#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৫
জাওয়াদ জামী জামী
” তুমি নাকি কাল ঢাকা যাচ্ছ? ” নিজের রুমের জানালার পাশ থেকে আসা আওয়াজ পেয়ে রিফাত মোটেও অবাক হলোনা। ও অনেকক্ষণ থেকেই মেয়েটাকে আশা করছিল। তবুও মেয়েটাকে ধমক দেয়ার সুযোগ ছাড়তে চাইলনা।
” তুই এত রাতে বাহিরে কেন? ”
” তাহলে দরজা খুলে দাও, ভেতরে আসি। ”
” বাড়িতে যা। এত রাতে আমার রুমে আসতে হবেনা। ”
” উঁহু। এখন কোথাও যাবোনা। তোমার সাথে কথা বলেই তবে যাব। ” মেয়েটা নাছোড়বান্দা।
” আমি আসছি। বাগানে গিয়ে অপেক্ষা কর। ” রিফাত হাতের বই টেবিলে রেখে খাট থেকে নামল।
” এই মেয়ে, তুই হুটহাট এমন রাত-বিরেতে বাইরে আসিস কেন? বাড়িতে সবাই জানলে কি হবে বুঝিসনা? ” রিফাত বাগানে এসেই মেয়েটাকে ধমক দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু সেই মেয়েটা মোটেও ভীতু নয়।
” বাড়ির সবাই জানলে আমার জন্য সুবিধা হবে। আব্বু-আম্মুকে সরাসরি বলে দেব, তোমার বউ হতে চাই। তোমাকে ছাড়া এক একটা দিন আমার অসহনীয় কাটে। তোমার ভালোবাসার রঙে নিজেকে রাঙাতে চাই। ”
” লজ্জা করবেনা তোর? ”
” মোটেওনা। সত্যি কথা বলতে আবার লজ্জা কি! ”
” সত্যবাদী নারী, আপনাকে সত্য কথা কষ্ট করে বলতে হবেনা। সময় হলে আমিই সত্যিটা সবাইকে জানাব। আর ছয়মাস অপেক্ষা কর। এরপর থেকে তোকে রাত-বিরেতে কষ্ট করে বাহিরে আসতে হবেনা। আমার ঘরের রানী হয়ে থাকবি। ”
” শোন, তোমার গাধী বোনের জন্য দুই সেট থ্রিপিস নিয়ে এসো। আর কি কি লাগবে সেটা তুমি শুনে নিও। সে এমনিতেই তোমাকে বলবেনা তার কি লাগবে। ”
” তোর জন্য কি নিয়ে আসব? ”
” তুমি আসলেই হবে। ”
মেয়েটার কথা শেষ হতেই রিফাত ওকে এক হ্যাঁচকায় নিজের কাছে টেনে নেয়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল বুকের ভেতর।
” তিয়াসা, তুই আমার বোনটাকে এত ভালোবাসিস কেন বলতো? ”
” ও শুধু তোমারই বোন নয়, ও আমারও বোন। আর ভবিষ্যতে ননদী হবে। সেজন্যই বোধহয়। ”
” আমি যে কয়দিন না আসব, ওর খেয়াল রাখবি। রাতে ওকে তোর কাছে নিয়ে ঘুমাবি। আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারব। ”
” তুমি ওর চিন্তা না করে নিজের দিকে নজর দাও। আমি আছি ওর জন্য। ”
” এবার বাড়িতে যা। অনেক সময় হয়েছে বাহিরে এসেছিস। ” রিফাত ছোট্ট করে তিয়াসার কপালে চুমু দিয়ে বলল।
” এতটুকুই? ”
” অনেক কিছুই হবে, তবে সেটা বিয়ের পর। তুই আগে ভেতরে যা, তারপর আমি যাব। ”
তিয়াসা হেসে এদিকওদিক তাকিয়ে গোলাঘরের পাশের দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকল। ওকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে রিফাতও পা বাড়ায় বাড়ির দিকে।
ফজরের নামাজ আদায় করে আশফি রুটি বানাতে শুরু করল। ওর সাথে এসে হাত লাগায় তিয়াসা। সকাল সাড়ে ছয়টার বাসে রিফাত ঢাকা যাবে।
ছয়টার কিছু আগেই নিজের বাইক নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় রিফাত।
সকাল এগারোটায় বাসায় ঢুকতেই আতিক মির্জার মুখোমুখি হয় পুলক। ও বাবাকে পাশ কাটিয়ে যেতেই আতিক মির্জার ডাকে থেমে যায়।
” সারা রাত কোথায় ছিলে? আমরা দু’জন মানুষ তোমার চিন্তায় সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি , সেই সম্পর্কে কোন ধারনা তোমার আছে? কম করেও হাজারবার তোমাকে ফোন দিয়েছি, কিন্তু প্রতিবারই সুইচড অফ পেয়েছি। কোথায় ছিলে? ” আতিক মির্জা আজ সত্যি রেগে গেছেন।
” একটু ব্যস্ত ছিলাম, আব্বু। ব্যাটারিতে চার্য ছিলনা, তাই তোমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। ”
” উল্টাপাল্টা বুঝ আমাকে দিতে এসোনা। পাওয়ার ব্যাংক তোমার কাছে সব সময়ই থাকে সেটা আমি ভালো করেই জানি। শফিক কোথায়? কি করেছ ওর সাথে? ”
” ওর যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে। ” পুলক ওপরে যেতে চাইলেই আবারও বাঁধা দিলেন আতিক মির্জা।
” আমি সেটাই জানতে চাচ্ছি। কোথায় সে? ”
” উফ্ আব্বু, তুমি পুলিশের মত জেরা করছ কেন? ও এখনও বেঁচে আছে। ইমদাদুলের বিষ দাঁত ভাঙতে চাই আমি। তাই চুনোপুঁটি মে’রে হাত নষ্ট করবনা। ”
” আমার কথা শোন বেটা, তুমি ওকে ছেড়ে দাও। আমি চাইনা আমার ছেলে সমাজের বুকে সন্ত্রাসী বলে চিহ্নিত হোক। ” কাতর শোনাল আতিক মির্জার গলা।
” সরি আব্বু, তোমার কথা রাখতে পারছিনা। ইমদাদুল তোমার দিকে হাত বাড়িয়েছে। তোমাকে সরিয়ে দিতে চায় সে। আর আমি একজন সন্তান হয়ে বাবার কোন ক্ষতি হতে দেবনা। তোমার রক্ষা কবজ আমাকেই হতে হবে। ”
” তুমি এমন কিছুই করবেনা যেটা করলে আমার সম্মানহানি হবে। সমাজে আমাদের হেয় হতে হবে। শফিককে ছেড়ে দিবে আজকেই। ” কঠোর গলায় বললেন আতিক মির্জা।
” বাহ্ আব্বু, বাহ্। যেখানে তোমার জীবন নিয়ে টানটানি, সেখানে আমি ছেলে হয়ে চুপচাপ সব দেখে যাব? ভদ্র ছেলে সেজে সমাজের মানুষকে দেখিয়ে যাব, বাবাকে কেউ মারতে পাঠিয়েছে জেনেও ছেলে হয়ে আমি এর প্রতিবাদ বা প্রতিশোধ কিছুই নিইনা ! তুমি একবারও ভেবে দেখেছ, তোমার কিছু হলে আম্মুর কি হবে? পুস্পিতার কি হবে? ওর পথচলা সবেমাত্র শুরু হতে চলেছে। ও জীবনের লক্ষ অর্জন করবে ঠিকই কিন্তু সেই সুখের দিনে বাবাকে পাশে পাবেনা, এটাই তুমি চাও? অনেক আগেই তোমাকে বলেছিলাম, রাজনীতি করোনা। কিন্তু তুমি শোনোনি। আজ যখন তোমার ওপর হামলা করতে চাইছে কেউ, তখন তোমাকে প্রকেক্ট করা আমার অন্যায় হয়ে গেছে? আমি ইমদাদুলকে ছেড়ে দেবনা। তোমার না হয নিজের জীবনের প্রতি মায়া নেই। কিন্তু আমি আমার আব্বুকে ভালোবাসি। আমার আম্মুর জন্য, পুস্পিতার জন্য তোমাকে বাঁচতেই হবে। ” পুলক আর দাঁড়ায়না। সোজা নিজের রুমে চলে যায়।
আতিক মির্জা দুঃখী দুঃখী চোখে তাকিয়ে থাকলেন গমনরত ছেলের দিকে।
প্রথম ক্লাস শেষ করে আশফি, তিয়াসা আর ওদের দু’জন বন্ধু ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তিয়াসা চুপচাপ ওদের কথা শুনছে। ওর মন ভিষণই খারাপ। আগামী সাতদিন রিফাত ঢাকা থাকবে। এই সাতদিন রিফাতকে না দেখে ও থাকবে কিভাবে সেটাই বুঝতে পারছেনা।
” মৃদুল, আমাদের সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষার আর দেরি নেই। তুইতো ভালো ছাত্র, তাই চিন্তা করছিসনা। কিন্তু আমি কি করব সেটা ভেবেই ঘুম হারাম হয়ে গেছে। রেজাল্ট খারাপ হলে ভাইয়া কষ্ট পাবে। ” আশফি সত্যিই ওর পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত।
” আরে এত চিন্তা করিসনা। আমরা আছিতো। আমি সব সাবজেক্টের নোট তোকে দেব। সাজেশনও জোগাড় করব কিছুদিনের মধ্যেই। তুই শুধু মনযোগ দিয়ে পড়িস তাহলেই হবে। আর পরীক্ষার হলেও তোকে সাহায্য করব চিন্তা করিসনা।” মৃদুল জানে আশফিকে বাড়িতে কত কিছু সহ্য করে পড়াশোনা করতে হয়। তাই বরাবরই ও আশফিকে সাহায্য করে।
মৃদুলের কথায় আশফি কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয়।
” তিয়ু, তুই চুপচাপ আছিস কেন, বইন? তোর কি শরীর আবারও খারাপ লাগছে? ”
আশফির কথায় চমকে উঠল তিয়াসা।
” তোদের কথা শুনছি, তাই চুপচাপ আছি। আরও একঘন্টা পর দ্বিতীয় ক্লাস। এতক্ষণ এখানেই বসে থাকবি? নাকি ক্যান্টিনে গিয়ে বসবি? ”
” এখানেই বসি। ক্যান্টিনে বেশি চেঁচামেচি হয়। এছাড়া গরমও বেশি। তারচেয়ে এখানে গাছের নিচে বসাই আরামের। ”
” ভাবী, এই নিন ঠান্ডা পানি। আর এখানে আপনাদের সবার জন্য বার্গার আছে। ” ওদের কথার মাঝেই একটা ছেলে এসে কয়েকটা প্যাকেট এগিয়ে দিল আসফির দিকে। ছেলেটার এমন কাণ্ডে রেগে গেলো আশফি। ও ভুলে গেল তিয়াসা ওকে কিছু বলতে নিষেধ করেছিল।
” আমি কি আপনার কাছ থেকে পানি কিংবা বার্গার চেয়েছি? আমাদের কলেজে পানির অভাব নেই। আর ক্যান্টিনে বার্গারও আছে।আমরা চাইলেই সেখান থেকে কিনে খেতে পারি।নিয়ে যান আপনার খাবার। আর ভবিষ্যতে আমার আশেপাশে দেখলে, আমাকে ভাবী ডাকলে আপমান মাড়িতে আর কোন দাঁত থাকবেনা। ”
আশফির ধমক শুনে ছেলেটার মুখ শুকিয়ে গেছে। ওর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতেও ভয় লাগছে, আবার সে যেতেও চাইছেনা। ও যদি এসব নিয়ে ফিরে যায় আর কথাটা ওর ভাইয়ের কানে যায়, তবে ওর কপালে দুঃখ আছে। দোটানায় পরে ছেলেটা নিজের চুল নিজেই টানছে।
” প্লিজ ভাবী, এগুলো নিন। আপনি এগুলো না নিলে ভাই আমার দাঁত খুলে ফেলবে। ”
” এগুলো আপনার ভাইকে দিয়ে বলবেন, এসব তার বেশি করে খাওয়া দরকার। একটা মেয়েকে পথেঘাটে বিরক্ত করা যে অন্যায় সেটা তার মাথায় এখনো ঢোকেনি। এগুলো খেলে যদি তার বুদ্ধি বাড়ে। ”
তিয়াসা মাথায় হাত দিয়ে আশফির দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার যে কবে বুদ্ধি হবে, সেই চিন্তাই ও সব সময় করে।
এদিকে আশফির ধমকে ছেলেটা সুড়সুড় করে সেখান থেকে কেটে পরল।
কালো বাইক ঝড়ের গতিতে এসে থামল শাহেদের সামনে। বাইক থেকে নেমে বামহাতে চুলে ঠিক করল পুলক মির্জা। সানগ্লাস খুলে টি-শার্টের গলায় ঝুলিয়ে রাখল। ওর দৃষ্টি কলেজের দিকে।
” ভাই, আশিক খাবার নিয়ে গেছিল কিন্তু ভাবী সেগুলো নেয়নি। ” শাহেদ মৃদু গলায় বলল।
” চল ভেতরে যাই। আশিক, সাকিব, রিকো তোরা এখানেই থাক। ” আশিকের হাত থেকে প্যাকেটগুলো নিয়ে পুলক ততক্ষণে হাঁটতে শুরু করেছে। ওর সাথে তাল মেলাতে শাহেদ দৌড় দিল।
কলেজে ঢুকতেই বামে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আশফিদের বসে থাকতে দেখল ওরা। এবং সেদিকেই হাঁটা ধরল।
” এক্সকিউজ মি, ম্যাম। বসতে পারি এখানে? ” অপরিচিত কারও গলা পেয়ে সবাই একযোগে ঘুরে তাকায়।
পুলক মির্জাকে এখানে দেখে আশফি তিয়াসা একে অপরের দিকে চোরা চোখে তাকায়।
পুলক মির্জা কারও অনুমতির অপেক্ষা না করেই আশফির পাশে বসে পরল। শাহেদকেও ইশারা করল বসতে। শাহেদ ফাঁকা জায়গা দেখে বসল।
” আমি পুলক মির্জা। ইনাদের দু’জনকেই আমি চিনি। এরা কাজিন প্লাস ফ্রেন্ড। কিন্তু আপনাদের পরিচয়? ” মৃদুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল পুলক।
” আমি মৃদুল আর ও ইশিতা। আমরা ওদের ফ্রেন্ড। একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি। ” মৃদুল ফাঁকা ঢোক গিলে বলল।
” গুড। আপনাদের জন্য সামান্য কিছু খাবার পাঠিয়েছিলাম। বোধহয় এখনো ঠান্ডা হয়ে যায়নি। চাইলে খেতে পারেন। ” পুলক আশফির দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু খাবারের প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়েছে মৃদুলের দিকে।
মৃদুল ভয়ে ভয়ে খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে আশফির দিকে তাকায়।
” আমরা বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছি। মৃদুল তুই কি না খেয়ে এসেছিস? তাহলে আগেই বলতিস। ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে তোকে গাণ্ডেপিণ্ডে গেলাতাম। তাহলে অন্তত এখন তোকে ত্রানের খাবার নিতে হতোনা। ”
আশফির কথা শুনে মৃদুলের কলিজা লাফ দিয়ে মুখের ভেতর চলে এসেছে। বেচারা মনে মনে ভাবছে, তিয়াসা এমনিতেই ওকে গাধী বলে ডাকেনা। কিন্তু পুলক আশফির কথায় একটুও বিচলিত হলোনা। বরং ও হেসে তাকালো আশফির দিকে।
” ম্যাম, এগুলো আপনার শ্বশুড়ের টাকায় কেনা নয়। এগুলো আপনার দাদাশ্বশুরের টাকায় কেনা। তাই এগুলো নিঃসংকোচে খেতে পারেন। বউয়ের আত্মীয়-বন্ধুদের ত্রান সামগ্রী খাওয়ানোর মত পাপ কাজ পুলক মির্জা করবেনা কখনোই। ”
” আসফি, দোস্ত, রাগ করিসনা। একটু খেয়েই দেখি। ভাইয়া কষ্ট করে আমাদের জন্য এনেছে। তাকে কষ্ট দিই কিভাবে বল? ” মৃদুল বিপদে পরেছে। ও পুলক মির্জাকে ভালো করেই জানে। তাকে চটানোর মত বোকা নয় মৃদুল।
” তোর ভাইয়ার ত্রান সামগ্রী তুই বেশি করে গিল। পারলে তোর নেতা ভাইয়াকেও গেলা। সাথে এই চামচাকেও গেলাতে পারিস। ইশিতা, তিয়াসা তোরা কি যাবি আমার সাথে? ” কারও উত্তরের অপেক্ষা না করেই আশফি ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়।
পুলক তাকিয়ে থাকল আশফির দিকে।
” ভাইয়া, একটা কথা বলি, কিছু মনে করবেননন? ” তিয়াসা হালকা গলায় বলল।
” বল। ”
” আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেননা। আসলে ওর জীবন আর পাঁচটা মেয়েদের মত নয়। এই যে সবাই ওকে যেভাবে ভাবী বলে ডাকে, এতে ওর সমস্যা বাড়বে বৈ কমবেনা। আপনি প্লিজ সবাইকে এটা বন্ধ করতে বলুন। ও অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আজকের দিনে এসে পৌঁছেছে। ও বোকা এটা আমরা সবাই জানি। কথা ঠিকঠাক গুছিয়ে বলতে পারেনা, হুটহাট রেগে যায়। ওর মনের ভেতর যে ভয় সব সময়ই বাসা বেঁধে থাকে সেটাকে ঢাকতেই ও এমন আচরণ করে। ওর জীবনে না পাওয়ার তালিকা বেশ লম্বা। তাই ও সব সময়ই ছেলেদের থেকে দূরে থেকেছে। কোন সম্পর্কে জড়ায়নি। আপনি….। ” কথা শেষ করতে পারলনা তিয়াসা। পুলক হাতের ইশারায় ওকে থামিয়ে দিয়েছে।
” ওর না পাওয়ার তালিকা পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার সেই তালিকায় শুধু প্রাপ্তি যোগ হবে। না পাওয়ার ভয়ে যে মেয়ে এতদিন নিজেকে আড়ালে রেখেছে, এবার প্রাপ্তিতেই সে নিজেকে প্রকাশ করবে। আর তার প্রথম প্রাপ্তি হবে আমার ভালোবাসা। আজ সে আমাকে দেখে রাগ করলেও, এমন একদিন আসবে যেদিন আমার বিরহে সে নিজেকে নিঃস্ব ভাববে। আর সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়। ”
পুলক মির্জার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেছে। যাকে শহরের প্রতিটি মানুষ বর্বর হিসেবে চেনে আজ সেই মানুষের মুখের এহেন কথায় বাকরুদ্ধ সবাই।
চলবে…