#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি
#পর্বঃ০৭
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
শুধু মাত্র প্রাপ্তমনষ্ক ও মুক্তমনাদের জন্য।
গল্পের হিরো কোন মিস্টার পার্ফেক্ট নয়, সে রেড ফ্ল্যাগ।
একটানা সাতদিন তীব্র জ্বরের দাপদা’হ আর সর্দি কাশির মতো বিদঘু’টে অসু’স্থতায় ভুগে তবেই সেদিন সারাবেলা বাইরে থাকার পাঠ চোকালো অরু।
এখন জ্বর নেই মোটেই, গত কয়েকদিনের থেকে আজ শরীরটাও বেশ হালকা লাগছে, তবে খুসখুসে কাশিটা যেন পিছুই ছাড়ছে না, দিনের বেলা যেমন তেমন রয়ে সয়ে হয়।কিন্তু রাত হলে যেন, কাশির চৌদ্দ গোষ্ঠী এসে ওর ঘুম হারাম করে দেয়। স্বাধে কি আর অরু এটাকে বিদঘু’টে রো’গ বলে?
আজ মনে হচ্ছে একফালি রোদ উঠেছে পুর্বাকাশে, অরু উঠে গিয়ে জানালার পর্দা সমেত কাঁচ সরিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বরফ শীতল ঠান্ডা হাওয়া নাক চি’ড়ে ভেতরে প্রবেশ করলো ওর। রোদের তাপ যতটা মনে হচ্ছিলো ততটাও গাড়ো না। মুখ ভার করে আবারও জানালার কাঁচ টেনে দিলো অরু, মনে মনে ভাবলো,
—এই ঠান্ডা বাতাস লেগে যদি আবারও জ্বরটা ফিরে আসে তাহলে আপা নির্ঘাত মে’রে আলুরদম বানিয়ে দেবে।
তবে পর্দাটা আর টানলো না।রুমের কোন থেকে একটা বারস্টুল টেনে নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে পরলো জানালার মুখোমুখি।
প্রকৃতির আবহমান উত্থান পতন দেখতে দেখতে যখন ভাবলেশহীন হয়ে পরে অষ্টাদশীর উদাসীন মন।
তখনই রুমের বাইরে হাতের আঙুল দিয়ে দরজায় টকটক আওয়াজ তুলে কড়া নারে,অষ্টাদশীর মনে গ্রীক গড খ্যাতি প্রাপ্ত সুদর্শন যুবক।
অরু পেছনে ঘুরলো তৎক্ষনাৎ, দেখলো, পুরো ফর্মাল ড্রেসআপে স্ব পকেটে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে ক্রীতিক। চুল গুলোও আজ এলোমেলো নয়,বরং হেয়ারজেল দিয়ে পরিপাটি করা। সফেদ শার্টের উপর নেভি’ব্লু কোটি আর গ্রে রঙের রিস্ট ওয়াচে তাকে অসম্ভব মানিয়েছে।
অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়,প্রথম দুটো’দিন বাড়িতে সারাক্ষন গেইম খেলে কাটালেও, গত একসপ্তাহ ধরেই প্রতিদিন রেডি হয়ে কোথাও যায় ক্রীতিক। অরু জানেনা ক্রীতিক কোথায় যায়, আর জানতেও চায়না। কারন অরুর চোখে ক্রীতিক একজন নি’র্দয় মানব। কতটা অ’মানুষ হলে, একজনকে এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায়
ঘর থেকে বের করে দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারে মানুষ? ভেবে পায়না অরু, আর না ক্রীতিকের কাছে এর কোন জবাব আছে। এই লোক বেপরোয়া স্বভাবের জানতো অরু, তাই বলে এতোটা?? তাও বিনা কারনে।এখনো সেসব কথা ভাবলে মাথাটা জল’ন্ত লাভায় টগবগ করে ওঠে অরুর।
দ্বিতীয় বারের মতো ক্রীতিকের দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজ পেয়ে সম্মোহন ফিরে পেলো অরু। তবে কোন কথা না বলে শুধু জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ক্রীতিকের দিকে।
জবাবে, নিজ পকেটে হাত গুঁজে রেখে একটানা কয়েক মিনিট নিস্প্রভ তাকিয়ে রইলো ক্রীতিকও। ক্রীতিকের চোখ নিস্প্রান তবে তাকালে মনে হয় কথাদের রাজ্য,এ চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না, অরুও পারলো না, চোখ নামিয়ে সংশয় বোধ করলো, তারপর বাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললো
—কিছু বলবেন??
–না।
সশব্দে কথাটা বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে গেলো ক্রীতিক।
অজ্ঞাত অরু কিছু না বুঝে,সেদিকেই তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বললো,
—এই লোকটা এমন কেন??ভারী অদ্ভুত।
*****************************************
–অবসেশন!
—মানে ঘোর??
—হ্যা ওটাই, তুই আমার প্রতি অবসেসট অর্নব আর কিছু নয়, অযথা নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করিস না। আমার জীবনটা পদ্ম পাতার জলের মতোই আজ আছি কাল নেই, দেখা গেলো নিজ বাবার হাতেই…
বাক্যটুকু আর শেষ করতে পারলো না এলিসা, তার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে ক’ড়া গলায় শা’সিয়ে উঠলো অর্নব।
— চুপ করবি এলিসা,এই এক বাসি গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে আর কতোদিন দুরে সরিয়ে রাখবি আমাকে??
— যেদিন নিজ চোখে দেখবি, সেদিন বুঝবি আমি কোনো বাসি কিংবা বেহুদা কথা বলছি না।
— যেদিন দেখবো সেদিন তুই একা থাকবি না, আমরা তিনজনই তোর সাথেই থাকবো।নিজেকে এতোটা হেল্পলেস ভাবার কিছুই নেই।
— আমার জন্য তোরা কেন বি’পদে পড়তে যাবি?
অর্নব শীতল কন্ঠে বললো,
— তুই আর আমরা কি আলাদা বল??
এলিসা জবাব দেয়না, এই অর্নবটাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে হয়রান ও নিজেই। কাজের কথা বলতে গেলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রেম টপিকে চলে আসে,আশ্চর্য।
কিন্তু অর্নবই বা কি করবে, ভালোবাসাতো আর পরিস্থিতি বুঝতে চায়না।আর না মানতে চায় কোনো বাঁধা। নইলে এলিসার মতো নাম করা পকার প্লেয়ার কেই কেন ভালোবাসতে গেলো ও, দুনিয়াতে আর কি কোনো ভালো মেয়ে ছিলোনা??
একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে এলিসা শুধায়,
— এখন কোথায় আছিস??
— গাড়িতে, আজকেই ইউ এস এ ফিরলাম, এর মধ্যে ক্রীতিক আবার কারও ডিটেইলস চাচ্ছে ওটা বের করে দিয়ে এখন বাসায় যাচ্ছি। তোদের জন্য আমার ডিটেকটিভ এজেন্সির জবটা আর বৈধ থাকলো না।
—দ্য গ্রেট হ্যা’কার অর্নব সায়ন্ত যদি বেস্ট ফ্রেন্ড হয়, তবে “ফ্রেন্ড উইথ বেনিফিট “কে না চায় বল?
অর্নব উচ্ছ্বাসিত গলায় বললো,
— চলনা, আজ সিনেমা হলে গিয়ে “ফ্রেন্ড উইথ বেনিফিট “মুভিটা দেখে আসি, শুধু তুই আর আমি, হেব্বি রোমান্টিক মুভি আমি দশবারেরও বেশি দেখেছি।
–তুই একটা ন’ষ্ট।
বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিলো এলিসা। এই ছেলের সারাক্ষণ মাখোমাখো ভাব।কি করে এতো নাম করা হ্যা’কা’র হলো ও?
তৎক্ষনাৎ ভাবনার সুতোয় টান পরলো ওর, অযাচিত মন বললো,
— ওয়েট, ক্রীতিক কার ডিটেইলস চাইলো অর্নবের কাছে? নতুন করে আবার কার সাথে ঝা’মেলা পাঁকাতে চাইছে ওও??
****************************************
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সন্ধ্যা সাতটা, ক্রীতিক মাত্রই বাড়িতে এসেছে,বেশভুসা দেখে মনে হচ্ছে বাইক রাইডিং এ গিয়েছিল সে।
পা’স’ওয়ার্ড দিয়ে দরজা খুলে হলরুমের মধ্যেখানে পা রাখতেই দু’পা নিজ গতিতে থমকে গেলো ওর। ভেতরে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পরলো অজানা লাবডুড। সেখানেই কিছুক্ষণ একইভাবে দাড়িয়ে থেকে ধীর পায়ে এগিয়ে এলো সবচেয়ে কর্নারের কাঁউচের দিকে।
ঘাড়টা সামান্য কাত করে মুখে একটা বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রেখে দেখতে লাগলো ঘুমন্ত মেয়েটাকে । এই মেয়েটা ওর চেনা খুব চেনা। যেখানে মেয়েদের প্রতি তীব্র অনীহা ওর, সেখানে এই হাটুর বয়সী মেয়েটার প্রতি অদম্য আসক্তি। অথচ এই অনুভূতি গুলোকে কত বছর ধরে অস্বীকার করে যাচ্ছে ও।
খুবই সন্নিকটে একজনার উপস্থিতি স্পষ্ট অথচ তখনও হল রুমের নরম গদিতে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমাচ্ছে অরু।
গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকায় জামা কাপড়েরওও হদিস নেই।প্লাজো টিশার্ট দুটোই যায়গা থেকে সরে গিয়ে শরীরের অর্ধেকাংশ উন্মু’ক্ত। হল রুমে জ্বালিয়ে রাখা বিস্তর ফকফকে সাদা আলোয় সে সব কিছুই ক্রীতিকের চোখে দৃশ্যমান।
ও না চাইতেও একঝলক পা থেকে মাথা অবধি পরখ করলো অরুকে। হুট করেই কেমন ঘোর লেগে এলো দু’চোখে। নে’শাগ্রস্তদের মতোই চোখ দুটো ঝাপসা লাগছে ওর। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে।বারবার জিভ দিয়ে শুকনো অধর ভিজিয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে শুয়ে থাকা অরুর লতানো নারীদেহের ভাঁজ গুলো বড্ড আকর্ষনীয় লাগছে ক্রীতিকের চোখে।
বয়সের তারতম্য, সম্পর্কের জটিলতা সব কিছু কয়েকমূহর্তের জন্য ভুলতে বসেছে দ্য গ্রেট পার্সোনালিটি খ্যাত জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী ।
মেয়ে মানুষে নাকি তার এলার্জী, ভার্সিটির টিচার থেকে স্টুডেন্ট সবাই তো এটাই জানে।
কিন্তু এখন এই মূহুর্তে এমন কেন হচ্ছে? আট বছর আগের তৈরী হওয়া প্রনয়াসক্তি কেনই বা হুট করে মাথা চা’ড়া দিয়ে উঠছে। তাহলে কি ক্রীতিক অরুকে নয় বরং নিজ অনুভূতি কে ঘৃ’ণা করে?? সৎ মায়ের মেয়ের প্রতি এতোটা দূর্বলতা কোন সমাজই মেনে নেবেনা, বাঙালি সমাজ তো একদমই নয়, তাইতো নিজে বাঙালী হয়েও বাঙালিদের প্রতি এতো রা’গ ওর। ভালোবাসায় আবার সমাজ কিসের? ধর্মে যার প্রাধান্য আছে সমাজে তার সীকৃত নেই কেন?? ভেবে পায়না ক্রীতিক। এই মূহুর্তে ভাবতেও চায়না কোনো কিছু । ওর চোখে পৃথিবী এখানেই থমকে গিয়েছে।
পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে অরুর শিওরে ধপ করে বসে পরে ক্রীতিক, ফ্লোরে উরোঝুরো হয়ে পরে থাকা লম্বা চুল গুলোর দিকে একপলক গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ওর কানের কাছে এসে হিসহিসিয়ে ক্রীতিক বলে,
— আবার কেন ফিরে এলি এই আধ পো’ড়া জীবনে?? বাকিটা পু’ড়িয়ে দিতে??
তারপর একটা কপট হাসি খেলে গেলো ক্রীতিকের ঠোঁটের কোনে, মুখটা আর-ও একটু সামনে বাড়িয়ে, একই সুরে বললো,
—এবার যদি সত্যিই তোর আসক্তি থেকে নিজেকে সামলাতে না পারি, তাহলে বিশ্বাস কর তুইও পু’ড়’বি। আমার দহনে পো’ড়া’বো আমি তোকে। এখন তো ছোট নেই,তাহলে তুই কেন বেঁ’চে যাবি?এবার আর আমি একা নই, আমরা দুজনে মিলে প্রনয়াসক্ত হবো।
ক্রীতিক অযাচিত ঘোরের বসে আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরু ঘুমের তালে একটু নরেচরে ওঠে। অকস্মাৎ সম্বিত ফিরে ফেলো ক্রীতিক।
কি করছিল ও এটা??সঙ্গে সঙ্গে অরুর দিকে তাকিয়ে কঁপাল কুঁচকে ফেললো ও। এক ঝটকায় উঠে দাড়িয়ে ওয়ার্ডরব থেকে একটা লম্বা চাঁদর বের করে ছু’ড়ে’ মারলো অরুর উন্মুক্ত গায়ে। এমন ভাবে দুর থেকে ছু’ড়’লো যেন অরুর শরীরে কোন নোংরা লেগে আছে।
গায়ে কাথা জাতীয় কিছুর উপস্থিতি টের পেয়ে সেটাকে ভালো মতো গায়ে পেঁচিয়ে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পড়লো অরু।
সরু যায়গা হওয়াতে পাশ ঘুরতেই কাঁচের টি-টেবিল থেকে ছোট্ট বাইকের শো-পিচ টা পরে যাচ্ছিলো মেঝেতে, তৎক্ষনাৎ সেটাকে ক্যাচ করে নিলো ক্রীতিক। বাইকে বসা হেলমেট পরা দের ইঞ্চি সাইজের পুতুলটাকে চোখ পাকিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,
—-ডোন্ট ইউ ডে’য়ার টু মেইক এ সাউন্ড!!
*****************************************
সেই সন্ধ্যায় গতর ডুবে যাওয়া নরম সোফাতেই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয় অরু। যখন ঘুম ভা’ঙে তখন রাত নয়টা বেজে পয়ত্রিশ।
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। ঘুমের রেশ কাটিয়ে আড়মোড়া ভে’ঙে উঠে বসতেই সেদিনের মতো বিশাল মনিটরের একফালি তীক্ষ্ণ আলো এসে চোখে লাগে অরুর।
সেই আলোতে ক্রীতিকের উপস্থিতি স্পষ্ট।
কানের উপর কান পট্টির ন্যায় বড় বড় হেডফোন লাগিয়ে নির্দিধায় গেমিং রিমোটকন্ট্রোলটায় হাত নাড়িয়ে যাচ্ছে সে।
পড়নে বাইকার দের মতো ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট, যার সামনের দিকের চেইনটা পুরোপুরি খুলে ঘাড় থেকে খানিকটা নামানো। যার দরুন ভেতরে পরিহিত কালো স্যান্ডোগেঞ্জিটা ও দৃশ্যমান। তারউপর শরীরচর্চা করে কৃত্তিম উপায়ে বানানো অ্যাবস গুলোকে এইটুকুনি স্কিনি স্যান্ডোগেঞ্জি আড়াল করতে পারছে না মোটেই। অন্ধকারে বসে বসে আড় চোখে এসবই দেখছিল অরু। ঠিক তখনই রুমের লাইট জলে সবকিছু আলোকিত হয়ে যায়, অকস্মাৎ তীক্ষ্ণ আলো চোখে পরায় কপাল কুঁচকে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলো অরু।
—হা করে না থেকে,মুখের লালা পরিষ্কার কর।
সামনের মনিটরে ধ্যান রেখেই বললো ক্রীতিক।
চোখ বড়বড় করে ক্রীতিকের মুখের দিকে তাকালো অরু। আগের মতোই ভাবলেসহীন মুখশ্রী।
তবে অরু আর ভাবলেসহীন হয়ে বসে থাকতে পারলো না হঠাৎ এরূপ পঁচানি খেয়ে, ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে তৎক্ষনাৎ আলগোছে চুল বাঁধতে বাঁধতে দৌড়ে উপরে চলে গেলো।
তার কয়েক মূহুর্ত্ব পরে আবারও নিচে নেমে অসহায় মুখ নিয়ে ক্রীতিকের সামনে এসে দাঁড়ায় অরু।
— কি সমস্যা?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছো’ড়ে ক্রীতিক।
অরুর চোখে মুখে অ’সহায়ত্ব, কন্ঠে কাঁদও কাঁদও ভাব,কোন মনে কান্না আটকে রেখে ও বললো,
— আপা এখনো ফেরেনি।প্রতিদিন তো সন্ধ্যায় ফিরে আসে।
— তো আমি কি করবো,
ভাবলেশহীন জবাব ক্রীতিকের।
— আপনার ফোনটা একটু দিন আপাকে কল করবো।
— ল্যান্ড লাইন দিয়ে কর।
— নাম্বার জানিনাতো।
ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে, পকেট থেকে ফোন বের করে অরুর হাতে দেয় ক্রীতিক।
অরু কল করলো, একবার, দুইবার,তিনবার তাও ধরলো না অনু।
এতো রাত হয়ে গেছে আপা ফিরছে না, কল ও ধরছে না, অযাচিত ভ’য়েরা যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল অরুকে।অজস্র খারাপ চিন্তায় পেটের মধ্যে না’ড়িভু’ড়ি কেমন উগরে আসতে চাইছে। কিন্তু না সেসবের বদলে উগরে আসলো কা’ন্নারা, অনেক চেষ্টা করেও ক্রীতিকের সামনে স্থীর থাকতে পারলোনা অরু। ধপ করে মেঝেতে বসে ফুপিয়ে কেঁ’দে উঠলো।
আবার সেই একই কা’ন্নার আওয়াজ। অরু কি বোঝেনা কোন এক অজানা কারনে এই আওয়াজে ভেতরটা ছিঁ’ড়ে যায় ক্রীতিকের? গলা কাঁ’টা মুরগীর মতোই ছ’টফ’ট করে ওঠে হৃদয়টা। ইচ্ছে করে সব কিছু ধ্বং’স করে ফেলতে।ভেতরে যা হচ্ছে হোক,সেসব কে পাত্তা না দিয়ে, আপাতত অরুকে রা’ম ধমক দিয়েই শুধালো ক্রীতিক।
— কি হয়েছে, ভ্যা ভ্যা করছিস কেন?
অরু কাঁদ’তে কাঁ’দতে জবার দেয়
— আপা কল তুলছে না, এখান আসার পর থেকেই আপা কেমন যেন ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছে। এখন আবার কলটাও ধরছে না।
— পার্ট টাইম জব করলে ব্যাস্ত হবেনা তো কি হবে, মুখ টিপেটিপে বললো,ক্রীতিক।
— কিছু বলছেন??
— না, তুই কা’ন্নাকা’টি অফ কর।তোর কা’ন্নার আওয়াজ বির’ক্ত লাগে।
—- আমি কাঁ’দলেও আপনার বির’ক্ত লাগে হাসলেও বির’ক্ত লাগে, করবোটা কি আমি??
—- চুপ করে থাকবি।
অরু তাই করলো,চুপ হয়ে বসে রইলো। এমনিতেই ক্রীতিকের সামনে কেঁ’দে ফেলেছে, এখন ভাবতেই কেমন লজ্জা করছে ওর, ওও তো এতোটাও বাচ্চা স্বভাবের মেয়ে নয়, যথেষ্ট স্ট্রং।
অরুর ভাবনার ছেদ ঘটে ক্রীতিকের আওয়াজে
—আমি বের হয়ে আশেপাশে খুঁজে দেখছি, তুই থাক।
অরু একটু একটু হেঁচকি তুলে বললো,
— আমিও যাবো।নিয়ে যাননা।
*****************************************
ম্যাকডোনাল্টস ক্যাফেটেরিয়ার পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে, আশেপাশের রাস্তায় হাটছে ক্রীতিক আর অরু।
ওভারসাইজ ডেনিমের পকেটে হাত ঠুকিয়ে গা ছাড়া ভাব নিয়েই হাঁটছে ক্রীতিক। দেখে মনে হচ্ছে ওর মধ্যে চিন্তার লেশমাত্র নেই।ওদিকে অরু ভেবে পাচ্ছে না হসপিটালে না নিয়ে গিয়ে ওকে এখানে কেন নিয়ে এলো পা’গল লোকটা?আপা তো হসপিটালে।
অরু বার কয়েক জিজ্ঞেস করেছে আগ বারিয়ে।
কিন্তু ক্রীতিকের সোজাসাপটা উত্তর
— আশেপাশে খোঁজ এখানেই পেয়ে যাবি।
অরু সেই তখন থেকে এদিক ওদিক হন্নে হয়ে ছুটছে, সোডিয়ামের আলোয় যতদূর চোখ যায় কোথাও কোন মানুষ নেই। ক্যাফেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে খানিকক্ষণ আগে অথচ অনুর দেখা নেই।
— আচ্ছা তোর পেটের মাঝখানের তিলটা কি আসল??যখন ছোট ছিলি তখন তো দেখিনি।
পাহাড়ি আঁকাবাকা রাস্তায় অরু যখন অনুকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল প্রায়,ঠিক তখনই ক্রীতিক জ্ঞানী ব্যাক্তিদের মতো ভাবুক হয়ে এই ছাপরি প্রশ্নটা করে বসে।
এই মূহুর্তে ক্রীতিকের কথায় অরু ওর গোপন তিলকের খবর জানায় অবাক হবে,নাকি আহা’ম্মকের মতো প্রশ্ন করায় গিয়ে ঠা’টিয়ে থা’প্প’ড় মা’রবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না। যত যাই হোক। বয়সে ওর চেয়ে দ্বিগুণ বড় ক্রীতিক।
তবে কিছু তো কথা শোনানোই যায়, সেই উদ্দেশ্যেই ঘুরে পেছনে এগিয়ে এলো অরু।
তখনই উল্টো দিক থেকে ডাক পরলো অনুর।
— অরুউউ
অরু চকিতে পেছনে চাইলো দেখলো, খুঁ’ড়িয়ে খুঁ’ড়িয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে আপা। তার সঙ্গে লম্বা মতো একটা ভাইয়া, অনুর হাতধরে ওকে হাঁটতে সাহায্য করছে, অনুর ছোট্ট শরীরটা লোকটার শীতের কোর্টদিয়ে আবৃত।
লোকটা কে?কি হয়?কেনইবা অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে?
সে-সব নিয়ে এই মূহুর্তে একবিন্দু পরিমান মাথা ব্যাথা নেই অরুর। ও শুধু দেখছে ওর আপা ব্যা’থা পেয়েছে হাটতে পারছে না ভালো করে।
একদিক দিয়ে ক্রীতিক আর অরু এগিয়ে আসছে, অন্যদিক দিয়ে অনু আর প্রত্যয়। প্রত্যয় আর ক্রীতিকের চোখেচোখে কথা আদান-প্রদান হলো বোধ করি।
কয়েকমূহুর্তের মধ্যে অরু ছুটে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো অনুর, উৎকন্ঠা নিয়ে বললো,
— আপা, আমায় রেখে কোথায় গিয়েছিলি তুই? তোর চিন্তায় চিন্তায় পা’গল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি, একমুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল এই অচেনা দেশে আমার আপন বলতে কেউ নেই।
অরুর কথায় ক্রীতিকের মেজাজ অকস্মাৎ তে’ড়ে উঠলো। এইটুকু সামান্য কথায় রাগ লাগার মতো কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না ক্রীতিক,তবুও কয়েকমূহুর্তের জন্য চোখের রঙ বদলালো ওর। আবারও সেই ভ’য়ানক তীক্ষ্ণ চাউনি।
পরক্ষনেই প্রত্যয়ের সাথে চোখাচোখি হওয়ায় আবার তা দপ করেই নিভে গেলো।
পাছে এসে জড়ো হলো ঠোঁট গলিয়ে একটা রহস্যময়ী ক্রুর হাসি। যে হাসিতে সামিল হলো সয়ং প্রত্যয় ওও।
ওরা যে কি মনে করে হাসলো সেটা কেবল ওরাই ভালো জানে।
চলবে……….
ভালো-ম’ন্দ গঠনমূলক কমেন্ট করলে নেক্সট পার্ট লেখার উৎসাহ পাই।
—-