#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#writer_sumaiya_afrin_oishi
#পার্টঃ৩৭(প্রথম অংশ)
“অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সমূখীন হয়ে অবশেষে দু’জন বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো, একে অপরের হাত ধরে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে দু’জন সারাজীবন এক পথে চলবে বলে সন্ধি হলো যেন হৃদয়ে হৃদয়ে। একজনার ঘর রঙিন করে, এতদিন আগলে রাখা বাড়িটা শূন্য করে বিদায়ের সময় এসেছে যে। একসাথে দুটো পাখিকে আজ বিদায় দিতে’ই যে হবে। শফিকুল সাহেবের চোখ দু’টো ভিজে যাচ্ছে বারবার। তার দু’টো রাজকন্যা যে অন্য রাজ্যে রাণী হয়েছে। চাইলেও সে তার কাছে রাখতে পারবে না। পুরুষ মানুষদের নাকি কাঁদতে নেই। কিন্তু, বাবা’রা কাঁদে তার রাজকন্যা’দের জন্য। তার দুই রাজকন্যা যে একটু বেশি-ই আদরের ছিলো। শফিকুল শেখ কান্না’র জন্য কথা বলতে পারছে না, তার কথা দলা পাকিয়ে আসছে।
“যেতে নাহি দিবো হায়! তুবুও যেতে দিতে হয়! তবু চলে যায়।”
-এই বাক্য’টার সুপ্ত অনুভুতি’হীন যন্ত্রণায় কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে বাবা-মায়ের। তাদের হৃদয় ভা’ঙা অনুভূতি’তে যেন আকাশ বাতাস হাহাকার করছে। তিহান এসে তার দুই বোনকে দুই হাতে দুজনকে জড়িয়ে নিলো। ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে দু’বোন কাঁদছে। তিহানের চোখ দু’টো ও ভিজে যাচ্ছে। সবার অগোচরে চোখে’র জলটুকু মুছে নিয়ে দুই বোনের হাত দুই ভগ্নিপতী’র হাতে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,
“এই হাত দু’টো সারাজীবন আগলে রেখো ভাই। আমার বোনদের কখনো কষ্ট দিও না। তোমাদের উপরে আমার যথেষ্ট ভরসা এবং বিশ্বাস আছে। আশাকরি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা তোমরা দিবে। তবুও যদি কখনো আমার বোনদের তোমাদের কাছে বোঝা বা অসহ্য মনে হয়। খবরদার! কখনো কোনো ভাবে যন্ত্রণা পেতে দিও না। শুধু আমার কাছে একটি বার বলিও তোমরা তাদের সাথে ভালো নেই। ট্রাস্ট মি! আমি কোনো ঝামেলা ছাড়া বিনাবাক্যে আমার বোনদের আমার কাছে নিয়ে আসবো। আমার বোনদের সারাজীবন বসিয়ে খাওয়ার সমর্থ আল্লাহ আমাকে দিয়েছে। আমি থাকতে তাদের একচুল পরিমাণ কষ্ট পেতে দিবো না।”
রাফিন এবং সাইফ ভরসা দিলো তিহান কে। শফিকুল সাহেব ঐশী কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো তার সাথে সানজিদা শেখ। তাদের ছোট্ট মেয়েটা যে তাদের সবার ভীষণ আদরের ছিলো। সেই মেয়েটার উপর দিয়ে কতোটা ঝড় হাওয়া বয়ে গেলো। এই কালবৈশাখী হাওয়া যে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিলো। এদের কান্না দেখে বন্ধু মহলের সবার চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। মিনিট খানিক সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো,কারো মুখে কথা নেই। নিরবতা ভেঙে শফিকুল শেখ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে রাফিনকে উদ্দেশ্য করে শুধালো,
“আমার ছোট্ট মেয়েটা আমাদের সবার ভীষণ আদরের ছিলো বাবা। আমি আমার মেয়েকে পরিপূর্ণ একটা সংসার দিতে পারিনি। মেয়েরা বিদায় নিয়ে বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যায়। আমার মেয়েটা যাচ্ছে উদ্দেশ্য’হীন ঢাকার শহরে। তবে তোমার উপরে আমার যথেষ্ট ভরসা আছে। আশা রাখছি তুমি সবকিছু পরিপূর্ণ করেতে পারবে। কখনো কষ্ট পেতে দিও না আমার মেয়েটাকে। সুখে-দুঃখে দুজন একসাথে ভাগাভাগি করে সারাজীবন কাটিয়ে দিয়ো”।
” রাফিন মাথাটা নিচু করে ফেললো। সত্যি’ই তো তার মায়াবিনী কে সে একটা পরিপূর্ণ সংসার দিতে পারেনি। মিনিট খানিক চুপ করে থেকে শফিকুল সাহেব কে নিচু কন্ঠে বললো,
“আমার উপরে ভরসা রাখুন আঙ্কেল। আমি বেঁচে থাকতে কখনো আপনার মেয়ে’কে কষ্ট পেতে দিবো না। আমার সর্বোচ্চ দিয়ে আপনার মেয়ে কে আগল রাখবো, কথা দিলাম। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।”
শফিকুল সাহেব ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“অবশ্য’ই ভরসা এবং বিশ্বাস দু’টোই আছে। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে কিন্তু। সাবধানে থেকো। তোমরা সবাই অনেক অনেক ভালো থেকো।”
“গাড়ি’র কাছে আসতেই কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো চৈতী’র। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে তার। বোনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বললো,
“আমার বিয়ে’তে যে তোর জন্য এত বড় সিচুয়েশন অপেক্ষা করছিলো জানতাম না বোন। যেখানে’ই থাকিস ভালো থাকিস। বলে শব্দ করে কেঁদে উঠলো দু’জনই। সাইফ এসে চৈতী’র পাশে এসে হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
“এভাবে কাঁদছো কেন পাগ’লী! প্লিজ কান্না করো না। কালকে আবার তোমাদের বাসায় নিয়ে আসবো তোমাকে।”
চৈতী কান্না ভেজা কন্ঠে আক্ষেপ করে বললো,
“আমার জন্য কাঁদছি না আমি। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ঐশী’র জন্য। ছোট্ট মেয়েটা কতদূরে চলে যাচ্ছে। চাইলেও যখন তখন দেখতে পারবো না। বাসায় এসে ও ছাড়া যে শূন্য শূন্য অনুভব হবে, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে স্যার।”
“অদ্ভুত বিয়ের পরেও “স্যার” বলছে বউ আমার। হায়’রে কপাল!” মনে মনে আওড়ালো। সাইফ, আর কিছু বললো না। কি বা বলার, আজকের জন্য সাইফ ভীষণ অনুতপ্ত। আজ তাদের ছোট্ট ভুলের জন্য কতবড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলো। যদি সায়েম কে বিশ্বাস করে, এখানে না নিয়ে আসতো। তাহলে হয়তো আজ সবকিছু অন্য রকম হতো। সাইফ বেশ আপসেট হচ্ছে।
“হুট করে কোথা থেকে সুজন রিয়ার কাছে এসে দাঁড়ালো। রিয়া কিছু বলার আগেই সুজন একটি চিরকুট রিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“এইটা আপনার জন্য ম্যাডাম। আর শুনুন, এখন খুলবেন না কিন্তু।”
-বলেই দ্রুত গাড়িতে উঠে বসলো। রিয়া কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। এসব বিষয় আর ভাবলো না। চিরকুটটা রেখে দিলো কাঁধে থাকা পার্সের ভিতরে। অন্য দিন হলে বেশ কৌতূহল হয়ে এখনই দেখতো। কিন্তু, আজ কারোই মন ভালো নেই। সাইফ চোখের ইশারায় ড্রাইভার কে গাড়ি চালাতে বললো। সাইফের “মা” সবার কাছে বারবার ক্ষমা চেয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি চলতে লাগলো নিজ গন্তব্যে।”
“এদের সাথে বেরিয়ে পড়লো রাফিন, ঐশী, তিহান,সাথে আছে বন্ধু মহলের সবাই। এদের উদ্দেশ্য বাস স্টান গিয়ে ঐশী ও রাফিন কে বাসে তুলে দিবে।”
” সবাই বেরিয়ে পড়লো যার যার উদ্দেশ্য। দূর থেকে দুইজোড়া চোখ তাকিয়ে থেকে চোখের জল ফেলছে, আর দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসছে তাদের ।
” বাবা-মা ঠিক কত’টা কষ্ট সহ্য করে তার বুকের ধন’কে অন্যের হাতে তুলে দেয়। এই কষ্ট’টা শুধু বাবা-মায়েরা ছাড়া পৃথিবীর কেউ অনুভব করতে পারে না। হয়তো তাদের কলিজা ছিঁড়ে যায় এই যন্ত্রণায়। নয়তো মনে হয় এই বুঝি দম টা বেরিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাবা’রা একটু বেশীই কষ্ট পায়। কেননা, প্রতিটা বাবা’র কাছে তার মেয়েরা রাজকন্যার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সব বাবা’রা চায় আমার মেয়েটা সব থেকে ভালো থাকুক। স্বামি’র সংসারে সুখী থাকুক। মেয়েরা তো বাবার কলিজার একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে। তারা কষ্ট পেলে বাবাদের কলিজায় দাগ কাটে। সেই কলিজার টুকরো সন্তান কে বিদায় দেওয়াটা যে ভয়াবহ যন্ত্রণা তা লিখে বা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।
“শফিকুল সাহেব বাসার ভিতরে ঢুকে ধপকরে বসে পড়লো চেয়ারে। এই বাসাটার চারপাশ হাহাকার, শূন্য মনে হচ্ছে যেনো। তার ছোটো মেয়েটা থাকলে বোধহয় এতো’টা কষ্ট হতো না তার। অবশ্য তিনি বলেছিলো ঐশী বাড়িতে থাকবে বলে।কিন্তু রাফিন জবাবে বলেছিল,
“ক্ষমা করবেন আঙ্কেল! এই মানুষদের মধ্যে আর একটা দিন ও আমি আমার স্ত্রী’কে রাখতে চাইছি না। আমি বেকার বলে আমাকে দয়া দেখাচ্ছেন। কিন্তু আঙ্কেল আমি আমার সবটুকু দিয়ে আপনার মেয়ে’কে ভালো রাখবো। ওর গায়ে একটা আঁচড় ও লাগতে দিবো না। এই সভ্য রুপে অসভ্য সমাজ থেকে আমি আমার অর্ধাঙ্গিনী কে দূরে রাখতে চাই। যেখানে কেউ তার দিকে আঙুল তুলে কথা বলার সাহস না পায়।”
শফিকুল সাহেব আর একটা বাক্য ও ব্যয় করেনি। চাইলেও যে সে তার কন্যার উপরে পিতা’র অধিকার ফলাতে পারে না।কারণ, তার মেয়ে এখন অন্য একজনার স্ত্রী। স্ত্রীর উপরে সবথেকে বেশি স্বামির অধিকার।”
_________________
বন্ধু মহলের সবার মনে বিষাদের ছাপ। বাস ছাড়ার সময় হয়ে গিয়েছে। মিতু ঐশী’কে জড়িয়ে ধরে বিষন্ন কন্ঠে বললো,
“একজনার বিয়েতে এসে তোকে যে এভাবে হারাতে হবে ভাবিনি দোস্ত। ভালো থাকিস দোস্ত! সাবধানে থাকিস। নিজের খেয়াল রাখিস সাথে আমর ভাইয়ের ও। যেকোনো সমস্যা শেয়ার করিস আমাদের সাথে। ভীষণ মিস করবো তোকে!”
ঐশী’র চোখের কার্নিশ বেয়ে দু’ফুটা জল গড়িয়ে পড়লো। জলটুকু মুছে মলিন হেসে বললো,
“আমি ও তোদের ভীষণ ভীষণ মিস করবো! তোরাও ভালো থাকিস। টেনশন করিস না ফোনে যোগাযোগ হবে সবার সাথে।”
বাসের যাএী’রা সবাই এদের দিকে বিস্মিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। এরাও যেন সাক্ষী হয়ে রইলো এদের বন্ধুত্বে’র ভালোবাসার। একে একে সবাই বিদায় দিয়ে নেমে পড়লো বাস থেকে, সবার চোখের কোণে জল। গাড়ি ও চলতে শুরু করছে। গ্যাঞ্জাম পার্টির সবাই আজ ঐশী’দের বাড়িতেই থাকবে। কাল সকালে সবাই বাড়িতে চলে যাবে। যাদের বাড়িতে থাকবে অথচ সেই মানুষটা ই আজ বাড়িতে নেই।
রাফিন ভিতরে ভিতরে ভীষণ টেনশনে আছে। কোথায় যাবে এতো রাতে। নিজেই তো থাকতো হলে। সেখানে তো আর বউ নিয়ে থাকা যায় না। সমস্ত ভাবনা ফিকে যায় যখন তার মায়াবিনী’র মায়া ভরা মুখটার দিকে তাকায়। যেভাবেই হোক, তার প্রিয় মানুষটা যে আজ থেকে তার কাছে থাকবে। ইচ্ছে হলেই চোখ ভরে দেখতে পারবে। এতেই রাফিন ভীষণ খুশী। প্রিয় মানুষটা পাশে থাকলে সব পরিস্থিতি সামলানো যায়। রাফিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছু ক্ষণ ঐশী’র মুখশ্রী’র পানে। মেয়েটার চোখ দু’টো ফুলে গেছে, চোখে মুখে মলিনতা ছেয়ে আছে। রাফিন ঐশী’র একটা হাত জড়িয়ে ধরে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“তোমার ভীষণ কষ্টে হচ্ছে তাই-না মায়াবিনী! প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো! আমি এভাবে তোমাকে আমার কাছে আনতে চাইনি। কিন্তু কি করবো বলো? অনাকাঙ্খিত একটা ঘটনার জন্য আমরা সবাই পরিস্থিতির-সিকার। তুমি কোনো চিন্তা করো না। আল্লাহ’র উপরে ভরসা রেখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ খুব শীগ্রই সবকিছু ঠিক করে দিবেন।”
ঐশী রাফিনের কাঁধে মাথা রেখে মলিন কন্ঠে বললো,
“উঁহু আমার মোটেও কষ্ট হচ্ছে না। যার জীবনে আগলে রাখার জন্য এমন একটা মানুষ আছে। ভরসা করার জন্য একটা মানুষ আছে। দিন শেষে মাথা রাখা জন্য একটা প্রশান্ত বুক আছে। ভালোবাসা জন্য একটা নিদিষ্ট মানুষ আছে। যার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমানো যায়। তার আবার কষ্ট কিসের।”
“রাফিন কিছু বললো না। ঐশী’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঐশী আবার বললো,
“জানেন তো একটা মেয়ে চাইলে সারা বিশ্ব কে জয় করতে পারে। যদি, তার ফ্যামিলি এবং তার প্রিয় মানুষটার সাপোর্ট পায়। বাজে সময় অবিশ্বাস না করে, একটু ভরসা দিয়ে বুকের মধ্যে জায়গা দেয়। আমি তো সব পেয়েছি আমার কোনো কষ্ট বা টেনশন নেই। আমার আপনি থাকলেই চলবে। আপনি সাথে থাকলে অনায়াসে সব কিছু সামলে নিতে পারবো।”
রাফিন মৃদু হেসে বললো,
“আমার অবুঝ বউ’টা একদম বড় হয়ে গিয়েছে। এখন আর কথা বলো না। আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাও নিশ্চয়ই মাথা ব্যথা করছে। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।”
ঐশী কিছু বললো না।সত্যি’ই তার ভীষণ মাথা ব্যথা করছে। চোখ বন্ধ করে মাথা রাখলো রাফিনের কাঁধে। রাফিন খুব যত্ন করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মিনিট দশেক পরই ঘুমিয়ে পড়লো ঐশী। সারাদিন যে ধকল সহ্য করেছে মেয়ে’টা। অবশেষে ভরসার যোগ্য একটা কাঁধ, মাথার উপরে আদুরে হাতের স্পর্শ পেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ঐশী। রাফিন চিন্তিতো হয়ে ভাবছে রাতে কোথায় থাকবে।নিজের জন্য মোটেও চিন্তা হচ্ছে না। হুট করে মনে পড়লো আরাফের কথা। সারাদিনের ঝামেলার জন্য অন্য কারো কথা মাথা’ই ছিলো না তার।ফোনটা বের করে কল দিতেই অপাশ থেকে আরাফ অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলো,
“মনে পড়লো আমার কথা তোর? ফোন দিয়েও তোকে আজকাল পাওয়া যায় না। এজন্যই মানুষ বলে, বিয়ের পরে বন্ধু আর আগের মতো থাকে না।”
রাফিন অসহায় কন্ঠে বললো,
“এভাবে বলছিস কেন? গতকাল রাতেও তো কথা হলো তোর সাথে। শোন আমাকে তোর বাসায় একটা রাত থাকতে দিবি দোস্ত?”
আরাফ ভাবুক হয়ে বললো,
“আমার বাসায় আসতে আজকাল তোর আবার অনুমতি নিতে হবে বাহ্। আরে আগে বল, তুই কোথায় এখন? তুই না বাড়িতে৷ আমার বাসায় আসবি মানে?”
রাফিন সবটা খুলে বললো। সবকিছু শুনে আরাফ বাকরুদ্ধ। রাফিন আবার ও মলিন কন্ঠে বললো,
“এবার বল আমি কি করবো? দোস্ত একটা রাত থাকতে দে আমাদের। প্লিজ না করিস না।”
আরাফ ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বললো,
“এভাবে বলছিস কেন দোস্ত ? আমি তো জবে’র জন্য অফিসে’র কাছে বাসা নিয়েছি।এখানে কোনো মেয়ে নিয়ে ঢুকতে দিবে না। বাড়িওয়ালা তাইলে সোজা বাসা থেকে বের করে দিবে।”
“আচ্ছা সমস্যা নেই। দেখি কি করা যায়। বললো রাফিন”
আরাফ ভরসা দিয়ে বললো,
“তোর কিছু করতে হবে না। আমি থাকতে তোর কোনো চিন্তা নেই দোস্ত। আমি অন্য ব্যাবস্হা করে দিচ্ছি। তুই শুধু গাড়ি থেকে নেমে জাস্ট আমাকে কল দিস। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না দোস্ত। মানুষ চেঞ্জ হবেই! খারাপ সময় আসবেই! দুনিয়া অশান্তি মনে হবেই! তবুও ভেঙে পড়া যাবে না। খারাপ সময়ের মতো ভালো সময় ও আসবে। সব কিছু মেনে নিতে হবে, মানতেই হবে! সব কিছু মেনে নিতে শেখ জীবন ভয়ংকর সুন্দর!’ এখন আমি অফিসে দোস্ত, রাখছি। কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে ফোন দিস।”
রাফিন সস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। আরাফের বলা কথা গুলো মনে হচ্ছে আশার বাণী। খারাপ সময়ে প্রিয়জনের একটু ভরসা পেলেও নিজের দম বন্ধ হওয়া কষ্টটা একটু হলেও কমে।
রাত বারোটা ………….
চলবে………
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ!]
প্রিয় পাঠক!আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই। গল্প আপনাদের কেমন লাগছে? কোথাও কোনো সমস্যা হলে তাও বলবেন। যারা এখনো পেজটি ফলো করোনি অবশ্যই একটা ফলো করে দিন প্লিজ!