হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি #পর্ব_২৪ #জান্নাত_সুলতানা

0
171

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২৪
#জান্নাত_সুলতানা

-“ওনি বলেছিল এক মাসের মধ্যে ফিরে আসবে।কিন্তু আজ এক মাস এর চেয়ে বেশি সময় হলো ওনার ফিরা তো দূরে এক টা ফোন কল অব্দি আমাকে দেয় না সারা।”

সারা কে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদে উঠলো প্রিয়তা।
সারা কি বলে শান্তনা দিবে? কি বলবে? তার ভাই যে সত্যি আজ কয় দিন ধরে তাকেও ফোন দেয় না।
এমনি কি কারোর সাথেই যোগাযোগ করছে না।

-“তুই টেনশন করিস না তো।ভাইয়া হয়তো কাজের জন্য সময় করে উঠতে পারছে না। দেখবি খুব শীগগির ভাইয়া চলে আসবে।
আর তাছাড়া আমাদের পরীক্ষা শুরু হতে তো আর বেশি দিন নেই।
দেখবি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ভাইয়া ঠিক চলে আসবে।”

সারার কথায় প্রিয়তা মনে মনে ভাবে হয়তো কাজের জন্য সময় করে উঠতে পারছে না। কিন্তু পরক্ষণেই এটা ভেবে অভিমান হয়। একটা বার কি কল করে কিছু বলা যায় না?

-“এখন ঘুমিয়ে পর। রাত তো অনেক হলো।”

প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই বলে উঠে সারা।

-“হুম। তুই যা।”

-“আচ্ছা।”

বলে সারা বিছানা হতে নেমে নিজের কক্ষের দিকে চলে গেলো।
প্রিয়তাও দরজা টা আটকে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ে।

——————

রাত তখন তিন টার বেশি সময় বাজে।
প্রিয়তার বড় ফোন টা সশব্দে বেজে উঠে।
প্রিয়তা তখন গভীর ঘুমে।
দুবার রিং হওয়ার পর প্রিয়তা চোখ কচলাতে কচলাতে বালিশের নিচ হাতরে ফোন টা বের করে।
বাহিরের দেশের নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে আসে প্রিয়তার কে হতে পারে? এতো রাতে তাও আবার বিদেশি নাম্বার?
প্রিয়তা এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা কেটে যায়।
প্রিয়তা আর বেশি কিছু ভাবে না ফোন টা যেই না আবার পূর্বের স্থানে রাখতে যাবে তখন আবারও একই নাম্বার থেকে ফোন এলো।
প্রিয়তা ফোন টা রিসিভ করে।
কানে নেয় ফোন টা, অপর প্রান্ত হতে ব্যক্তি টা বাজখাঁই গলার আওয়াজে মেয়ে টার চোখের কোল ভিজে উঠলো জলে।

-“আপনি এতো দি,,,

-“আর একবার যদি কান্নার শব্দ হয় তবে কল টা আমি এখুনি কেটে দেবো।”

ব্যস প্রিয়তা চোখর জল হাতের তালু ধারা মুছে নেয়।
কিন্তু খুশিতে কান্না গুলো যেনো থামতেই চাচ্ছে না আবারও জল গড়ায় চোক্ষুর কার্নিশ হতে।
তবে এবার কোনো শব্দ করে না মেয়ে টা।

সুন্দর করে সাবলীল গলায় প্রশ্ন করে

-“এতো দিন কেন ফোন করেন নি? আর এটা তো বাংলাদেশের নাম্বার নয়।কোথায় আছেন আপনি? কবে বাড়ি আসবেন?”

মেয়েটার এতো এতো প্রশ্নে ওপাশ হতে সাদনান নিঃশব্দে হাসলো।

-“অফিসের কাজে লন্ডন এসছি আপনার সাথে ওই দিন কথা বলার পর। কিন্তু এখানকার কোনো সিম নেই নি।তাই ফোন দিতে পারি নি।এখন এক জনের কাছ থেকে ফোন নিয়ে কল দিলাম।
পরশু দিন সন্ধার ফ্লাইট এ বাংলাদেশ ফিরছি।
আর ফোন দেবো না।
আশা করি আর কান্না কাটি করবেন না।”

-“আপনি কি করে জানলেন আমি কান্না করি?”

অবাক হয়ে প্রশ্ন করে প্রিয়তা।

সাদনান অধর কামরে ধরে। কিছু ভাবে।
পর পর নিজেও প্রশ্ন করে

-“তার মানি আপনি সত্যি কান্না করেন?”

প্রিয়তা ভেবাচেকা খেলো।
তার মানি সাদনান আন্দাজ করে বলেছিল।আর বেচারি নিজে সত্যি বলে দিলো।

-“মোটেও না।পরশু থেকে আমার পরীক্ষা শুরু হবে।”

প্রসঙ্গে পাল্টাতে প্রিয়তা কথা ঘুরায়।
সাদনান বুঝলো প্রিয়তা হয়তো নিজে কে শক্ত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই আর কথা বেশি ঘাঁটে না।
টুকটাক কথা বলে ফোন রাখে।

———————————

-“দু’জন কে-ই বলছি।মন দিয়ে প্রশ্ন পড়বে।তার পর
লেখা শুরু করবে।
বাবা তো যেতে পারবো না।
তোমাদের রাহান দিয়ে আসবে।
পরীক্ষা শেষ হলে অপেক্ষা করবে রাহান আবার নিয়ে আসবে।”

আজ্জম মির্জার কথায়
সারা আর প্রিয়তা দু’জনেই বাধ্য মেয়ের মতো মথা নাড়ে। যার মানে “ঠিক আছে”।
তার পর দু’জনে সালেহা বেগম এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাহিরে এসে দেখলো রাহান দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তা মুচকি হেসে পিছনে সিটে বসে পড়ে।
সারা একটা ভেংচি কেটে দিয়ে সামনে বসলো।
রাহান সারার কান্ড দেখে নিঃশব্দে হেসে বাম হাত ধারা আলগোছে মাথার পিছনের চুল খামচে ধরে।
মেয়ে টা ওর উপর অভিমান করেছে।
আর অভিমান করার কারণ কাল রাতে যখন দুজন ফোনে কথা বলছিল তখন রাহান কথার কথায় বলেছিল সারা যদি ফেল করে তবে রাহান ফেল টুস মেয়ে কে বিয়ে করবে না।
ব্যস সেই থেকে সারা ফোন বন্ধ করছে আর ফোন অন করে নি।
অভিমান হয়েছে মেয়ে টার লোকটা এভাবে বলতে পাড়লো?এই তার ভালোবাসা?
তাই তো আর কথা বলবে না ঠিক করেছে।
কিন্তু কথা না বলে থাকতে পারে কি না এখন সেটা দেখা যাক।

গাড়ি টা এসে কলেজ গেটের কাছে থামাতেই প্রিয়তা ঝটপট নেমে কলেজ এর ভিতর দিকে যেতে লাগলো। কারণ রাস্তায় অনেক মানুষ জন গাড়ি।

তাই কলেজের ভিতর গিয়ে সারার জন্য অপেক্ষা করবে ভাবে। আর তাছাড়া দুটি ভালোবাসার মানুষের একান্ত কিছু কথা থাকতেই পারে।

আর সারা যেই না গাড়ি থেকে নামতে যাবে রাহান অমনি এক টানে মেয়েটাকে নিজের বুকে উপর নিয়ে আসে।
সারা রাহানের এতো টা সন্নিকটে এসে হাঁটবিট দূত
লাফাতে লাগলো।
শরীরের শীর দ্বারা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো।
চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।

রাহান সারার ছোট গোল গাল মুখ খানায় টুপ টাপ কয়েকটা চুমু খেয়ে নিলো।
কপালে নিজের অধর জোড়া ছুঁয়ে দিয়ে মেয়ে টা কে আবার আগের স্থানে বসিয়ে দেয়।

আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো

-“সরি জান।”

সারা তাকালো তো নাই উল্টো বাহিরে দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠলো।
রাহান আগলে নিলো মেয়ে টাকে
অস্থির হয়ে আবারও শুধালো

-“এই জান সরি তো।
আর কখনো এমন বলবো না। প্লিজ কাঁদে না। ”

চোখের পানি মুছে দিয়ে আবারও চুমু খেলো মেয়েটার কপালে।
সারা ততক্ষণে কান্না থামি রাহানের হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে আলতো হাসে।

-“হুম। ”

-“হুম। এখন যা-ও লেট হচ্ছে। ”

-“আচ্ছা। ”

বলে সারা গাড়ি থেকে নেমে গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।
তার পর প্রিয়তার কাছে চলে গেলো।

সারা যাওয়ার পর রাহান নিজের পরিহিত পেন্ট এ-র পকেট হতে নিজের ফোন বেড় করে।
অতঃপর কল লাগায় একটা ব্যক্তি কে।
দুবার কল করার পরেও ফোন টা বন্ধ এলো।

রাহান ফোন টা বিরক্তি হয়ে কেটে দিয়ে গাড়ি টা স্টাট দিলো।
গাড়ি চালাতে চালাতে আবারও সে কাংখিত নাম্বার টা কল দিলো।
কিন্তু এবার কলটা রিং হলো।
কিন্তু ওপাশ হতে কল টা রিসিভ হলো না।
রাহান হতাশ হয়ে যেইনা ফোন টা পাশের সিটে রাখতে যাবে তখনি সশব্দে ফোন টা বেজে উঠে।
রাহান সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা রিসিভ করে প্রশ্ন করলো

-“ভাই আপনি এখন কোথায়? ”

-” দুপুর একটার মধ্যেই আমি কেলেজ পৌঁছে যাবো।”

ওপর পাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো সাদনান।

-“আমি তাহলে সার,,,,

আমতা আমতা করে রাহান কিছু বলতে যাচ্ছিল। তবে সাদনান তার আগেই বলে উঠলো

-“আমার বোন যেনো ঠিক টাইমে বাড়ি পৌঁছে যায়।”

-“জী ভাই।”

সাদনান সব টা শুনলো কি না কে জানে তার আগেই খট করে লাইনটা কেটে দিলো।
রাহান বুকে হাত দিয়ে লম্বা একটা দম নিলো।
তার পর বিরবির করে বলে উঠলো

-“দু ভাই-বোন এক রকম। ”

——————–

-“তুই এখানে দাঁড়া আমি ওই দিক থেকে পানির বোতল নিয়ে আসছি।”

-“আচ্ছা। তাড়াতাড়ি ফিরবি। ”

প্রিয়তা আর কিছু না বলেই একটু সামনের দিকে চলে গেলো।
ঠিক তখুনি রাহান এসে সারার সামনে দাঁড়াল।
সারা চমকে উঠলো।
বুকে থুতু দিয়ে।
মাথা উঁচু করতে। রাহান ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

-“কি হয়েছে রাহান ভাই?এভাবে টানছেন কেন? আর প্রিয়তা পানি আনতে দোকানে গিয়েছে ফিরে এসে আমাকে না দেখলে টেনশন করবে।”

-“ভাবির টেনশন করতে হবে না তোমাকে।
তুমি আমার সাথে চলো জান।”

কথা গুলো বলতে বলতে রাহান সারা কে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ডাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দিলো।

আর এদিকে প্রিয়তা মিনিট পাঁচেক পরে ফিরে আসে। কিন্তু সারা কে দেখতে না পেয়ে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে।

-“ও আবার কোথায় গেলো?ধুর ভালো লাগে না। ”

-“বউ আমি এখানে।”

প্রিয়তা সারা কে খুঁজতে খুঁজতে কেলেজ থেকে একটু দূরে পার্কিং এড়িয়ে চলে এসছে। মূলত ও ভেবেছে রাহান আর সারা যদি এখানে থেকে থাকে।তাই কিন্তু
এখানে তেমন মানুষ জন নেই।
এর মধ্যে সাদনানের কণ্ঠ শোনে প্রিয়তা অবাক হলো।আবার ভয়ও পেলে কারণ এখানে সাদনান কোথা থেকে আসবে হয়তো ও ভুল শুনেছে।
তাই আস্তে করে পিছনে ফিরে।
আর তৎক্ষনাৎ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের ব্যক্তিগত পুরুষ টাকে দেখে মুখে হাসি ফোটে উঠলো।

-“আপনি?আপনি কখনো,,,,

কিন্তু কিছু আর মুখ দিয়ে বেড় করতে পারলো না। খুশিতে মেয়ে টা কেঁদে উঠলো।

সাদনান এগিয়ে এলো কিন্তু আসার আগে গাড়ির দরজা টা খোলে আসতে ভুলে না।

ঝট করে কোলে তোলে নেয় বউ কে। তার পর গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ডাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়।

———————-
-“আমরা এখানে কেন এসছি?”

সাদনান গাড়ি টা এক রিসোর্টের সামনে থামিয়েছে।
এটা দেখে প্রিয়তা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

-“কাল তো পরীক্ষা নেই।
আমরা আজ এখানে থাকবো কাল সকালে বাড়ি ফিরবো সোনা।”

মুচকি হেসে বলে সাদনান।

-“কিন্তু কেন?”

প্রিয়তা আবারও প্রশ্ন করে

-” বাসর করবো তাই।”

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here