ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ১৫

0
223

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ১৫

“ভোরের মিষ্টি রোদের সোনালী আলোয় আলোকিত পৃথিবী। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত পরিবেশ! এই সুন্দর মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে ধোঁয়া ওঠা কফির মগ নিয়ে বাগানে থাকা দোলনায় আয়েশ করে বসলো রাফিন।
কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো। ভোরের হালকা শীতল হাওয়া ছুঁয়ে দিচ্ছে শ্যামসুন্দর পুরুষটি কে। সেই সাথে দুলছে মাথার সিল্কি চুল গুলো। পরনে তার নীল কালারের টি-শার্ট, কালো ট্রাউজার। নীল রঙে মনে হচ্ছ একটু বেশীই আকর্ষণীয় লাগছে শ্যাম পুরুষটি কে।
গাল ভর্তি চাপ দাঁড়িতে আরো সুদর্শন লাগছে।”

“গরম গরম কফির সাথে প্রাকৃতিক এই অপরুপ সৌন্দর্য দারুণ উপভোগ করছে রাফিন। ঢাকায় শত ব্যস্ত থাকার কারণে এই সৌন্দর্য উপভোগ করা হয়না বললেই চলে। এই মুহূর্তে নিজেকে খুব হালকা ও চিন্তা মুক্ত লাগছে।
মুখে এক চিল হাসি। আজকে তার মায়াবিনী কে সারপ্রাইজ দিবে। দারুণ একটা সারপ্রাইজ। এতদিনে জমানো সব, আবেগ, অনুভূতি বাস্তাবায়ন হতে যাচ্ছে। ভাবতেই আনন্দ অনুভব করছে। এই মেয়েটা কে নিয়ে যত চিন্তা রাফিনের। শুধুমাত্র হারানোর ভয় হচ্ছে। তাই আর দেরী করা ঠিক হবে বলে মনে হয় না রাফিনের।
সেই পিচ্চি মেয়েটাও বড় হয়ে গেছে, নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে শিখে গেছে।

“যদি আবার ফিরিয়ে দেয়!”

“এই বাক্য’টা ভাবতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
বুকের ভিতরে অসহ্য ব্যথা অনুভব হচ্ছে।”

“সেদিনের পর থেকে সরাসরি আর কোনো দেখা বা কথা হয়নি ঐশীর সাথে। আজকে দুদিন ধরে তোলপাড় শুরু হচ্ছে সমস্ত হৃদয় জুড়ে।
এটা কেন হচ্ছে জানা নেই রাফিনের।
হয়তো কাঙ্খিত সময়টার অপেক্ষার জন্য।
প্রিয় মানুষটাকে নিজের অনুভূতি বুঝানোর জন্য। অতি আন্দদে ভিতরে ভালোলাগা অনুভব হয়। আবার ভয় ও হয়, এক মিশ্র অনুভূতি! প্রেমিক পুরুষটির মনে কত সুপ্ত অনুভুতির শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।”

“হৃদয়ের তোলপাড় সেখানে কি স্বাভাবিক নয়?”

“হ্যাঁ এটা স্বাভাবিক! কাঙ্খিত দিন-সময়ের অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আমাদের মানব হৃদয়ে ডিপ ডিপ ঘন্টা বাজে। মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি হয়।”

“খুব! খুব! খুব বেশি করে কিছু চাওয়ার নামই আরাধনা!
তুমি আমার সেই চাওয়া।
যা তুমি নিজেই জানো না।
তুমি আমার অসুখ মায়াবিনী!
এই অসুখে সারাজীবন অসুস্থ থাকতে চাই আমি মায়াবিনী “!

“এইসব ভাবতে ভাবতে কফিটা শেষ করলো।
হঠাৎ করে প্যান্টের পকেটে রাখা মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। তা দেখে মুচকি হাসলো রাফিন।
স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে আরাফের নামটা ভাসছে।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা পুরুষালী কন্ঠ শুনতে পেলো,

রাফিন ঃ হ্যাঁ দোস্ত বল?

“দোস্ত সব ডেকোরেশন হয়ে গেছে।
আমি কেকের অর্ডার দিয়ে দিয়েছি কাল রাতেই । টাইম মতো দিয়ে যাবে তারা।
তুই কোন টেনশন নিস না শা’লা! আমার উপর ছেড়ে দে সব। দেখবি আমি কি কি পারি! আরাফ বললো।”

“হুম ভরসা আছে তোর উপরে।
আর তুই আমার কোন বোন কে বিয়ে করলি?
তুই আমার কোন জন্মের দুলাভাই রে? বলি কি কয়টা লাগে তোর বন্ধু! এখন আবার আমাকে ও শা*লা ডাকিস। তোর উদ্দেশ্য তো ভালো ঠেকছে না! খানিক হেসে বললো রাফিন।”

“বিয়ে করলে তোর বোনকে ই করবো বুঝলি? তাই আগে থেকেই প্র্যাকটিস করছি শা*লা বাবু!
বোনতো একটা আছে তোর, আমার কাছে বিয়া দিলেই তো আমি তোর দুলাভাই। আর তুই আমার শা*লা,হিসাব বরাবর। ঠাট্টার স্বরে বললো আরাফ।”

“দিনের বেলা স্বপ্ন দেখছিস মনে হচ্ছে! আমি জেনেশুনে তোর মতো লু*চ্চার সাথে আমার বোনকে বিয়ে দিব?
আর শোন আমি কিন্তু রেকর্ড করেছি। তোর গার্লফ্রেন্ড কে শুধু সেন্ড করা বাকি। বাঁকা হেসে বললো রাফিন।”

আরাফের মুখটা চুপসে গেলো, অসহায় কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো –

” না রে দোস্ত তুই আমার মায়ের পেটের খালাতো ভাই লাগিস। আমাকে এভাবে জব্দ করা ঠিক হবে না ভাই। এমনিতেই গার্লফ্রেন্ডের প্যরা’য় জীবন টা বেদনাময়।
এইটা কিন্তু সিরিয়াস দোস্ত। খুব ভালোবাসে ফেলছি পিচ্চিটা কে।”

“হাহাহা! ইহা ভেরী হাস্যকর! শেষে কিনা আমার ফ্লাট*বাজ বন্ধু জব্দ করলো টেনে পড়ুয়া একটা পিচ্চি মেয়ে। রাফিন ডেবিল হাসি দিয়ে ব্যাঙ্গকরে বললো।”

“তুই মজা নিচ্ছিস নে। সময় আমাদের ও আসবে হুহু। মেকি রাগ দেখিয়ে বললো আরাফ।”

“হয়েছে ভাই রাখ তোর ফা*লতু পেঁচাল – শোন সব যেন ঠিকঠাক ভাবে হয়। আমি চাই আজকে আমার মায়াবিনী খুব খুব বেশি সারপ্রাইজ হয়।”

“অল দ্যা বেস্ট ইয়ার! জাস্ট চিল মুডে থাক। এখন রাখছি বায়!”

“বলে কল কেটে দিল আরাফ। রাফিন মুচকি হাসি দিয়ে আবার ফোনটা পকেটে গুঁজে রাখলো।”

“প্রচন্ড মন খারাপের সময় অনায়াসেই যাকে সব কথা বলা যায়, এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে বড্ড কম।
জীবনে কিছু মানুষ অতিরিক্তকভাবে বিশেষ পাওয়া হয়। যাদের মন খুলে অনায়াসে প্রত্যেকটা কথা বার বার বললেও সামন্য এতটুকু বিরক্তি হয় না এমন একটা মানুষ হলো আরাফ।
ছোট বেলা থেকেই দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড।
যাদের শরীর দুইটা হলেও মন একটা। এই একটা মানুষকে দুনিয়ায় সমস্ত কথা অনায়াসে শেয়ার করেছে রাফিন।”

“মনখারাপে বাজে সময়ে বিপরীতে থাকা মানুষ গুলোর কাছ থেকে একটুখানি আশার বাণী কয়েক গুন শক্তি দেয়। যার ফলস্বরূপ নিজেকে অনেক অনেক হালকা, ও চিন্তামুক্ত লাগে।
সমস্ত খারাপ সময়ে এই মানুষটাকে পাশে পেয়েছে রাফিন। ”
এমন একটা বন্ধু পাওয়া ভাগ্যর ব্যাপার। যা সবার ভাগ্য জোটে না। আল্লাহর কাছে হাজার বার শুকরিয়া আদায় করলো রাফিন।
এত সুন্দর একটা মানুষকে বন্ধু হিসেবে উপহার দেওয়ার জন্য। এরিমধ্যে ভিতর থেকে মায়ের ডাক পড়লো। আর কিছু না ভেবে ভিতরে চলে গেলো।” ________________________

এদিকে, ঐশী মন খারাপ করে রুমে বসে আছে। আজ তার জন্মদিন অথচ সবাই যেন বেমালুম ভুলেই গেছে। কেউ বিষয়টা পাওা দিচ্ছে না।

“সবাই আমাকে ভুলে গেছে কোথায় সবাই আজকে আমাকে সুন্দর সুন্দর গিফট দিবে। এক একজন উইশ করবে। উইশ তো দূরের কথা আজকে যে আমার জন্মদিন সেটাও কারো মনে নেই।
কি একটা অবস্থা এ জীবন রেখে কি লাভ? মনে মনে বিরবির করছে ঐশী।”

“হঠাৎ বাহির থেকে বাবার কথার আওয়াজ এলো।

“মা আসবো?”

দরজা হালকা নক দিয়ে শফিকুল সাহেব বললো।”

“হ্যাঁ আব্বু আসো।” মন খারাপ করে বললো ঐশী।

“ঐশীর পাশে খাটের উপরে বসলো শফিকুল সাহেব। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়ছে আমার ছোট মায়ের? মন খারাপ কেন? বাবাকে বলো?”

“ঐশী যেন এই কথাটার’ই অপেক্ষায় ছিলো। বাবা নামক মানুষটার কাছে৷ মেয়েরা কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসে। সমস্ত আবদার যেন এই মানুষটার কাছে অনায়াসে বলতে পারে। কোন বিরক্তি ছাড়াই সব কথা মন দিয়ে শুনবে। “ঐশী মুখ গোমড়া করে বললো,

“আব্বু আজকে কত তারিখ?”

শফিকুল সাহেব অবাক হয়ে বললো –

“কেন? আজকে তো জুলাই এর চব্বিশ তারিখ।
আজকে কোন বিশেষ দিন নাকি আম্মু?”

“তুমিও ভুলে গেছো আব্বু? কেউই আর আমাকে ভালোবাসে না আগের মতো। আজকে যে কারো জন্মদিন তা সবাই ভুলেই গেছে? কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো ঐশী।”

“শফিকুল সাহেব বুঝতে পারলো তার রাজকন্যার অভিমানে করন। মনে মনে মুচকি মুচকি হাসলো। কোন এক বিশেষ কারণে উনিও বিষয়টি এরিয়ে গেলেন। উনিও কাজের অযুহাত দিয়ে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে।”

“বাবার এমন কাজে অভিমান যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেলো। অভিমানে আকাশ ছুঁই ছুঁই।
মোবাইলটা নিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গান শুনতে লাগলো।সাথে হুদাই ফেসবুকের নিউজফিড ঘাটাঘাটি করতেছে। এরি মধ্যে গ্যাঞ্জাম পার্টির গ্রুপ কল আসলো।
না এদের কল ও রিসিভ করা যাবে না। এরা কেউ আমাকে একটুও ভালোবাসেনা।
গ্যাঞ্জাম পার্টি কি আর দমে থাকার লোক?
তারাও একের পর এক কল দিচ্ছে তো দিচ্ছেই।”

“আমরা কারো কারো সাথে রোজ নিয়ম করে কথা বললেও বুঝে-না আমি আসলে মানসিক বিপর্যস্ত।
আবার কিছু কিছু মানুষ আছে কিছু না বললে ও কিভাবে যেন বুঝে যায়। এই মানুষ গুলো আমাদের জীবনে অতিরিক্তভাবে বিশেষ পাওয়া।
এদের কাছে আমার ভালো- লাগছে না, কষ্ট হচ্ছে বলতে হয়না, এরা নিজ থেকেই বুঝে যায়।
তাইতো ঐশীকে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে। এই মন খারাপের সঙ্গ হবে বলে।”

“এতবার কল দিয়ে যাচ্ছে দেখে বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করলো – সাথে সাথে একে একে সবাই জয়েন হলো গ্রুপ কলে। এরা একেক জন একেক ভাবে মজা নিয়েই যাচ্ছে বাধ্য হয়ে ফোনটা অফ করে রাখলো ঐশী।”

____________________________

“রাত আটটা চৈতী রুমে এসে ঐশী কে ডাকতে লাগলো।

“ঐশী মনি?”
“কিরে ফোন অফ করে রাখছিস কেনো?”মিতু বারবার কল দিয়ে যাচ্ছে আমার ফোনে নে কথা বল?”

“না আমি কারো সাথে কথা বলবো না।
তোমাকে কল দিচ্ছে, তুমি কথা বলো। কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললো ঐশী।”

চৈতী কোন কথা না বাড়িয়ে ফোনে লাউডস্পিকার বাড়িয়ে দিয়ে ঐশীর দিকে ধরলো চৈতী।”

“ওপাশ থেকে মিতু কান্না ভেজা কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো ঐশী। আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো –

“কিরে কী হয়েছে দোস্ত?”

“দোস্ত সর্ব*নাশ হয়ে গেছে তুই তারাতাড়ি গেটের সামনে আয়। হসপিটালে যেতে হবে একক্ষণি, এসে সব কথা বলছি। তারাতাড়ি আয় বলে কান্না করতে করতে লাইন কেঁ*টে দিলো মিতু।”

“ঐশী যেন বরফের ন্যায় জমে গেলো। চৈতীর ডাকে হকচকিয়ে উঠে, কোন কথা না বলেই এক ছুটে বেরিয়ে পড়লো গেটের সামনে। “”

“এতক্ষণ যে এদের সবার সাথে অভিমান করে ছিলো।
সেটা যেন মনেই নেই। গেটের সামনে আসতেই মিনিট দুইয়ের মধ্যে কোথাথেকে একটা অটো এসে থামলো ঐশীর কাছে। ঐশী মিতু আসছে বলে মনে করেই অটো টার কাছে গেলো।”

“এরি মধ্যে একটা ছেলে বেরিয়ে এসে মুখে একটা রুমাল বেঁধে অটোতে বসিয়ে দিলো ঐশীকে।
তারপরে একমুহূর্ত দেরী না করেই দ্রুতগতীতে চলতে লাগলো গাড়ীটা।”

“ঘটনাটা এত তারাতাড়ি ঘটেছে যে ঐশী কিছু বুঝতেই পারলো না। মিনিট খানিক লাগলো বিষয়টি বুঝতে। বুঝে উঠতেই, ভয়ে হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে ঐশীর,,,,,,,,,,,

চলবে…….

আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক মহল আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে অবশ্যই মতামত জানাবেন।
কোথাও ভুল হলে আমাকে ধরিয়ে দিবে।
প্রথম লেখা অনেক জায়গায় সুন্দর করে উপস্থাপন করতে পারিনা।
তাই কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হলে, আমাকে জানাবেন।
যাতে এই ভুলটা আমি বুঝতে পারি।
আর যারা পেজটি ফলো করোনি দয়াকরে সবাই ফলো করে দিবে🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here