সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁 #পর্বঃ০৮_বর্ধিতাংশ #লেখনীতেঃsuraiya_rafa

0
583

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি 🍁🍁
#পর্বঃ০৮_বর্ধিতাংশ
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
সম্পূর্ন প্রাপ্ত মনস্কও মুক্তমনাদের জন্য।

ক্রীতিকের ডুপ্লেক্স বাড়িটা অত্যাধুনিক হলেও পরিধিতে খুব একটা বড় নয়,
নিচ তলায় হল আর গ্যারেজ ছাড়া আলাদা কোনো শোবার ঘর নেই।
আর উপর তলায় একটা মাস্টার বেডরুম যেটা ক্রীতিকের নিজের।অন্যটা গেস্টরুম সেখানে আপাতত অরুরা থাকে। এছাড়া একটা রুম রয়েছে সেটা ক্রীতিকের ব্যাক্তিগত জিমনেশিয়াম। তবে এই পুরো বাড়িতে সব থেকে যেটা সুন্দর তা হলো দুইসাইডে দু’টো টানা ছাঁদ বারান্দা, আর তার একটাতে রয়েছে মিনি সাইজের একটা সুইমিং পুল,ওই দুইতিনটা বাথটাবের সমান পানি হবে আর কি। মূলত এটা ব্যাবহারের থেকে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যই বেশি তৈরি করা হয়েছে।

সন্ধ্যা রাতে ফ্র্যাগরেন্স মোমের লালচে আলোতে পুলের অগভীর নীল পানিটুকু ঝিলমিল করছে,দেখলে মনে হবে কোন যাদুকরের তন্ত্রমন্ত্রের ফল। তাতেই আপাতত পা ডুবিয়ে বসে আছে এলিসা,অর্নব,সায়র, আর ক্যাথলিন। যদিও বাইরে হুহু ঠান্ডা, তবে সেটাই উপভোগ করছে ওরা।
এলিসা, অর্নব,আর সায়র হলো ক্রীতিকের বেস্ট ফ্রেন্ড, পরিবার ওও বলা চলে। ওদের সবার জীবনেই কোন না কোন অপূর্নতা দিয়ে ঘেরা। চারজনই পিছুটানবিহীন ছ’ন্নছাড়া মানুষ ।সোজা পথে না হেটে আঁকাবাঁকা পথের এডভেঞ্চারাস শিহরন পেতেই বেশি পছন্দ করে ওরা। সামনে থেকে সবকিছু সাভাবিক মনে হলেও মূলত চারজনের জীবনই একেকটা গোলকধাঁধা আর সেকারণেই হয়তো ওরা সোলমেইট।দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ওদের। ক্রীতিক এখনো ভেবে পায়না ওর মতো একগুঁয়ে, বদমেজাজি,রগচটা, মাথা গরম ছেলের সাথে ওরা এতোগুলা বছর কিভাবে কাটিয়ে দিলো?তাও উইথ আউট এনি কমপ্লেইন।

ছাঁদ বারান্দার রেলিং ঘেসে দাড়িয়ে মেঘলা আকাশের পানে একনাগাড়ে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে ক্রীতিক। সেদিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ক্যাথলিন। ক্যাথলিন হলো এলিসার কাজিন। বয়সে ওদের থেকে বেশ ছোটই, অনুর বয়সই হবে হয়তো। তবে কেন যেন ক্রীতিকের প্রতি ওর অন্যরকম দূর্বলতা। ওর কোন বাইক রাইড কম্পিটিশন মিস করেনা ক্যাথলিন। এছাড়া বাইক রেচিং ফ্যান ক্লাবের টপ ফ্যান ব্যাজ ওও ওর দখলে। আর সেখানে ক্রীতিক থাকে সবসময় নাম্বার ওয়ান ট্রেন্ডিং এ।মোট কথা রাইডার জেকের খুব বড় ভক্ত ক্যাথলিন।
যদিও ক্রীতিকের এসব বিষয়ে বিন্দু মাত্র ধারনা নেই। ওতো কেবল নিজের ছন্নছাড়া হৃদয়টাকে একটুখানি প্রশান্তি দেওয়ার জন্যই জীবনটাকে অযাচিত বি’পদের মুখে ঠেলে দেয়। কেন যেন এই ব্যাপারটায় এক পৈচাশিক আনন্দ পায় ক্রীতিক।
ক্যাথলিনের ভালো লাগার ব্যাপারটা এলিসা সহ বাকি দুজনও জানে, তবে বয়সের দোহাই দিয়ে কেউই খুব একটা পাত্তা দেয়না।

আজ ক্রীতিকের জন্মদিন বলেই কেঁ’দেকে’টে হাজারও অনুরোধ করে তবেই এলিসার সাথে এসেছে সে। সাথে করে ক্রীতিকের জন্য জন্য গিফট ও এনেছে। তবে সে গিফট এ জীবনে ক্রীতিক খুলে দেখবে কিনা বলা বাহুল্য।
.***********************************
বৃষ্টিতে আটকে গিয়ে অনু এখনো ফেরেনি বলে সারা সন্ধ্যা অরুও আর নিজের রুম থেকে বের হয়নি। তবে এখন তো বৃষ্টি কমেছে আপা ফিরলো কিনা তা দেখতে কেবলই রুমের বাইরের করিডোরে পা রেখেছিল অরু। ঠিক তখনই ছাঁদ বারান্দা থেকে হাক ছেড়ে ডেকে উঠলো এলিসা,
— এই যে শোনো আমাদের সবার জন্য হট কফি বানিয়ে নিয়ে এসোতো।

এলিসার কথায় বাদ সাধে সায়র,খানিকটা গলা নামিয়ে বলে,
— – ওই!কাকে কি বলছিস, ও কি সার্ভেন্ট নাকি?ও ক্রীতিকের স্টেপ সিস্টার।

অবাকের চড়ম সীমানায় গিয়ে এলিসা বললো,
— কি বলিস কিন্তু ক্রীতিক যে বললো, ট্রিট হার লাইক আ সার্ভেন্ট?

সায়র কটমটিয়ে ক্রীতিকের দিকে চাইলো, যে এখনো ভাবলেশহীন হয়ে একই ভাবে দাড়িয়ে আছে, তারপর চোখ ঘুরিয়ে এলিসাকে বলে,
— আমাকেও একই কথা বলেছে বাঁদর টা। বোন কে বোন বলে পরিচয় দেয় না,কতটা খারাপ ভাবতে পারছিস?

ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরে, তখনই অরুকে নিষেধ করার জন্য করিডোরে উঁকি দিলো এলিসা, কিন্তু দেখলো অরু সেখানে নেই।
নিজের কথায় এই মূহুর্তে নিজেই লজ্জিত ও,তাই ক্রীতিকের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,
— দাঁড়া আমি দেখাচ্ছি ওকে।

ওদের কথা শুনতে না পেয়ে অর্নব গোয়েন্দাদের মতো সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
— এ্যাই, কি বলছিস তোরা ফিসফিসিয়ে? আমার নামে কিছু নয়তো? আমাকে নিয়ে কিছু বললে কিছু একদম পার পাবিনা বলে দিলাম,সব বের করে ফেলবো।

সায়র বিরক্ত হয়ে চোখ উল্টে বললো,
—ভুলে যাসনা অর্নব তুই একজন হ্যা’কার,কোন ম্যাজিশিয়ান নস, যে মনের কথা বের করে ফেলবি।
ওদের কথার বহরে ক্রীতিকও এবার ঘুরে দাড়ালো।তৎক্ষনাৎ কথা ছু’ড়লো এলিসা,
—জেকে অরু তোর বোন হয় আগে বলিস নি তো?

ক্রীতিকের সোজাসাপটা জবাব,
— বোন হয়না তাই বলিনি, তাছাড়া ও কেন আমার বোন হতে যাবে? আমার বোন হওয়ার কি যোগ্যতা আছে ওর?

এলিসা পাল্টা প্রশ্ন করবে তার আগেই ট্রেতে করে সবার জন্য গরম গরম কফি নিয়ে হাজির হয় অরু। অরুর অবশ্য কফি চাওয়াতে তেমন একটা ইগোতে লাগেনি, কফিই তো চেয়েছে, তাছাড়া বাড়ি বয়ে আসা সবাই তো মেহমান এতোটুকু নিঃসংকোচে করাই যায়।

কিন্তু অরুকে একজনার মোটেই ভালো লাগেনি, আর সেটা হলো ক্যাথলিন। মানে ও এই ব্যাপারটা নিতেই পারছে না,যেখানে ও হাজার চেষ্টা করে তবেই ক্রীতিককে একটু চোখের দেখা দেখতে পায় সেখানে এই ব্রাউন স্কিন, লম্বা চুল ওয়ালা মেয়েটা কিনা ক্রীতিকের বাড়িতে চব্বিশ ঘন্টা থাকে। দিনরাত ক্রীতিকের মুখো মুখি হয়, ওর সাথে কথা বলে, হাসাহাসি করে।ব্যাপার ভাবতেই ক্যাথলিনের কেমন গা জ্বলে উঠলো। কোন এক অজানা কারনে হুট করেই মেয়েটার প্রতি রা’গ উগরে আসছে ওর।অরুর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হালকা আন্তরিকতা মাখা হাসিটা দেখে একান্তে ফোঁসফাঁস করছিল ক্যাথলিন। তখনই ওর দিকে কফির কাপটা এগিয়ে দেয় অরু।
কিন্তু ক্যাথলিন তো এটা নিবে না, সবার সামনে ফিরিয়েও দিতে পারবে না, তাই ইচ্ছে করেই গরম কফিটা উল্টে ফেলে দেয় ও।তবে অসাবধানতায় পুরো কফিটাই অরুর হাতে ছিটকে পরলো।

কফিটা ছিল ধোঁয়া ওঠা আ’গুন গরম।তবুও অরু চেঁচালো না, কেবল আহ.. শব্দের মৃদু আতর্নাদ বেরিয়ে এলো ওর মুখ থেকে।

তৎক্ষনাৎ ওর কাছে ছুটে এলো সায়র, অন্যরাও ব্যাস্ত হয়ে পরেছে ও ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য শুধু ক্রীতিক ছাড়া, ও এখনো নিজের যায়গাতেই স্থীর দাড়িয়ে সবটা দেখছে। নিজের অজান্তেই কখন যে হাতদুটো মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছে হদিস নেই তার। সায়র তারাহুরো করে অরুর হাতটাকে টেনে উল্টে পাল্টে দেখে নিলো,হাতের অনেকটা যায়গা ধরে লালচে বর্ন ধারন করেছে।অরু চোখ মুখ এখনো খিঁচে বন্ধ করে বসে আছে, মুখে কোনো রা নেই,কেবল চোখ দিয়েই টুপটুপ করে ঝরে পরছে ব্যা’থাতুর নোনাজল।

— আর ইউ ওকে বেবি?
উদগ্রীব হয়ে প্রশ্ন করলো সায়র।

অরু জবাব দিলোনা, বসে রইলো একই ভাবে।
ওর হাতে জ্বা’লা করছে ভেবে পুলের শীতল পানিতে হাতটা ডুবিয়ে দিলো সায়র। কয়েক মূহুর্ত পরেই পিটপিট করে চোখ খুললো অরু, ঠান্ডা পেয়ে সত্যিই বেশ আড়াম লাগছে এখন।

ওদিকে এলিসা ক্যাথলিনের দিকে চেয়ে চোখ পাঁকাতেই। ক্যাথলিন এসে ক্ষমা চাইলো অরুর নিকট।
—আ’ম সরি অরু, আই ডিডন্ট মিন ইট।

অরুর যে রাগ নেই তেমন না,ও দেখেছে ক্যাথলিন ইচ্ছা করে কফিটা ফেলছে, মেয়েটার কর্মকান্ডে রাগও লাগছে খুব, তবুও সবার সামনে মনুষ্যত্ব আর চক্ষু লজ্জার খাতিরে বললো,
— ইটস ওকে।

— অনেক তো হয়েছে , অরু ভেতরে যা,আমি মলম নিয়ে আসছি তোর জন্য।
অরুর চোখের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে খুব সাভাবিক ভঙ্গিতে কথাটা বললো,ক্রীতিক।

এই আ’গুন ঝ’ড়া লে’লিহান দাবানলের মতো চোখে কোন মায়া কিংবা কাতরতা ছিলোনা অরু নিশ্চিত, তাহলে কি ছিল? হিং’স্র’তা? কিন্তু কেন?
এতো ভাবার সময় নেই, যেতে বলেছে চলে যাওয়াটাই উত্তম। শুধু শুধু তাদের কোয়ালিটি টাইমে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে গেলো ও। ব্যাপারটা ভেবে লজ্জায় মাথা নিচু করে ছাঁদ বারান্দা ত্যাগ করে অরু।
*****************************************
অরু রুমে পা রেখেছে কি রাখেনি তার আগেই ওর রুমে ঢুকে ধাপ করে দরজা বন্ধ করে দেয় ক্রীতিক।এর আগে কখনোই এমনটা করেনি ও,তাই এমন হটাৎ আগমনে অরু একটু ভয়ই পেলো। দু’কদম পিছিয়ে পিঠ ঠেকালো শক্ত দেওয়ালে। ফুল স্লিভ টিশার্টের দু’হাতা উপরে তুলতে তুলতে ধীর পায়ে ওর দিকেই এগিয়ে এলো ক্রীতিক।

অন্ধকারের মধ্যে সামান্য ফ্ল্যাশের আলোয় ক্রীতিকের ভ’য়ংকর অ’গ্নিমূর্তি দেখে ভ’য়ার্ত ঢোক গিললো অরু, গলায় কথা আটকে আসছে, তবুও আমতা আমতা করে রিনরিনিয়ে বললো,
— ক..ককি করছেন? ভ..ভ’য় লাগছে আমার।

— হাউ ডেয়ার ইউ??
একটা কোল্ড আর ডমিনেটিং কন্ঠস্বর কানে এলো অরুর। অজানা অধিকার বোধ উপচে পড়ছে প্রত্যেকটা শব্দে।

— ককি করেছি? ভ’য়ে ভ’য়ে শুধায় অরু।

ক্রীতিক এগিয়ে এসে, অরুর ছ্যা’কা লাগা লালচে হাতটা শ’ক্ত করে চেঁ’পে ধরলো।

এবার ভীষ’ণ ব্যা’থা পেলো অরু, ব্যা’থায় অনেকটা জোড়েই চেঁচিয়ে উঠলো,
— আহহ… লাগছে আমার।

ক্রীতিক থামলো না, ওই হাতটা ধরেই টা’নতে টান’তে ওয়াশরুমে নিয়ে ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে শাওয়ার জেল লাগিয়ে ইচ্ছে মতো ঘ’সতে থাকলো অরুর দ’গদগে পো’ড়া হাতটাকে।

বিস্ময়,আ’তংক আর ব্যা’থায় জর্জরিত অরুর আপনা আপনি হাত চলে গেলো মুখের উপর।
ঠোঁট কা’মড়ে কা’ন্না আটকে বললো,
— কি করছেন আপনি??কোন সাভাবিক মানুষ কি এতোটা ব্যা’থা দিতে পারে??

খুব মনোযোগ দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করার মতোই অরুর হাতটাকে ঘসতে ঘসতে ক্রীতিক জবাব দেয়,
— আমি সাভাবিক তোকে কে বললো?

একেতো পু’ড়ে চাম’ড়া নরম হয়ে আছে, তারউপর এতোক্ষণ যাবত একনাগাড়ে ঘষামাজার ফলে হয়তো সেটাও উঠে গিয়ে রক্তা’ক্ত হয়ে গিয়েছে, তাইতো অরুর কা’ন্নায় এবার জোয়ার এলো।
কাঁদ’তে কাঁদ’তে নিচে বসে পরলো ও।
—- পারছি না ছাড়ুন দয়া করে, ব্যাথায় কলিজা ছি’ড়ে যাচ্ছে।

এবার ক্রীতিক ওর হাত ছে’ড়ে দিলো, অতঃপর ফ্যানায় ভর্তি হাতটা দুগালে চে’পে ধরে বললো,
—-নেক্সট টাইম এমন করলে শুধু হাত নয়,বাথটাবে ছু’ড়ে ফেলে পুরো শ’রীর ধুয়ে তবেই ছা’ড়বো, আই রিপিট পুরো শ’রীর।

কান্নারত অরু বলে,
— আমি করেছিটা কি??

ক্রীতিক একটা বিরক্তি মাখা হাসি ছুড়লো অরুর পানে, তারপর দাঁতেদাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বললো,
— ইন ফিউচার, ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ এনি ওয়ান এলস।
*****************************************
আজ সারা রাতেও হয়তো বিদ্যুৎ আসবে না, না এখনো অনু ফিরেছে, একেতো অনুর জন্য চিন্তায় মাথাটা ফেটে যাচ্ছে, তারউপর সন্ধ্যা রাতের ঘটে যাওয়া অমিমাংশিত ঘটনা গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বারংবার।

বিছানায় আধশোয়া হয়ে নিজের ব্যা’ন্ডেজ প্যাচাঁনো হাতটার দিকে উদাসীন হয়ে তাকিয়ে আছে অরু। তখন ক্রীতিক ব্যা’থা তো দিয়েছিল ঠিকই আবার নিজ হাতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজও করে রেখে গিয়েছে। এই লোককে ঠিক কি বলবে ভেবে পায়না ও পাগ’ল নাকি ভিনগ্রহ বাসিন্দা?
অরুর আনমনা ভাবনার ছেদ ঘটে দরজায় কড়ানাড়ার আওয়াজ পেয়ে। এভাবে অপরিচিতদের মতো নক করায় অবাক হয় অরু নিশ্চয়ই আপা নয়। তাই একটু ঠিক ঠাক হয়ে বসে বললো,
— আসুন।

সঙ্গে সঙ্গে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে এলিসা। এলিসা মেয়ে, তবে চলন বলন কোনোটাই মেয়েদের মতো নয়, ওর পড়নে সেটে আছে কালো স্কিনি প্যান্ট আর ক্রপ টপ তার উপর শীতের ওভারকোর্ট। বব কাঁটা চুল গুলো গাড়ো বাদামি রঙে রাঙানো, সুন্দর ঠোঁট গুলোতে ম্যাট ন্যুড শেডের লিপস্টিকের আস্তরন।এক ঝলক দেখলে মনে হবে মাত্রই টিভি থেকে বেড়িয়ে এসেছে সে। এলিসার কৃত্রিম সৌন্দর্যের কাছে, অরুর অপার্থিব সৌন্দর্যকে নিছকই সাদামাটা আর ফিকে লাগছে। অরুর নিজেরও কেমন যেন সংকোচ বোধ হচ্ছিল।
কিন্তু এলিসার সম্মোহনী হাসি,আর স্নেহ জড়ানো কন্ঠস্বরে কয়েকমূহুর্তের মধ্যেই তা উবে গেলো। পাছে তৈরি হলো ভিন্নধারনা, এলিসা মেয়েটা মোটেই খারাপ না।
এলিসা রুমে ঢুকেই প্রথমে অরুর হাতটা সাবধানে উল্টে পাল্টে দেখলো তারপর বললো,
— ব্যান্ডেজ করার মতো তো অতোটাও লাগেনি, তাহলে ব্যান্ডেজ কে করলো??

অরুর কথা ঘুরিয়ে বললো,
—আমিই করেছি, যাতে তারাতাড়ি কমে যায় ব্যাথা।
এলিসা শব্দ করে হেসে বললো,
—তোমার অনেক বুদ্ধি বুঝেছি।

এলিসার কথায় অরু হেসে দেয়।তারপর বলে
— আমি জানি, আপনি মজা করছেন।

— এ্যাই মেয়ে,আপনি করে কাকে বলছো? আমি ক্রীতিকের বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারি,কিন্তু আমি এখনো সুইট সিক্সটিন, আমাকে তুমি করে বলবে বুঝলে?
— ঠিকাছে আপু, বলবো।কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড বানানোর জন্য আর মানুষ পেলেনা? ওই হনুমানটাকে, না মানে ক্রীতিক ভাইয়াকে?

এলিসা ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে জবাব দেয়,
— মানুষ হিসেবে ক্রীতিক কেমন আমার জানা নেই অরু, তবে ফ্রেন্ড হিসেবে ওদের তিনজনারই জুড়ি মেলা ভার।আমি খুব লাকি জানো ?ওদের মতো বন্ধু পেয়েছি। আমাদের চারজনার কারোরই টাকা পয়সা কিংবা অর্থবিত্তের অভাব নেই, আমাদের যেই জিনিসের সবথেকে অভাব তা হলো একটা পরিবারের। ,সার্থহীন উষ্ণ ভালোবাসার মানুষের অভাব।আমরা চারজনই ভালোবাসার কাঙাল, পরিবারের কাঙাল। তাই হয়তো উপরওয়ালা আমাদেরকে বন্ধুত্বের মতো সুন্দর একটা সম্পর্কে বেধে দিয়েছেন।

এলিসার কথার পাছে অরু নিঃশব্দে ভারী নিঃশ্বাস নেয়।
একটু থেমে এলিসা আবারও বললো,
—অর্নব আর সায়রের তাও বাবা মা নেই। কিন্তু আমার ক্রীতিকের তো থেকেও নেই।

অরু মেকি হেসে জানার ভান ধরে বললো,
— না আপু ভুল ভাবছেন, ক্রীতিক ভাইয়ারও বাবা মা কেউ নেই।
এলিসা অবাক চোখে অরুর পানে চাইলো, মনে মনে ভাবলো,
— তারমানে এই মেয়ে কিছুই জানে না।

—কি হলো আপু কিছু ভুল বললাম?

— ক্রীতিকের মা বেঁচে আছে অরু, সি ইজ কম্পলিটলি অ্যালাইভ, এন্ড লিভিং উইথ অ্যানাদার ম্যান।

এলিসার কথায় অরু যেন আকাশ থেকে পরলো, তাহলে কি এতোদিন ধরে ও ভুল জানতো, ক্রীতিকের মা মা’রা যায়নি?

এলিসা আরও খানিকটা জটলা খুলবে,তাঁর আগেই ক্যাথলিনের বিকট চি’ৎকার শুনে ছুটে বেরিয়ে যায় এলিসা। পেছন পেছন এগিয়ে যায় অরুও।
হলরুমের মধ্যিখানে বসে থরথর করে কাঁ’পছে ক্যাথলিন। ওকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখে অর্নব আর সায়র, ক্রীতিক সেদিকে তাকিয়েই কাউচে বসে বসে আপেল খাচ্ছে।
এলিসা দোতলার করিডোর দিয়ে একনজর পরখ করে দৌড়ে নিচে নামলো। অরু সেখানেই দাড়িয়ে সবটা বোঝার চেষ্টা করলো।

—কি হলো হটাৎ ক্যাথলিনের?
নিচে গিয়ে এলিসা জিজ্ঞেস করতেই অর্নব জানায়, ক্যাথলিন হাতে ইলেক’ট্রি’ক শ:ক খেয়েছে। হাতের অবস্থা বেগতিক। সেই সাথে পুরো শরীর থরথরিয়ে কাঁপছে।
এলিসা বললো,
—-কি করে হলো এসব ক্যাথ?ঘরে তো বিদ্যুৎই নেই।

ক্যাথলিন কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, আমি জানিনা, জেকে ভাইয়া বলেছিল স্প্রেসো পান করবে, সেটা বানাতেই কফি মেকারের কাছে এসেছিলাম। তখনই…. কথাটুকু শেষ করে আবারও হুহু করে কা’ন্নায় ভেঙে পরে ক্যাথলিন।

—জেকে তুই আবার কবে থেকে স্প্রেসো খাস? আগেতো দেখিনি।

নিঃসংকোচে আপেলে কাম’ড় বসাতে বসাতে ক্রীতিক বলে,
— আরে ইয়ার ঠান্ডার মধ্যে একটু তেঁতো কফি খেতে ইচ্ছে করছিল, তাছাড়া আমিতো আর ক্যাথলিনকে বলিনি, ও নিজেই বললো। আমি ভাবলাম কফি মেকারটা তো এনালগ, ব্যাটারীতে চলে রি:স্কে’র তো কিছুই নেই।
এলিসা আড়ালে নিঃশ্বাস ছেড়ে কিচেন কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
—কোন কফি মেকার আমি দেখিতো?

সঙ্গে সঙ্গে ওর হাত টেনে ধরে অর্নব,সচকিত হয়ে বলে,
— একদম না,তোর কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ।

— আশ্চর্য শেষ মানে? তাছাড়া আমার হবেটা কি?
—- তোকে নিয়ে আমি কোন রি’স্ক নেবোনা ব্যাস।
এলিসা নিজের দিকে হাত টেনে বলে,
— অর্নব হাত ছাড়।
—না ছাড়বো না।
অর্নব এই মূহুর্তে খুবই সিরিয়াস, অন্যসময় হলে হয়তো এলিসার কথাই শুনতো।
সায়র এদের সিনম্যাটিক কাহিনি দেখে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,
— গাইস প্লিজ, গভীর রাত হয়ে যাচ্ছে, ক্যাথলিন বেচারীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চল, ওকে চেকআপ করাতে হবে।
*****************************************
ওরা সবাই চলে গিয়েছে কয়েকমূহর্ত্ব মাত্র। অরু এখনো করিডোরেই দাড়িয়ে আছে। ক্রীতিক ওকে লক্ষ না করেই বাইরে গিয়ে মেইন সুইচবোর্ডটা অন করে দিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে আলোকিত হয়ে ওঠে মাঝারি সাইজের অত্যাধুনিক হল রুমের চারিপাশ।
অরু, ভ্রু কুঞ্চিত করে মনে মনে আওড়ালো,

— তার মানে বি’দ্যুৎ অনেক আগেই এসেছে, উনিই সুইস বোর্ড অফ করে রেখেছিলেন, কিন্তু কেন???

চলবে……

রি-চেইক করিনি।বানানে ভুল থাকতে পারে।
কমেন্টে উৎসাহ দিলে খুশি হবো,সাথে গল্পের রিচটাও একটু বাড়বে।
হ্যাপি রিডিং 🫰🫰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here