ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ৩১

0
183

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ৩১

“বন্ধু মহলের সবাই বাড়ি চলে গিয়েছে আজ। সকাল থেকে মনটা ভীষণ খারাপ ঐশীর। এতদিন সবাই একসাথে থেকেছে খুব মিস করছে ওদের। বাড়ি টাও যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তার উপরে রাফিন ফোন রিসিভ করছে না। হয়তো বা ব্যাস্ত আছে ভেবে আর কল দিলো না। এই মানুষটা যে তার সকল মানসিক শান্তির কারণ। তার কন্ঠে “মায়াবিনী” ডাক’টা শুনলে’ই সকল মন খারাপ নিমিষেই পালিয়ে যায়। রাফিনের কথা ভাবতেই অধর কোণে মিষ্টি হাসি ফুটলো।”

” দিনশেষে আপনাকে খুব পাশে পেতে ইচ্ছে করে ভালোবাসার জন্য। শারীরিক সঙ্গী না হলেও একটু-আধটু ভালোবাসুন মানসিক শান্তি হয়ে। দিনশেষে মনের না বলতে পারা কথা গুলো শুনবেন কী মনোযোগ দিয়ে? শরীর ছুঁয়ে না হলেও মন ছুঁয়ে যাক। শুধু একটু মানসিক শান্তি দেওয়ার জন্য আমার ক্লান্তি পথের ছায়া হোন। কেউ একজন কে চাই, ঝড় ঝাপটায় আমায় একটু আগলে রাখার জন্য। ভীষণ মিস করছি আপনাকে।শ্যামসুন্দর পুরুষ!

“মেসেজ টাইপিং করে পাঠিয়ে দিলো রাফিনের নাম্বারে।”

“বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে রাফিনের কোন খোঁজ পেলো না ঐশী। এবার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। লোকটার হলোটা কী হুট কর? বিষন্ন মন নিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে নিলো। এক্সামের জন্য অনেক দিন অনলাইনে যাওয়া হয়না তার। ডাটা অন করতে হোয়াটসঅ্যাপে অনেক গুলো কল এবং পিকচার দিয়েছে কেউ। ঐশী দ্রুত হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে পিকচার গুলো সিন করতেই বুকটা ধক করে উঠলো। তার রাফিন ভাই কে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে। নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। মুহূর্তে’ই চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা হাতে ছবি গুলো দেখতে লাগলো। খুব ভালো ভাবে দেখলো, না এগুলো কোনো এডিট করা পিক না। আনমনে কাঁপা স্বরে মৃদু চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,

“না। না। এটা হতে পারে না। আমার আমার রাফিন ভাই এমন করতেই পারে না। এসব কিছু মিথ্যে। সব কিছু মিথ্যে। আমার রাফিন ভাই আমাকে এভাবে ঠকাতে পারে না। আমাদের ভালোবাসা এতটা ঠুনকো নয়। কে এই মেয়ে? ওকে তো আমি খু’ন করে ফেলবো। নিজেকে যথেষ্ট সামলে নিয়ে কল দিলো, “ফারিহা তাসনীম মলি” নামক আইডিতে।”

দুইবার কল দেওয়াতেই রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠ ভেসে আসলো।

“হ্যালো!”

“রাখুন আপনার হ্যালো! কে আপনি হ্যাঁ? আপনার এত সাহস হলো কি করে। আমার রাফিন ভাই কে স্পর্শ করার। রাফিনের উপরে একমাত্র আমার অধিকার। উনি একমাত্র আমার ব্যক্তিগত।”

-অপর প্রান্তে মলি শব্দ করে হেসে উঠলো। হঠাৎ হাসি থামিয়ে তেজী কন্ঠে বলে উঠলো, -” রাফিনের নাম উচ্চারন করবে না তুমি। রাফিনের সাথে আমার তিন বছরের রিলেশনশিপ। তুমি আমাদের পথে বাঁধা হয়ে থেকো না। আমরা দুজন দু’জনকে খুব ভালোবাসি। জানি আমার মুখের কথা তুমি বিশ্বাস করবে না। তাই ছবি পাঠিয়েছি।”

“হাহাহা! আপনি বললেন আর আমি বিশ্বাস করে নিলাম। তাহলে আপনার ধারণা ভুল। এমন হাজার’টা পিক দেখালেও উনার প্রতি আমার একবিন্দু মাএ সন্দেহ হবে না। আমাদের ভালোবাসা এত ঠুনকো নয়, যে-কেউ এসে যা-তা বলবে আর আমি বিশ্বাস করে নিবো।”

“এই অ’স’ভ্য মেয়ে বারবার উনি উনি করছো কেন? মনে হচ্ছে তোমার জামাই লাগে রাফিন। নিজের শরীর দিয়ে ছেলেদের ভস্ম করে রেখেছো চ’রি’এ’হী’ন মেয়ে,,,,,

মলি আর কিছু বলতে পারলো না। তার আগে ঐশী দাঁত ক’ট’ম’ট করে বলে উঠলো,

“খবরদার আর একটা ও বা’জে কথা বলবে না। আপনার কপাল ভালো আপনি ফোনের ওপাশে, না হয় আপনার মু’খ আমি ভেঙে দিতাম। আপনি কেমন পরিবারের মেয়ে তা ব্যবহারে বুঝে গিয়েছি। আপনার সাথে এখনো ভদ্রভাবে কথা বলছি, কেননা এটাই আমার বাবা-মায়ের শিক্ষা,এটাই তাদের আদর্শ। আপনার মতো মেয়ে রাফিন ভাইয়ের ভালোবাসা ডিজার্ভ করেন না। নির্লজ্জের মতো অন্যের স্বামির উপরে ঝাপিয়ে পড়ছেন কেন?”

“হোয়াট? অন্যের স্বামি মানে? রাফিন একমাত্র আমার হাসবেন্ড হবে। আমি রাফিন কে বিয়ে করবো। আমি ছাড়া রাফিন অন্য কারো হতে পারে না। রাফিন কে আমি ভালোবাসি! রাফিন’কে আমি না পেলে আমি তোমাকে শেষ করে দিবো”।

“অলরেডি সে আমার। এমনকি লিখিত ভাবে মানুষটা একান্তই আমার। একটা মেয়ে কতটা নির্লজ্জ হলে অন্যের স্বামির গায়ে পড়ে।”

“আমি বিশ্বাস করি না। তুমি বানিয়ে বানিয়ে বলছো। আবার আমাকে নির্লজ্জ বলছো? অন্য একটা ছেলেকে নিজের হাসবেন্ড দাবি করো। আর আমি ও না, তোমাদের মতো চ’রি’ত্র’হীন মেয়েদের দ্বারা অসম্ভব কিছু না।”

“আমার হাসবেন্ড কে নিয়ে আপনি টা’না’টা’নি করছেন আবার আমাকে চরিত্র’হী’ন বলেন। আমি উনার জন্য খুব সিরিয়াস। আমাদের মাঝে তৃতীয় পার্সন হতে আসবেন না। আপনার মতো মেয়ের সাথে কথা বলতে ও আমার রুচিতে বাঁধে, বলেই কল কেটে দিলো। ছবি গুলো রাফিনের হোয়াটসঅ্যাপ পাঠিয়ে দিলো।

” মুখে এসব বললেও ভিতরে ভিতরে খুব ভয় হচ্ছে ঐশী’র। ভালোবাসা’র মানুষটাকে হারানো ভয়ে ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে যাচ্ছে। তার রাফিন ভাই তাকে ঠকাতে পারে না।কিন্তু মন যেন এসব মানেছ’ই না। বারবার রাফিন কে কল দিচ্ছে। এবার ফোন বন্ধ, লোকটার কি হলো?ঐ মেয়েটা বা কে? দুশ্চিন্তায় মাথা, বুক ভারী হয়ে আসলো।”

“রাত দশটা রাফিনের এখনো কোনো খবর নেই। ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ। এবার আর নিজের কান্না কে কনট্রোল করতে পারলো না ঐশী। কান্না করতে করতে বলতে লাগলো,

“আপনার কি হয়েছে রাফিন ভাই?”

“শুনুন? আজ বড্ড কাছে পেতে ইচ্ছে করে আপনাকে! আমি জানি আপনি আসবেন না। আসতে পারেন না, তবুও কেন জানি ভীষণ কাছে পেতে ইচ্ছে করে আজ। এই দেখুন, বুকের ভিতর কিভাবে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে, আপনাকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা! আপনাকে সামান্য একটু দু’চোখ ভরে দেখার জন্য চোখ দু’টো কেমন জ্ব’লে পু’ড়ে খা’ক হয়ে যাচ্ছে দেখুন! আপনাকে সামনাসামনি দেখিনা কতদিন, মন শুধু দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকে। আপনি কি শুনছেন রাফিন ভাই? যেখানে যাচ্ছি সেখানে শুধু শূন্যতার বসবাস!৷ হৃদয় আমার দেহেই আছে, তবে কেমন শূন্যতায় ছ’ট’ফ’ট করছে দেখুন! সকল বাঁ’ধা উপেক্ষা করে আপনার মুখখানা একটি বার দেখতে ইচ্ছে করছে খুব! কান্নায় বুকটা কেমন ভারী হয়ে গেছে দেখুন!আমার মন খারাপের দল আর বিষন্নতা কেমন ঘ্রাস করে নিচ্ছে আজ!”

“আপনি কি সব বাঁধা উপেক্ষা করে একটি বার আসবেন রাফিন ভাই? কথা দিচ্ছি আমি আপনাকে থাকতে বলবো না আমার কাছে। শুধু একটি বার আপনার উপস্থিতিতে আমার মনটা শান্ত করে দিন।আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনেকদিন পর গভীর ঘুমে যেতে ইচ্ছে করছে। খুব করে ইচ্ছে করছে, আপনাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পা’গ’লের মতো হা’ও’মা’ও করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আপনার বুকে। আপনিই যে আমার সকল মানসিক শান্তি’র কারণ! আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন শ্যামসুন্দর পুরুষ!”

“রুম থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পেলেন সানজিদা শেখ। চিন্তিত মুখ করে দ্রুত ঐশী কে ডাকতে লাগলো। দরজা ভিতর থেকে লক করা। ঐশী মায়ের কন্ঠ শুনতে পেয়ে কান্না থেমে গেলো। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে দরজা খুলে দিলো। সানজিদা শেখ বিচলিত হয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো। মেয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলো চোখ মুখ ফুলে গেছে কান্নার জন্য। উনি ব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে মা? তুই কান্না করছিস কেন? শরীর খারাপ লাগছে? কি হয়েছে আমাকে বল?”

“ঐশী নিজেকে যথেষ্ট সামলে নিয়ে বললো, কই কান্না করিনি তো আম্মু। তেমন কিছু না আম্মু। ভালো লাগছে না কিছু। ওরা চলে গেছে খুব মিস করছি ওদের।”

“বো’কা মেয়ের কান্ড দেখো। ওরা তো দু’দিন পরে আবার আসবে মা। মন খারাপ করো না তো। চলো ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়ো।”

“আম্মু আমি খাবো না। ভীষণ মাথা যন্ত্রণা করছে। আমি ঘুমাবো। তুমি খেয়ে সুয়ে পড়ো।”

“সানজিদা শেখ ঐশী’র কথা শুনলো না। খাবার রুমি নিয়ে এসে জোর করে কিছুটা ভাত খায়িয়ে দিলো। তারপরে বললো,

“সুয়ে পর এখন মা। আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। দেখবি তোর মাথা যন্ত্রণা ভালো হয়ে যাবে। ঐশী কিছু বললো না। মায়ের কথামতো সুয়ে পরলো।”

” মেয়ে’কে সুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সানজিদা শেখ। অপলক নয়নে চেয়ে রইলো ঐশীর মুখশ্রীর পানে। তার পিচ্চি মেয়েটাও অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।”

“মা” তো এক জাদুর পরশ! এই ছায়া মাথার উপর থাকলে সবকিছু খুব মনোরম লাগে।নিজেকে খুব হাল্কা হাল্কা লাগে। “মা” নামক জা’দু’ক’র দুনিয়ায় সব থেকে বড় জা’দু’ক’রের সেরা। মায়ের সাথে ঠিক কারো তুলনা হয় না। মা প্রত্যেকটা সন্তানের জন্য কল্যণকর ভালোবাসা হয়। তার ছায়ার তলে থাকলে দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা ভাবনা ফিকে যায়। তার স্নেহময় হাতের ছোঁয়া পেলে সবকিছু ভুলতে বাধ্য।”

” মিনিট দশকের মধ্যেই ঐশীর চোখ নেতিয়ে আসলো। আরো কিছুসময় মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ঐশী এবার নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো। সানজিদা শেখ রুমের লাইট বন্ধ করে বেরিয়ে আসলো।”

চলবে,,,,,,,,,,,,,

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here