#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#writer_sumaiya_afrin_oishi
#পার্টঃ৭
কল রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে এক অচেনা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে উঠলো। মিষ্টি সুরে ছেলেটি বললো,
“ম্যাডাম আপনার জন্য একটা পার্সেল আসছে, কুরিয়ার অফিস থেকে। কালকে এসে নিয়ে যাবেন প্লিজ!”
বিস্মময়ের চরম পর্যায় পৌঁছে গেছি আমি। আমার মুখ থেকে কোন কথা বের হলো না। আমি ঘোরের মধ্যে ডুবে গেছি।
“অপর প্রান্ত ছেলেটি আবার বললো, ম্যাম আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা?”
“বিস্মিতো কন্ঠে ঐশী বললো, হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। বাট আমার মনেহয় আপনি ভুল নাম্বারে ফোন দিয়েছেন। আমাকে কে আবার পার্সেল দিবে? আপনার কোথাও ভুল হয়েছে।”
“না ম্যাম। আপনার এই নাম্বার ই দেওয়া। আপনার নাম কি ” নুসরাত জাহান ঐশী?”
“হ্যাঁ!
“তাহলে কালকে এসে নিয়ে যাবেন ম্যাম। ধন্যবাদ! বলে কল কেটে দিল লোকটি।”
“এদিকে আমার হাজার প্রশ্ন এসে মাথায় জট পাকিয়েছে। কে দিবে আমাকে পার্সেল? আমার কাছে তো কারো পার্সেল আসার কথা না। এসব হাজার চিন্তা ভাবনা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।”
🌸”শরতের আকাশ। সূর্য উদায় হয়ে তার আলোক রশ্মিতে মুখরিত সারা ধরণী। এক গুচ্ছ রোদ জানালার পর্দা ভেদ করে স্পর্শ করছে ঐশীর মুখময়। একরাশ স্নিগ্ধতা এসে ভার করলো ঐশীর চোখে মুখে। এক ফালি আলো চোখে পড়ায় ঘন পল্লবীত আঁখি যুগল কুঁচকে ফেললো। বিরক্ত হয়ে নিভু নিভু চোখ মেললো। আঁখি যুগল মেলতেই চোখ কপালে উঠে গেলো।” মুঠোফোনে সময় দেখেই দরফরিয়ে উঠে বসলো। মনে পড়লো কালকের পার্সেলের কথা।
“ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো ঐশী। নাস্তা করে মিতুকে কল দিয়ে আসতে বললো। বাহিরে গেটের সামনেই অপেক্ষা করতে লাগলো মিতুর জন্য । অবশেষে কাঙ্খিত মানুষটি কে দেখে হাসি ফুটলো মুখশ্রী জুড়ে। একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো তারা। উদ্দেশ্য পার্সেল আনার জন্য।”
___________________________
“আমরা বাসায় এসে আমার রুমে গিয়ে পার্সেলটা খুলতেই চোখ আমার চড়ুই গাছে। একরাশ কৌতুহল নিয়ে খুলে দেখলাম অপরিচিত ঠিকানা থেকে সাতটা সাত কালারের হিজাব পাঠিয়েছে।”
“তার উপরে হলুদ রংয়ের কাগজে ছোট্ট একটি চিরকুট লিখে দিয়েছে-
“মায়াবতী কন্যা হিজাবে তোমাকে বেশিই সুন্দর লাগে! বাহিরে বের হলে এখন থেকে হিজাব পড়ে যাবে। আমি চাইনা অন্য কেউ তোমাকে দেখুক। তোমাকে দেখার অধিকার শুধু মাএ আমার”।
“চিরকুটি পড়ে আমার মাথায় শুধু একটি নাম মনে হয়। এই কি সেই অপরিচিত লোকটি? যে আমাকে নিয়ম করে দুবার মেসেজে পাঠায়।
উফ এত রহস্য কেন? নিজেকে এখন কেমন জানি পা’গ’ল পা’গ’ল লাগে! এসব হচ্ছে টা কি আমার সাথে।”
“এদিকে মিতু ও আমার সাথে বাসায় আসছে। পার্সেল টা দেখার পড়ে সেই থেকে ক্ষেপাচ্ছে আমাকে।
“বলি কি বান্ধুপীীীী তলে তলে এত দূর জল গড়িয়া গেল আর আমরা কেউ টের ই পেলাম না? সুর টেনে বললো মিতু।”
“দেখ দোস্ত তুই ও যা দেখেছিস আমি ও তো তাই। সত্যি আমি জানি না রে। কে এই লোক,। কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো ঐশী।”
“আচ্ছা আমার মনে হয় এইটা ঐ ব্যাটার কাজ।”
আমি কনফিডেন্স হয়ে বললাম, কোন ব্যাটা?
“মিতু চিন্তিত্ব ভঙ্গিতে বললো- আরে ঐ যে অপরিচিত লোকটা। যে এখনো পরিচয় দেয়নি।”
“হুম হতে পারে। আমি ও তাই মনে করি।”
“আচ্ছা বাদ দে এসব। শোন আমি এখন বাসায় যাবো। আপু আর ভাইয়া আসবে আজকে। উঠি রে এখন। মিতু বললো।।
সে কি দুপুরে খেয়ে যা? তারপরে যাস। না হয় আম্মু মন খারাপ করবে।
মিতু তাড়া দেখিয়ে চলে গেলো। আমি ওকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম।
“এভাবে কেট গেল দুই দিন। রাফিন ভাই এর সাথে আর কথা হয়নি না দেখা হয়েছে। কেন যেন মানুষটাকে বার বার মনে পড়ে।”
“আজ বিকেল বেলা মিতুর জিজু “তামিম ভাইয়া” আমদের সবাই কে ট্রিট দিবে। আমি আর আপু রেডি হয়ে গেটের সামনেই অপেক্ষা করাছি তাদের জন্য। যেহেতু তারা গাড়ি নিয়ে আসবে, আমাদের এখান দিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। কিন্তু বিপওি বাঁধলো অন্য জায়গায়, গাড়িতে সিট আছে একটা। আপু উঠে বসে পড়লো । এরি মধ্যে রাফিন ভাই বাইক নিয়ে হাজির। উনি আবার বাইক ছাড়া চলে না।
“তামিম ভাইয়া বললো – ঐশী তুমি রাফিনের সাথে এসো। আসলে এখানে এতো গাদাগাদি করে যেতে হবে না। অপু আপু ও সহমত প্রকাশ করলো তাদের সাথে। সবাই চলে গেলো গাড়ি নিয়ে। আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
রাফিন ভাই আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো ঃ উঠবে না কি? না তোমাকে কোলে তুলে বসাতে হবে? তাইলে বলো কোলে নেই।
“উনার কথায় মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো, ব্যা’টা মুখে কি মধু দেয়নি জন্মের পড়ে? সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকতে হবে? একটু ভালো ভাবে কথা বললে কি হয়?হার্টলেস রোবট একটা।”
“আমি যাবো না আপনার সাথে। আমি ঝাঝালো কন্ঠ বললাম।”
” উনি বাইকে আরাম করে বসে স্বাভাবিক ভাবেই বললো, তা আজকে কি রিক্সায় যাবেন ম্যাডাম? আমার সাথে ই তো তোমাকে যেতে হবে? তোমার জন্য ই আজকে এখানে আসা।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, আমার জন্য আসা মানে?
“উনি কথা ঘুরিয়ে বললো, তামিম ভাইয়া বললো গাড়িতে জায়গা নেই, তাই আসছি। এখন তাড়াতাড়ি উঠে আসো? না হয় কিন্তু আমি কোলে তুলে উঠাবো? ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে উঠতে তো পারবে না। দাঁড়াও আমি নামছি, বলই নামতে নিলো।
না না৷ আমি উঠছি, চটজলদি বলে দিলাম। উনাকে বিশ্বাস নেই। যদি কেউ দেখে ফেলে উনি আমাকে কোলে তুলে নিছে। মানসম্মান সব শেষ আমার। তাই বাধ্য হয়ে উঠে বসলাম।
উনি বাঁকা হেসে, বাইক স্টাট দিলো।
হুমম ডং দেখে আর বাঁচি না। এত বাঁকা হাসার কি আছে? মনে হয় ছোট বেলায় পলি টিকা দেয় নাই, তাই ঠিক ভাবে হাসতে পারে না। আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি। একটা কথা ও বললাম না আর। না আর এই লোকটার সাথে কথা ই বলা যাবে না।
“কিছু দূর গিয়েই উনি হঠাৎ বাইক থামালো রাস্তার এক সাইডে। আমি বিস্মিত নয়নে তাকালাম উনার দিকে। উনার সেদিকে কোন হেল দেল নেই।
“এখানে বসো। আমি আসছি বলে গটগট পায়ে চলে গেলো সামনের দিকটায়।”
পাঁচ মিনিটের মধ্যে ই আবার চলে আসলো উনি। হাতে একটা বেলি ফুলের মালা। আমার সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বললো-
দেখি হাতটা দেওতো এদিকে?
“আমি অদ্ভুত দৃষ্টিতে উনার কাজগুলো দেখছি। আমার কোন রেসপন্স না পেয়ে, নিজেই আমার হাতটা উনার এক হাতের উপরে রাখলো।”
“উনি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে একটু নিচুর দিকে ঝুকে, হাতে মালাটা খুব যত্ন করে পড়িয়ে দিচ্ছে।”
‘উনার এত কাছে আসার ফলে,উনার গরম নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে এসে বারি খেতেই ধুকপুক করতে লাগলো বুক। সমস্ত শরীর ঝাঁকুনী দিয়ে উঠলো।”
“উনি মালাটা হাতে পেঁচিয়ে দিয়ে , ফিসফিস করে বললো, “তোমাকে মলিন মুখে মানায় না মেয়ে! হাসিমুখে ই তোমাকে দারুণ লাগে”!
“রাফিনের ফিসফিস করা কন্ঠে শিহরিত হয়ে গেলো ঐশী! কাঁপুনি ধরে গেলো দেহের রন্ধে রন্ধে! রাফিন সোজা হয়ে ঐশীর চোখের দিকে তাকালো। দুজন চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলো ঐশী। ঐশীর ভিতরে কম্পিত হৃদয়ের ধুপধাপ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে রাফিন। তা শুনে মৃদ হাসলো।ঠোঁট জুড়ে প্রশান্তির হাসি।”
কপালে হাত দিয়ে মৃদু কন্ঠ ডাকলো রাফিন।
“ঐশী ”
ঐশীর ভিতরে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। এক অজানা অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে হৃদয়ে। বহু কষ্টে রাফিনের ঘোর লাগা অদ্ভুত চোখের দিকে দৃষ্টি স্হির করলো ঐশী। রাফিন বিমোহিত নয়নে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর চোখের দিকে। এ চোখ যেন হাজার কথা বলে। ঐশী ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে তার কিশোরী মনে। ঐশীর ঘনঘন নিঃশ্বাস যেন রাফিনের হৃদয়ে ঝড় নামিয়ে দিচ্ছে। মাদকের মতো টানছে রাফিন কে।
রাফিন নিজেকে সংযত রাখতে চাইছে। কিন্তু পারছে না!
“রাফিনের হুস আসতেই কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো। জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো।
নিজে নিজেকে ই বকতে লাগলো আচ্ছা মতো। ইসস আর একটু ভুল হলেই ঐশী আমাকে কি ভাবতো ছিঃ! যার জন্য এতটা দিন অপেক্ষা করছি, আর তো মাএ কয়েক টা মাস। তোমাকে একেবারে নিজের করে নিবো মায়াবী পরী!”
“ঐশী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়ে আছে রাফিনের মুখশ্রীর পানে। তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে রাফিনের কৃতকর্ম।”
-পরিস্থিতি বুঝতে পেরে রাফিন বললো- মুখ ফুলিয়ে বসে আছো তাই ফুলটা এনে দিলাম। বাচ্চারা মন খারাপ করে বসে থাকলে আমার আবার ভালো লাগে না। তুমি তো ছোট মানুষ! কি না মালা হাতে পেঁচিয়ে দিতে গিয়ে ছিঁড়ে ফেলো। তাই আমি পড়িয়ে দিলাম। বুঝতে পারছো পুচ’কে। এখন তারাতাড়ি উঠে পড়? নাকি এখানে থাকার প্লান করছো?
এক নিঃশ্বাসে বললে থামলো রাফিন ।
“আর দেখ মালাটা অনেক সুন্দর না?
রাফিনের কথায় যেন ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলো ঐশী। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কিছুটা স্বাভাবিক হলো।”
“হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো আসলেই মালাটা সুন্দর!”
মালাটা দেখেই আমার মনটা ভালো হয়ে গেলো। বেলী ফুলের ঘ্রানটা ই না কি দারুণ! আমার খুব পছন্দের ফুল এটা। এতক্ষণের এই লোকটার উপরে জমানো সব রাগ, অভিমান ভেঙে গেলো।
“কিছু ক্ষণের মধ্যেই সবাই একসাথে হলাম।উনাদের আগেই আমরা পৌঁছে গেছি।
সারা বিকেলে সবাই ঘুড়লাম, হাসি আনন্দ, সবাই মিলে অনেক মজায় কেটে গেল সময়। রেস্টুরেন্ট থেকে সবাই ডিনার করে , যার যার বাসায় চলে আসলাম।”
#চলবে……….
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]
পেজে ফলো দিয়ো সবাই 🙏
আজকের পর্ব কেমন হয়েছে? সবার গঠন মূলক মন্তব্য চাচ্ছি।