#ভলোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#writer_sumaiya_afrin_oishi
#পার্টঃ১০
শরতের আমেজ শেষ হয়ে প্রকৃতি নিয়ে এলো হেমন্ত ঋতু!হালকা শিশির ঝরা শীতের আগমনী বার্তা বয়ে
আসে হেমন্ত ঋতু মিষ্টি শীতল পরশ নিয়ে।
দিগন্ত জোড়া সবুজ চারা ধানের ক্ষেত দৃষ্টি নন্দন
সবুজ চারার বুকে কাঁচাপাকা ধানশীষের আগমন।
ধীরে ধীরে শস্য ক্ষেত হরিদ্রাবর্ণ ধারণ
মাঠে মাঠে শুরু হয় ধান কাটার আয়োজন।
আপামর খেটে খাওয়া মানুষের আশার পূর্ণতা লয়ে
হেমন্ত ঋতু বাঙালীর গৃহ ভান্ডার ভরে তোলে।
হেমন্তে ফসল তোলার আনন্দ বেড়ায় বাতাসে ভেসে
আঙিনা মুখরিত ঢেঁকির তালে তালে ধানভানার গানে।
নবান্নের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠে সবাই
নতুন ধানের পায়েস, পিঠা -পুলি আরও কত কি বানায়।
হেমন্তের মুখরোচক ফল চালতা কামরাঙা, ডালিম
হৃদয় ছোঁয়া ফুল গন্ধরাজ কামিনী,মল্লিকা ছাতিম।
প্রকৃতির সাথে মেতে উঠলো এক চঞ্চল হরিণী কন্যা!
মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি মুগ্ধ হয়ে দেখছে ঐশী, চৈতী, মিতু!
বাবার সাথে গ্রাম দেখবে বলে, বায়না ধরেছেন শফিকুল শেখের দুই রাজকন্যা।
“বাবা ” নামক মানুষ টা মেয়েদের আবদার পূরণের জন্য সব সময় চেষ্টা করে যায়।
কেননা, বাবা মেয়েদের একটু বেশিই ভালোবাসে।
তার সমর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করতে কখনো কিপটামো করে না।
বাবা যতদিন বেঁচে থাকে ততদিনে মেয়েদের রাজকন্যা করে রাখে। প্রতিটা মেয়েই তার বাবার রাজকন্যা!”
“শফিকুল শেখের গ্রামের নাম মধুপুর। চাকরির সুবাদে বরিশাল আসছেন তিনি। এখন শহরেই একতলা একটি বাড়ি করেছে। তাই আর গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়না তেমন।
বরিশাল একটা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক তিনি।
বছর খানেক পড়েই অবসর নিবেন কর্ম জীবন থেকে।
শত ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও তার রাজকন্যাদের আবদার পূরণে ছুটে চলে আসলো নিজ গ্রামে।”
সারাদিন ঘুরে ঘুরে দেখলো গ্রাম্য পরিবেশ। শহরের ইট পাটকেলের মধ্যে থেকে এমন খোলা মেলা পরিবেশে এসে, যেন প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সকলে।
সূর্যের আলো তার বিলীন হওয়ার অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। হালকা শীতল হাওয়া বইছে!
অন্ধকার হয়ে গেছে চারপাশে, শফিকুল সাহেব তাড়া দিলো সকলে, বাসায় যেতে হবে বলে।
________________________________________
🌸 শেখ বাড়িতে আজ ঈদের আমেজ! শফিকুল শেখ আজ নিজ হাতে বাজার করেছে।
সানজিদা শেখ রান্না ঘরে এটা সেটা বানাতে ব্যস্ত।
আজ কতদিন পড়ে তার তিহান বাড়ি আসবে।
মায়ের মন যেন আনন্দে ভরে যাচ্ছে। তাইতো নিজ হাতে ছেলের সব পছন্দের খাবার রান্না করছে।
যে ছেলে মায়ের হাতের রান্না ছাড়া খেতোনা। সেই, ছেলেও কর্ম জীবনের জন্য দিনের পরে দিন বিভিন্ন জায়গায় থাকছে। তিহান একজন পুলিশ অফিসার। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় তাঁর থাকতে হয়।
দেশের জন্য দিন রাত কাজ করতে হয় তাদের।
লেখিকা ঃ সুমাইয়া আফরিন ঐশী
নিজের আপন জন থেকে দূরে থাকতে হয় মাসে পর মাস। দেশের জন্য নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে।
পরিস্থিতি মানুষকে বদলে দেয়। এটাই চিরন্তন সত্য।”
“রাত দশটা সবাই একসাথে খেতে বসছে। গ্যাঞ্জাম পার্টির সকল সদস্য আজকে শেখ বাড়ি হাজির। সানজিদা শেখ নিজেই সবাই কে আসতে বলছে।
এখন সবাই কে নিজ হাতে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন।
“আরে মা আর কত দিবে? এত একসাথে খাওয়া যায় নাকি? সেই থেকে দিয়েই যাচ্ছো। তিহান বললো।”
নিজের দিকে চেয়ে দেখছিস কেমন শুকিয়ে গেছিস? এখন এখানে বসে এই সব খাবার খেয়ে শেষ করবি। কত দিন পড়ে তোকে নিজ হাতে বেড়ে দিচ্ছি। তুই খা আমি দেখবো?
ন্যাকা কান্না করে, শাড়ীর আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বললো সানজিদা শেখ।
“এরি মধ্যে রবিন অভিযোগের সুরে বললো –
বলি কি আংকেল দেখলেন তো ছেলেকে পেয়ে তো আমাদের সবাই কে ভুলেই গেলো আন্টি।”
আরে হ্যাঁ তাইতো। সাজু আমাদের ও একটু খাতির-যত্ন করো। রবিনের সাথে তাল মিলিয়ে বললো শফিকুল শেখ।”
“সানজিদা শেখ হেসে বললো- আরে বাবা রবিন তোমরাও তো আমার ছেলে বাবা। রবিন এর প্লেটে মাংস দিতে দিতে বললো।”
“আর তুমি কি আমার ছেলেদের হিংসা করো? কপাট রাগ দেখিয়ে, শফিকুল সাহেবের উদ্দেশ্য বললো।”
“আমি আবার কখন হিংসা করলাম? আমি তো বললাম শুধু আমাদের ও খাতিরযত্ন করতে। ইনিয়ে বিনিয়ে বললো শফিকুল শেখ। বাবার সাথে তাল মিলালো ঐশী।”
“এরি মধ্যে তিহান হাত ধুয়ে উঠতে উঠতে বললো- মা আর পারবো না। ভালো লাগছেনা খেতে এখন। আমি অনেক জার্নি করে আসছি এখন একটু ঘুমাতে হবে। বলে চলে গেলো।”
“সানজিদা শেখ হতাশ হয়ে স্বামি কে জিজ্ঞেস করলো –
কি ব্যাপার তিহানের বাবা! রান্না কেমন হয়েছে?”
“অসাধারণ!”
তাইলে ছেলে যে বললো ভালো লাগেনা?
“ছেলে তো বিয়ে করেনি তাই বুঝতে পারেনি, কোথায় কোন কথা বলতে হয়। মুখ ফসকে বলে ফেললো শফিকুল সাহেব।”
“কি বললে তুমি? তার মানে আমার রান্না ভালো হয়না? চোখ গরম করে বললো সানজিদা শেখ। ”
শফিকুল শেখ জিব্বা কামড় দিল। ইশশ কি বললো এটা।
না মানে, কে বললো তোমার রান্না খারাপ? আমি তো চেটে পুঁটে খাই। জানো মাঝে মাঝে আমি রেস্টুরেন্টে গিয়েও খেতে পারিনা। কি যে রান্না করে ওরা একদম বাজে স্বাদ। আমি তো তখন তোমার রান্না মিস করি৷ আর সেই আমি বলবো তোমার রান্না খারাপ। তুমি বলো এটা কখনো হতে পার?
আর তিহানের এত বড় সাহস ও কি ভাবে বললো ভালো লাগেনা খাবার। দাঁড়াও আমি এখনই এর একটা বিচার করে দিচ্ছি। বলে মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে গেলো শফিকুল শেখ। এখান থেকে কেটে পড়া ই ভালো তার জন্য। হাহা
তুমি আমার প্রশাংসা করলে না অপমান করল? আমি কি বুঝিনা। কাল থেকে তোমার রান্না আমি করবো না বলে দিলাম। বুড়ো বয়সে এসে আমার নামে বদনাম করলে, ছেলে মেয়েদের সামনে? রান্না করে খেও তখন দেখবো, তুমি কত ভালো রান্না পাড়ো। পিছন থেকে একদমে বললো সানজিদা শেখ।
এদের মিষ্টি ঝগড়া দেখে মুখ টিপে হাসছে উপস্থিত সকলে।
ভালোবেসে বিয়ে করছেন সানজিদা শেখ কে। সানজিদার বাবার বাড়ি অবস্থা খুব ভালো। সেখানে
শফিকুল শেখ ছিলো মধ্যবিও, বেকার,। তাদের সম্পর্ক মেনে নেইনি পরিবার।
তার পরেই পালিয়ে বিয়ে করছেন তারা।পরে অবশ্য মেনে নিয়েছে সবাই। শফিকুল শেখ নিজের সর্বউচ্চো চেষ্টা করে আগলে রাখছেন তার প্রিয় মানুষটাকে। মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষদের রাগাতে ভালো লাগে। এর মধ্যেও রয়েছে কিছু আনন্দ। ”
❤️ জোৎস্নাতক রাত! আকাশে থালার মতো বিশাল একটা চাঁদ উঠেছে। তার আলোয় আবছা আলোকিত ছাদ, হিম শীতল হাওয়া বইছে। তার নিচে পাটি বিছিয়ে আড্ডায় মগ্ন হলো গ্যাজ্ঞাম পার্টির সদস্য গন। তাদের সাথে যোগ দিলো চৈতী আর শফিকুল শেখ। বিভিন্ন খোশগল্প বলে যাচ্ছে শফিকুল শেখ।
গ্যাঞ্জাম পার্টির সাথে দারুণ ভাব জমিয়েছে শফিকুল সাহেব। মনে হচ্ছে উনি নিজের কিশোর বয়সে ফিরে গেছেন।
আংকেল আপনি মনে হচ্ছে দারুণ গান গাইতে পারেন? আমাদের একটা গান শুনান না প্লিজ আংকেল! রিয়া ইনিয়ে বিনিয়ে বললো।
তার সাথে তাল মিলিয়ে একসাথে সবাই বলে উঠলো,
হ্যাঁ আজকে আপনার গান গাইতেই হবে ।
“শফিকুল শেখ ভীষণ করুন দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো – হ্যাঁ গাইবো। সেই কলেজ লাইফ থেকে গান গাইতাম। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে গান গাইতাম। পরে দেখতাম একে একে সবাই উঠে চলে যেতো। তারপর আমি একা একা গান গাইতাম। সবাই কি আর সংগীতের মর্ম বুঝে!”
“সবাই উচ্ছাস নিয়ে প্রশ্ন করলো-
তারপর কি হলো আংকেল? আপনি গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন?”
“নারে তবুও আমি হাল ছাড়িনি! গান গেয়েই চলতাম। পরে একদিন সব বন্ধুরা বললো – আমি যদি এরপর থেকে গান গাই তা হলে নাকি ওরা আমার সব দাঁত ভেঙে দিবে। তারপর দেখবো দাঁতহীন তোকে কে বিয়ে করে শা*লা?” বিয়ে হবেনা, এমন রিস্ক তো আর নেওয়া যাবেনা। তাই বাধ্য হয়ে গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।
সঙ্গিতের মর্ম ওরা বুঝলো না!”
“রবিন করুন গলায় দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বললো,
“এভাবে চাপে পড়ে আপনি গান ছেড়ে দিয়েছে আংকেল? আর একটা চান্স নিতে পারতেন।”
“হ্যাঁ নিয়েছিলাম, বিয়ের পড়ে তোদের আন্টি কে গান শুনতাম। ঘুমাতে গেলে গান গাইতাম, স্কুলে যাওয়ার আগে, ওয়াশ রুমে গিয়ে গান গাইতাম। একদিন দেখি তোদের আন্টি আমার গান শুনে হাউমাউ করে কেঁদে দিল! আমি তো হতবাক!
তাকে জিজ্ঞেস করলাম গান ভালো হয়নি?
সে বললো আমি নাকি গান গেয়ে তাকে বিনা দোষে শাস্তি দিচ্ছি। আর একদিন যদি গান গাই তাইলে নাকি সে বাবার বাড়ি চলে যাবে।পরে ভেবে দেখলাম বৌহীন দিন বড়ই কষ্টের! তাই আর গাইতাম না! করুন কন্ঠে বললো শফিকুল সাহেব।
“আহারে কেউ আপনাকে বুঝলো না আংকেল ! তবে এখন আর একটা চান্স নিতে পারেন? আন্টি কিন্তু এখন চাইলেও যেতে পারবে না বাবার বাড়ি। জান্নাত বললো।”
“হ্যাঁ তাইতো ভেবে দেখিনি। আমার প্রতিভা তো অন্যের জন্য এভাবে ছেড়ে দেওয়া যায়না!
উনি বেশ উচ্ছাস নিয়ে বললো –
দাঁড়াও আমি হারমুনিয়াম নিয়ে আসছি। খালি গলায় গান ভালো হয়না। বলতে বলতে চলে গেলো।
“হারমুনিয়াম বাজাচ্ছে আর গান গাইতে লাগলো শফিকুল সাহেব।
তার সাথে সুর দিচ্ছে আলিফ আর রিয়া।”
“তার মোটা গলার আওয়াজে এই দুজনের কন্ঠ শুনাই যাচ্ছে না। তবুও তারা হাল ছাড়েনি। গেয়েই যাচ্ছে।
এদের এমন কা-কা সুরের গান শুনে ঘুম ভেঙে গেলো সানজিদা শেখের।”
“উনাকে ছাদে আসতে দেখে সবাই চুপসে গেলো। গ্যাঞ্জাম পার্টির সবাই ছুটে পালালো, তাদের সাথে চৈতী ও। রয়ে গেল শফিকুল সাহেব।”
“উনি পিছন থেকে হাঁক ছেড়ে বললো- আমাকে ফাঁ*সিয়ে তোরা যাচ্ছিস। আর এভাবে কিন্তু গান ছাড়তে নেই। তোদের আন্টি কিছু বলবে না। তাইনা সাজু? মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো।”
“রবিন বললো – আংকেল আমরা আর এর মধ্যে নেই।
তুমি সামলাও হাহা।”
“সানজিদা শেখ হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছেনা তিনি। স্বামির এই বয়সে কুকিল কন্ঠের গান শুনে।🐸
উনি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। যেন কথা বলতে ভুলে গেছে। সেই ফাঁকে শফিকুল শেখ ও চলে গেলো।”
চলবে..…..
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]
সবার আগে গল্প পড়তে চাইলে, পেজে ফলো দিয়ে রাখবেন।