#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#পার্টঃ_৩
#writer_sumaiya_afrin_oishi
“হলুদ অনুষ্ঠানে হলো বিরাট এক কাহিনী। হঠাৎ করে আমাদের কলেজের গ্যাঞ্জাম পার্টির সব সদস্য হাজির। আমাদের বন্ধু মহলের ৬ জন সদস্য। আমি, মিতু, জান্নাত, রিয়া, আমরা ৪ জন মেয়ে। আর দুইজন ছেলে আলিফ ও রবিন।”
“ও হ্যাঁ আমরা সবাই এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে আছি।আমি আর মিতু ছোট বেলা থেকেই এক সাথেই আছি।আমরা দুজন এক ইস্কুলেই ছিলাম।যেহেতু আমার বাবা আর শরিফ আংকেল মানে মিতুর আব্বু বন্ধু।সেই হিসেবে আমাদের পারিবারিক সম্পর্কটা ও ভালো। আমরা দুজনের মধ্যে বোনের মতো সম্পর্ক। আমরা এক পথের পথিক। ছোটবেলা থেকে একজন আরেক জন কে ছাড়া অসম্পূর্ন মনে হয়।”
“বন্ধুত্বটা হলো এমন একটি আত্মািক টান। মনের অনুভূতি, যা হৃদয়ের টান। ওদের সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক না থাকলে ও নিজেদের খুব আপন প্রিয়জন মনে হয়। মনেহয় দিন শেষে ওদের ছাড়া চলেই না। আমি আর মিতু যখন বরিশাল বিএম কলেজে ভর্তি হই তখন ওদের সাথে পরিচয় হয়েছে। ওদের সাথে পরিচয় অল্প দিনের হলেও একদম আপন হয়ে গেছে। তো আমরা ছয়জন একসাথে ই থাকি। একে অপরের সঙ্গে সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে ই চলি। গ্যাঞ্জাম পার্টির সদস্য একজন না থাকলে তার শূন্যতা সবার মধ্যে বিরাজমান। আমরা যেখানে ই যাইনা কেন জায়গাটা আর নিরব থাকে না,মুহূর্তে’ই জমজমাট হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় গ্যাঞ্জাম, অবশ্য “গ্যাঞ্জাম পার্টি” নামটা আমাদের উপাধী দিয়েছে কলেজ মহল। কেননা আমরা যেখানেই যাই, হয়ে যায় কোলাহল গ্যাঞ্জাম। এই উপাধীতে খারাপ লাগে না আমাদের। আর নিজেদের কোন বিশেষ ব্যাক্তি বর্গ মনে হয়। কারন আমাদের কলেজের সবাই এক নামে চিনে হাহা।”
“আমরা শুধু গ্যাঞ্জামই করি না মানুষেমানুষের হেল্প ও করি।
-এই ধরুন কলেজের এক সিনিয়র ভাই আমাদের ডিপার্টমেন্টের সাথী কে খুব পছন্দ করে। বাট, বলে না হয়তো লজ্জা দিদ্বায় ভুগছেন। এইদিকে দেখলাম সাথী ও সামথিং সামথিং বাট বলে না। তাই আমরা গ্যাঞ্জাম পার্টি নিলাম তাদের দায়িত্ব! নিজেরা ই দুজনের পক্ষ থেকে চিঠি লিখে দুজন কে দিলাম। সাথী জানলো ঐ ভাইয়া ওরে দিছে। আর এদিকে সাগর ভাইয়া কে আমরা চিঠি দিয়ে বলি সাথী দিছে।
আহা বেচারা চিঠি পেয়ে তার আর খুশী দেখে কে! আমাদের তো খুশীর ঠ্যা*লায় রেস্টুরেন্টে নিয়ে দিলো বিশাল বড় এক ট্রিট! এখন তারা দেখলাম চুটিয়ে প্রেম করে। শুনলাম কিছু দিনের মধ্যে বিয়ে ও করে নিবে।”
❤️” এইদিকে আমার আর মিতুর বাসা কলেজের কাছাকাছি আর বাসা ও কাছে। কিন্তু সমস্যা হলো বাকি চার জনের বাড়ি দূরে, ওরা হোস্টেলে থাকে। এখন কলেজের বার্ষরিক ছুটি তাই সবাই বাড়ি তে চলে গেছে। মিতু অনেক বলার পড়ে ওরা চারজন বাড়ি থেকেই একসাথে আসছে। যেহেতু ওদের বাড়ি দূরে আর বাড়ি ও এক জায়গায় তাই একসাথে ই আসছে। আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমরা তো ওদের দেখে সেই খুশি।””
“এবার হব্বেহহ গ্যাঞ্জাম পার্টির গ্যাঞ্জাম শুরু ভাবতেই আমার খুব মজা লাগছে, ঈদ ঈদ ফিলিংস হচ্ছে । এতক্ষণ নিজেকে এতিম এতিম মনে হতো। এখন আমার ডানে বামে সব পরিপূর্ণ মনে হয়।”
“আমরা বন্ধু মহল ভোলা বা’লা গ্যাঞ্জাম পার্টি দিলাম এক চিৎকার, শুরু হয়ে গেছে আমাদের মা’রা’মা’রি ঝগড়া। বেশি কিছু বলতে পারলাম না তার মধ্যে জান্নাত আর রিয়া ক্লান্ত শ্বরে সবার উদ্দিশ্যে বললো, দোস্ত আমাদের খুব খুবব ক্ষুধা লাগছে। আগে খেতে দে। আগে খেয়ে ধেয়ে এনার্জি বানিয়ে তারপর না হয় জমিয়ে আড্ডা দিব ওক্কে।”
“মিতু ও ওদের তাড়া দিয়ে রুম দেখিয়ে দিলো। আলিফ, রবিন কে গেস্ট রুমে আর জান্নাত আর রিয়া কে মিতুর রুম নিয়ে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসতে বলে রুম থেকে চলে আসলো মিতু।”
“গায়ে হলুদের পার্টি শুরু হয়ে গেছে গেছে। আমরা মেয়েরা সবাই হলুদ শাড়ী আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবী পড়েছে। অনুষ্ঠানে স্টেজ সাজানো হয়েছে ছাদে। আমরা সবাই ছাদে গিয়ে সবাই অপু আপুর সাথে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলতে ব্যাস্ত। এর মধ্যে কোথাথেকে যেন রাফিন ভাই আর তার বন্ধু ছাদে চলে আসছে।”
“রাফিন ভাই এক হাতে ফোন কানের কাছে গুঁজে অন্য হাত প্যান্টের পকেট আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। পরনে কালো জিন্সের প্যান্ট, হলুদ পাঞ্জাবী হাতা গোটানো চুল গুলো জেল দিয়ে পিছনে দিকে ঠেলে দিছে। বাহ্ একদম পারফেক্ট। শ্যামসুন্দর মানুষটাকে হলুদ পোশাকে আরো সুন্দর লাগে। গালে খোঁচা খোঁচা চাপ দাড়ি! সিমসাম বডি, উচ্চতা ছয় ফুট এর হয়তো একটু কম। সত্যি ছেলে হিসেবে পারফেক্ট! ক্রাশ খাবার মতোই। এই প্রথম তার দিকে চেয়ে ভালো মতো দেখলাম। আমিও এই ছেলে কে দেখে ছোট খাটো ক্রাশ খাইলাম!”
“এরিমধ্যে রিয়া আমাকে ধা’ক্কা দিলো বলে উঠলো, ঘটনা কি দোস্ত বলতো? কখন থেকে তোকে ডেকে যাচ্ছি আর তুই কোন সাড়া দিচ্ছিস না।”
“ওর কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো। আমি হকচকিয়ে বললাম,
ককই কখন ডাকলি?”
“রিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে জান্নাত বললো মনে হয় আমাদের ঐশী প্রেমে পড়ছে রে! আমি শুনছি মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন তার কাছে দুনিয়ার কোনো ধ্যান , জ্ঞান থাকেনা রে! সেতো তার স্বপ্নের পুরুষকে নিয়ে কল্পপনার রাজ্যে গিয়ে সাঁতার কাটে!”
“আমি ওদের চোখ পাকিয়ে বললাম,
“তোরা আমাকে তো চিনিস রে। আমার দ্বারা ওসব প্রেম ট্রেম হবে না।”
“আমরা কথা শুনে ওরা বলে উঠলো, আচ্ছা দোস্ত মজা করছি রেগে যাচ্ছিস ক্যান?”
“আচ্ছা দোস্ত ঐ ছেলেটা কে রে? রাফিন ভাইয়ের দিকে চেয়ে ইশারা করে বললো রিয়া। মিতু বললো আমার কাজিন রাফিন ভাই। আমার বড় চাচ্চুর ছেলে।”
“ওহ আচ্ছা। দোস্ত আমি তো তোর ভাই কে দেখে ই ফিদা রে।দোস্ত আমার সাথে একটু ভাব জমিয়ে দে না। আর কত কাল সিঙ্গেল থাকবো? তোদের কি মায়া হয় না একটু ও আমার জন্য। মনখারাপের ভান করে রিয়া বললো।”
“মিতু বললো, তোর জন্য একটা শোক সংবাদ রে দোস্ত! তুই প্রেম করার আগেই ছ্যাকা খাইলি। কারান ভাইয়া নাকি অনেক আগেই অসম্ভব রকমের ভালোবাসেন একজন কে।”
“রিয়া দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো, ওহ্! সো স্যাড! প্রেমের আগেই ব্রেক আপ!”
” তার পরে আবার উচ্ছাস নিয়ে বললো, শোন এই বিয়ে বাড়ি তো অনেক সুন্দর সুন্দর গুলুমুলু আলু আসছে। একজনের সাথে আমার সেটেল্ড করিয়ে দিলে তোদের ট্রিট দিব ভাব নিয়ে বললো।”
“আমরা সবাই একসাথে বললাম, হইছে থাম তুই ভাই। তুই এ-ই যাবত কত গুলো ছেলের সাথে রিলেশন করছো হিসাব আছে?”
“রিয়া মুখ ফুলিয়ে বললো, হিসাব রাখবো না ক্যান?
মাএ ই তো সাত টা।”
“আর এই মেয়ে দেখতে বেশ সুন্দরী। ছেলেরা তো লাইন ধরে পিছনে। আর যে-ই প্রেমের প্রস্তাব দিবে শর্ত দিবে আমার মুড সুয়িং না করতে পারলে ব্রেকআপ! কোনো ছেলেই নাকি ভালো লাগেনা না তার। এক মাস পড়ে বা পনেরো দিনেই ব্রেকাপ!
এই মেয়ে তাও নিজে কে পিওর সিঙ্গেল দাবি করে।”
“এর মধ্যে আন্টি মিতুর আম্মু এসে তাড়া দিয়ে বললো, কিরে তোরা এখানে বসে গল্প করেছিস ক্যান? চল চল হলুদ ছুঁয়ে দিবি অপুকে। তোদের সবাই কে ডাকে।”
“আমরা ও চললাম আর কথা বাড়ালাম না। কারন আমরা তো ভদ্র।”
“হঠাৎ করে কেউ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো “আমার দিকে ওভাবে চেয়ে ছিলে কেন ঘসেটী বেগম? প্রেমে ট্রেমে পড়ছো না-কি আমার? আমার মতো মাসুম বাচ্চার ইজ্জত চোখ দিয়ে গিলে খেয়ো না! তাইলে আমার শাশুড়ীর মেয়ের কি হবে? আমি তো পুরোটাই তার। আমার বউয়ের আমানত।”
“আমি পিছনে ফিরে বললাম, কে ?
“এমা এতো রাফিন ভাই। তাকে দেখে আমি তো অবাক। এই খাইছেরে ধরা পড়ে গেলাম। আমি তাকে দেখছিলাম উনি দেখলো কি ভাবে? উনি তো ফোনে কথা বলছিলো অন্য দিকে তাকিয়ে! কি জানি পিছনে ও মনে হয় দুটো চোখ আছে, ভবিষ্যৎ ডাক্তার তো বলাও যায় না থাকতেই পাড়ে! মিঃ খাম্বা। কি লজ্জাজনক কথা ছিঃ!ছিঃ! কি বদ অসভ্য লোক। আমি তো ভালো মনে করছিলাম। মনে মনে এসব ভাবতে ছিলাম। উনার কথায় আমার ধ্যান ভা’ঙলো।”
” আবার উনি বলে উঠলো, কি হলো কথা বলো না যে? কি এত ভাবছো? নাকি আমি ধরেই নিবো তুমি আমার শরীরের ভার্জিনতা চোখ দিয়ে খেয়ে দিলে? ইশ এখন আমার কি হবে! এইসব উদ্বভব কথা উনার দ্বারায়ি সম্ভব!”
” তার কথা শুনে আমি সামনের দিকে চেয়েই বললাম, মোটেও আমি আপনার দিকে চেয়ে ছিলাম না বুজলেন।”
” আমি তো আপনার হাতের ঘড়িটা দেখছিলাম! হ্যাঁ ঘড়িটা অনেক সুন্দর!
বলে চলে গেলাম অন্য দিকে। না হয় আবার কি লজ্জায় পড়তে হয় আল্লাহ মালুম!”
“উনি পিছন থেকে ই বলে উঠলো, লজ্জাবতী! লজ্জা পেলে কিন্তু তোমাকে আরো সুন্দর লাগে!”
“বলেই রাফিন ভাই চলে গেলো অপু আপুর কাছে। তার গালে হলুদ ছুঁয়ে, মিষ্টিমুখ করে সাথে সেলফি নিলো।”
“আমিও আপুর কাছে ছিলাম। কোথাথেকে আবার এসে উনি আমার গালে একটু হলুদ দিয়ে বললো,”
“এইবার পারফেক্ট! হলুদ শাড়ী পড়েছো একটু হলুদ না দিলে ই কি হয় বলো?
তোমাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগে একদমই হলুদ পরীর মতো! বলে চলে গেলো উনি। আর এই দিকে আমি বোকার মতো রাফিন ভাইয়ের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম। উনি কি বলে গেলো সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো।”
“হলুদ অনুষ্ঠান শেষ! মেহমানরা চলে গেছে। এতক্ষণে একটু খালি হলো বাসাটা।
রাত ১২ টার মধ্যে ই বড়রা তারাতাড়ি খেয়ে সুয়ে পরেছে। ছোটরা ও কিছু সময় সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে যার যার নির্দ্বারীত রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।”
“আজকে অপু আপুর বিয়ে। সারাদিনে আর রাফিন ভাইয়ে সাথে কথা হয়নি। উনি খুব বিজি তাদের বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে। বড় ভাই হিসেবে তো অনেক দায়িত্ব! রাফিন ভাই আবার নিজের দায়িত্বের বেলায় খুব সচেতন। এরি মধ্যে রাফিন ভাই আমার হাতে একটি”,,,,,,,,
চলবে……
[বিঃ দ্র- কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ]