#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি[২]
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা
-“শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে, সুইটহার্ট?”
-“না।একটু শুয়ে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।
আপনি যান তো ওই দিকে নিশ্চয়ই আপনাকে সবাই খুঁজচ্ছে।
কত কাজ। আমি একটু পর নিচে আসছি।”
সায়রা মিশান কে ঠেলেঠুলে রুম থেকে বের করে দিলো।
সায়রা এসে আবারও বিছানায় শুয়ে পড়ে।
মিশান সিঁড়ি কোঠায় কাছে গিয়ে হঠাৎ কিছু মনে করার মতো করে দাঁড়িয়ে যায়।
কিছু ভেবে আবারও রুমে ফিরে আসে। রুমে এসে দরজা টা লক করে। সায়রা চোখ বন্ধ করে ছিল। কিন্তু দরজা লক করার শব্দে চোখ খোলে মিশান কে আবারও রুমে দেখে ভ্রু কুঁচকে আসে।
-“আপনি?
কিছু দরকার?”
-“খাবার কেন খাসনি?”
মিশানের এমন সোজাসাপটা প্রশ্নে সায়রা ভয়ে শুকনো একটা ঢুক গিলে।
সায়রা আমতা আমতা করে বলে
-“খে,,,
-“চুপ একদম চুপ।
আর একটা মিথ্যাও না। নিচে চল।”
-“আপনি আমার কথা টা শুনুন।”
-“থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেবো, ইডিয়েট।”
কথা শেষ মিশান সায়রা কে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
তার পর রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা নিচে এসে রান্না ঘরে চলে যায়।
-“ওকে এভাবে টানছিস কেন?”
মাইশা চৌধুরী প্রশ্ন করে। মিশান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
-“মা ও কিছু খায় নি।
তাই তখন রুমে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল। ভাগ্য ভালো আমি তখন রুমে গিয়েছিলাম।”
-“সে কি কথা সায়রা? এটা একদম ঠিক হয় নি।
তুই তো দেখছি মিশান তোর বাবা সবাই কাজে কতটা ব্যস্ত তবুও কেন খাবার টা খাস না।”
মাইশা চৌধুরী কথা বলতে বলতে থালায় খাবার নিয়ে নিলেন।
অতঃপর সেটা মিশানের হাতে দিয়ে তিনি সব কাজের লোকদের নিয়ে রান্না ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। বিয়ে বাড়ি বলে কথা কত মানুষ জন ডাইনিং টেবিল লিভিং রুম সব জায়গায় মানুষ জনে গিজগিজ করছে।
রান্না ঘরে জায়গায় টাই একটু ফাঁকা। মিশান সায়রাকে চুলার পাশে ফাঁকা জায়গা টায় বসিয়ে দিয়ে নিজে বেসিনে হাত ধুয়ে সায়রার মুখে খাবার তুলে দিতে লাগলো।
দুবার খাবার মুখে দেওয়ার পর সায়রার হঠাৎ করে মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠে।
মাথার এক পাশ বাম হাত দ্বারা চেপে ধরতেই মিশান নিজেও হাতা থাকা খাবার থালা পাশে রেখে বউ কে এক হাত দিয়ে ডান পাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে মাইশা চৌধুরী প্রিয়তা মির্জা কে ডেকে উঠে।
তারা সবাই লিভিং রুমে বসে ছিল। তাই মিশানের এমন ডাকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে সবাই।
সাদনান মির্জা এসে মেয়ে কে কোলে তোলে আয়ান কে গাড়ি বের করতে বলে। আয়ানও গাড়ি বের করে মিশান ততক্ষণে নিজের এঁটো হাত ধুয়ে এসে গাড়িতে বসে পড়ে।
অতঃপর সায়রার মাথা টা নিজের কোলে নিয়ে নেয়।আয়ানও গাড়ি স্টাট দিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য চলে।
———
আজ সন্ধ্যা আরভীর গায়ে হলুদ। সোহানরাও বিকেলের দিকে এসে যাবে।
মূলত দু’পক্ষই এক বাড়িতে থেকে বিয়ে হবে। বিয়ের দিন রাতে বর থাকবে আর সব আত্মীয় বিদায় নিবে।
আয়না, রাহাত তাদের নিজেদের বড় মেয়ে কে নিয়ে ওই দিন নিজেদের ফ্ল্যাট থেকে এখানে এসে পড়েছে। সব আত্মীয় চলে এসছে।
বাড়িতে অনেক মেহমান।মানুষ বেশি হলে তো কাজও বেশি হবে।যদিও কেউ নিজের হাতে ধরে কিছু করছে না। তবে কাজের লোকদের তো সব বুঝিয়ে দিয়ে সাথে সাথে থাকা লাগে।
আর এই ফাঁকেই সায়রা নামক মিশানের আহ্লাদী বউ নিজের খাবার নিয়ে বেশ অনিহা করছে।
যা এতো কাজের ফাঁকে কারোরই চোখে পরে না।
সকাল এগারো টার দিকে যখন মিশান নিচের কিছু লাইটিং এর কাজ লোকদের দেখিয়ে দিয়ে উপর নিজের রুমে আসে। রুমে আসার মূল কারণ বউ কে একটু মন ভরে দেখা। সে দিন রাতে যে ভালোবাসা আদান-প্রদান হয়েছে এর পর কাজের চাপে আর তেমন কিছু তো দূর বউয়ের দেখা পাওয়াও হয় না।
এসব ভাবতে ভাবতে যখন রুমে ঢোকে ঠিক তখনি সায়রা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে আসছিল।
তবে মাথা টা হঠাৎ ঘুরে উঠে আর তখনি কেউ এসে নিজের শক্ত চওড়া বুক আগলে নে সায়রার ছোট তুলতুলে দেহখানা।
চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে মিশান কে দেখে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিল সায়রা।
তার পর বেশ অনেক টা সময় বউয়ের কাছে থাকার পর সায়রা আবারও মিশান কে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়ে ছিল। যাতে করে খাবার নিয়ে মিশান কিছু টের না পায়।
কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না মিশান ঠিক ও খাবার খায় নি সেটা ধরে ফেলে।
——————
-“মির্জা সাহেব।
সায়রা মামুনির কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে?”
সাদনান মির্জার পারিবারিক ডক্টর এর কাছে নিয়ে এসছে সায়রা কে।
আর তিনি জানেন না তাই এমন প্রশ্ন।
ডক্টর এর প্রশ্নে সাদনান মির্জা কিছু বলবে তার আগেই মিশান জানিয়ে দেয়
-“আমি ওর হাসবেন্ড।
কি হয়েছে ওর এখনো জ্ঞান ফিরছে না কেন?”
মহিলা ডক্টর মুচকি হাসে মিশানের এমন তড়িৎ গতিতে উত্তর দেওয়া দেখে।
ঠোঁট এলিয়ে হেসে নিজেও উওর করে
-“আয়ান চৌধুরীর ছেলে মিশান চৌধুরী।”
-“হুম।
বছরের বেশি হয় বিয়ে হয়েছে।
ও বিদেশ ছিল। হুট করে হয়ে গিয়েছে তাই কাউ কে আর জানানো হয় নি।”
-“ওর শরীর দূর্বল।
খাবার দিবেন বেশি বেশি।আর যত্ন নিবেন শরীরের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
খাবার যেনো কোনো হেলাফেলা না করে।”
-“আচ্ছা।”
সায়রা বেডে ঘুমি আছে। মিশান কোলে নিয়ে ডক্টর কেবিন হতে বেরিয়ে আসে।
সায়রা কে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। তাই ও ঘুমিয়ে আছে।
মিশান হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে এলে আয়ান চৌধুরীও আগে আগে এসে গাড়ি দরজা খুলে দেয়।
মিশান মুচকি হাসে।অতঃপর বউকে সিটে বসিয়ে নিজে বসে বউয়ের মাথা নিজের কাঁধে রাখে।
এবার আর সাদনান মির্জা পেছনে বসে না ভায়রা ভাইয়ের সাথে সামনে বসে পড়ে। মেয়ে কে তিনি প্রচুর পরিমাণ ভালোবাসে। আর তিনি সব সময় চাইতেন তার এই ছন্নছাড়া মেকে ওনার নিজের থেকেও তার মেয়ে কে কেউ ভালোবাসুক আর তার হাতে তোলে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত হতে চাইতেন। আর আজ তিনি নিশ্চিন্ত। পেড়েছেন তিনি মেয়ে কে যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিতে।
——-
মিশান সায়রা কে সাদনান প্রিয়তার রুমে বিছানা শুয়ে দিয়ে নিজে রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সবাই ভেবেছে সুখবর আসবে হয়তো কিন্তু উল্টো বেচারি অসুস্থ তাই সবার মন খারাপ।বিয়ে বাড়ির কেমন থমথমে হয়ে আছে।
সাদনান মির্জা কিছুখন পর রুমে এলো ততক্ষণে সায়রা জেগে গিয়েছে আর সবার সাথে টুকটাক কথা বলছে।
-“চলো সবাই যার যার কাজে যাও।
আর ওকে রেস্ট করতে দেও।”
সবাই চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো।
সাদনান মির্জা মেয়ের কাছে গিয়ে পাশে বসে মাথা হাত বুলিয়ে বেশ আদুরে কণ্ঠে মেয়ে কে বেশ অনেক টা সময় নিয়ে বোঝালো যাতে খাবার ঠিক মতো খায় আর শরীরের যত্ন করে।
এভাবে থাকলে তো আর হবে না। এই যে আজ এমন একটা দিনেও তার জন্য সবাই কত টা চিন্তিত।
এসব কতক্ষণ বোঝাল।
সায়রাও বাবা কে সম্মতি দিলো সে আর কোনো কিছু হেলাফেলা করবে না।
সাদনান মির্জা মেয়ে কে বুঝিয়ে দিয়ে কপালে চুমু একেঁ ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
আর ঠিক তখনি মিশান খাবার থালা হতে মিশান রুমে ঢোকে।
সাদনান তাকায় মিশানের দিকে মিশান চোখ দিয়ে ইশারায় সাদনান কে আশ্বাস দেয়।
সাদনান মুচকি হেসে চলে যায়।মিশান নিজও খাবারের থালা হাতে রুমে ঢুকে।
সায়রা কে শুয়া থেকে তোলে বসিয়ে ওয়াশ রুম থেকে তোয়ালে ভিজিয়ে আনে সাথে মগে করে পানি।
তার পর সুন্দর করে বউদের শরীর মুছিয়া দেয়।
অতঃপর খাবার খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দেয়।কিন্তু একটা কথাও বলে না। সায়রা ভয়ে কিছু বলছে না। এটা যে ঝড় আসার পূর্বাভাস এটা বেশ বুঝতে পারছে।
#চলবে…..
[আচ্ছা আমার একটা “প্রশ্ন”। আমি কি গল্প দিতে বেশি দেড়ি করি? সবাই কেন এমন বলে? অনেক খারাপ লাগে এসব দেখলে। আমি তো রোজ এক পর্ব করে দেই। তবুও অনেকে কটু কথা বলে😞।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]