হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি #পর্ব_১৪ #জান্নাত_সুলতানা

0
156

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“প্রিয়তা? ”
প্রিয়তা বাগানে যাচ্ছিল। শাড়ী সাদনান পড়িয়ে দিয়েছে।নিজে গোসলে গিয়েছে আর প্রিয়তাকে বলেছে অনুষ্ঠানের জায়গা যেতে সাদনান একটু পর আসবে।হঠাৎ কোনো পুরুষালী কন্ঠে মেয়েটা আকষ্মিকভাবে চমকালো হকচকিয়ে উঠলো। তার পর মনে হলো এই কণ্ঠ কোথাও শুনেছে হ্যাঁ ওর মামাতো ভাই নাদিম এর কণ্ঠ। পিছনে ফিরলো চাইলো
-“আপনি এখনো যাননি নাদিম ভাই?”
বলেই আসে পাশে দৃষ্টি বুলাল কিন্তু কেউ নেই থাকবে কি করে সবাই তো অনুষ্ঠানে বাগানে চলে গেছে মাইশাকেও একটু আগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওকে অবশ্য সারা ডেকে ছিল কিন্তু সাদনান বলেছে “তোরা যা ও রেডি হয়ে আসছে ” মেয়েটার মন খারাপ হয়েছিল। তবে সে সব পাত্তা না দিয়ে স্বামী নামক পুরুষ টার যত্ন করে শাড়ী পড়িয়ে দেওয়া উপভোগ করছিল।
সামনে দাঁড়ানো মানবটা এক দৃষ্টিতে চেয়ে সতেরো বছরের রমনীটার পানে। কি স্নিগ্ধ লাগছে। নাদিম কে কিছু বলতে না দেখে প্রিয়তা আবারও বলল
-“এই দিকে মনে হয় কেউ নেই। আমরা বাগানে যাই। ”

-“তোকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। ”
প্রিয়তা কথাটা বলা হতে না হতেই বলল নাদিম।প্রিয়তা ভ্রুু কুঁচকাল। ক্যান যেনো ওর কাছে এই নাদিম ভাই কে আজ বেশি ভালো লাগছে না। তবে মনের ভাব প্রকাশ করলো না। ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হলেও মুখে মুচকি হাসি রেখে বলল
-“ধন্যবাদ ভাইয়া।আর আপনাকেও সুন্দর লাগছে। ”
প্রিয়তার কথায় নাদিম মুচকি হাসলো বাম হাতটা দিয়ে মাথা পিছনের উপরি ভাগের চুল খামচে ধরলো। তার পর নিচের দিকে তাকিয়ে বলল
-“ধন্যবাদ।”
ব্যাস চলে গেলেও মেইন দরজার দিকে। নাদিম ঠিক বুঝতে পেরেছে প্রিয়তা ওর সঙ্গে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করছে। বুঝবে না যাকে ভালোবাসে তার মনের কথাই যদি না বুঝতে পাড়ে তাহলে কিসের ভালোবাসা হলো? হ্যাঁ, নাদিম এই রমনীটাকে ভালোবাসে। যখন থেকে ভালোবাসা মানি বুঝতে পেরেছে তখন থেকে। আর ভালোবাসার মানুষটার যদি অনুভূতিই না বুঝে। ভালোবাসার মানুষটার মনের কথাই যদি না বুঝে তা হলে তা ভালোবাসা নয় মোহ, আবেগ। কিন্তু নাদিম তো সত্যি ভালোবাসে সেই ছোট্ট থেকে যদিও তখন বুঝেনি তখন এটা ভালোবাসা নাকি মোহ। কিন্তু যখন বুঝতে পাড়লো ঠিক করেছিলো মেয়েটাকে বলবে। আর যখন মাইশার বিয়ের কথা শফিক বলেছিল তখন ভেবেছিলো এখানে আসার পর বলবে।কিন্তু এখানে এসে জানতে পারলো তার ভালোবাসা মানুষটা এখন অন্য কারোর অর্ধাঙ্গিনী। এসব ভাবতে ভাবতে নাদিম রাহানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। এই রাহান ছেলেটা বেশ মিশুক সবার সাথে কেমন ভাব হয়ে যায়। এই যে নাফিজ নাদিম দুই ভাই কি সুন্দর রাহানের সাথে একদম বন্ধুর মতো করে কথা বার্তা বলে।যদিও তাদের বয়সটা তিনজনেরই তিন দেশ। নাদিম রাহানের চেয়ে বড় কিন্তু নাফিজ রাহানের ছোট। কিন্তু তবুও বেশ ভাব হয়েছে তিনজনের।

-“আপনি এখানে কি করছেন? আপনাকে তো আমি গার্ডেনে যেতে বলেছিলাম সারা কাছে।”
প্রিয়তা এখনো বাড়ির ভিতরে দাঁড়িয়ে। সাদনান এক্কেবারে রেডি হয়ে নিচে এসছে।কিন্তু এই মেয়েকে আরো আধঘন্টা আগে রেডি করে দিয়েছে কিন্তু এই মেয়ে এখনো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করছেটা কি? প্রিয়তা এখনো সাদনানের পানে অপলক চেয়ে। আজ দুজন সেম কালার পড়েছে কলা পাতা রং এর।প্রিয়তার শাড়ী কালারেই সাদনান পাঞ্জাবি পড়েছে। দুজনকেই বেশ সুন্দর লাগছে।প্রিয়তা কিছু বলছে না মেয়েটার মুখ দেখে যে কেউ বলতে পারবে সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটার কোনো কথায় এই রমনীর কান অব্দি যায়নি।যাবে কি করে এমন সুদর্শন পুরুষ যদি সামনি রয়।আর যদি হয় সেই পুরুষ নিজের একান্ত কাছের মানুষ ভালোবাসার মানুষ। প্রিয়তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাদনান মুচকি হাসলো। এই মেয়ে এখন সব লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে নিশ্চয়ই। আজ কাল বড্ড বেহায়া পানা দেখায়। সাদনান আরো একটু এগুলো মেয়েটার দিকে। যেটুকুনি দূরত্ব ছিলো সেটাও পূর্ণ করলো। আলতো করে মেয়েটার ডান হাতটা ধরলো। যদি জোরে ধরলে ভেঙ্গে যায়? ব্যাথা পায়?কোনো সন্দেহ নাই হাতের যা অবস্থা। আচ্ছা সব মেয়ের হাত কি এমন হয়? না-কি ওর ছোট্ট পুচকে বউটার হাতটাই এতো তুলতুলে নরম?সাদনানের এসব আজগুবী ভাবনা চিন্তায় নিজেই বিরক্ত হলো।কি সব ভাবছে ও?কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো না আজগুবি ক্যান হবে? এই মেয়েটার সব কিছু নিয়ে ভাবতেই ভালো লাগে ওর। এসব ভেবেই সাদনান শব্দ হীন হাসার প্রচেষ্টা চালালো।তবে প্রিয়তার নজড় এড়ালো না।
-“আপনি হাসলে আপনাকে অনেক সুন্দর দেখায়।”
কথাটা বলে নিজেই নিজের দাঁত ধারা অধর কামরে ধরলো। ইস মনের কথা মুখে চলে এসছে।
-“বাসরটা খুব শীগগির শেষ করেতে হবে।”
বলেই সাদনান সামনের দিকে তাকিয়ে প্রিয়তার হাত ধরে টেনে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। প্রিয়তা ভেবাচেকা খেয়ে চেয়ে রইলো সাদনানের অর্ধ মুখমন্ডলের দিকে।
ও কি বলল আর এই লোক কি বলল।কিছুই বুঝলো না বেচারি।

—————————

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত দুটো ছুঁই ছুঁই করলো।বড়রা অবশ্য অনেক আগেই হলুদ ছোঁয়া দিয়ে চলে এসছে। কিন্তু অল্পবয়স্ক সবাই অনেক রাতে অব্দি হৈ-হুল্লোড় করেছে।
প্রিয়তা তো ঘুমের জন্য ওখান থেকে উঠতেই পারছিলো না। ভাগ ভালো সাদনান ওখানে ছিলো ওর এসব ভালো লাগে না। কিন্তু নিজের পুচকে বউটাকে ফেলে আসতেও পারছিলো না। কত ছেলে আছে আশেপাশের। বলা তো যায় না তার বউকে কে কখন নিয়ে যায়। সেই জনই প্রিয়তার পাশে গাপটি মেরে বসেছিল। এই নিয়ে অবশ্য সবাই কানা কানি করছিল। কিন্তু কেউ সামনে কিছু বলার সাহস পায়নি।।অনুষ্ঠান শেষ যখন সবাই যে যাঁর মতো করে চলে যাচ্ছিল তখন সাদনান তার বউকে ডাকতে গিয়ে দেখলো তার বউ তার কাঁধ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। মাইশা অবশ্য বলেছিল ডেকে দিতে তবে সাদনান কি মনে করে যেনো কোলে তোলে নিয়ে সারাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“বসার ঘরে কে কে আছে দেখ আয়।
-“আচ্ছা। ”
বলেই সারা বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।
মিনিট দুই এর মাথায় ফিরে এসে বল
-“কেউ নেই। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে হয়তো।”
সাদনান আর কিছু না বলে প্রিয়তাকে নিয়ে হাঁটা ধরলো।
এদিকে একজন মানব এক বুক ব্যথা নিয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ে রইলো এই সুন্দরতম ভালোবাসাময় দুইটি মানুষের দিকে। আর সেটা হলো নাদিম। নাফিজ ভাইয়ের দিকে চাইলো। আলতো করে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ভাইকে। নাফিজ সব জানে নাদিমের এই দুই ভাইয়ের মধ্যে অনেক মিল। এরা কখনো কোনো দিন ঝগড়া করেছে কি না এরা নিজেরও হয়তো বলতে পারবে না।
-“ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমনটা কিন্তু নয় ভাইয়া।ভালেবাসা গোপনে সুন্দর। আর তোমার টা নাহয় গোপনেই থাক। ”
ছোট্ট ভাইয়ের কথায় মুচকি হাসলো। নাক টানলো চোখের জল আড়াল করলো।নিজেও ভাইকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো
-“হুম। ”
ছোট্ট করে জবাব দিলো
-“আমি তোমার জন্য একটা পুতুল বউ খুঁজে আনবো।”
ছোট ভাইয়ের এমন কথায় নাদিমের বুক শীতল হলো। এমন ভাই ক’জনের হয়। এতো অল্প বয়সে ক’জন পাড়ে এমন সুন্দর করে সান্তনা দিতে। এসব ভেবেই নাদিমের মুখের হাসিটা চওড়া হলো। তার ভাই সবে ক্লাস নাইনে পড়ে কে বলবে কি সুন্দর করে ভাইয়ের দুঃখ দূর করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

———————–

মিষ্টি রোদের হাতছানি চোখের উপর পরতেই রমনীটা ঘুমের মাঝেও মুখের ভঙ্গিমা পালটে নিলো। ভ্রুুজোড়া কুচকে নিয়েছে। মনে হচ্ছে কোনো বিশেষ কাজে বাঁধা পড়েছে। হ্যাঁ, পড়েছেই তো এই যে এতো সুন্দর সাধের ঘুমটা নষ্ট করতে চাইছে এই খারাপ সূর্য মামা টা।।বেশ কিছু টা সময় পর মনে হলো সূর্য সোনালী বর্ণের রোদ টা ওর উপর আর পরছে না। সামনে দাঁড়িয়ে কেউ রোদ থেকে বিছানায় থাকা রমনীটাকে আড়াল করতে চাইছে। রমনীটার ভ্রু জোড়া সরল হলো। আবার ছোট্ট মিনি কম্বল টা আঁকড়ে ধরে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটা বেশ বিরক্ত হলো। এই মেয়ে মনে হয় আজ আর ঘুম থেকে উঠবে না। সকাল আটটা বাজে। বিয়ে বাড়ি তে কেউ এতোখন ঘুমায় এই পুরষটির হয়তো জানা ছিল না। এই ছোট্ট বউটার কাছ থেকে হয়তো এটাও জানা হয়ে গেলো। কিছু ভেবে পুরুষ টা বাকা হাসলো
-“প্রিয়তা আপনি কি উঠবেন? মাইশা চলে যাচ্ছে। ”
ব্যাস বুদ্ধি কাজে লাগলো ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলে রমনীটা।
-“কই কই?আল্লাহ আমি এতো ঘুমিয়েছি যে আপুর বিয়েটাও দেখতে পারলাম না?কয়টা বাজে?আর আপনি আমায় ডাকেননি ক্যান?”
এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে কথা গুলো বলে কান্না করতে লাগলো প্রিয়তা। সাদনান ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। হায় আল্লাহ এই মেয়েকি সত্যি বোকা? সাদনান কিছু বলল না সেন্টার টেবিলে রাখা ঘড়িটা প্রিয়তার হাতে দিয়ে। ঘড় ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে যেতে বল
-“আধঘন্টার মধ্যে রেডি হবেন। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

—————————–

বিকেল চারটের দিকে বাসায় পার্লার থেকে মেয়ে এসছে তিন জন।সব মেয়েদের সাজবার জন্য পার্লারে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ্জম বেশ করা ভাবে জানিয়েছে কেউ যেনো বাড়ির বাহিরে এক পাও না দে। তিনি বাড়িতে সব ব্যবস্তা করে দিবে। ব্যাস আর কি লাগে সব মেয়েরা অনেক খুশি হয়েছে।

এখন সন্ধা ছয়টা। মাইশাকে রেডি করে এখন বাকি সবাইকে রেডি করছে।প্রিয়তাদের বাড়িটা বেশ বড় বাগানটাও বেশ বড় সব কিছুর আয়োজন ওখানেই করা হয়েছে। একটু পর মাইশাকে নিয়ে যাবার জন্য নিচ থেকে ডাক পরলো। আয়না মাইশাকে নিয়ে গেলো।তার পর আর কি জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় পা রাখার পালা। প্রথমে আয়ান তার পর মাইশার। দুজনের ছয়টি শব্দ মিলে হয়ে গেলো একে অপরের। যদি তাদের মনের মিলন অনেক আগেই হয়েছে। আজ সমাজ সামনেও সম্মানের একটা সম্পর্ক হলো।হাললা একটা জীবনে পা বাড়াল। একটা পবিত্র বন্ধে আবদ্ধ হলো।

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here