেন না উনি কে??

— তাই? আমি জানিনা? তা কে উনি???

— ওই লোকটা,,,, ওই লোকটা আমার জন্মদাতা পিতা।

—হোয়াট??
এসব আপনি কি বলছেন?? শাখাওয়াত আঙ্কেল আপনার বাবা??

— প্লিজ ওনাকে আমার বাবা বলবেন না। আমার ঘৃনা হয়।

হাত দিয়ে মুখ চেপে ফুপিয়ে কেদে উঠলো ছবি। যার দরুন একটু পরপর শরীর কেপে কেপে উঠছে তার।
ছবির মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আর কথা বাড়ালো না কাব্য।

— আমি এখানে থাকতে চাইনা। প্লিজ চলুন এখান থেকে।

কান্নাভেজা কন্ঠে কাব্যকে উদ্দেশ্যে করে কথাটা বললো ছবি।

— আপনি শান্ত হন,,এভাবে কেউ কাদতে দেখলে অন্য কিছু ভাববে। আপনি গাড়িতে গিয়ে বসুন। আমি আসছি।

🍂

🍂

সব কিছু ম্যানেজ করে আসতে আসতে কিছুটা সময় লেগে গিয়েছে কাব্যর। যেহেতু পার্টির মূল বিষয় বস্তুই ছিলো তাদের সিনেমাটি,,সেক্ষেত্রে এভাবে মাঝপথে সিনেমার হিরো হিরোইনের অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে আসাটা অশোভনীয় হবে,,,,, আর তাই বাহানা বানিয়ে বেশ অনেকটাই জল ঘোলা করে আসতে হয়েছে কাব্যকে।

কাব্য গাড়িতে উঠে বসতেই সিটে হেলান দিয়ে ছবিকে ঘুমিয়ে থাকতে দৃষ্টি গোচর হলো তার।
ব্যাপারটা তে কিঞ্চিৎ ভ্রু নাচালো কাব্য।

— এতো দেখছি বাচ্চাদের মতো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমোচ্ছে।

ছবির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ড্রাইভারের দিকে তাকালো কাব্য।

— স্টার্ট দ্যা কার।

🍂🍂🍂

গাড়ি চলতে শুরু করতেই ধাক্কায় ছবির মাথাটা সিট থেকে এলিয়ে পরলো কাব্যর কাধের ওপর।
কিন্তু এতে হেলদোল দেখালো না কাব্য। সে তার মত ব্যাস্ত হয়ে পরলো ফোন স্ক্রলিং এর কাজে।

গাড়ি যত এগোচ্ছে ছবির মাথা তত দুলছে। কোনও ভাবেই স্থির থাকছেনা। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হাতের ফোনটা পকেটে রেখে দিলো কাব্য। এক হাত প্রসস্থ করে দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো ঘুমন্ত ছবিকে।

🍁🍁🍁

সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠছে কাব্য। তবে সে একা নয়,,,,দুহাতে ছবিকে নিয়েই উঠছে,,,, ছবি একিভাবে ঘুমিয়ে আছে। অনেকবার ডেকেও সজাগ করতে না পেরে শেষ মেষ ব্যার্থ হয়ে নিজেই ছবিকে কোলে তুলে নিয়েছে কাব্য।

🍂🍂🍂

রুমে ঢুকে বিছানার ওপর ছবিকে আস্তে করে শুইয়ে দিলো কাব্য। কিছুক্ষন ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে ঝুকে গিয়ে হাতের আঙুলের ডগা দিয়ে চোখের নিচে লেপ্টে যাওয়া কাজল গুলো মুছে দিলো।একে একে ছবির মুখের সামনে চলে আসা এলোমেলো চুল গুলোকেও যথাসম্ভব ঠিকঠাক করে দিলো সে। গায়ের ওপর কাথা টেনে দিয়ে,,,,দরজা লাগিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

,,,,,
,,,,,,
,,,,
,,,,,,
,,,
,,,
ভোরবেলা নিজেকে বিছানায় দেখে অনেকটাই চমকে গিয়েছে ছবি।
যতটা মনে পড়ছে তাতে তো সে গাড়িতে ছিলো৷ এরই মধ্যে বিছানায় কি উড়ে উড়ে এসেছে??

এ ব্যাপারে খুব একটা মাথা না ঘামিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে এসে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে।

খানিক বাদে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মৃদূ পায়ে সিড়ি বেয়ে নেমে গেলো রান্নাঘরের দিকে। তৎসই ব্যাস্ত হয়ে পরলো সকালের খাবার তৈরী করতে। যদিও সার্ভেন্ট রয়েছে,,,,
তবুও রান্না করা ছবির সব থেকে ভালো লাগার একটি কাজ।
নূবায়রা যখন ছবিকে রেখে দোকানে চলে যেতেন সেই ফাকে রান্না করতে বসে যেত ছবি। প্রথম প্রথম খাবার যাচ্ছে তাই সাথে মুখে তোলার অযোগ্য হলেও আস্তে আস্তে পাকা রাধুনিতে মোড় নিলো তার হাত।
শুরুতে নূবায়রা বারন করলেও মেয়ের সাথে পেরে ওঠেননি। সে যখন রান্না করতে যেত ছবি পাশে গিয়ে দাড়িয়ে থাকতো তখন।

পুরোনো স্মৃতি থেকে বেরিয়ে খাবার হাতে নিয়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো ছবি।
সব কিছু টেবিলে সাজিয়ে রেখে চেয়ার টেনে বসে পরলো খাওয়ার জন্যে।

খানিকবাদে কাব্যও এসে উল্টো দিকে বসলো। তবে আজ রাজীব নেই। সিনেমার কাজ শুরু হতে এখনও দুটোদিন বাকি,,আর সেই ফাকেই ছুটি নিয়ে রাজীব তার বাড়িতে গিয়েছে।

আপাতত কজন সার্ভেন্ট বাদ দিয়ে বাড়িতে ছবি আর কাব্য এই দুজনই।

দুজনেই মুখে কুলুপ এটে রাখার মত মৌণভাবে খেয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ নিরবতা কাটিয়ে ছবি বলে উঠলো…

— মিস্টার রেয়ান,,,আ’ম স্যরি…

— ফর হোয়াট??

— কাল আমার জন্যে আপনার প্রোগ্রাম নষ্ট হলো। ওভাবে মাঝপথে চলে আসতে হয়েছিলো আপনাকে। আসলে আমি ইচ্ছে করে এরকম করিনি। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।

— ওকে,,,,কিছু মনে করবোনা,,যদি আপনি আমাকে পুরো সত্যিটা জানান তো।

— কিসের সত্যি??

— শাখাওয়াত আঙ্কেল আমার বাবার বন্ধু,,তাই ওনাদের সাথে আমাদের অনেক ভালো জানাশোনা। আমি যতদূর জানি ওনার এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে আর তারা দুজনেই বিদেশে সেটেল্ড। ওনার স্ত্রীকেও দেখেছি আমি। তবে উনি আপনার বাবা ঠিক কি করে হলেন মিস ছবি???

কি গল্প আছে এর ভেতরে??

চলবে……!!

( দিনে অনেক ব্যস্ত থাকবো আর তাই এই সময়ে দিতে হলো😊হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here