ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_Sumaiya_Afrin_Oishi #পার্টঃ২১

0
190

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_Sumaiya_Afrin_Oishi

#পার্টঃ২১

বিকালের সোনালী রোদটা বরাবরই ভিষণ পছন্দের ঐশীর। হলদেটে আলোর কীরণ, তাপহীন সূর্য পশ্চিম আকাশে গোলবৃওর মতো দাঁড়িয়ে থেকে সোনালী আলো ছড়াতে ছড়াতে ক্রমশ ঘুমের দেশে ডুব দিতে থাকে সূর্যমামা! ঝিমিয়ে যাওয়া প্রকৃতি আস্তে আস্তে যেন প্রান ফিরে পায়। দক্ষিণের ঝড়ো হাওয়া মাঝে মাঝে দুরন্ত গতিতে ছুটে এসে এক ঝাঁক ধুলোবালি এসে মুড়িয়ে দিচ্ছে ঐশী কে। মাঠের পাশে বড় বটগাছের নিচে বসে রাফিনের জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে। কিছু কিছু অপেক্ষা করতে ও ভিষণ ভালো লাগে। আর সেটা যদি হয় প্রিয় মানুষটার জন্য তাহলে তো কথাই নেই। চঞ্চল হরিণী মেয়েটা ও কাউকে দেখার জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে কেমন নীরবে অপেক্ষা করে যাচ্ছে। মোটেও বিরক্তি হচ্ছে না, প্রায় ঘন্টা খানিক ধরে বসে আছে। মুখে একচিল হাসি!
ভালোবাসার মানুষের জন্য যে কোনো পরিস্থিতি কে মানিয়ে নেওয়া যায়, যদি মানুষটা সঠিক হয়।
সকলে নামাজ পড়ে যখন বসে ছিলো, তখনই রাফিন টেক্সট করে জানিয়ে দিয়েছে আজকে সারাদিন বিজি থাকবে। বাবার অফিসে কিছু কাজ করতে হবে তার। বিকেলে দেখা করার জন্য।

সারাদিন খুব উদাসীন ভাবে কাটিয়ে দিলো ঐশী। কখন বিকেল হবে কখন দেখতে পাবে তার রাফিন ভাই এর হাস্যজ্বল মুখটা। আজকে তিন দিন পড়ে দেখা হবে তাদের। এই সময়টা যেন যেন দীর্ঘ, আজকে বিকেল হতে যেন প্রতিনিয়তের চেয়ে বেশী সময় লাগছে বলে মনে হয় ঐশীর।

-অবশেষ অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। দূর থেকে একজোড়া শীতল দৃষ্টি তার দিকে স্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। মুখে মিষ্টি হাসি! ক্লান্ত শরীর গাঁয়ের শার্ট টা ও ঘামে ভেজা। দেখেই মনে হচ্ছে মাত্রই অফিস থেকে এখানে আসছে, খুব পরিশ্রম করেছে আজ।

রাফিন বাইক থেকে তড়িঘড়ি করে নামলো।
হাতা হোল্ড করতে করতে ঐশীর পাশে বসলো।
হাতঘড়ি তে টাইম দেখে নিলো। অনেক টা লেট করে আসছে। রাফিন ভেবে নিলো হয়তো ঐশী রেগে আছে। তাই কানে হাত দিয়ে বললো।

স্যরি ঐশী মনি! রাগ করছো তুমি? আসলে আজকে আব্বু ছিলো না তাই সব কাজ আমার একা সামলাতে হয়েছে।
এজন্য লেট হয়ে গেছে। তবুও আমি যথেষ্ট চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি আসার জন্য।
প্লিজ কষ্ট পেওনা! তুমি নিশ্চয়ই অনেক সময় ধরে বসে ছিলে।

ঐশী মুচকি হাসলো। রাফিন কে অবাক করে দিয়ে বললো –

“আপনি যখন যে ভাবেই আসেন না কেন? আপনাকে ফিরিয়ে দিবার সাধ্য আমার নেই! আপনি আমার রক্তে মিশে গেছেন। আর রক্ত কি ভাবে ধুয়ে ফেলতে হয়, আমি জানি না”!

-রাফিন মুচকি হাসলো। এই হাসিটা বলে দিচ্ছে এটা প্রশান্তির হাসি।
ঐশী ফের আবার বললো,

আপনাকে সরি বলতে হবে না এভাবে। মুখটা শুকিয়ে গেছে একদম।
অফিস থেকেই এখানে আসছেন?

-হুম।

খেয়েছেন?

না। সময় পাইনি, খেতে গেলে তো আরও সময় লাগতো। আমার আবার অতো সময় আছে নাকি? আমার মন যে এই জায়গায় আঁটকে ছিলো। কখন এই চাঁদ মুখটা দেখবো।

-তা চাঁদ মুখ দেখলেই পেট ভরে যাবে বুঝি?

-পেট না ভরুক মন তো ভরেছে। মনে শান্তি থাকলে সব কিছু ভালো লাগবে। আর যদি তোমার মনেই শান্তি না থাকে। এই রঙিন চাকচিক্য পরিবেশ ও তোমার কাছে রঙহীন, ধূসর লাগবে।

-আচ্ছা চলো রেস্টুরেন্টে যাই? আজকে একসাথে খাবো। তুমি চাইলে খাইয়ে দিতে পারবে আমাকে, আমি আবার ছোট বাচ্চাদের মনে কষ্ট দিতে পারিনা! বলে শয়তা’নি হাসি দিলো রাফিন।

ঐশী কপাট রাগ দেখিয়ে বললো।
আমি মোটেও ছোট বাচ্চা নই। আপনি কথায় কথায় ছোট্ট বাচ্চা বলবেন না একদম। ক’দিন পরে আমার নিজেরই বাচ্চা কাচ্চা হয়ে বাচ্চার আম্মু হয়ে যাবো। শেষ কথাটা বলে জিভ কাটলো ঐশী। মুখ ফসকে বলে ফেললো কথা টা।

-রাফিন ভাই আমার দিকেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে রাফিন হাসলো।
পরিস্থিতি সামলাতে আমি বলে উঠলাম।

এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনি বাসায় যান এখন। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব টায়ার্ড।
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন ভালো লাগবে।
আর এই অবস্থা কোথাও যেতে হবে না।
-হঠাৎ করে রাফিন গম্ভির কন্ঠে বললো,

–কেন? আজকে আমাকে ভালো লাগছে না বলে আমার সাথে যাবে না ঐশী মনি?
এই যে আমার ঘামে লেপ্টে যাওয়া শার্ট, এলেমেলো চুল, শরীরে ধুলোবালি , যাচ্ছে তাই অবস্থা।
বুঝেছি এই জন্যই আমার সাথে যেতে চাচ্ছো না।
আমি তো কালো তোমার পাশে বেমানান তাই,,,,,,

রাফিন পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না। এরি মধ্যে ঐশী বলে উঠলো।

ছিঃ! এসব কি বলছেন আপনি রাফিন ভাই?
আর নিজেকে কালো বলছেন কেন?
আপনি মোটেও কালো না। আপনি শ্যামসুন্দর পুরুষ!
আপনার শ্যামলা শ্যামলা বরণ আমার হার্ট দুর্বল করার কারণ।

“আপনাকে খুব গোছানো হতে হবে না, আপনি বরং সাদামাটা প্রেমিক হয়েই থাকেন। একটা নীল শার্ট, এলোমেলো চুল, পায়ে স্যান্ডেল পড়ে আমার সাথে দেখা করার আগে আপনার দু’বার ভাবতে হবে না।

-উপহার হিসেবে আপনার আমাকে দামী কোন জিনিস দিবার প্রয়োজন নেই। খুব বেশি মনে চাইলে আমার জন্য একগুচ্ছ কাঠ গোলাপ কিংবা হাতে করে দু একটা বেলী ফুলের মালা নিয়ে আইসেন আমার জন্য।

-আমার সাথে প্রেম করতে হলে আপনাকে যে দামি শপিংমলে বা ভিআইপি রেস্তরাঁয় নিয়ে যেতে হবে তা কিন্তু মোটেই নয়। আমরা বরং কখনো নদীর ধারে বসে সময় কাঁটাবো। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে পার করে দিবো।

-আপনি যেমন আপনি বরং তেমনই থাকেন। আপনাকে আলাদা আবরণের দরকার নেই। ভালবাসাটা আমার আপনার সাথে, আপনার আবরণের সাথে তো নয় তা-ই না? অযথা কেন আপনি কষ্ট পোহাবেন বলেন আমায় ভেবে।

-আমরা এখন প্রেম করলেও আমাদের প্রেমটা হবে সেই নব্বইয়ের দশকের মতো স্নিগ্ধ আর নদীর মতো স্বচ্ছ টলটলে! যাতে কোন মিথ্যার প্রলেপ থাকবে না, আর না থাকবে আপনার আমার মাঝে কোন লুকোচুরি”।

এতক্ষণ একদমে কথাগুলো বলে থামলো ঐশী। রাফিন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার প্রিয়তমার মুখপানে। দুষ্ট, চঞ্চল মেয়েটা যেন হঠাৎ করে খুব বড় হয়ে গেছে। এই যে বিজ্ঞদের মতো কত কঠিন কঠিন বাক্য বলে দিলো। যাতে এক বিন্দু মিথ্যের লেস নেই। যা আছে সব শুদ্ধ ও পবিএ ভালোবাসা। কতটা কোমল হৃদয় হলে মানুষ এতটা ভাবে? আজ যেন ভিষণ মুগ্ধ হলো রাফিন।

অধর কোনে হাসি রেখে স্নিগ্ধ কন্ঠে বললো,

খুব বড় হয়ে গেছে আমার পিচ্চি পরী টা। সব সিচুয়েশনে বুঝতে শিখে গেছে। এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার। তুমি শুধু আমার পাশে ছায়া হয়ে থেকো সবসময়। তোমার এই হাস্যজ্বল মায়াবী মুখটা দেখে আমার সব ক্লান্তি, হতাশা দূর হয়ে যায়।
তুমি পাশে থাকলে আমার হাজার বছর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়। নিজেকে তোমার মাঝে খুঁজে পাই আমি। দিনশেষে তুমিই আমার মানসিক শান্তি মেয়ে।
“জানো তো ভালো থাকার সিক্রেট হচ্ছে – মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া, পজিটিভ থাকা, এক্সপেকটেশন না রাখা, কাউকে আঘাত না করা”।

– তোমার এই পিচ্চি মাথায় এত চাপ নিতে হবে না। আমি স্টুডেন্ট বেকার প্রেমিক বলে কি মাঝে মাঝে, আমার ছোট ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে পারবো না?
আর তোমাকে এত হিসাব করতে হবে না। তোমাকে নিয়ে ইচ্ছে গুলো আমার বাবার টাকা দিয়ে পূরণ করছি না। আমি পড়াশুনার পাশাপাশি অনলাইনে জব করি। আজ শুধু তোমাকে ই বললাম। আমার স্বপ্ন গুলো নিজে পূরণ করতে চাই। বাবার টাকায় প্রতিষ্ঠিত হতে চাই না। নিজের চেষ্টায় কিছু করার মধ্যেই রয়েছে স্বার্থকতা।

এখন আমার একটা ছোট্ট ইচ্ছে হচ্ছে।
চলো খেতে যাই। আমার খুব খুব ক্ষুদা লাগছে।
চলো?

আচ্ছা চলুন।

ঐশী আর না করতে পারলো না। এই একরোখা জেদী লোকটা যা বলবে তা করেই ছাড়বে। তাছাড়া এখন পযর্ন্ত কিছুই খায়নি লোকটা। ভাবতেই চটজলদি উঠে দাঁড়ালো ঐশী।

___________________________
রাত দশটা পড়ার টেবিলে আনমনে বসে আছে চৈতী। ইদানিং কোনো কিছুতে মন দিতে পারছে না চৈতী। না চাইতেও বার বার সাইফের কথা মনে পড়ছে। এখন আর বিরক্ত করছে না সাইফ। দেখা হলেও কেমন যেন এড়িয়ে চলে চৈতী কে। ক্লাসে এসে ভুলেও একবার চৈতীর দিকে তাকায় না। বরাবরই ইগনোর করছে চৈতীকে।
এসবের জন্য হয়তো চৈতীর ভালো থাকার কথা।
কিন্তু নারীর মন বুঝা বড় কঠিন। কখন কি চায় বোঝা মুশকিল। অবাধ্য মন না চাইতেও লোকটা কে নিয়ে ভাবে।
তার এই ইগনোর মেনে নিতে পারছে না।
তবে কি সে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে?
হয়তো মানুষটা কে বেশিই আঘাত করে ফেলছে চৈতী।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]

গল্প কেমন হচ্ছে জানাবে কিন্তু? তোমাদের মতামতই আমার সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগাবে। যারা এখনো ফলো করোনি পেজটি। তারা ফলো দিয়ো প্লিজ! আমার ছোট্ট পেজটি তোমরাই পারো সামনে এগিয়ে নিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here