ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ১৬

0
168

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ১৬

ভয়ে গাঁ শিউরে উঠলো ঐশীর। শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে। মনে হচ্ছে এখক্ষণি হার্ট অ্যা’টাক হয়ে যাবে। কে ই অচেনা পুরুষাটি? কি চায় আমার কাছে?, এদের আসল উদ্দেশ্য টা কী? কিশোরী মনে অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন চিন্তা মাথা চাপা দিচ্ছে।
তবে কি কোনো সর্ব’নাশ হতে চলছে তার সাথে?
মুখ বাঁধার ফলে না পারছে কথা বলতে। আর না পারছে চিৎকার চেঁচামিচি করতে।
কে বাঁচাবে এদের হাত থেকে ঐশী কে?
মিতু বা কোথায়? এদিকে গাড়িটাও দ্রুত গতিতে চলছে।

মিনিট দশেক পরই গাড়িটি থামলো একটা নির্জন জায়গায়।
অচেনা লোকটি এসে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলো ঐশী কে।
সাথে মুখের বাঁধনটাও খুলে দিয়ে এক সেকেন্ড ব্যায় না করে হুড়মুড় করে গাড়িটা নিয়ে ঝড়ের বেগে চলে গেলো।

– মুখের বাঁধনটা খোলা পেয়ে, হাঁটুতে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ঐশী। এতক্ষণ মনে হচ্ছে ধম আঁটকে যাচ্ছিলো।
চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিলো। অন্ধকার আচ্ছন্ন চারপাশ। জনশূন্য নিরব পরিবেশ। মনে হচ্ছে কোন ভূত আ’ত্মার রাজ্য।
যদিও ভূত বলতে কিছু নেই পৃথিবীতে। তবে এখন এই নীরব পরিবেশে শরীর ছমছম করছে।
হঠাৎ করে আবছা একটি লাল রঙের আলো এসে পড়লো ঐশীর চোখে।
দূর থেকে আবছা একটি ছায়া মূর্তি দেখা যাচ্ছে। যেটা ক্রমশ এগিয়ে আসছে ঐশীর দিকে।
ঐশী আর তাকালো না ঐদিকে।
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। কাঁপা কাঁপা গলায় দোয়া পড়তে শুরু করলো-

“লা- লা-তাছরিবা না না লা- লা-হাওলা লা-হাওলা ওলাআআআআ লাই-লাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ! ”

ভয়ের চো’টে উল্টা-পাল্টা দোয়া পড়ছে।
মানুষ অতিরিক্ত ভয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
তখন দিক-বেদিক ভুলে যায়।তাইতো ঐশী কি পড়ছে নিজেও জানে না।

“মিনিট দুই এক পড়ে-ই বিকট আতশবাজির শব্দ হচ্ছে চারপাশ থেকে।
আকস্মিক চোখ খুলে তাকিয়ে চমকে উঠলো ঐশী।
বিভিন্ন রং-বেরঙের আলোয় আলোকিত হয়েছে চারপাশ। আকাশে বিভিন্ন রং-বেরঙের বেলুন উড়ছে।
বামদিকে তাকিয়ে চোখ যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম।
জ্বলজ্বল করে একটা লেখা ভেসে উঠলো –

“হ্যাপিবার্থডে টু ইউ ডিয়ার ঐশী”!

চারপাশে এত আয়োজন দেখে মুখটা হা হয়ে গেলো।
পিছন থেকে কারো গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে এসে পড়লো । কিছুটা শিউরে উঠলো শরীর।
হকচকিয়ে উঠলো, পিছনে তাকানোর সুযোগ হলো না।
পরিচিত একটি কন্ঠ শুনতে পেলো। কানের কাছে মুখ গুঁজে মোহনীয় কন্ঠে ফিসফিস করে বললো –

“হ্যাপিবার্থডে মা’ই কুইন”!
“জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা তোমাকে মায়াবী পরী!”

এই মানুষটা এখানে কেন? রাফিন কে দেখে ঐশী রীতিমতো চমকে গেলো।
ভীষণ ভীষণ অবাক ও হলো। এই মানুষটাকে এইখানে কোন ভাবেই আশা করেনি ঐশী।
ঐশী “থ” মে-রে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।

“এরিমধ্য চারপাশ থেকে হাততালি দিয়ে সবাই একসাথে উইশ করলো। মুহূর্তেই নীরব পরিবেশটা জমজমাট কোলাহলে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। এখণ জায়গাটা খুব পরিচিত ঐশীর। এটি একটি খোলা মাঠ। সবাই কাশফুলের মাঠ বলেই চিনে।”

” রবিন, আলিফ পার্টি স্পে দিয়ে সবার অবস্থা নাজেহাল বানিয়ে দিলো।ঐশী শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
গ্যাঞ্জাম পার্টির সবাই এখানে উপস্থিত। মিতু,রিয়া,জান্নাত এসে ঐশী কে জড়িয়ে ধরলো। ঐশীর কোন হেল-দেল নেই। সে আগের ন্যায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।
রাফিন, আরাফ, তাদের বন্ধু মহল সহ অনেকই আছে উপস্থিত।
এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষজন এখানে মোটেও একসেপ্ট করেনি ঐশী। সবথেকে বেশি অবাক হলো শফিকুল সাহেব ও তিহান কে দেখে। এদের সাথে রয়েছে চৈতী।”

“-শফিকুল সাহেব কাছে এসে ঐশী কে হালকা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে সুরে বললো-

“-এ-ই দিনটা তোমার জীবনে হাজার বছর আসুক মা! জন্ম দিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আমার ছোট রাজকন্যা কে।” তুমি কি করে ভাবলে বাবা তোমার জন্ম দিনের কথা ভুলে গেছে? উঁহু মোটেও না।
যে দিন আমার ঘর আলো করে আরেকটি জান্নাত এসেছে। একটুকরো ফুটফুটে চাঁদ এসেছে।
– এইদিন কি ভুলতে পারার মতো মা?”
বলে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।
খুশীতে চোখ দু’টো জ্বলজ্বল করছে ঐশীর।
বাবার এমন স্নেহ, ভালোবাসা দেখে লুটিয়ে পড়লো বাবার বুকে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা নোনা জল। এই কান্না কোনো কষ্টের না মহা আনন্দের।”

“শফিকুল সাহেব আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মুচকি হাসি দিয়ে দিয়ে বললো –

“আরে পাগ’লী মেয়ে কাঁদছিস কেন? তোকে দারুণ একটা সারপ্রাইজ দিবো বলেই তো এত এত প্লান। তবে এসবের সব ক্রেডিট কিন্তু রাফিনের।”

“রাফিন নামটা শুনেই কিছুটা লজ্জা পেলো ঐশী। মাথা তুলে তাকালো, চারপাশে দৃষ্টি বুলাল।
রাফিন একহাত পকেটে গুঁজে অন্য হাত দিয়ে ফোন টি’পছে।এমন একটা ভাব মনে হচ্ছে আশেপাশে কি হচ্ছে কোনো খেয়ালই নেই। সব ধ্যান যেন মোবাইলের মধ্যে।”

“আরে বোন এসব কান্নাকাঁ’টি রাখো চলো কেক কাঁ’টা যাক।আরাফ বললো। সবাই আরাফের কথায় সায় দিলো।
কিছুটা দূরে একটা টেবিল সাজানো। যার উপরে কেক রাখা। সবাই একে একে ঐ দিকে যাচ্ছে।”

-মিতু এসে ঐশীর পাশে দাঁড়ালো।ঘাড়ে একটা হাত রেখে কিছুটা সুর টেনে বললো –

“কিরে ইয়ার নো নো ভাবীইইইই! আপনিতো আমার বড় ভাবি। আমার একমাত্র ভাইয়ের হবু বউ।
হে হে তো বলুন সারপ্রাইজ কেমন দিলাম?”

ঐশী জাড়ি দিয়ে মিতুর হাতটা সরিয়ে দিলো। রেগে গিয়ে বললো –

-“এসব কেমন সারপ্রাইজ মিতু? তোর কোন আইডিয়া আছে? জানিস কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম।
আর তোরা সবাই জানতি আমাকে কেন বলিসনি? তোদের কারো সাথে কোন কথা নেই।”

জান্নাত এসে ঐশীর মাথায় একটা চাঁ’টি মে’রে বললো-

“আরে ইয়ার কুল!! কুল! আরে গাঁ’ধি বলে দিলে কি সারপ্রাইজ হতো না কি?
এখণো তো সারপ্রাইজের বাকি। সো মেরা দোস্ত তুমি রেডি তো?”

মিতু সবাই কে৷ তাড়া দিয়ে বললো – আচ্ছা হইছে এখন চল যাওয়া যাক?

ঐশী এবার ক্লিয়ার ভাবে বুঝতে পারলো এসব এদের আগে থেকেই প্লান করা।ঐশী খুব কৌতুহল হয়ে বললো-

“এই ওয়েট ওয়েট এক মিনিট। মিতু তোর কোন ভাইয়ের বউ রে আমি? আমার জানা মতে তোর তো কোনো ভাই টাই নেই? তা হলে কি আন্টির ছে,,,,,,,

রিয়া এসে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো –

“বোন তুই ভীষণ লাকি রে। আমার যৌ’বনের প্রথম ক্রাশটা কে এখন ভাইয়া ডাকতে হবে! এসব ভাবা যায়? আমার কিন্তু ভীষণ হিংসা হচ্ছে ঐশী!”

ঐশী ছাড়া বাকি সবাই হেসে দিলো। মিতু রিয়াকে একটা চ’ড় দিয়ে ব্যাঙ্গ করে বললো –

“জ্বালা অন্তর জ্বালারে দোস্ত!”

বলে খিলখিল করে হেঁসে দিলো। সাথে রিয়া জান্নাত ও যোগ দিলো। ঐশী শুধু বোকার মতো এদের কান্ড দেখছে। আর একমুহূর্ত দেরী করলো না কেউ। ঐশীকে ধরে নিয়ে গেলো উপস্থিত সকলের মাঝে।
সবাই এক একটা গিফট দিচ্ছে।
অবশেষে কেকটা কাটা হলো।
কেক কে’টে একে একে সবাই কে খাইয়ে দিলো ঐশী।
হঠাৎ একটা মুখ দেখে আকস্মিক ভড়কে গেলো ঐশী। বুকের ভিতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। এতক্ষণ যতোটা না খুশী হয়েছিলো, সব যেন নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। বুকের ভিতরে চিন চিন ব্যথা করছে। চোখদুটো ছলছল করে উঠলো।
এতক্ষণ ভিড়ের মধ্যে খেয়াল করেনি এই মেয়েটা কে।
এই মেয়েটা আর কেউ না। ঐ দিন রাফিনের সাথে দেখা মেয়েটি।
তাহলে এসবের মানে টা কি? নিজের ভালোবাসার মানুষটা কে তো ঠিক নিয়ে আসছে সাথে করে। তাহলে আমার সাথে এমনটা কেন করছে রাফিন ভাই? কেন বার বার আমার কিশোরী মনে বারবার আ’ঘাত করছে কেন রাফিন ভাই? এসব রাজ্যের ভাবনায় যখন ব্যস্ত ঐশী। তখনই মেয়েটা ঐশী কে অবাক করে দিয়ে বললো –

“কি হলো পিচ্চি? স্যরি আই মিন ভাবি। আমাকে খায়িয়ে দিবে না? না-কি আমাকে পছন্দ হয়নি?”
দেখো তোমার জন্মদিনে আসবো বলে মেকাপ করে সেজেগুজে এসেছি! তোমার মতো এত কিউট না হলেও, দেখতে এতটা খারাপ ও না। বলে চোখ টিপ দিলো।”

ঐশী কিছুটা হকচকিয়ে গেলো। মেয়েটার দিকে ভালো করে লক্ষ করলো। যাকে বলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা। মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর। ঐশী তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে বললো –

“ছিঃ! ছিঃআপু এসব কি বলেন? আপনি তো অনেক অনেক কিউট। এবং বলতে পারেন অনেক ভাগ্যবতী ও। বলে এক টুকরো কেক খাইয়ে দিলো।
মেয়েটা একটি চমৎকার হাসি উপহার দিলো। কিছুটা কেক ঐশীর গালে লাগিয়ে দিলো।বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটা মিশুক স্বভাবের।তবুও এই মেয়েটার উপরে ভিষন হিংসা হচ্ছে ঐশীর।”

🌸এদিকে রাফিনকে সব বন্ধুরা ইচ্ছা মতো খোঁচাচ্ছে। কেউ বলছে দিন তো তোর বন্ধু। আমরা তো শুধু দেখে যাবো।সিঙ্গেলদের আর কি করার।

” এরি মধ্যে আরাফ ফোরোন কেঁ’টে বললো,

– “শোন আমাদের সিঙ্গেলদের কিছু দাবি আছে বুঝলি? বন্ধুর সুন্দরী শা’লিদের উপরে যথেষ্ট হক আছে আমাদের। আমাদের দিকটাও দেখিস শা*লা।”

ওদের কথার মধ্যে একটা পিচ্চি মেয়ে আরাফের দিকে অগ্নিদৃষ্টি তাকিয়ে রইলো। যা দেখে আরাফের চুপসে গেলো। এদের এমন কান্ড দেখে সবাই হোহো করে হেসে দিলো। আরেক দফা হাসির রোল পড়ে গেলো।
এই মেয়েটা আর কেউ না আরাফের পিচ্চি গার্লফ্রেন্ড।

“রাফিন বন্ধুর মুখটা পেঁচার মতো দেখে খোঁচা দিয়ে বললো – হে হে বন্ধু এবার বলো তোমার আর কি কি দাবী আছে?”

শা’লা মজা নিচ্ছিস? কই গিয়ে তোরা বলবি – ভাবি আপনি জিতছেন! আমার বন্ধু লাখে এক পিচ! তা না করে তোরা মজা নিচ্ছিস? তোরা বন্ধু না শ’ত্রু! দাঁতে দাঁতে চেপে কথা গুলো বললো আরাফ।এর কথা শুনে সব বন্ধুরা হাসলো।

আরাফ সিরিয়াস হয়ে বললো- যাই বন্ধু পিচ্চি রেগে গেছে। ছোট লঙ্কার ঝাল বেশী রে দোস্ত!

রাফিন সহ সব বন্ধুরা হেসে বললো – বেস্ট অফ লাক বন্ধু। বেঁচে ফিরলে আবার তোর সাথে দেখা হবে!

আরাফ রাফিনকে উদ্দেশ্য করে বললো -” অল দ্যা বেস্ট বন্ধু। শুভকামনা রইলো তোর জন্য।”

_____________________

এদিকে রাফিন বার বার আড় চোখে দেখে যাচ্ছে ঐশী কে। সব মেয়েরা এক সাথে মিলে আড্ডা দিচ্ছে, মজা করছে। আর এই মেয়েটা কেমন মুখটা মলিন করে চুপচাপ বসে আছে। মনে হচ্ছে এখক্ষণই কেঁদে দিবে।
রফিন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো।

হঠাৎ করে তিহান এসে বললো বনু আমি এখন বাসায় যাই। তোরা আড্ডা দে। আমি একটু আগেই আসলাম কত দূর থেকে। রেস্ট প্রয়োজন আমার, খুব টায়ার্ড লাগছেরে।
শফিকুল সাহেব ও বললো – আমি বুড়ো মানুষ কি করবো তোদের মাঝে। তিহানের সাথে আমিও যাই মা!

“ঐশী শুধু মাথা ঝাঁকাল। যার অর্থ – আচ্ছা ঠিক আছে।”

চলবে………….

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ!]

আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই মতামত জানাবেন কিন্তু। কোথাও ভুল হলে তাও বলবেন।
আর হ্যাঁ রিচেক করিনি বানান ভুল হতে পারে, একটু বুঝে নিয়েন।

অসুখ -আমি তোর এত প্রিয়!
ঠান্ডা জ্বর দোয়া করবেন সবাই!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here