ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ৪৪

0
168

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ৪৪

ল্যাম্পপোস্টের নিবিড় আলো ছুয়ে দিচ্ছে ক্লান্ত ভেঙে আসা এক আবেগীময় কিশোরী কে। পিরোজপুর নিজ জেলা থেকে মধ্য-রাতে ঢাকা শহরে আসতে বিকেল গড়িয়ে গিয়েছে। কোথায় যাবে যানা নেই, আদিত্য’কে বারবার বলার পরেও বিশ্বাস করছে না সে, “পালিয়ে এসেছে বাসা থেকে” বাক্যটি নিছক মজা ভেবে উড়িয়ে দিচ্ছে। জান্নাত বাস থেকে নেমে ফুটপাতে’র এক কোলাহল মানুষজনের মধ্যে একটা খালি বেঞ্চের উপরে বসে রইলো তার কাঙ্খিতো পুরুষটি আসার অপেক্ষায়। কিন্তু সে আসছে না, ক্লান্ত দেহ, তার উপরে সারাটাদিন কিছু মুখে দেয়নি, শরীর অচল হয়ে গিয়েছে যেন। তবুও নড়েচড়ে স্থির হয়ে বসে রইলো। মানুষজন আড় চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে, কেউ বা না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে। শহরটা বড্ড বিচিত্রময়, বড্ড আজব এই শহরের মানুষ গুলো! তবুও সে অপেক্ষা করছে তার আদিত্য আসবে’ই এটা ভেবে , কিন্তু সন্ধ্যা’র আধাঁর ঘনিয়ে বেশ অন্ধকার হয়ে গিয়েছে কিন্তু সে আসছে না। এভার বেশ ভয়ে হতে লাগলো জান্নাতে’র , ফোনটা অন করে কাঁপা কাঁপা হাতে আবার কল দিলো আদিত্য কে, আদিত্য বিরক্তি মুখ করে ফোন রিসিভ করলো, জান্নাত ভাঙা কন্ঠে বললো,

“তুমি এখনো আসছো না কেনো আদিত্য? আমার খুব ভয় করছে অন্ধকার হয়ে গিয়েছে চারপাশ। সেই থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

“তুমি কী সত্যি’ই ঢাকা আসছো জানু! আমি তো মনে করছি তুমি ঠাট্টা করছো।”

জান্নাতের কথা শুনে মনে হচ্ছিলো না সে মজা করে। খানিক বিরক্তি নিয়ে আদিত্য “আসছি” বলে ফোন কেটে দিলো।
.
.
আদিত্য কে দেখে জান্নাত যেন, নিবে যাওয়া প্রাণ ফিরে পেলো। বসা থেকে দৌড়ে জাপ্টে ধরলো, চোখ দিয়ে মুক্তর ন্যায় অশ্রু গুলো গড়ি পড়লো। আদিত্য যেন মহা ঝামেলা’য় পড়লো,তা তার চোখে মুখে’র অভয়া বলে দিচ্ছে।জান্নাতের অধর কোণে মিষ্টি হাসি টেনে বললো,

“আমি তোমার কাছে একেবারে চলে এসেছি আদিত্য। বাবা আমার জন্য পাত্র দেখেছে, আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না। চলো আমরা আজ’ই বিয়ে করে নিবো। আমাদের দুজনার ও ছোট্ট একটা সংসার হবে।”

আদিত্যের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, সে জান্নাতকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়ে অবাক হয়ে বললো,

“কিহ্ তুমি পালিয়ে এসেছো একে বারে!”

জান্নাত হাসি মুখে বললো,

“হ্যাঁ এসেছি। তুমি এভাবে বলছো কেনো আদিত্য ? তুমি কি খুশী হওনি? আমি জানি তুমি নিশ্চয়ই অনেক খুশী হয়েছো। আমাকে নিয়ে চলো এখান থেকে। বলেই আদিত্যের হাত ধরলো জান্নাত।”

আদিত্য জান্নাতে’র হাত ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিলো, গম্ভীর হয়ে বললো,

“কোথাও যাচ্ছি না তোমাকে নিয়ে, তুমি এখানে আসবে আমাকে জিজ্ঞেস করে আসেছো? যে মেয়ে বাবা-মা সবাই কে ছেড়ে আমার কাছে এসেছে, কতদিন পড়ে দেখা যাবে আমার থেকে বেটার অপশন পেলে আমাকে ছেড়ে’ই চলে যাবে। যে খান থেকে আসেছো সেখানে চলে যাও। বলেই মুখ ফিরিয়ে নিলো আদিত্য।”

জান্নাতের হাসি মুখটা যেন মুহূর্তে’ই বিষন্নতা গ্রাস করেছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,

“তু-তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না আদিত্য। বুঝেছি বলে আসিনি তাই অভিমান করেছো! কিন্তু কি করবো আদি বাবু! তোমাকে যে আমি ভীষণ ভালোবাসি! অন্য ছেলে’র নাম শুনতে ও সহ্য হয়নি তাই চলে এসেছি। আর হ্যাঁ তোমাকে তো কল করেছিলাম তুমি রিসিভ করোনি, পরে বাসা থেকে বেরনের সময় ফোন অফ করে রেখেছি তাই বলতে পারিনি। স্যরি আদু বাবু! প্লিজ অভিমান করো না! শুধু বিয়েটা হয়ে যাক তারপর বুঝাবো আমার সাথে অভিমান কী ভাবে করো। বলেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আদিত্য’কে।

” আদিত্য দ্রুত সরে দাঁড়ালো, শব্দ করে হেসে বললো,

“হাহাহা! তোর মতো একটা কালো মেয়ে’কে বিয়ে করবে এই আদিত্য ! তুই ভাবলি কি করে? নিজের চেহারা কখনো আয়নায় দেখছিস? তোর সাথে আমার কোনো দিক দিয়ে যায় না। তোর থেকে সুন্দরী কাউকে আমি ডিজার্ভ করি। জেগে জেগে স্বপ্ন না দেখে, বাড়ি গিয়ে বাবা-মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে নে,আমার আশা ছেড়ে দে।”

সামনে থাকা পুরুষ’টিকে জান্নাত যেন চিনতে পারছে না। এটা সেই আদিত্য? যে জান্নাত বলতে পাগল ছিলো। তার পৃথিবী’তে যেন আধার ঘনিয়ে আসছে, দ’ম নিতে যেন ভুলে গিয়েছে সে, চারপাশে’র সব কিছু ঘুরছে, দু’চোখ দিয়ে অশ্রু গুলো গড়িয়ে পড়ছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,

“তু-তুমি এসব কি বলছো আদিত্য? তা-তাহলে দুইটা বছর রিলেশন সব কিছু মিথ্যে ছিলো?”

“হ্যাঁ মিথ্যা ছিলো। তোকে জাস্ট আমার ভালো লাগতো, তাই টাইমপাস করে ছিলাম। আজ থেকে সব কিছু এখানেই শেষ। তুই তোর মতো থাকবি, আমাকে একদম বিরক্ত করবি না। বলেই হাঁটা শুরু করলো আদিত্য। ”

জান্নাত দৌড়ে গিয়ে আদিত্য’র পা জাপ্টে ধরে বসে পড়লো, অসহায় কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বললো,

“আমাকে ছেড়ে যেওনা আদিত্য! আমি আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি! তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। তোমার…..

আর বলতে পারলো না, আদিত্য ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে দিলো। দূর থেকে একজোড়া চোখ একটা মেয়ের মন ভাঙা আর্তনাদ, করুণ দৃশ্য দেখে তার চোখ ভিজে গিয়েছে। একটা মেয়ে কতটা ভালোবাসলে, এতোটা অবহেলা সহ্য করে মানুষটি’কে ভি’ক্ষা চায়। হয়তো চোখে না দেখলে লোকটার বিশ্বাস’ই হতো না, মেয়েটার ভালোবাসা’র যেন সাক্ষী হয়ে রইলো তিনি । অথচ এক সমুদ্র ভালোবাসা পেয়েও পায়ে’র নিচে পি’ষে ফেলে যায়, মেয়েটার গায়ের রঙ কালো বলে। হায়রে পুরুষ!
.
.
হঠাৎ জান্নাতের কান্না থেমে গেলো। না সে একদম কাঁদবে না, এই অশ্রু গুলো যে অনেক দামী, তা কেনো এই বেঈ’মা’ন’দে’র জন্য শেষ করবে। মুহুর্তে’ই উঠে বসলো, আদিত্যের যাওয়ার দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,

“আমি কালো বলে তোমার সাথে আমার যায় না বলে, মাঝ পথে আমাকে ছেড়ে গেলে। দুইটা বছর সম্পর্ক সব মিথ্যা অভিনয় ছিলো। আমি বোকার মতো তোমাকে বিশ্বাস করে ঘর ছেড়ে এসেছি। কিন্তু, তোমার প্রতি একদিন আমার এই মুগ্ধতা আর থাকবে না। এই যে তোমাকে না পাওয়ার হাহাকার আমার দম’টা আটকে যাচ্ছে, আমার ভালো থাকা’টা হঠাৎ থমকে গেলো। আমি একদিন ভালো থাকবো! অনেক অনেক ভালো থাকবো! তোমার দেওয়া কোনো দুঃখ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না! নতুুন করে তোমার মুগ্ধতায়ও আমায় আর আটকাবে না। একদিন তোমার প্র্যাত্যাখান ভেবে চোখের জল ফেলবো না!প্রতিদিন “ভালোবাসি” বলে যে মিথ্যে অভিনয় করছিলে সেসব ভেবে আমার মোটেও আফসোস হবে না! তোমার করা অপমান গুলো সেদিন আর গায়ে মাখবো না! তোমার স্মৃতি হাতড়িয়ে চোখের কোণে জল জমবে না, মুখে না পাওয়ার আক্ষেপের ছাপ থাকবে না। হ্যাঁ তোমাকে কোনো দিন হয়তো ভুলতে পারবো না। ঘৃণা করে হলেও তোমার নামটা হয়তো আমার স্মৃতি’তে রয়ে যাবে! তাতে আমার কিচ্ছু আসবে যাবে না! কিচ্ছু না! একদিন চেনা পথে হেঁটে যেতে যেতে সোডিয়ামের আলোতে কষ্টগুলো ভাসিয়ে দিবো। স্বস্তির নিঃশ্বাসে কোনো একদিন পরিচিত সুরে সুর মিলিয়ে বলবো,
“একদিন দুজনে কত হেঁটেছি চেনা এ পথে! আজ তুমি নেই এন্ড আই ডোন্ট কেয়ার!”
“রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার” বলে একটা কথা আছে। সৃষ্টিকর্তা ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না! যে যাই করুক না কেনো, সময় মতো তার ফল পাবে।” বলেই উল্টো দিকে হাঁটা দিলো জান্নাত। শরীর যেন চলছে না, অবাধ্য চোখ দু’টো যেন থামছেই না। হাঁটছে শুধু কই যাচ্ছে ঠিকানা যানা নেই তার, কিছু’টা দূর যেতেই একটা মাঠ দেখতে পেলো, আকাশে দিকে এক দৃষ্টি’তে তাকিয়ে রইলো।
.
“কোনো এক মাঝ রাতে আদিত্য বলেছিলো, তোমাকে আমার লাগবেই, ভীষণ আপন করে পেতে চাই,তোমার হাত ধরেই কাটাতে চাই বাকি জীবন। সেই রাতে অপরিচিত সুখ, আর স্বস্তিতে চোখ ভিজে গিয়েছিলো মেয়েটির।যেই মেয়েটি নিজেকে মনে করতে লাগলো পৃথিবীর সুখী নারী। সেই সময়েরই এই বিষন্ন সন্ধ্যা’য় ছেলেটি জানিয়ে দিলো, এই হাত আজীবন বয়ে বেড়ানো সম্ভব না! কারণ তোমার সাথে আমার যায় না!
আজ এই সন্ধ্যায় ও মেয়েটির চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার, ছেলেটি চলে যাচ্ছে তার জন্য নয় বরং মানুষ কী ভয়াবহ ভাবে অবিনয় করতে পারে তাই ভেবে..!
পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আকাশ থেকে দৃষ্টি সরালো, পাশের থাকা ব্যক্তির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, দূর থেকে আসা আবছা আলোতে দেখতে পেলো,

“এক ইয়াং ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে। এই লোকটাকে আরো কয়েকবার দেখেছে সে, এমন কী যে বাসে সে এসেছিলো সেখানে ও ছিলো এই লোক। জান্নাতে’র গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কান্নার ফলে, ভাঙা কন্ঠে বললো,

“কে আপনি? কি চাই।”

“আপনাকে। চলুন আপনার ফ্রেন্ডের বাসায় পৌঁছে দেই।”

“আ-আপনি কে? যেই হন এখান থেকে চলে যান।আমাকে একা থাকতে দিন দয়াকরে!”

“উঁহু আর একা থাকতে দিচ্ছি না। এতোটা সময় তো একাই ছিলেন কিন্তু আর নয়। আমাকে ভয় পাবেন না, মনে করুণ আমি আপনার কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী।” বলেই লোকটা জান্নাতের নিকটে যাচ্ছে।”

“জান্নাত ভীষণ ভয় পেলো, অপরিচিত এই লোকটা তাকে কোথায় নিয়ে যাবে, গলা দিয়ে কথা দলা পাকিয়ে আসছে। শরীর কাঁপছে তার,লোকটা হাত ধরার আগেই সেন্সলেস হয়ে পড়লো। ভদ্রলোক দ্রুত এসে জান্নাত’কে ধরে ফেললো,ক্লান্ত দেহখানা নেতিয়ে পড়লো।
.
.
অপরিচিত লোকটা কে দেখে অবাক হলো না কেউ সবাই যেন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো । জান্নাত কে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো ঐশী। শুইয়ে চোখে মুখে জল ছিটিয়ে দিলো। জান্নাত চোখ টিপটপ করে মিললো, বুঝার চেষ্টা করছে সে কোথায়। মাথার উপরে প্রিয় বান্ধুবী’র আদুরে হাতের স্পর্শ পেয়ে নিজের দম আটকানো কান্না গুলো বেরিয়ে আসলো। ঐশী’কে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে দিলো। ঐশী থামালো না কান্না করতে দিলো। জান্নাত কান্নারত অবস্থায় অস্পষ্ট স্বরে বললো,

“আমি ভালোবেসে বাজে ভাবে ঠকে গেছিরে ঐশী। আমাকে ও ভালোবাসেনি, আমি যেটা ভালোবাসা ভেবে ঘর ছেড়েছি তার কাছে এটা ছিলো টাইমপাস মাত্র। বাবা, তোরা ঠিক বলতি ও আমার যোগ্য নয়! আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ওর মিষ্টি মিষ্টি কথায়। মানুষ এতো নিঃখুঁত অভিনয় কী করে করে ঐশী? দুইটা বছরের ভালোবাসা সব সব মিথ্যে নাটক! আমার বুকটায় বড্ড ব্যথা অনুভব হচ্ছে ঐশী! আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।”

জান্নাতের হৃদয় ভাঙা আর্তনাদ শুনে ঐশী কিছু বলতে পারলো না। সেও কাঁদছে নিরবে, তার ও বড্ড কষ্ট হচ্ছে।

চলবে….

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here