ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #Writer_Sumaiya_Afrin_Oishi #পার্টঃ২৬

0
189

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#Writer_Sumaiya_Afrin_Oishi

#পার্টঃ২৬

-“প্রকৃতি তার নিয়মেই রুপ বদলায়। শরৎকালের আদ্রতা গিয়ে প্রকৃতিতে নেমেছে হেমন্তকাল। প্রকৃতিজুড়ে হলুদ রঙের সমাহার। হালকা শীত শীত ভাব, দিগন্ত পেরিয়ে তীব্র ভাবে উঠা সূর্যের মিষ্টি রোদ”।

-সেই সাথে হালকা হালকা বাতাসে মেঘেরা উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে। পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে আনন্দে সেজে উঠেছে প্রকৃতি।

-বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিলো রাফিন। তার কাছে মনে হচ্ছে বসন্তকাল এসে গেছে। বসন্ত এসে যেন তাঁর মনের আঙিনায় উঁকি দিচ্ছে। কারণ তার মনের আকাশে যে বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করে দিয়েছে। আর সেই হাওয়ায় তার মনকে উতাল-পাতাল করে দিচ্ছে। তার সমস্ত প্লান যে সাকসেস হয়েছে। তার দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে চিরদিনের জন্য আপন করে পেতে চলছে তার মায়াবিনী কে। আজকে তো তার মনে বসন্তের রঙিন ফুল হয়ে ধরা দিয়েছে একটি ধোঁয়া উঠা কুয়াশাময় সকাল।

-আজকের সকালটা প্রতিদিনের চেয়ে আলাদা। আজকের সকাল জানান দিচ্ছে নতুন কোনো এক ভালো লাগার অনুভূতি।

-তবে কি সত্যিই আমার হৃদয়ে রানী হয়ে আসবে সে?
– সত্যিই কি তার মনটা উলটপালট করে দিবে তার প্রিয়তমা?
-তবে কি সে তার শ্যামসুন্দর পুরুষটির মনের আঙিনায় এসে নাড়বে কড়া?

-একটু একটু করে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে রাফিন তার মায়াবিনীর কথা। তার প্রশ্ন,

সত্যি কি বসন্ত এসে গেছে তার হৃদয়ের আঙিনায়?
আর সেই বসন্ত তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অন্যরকম এক স্বপ্নের রাজ্যে। যেখানে থাকবে সে আর তার প্রিয় মানুষটি। কথাটা ভাবতেই তার মুখে ফুটলো মিষ্টি হাসি।

-হাসিটা দীর্ঘ-স্হায়ী হলো না। ফোনের রিংটোনের আওয়াজে হাসিটা মিলিয়ে গেলো। চোখে মুখে ফুটে উঠলো একরাশ বিরক্তি। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশে মেয়েলী একটা কন্ঠ ভেসে আসলো।

-তুই আমার ফোন রিসিভ করছিস না কেন? তোর এমন অবহেলা আমি সহ্য করতে পারি না। প্লিজ! রাফিন বুঝার চেষ্টা কর একবার আমাকে।

-তোকে অবহেলা কে করলো? এসবের জন্য আমাকে ফোন দিচ্ছিস ক্যান? কতবার বলবো আমাকে একদম ডিসটার্ব করবি না।

-হাজার বার তোকে আমি ডিসটার্ব করবোই। বিকজ, আমি তোকে ভালোবাসি! তোকে এতদিন সহজ ভাবে বুঝাতে চাইছি। কিন্তু, তুই বুঝতে চাইছিস না, কেন রাফিন? আমার কোন দিক দিয়ে কমতি আছে বল? আমাকে ভালোবাসা যায় না! বলতেই চোখ দু’টো ভিজে গেলো মলির।

-আমি তোকে কতবার বলবো আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি মলি। তারপরে ও কেন তুই আমার পিছনে পড়ে আছিস?
তুই আমার কাজিন তবে আমি সবসময় বোনের নজরে দেখেছি। আর রইলো তুই কোন দিক দিয়ে কমতি?

“ভালোবাসা এসব সৌন্দর্যের সমীকরণে মানে না। যারা সৌন্দর্যের সমীকরণ কষে ভালোবাসতে আসে তারা হয়তো বুঝেনা সত্যিকারের ভালোবাসার অর্থ। যেখানে গায়ের রং কিংবা টানটান স্কিন,ঝলমলে চুল এসব কিছুই ফিকে।

“বাইশের কোঠায় পৌঁছে যখন সবাই সৌন্দর্যকে সবথেকে বেশী প্রধান্য দেয়, তখন কিছুকিছু মানুষ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সবাই সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে না। আরে ভালোবাসায় তো সুন্দর মুখটাই শুধু ম্যাটার করে না। এখানে সুন্দরের একটা মন থাকা বেশী জরুরী। যা তোর নেই, আমি পেয়েছি আমার মায়াবিনীর কাছে। যার বিশাল একটা মন আছে। তার শহর জুড়ে শুধু আমার বিচরণ”।

-আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ায় এমন কোনো শক্তি নেই আমাদের মধ্যে আসার। সেখানে সেখানে চাকচিক্য মুখ ডোন্ট ম্যাটার।

– সব পুরুষরা কেবল শুধু সুন্দরী মেয়েদের পিছনে ঘোরে কথাটা কিঞ্চিৎ ভুল। সব পুরুষ মানুষ এক নন মলি। সবাই সুন্দর মুখশ্রীতে ভোলে না।

কেউ কেউ বুকের গভীরে থাকা পবিত্র একটা হৃদয়ের ও খোঁজ করে। ওই সুন্দর হৃদয়ের থাকা মানুষটার দিকে চেয়ে ভাবে “তুমি আমার চোখে দেখা পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী নারী”! এর সেই সুন্দর নারীটাই হচ্ছে আমার মায়াবিনী। যাকে যতদেখি ততবার মুগ্ধ হই।

“Choose a Heart, not a face. He doesn’t deserve better. He deserves the best. She is the best in his eyes”.

শোন, তুই যথেষ্ট সুন্দরী। কিন্তু সুন্দর চেহারা হলেই কি তার প্রতি ভালোবাসা জন্মে?
ভালোবাসা আসে হৃদয়ের অনুভূতি থেকে! আর আমার হৃদয়ের পুরোটা জুড়েই আমার মায়াবিনীর রাজাত্ব! এখানে অন্য কাউকে ভাবার মতো দুঃসাহস কখনো হবে না আমার। অন্য কারো নাম ভাবলে ও যে পাপ হবে হবে আমার।

-এইজন্য ই আমার তোকে ভীষণ ভালো লাগে। তুই সবার থেকে আলাদা, আমার তোকে চাই রাফিন। আমি আরো একবার তোর প্রেমে পড়ে গেলাম। প্লিজ! রাফিন। আমার লাইফে ফিরে আয়!

-প্রশ্নই আসে না। এসব চিন্তা মাথা থেকে দূর করে নিজেকে নিয়ে ভাব।

-আমি তোকে না পেলে সব ধংস করে দিব সব! সব! আমি ও তোকে খুব ভালোবাসি। তোকেই আমার লাগবে। তোর শূন্যতা কেউ পূর্নতা দিতে পারবে না।

-ভালোবাসা পাপ না মলি। আমি তোর ভালোবাসা কে যথেষ্ট সম্মান করি। কিন্তু ভুল মানুষ কে ভালোবাসা অপরাধ। আমি তোর জন্য সেই ভুল মানুষ। অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হ। আমাকে আর কখনো ডিসটার্ব করবি না খবরদার। ঢাকা এসে যেন তোকে আমার চোখের সামনে না দেখি বলে দিলাম। নেক্সট টাইম তোর এসব পাগ’লামি সহ্য করবো না। আমাদের মধ্যে তৃতীয় পার্সন হতে আসিস না। তখন আমি কিন্তু ভুলে যাবো তুই আমার খালার মেয়ে।
মাইন্ড ইট!
বলেই ফোন কেটে বন্ধ করে দিলো রাফিন। মেজাজে বিগড়ে গেলো তার, এই গায়ে পড়া মেয়েটাকে তার একদম বিরক্ত লাগে।

-আমি তোকে না পেলে কাউকে পেতে দিবো না রাফিন। তুই শুধুই আমার! ঐ মেয়ে কে আমি শেষ করে দিবো। আমার পথের কাটা আমি উপড়ে ফেলতেও জানি। যে কোনো মূল্যে আমি তোকে নিজের করে নিবোই। তাতে আমার হাজারটা খু’ন করা লাগলে ও করবো আমি।
বলেই মলি হঠাৎ চোখের পানি মুছে রহস্যময় হাসি দিলো।
ভালোবাসা খুব অদ্ভুত তাই না? কাউকে বা দিক বেদিক ভুলিয়ে উম্মাদ করে দেয়, আবার কাউকে বা রাজ্যের সুখ হয়ে ধরা দেয়।

মলি হচ্ছে রাফিনের কাজিন। বাবা- মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে। জন্ম থেকেই ঢাকাতে থাকে। খুবই স্মার্ট, মডার্ন মেয়ে তবে খুব হিংসুটে ও বটে। সমবয়সীই তারা,একই মেডিকেল কলেজে পড়ে। পারিবারিক একটি মনমালিন্যের কারণে কারো সাথে যোগাযোগ নেই তাদের।

-নাজমা চৌধুরী ও সায়েমা ইতি দুইবোন। ইতির মেয়েই হলো মলি। একসময় কামাল চৌধুরীর সাথে বিজনেসে যুক্ত ছিলো মলির বাবা আরমান শিকদার। খুবই বিশ্বস্ত লোক মনে করতেন কামাল চৌধুরী। কিন্তু উনি ভুল ছিলো। সব মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই তা প্রমান করে দিলো। সবাই ভরসার যোগ্য নয়। বিশ্বাসঘাতকতা করে অফিসের একটা মোটা অংকের টাকা নিজের নামে করে নিয়েছে। যেখানে শেয়ারে ছিলো কামাল চৌধুরী ও তার ভাই এবং আরমান শিকদার। সেই থেকেই তাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। রাফিন যখন মেডিকেল কলেজে এডমিশন নিয়েছে তখন মলি ও নিয়েছিলেন। ভাগ্যক্রমে একই ডিপার্টমেন্টে পড়েছে দু’জন। প্রথম থেকেই রাফিন কে ইমপ্রেস করতে চাইছে মলি, কিন্তু রাফিন তো তার মায়াবিনীততে আঁটকে গেছে। সেখানে দুনিয়ার সমস্ত সুন্দরীরা আসলেও রাফিনের মতো ছেলেকে ইমপ্রেস করতে পারবে না। সত্যিকারের পুরুষতো তারাই যারা এক নারীতে আসক্ত।

“৭০ টা মেয়েকে ইমপ্রেস করা পুরুষত্ব নয়, একটা মেয়ের সাথে ৭০ বছর কাটিয়ে দেওয়া’ই আসল পুরুষত্ব”।

___________________
-আকাশে তুলোর মতো সাদা সাদা মেঘ সাবানের ফ্যানার মতো জায়গায় জায়গায় ভেসে বেড়াচ্ছে। যা আকাশে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। সূর্যটা কিছুটা হেলে গিয়েছে। বিকেল নেমে এসেছে প্রকৃতি জুড়ে। ঐশী ছাদের রেলিং ধরে মিষ্টি বিকেলটা উপভোগ করছে। হালকা বাতাসে তার খোলা চুল চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। মিনিট দশেক পড়েই মায়ের কন্ঠ ভেসে উঠলো। সানজিদা শেখ হাক ছেড়ে ডাকছে কোচিং এর স্যার কল দিয়েছে। ঐশী তড়িঘড়ি করে নিচে নামলো। কোচিং এর স্যার কিছু নোট দিবে বলে জানিয়েছে। সবাইকে জরুরি তলব করছে এক্ষনই যেতে হবে।

-বন্ধুমহলের সবাই কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে ইতোমধ্যে। কিছুসময়ের মধ্যে মিতু এসে হাজির হলো। অতঃপর তারা দ্রুত চলে গেলো কোচিং এর উদ্দেশ্য।

-তাদের আর কোচিং এ যেতে হয়নি আলিফ সবার নোট নিয়ে আসছে। বাকি সময়টা সবাই মিলে আড্ডা দিবে বলে জানিয়েছে। সবাই মিলে ফুসকা খেয়ে মাঠের এক কোণে গোল হয়ে বসে পড়লো। জান্নাত সেই শুরু থেকেই ফোন নিয়ে ব্যস্ত।

-ঐশীর বারবার রাফিনের কথা ভেবে চলছে। আজকে সারাদিন মানুষটার কোন খোঁজ পেলো না। কয়েক বার ফোন দিয়েছে তাও পাওয়া যায়নি। মিতুকে ও একবার জিজ্ঞেস করছিলো রাফিনের কথা।
কিন্তু মিতু খুব সূক্ষ্ম ভাবে বিষয়টি এরিয়ে গেলো।

-রাফিনের কথা ভাবতেই কোন এক অজানা কারণেই তার মনজুড়ে বিষাদে ভরে যাচ্ছে। “কারো প্রেমে পড়া মানেই তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া। মানুষ যার প্রেমে পড়বে বিপরীত মানুষটা তার মনের বিরাট একটি অংশ দখল করে নেবে। যদি কখনো বিপরীত মানুষটা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় কিংবা ছেড়ে চলে যায়, তখন সে মনের ঐ বিরাট অংশ নিয়ে চলে যায়। তখন বিপরীত মানুষটি হয়ে উঠে শূন্য জগতের বাসিন্দা”। তাইতো না চাইতেও রাফিনের কথা বারবার অবাধ্য মনটা ভেবেই চলছে। কেননা ঐশী যে রাফিনের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এই মানুষটা ছাড়া যে তার জীবন সাদা-কালো।

– তবুও নিজেকে যথেষ্ট সামলে নিয়েছে। রবিন সবাই কে পর্যবেক্ষণ করে দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো,
-তোদের এসব প্রেম – ভালোবাসা দেখলে ” মনডায় চায় সব ছাইড়া দিয়া সেন্ট-মার্টিন এ গিয়ে, নদীর পাড়ে বইসা একটা কচি ডাব খেয়ে আসি”!

রবিনের এমন অদ্ভুত কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।

-এরিমধ্য রিয়া একটা থা’প্পড় দিয়ে রবিন কে বললো আরে দোস্ত, সেন্ট মার্টিন নদী নারে সাগর হবে গাধা। এটাও জানিস না? বলে মুখ বাঁকাল,

‘তোরে বলছি আমি ভুল ধরতে নাক ছিটকিয়ে বললো রবিন’।

তা এত জায়গা থাকতে তুই সেন্ট মার্টিন যেতে চাচ্ছিস কেন? আলিফ বললো,

তাছাড়া কি করবো? তোরা মিঙ্গেলরা কি বুঝবি সিঙ্গেলদের কষ্ট। চারপাশে এত প্রেম দেখলে আমারও প্রেম প্রেম পায়। বন্ধু হয়েও একটা গার্লফ্রেন্ড জুগিয়ে দিতে পারিসনি তোরা। এই দুঃখে একা একা সময় কাটাতে যাবো আরকি,মনের দুঃখে। কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো রবিন।

“তুই বরং মঙ্গল-গ্রহ থেকে ঘুরে আয় শা’লা। মেকি হেসে বললো আলিফ।
শুরু হয়ে গেলো এদের কথার ঝুড়ি। বন্ধুদের সাথে থাকলে আর যাই হোক কোনো ডিপ্রেশন থাকেনা। এদের মাঝেই প্রকৃত সুখ যেন খুঁজে পাওয়া যায়।

-সন্ধ্যা হতে আর কিছুসময় বাকি। তাই দেরী না করে সবাই যে যার গন্তব্যে ছুটলো।

-বাসায় আসতে আসতে মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে। তড়িঘড়ি কর অজু করে নামাজ পড়ে নিলো ঐশী।

-নামাজ পড়ে বিছানার উপরে তাকিয়ে মুখটা হা হয়ে গেলো…….

চলবে,,,,,,,,,,,,

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here