সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁 #পর্বঃ২১ #লেখনীতেঃsuraiya_rafa

0
587

#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ২১
#লেখনীতেঃsuraiya_rafa
ক’পি করা নিষিদ্ধ 🚫
[শুধুমাত্র প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য]
[সকল দৃশ্যপট কাল্পনিক ]

ক্যালিফোর্নিয়াতে আজ বেজায় ঠান্ডা পরেছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় কনকনে ঠান্ডা হাওয়া এসে একেবারে নাক মুখ চিড়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। এলোমেলো বাতাসের তীব্রতায় ঝড়ে পরা আকর্ষনীয় ম্যাপল পাতায় ভরে উঠেছে রাস্তাঘাট। আজকে আর যেন-তেন শীতের পোশাক পরে শীত নিবারন করার সুযোগ নেই, তাইতো উষ্ণ কোর্ট, গ্লোভস,পায়ে বুট,মাথায় উলের বিনি হ্যাট পরে, একেবারে রয়েসয়ে বাইরে বেরিয়েছে অনু। আজ বাইরে না গিয়ে ভেলভেট কম্ফোর্টারের মধ্যে শুয়ে আরাম করে ঘুমালে হয়তো সবচেয়ে বেশি ভালো হতো। কিন্তু আগামী কাল মায়ের অপারেশন, আজ না গেলে কেমন করে হবে? গত দুদিন ধরে অরু আর ক্রীতিক বাড়িতে নেই, এই দুদিনে ওর যথেষ্ট খেয়াল রেখেছে প্রত্যয়, সব সময় ফোন করে খোঁজ নেওয়া, সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে এগিয়ে দেওয়া, কিংবা নার্সিংহোমের কোনোরূপ জরুরি প্রয়োজনে ছুটে আসা।কি না করেছে?

এতো যত্ন, এতো মূল্যয়নে অনুর মতো কঠোর হৃদয়ের মেয়েটাও আজকাল প্রত্যয়ের প্রতি দূর্বলতা অনুভব করে। ইচ্ছে তো করে হৃদয়টা বের করে হাতে তুলে নিয়ে প্রত্যয়কে উপহার দিয়ে দিতে,আফটার অল হি ডিজার্ব ইট।
.
প্রত্যয়কে নিয়ে অসংখ্য দানাবাঁধা স্বপ্ন আর ভাবনারা মাথায় কিলবিল করছে অনুর। মাঝে মাঝেই অযাচিত মনে একাই ফিক করে হেসে উঠছে ঠোঁট জোড়া। একমনে প্রত্যয়কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে বাস স্টপেজের কাছে চলে এসেছে তা টেরও পায়নি অনু। যখন টের পেলো তখন দেখলো বাস এখনো আসেনি, অপেক্ষা করতে হবে কিছুক্ষন, তাই এগিয়ে গিয়ে একটা শিশিরে ভেজা বেঞ্চি হাত দিয়ে সামান্য পরিস্কার করে সেখানটায় বসে পরলো ও। বেঞ্চিতে বসার সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় চোখের সামনে দৃশ্যগত হলো পূর্বের ন্যায় একই ঘটনা। এই নিয়ে পরপর তিনদিন ওই মেয়েটাকে প্রত্যয়ের সঙ্গে দেখেছে অনু। রাস্তার ওপাশেই ক্যাফেটেরিয়াতে দাড়িয়ে আছে ওরা দুজন। প্রত্যয় কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে কিছু একটা বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। প্রত্যয় চলে যেতেই হুট করে, একদম হুট করে অজ্ঞাত মেয়েটার চোখে চোখ পরলো অনুর। এভাবে চোখাচোখি হওয়ায় ভেতরটা কেমন আঁতকে উঠল ওর। তৎক্ষনাৎ তরিৎ গতিতে চোখ নামিয়ে নিলো অনু।জিভ দিয়ে অধর ভিজিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
— কে এই মেয়ে? সব সময় প্রত্যয় সাহেবের সাথেই কেন দেখা যায় তাকে? ওনার বোন? কই চেহারাতে তো মিল নেই।

— এই যে!!

অনুর অস্পষ্ট বিড়বিড়ানির মাঝেই স্পষ্ট বাংলায় ওকে ডেকে উঠল কেউ। অনেকদিন পর অচেনা মুখে বাংলা আওয়াজ শুনে চট করে মাথা তুলে চাইলো অনু, তবে সেই মানুষটিকে দেখে খুশি হওয়ার বদলে উল্টে ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে গেলো ওর। এতো একটু আগে প্রত্যয়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বাঙালি মেয়েটা, এখানে কি করছে সে? অনু চুপচাপ তাকিয়ে আছে দেখে মেয়েটা পুনরায় বললো,
— কানে শুনতে পাওনা নাকি?

মেয়েটার কথায় চড়ম ক্রো’ধের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। কওয়া নেই বলা নেই হুট করে এসে এভাবে খিটখিটে আওয়াজে কথা বলাটা মোটেই পছন্দ হলোনা অনুর, মেয়েটার আচরনে সুন্দর মেজাজটা হঠাৎ করেই কেমন বিগড়ে গেলো, তবুও যতটুকু সম্ভব নিজেকে সংবরণ করে কাঠকাঠ আওয়াজে অনু বললো,
— কি চাই?

অনুর থেকে বোধ হয় এতোটা কাঠিন্য আশা করেনি মেয়েটা, তাই ওকে চোখ পাকিয়ে গলার স্বর কঠিন করে সে বললো,
— এ্যাই মেয়ে, কাকে কি বলছো তুমি?

অনু এবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো, দু’হাত বুকের উপর ভাঁজ করে রেখে ,ভ্রু উঁচিয়ে সাভাবিক ভঙ্গিমাতে বলে,
— আপনাকে বলছি, কি চাই?

মেয়েটা এবার তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,
— প্রত্যয়ের সাথে যে এতো ঢলাঢলি করছো, আমি কে সেটা নিশ্চয়ই বলেছে?

— না বলেনি, হয়তো সেরকম ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না তাই বলার প্রয়োজনবোধ করেনি, আপনার খুব বেশি বলার ইচ্ছে থাকলে আপনিই বরং বলুন, আমি শুনছি, আর হ্যা একটু জলদি বলবেন প্লিজ, আমার তাড়া আছে।

মেয়েটা খিটখিট করে বলে উঠলো,
— বেশি স্মার্ট সাজার চেষ্টাও করোনা,তাহলে পস্তাবে, হি ওয়াজ জাস্ট ইউজিং ইউ,টু ফরগেট সামওয়ান, এন্ড দ্যাট ওয়াজ মি। আমি ওর বিগত সাত বছরের ভালোবাসা।

মেয়েটার কথায় অনু শুষ্ক ঢোক গিললো, মনের ভেতর বিশ্বাস হারানোর ভয়টা কুন্ডলী পাঁকিয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, তবুও ভেতরের শ’ঙ্কাটাকে নিঃশব্দে আড়াল করে বললো,
— আপনাদের ভালোবাসা যদি এতোই পিওর হয়, এতোই দৃঢ় হয়,তাহলে আমার কাছে কি চাইতে আসে আপনার বয়ফ্রেন্ড, ধরে রাখতে পারেন না?

অনুর কথায় মেয়েটার আত্নবিশ্বাসে ভাঁটি পরলো, সে কয়েকবার চোখের পলক ফেলে বললো,
— আমি ওকে চিট করেছি, বাট আই স্টিল লাভ হিম। আর আমি এও জানি ও আমার কাছেই ব্যাক করবে। কারণ সাতদিনের ভালোবাসা, সাত বছরের ভালোবাসার কাছে কিছুই না।

অনু ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো,
— স্টুপিড।

অনু শব্দটা উচ্চারণ করার সাথে সাথেই ওর চুল খাম’চে ধরলো মেয়েটা, তারপর প্রচন্ত ক্রো’ধে কাঁপতে কাঁপতে মেয়েটা বললো,
— তুই আমার প্রত্যয়ের ধারে কাছেও আসবি না, নয়তো আমার সুগার ড্যাডিকে দিয়ে তোর খবর করিয়ে ছাড়বো। আমার হাত যে কতটা লম্বা সেটা তোর ধারণারও বাইরে।

অনু বিপরীতে কিছু বলবে তার আগেই কোথা থেকে যেন ছুটে এসে এক ঝটকায় ধা’ক্কা মে’রে মেয়েটার হাত সরিয়ে দেয় প্রত্যয়, অন্য হাতে অনুকে আগলে ধরে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,
— আর ইউ ক্রে’জি? রাস্তার মধ্যে কি করছো এসব? নেক্সট টাইম এভাবে পেছনে পরে থাকলে আমি তোমার নামে পুলিশে কমপ্লেইন করতে বাধ্য হবো তিন্নি।

এতোক্ষণে বাস এসে পরেছে পাবলিক প্লেস হওয়াতে চারিদিকে মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছে মূহুর্তেই। সবার দৃষ্টি এখন ওদের তিন জনের দিকে। কেউ কেউ তো সুযোগ পেয়ে ভিডিও করা আরম্ভ করা দিয়েছে, অনু এতোক্ষণ যাবত চুপ করেই ছিল কিন্তু এই মূহুর্তে প্রত্যয়ের এসব আগলা দরদ ওর মোটেই ভালোলাগছে, গা ঘিনঘিন করছে, ইচ্ছেতো করছে প্রত্যয়কে সপাটে একটা চ’ড় মে’রে দিতে,কিন্তু পাবলিক প্লেসে নাটক করে কারোর হাসির পাত্র হতে চায়না অনু, তাই যথাসম্ভব দ্রুত গতিতে প্রত্যয়ের বাহু থেকে নিজেকে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে, হাঁটা ধরলো রাস্তার উল্টো পথে, ওকে এভাবে চলে যেতে দেখে প্রত্যয়ও হাটা দিলো অনুর পিছু পিছু। প্রত্যয় পেছনে আসছে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অনু ঘাড় ঘুরিয়ে কাঠকাঠ গলায় বললো,
— ওখানেই দাঁড়ান, আর আসবেন না। অনুরোধ নয়,নিষেধ করছি।

অনুর নিম পাতার মতোন তেঁতো কথায় প্রত্যয় আর এগোতে পারলোনা, অগত্যাই দাঁড়িয়ে পরলো রাস্তার মাঝখানে, অনু চোখ মুছতে মুছতে দ্রুত পায়ে হেটে চলে গেলো সেখান থেকে। যতক্ষণ পর্যন্ত অনুকে দেখা যায়, ঠিক ততক্ষন ওর যাওয়ার পানে নিস্প্রভ চোখে তাকিয়ে রইলো প্রত্যয়।এক পা ও নড়লো না।
*****************************************
খুব ভোর নয়, সকাল পেরিয়ে বেলা গড়িয়েছে অনেকটা। চারিদিকে সূর্যের সোনালী আলোর ঝলকানি, অরু সেই কখন থেকে ক্রীতিকের রুমের সামনে দাড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে পায়চারি করছে। মনে মনে ভাবছে,
— শুনেছি ভোর রাতে রুমে ঢুকেছে এখনো ঘুমিয়ে আছে কিনা কে জানে? নক করবো কি করবো না? করবো কি করবো না? না থাক চলে যাই, না একবার করেই দেখি।

অরু যখন কি করবে না করবে ভেবেই কুল পাচ্ছিল না, তখনই ভেতর থেকে ডেকে ওঠে ক্রীতিক,
— তোর পায়চারি তে মাথা ঘোরাচ্ছে আমার ভেতরে আয়।

অরু চট করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
— আপনি কি করে বুঝলেন আমি দাঁড়িয়ে আছি?

কথাটা বলে ভেতরে ঢুকতেই চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে দ্রুত পেছনে ঘুরলো অরু। ক্রীতিক গায়ে শার্ট চড়াচ্ছে, ওর জিম করে কৃত্তিম উপায়ে বানানো ভি শেইপ পৃষ্ঠদেশ স্পষ্ট দৃশ্যমান অরুর চোখে। এভাবে অসময়ে এসে পরে নিজেই লজ্জিত হলো ও। অরুর কথার জবাবে ক্রীতিক সামনে ঘুরে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো,
— মেইবি, আমি তোর শরীরের গন্ধ পাই।

অরু এখনো পেছনে ঘুরে দাড়িয়ে আছে দেখে ক্রীতিক পুনরায় বলে,
— হয়ে গিয়েছে তাকাতে পারিস।

অরু যেন কিছুই বোঝেনি, লজ্জাও পায়নি, সেভাবে করেই মুখ ভঙ্গিমা সাভাবিক রেখে ঘুরে বললো,
— আপনি কি ভ্যাম্বায়ার? না মানে শুনেছি ভ্যাম্পায়াররা মানুষের গন্ধ পায়।

ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ব্ল্যাক বেল্ট ঘড়িটা হাতে পরতে পরতে ক্রীতিক বলে,
— বেশি বেশি ফ্যান্টাসী বই পড়লে এই হয়, মাথার মধ্যে সব ভুত প্রেত ভর করে বসে আছে, ক্লাসের বই তো খুলেও দেখিস না, এবার ইউ এস এ ফিরে তোকে দেখে নিচ্ছি আমি।

পড়াশোনার কথা আসতেই অরু দ্রুত কথা ঘুরিয়ে কাজের কথায় চলে এলো, মিনমিনিয়ে বললো,
— আপনার ফোনটা একটু দিবেন আপাকে কল করতাম।

— রাতের ফ্লাইটে তো ফিরেই যাচ্ছি কল করার কি আছে?

জবাবে অরু ঠোঁট উল্টে বলে,
— আপার জন্য মন খারাপ লাগছে, আমি কথা বলতে চাই।

ক্রীতিক নিজের হাতের কাজ করতে করতে বললো,
— জ্যাকেটের পকেটে আছে খুঁজে দেখ, আর হ্যা, আমার সামনে বোনের সাথে একদম ন্যাকামি করবি না, যা কথা বলার নিজের রুমে গিয়ে বল।

অরু হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে ফোন নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। তারপর আবারও কি ভেবে যেন ফিরে এসে বলে,
— ফোনের পাসওয়ার্ডটা…

— তোর আর আমার বার্থডে।

অরু হতবাক হয়ে পুনরায় শুধালো
— কিহ?

ক্রীতিক ঘাড় ঘুরিয়ে ধমকের সুরে বললো,
— কানে কম শুনিস?

অরু ভয়ে তটস্থ হয়ে এদিক ওদিক ঘাড় নাড়িয়ে,আবারও দৌড়ে চলে যায়। যেতে যেতেই লক খুলে কল লাগায় অনুর নাম্বারে।

একবার, দু’বার, তিনবার,গিয়ে চারবারের মাথায় কল তুললো, অনু।
— হ্যালো আপা!

এপাশ থেকে অরুর উৎসুক গলা শুনেই তেতে উঠলো অনু, গলারস্বরে হাজারো বিরক্তি টেনে এনে ঝাঁজ নিয়ে বললো,
— কি সমস্যা কল দিয়েছিস কেন? আমাকে একা রেখে সৎ ভাইয়ের টাকায় থাইল্যান্ড গিয়েছিস,ঘুরছিস,ফিরছিস, খাচ্ছিস, এনজয় করছিস, তবুও স্বাধ মিটছে না? নাকি আমাকে ইউজ করে আমার ঘাড়ে পা দিয়ে জীবন কাটানোর শখ এখনো মেটেনি?

অনুর তিক্ত কথায় চড়াৎ করে মস্তিষ্কটা ঝাঁজিয়ে উঠলো অরুর, ও নিজেও তেজি স্বরে বললো,
— মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছিস তখন থেকে, কি হয়েছে কি করেছি আমি?

অনু উল্টো ক্রো’ধ দেখিয়ে বললো,
— যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি, বুঝেশুনে বলেছি, তোরা সবাই আমাকে ব্যাবহার করিস নিজেদের প্রয়োজনে। কেন বলতো? সব সময় তোদের চিন্তাই আমার কেন করতে হবে? আমার কি ইচ্ছা অনিচ্ছা বলে কিছু নেই?

অরু এবার নরম সুরে শুধালো,
—কি হয়েছে আপা?

অরুর প্রশ্নের কিঞ্চিত পরোয়া না করে,অনু মুখে যা আসছে উন্মাদের মতো তাই বলে যাচ্ছে, অরু জানে আপার রা’গ উঠলে মাথা ঠিক থাকেনা, পরে আবার নিজেই সব সামাল দেয়, তাই এতোএতো তিক্ত কথার বিপরীতে
অরু নিজের রাগ সংবরন করে আবারও জিজ্ঞেস করল,
— কি হয়েছে বলনা আপা? কে কি বলেছে তোকে? মা ঠিক আছে, আমি…

ওর একাধারে প্রশ্নের একপর্যায়ে অনু নিজের খেইর হারিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
— তুই এবার আমাকে বিচারকদের মতো প্রশ্ন করা বন্ধ কর অরু, আমি বিরক্ত তোর এসব প্রশ্নে, তোর এতো আনন্দ আমার সহ্য হচ্ছেনা, আমার ঘাড়ে পা দিয়ে এভাবে জীবন কাটাতে লজ্জা হয়না তোর? আর কতদিন আমার উপর ভরসা করে বাঁচবি? তোদের দেখভাল করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছি আমি, এবার একটু রেহাই দে, এবার অন্তত আমাকে ইউজ করা বন্ধ কর।

— আমি তোকে ইউজ করি?

— হ্যা করিস, তোরা সবাই মিলে আমাকে নিজেদের সার্থে ইউজ করিস, এবার আমাকে আমার মতো বাঁচতে দে অরু, একনাগাড়ে চোখ খিঁচে কথাগুলো বলে মুখের উপর ফোন কেটে দিলো অনু।

ওদিকে অনুর বলা শেষ কথায় মাথার মধ্যে অ’গ্নিস্ফুলিঙ্গ অনুভব হলো অরুর,কষ্টের সীমানা পেরিয়ে, মেজাজ চড়ে এসেছে সপ্তম আসমানে। ইচ্ছে করছে আশেপাশের সব কিছুর ভে’ঙে গুড়িয়ে ফেলতে,নিজের অজান্তেই ধপ করে মেঝেতে বসে পরে দু’হাতে নিজের লম্বা চুল গুলো মু’ঠিবদ্ধ করে, নিরবে চোখের জ্বল ফেলতে ফেলতে অস্পষ্ট সুরে অরু বললো,
— তারমানে মায়ের অবর্তমানে আপাও আমাকে করুনা করে এসেছে। কোনো ভালোবাসা নেই সবটা করুনা, সবাই করুনা করে আমাকে।
*****************************************
এলিসার বাবাকে থাই পুলিশ এ্যা’রেস্ট করেছে, এবার আর প্রমান ছাড়া নয় সুস্পষ্ট প্রমান সমেত তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
—যেহেতু ওর বাবা জেলে আছে সেহেতু এলিসাকে ব্ল্যা’কমেইল করার মতো আপাতত কেউ নেই, বলতে গেলে এলিসা এখন পুরোপুরি নিরাপদ।

সায়রের কথায় অর্নব আর ক্রীতিক হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো।

অর্নবের হ্যা সূচক সম্মতি শুনে সায়র এবার উচ্ছ্বাসিত সুরে বললো,
—তাহলেতো আমাদের মিশন কম্পিলিট, আজ রাতে পার্টি করলে কেমন হয়?

এবার অর্নব বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বললো,
— তুই কি পা’গল? এলিসার মন ভালো নেই, আর তুই আছিস তোর পার্টি নিয়ে।

ক্রীতিক কিছু একটা ভেবে পায়ের উপর পা তুলে বললো,
— আমার হাতে সময় নেই কাল ভার্সিটিতে এক্সাম ফিরতে হবে।

সায়র হতাশ হয়ে বললো,
—তোরা না থাকলে আমি কি জ্বিন ভুতের সাথে পার্টি করবো নাকি?চল রাতেই ফিরে যাই তাহলে।

কথাটা শেষ করে সায়র কেবলই বসা থেকে উঠে দাড়িয়েছে, ওর সামনের ডিভানটাতে এখনো ক্রীতিক পায়ের উপর পা তুলে বসা, তখনই কোথা থেকে যেন অরু এসে এক প্রকার হামলে পরলে সায়রের উপর, ওর চেহারা বি’ভৎস, চুল গুলো এলোমেলো, চোখদুটো টলছে, সেথা থেকে গড়িয়ে পরছে অস্রুসিক্ত নোনাজল। অরু আশেপাশের কারোর দিকে নজর না দিয়েই, সায়রের কলার দুটো শক্ত করে চেপে ধরে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
— সায়র ভাইয়া! বিয়ে করবেন আমায়? আপনার তো কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই, তাছাড়া আপনার মাথার সবগুলো তাড় ও ঠিকঠাক আছে, আমার আপনাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই, আমি কারও বোঝা হয়ে থাকতে চাইনা,কারও করুনার পাত্রীও হতে চাইনা আর এক মূহুর্ত ও না, বিয়ে করবেন আমাকে? হতে পারে আমি আপনার চেয়ে বয়সে একটু বেশিই ছোট তাতে কি আসে যায়?ভালো করে তাকিয়ে দেখুন আমি সুন্দরী।

এদিকে সায়র অরুকে কি দেখবে, অরুর পেছনে দাড়িয়ে থাকা ক্রীতিককে দেখেই ওর গলা শুকিয়ে এসেছে। ক্রীতিকের জ’লন্ত আ’গ্নেয়গিরির দাবানলের মতো চোখ দুটো দেখেই ওর হাত পা কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে, চোখ দিয়ে বারবার ক্রীতিককে ইশারা করে বোঝাচ্ছে,
— ভাই আমি কিছু জানিনা,তোর জানের জান পরানের পরান অরুই আমাকে ইচ্ছে করে ফাঁসা’চ্ছে।

ক্রীতিক একনজর সায়র কে পরখ করে কপালে দু আঙুল ঠেকিয়ে কিছু একটা ভাবলো, তারপর হুট করেই উঠে দাড়িয়ে, অরুর হাতটা শ’ক্ত করে চেপে ধরে ওকে ইচ্ছে মতো টানতে টানতে বেডরুমে নিয়ে ছু’ড়ে মা’রলো, অকস্মাৎ টাল সামলাতে না পেরে অরু হুমড়ি খেয়ে মেঝেতে পরে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। দাঁড়ানো থেকে এভাবে হুট করে মেঝেতে পরায় কনুই আর হাঁটুর অবস্থা বেগতিক। কাঁদ’তে কাঁ’দতে অরু নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে খুব , কিন্তু প্রচন্ড আ’ঘাতে হাত পা গুলো যেন অসার হয়ে পরেছে ওর। ওকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ক্রীতিক নিজের দু’পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট কন্ঠে বললো,
— আমি আসছি ততক্ষণ এখানেই পরে থাক, অন্যকারও শরীরে হাত ছোঁয়ানোর শা’স্তিটা সময় হলে টের পাবি।
*****************************************অরুকে নিজের রুমে আটকে রেখে ক্রীতিক আবারও ওদের কাছে ফিরে আসে, অর্নব,সায়র, এলিসা তিনজনই ভ’য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ক্রীতিকের পানে। সবাইকে নিশ্চুপ হয়ে থাকতে দেখে
সায়র একটু সাহস করে বলে ওঠে,
— কি করেছিস ওর সাথে?

সা’পের ফনা তোলার মতো তরিৎ গতিতে সায়রের দিকে হিং’স্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্রীতিক বলে,
— যা ইচ্ছে করেছি, আমাদের প্রাইভেট কথাও তোকে শেয়ার করতে হবে?

সায়র কিছু বলতে যাবে, তার আগেই অর্নব ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— আর একটাও কথা বলবি না সায়র। নয়তো ক্রীতিকের হাতে আজই তোর খেল খতম।

বার কয়েক জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে ক্রীতিক নিজের পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে অর্নবের হাতে দিয়ে বলে,
—ডকুমেন্টস গুলো যত দ্রুত সম্ভব বের কর।

পেনড্রাইভটা হাতে নিয়ে,সেটাকে উল্টে পাল্টে দেখে,অর্নব নিজের ঠোঁট কা’মড়ে বললো,
— একটু বেশি তারাহুরো হয়ে যাচ্ছে না ব্যাপারটা?

অর্নবের কথায় ওর দিকেও অ’গ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্রীতিক। ক্রীতিকের চোখের হিং’স্রতা দেখে অর্নব চোখ নামিয়ে নিলে, এলিসা এগিয়ে এসে অর্নবের কাধে হাত রেখে বললো,
— জেকে যা করতে চাইছে,সেটা ওকে করতে দে অর্নব।

অর্নব এলিসার দিকে তাকিয়ে ছলছল নয়নে বলে ওঠে,
— তুই বললে, আমি সব কিছু করতে রাজি জান, তুই শুধু একবার বল জেকের সাথে আমারটাও…

অর্নব আর কিছু বলবে তার আগেই নিজের তিন ইঞ্চি হাই হিল নিয়ে অর্নবের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে পরলো এলিসা, অতঃপর ওর কাঁদো কাঁদো মুখের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে এলিসা শুধায়,
—- কি যেন বলছিলি? আবার একটু বল।
*****************************************
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়েছে, সূর্যের আলো পুব আকাশ থেকে পশ্চিমে গিয়ে ঠেকেছে। অরু এখনো মেঝেতে বসে বিছানায় মাথাটা এলিয়ে দিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। অনেকক্ষন ধরে একটানা কাঁ’দার ফলে ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে ওর ক্রন্দনরত ছোট্ট শরীরটা। তখন আপার সাথে রাগ করে কি বলতে কি বলেছে, কাকে বলেছে কিছুই মাথায় ঢোকেনি। অথচ এখন সেসব কথা মনে পরলেই ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজেই বা’রি মে’রে বেহুস হয়ে যেতে। সবার সামনে কতোটা নির্লজ্জের মতো সায়রকে গিয়ে বিয়ের কথা বলছে ও। এখন ভাবলেও বিরক্তিতে শরীরটা চিড়বিড়িয়ে উঠছে, সবাই কি ভেবেছে, কে জানে? যে যা ভাবার ভাবুক, তবে অরু ঠিক করেই নিয়েছে সায়রের মুখোমুখি আর এ জীবনে হবে না ও। কি করেই বা হবে, সায়রকে দেখলেই তো নিজের করা মস্তবড় বোকামির কথা বারবার মনে পরে যাবে। সকালের কর্মকান্ডের কথা ভেবেই হাত পা ছড়িয়ে আরও এক দস্তুর কেঁদে ভাসালো অরু।তারপর মনে মনে ভাবলো,
—আপাকে আরেকবার কল করে দেখলে কেমন হয়?এখন তো রাগ কমেও যেতে পারে।

যেই ভাবা সেই কাজ অরু দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বিছানার আসেপাশে ক্রীতিকের মোবাইলটা খুঁজতে লাগলো, কিন্তু মোবাইলের যায়গায় অন্যকিছু হাতে এলো ওর, নরম বিছানায় মাথার পাশেই যে কুশনটা রাখা থাকে তারপাশেই ওর রুপোলি নুপুরটা আঁকাবাকা হয়ে পরে আছে, এতো বছর ধরে পায়ে পরে থাকা নিজের সুপরিচিত নুপুরটা দেখে অরু দ্রুত গিয়ে সেটাকে হাতরে নিলো,হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে বললো,
— আরে এটাতো আমার নুপুর, এলিসা আপুর জন্মদিনের পার্টিতে হারিয়ে ফেলেছিলাম। এটা ওনার কাছে কি করে এলো? আর ওনার কাছে যদি থাকবেই তাহলে সেদিন কেন জিজ্ঞেস করলো, আমার নুপুর কোথায়? আশ্চর্য মানুষ তো, আমার নুপুর দিয়ে ওনার কি কাজ?

একমনে কথাগুলো বলে অরু পা বাড়িয়ে দেয় নিজ হাতে নুপুরটা পরার জন্য। ঠিক তখনই বাইরে থেকে আগমন ঘটে ক্রীতিকের, ও হুর মুড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে বেডসাইড টেবিল থেকে কিছু কার্ড নিজের ওয়ালেটে ভরে নেয়, অতঃপর অরুর হাতে হ্যাচকা টান মে’রে ওকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,
— চল।

অরু ভ্রু কুঞ্চন করে বললো,
— চল মানে, কোথায় যাবো?

ক্রীতিক জবাব দেয়না কোনোরূপ, বরং ওকে জোর জ’বরদস্তি করে টা’নতে টান’তে বাইরে নিয়ে যায়,
— হাত ছাড়ুন লাগছে আমার, আরে আমার নুপুরটা ফেলে এসেছিতো, ছাড়ুউউন।

কে শোনে কার কথা, ক্রীতিকের স্থবির চোখমুখ আর ভাবমূর্তি দেখে মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে ওর শ্রবনশক্তিই হারিয়ে গিয়েছে।

*****************************************
একমনে এলোমেলো পায়ে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে উত্তাল প্রশান্ত মহাসাগরের সামনে এসে দাড়িয়েছে তার হদিস নেই অনুর। মাথার উপর গোল্ডেন গেইট ব্রীজ। তাতে হাজারো মানুষের ঢল আর তার নিচে সুবিশাল সমুদ্র তট। এখানেই তো প্রথমবার প্রত্যয়ের বুকে মাথা রেখেছিল অনু, কতটা প্রশান্তি, আর কতটা আবেগাপ্লুত হয়ে প্রত্যয়ের উপর নিজের ক্লান্ত শরীরের ভার ছেড়েছিল, প্রত্যয়ের আন্তরিকতা মাখা হাসি, মাথায় বুলানো আদুরে হাতের পরশ, রাতের আধারে একান্তে বৃষ্টিস্নান, সব কিছুই কি তাহলে মিথ্যা ছিল? প্রত্যয় তার সাত বছরের ভালোবাসা ভুলে যেতে, কেবলমাত্র ওকে ইউজ করছে এটাই কি সত্যি? তিন্নি নামক মেয়েটা কি সত্যি বলছে? অনু কি তবে শুধুই অন্য একজনার যায়গা পূরন করে ইউজ হয়েছে মাত্র ? “ইউজ” শব্দটা সেই সকাল থেকেই মাথার মধ্যে গেড়ে বসে আছে ওর। কিছুতেই শব্দটাকে সরানো যাচ্ছে না মাথা থেকে। ইউজ শব্দটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই অনুর মনে পরে যায় সকালের কথা, নিজের ব্যাতিগ্রস্থ হৃদয়কে সামাল দিতে না পেরে সকাল বেলা যা নয় তাই বলেছে অরুকে। নিজের ছোট্ট বোনের প্রতি এরূপ জঘ’ন্য আচরণ করে, প্রত্যয়ের উপর জমে থাকা রাগ অরুর উপর ঢেলে এখন অনুশোচনায় বুক ফেটে কা’ন্না আসছে অনুর। কি করছে অরু?ঠিক আছেতো? নাকি আপার উপর অভিমান করে ভুলভাল কিছু করে বসেছে ওর ডানপিঠে বোনটা? হাজারো অজানা প্রশ্ন এসে বারি খাচ্ছে অনুর মস্তিষ্কে, ও আর ভেবে সময় নস্ট করতে পারলো না, তৎক্ষনাৎ অরুর সাথে কথা বলার জন্য দ্রুতই ফোন বের করে কল লাগালো ক্রীতিকের নাম্বারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বারবার ফোন করার পরেও কেউ ফোনটা তুলছে না, কি করে তুলবে? ফোনটা যে সেই সকাল থেকেই মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
এদিকে অরুকে কলে না পেয়ে শব্দ করে কাঁ’দতে কাঁ’দত অনু বসে পরে বালু আস্তরিত স্যাতস্যাতে বেলাভূমিতে।

*****************************************
সন্ধ্যা রাতে রিসোর্টের সামনে বাইক থামিয়ে, অরুর বাহু ধরে একপ্রকার টে’নে বাইক থেকে নামালো ক্রীতিক। অরুর চোখ মুখ বিমর্ষ।ওর গালে পাঁচ আঙুলের দা’গ সুস্পষ্ট। মাথাটা নুইয়ে রেখেছে সেই কখন থেকে। ক্রীতিক নিস্প্রভ চোখে অরুর দিকেই ধ্যানমগ্ন হয়ে চেয়ে আছে। ওর কাছে এই ফোলা ফোলা চোখের অরুকে বরাবরই সুন্দর লাগে, আজ মনে হচ্ছে আরও একটু বেশি সুন্দর লাগছে। অরুর পরনে ছিল সুতির ঘাগড়া আর ওভার সাইজ টপস,টপস এর উপর বানজারা কারুকাজের কোটি, লম্বা হাটুসম চুল গুলো ঢিলেঢালা করে হাতখোঁপা বাধা, এতোক্ষণ ধরে হেলমেট পরে থাকায় খোঁপাটা মনেহচ্ছে আরও ঢিলে হয়ে গিয়েছে, এখনই খুলে পরবে পরবে ভাব। দুধে আলতা রাঙা মুখটা কেঁ’দে কে’টে লাল বর্ণ ধারণ করেছে, তবে সন্ধ্যারাতের হ্যাজাকের আলোয় এই লাল লাল চেহারায় বরই মায়াবী লাগছে তাকে। যে কেউ দেখে বলবে নতুন বিয়ের ছিড়ি জেগেছে মেয়ের মুখে।

খানিকক্ষণ বাদে ওদের পেছন পেছন উবার থেকে নেমে এলো এলিসা, অর্নব আর সায়র ও। কারও মুখে টু শব্দ নেই ওদের । চারিদিকে পিনপতন নীরবতা। অরু চুপচাপ মাথা নুয়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই তখন থেকে , গলায় রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে তৈরি তাজা ফুলের মালা, হাতেও একটা ঝুলানো, এটা বোধ হয় ক্রীতিকেরটা। অরুর মলিন মুখটার দিকে তাকিয়ে এলিসা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, বন্ধুর বেলাতে বরাবরই ওরা সার্থপর হয়ে যায়, আজও তাই হয়েছে। তবে এখন অরুকে ভেতরে নিয়ে কিছু খাওয়ানো উচিৎ মেয়েটা সারাদিন না খেয়ে আছে। তাই চারিদিকের নিরবতা ভেঙে এলিসা বলে ওঠে,
— তোরা কি সারারাত এখানে দাড়িয়ে থাকার প্ল্যান করেছিস? যদি তাই হয়, তাহলে দাড়িয়ে থাক, আমি আর অরু ভেতরে গেলাম।

ওরা সবাই এখনো নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এলিসা অরুকে সাথে নিয়ে ভেতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালে, পেছন থেকে ক্রীতিক ডেকে ওঠে ওদের,
— এলিসা শোন।

এলিসা ঘুরে দাড়িয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর পানে চাইলে, ক্রীতিক একটা সাইন করা চেকের পাতা এলিসার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
— এটা অরুর মোহরানার টাকা, ওকে দিয়ে দিস।

এলিসা হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে চেক টা হাতে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। ওদিকে ক্রীতিকের কান্ডে সায়র আর অর্নব অবাকের চড়ম সীমানায় গিয়ে চোখাচোখি করে দুজনে একই সুরে বলে উঠলো,
— পৃথিবীতে এটাই বোধ হয় প্রথম বিরল ঘটনা, যেখানে স্বামী তার বউকে মাঝরাস্তায় দাড়িয়ে মোহরানা উশুল করে দিলো।

ওদের কথায় ধ্যান নেই ক্রীতিকের, ওতো সেই কখন থেকে বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে , অরুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। অরু চলে গিয়েছে বহুক্ষণ আগে, তবুও তাকিয়ে আছে। অদুরে কোনো এক বাঙালি ক্যাফে থেকে তখনও কানে ভেসে আসছে বেসুরো দুটো লাইন,

“আমার কাছে তুমি অন্যরকম
ভালোবাসি বেশি, প্রকাশ করি কম”

চলবে…..
আচ্ছা যাদের কাছে আমার গল্পটা খুব ভালো লাগে,তারা গল্প গ্রুপে দুই একটা রিভিউ দিলেও তো পারো।প্রতিদিন সময় বের করে গল্প দিচ্ছি,এতোটুকু তো আমি ডিজার্ব করি।😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here